#অবশেষে_পূর্ণতা
#লেখক_আহম্মেদ_নীল
#পর্ব_২
-“ভাই,ভাই আমাদের ভুল হয়ে গেছে, প্লিজ আমাদের মাফ করে দিন কথাগুলো ওনার পা ধরে বলছে ছেলেগুলো আর এই দৃশ্য দেখছে পুরো ভার্সিটির ছেলে-মেয়ে । সবাই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখছে নীল চৌধুরীর এমন সাহসিকতার প্রতিবাদে। একটু পর নীল চৌধুরী বললো,এই তোরা কার কাছে ভুল করেছি.?ছেলেগুলো এবার বুঝতে পারলো,আমার কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া তাদের আর শেষরক্ষা হবেনা। আপু আপু প্লিজ আমাদের মাফ করে দিন। আমি বললাম,আচ্ছা আপনারা আমার পা ছাড়ুন। একটু পর আমি ক্লাসের দিকে অগ্রসর হচ্ছি আর মনে মনে ভাবছি,বাংলাদেশ প্রতিটি ভার্সিটিতে কিংবা কলেজে যদি এমন একজন সৎ প্রতিবাদী আর সাহসী যুবক থাকতো, তাহলে আমাদের মতো মেয়েরা কোন জায়গায়,অসম্মানিত আর ইভটিজিং এ স্বীকার হতো না।
‘দেখতে দেখতে পুরো দুইটা মাস পার হয়ে গেলো আমার। এই ২মাসে নিজেকে পরিবর্তন করার জন্য অনেকটা চেষ্টা করেছি বললে বলা যায়।ভার্সিটিতে যেতে এখন আমার কোন সমস্যা হয়না। প্রথম প্রথম একটু সমস্যা হলেও,পরবর্তীতে ভার্সিটির অনেকের সাথে আমার আলাপ হয়। রিশিতা,মাইমুনা আর লিলা নামে ৩ টা বেস্ট ফ্রেন্ড তৈরি হয়েছে। এদের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি হওয়ার পর থেকে আমার মনটা বেশ ভালো লাগে,বিশেষ করে ভার্সিটিতে থাকা সময় টুকুতে।
(লেখক_আহম্মেদ_নীল)
“নিজের রুমে বসে বসে পড়াশোনার মাঝে নিজেকে ব্যস্থ করতে মগ্ন আমি। তবে আজও মনে পড়ে আতিক এর সাথে কাটানোর প্রতিটা মূহুর্তের কথা। ৬ টা বছরের কাটানো জীবনের প্রতিটা মূহুর্ত ভুলা এতটা সহজ না। বইটা কিছুক্ষনের জন্য বন্ধ করে খোলা জানালার পাশে বসে ভাবছি,আতিক তো তার বুকে আমাকে একটা সময় জায়গা দিয়ে আমাকে জড়িয়ে রাখতো,তাহলো আজ কেনো তার বুকে অন্য কারো বসবাস.?ওই বুকে আতিক আমাকে জড়িয়ে ধরে কত-শত ভালোবাসার কথা দিয়েছিলো,কত প্রতিজ্ঞা দিয়েছিলো। সেসব কি করে আজ মিথ্যা হয়ে গেলো.? তাহলে সবকিছুই কি উপস্থিত সময়কে সুন্দর করার জন্য মিথ্যা বলেছিলো,সবকিছুই কি তারমানে নাটক ছিলো.? কথাগুলো নিজের মনকে নিজে প্রশ্ন করছি আর দু নয়ন বেয়ে টপটপ করে নোনাজল গাড়িয়ে পড়ছে। তখনি মনে পড়তে লাগলো,আতিক এর বলা সেই লাইনগুলো,
💮🌸
তুমি আসবে বলে আজও পথ চেয়ে বসে থাকি..!
কোনো এক শুকতারাদের মেলায় আজও তোমায় খুজি..!
আজও বসন্তের দক্ষিনা বাতাসে কান পেতে থাকি….!
কেননা..!
কানে কানে এসে বলবে তুমি আমায়….!
প্রিয়তমা…!
তোমায় আমি আজও ভালোবাসি..!
জানো প্রিয়তম…!
তোমায় আমি সেই রংধনুর সাত রঙে খুজি..!
