রাজ শাড়িটা অধরাকে দিয়ে বের হয়ে আসলো। রাজ জানে অধরা তার সব শর্ত মেনে নিবে। কারণ তার বোনকে বাঁচাতে হলে এ ছাড়া আর কোন রাস্তা নেই।
– এদিকে রাজ কিছুক্ষণ পর রুমে গিয়ে দেখে অধরা শাড়ি বসে খাটে বসে আছে। রাজ রুমের দরজা লাগাতেই অধরার শরীরটা কেমন যেন করে উঠলো। রাজ আস্তে আস্তে তার দিকে আসছে।কাছে এসেই অধরার বুকের উপর থেকে শাড়িটা টান দিয়ে সরিয়ে ফেলল!
– অধরার ভয়ে হাত-পা কাঁপছে। মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করছে।
এক হাতে শাড়ির আচলটা টান দিয়ে যখনি বুকের উপর জড়িয়ে নিবে এমন সময় রাজ বললো,’ কি এমন ভয় পাচ্ছিস কেন? আমার আগে কতজনের সাথে এমন করেছিস?
– রাজের কথা শুনে অধরার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। রাজের মুখে এমন বিশ্রী কথা শুনবে কখনো ভাবতে পারেনি। জীবনে কখনো পর্দা ছাড়া বাহিরে যায়নি সে। বাবা-মায়ের কলিজার টুকরা ছিল। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। রাজের কাছে সে প্রস্টিটিউট। রাজ যে তার সাথে এমন করবে সে কল্পনাও করতে পারেনি।
”কি হলো? কান্না করছিস কেন? কান্না করে কোন লাভ নেই। ” এই বলে রাজ অধরার ওষ্ঠ জুড়ায় তার ওষ্ঠ মিলিয়ে দিল। অধরার আঁখি জুড়া বন্ধ হয়ে আসছে। বুকের ভেতর ধুকপুক-ধুকপুক করছে। শ্বাস-প্রশ্বাস ভারি হয়ে আসছে। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে সে এক হাতে শাড়ি আরেক হাতে রাজকে সরানের বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে। রাজ হিস্র পশুর মতো হয়ে গেছে।
– রাজ যখন অধরার শাড়ির কুচি ধরে টান দিলো। অধরার মনে হলো শরীরে কারেন্ট শর্ক করলো। অধরা তখনি বাম হাতে রাজের হাতটা ধরে ফেলে।রাজের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। করুণ স্বরে বলে , ‘ স্যার প্লিজ আমার অনেক ভয় করছে। আজকে না অন্যদিন। আজ ছেড়ে দেন না আমাকে। আমার না অনেক ভয় করছে।অধরার চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি বালিশের উপর গড়িয়ে পড়ছে। রাজের এ দিকে কোন ভ্রক্ষেপ নেই। মনে হচ্ছে এক সাগর বিদ্বেষ নিয়ে অধরার উপর ঝাপিয়ে পড়েছে।
– প্লিজ আপনার দু’টি পায়ে পড়ি। আমাকে ছেড়ে দেন।
– তোকে কি আমি জোর করে নিয়ে আসছি? এখনি চলে যা। তোকে আঁকটাবো না। এই দেখ দরজা খুলে দিলাম। চলে যা। তয় মনে রাখিস তোর বোন বাঁচবে তো? তোর তো একটি মাত্র বোন। তাও নাকি হসপিটালে।
– অধরা এবার রাজের হাতটা ছেড়ে দিল! রাজকে উপেক্ষা করার শক্তি এখন অধরার নেই। রাজ এবার অধরার অসহায় চেহারা দেখে মুচকি হাসলো। অধরার অসহায় চেহারাটা রাজের কাছে বড্ডবেশী ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে সব সৌন্দর্য অধরার মুখে এসে ভর করছে। রাজ নিজেকে কন্টোল করতে পারছে না।
