অবশেষে তুমি আমার পর্বঃ৩৮

0
3810

অবশেষে_তুমি_আমার
পর্বঃ৩৮
তাসনিম_রাইসা


– অধরা জানালা দিয়ে তাকিয়ে থমকে গেল। তিয়াস ত্রিযামিনীর সাথে কথা বলছে।

– তিয়াস ত্রিযামিনীকে বলছে জান আর কয়েকদিন তারপর আমরা দু’জন হবো হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। এখন অধরাকে বিয়ে করা সময়ের ব্যাপার।

– অধরাকে বিয়ে করে আবার আমাকে ভুলে যেয়ো না।
– তোমাকে ভুলে গেলে বাঁচবো কিভাবে? পাঁচবছরের ভালোবাসা কি একটা বিবাহিত মেয়ের জন্য নস্ট করবো। বিয়েটা করবো তো অধরার সম্পত্তির জন্য। অধরা যখন তোমাদের বাড়িতে কাজের মেয়ে হিসেবে দেখি তখনি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তুমি জানতে না অধরা রাজের চেয়েও শতগুণ ধনী। বাট আমি জানতাম। কারণ লন্ডনে তারই ফ্যাক্টরি আমাদের ফ্যাক্টরিকে শত কোটি টাকার প্রজেক্ট দিয়েছিল।

– তাহলে এই জন্য অধরাকে নিয়ে কিছু বলোনি তুমি?
– হ্যাঁ! অধরা যখন তোমাদের বাড়িতে প্রথম দেখি। তখনি সবটা বুঝে প্ল্যান করে ফেলি। আর সবকিছু সম্ভব হয়েছে তোমার জন্য। এখন আর একটু কষ্ট করতে হবে। তুমি রাজকে যেভাবে পাও নিজের করে নাও। যেন রাজ অধরাকে ঘৃণা করে অধরাও রাজকে ঘৃণা করে। আমি যে প্ল্যান করেছি অধরার বিয়েতে রাজি না হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। বিশ্বাসটা অর্জন করে নিয়েছি। আর একটু ড্রামা করতে হবে। কোনরকম বিয়েটা করতে পারলেই হলো। কৌশলে সব সম্পদ লিখে নিয়ে ইশুকে মেরে অধরাকে ফাঁসিয়ে দিবো।

– ওয়াও গ্রেট আইডিয়া। তবে বেবিটাকে কি করবে?
– কোন অনাত আশ্রমে দিয়ে দিবো। কোন পথের কাঁটা রাখবো না।

– ওয়াও দারুণ আইডিয়া তো। আচ্ছা তিয়াস তুমি সত্যিই একটা জিনিয়াস। কত নিঁখুতভাবে প্ল্যান করেছে। এতিম বাচ্চাদের নিয়ে। রেস্টুরেন্টে রাজের সামনে অধরার সাথে কথা বলার অভিনয়। একদম পারফেক্ট ছিল।

– হা হা । দেখতে হবে না আমি কে।

– আচ্ছা তিয়াস সব বুঝতে পারছি। বাট আমার আর তোমার যে ভিডিওটা ইডিট করে রাজ আর আনিশার ভিডিয়ো বানানো হয়েছে সেটা কিভাবে করলে? অধরার তো সাইবার স্পেশালিস্ট আছে। এছাড়া একটা ভিডিয়ো নয় আমার আর তোমার জায়গায় রাজ আর আমার একটা ভিডিয়ো ইডিট করা হয়েছে। পরীক্ষায় ধরা পড়েনি সেটা আমি আর তুমি ছিলাম। রাজ আমাকে আর আনিশাকে ছুঁয়েও দেখেনি খারাপ নজরে। বাট হাউ পসিবল সুইটহার্ট?

– আরে জানেমন আমি জানতাম অধরা রাজের ব্যাপারে কোন খারাপ কথা বিশ্বাস করবে না। কারণ অধো এখনো রাজকে ভালোবাসে তাই ভিডিয়োটা বিশ্বাস করার প্রশ্নই উঠে না । অধরাকে মেসেঞ্জারে ভিডিয়ো পাঠালে আমি তার সাইবার স্পেশালিস্টের সাথে ২ লক্ষটাকার কন্টাক্ট করি। শুধু একটি কথা বলার জন্য। তা হলো ভিডিয়োটা আসল। কোন ইডিংটিং নয়। আর তার সাইবার স্পেশালিস্ট খুব সুন্দর করে গুছিয়ে বললো,’ ম্যাম ভিডিয়োটা কয়েকবার দেখেছি চেক করে। বাট ভিডিওতে ইডিটের কোন বিন্দুমাত্র চিহ্ন নেই। শুধু আমি নয় আমার বন্ধু জনকেও দেখেছি। ভিডিয়োটা রিয়েল।

