অবশেষে তুমি আমার পর্বঃ০৬

0
5051

#অবশেষে_তুমি_আমার
পর্বঃ৬
লেখাঃরাইসা।

আর মনে রাখিস গত কাল যে তিনলাখ টাকা লাগবো তোর সেটা ভুলে যাস না।
– অধরা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বলতে পারছে না। সে যে এখান থেকে যেতে পারবে না। ”

– সন্ধ্যা বেলা রাজ অধরাকে নিয়ে হোটেলে দিয়ে বের হয়ে আসে।
– অধরার খুব ভয় করছে, লোকটা অধরাকে ড্রিংকস নিতে বলছে। আর অধরার দিকে হিস্র পশুর মতো এগিয়ে আসছে।

-প্লিজ আপনি আমার কাছে আসবেন না। এলে খুন করে ফেলবো।

“কাম অন বেবী ইউ আর বিউটিফুল গার্ল। ইউ আর সো হর্ট। প্লিজ কাম অন। ইনজয় ইউর টাইম। ”কথাগুলো বলে লোকটা অধরার কাছে আসতে আসতে একদম কাছে এসে গেছে। অধরা পিছাতে পিছাতে একদম দেয়ালের সাথে লেগে গেছে! অধরা চোখ বন্ধধ করে ফেলে এক পর্যায়ে!

– দু’চোখ বন্ধ করে মনে মনে আল্লাহর নাম জপতে লাগে। আল্লাহ ছাড়া তার সতিত্বের হিফাযত কেউ করতে পারবে না। এদিকে লোকটা যখনি অধরার গায়ে হাত দিবে ঠিক তখনি, দরজার কলিং বেলটা বেজে উঠলো। লোকটা সেদিকে মনোযোগ না দিয়ে আবারো ড্রিংকস নিলো। ড্রিংকস নিয়ে আবার যখন অধরার শাড়ির আচলটা ধরে টান দিবে সে মুহূর্তে কলিংবেল আবারো বেজে উঠল।
লোকটা এবার খানিকটা বিরক্তি নিয়েই দরজা খুলে দিল। দরজা খুলতেই অধরা দেখলো দরজার বাহিরে পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে।

-পুলিশ দেখে অধরার দেহে প্রাণ ফিরে এলো। মনে মনে আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করলো। অধরার অনেক খুশি খুশি লাগছে। তবে এ খুশি সে বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারলো না। যখন পুলিশ অফিসার বললো,’ এই মেয়ে দেখে তো ভালো মনে হচ্ছে। আগে কখনো দেখিনি। এ ব্যবসা কতোদিন ধরে করছো? এত বড় শরীর নিয়ে কাজ কর্ম তো কিছু করতে পারো।

– পুলিশ অফিসারের কথাগুলো একদম কলিজায় এসে বিঁধছে। অধরা সব সহ্য করতে পারে কিন্তু তার চরিত্র নিয়ে কেউ কিছু বললে সে সহ্য করতে পারে না।

– কি হলো? কথা বলছিস না কেন? অারিফ সাহেব।
– জ্বী স্যার।

– মেয়েটাকে থানায় নিয়ে চলুন তো। এদের বিরুদ্ধে একশন না নিলে সমাজটাকে কলুষিত করে ছাড়বে। কার সকালে যখন এদের মা -বাবা দেখতে পারবে তার মেয়ে হোটেলে দেহ ব্যবসা করে তখন বুঝতে পারবে এ কাজ করা কতটা ঘৃণিত।

– অধরা কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। রাজের কথা বললে রাজ ফেঁসে যাবে। আর রাজ ফেঁসে গেলে তার কি হবে? এসব ভেবে অধরা পুলিশ অফিসারের কাছে হাতজোড় করে বলে,’ স্যার প্লিজ আমাকে থানায় নিবেন না। আমার বোন এসব দেখলে সহ্য করতে পারবে না। ওই মরে যাবে স্যার। প্লিজ আমাকে থানায় নিবেন না। আমাকে ছেড়ে দেন। আপনাকে কথা দিচ্ছি। আমার মায়ের দিব্যি দিচ্ছি আর কোনদিন এসব করবো না।
– আচ্ছা! তোমাকে তো এমনিতেই ছাড়তে পারি না। তোমার পরিচিত কেউ থাকলে তার নাম্বার দেন।