বারানদায় দাড়িয়ে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে..!
আজও তোমার অপেক্ষায় থাকি…!
কেননা…!
আমার অপেক্ষার শিহরণে শুধুই তুমি….!
🌸🌸🌸লেখনিতে(ফারজানা আক্তার)💮
-‘এতোটা নিখুঁতভাবে মানুষ কেমন করে অভিনয় করতে পারে.?কই আমিতো তার এই মিথ্যা অভিনয়গুলোকে ধরতে পারিনি। তারমানে কি আমি বোকা ছিলাম বলে,আতিক আমার সাথে এতবড় প্রতারনা করতে পারলো। ছয়টা বছর ধরে মিথ্যা স্বপ্ন আর সংসার করার মিথ্যা অভিনয় করতে পারলো আমার সাথে। এই ছয়টা বছরে কি আমার জন্য আতিকের মনে একটুও জায়গায় তৈরি হয়নি.? হয়তো একটুও জায়গা তৈরি হয়নি। যদি হতো তাহলে অন্তত আমাকে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারতো না। কই আমিতো তাকে ছেড়ে চলে গেলাম না। আমিতো পারতাম সকল দোষ তার কাধে চাপাতে,বাবার বাড়ি কিংবা মানুষের সাথে,আতিকের সমস্যার কারনে এত চেষ্টার পরও বাচ্চা জন্ম দিতে ব্যর্থ হচ্ছি। (লেখক_আহম্মেদ_নীল)কিন্তুু আমি এসব কথা কখনো কল্পনাতেও মাথায় আনিনি। আমি বিশ্বাস করতাম,আল্লাহ চাইলে আমাদের একদিন বাচ্চা হবে।
“-আমার চোখ থেকে টুপটুপ করে নোনাজল গড়িয়ে পড়তে থাকলো। চোখ থেকে বের হওয়া অশ্রু কনাগুলো যে বড্ড বেশি অবাধ্য। নিজের ভেতরে থেকেও অন্য জন্য অবাধ্য হয়ে গড়িয়ে পড়ে। তাকে মানা করলেও সে কারো কথা শুনেনা।
আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলাম,আচ্ছা প্রতারকগুলো কেনো সবসময় ভালো থাকে.? হুম বুঝেছি হয়তো তারা মানুষের মন ভেঙ্গে পৌচাশিক আনন্দ পায়।(লেখক_আহম্মেদ_নীল) একটা মানুষকে কষ্ট দিয়ে এই পৌচাশিক আনন্দ পাওয়াটা কি খুবই জরুরি।অথচ তারা যাদের মন ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়।তারা বুকে কষ্ট নিয়ে তারা দিনশেষে বেঁচে থাকে। তাদের আর্তনাদ আর আত্নচিৎকার কেউ উপলব্ধি করতে পারেনা। হ্যা পৃথিবীতে আজ শুধুই প্রচারকদের রাজত্ব। তারা সবসময় বুক ফুলিয়ে সমাজে ঘুরে বেড়ায়।
‘-ফারিয়া দ্রুত নিজের চোখের জলগুলো মুছে বলতে থাকে,না আমি কিছুতেই কষ্ট পাবোনা,কান্না করে নিজেকে অসম্মান করবো না।আমিতো কোন অন্যায় কিংবা অপরাধ করিনি,তাহলে আমি কেনো কষ্ট পাবো.? আমিও দেখিয়ে দিবো আতিক হাসানকে আমিও পারি।আমরা মেয়েরাও পারি নিজের যোগ্যতা নিজে তৈরি করতে।আমিও আমার জীবনের মুভ অন করবো।
‘আমি যদি সেদিন আতিক এর বাসা থেকে আসার আগে কিংবা ডিভোর্স পেপারে স্বাক্ষর করার সময় যদি বলতাম,আমি মা হতে চলেছি। হয়তো আতিক আমাকে বাসা থেকে বের করার বিপরীতে আমাকে সযত্নে তাদের বাসায় রাখতো। কিন্তুু আমি চাইনি,তারা প্রয়োজনে আমাকে তাদের বাসায় রাখুক,আমিতো বুঝে গেছি আতিক একটা স্বার্থপর।আমি চাইনি বাচ্চার দোহায় দিয়ে তার কাছে থাকি। আতিক যেমন বাবা ডাক শোনার জন্য পাগল ছিলো,ঠিক তেমনি আমিও তো মা ডাক শোনার জন্য পাগল ছিলাম। কিন্তুু ভাগ্যর কি নির্মম পরিহাস,যখনি আমি মা হলাম সেই দিনি আতিত দ্বিতীয় বিয়ে করে নিলো। সে তো চাইলে আমাকে কাজের মেয়ে হিসাবেও রাখতে পারতো,কিন্তুু সে কি করলো,আমাকে ডিভোর্স দিয়ে অতিদ্রুত তাড়ানোর ব্যবস্থা করলো। আমিও একপ্রকার বাধ্য হয় বাসা থেকে বের হতে।