-তিয়াসের কথা শুনে অধরার বুকের ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে। বারবার রাজের সেই কথাটা কানে এসে বারি খাচ্ছে,” অধরা প্লিজ বিলিভ করো আমি চরিত্রহীন নয়। ” তিয়াসের কথা শুনে অধরার পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে। না জেনে সে রাজকে কতই না কষ্ট দিয়েছে! নিজেকে খুব বড় অপরাধী মনে হচ্ছে তার। রাজ কী তাকে ক্ষমা করবে। তিয়াস ভদ্রতার আড়ালে কতটা খারাপ অধরার আর বুঝতে বাকি রইল না। এই তিয়াস আর ত্রিযামিনীই তার কাছ থেকে তার রাজকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। অধরার বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে। বারবার রাজের সে অসহায় চেহারাটা ভেসে উঠছে। অধরা জানালায় পাশে দাঁড়িয়ে তিয়াস আর ত্রিযামিনীর কথাগুলো শুনছে। তার মন চাচ্ছে তিয়াসের গালে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা চড় বসিয়ে দিতে।

– আচ্ছা সুইর্টহার্ট এখন রাখছি। অধরার কাছে যেতে হবে। অধরাকে গিয়ে বলবো আমি দেশে চলে যাচ্ছি। আর রাজকে নিয়ে শেষ ড্রামাটা করে আসবো।

-আচ্ছা বেবি একটু আদর দিয়ে দাও।

– উম্মমমাহ এতগুলা আমার বাবুটাকে।

– তিয়াস কল কাটার আগেই অধরা তিয়াসের বাসা থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠে তার বাসায় এসে পড়লো। ইসু রাইমাকে কুলে নিয়ে রুমের ভেতর পায়চারি করছে। ডির্ভোস লেটারটা এখনো টেবিলের উপর পড়ে আছে।

– অধরা কাঁপাকাঁপা হাতে ডিভোস পেপারটা তার হাতে নিল। কেন জানি খুব কান্না পাচ্ছে তার।ডির্ভোস পেপারটা দেখে আরো বেশি কান্না পাচ্ছে।
ডির্ভোস পেপারের একটা কোনে রাজের সাইন দেখে বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো। টান দিয়ে ডির্ভোস পেপারটা ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলল।

– ইশু অধরার ডির্ভোস পেপার ছিড়তে দেখে দৌড়ে অধরার কাছে এসে বললো,’ আপু তুমি ডির্ভোস পেপারটা ছিড়লে কেন?’ অধরা ইশুকে জড়িয়ে ধরে ছোট্ট বাচ্চার মতো কান্না করে দিল।

– আপু কি হয়েছে বলো? তুমি এভাবে কাঁদছো কেন? আর ডির্ভোস পেপার এভাবে ছিড়লে কেন?

– ইশু আমি যে আমার ভালোবাসাকেই অপমান করেছি। আমার কলিজার টুকরা রাজকে কতটা অপমান করেছি। ও কি আমাকে ক্ষমা করবে? ইসু আমার রাজ খারাপ ছিল না। সব তিয়াসের চক্রান্ত। ওসব ভিডিয়ো সব ইডিট করা ছিলো। যেগুলোর জন্য রাজকে এতটা ভালোবাসার পরো দূরে সরিয়ে দিয়েছি। রাজ কী আমাকে ক্ষমা করবে?

– আপু আমি তো তোমার কথা কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।
– ইশু রাজকে আমার সামনে তিয়াস খারাপভাবে উপস্থাপন করছে।এতিমখানার বাচ্চাদের খাওয়ানো, রাজের ভিডিয়ো। সব তিয়াসের অভিনয় ছিলো।

– আপু তুমি তো রাজ ভাইয়াকে ভালোবাসতে। এতটা ভালোবাসার পরও তাকে চিনতে পারলে না। তুমি বাংলাদেশে যাও রাইমাকে নিয়ে। তোমার জন্য না হোক রাইমার জন্য হলেও রাজ ভাইয়া তোমাকে দূরে সরিয়ে দিবে না। সত্যিই তো রাজ আমাকে ক্ষমা করে দিবে? ও যদি আমাকে ক্ষমা না করে তাহলে আমি বাঁচবো কাকে নিয়ে।

– এদিকে রাজ দেশে আসতেই ত্রিযামিনী দৌড়ে গিয়ে রাজকে জড়িয়ে ধরে।

– এই ত্রিযামিনী এটা কি করছো?
– রাজ এই কতদিন তোমাকে কতো মিস করেছি জানো? রাজ আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। দিবে কি তোমার হৃদয়ের ছোট্ট ঘরে আমাকে একটু ঠাঁয়?