– অধরা রাজের নাম্বার দিলে, পুলিশ অফিসার রাজের সাথে কথা বলে রাইসাকে ছেড়ে দেয়।

– এদিকে রাত প্রায় দশটা বেজে গেছে। কোন গাড়িও পাওয়া যাচ্ছে না। অধরার খুব ভয় হচ্ছে। হঠাৎ মনে পড়ল রাজের নাম্বারে ফোন দিয়ে দেখি। কিন্তু আবার একটু পরেই মনে হলো, যে আমাকে এখানে একা রেখে যেতে পারে সে আর যাই হোক আমাকে অন্তত নিতে আসবে না। সাঁত-পাঁচ না ভেবে অধরা ভাবলো সামনে একটু হাটলেই বাস্টটপ সেখান থেকে না হয় বাসে করে বাসায় চলে যাবো। এই কথা ভেবে অধরা হাঁটতে লাগলো রাজ্যের ভয় নিয়ে। কিছুক্ষণ হাটার পর খেয়াল করলো, সামনে কতগুলো ছেলে বসে আছে। অধরা তাদের পাশ দিয়ে মাথাটা নিচু করে একটু দ্রুত হাটা দিতে লাগল।

– দোস্ত দেখ মেয়েটা হেব্বি না?
– আরে দোস্ত সত্যিই তো।

– অধরা তাদের কথার দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ না দিয়ে আরো দ্রুত হাটতে লাগল।
– এক পর্যায়ে ছেলে গুলো অধরার সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো। অধরা যেদিকে যেতা চাই সেদিকেই ছেলেগুলো দাঁড়িয়ে যায়।

”ভাইয়া আমাকে যেতে দেন পথ আগলে দাঁড়ালেন কেন?”

” আরে দোস্ত দেখ তো মেয়ে আবার ভাইয়াও ডাকে। এই যে ফুলটুসি ভাইয়া ডাকলে তো বুকে লাগে বুঝো না? আচ্ছা কাজের কথায় আসি কত নিবা বলো?”
”কি বলছেন এসব? আমাকে যেতে দেন। ” একরকম প্রায় কেঁদে দিয়েই কথাটা বললো অধরা।”

” আরে আরে কাঁদছো কেন? আদরের কথা শুনে কেউ কাঁদে? লক্ষী সোনা একদম কষ্ট দিবো না। এই তোরা বল আমি কি কষ্ট দিতে পারি?
” ছেলেগুলো বললো,’ নেহাল কখনো কোন মেয়েকে কী কষ্ট দিয়েছে?

” এই না হলে আমার বন্ধু? আচ্ছা তোরা কিছু বলিস না ফুলটুসি কান্না করলে যে আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। কথাটা বলে অধরার গাল টেনে দেয়। ”

” অধরা ভয়ে একদম চুপসে যায়! চতুর্দিক থেকে পাঁচজন ছেলে তাকে ঘিরে ধরেছে।’অধরা আমতা আমতা করে বললো,’ আপনারা আমার ধর্মের ভাই। প্লিজ আপনাদের বোনটাকে যেতে দেন প্লিজ। কথাটা বলে নেহালের দু’পা ঝাপটে ধরে। ”

” এই তোরা কি করছিস সরে যা। আমার ফুলটুসি ভয় পাচ্ছে। ফুলটুসি ভয় পেয়ো না আমি কি তোমাকে কষ্ট দিতে পারি? একদম কষ্ট দিবো না তোমাকে আদর দিবো, সোহাগ দিবো। ”

” অধরা ঠাস করে, নেহালের গালে চড় বসিয়ে দেয়। বাকি ছেলে গুলো অধরাকে ধরতে আসে। ”