– অধরা চোখ বন্ধ করে আছে। মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে। আল্লাহ ছাড়া আর কেউ তাকে রক্ষা করতে পারবে না।
– রাজ যখনি অধরার শাড়ি খুলতে যাবে এমন সময় বললো,’ রাজ আমার পিরিয়ড চলে। আপনাকে অনুরোধ করছি প্লিজ আজকের মতো আমাকে মুক্তি দেন।
– রাজ অধরার কথা শুনে, তার উপর থেকে উঠে পড়ল। আর রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
-রাজ চলে গেলেই অধরা কয়েক গ্লাস পানি খেয়ে নিল। ভয়ে তার গলাটা শুকিয়ে গিয়েছিল।রাতে আর অধরার ঘুম হলো না। সারারাত এটা-ওটা ভেবেই পার করে দিল। অধরার কোন ক্রমেই বিশ্বাস হচ্ছে না রাজ এতোটা নিচে নেমে গেছে। সে তো এমন ছিল না। কেন তার প্রতি এতো অবিচার।
– এদিকে পরের দিন অধরা কিচেনে রান্না করছে। এমন সময় কে যেন বারবার দরজায় নক করছে। অধরা দরজা খুলতেই দেখে একটা মেয়ে জিন্সপ্যান্ট পরনে শার্ট পায়ে কেডস পরে দাঁড়িয়ে আছে। তার পিছনে মোটামুটি বয়স্কের একটা মহিলা দাঁড়িয়ে আছে।
– আসসালামু আলাইকুম। আপনারা কে? ( অধরা সালাম দিয়ে জানতে চাইলো)
– মেয়েটা সালামের উওর না দিয়েই বললো,’ এই মেয়ে কে তুমি? এই বাড়িতে কেন? ”
– এই বাড়ির বউ। তুমি কে আগে বলো?
– অধরার মুখে, বউয়ের কথা শুনে মেয়েটা অনেকটা শর্ক খেল। ” না এ হতে পারে না। মা দেখো এই মেয়েটা কি বলছে। ”
– এই মেয়ে কি সব আবোল-তাবোল বলছো? তুমি কে বলো?
– কেন আবার আমি এই বাড়ির বউ। ”
– হঠাৎ পিছন থেকে রাজ বললো,’ কে এসেছে?
– অধরা কিছু বললো না। রাজ দরজার দিকে তাকাতেই চমকে গেল। খালামনি, ত্রিযামিনী তোরা? একটাবার ফোন করে তো আসতে পারতি?
– রাজ তুমি কোন কথা বলবে না, তার আগে বলো এই মেয়ে কে? আমাকে না জানিয়ে তুমি বিয়ে করে নিলে? করতে পারলে এটা। তুমি একটা প্রতারক।”
-ত্রিযামিনী কি বলছো এসব? কক্সবাজার বেড়াতে গিয়ে কি মাথাটা নষ্ট করে আসলে?
“আরে এই মেয়েই তো দরজা খুলে বললো,’ সে তোমার বউ।”
– আরে বউ না, বাড়িতে কাজের মেয়ে নেই। তাই ভাবলাম একটা কাজের মেয়ে রেখে দেয়। তোমরা বাহিরে কেন? খালামনি ভেতরে আসো। ”
– ত্রিযামিনী ঘরে ঢুকতে সময় অধরার পায়ে পারা দিয়ে বললো,’ সরি কাজের বুয়া।’
– অধরা কিছু বললো না শুধু রাজের দিকে তাকালো।
– এদিকে রুমে এসেই ত্রিযামিনীকে ওর মা রাহেলা বললো,’ ত্রিযামিনী মেয়েটার হাব-ভাব ভালো মনো হচ্ছে না। এটাকে বাড়ি থেকর তাড়াতে হবে। ”
– আরে মা চিন্তা করো কেন? এটাকে তাড়াতে আমার ওয়ান-টুর ব্যাপার। ‘
– রাজ এদিকে খুঁজতে খুঁজতে অধরাকে কিচেনে পায়। অধরাকে দেখেই বলে, ‘ এই রান্না কি শেষ?’
