– সকাল বেলা ত্রিযামিনী রাজের রুমের দরজা খুলা দেখেই রাজের রুমে ঢুকল। রাজের রুমে গিয়ে দেখে,’ অধরা রাজকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। অধরাকে এভাবে দেখে ত্রিযামিনীর মাথায় রক্ত উঠে যায়। সাথে সাথেই অধরার চুলের মুঠি ধরে বলে,’ তোর কত্তোবড় সাহস ছোটলোকের বাচ্চা, আমার রাজকে বুকে নিয়ে ঘুমাস।
– অধরার চুলে টান লাগাতে ঘুম ভেঙে যায় তার । ঘুম ভাঙতেই দেখে ত্রিযামিনী অগ্নি মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে ত্রিযামিনীর চোখ থেকে আগুন বের হচ্ছে! অধরা অসহায় দৃষ্টিতে ত্রিযামিনীর দিকে তাকায়!
– এই এভাবে তাকিয়ে থাকবি? তুই বাড়ির কাজের মেয়ে কাজের মেয়ের মতো থাকবি। তা না করে ছি! ছি! এসব করতে লজ্জা করে না? এখানে না করে হোটেলে সময় দিতে পারিস তো। ওহ্ বুঝছি রাজকে পটিয়ে তার সম্পত্তি নেওয়ার ধান্দা! তোদের মতো থার্ড ক্লাস মেয়েদের চেনা আছে। তুই মনে করিস রাজ তোর এই চেহারা দেখে প্রেমে পড়ে যাবে? কখনোই না।
– ম্যাডাম এসব কি বলছেন? প্লিজ এভাবে বলবেন না। আমার চরিত্র নিয়ে প্লিজ কথা বলবেন না?
– বাহ! বাহ! কি আমার সতী-সাধ্বী!সারারাত একটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায়। রাতে কি করছে না করছে আল্লাই জানে!
– আমি কিছু করিনি। রাজেই রাতে আমাকে জোর করে এই রুমে নিয়ে আসছে! তারপর আর আমার কিছু মনে নেই।
– ত্রিযামনীর চিল্লাচিল্লিতে রাজের ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভাঙতেই ত্রিযামিনীকে বললো,’ কি হয়েছে এখানে?’
– কি হয়েছে মানে? তুমি এই কাজের মেয়েকে নিয়ে রাত কাটিয়ে বলছো কি হয়েছে?
– what! এসব কী? আমি কেন এই কাজের মেয়েকে নিয়ে থাকবো? কি বলছো এসব? কাল রাতে পার্টি শেষ করে আমি আর দরজা বন্ধ করিনি। শুয়ে পড়ছি।
– অধরা রাজের মুখে এমন কথা শুনবে বিশ্বাস করতে পারছে না। কাল রাতে রাজই তো জোর করে তার সাথে অসভ্যতামী করছে।
– এই মেয়ে আমার রুমে এসেছিলি কেন? ছেলে দেখে নিজেকে কন্টোল করতে পারিস না? তোর মা-বাবা কি সুশিক্ষাটাও দিতে পারেনি?
– রাজের কথা শুনে অধরা আর নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারছে না। টপটপ করে পানি পড়ছে। অধরা জানে না তার কান্নার সমাপ্তি কোনদিন হবে? সে বারো বছর বয়স থেকে কাঁদছো। বুকের কষ্টটা না পারছে কাউকে দেখাতে না পারছে কষ্টটাকে মেনে নিতে। বুকের ভেতর কষ্টটা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তাকে।
– এই ছোটলোকের বাচ্চা ন্যাকা কান্না বন্ধ করবি? বল রাজের রুমে কেন এসেছিলি/
– বিশ্বাস করেন ম্যাডাম আমি আসিনি। রাজ আমাকে কাল রাতে জোর করে নিয়ে আসছে।
– এমন সময় ত্রিযামিনী খেয়াল করলো, রাজের গলায়, শার্টে লিপিস্টিকের দাগ। তার আর বুঝতে বাকি রইল না ভেতরে কি হয়েছে। ঠাস -ঠাস করে অধরার গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বললো,’ সারা রাত নিজের দেহের চাহিদা মিটিয়ে এখন বলছিস, ‘আমাকে জোর করে নিয়ে এসেছে।’
-বিশ্বাস করেন ম্যাডাম আপনি যা ভাবছেন তার কিছুই হয়নি!