” এই তোরা কি করছিস? একদম টাঁচ করবি না,
দেখছিস না ভয় পাচ্ছে। একদম ভয়ে পেয়ো না। আসো তোমাকে কুলে নেই। হেটে যেতে তোমার কষ্ট হবে। নেহাল অধোকে জোর করে কুলে তুলে নিয়ে বলতে লাগলো,’ বলো কেউ তোমারে এভাবে কুলে নিবে? তুমি দেখো আমার চোখের দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যাবে। আহ! ফুলটুসি তোমার শরীর তো বেশ নরম একদম তুলোর মতো। আর চুলে কি শ্যাম্পু করেছে? আমি জানতাম তুমি আমার জন্যই সেজেছো। কারণ আমি যে ফুলটুসিকে আদর করবো। অধরা গলাকাটা কবুতরের মতো হাত – পা ছুটাছুটি করছে কিন্তু নিজেকে ছাড়াতে পারছে না। নেহাল অধরাকে কুলে নিয়ে নতুন বিল্ডিং কনষ্টাকশনের কাজ হচ্ছে সেখানে নিয়ে যায়। যখন অধরার গা থেকে নেহাল শাড়ি খুলতে যাবে। তখনি কে যেন এলোপাতাড়ি গুলে ছুড়ে নেহাল পুলিশ ভেবে ভয়ে পেয়ে চলে যায়।

– অধরা খরগোশ ছানার মতো চোখ বন্ধ করে আছে। এখনো ভয়ের রেশ কাটছে না।

– এই মেয়ে এতো রাতে একা কেন এদিক দিয়ে যাচ্ছিলি?
– অধরা কিছু বলে না।

– এই কথা বলছো না কেন ধমক দিয়ে!

– অধরা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিল!
– আশ্চর্য কাঁদছো কেন? আচ্ছা এসব কথা পড়ে হবে আগে বলো, ‘ বাসা কোথায় তোমার?
” নিউ মার্কেট। ”

” ওহ্! আচ্ছা। গাড়িতে উঠো তাহলে।”

” না না আমি সামনে বাসস্টপ থেকে বাসে করে চলে যাবো। অধরার ভয় হচ্ছে এ ছেলে যদি গাড়িতে তুলে তার বাসায় নিয়ে যায়। ”

” এই মেয়ে কি ভাবছো? গাড়িতে উঠো বলছি। ”

” না না ভাইয়া আপনার উপকার আমার চিরজীবন মনে থাকবে এখন আমাকে যেতে দেন। ”

” এই গাড়িতে উঠবে নাকি রাইফেল তোমার মাথায় ঠেকিয়ে ট্রিগার টেনে দিবো?”

”অধরা এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে দিল। একবিপদ না যেতে না যেতেই আরেক বিপদ। ”
” এই চোখ থেকে আরেক ফোঁটা পানি পড়লে একদম মাথায় মেরে দিবো কিন্তু। গাড়ি উঠে বসস।”

” অধরা ভয়ে পেয়ে যায়। তাড়াহুড়া করে গাড়িতে উঠে পড়ে। ”

” তিয়াস গাড়ি চালাতে চালাতে বলে,’ হাই আমি তিয়াস চৌধুরী। আপনি?
” আমি অধরা। ”
” তিয়াস একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে অধরা শুধু হ্যাঁ, হু, উত্তর দিয়ে যাচ্ছে! ”

” এদিকে অধরা বাসায় সামনে এসে বলে এখানেই দাঁড়ান। তিয়াস অধরাকে নামিয়ে দিলে, অধরাকে তিয়াসকে কিছু না বলেই চলে যেতে থাকে।

” এই যে ম্যাডাম এক কাপ চা তো বাসাতে নিয়ে খাওয়াতে পারেন?”
”’ অধরা এই বার তিয়াসের দিকে তাকালো। দেখতে শুনতে-একদম হিরোর মতো। যে কোন মেয়েই তিয়াসের প্রেমে পড়ে যাবে। রাস্তায় অধরা ভয়ে একবারো তাকায়নি। কিন্তু এখন তাকিয়ে অনেকটা অবাক হয়ে যায়। ”

” কি হলো বাসায় আসবো?”