– হুম শেষ।
”তাহলে শোন এই নে বাজারের লিস্ট। কাঁচাবাজার গুলো করে নিয়ে আসবি। ”
– অধরা রাজকে কি বলবে বুঝতে পারছে না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ”
– এই কি হলো, কথা বুঝিস নি? এই নে লিস্ট এই নে টাকা। আর শোন ওদিনের মতো বাজারে গিয়ে আবার কাস্টমার খুঁজিস না। ”
– অধরা রাজের হাত থেকে বাজারের লিস্ট নিয়ে বেরিয়ে গেল বাজারের উদ্দেশ্যে। বাজার করে যখন বাসায় ফিরবে এমন সময় রাস্তার দোকানের পাশে দাঁড়ানো কয়েকটা ছেলে অধরাকে বাজে কথা বলছিল। রাজ দোকানে বসেই চা খাচ্ছিল। তবুও কিছু বললো না। একটা ছেলে তো সরাসরি পথ আকটে বললো,’ কিরে ললনা আগে তো দেখিনি! আর কি করছো এতো সুন্দর শরীরটাকে কষ্ট দিচ্ছো? দাও দাও তোমার বাজার গুলো আমাকে দাও। বিনিময়ে তুমি আমাকে একটু আলাদা সময় দিলেই হবে। অধরা এবার চুপ থাকতে পারলো না কষে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিল।
– থাপ্পর দেওয়ার পর পরই ছেলেটা অধরার হাতটা ধরে ফেলে। অধরা চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারছে না। এমন সময় একটা ছেলে বাইকে করে এসে অধরার সামনে এসে দাঁড়ায়। ছেলেটা বাইক ওয়ালা ছেলেটাকে দেখে দৌড়ে পালায়। অধরা বাজার নিয়ে বাসায় এসে পড়ে।
– সন্ধ্যা বেলা রাজ বাসায় এসে বললো,’ ত্রিযামিনী আজ বাসায় পার্টি হবে। আমার বন্ধু-বান্ধব আসবে। আর এই যে তুই যা যা রান্না করতে বলেছি সব রান্না করবি। এদিকে অধরা আগে কোনদিন রান্না করেনি। এখানে এসে রান্না করতে হচ্ছে। আজ রান্না কররতে গিয়ে গরম তেলের ছিটা হাতে এসে লাগে। সাথে সাথে ফুসকা পড়ে যায়। তবুও কাউকে কিছু বলে না।
– সন্ধ্যা বেলায় রাজের সব বন্ধু এসে যায়। সবাই যে যার মতো ড্রিংকস নিচ্ছে। ত্রিযামিনী ড্যান্স করছে রাজের সাথে। অধরাকে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেই রাজের এক বন্ধু রিফাত বললো,’ ওহ্ বেবি ইউ আর সো হর্ট। প্লিজ জয়েন দ্যা ডান্স পার্টনার।কথাটা বলেই, অধরার হাতটা ধরে। অধরা সাথে সাথে -রিফাতের গালে চড় বসিয়ে দেয়।
– সারাবাড়ি মুহূর্তে নিঃস্তব্ধ হয়ে যায়।
– রাজ এসে অধরাকে বলে,’ কি হয়েছে ডান্সই তো দিতে চেয়েছে। বেড শেয়ার করতে তো বলে নাই। ”
– রাজ ছি! আপনি একটা অমানুষ। এসব বলতে মুখে আকটায় না? আপনার সম্পূর্ণ অধিকার আছে আমার উপর। তাই বলে আপনার বন্ধুরা যা বলবে তাই করতে হবে? আমি আপনার সাথে চুক্তি করেছি।
– চুপ কর। এসব বলতে লজ্জা করে না। রিফাত তুই একে রুমে নিয়ে যা তো। যা ইচ্ছা কর। দেখি দেমাগ কতো।
– অধরার বুকের ভেতরটা ফেঁটে যাচ্ছে। রাজ কেন এমন করে তার সাথে। নিজের বন্ধুদের সাথে আমাকে বেডে পাঠাতে তার বিবেকে একটুও বাধে না?
চলবে””””””