– বাহ রাজের শার্টে, গলায় লিপিস্টিকের দাগ থাকার পরও আমি তোর কথা কিভাবে বিশ্বাস করবো? তোকে মন চাচ্ছে খুন করে ফেলি। তুই আমার সামনে থেকে যা।
– অধরা রাজের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু রাজ ত্রিযামিনীকে কিছু বললো না। অধরা চোখের পানি মুছতে মুছতে বের হয়ে গেল।
– এদিকে অধরা রুম থেকে বের হতেই ত্রিযামিনী দরজা লাগাই দেয়।
– দরজা কেন লাগালে ত্রিযামিনী?
-“কেন লাগিয়েছি বুঝো না? রাতে চাকরানীর সাথে যা যা করছো তা আমার সাথে করবা? আমি কি দেখতে অসুন্দর নাকি? ‘ কথাটা বলে ত্রিযামিনী শাড়ি খুলতে লাগলো। রাজ বুঝতে পারলো এখানে অঘটন ঘটতে চলছে। গজবের এলাকা থাকা যাবে না।
– রাজ ত্রিযামিনীর পাশ কাঁটিয়ে যখন দরজা খুলতে যাবে এমন সময় ত্রিযামিনী রাজের হাতটা ধরে ফেলে।
– কি করছো এসব? খালামনি জানতে পারলে কি হবে ভাবতে পারছো?
– তুমিও না। কি হবে আবার বিয়ে দিয়ে দিবে।
– ছাড়ো বলছি, যেতে দাও। অফিস যেতে হবে আমার।
– আজ তোমার কোন অফিস নেই। এই বলে ত্রিযামিনী রাজকে ধাক্কা দিয়ে খাটে ফেলে দেয়।
– এই কি করছো এসব?
– কি আবার হবু বরকে আদর করছি। ‘
– পাগল হলে তুমি?
– হুম আমি পাগল না পাগলী। তবে সেটা শুধু তোমার জন্য।
”এখন কিন্তু বেশি হচ্ছে”।
” কেন বুঝো না তোমাকে ভালোবাসি। কতদিন বলবো তোমাকে ভালোবাসি? আমি কি দেখতে খারাপ বলো? ” কথাটা বলে ত্রিযামিনী রাজকে যখন কিস করতে যাবে এমন সময় রাজ ত্রিযামিনীর গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিয়ে বললো,’ ত্রিযামিনী ভবিষৎতে যদি এমন কিছু করতে আসো পরিণাম এমনি হবে। আর মনে রেখো আমি কাউকে ভালোবাসতে পারবো না। ” কথাটা বলে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
-এদিকে অধরা রুমে গিয়ে কান্না করতে লাগে। রাজ ফ্রেশ হতে যাবার সময় অধরার রুম থেকে কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে বললো,’ এক ঘন্টার মাঝে আমি যেন আমার খাবার পায়। না পেলে আমার প্যান্টের বেল কারো গায়ে আঁচড়ে পরবে। ”
– অধরা রাজের কথা শুনে চোখ মুছতে মুছতে রান্না ঘরে চলে যায়। রান্না বসিয়ে অধরা রাতের কথা চিন্তা করতে লাগে। প্রতিটা রাত তার জন্য একেকটা দুঃস্বপ্ন কবে এ থেকে মুক্তি পাবে?
– হঠাৎ অধরার ফোন বেজে ওঠে। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কান্না ভেজা কন্ঠে বলে ওঠে,’ আপু তুমি কেমন আছো?.
– হ্যাঁ ইশু ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?
– হ্যাঁ আপু ভালো আছি। তোমাকে না খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। তুমি কাল আমার সাথে দেখা করতে পারবে?