” আমাদের বাড়ির চা এতো সস্তা না। ” কথাটা বরে হনহনিয়ে অধরা বাসায় এসে পড়লো।

” তিয়াস মুচকি হেসে গাড়ি নিয়ে চলে গেল।”

” রাজ বেলকণিতে দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখছিল। আর রাগে সাপের মতো ফুসছিল! মনে হচ্ছে অধরাকে কাঁচা খেয়ে ফেলবে! ”

” অধরা বাসায় আমতেই ত্রিযামিনী বললো,’ কিরে রাত কয়টা বাজে? তোর লজ্জা করে না পরপুরুষের সাথে রাত কাটিয়ে এসে আমাদের বাসায় আসতে। রাজ আর কোন কাজ পায় নি বাসাটাকে পতিতাদের আবাসস্থল বানিয়ে ফেলছে। ”

” আপনি কিন্তু বেশি বলছেন। আপনি আমার চরিত্র নিয়ে কিছু বলবেন না।”

” বাহ! তুই রাত কাটিয়ে আসতে পারিস আর আমি বলরেই দোষ। দাঁড়া আজকেই রাজকে বলছি যে এই প্রস্টিটিউট কে বাসা থেকে যেন বের করে দেয়।
” বললাম না আমার চরিত্র নিয়ে কিছু বলবেন না। ”
” বলবো না মানে হাজার বার বলবো!

– আরেকবার বলে দেখেন।
– কি করবি তুই নষ্টা মেয়ে আমাকে?”

” অধরা এবার সহ্য করতে পারে না। নিজের রাগ কন্টোল করতে না পেয়ে ত্রিযামিনীর গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দেয়। ”

” ত্রিযামিনীকে চড় দেওয়া দেখে রাজ অধরার গালে এমন জুরে থাপ্পর মারে। থাপ্পর খেয়ে অধরা ফ্লরে পড়ে যায়। ঠোঁট কেটে ফেঁড়কি দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। ”

” রক্তমাখা মুখ নিয়ে বলে, আমাকে আরো মারো কিন্তু কেউ আমাকে দুশ্চরিত্রহীনা বললে আমি সহ্য করতে পারবো না।”

”রাজ দেখছো চাকরানী, নষ্টা টা আমাকে মারলো। রাজের কাঁধে হাত রেখে।”

” ত্রিযামিনী সরি, আমার জন্য তোমার এমন হলো। তুমি ঘুমাও বাকিটা আমি দেখছি। ”এই বলে অধরার চুলের মুঠি ধরে রাজ তার রুমে নিয়ে যেতে লাগল। অধরা বার বার বলছে ছেড়ে দেন আমাকে। আমার কষ্ট হচ্ছে। ”

” অধরার কথা রাজের কর্ণপাত হচ্ছে না।” রাজের চোখ-মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। অধরাকে বাহিরে ছেলের সাথে দেখার পর থেকেই রাজের মাথায় রক্ত উঠে যায়। রাজ অধরাকে রুমে নিয়েই দরজা লাগিয়ে দেয়। ”

– প্যান্টের বেল খুলে অধরার শরীরে কয়েক বাড়ি দিতেই অধরা মাগো বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে।” কান্না করতে করতে বলে,’ প্লিজ আমাকে মারবেন না।

– তাই বুঝি? কেন মারবো না? আমাকে দিয়ে তোর হয় না? ওই ছেলের সাথে কি? আমি কি তোর চাহিদা ফুলফিল করতে পারি না?”
” ছি! এসব কি বলছেন? আপনি যেমন আপনি মানুষকে তেমনি ভাবেন।” আপনার মতো তিয়াস নয়। তিয়াস অনেক ভালো একটা ছেলে।”

” বাহ বাহ একরাতেই তোকে এমন কি করলো যে ভালো হয়ে গেলো? ওহ্ বুঝছি আমার সাথে যেটা হয়নি সেটা ওর সাথে তাই না?”

” অধরা এবার রাজের গালে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিয়ে বললো,’ একদম বাজে কথা বলবেন না।’ আপনি ছাড়া কেউ আমাকে স্পর্শ করেনি। আরর যেন কেউ না করে। কথাটা বলে কেঁদে দিল। অধরা রাজকে চড় দিয়েছে এটা ভাবতে আরো বেশি কান্না পাচ্ছে।
” রাজ চড় খেয়ে নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না। অধরার গায়ে এলোপাতাড়ি বেল্ট দিয়ে বাড়ি দিতে লাগলো। এবার অধরা বাধাঁ দিচ্ছে না। ” শুধু চোখের পানি ফেলছে। রাজ এবার বেল্ট ফেলে দিয়ে বললো,’ এতো দিন যা করেনি আজ তা করবো এই বলে অধরার শাড়ি সম্পূর্ণ খুলে ফেলে তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।

চলবে””””””