– আনিশা পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
– রাজ ত্রিযামিনীকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,’ ত্রিযামিনী তোমার এতটা অধঃপতন হবে ভাবিনি। আন্টি কোথায়? আন্টিকে বলো তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করছি এই মাসেই।

– রাজ মজা করো না সত্যিই তোমাকে না পেলে আমি বাঁচবো না। আমি সুসাইড করবো।

– ত্রিযামিনী প্লিজ আমাকে একা থাকতে দাও।

– ত্রিযামিনী তার রুমে চলে গেল।

– আনিশা আর রাজ একই রুমে বসে আছে। রাজ নীরবতা ভেঙে প্রথমেই বললো,’ আনিশা তোমার ভালোবাসার মানুষের সাথে দেখা হইছে? তুমি না কাল এয়ারর্পোট থেকে কোথায় জানি দেখা করতে গিয়েছিলা?
– হুম দেখা হয়েছে।তবে সে আমাকে নয় অন্য কাউকে ভালোবাসে। তার ভালোবাসার কাছে আমার ভালোবাসা হেরে গেছে।

– কি বলো তোমার মতো মেয়েকে রিজেক্ট করে এমন ছেলেও এ দেশে আছে?
– বাদ দাও রাজ। বাবার শরীরটা ভালো না। আমাকে দু’একদিনের মধ্যে আমেরিকা চলে যেতে হবে।

– ও আচ্ছা ।

– আনিশা মনে মনে বলছে রাজ তুমি কি কিছুই বুঝো না আমি যদি অন্য কাউকেই ভালোবাসতাম তাহলে ছায়ার মতো তোমার পিছু পিছু থাকতাম না । তোমার সুখ যে আমার সুখ। আমি এই হৃদয়ে তোমার স্থানে আে কাউকে বসাতে পারবো না। জীবনের বাকি দিনগুলো তোমার স্মৃতি নিয়েই কাটিয়ে দিবো।

– অধরা রুমো বসে আছে। এমন সময় একটা মেয়ে এসে বলে গেলে ম্যাম আপনার সাথে একটা মেয়ে দেখা করতে চায়।

– অধরা বললো,’ পাঠিয়ে দাও।”

– অধরা বিষন্ন মনে সুফায় বসে আছে।এমন সময় বাইশ- তেইশ বছরের একটি মেয়ে অধরার কাছে এসে বললো,’ ম্যাম রাজ কে চিনেন?
– অধরা মেয়েটার মুখে রাজের নাম শুনে চমকে উঠলো।

– কি হলো ম্যাম? প্লিজ বলেন না উনি কোথায় থাকেন?
– কেন উনার পরিচয় নিয়ে কি করবে?
– প্লিজ ম্যাম বলেন। কেননা উনার সন্তানের মা হতে চলছি আমি। গোপনে বিয়ে করেছি আমরা দু’জন। এখন আমার গর্ভে সন্তান। রাজ আমাকে ফেলে চলে গেছে।শুনলাম আপনি নাকি উনার ঠিকানা জানেন। প্লিজ ম্যাম বলেন না? আমি যে আমার স্বামীকে খুব ভালোবাসি। ও কেন করলো আমার সাথে এমন।

– মেয়েটার কথা শুনে অধরার মাথাটা কেন জানি ঘুরছে। এমন সময় তিয়াস এসে বললো,’ অধরা আজকে রাতে আমি দেশে চলে যাচ্ছি।’ এই কতদিন তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি এখানে থেকে । ক্ষমা করে দিয়ো কষ্ট পেলে আমার ব্যবহারে।

-তিয়াসের মুখে রাজ নামটা শুনেই মেয়েটা বললো,’ ভাইয়া আপনি আমার রাজকে চিনেন?’

– আপনার রাজ মানে?
– রাজ আমার স্বামী। আমার রাজ হবে না কার হবে?
– ও আমাকে বিয়ে করে দেশে চলে গেছে। এদিকে আমি মা হতে যাচ্ছি।

– হুয়াট! রাজ ভাইয়া এটা করতে পারলো? আমি বিশ্বাস করি না। আর অধরা চলে যাচ্ছি। যাওয়ার আগে ছোট্ট একটা অনুরোধ রাজ ভাইয়ার সব অপরাধ ক্ষমা করে তোমার করে নিয়ো। আর ভালোবাসা না হয় তোমাদের দু’জনের মিলনেই পূর্ণতা পাক। বড্ডবেশি ভালোবাসি যে তোমাকে অধরা। নিজের থেকেও বেশি।

– তিয়াস কথাটা শেষ করার আগেই অধরা তিয়াসের গালে ঠাস -ঠাস করে কয়েকটা চড় বসিয়ে দিয়ে বললো,’ এই তোর এতটা খারাপ কিভাবে? আমার কলিজার টুকরাকে আমার বুক থেকে সরিয়ে ভালোবাসার কথা বলিস। আর এই মেয়ে কতটাকা নিয়েছো? অভিনয় করার জন্য

চলবে”””””’