– অধরা কোন কথা বলে না। কারণ রাজ তাকে যেতে দিবে না। ”
– কি হলো আপু বলছো না কেন দেখা করবে কি না? ”
– আচ্ছা ইশু আমি রাতে বলবো তোর সাথে কার দেখা করতে পারবো কি না? এখন রাখি অনেক বড় অফিসে জব করি তো। এখনি স্যার এসে পড়বে। ” এই বলে ফোনটা কেটে দিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগে অধরা। এদিকে কখন যে গ্যাসের চুলা থেকে তার শাড়িতে আগুন লাগে সে বুঝতেই পারে না।
-রাজ ফ্রেশ হয়ে আসার সময়, ‘ কিচেনের দিকে তাকাতেই দেখে অধরার শাড়িতে আগুন। রাজ কিছু না বলেই, অধরাকে এসে জড়িয়ে ধরে শুয়ে দু’তিনটা গড়াগড়ি দিয়ে রাজ অধরার বুকের উপর শুয়ে থাকে। ঘটনার আকস্মিকতার কারণে অধরা কিছুই বুঝতে পারে না। রাজ অধরার ঘাড়ের কাছে মুখ নিতেই অধরা চোখ বন্ধ করে ফেলে। কেন জানি রাজকে সরাতে মন চায় না তার।
– হঠাৎ, রাজ অধরার উপর থেকে উঠে পড়ে।
– অধরা নিচে থেকে উঠে রাজকে বলে,’ আপনি এমন করলেন কেন? রাতে এতোকিছু করে মন ভরে না আবার দিনে? কাঁদো কাঁদো গলায়।
– অধরার কথা শেষ না হতেই অধরা বুঝতে পারে তার গালে থাপ্পর পড়েছে। কেন থাপ্পর দিলো বুঝতে পারছে না। অধরার মনে হচ্ছে রাজের হাতের থাপ্পর খেতে খেতেই সে মারা যাবে।
– আপনি আমাকে মারলেন কেন?
– মারবো না কি করবো? তুই আমাকে জেলের ভাত খাওয়াবি? কোন নাগরের কথা চিন্তা করে রান্না করিস? শাড়িতে আগুন লাগে সে খেয়াল থাকে না।
– অধরা তার শাড়ির আঁচলের দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠল! শাড়ির আচঁল অনেকটা পুড়ে গেছে। রাজ চলে গেল। অধরা মনে মনে ভাবছে যতটা খারাপ ভাবছিলাম রাজকে ততটা খারাপ না।
– এদিকে বিকেল বেলা রাজ বললো,’ অধরা চলো হসপিটালে যাবো। রেডি হয়ে আসো।
– অধরা তাড়াহুড়া করে সেজে রাজের সামনে এসে দাঁড়াতেই রাজ বললো,’ আমার সাথে ওয়াশরুমে আসো। অধরার অনেক ভয় করছে। কারণ মানুষটাকে বিশ্বাস নেই, কথা নেই বার্তা নেই শরীরে হাত দেয়।
– রাজ অধরাকে ওয়াশরুমে নিয়ে বলে মুখে কি আটা-ময়দা সুজি মাখছিস তাড়াতাড়ি মুখ ধুয়ে নে নয়তো মার একটাও মাটিতে পরবে না। অধরা মনে মনে বলে যার জন্য সাজলাম সেই কি না মুখ ধুতে বলছে।
– অধরা মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। রাজ অধরাকে হসপিটালে নিয়ে আসে। হসপিটালে অধরা রিফাতকে আর সাথে সেদিনের রাস্তায় বিরক্ত করা ছেলেটাকে দেখে চমকে যায়। রাজ গিয়ে ফল আর জুসের বোতলটা রিফাতের কাছে রেখেই রিফাতকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘ দোস্ত তোর এ কাজ যে করছে তার কোন ক্ষমা নেই। আমি খুঁজ লাগিয়েছি।
– রাজ হসপিটাল থেকে বের হয়ে, অধরার হাতে একশ টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলে বাসায় চলে যাও আমি অফিস যাবে। এই বলে রাস্তায় রেখে রাজ চলে যায় অফিসে। অধরা কোনমতে বাসায় আসে! বাসায় আসতেই ত্রিযামিনী চা বানিয়ে নিয়ে আসতে বলে। অধরা চা বানাতে বানাতে মাগরিবের নামাযের আযান দিয়ে দেয়। তাই অযু করে, চা বানিয়ে ত্রিযামনীর রুমে রেখে যখন নামাযে দাঁড়ায় এমন সময় ত্রিযামিনী গরম চা অধরার গায়ে ছুড়ে মেরে বলে,’ কিরে রক্ষিতা এটা কিসের চা বানিয়েছিস? নাকি সারাদিন রাজকে কিভাবে পটানো যায় এটাই ভাবিস?
– গরম চা অধরার গায়ে পড়াতে অধরা আল্লাহ গো বলে চিৎকার মেরে জায় নামাযে পড়ে যায়।
– চলবে”””’