“সেদিন বাবা আইনি ব্যবস্থা নিতে গেলেও আমি বাবাকে বাধা দিয়,কারন যেখানে সে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছি সেখানে আইন কি করতে পারবে। এই দেশের আইন তো টাকার সাথে তাল মিলিয়ে চলে। আর যদি আইনি ব্যবস্থা নিয় তাহলে ওরা যেনে যেতে পারে, বাচ্চাটার কথা।তারপর ওরা হয়তো উঠে পড়ে লাগতে পারে আমার কাছ থেকে বেঁচে থাকার শেষ আশ্রয়টুকু কেড়ে নেওয়ার জন্য। (লেখক_আহম্মেদ_নীল)নিজেকে শান্ত করে সেদিন বাবাকে বলেছিলাম,যত দ্রুত পারো এই শহর ছেড়ে দূরে কোথায় চলে যাওয়ার জন্য। যাতে করে সমাজের মানুষ আমার বাচ্চাকে আর বাবাকে নিয়ে কুটকথা না বলতে পারে।আমাদের সমাজের কাজ হচ্ছে সফল মানুষদের নিয়ে হিংসা করা ব্যর্থ মানুষদের নিয়ে ঠাট্টা করা। তাই এই শহরে আমি আর থাকতে চায়না,যে শহরে স্বার্থপরদের বসবাস সে শহরের বাতাসেও বিষ মিশ্রিত।
-‘দুদিন পর বাবাও তড়িঘড়ি করে ওই শহরে ছেড়ে নতুন শহরে পাড়ি জমায়। আমরা ঢাকায় চলে আসি। পড়াশোনা জানতাম তাই নিশ্চয়ই কোন একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে এটা ভেবে ঢাকায় এসেছে ভার্সিটিতে পড়ার পাশাপাশি কয়েটকটা টিউশনি করায়। মোটামুটি যা টাকা পায় তাতে বাবার কাছ থেকে আলাদাভাবে পড়াশোনার খরচ নেওয়া লাগেনা।
‘সন্ধায় টিউশনি শেষ করে বাসায় ফেরার উদ্দেশ্য হচ্ছি। চৌ রাস্তায় মৌড়ে আসতেই দেখলাম কয়েকটা ছেলে আমার দিকে ডেপডেপ করে তাকিয়ে আছে। মনের ভেতরে কেমন যেনো একটা খটকা লাগতে শুরু করলো,মনে হচ্ছে ছেলে দুইটা আমার দিকে কু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি একটু টানা পায়ে হাটার জন্য চেষ্টা করছি। খানিক যেতেই দেখতে পেলাম ছেলেগুলো আমার পিছু নিয়ে আসতেছে। (লেখক_আহম্মেদ_নীল)মনের ভেতরে এক অজানা ভয় কাজ করছে আর আশেপাশে তেমন কোন মানুষও দেখা যাচ্ছে না, যে হেল্প চাইবো। ভয়ে গলাটা একদম শুখিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। আর খানিকটা গেলেই সামনে রিকশা পাওয়া যাবে,,তবে একটু পর যা দেখালাম,তা দেখার জন্য আমিও মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আমার পিছনে থাকা ছেলেগুলো আর দেখতে পাচ্ছি না।
“-মনে মনে ভাবছি,কোথায় গেলো,পিছনে তাকিয়ে যেই সামনের দিকে তাকাতেই আমি চিৎকার করতে যাবো এমন সময় আমাকে বললো,কথা বললে খারাপ কিছু হয়ে যাবে। একটা ছেলে একপা দুপা করে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো,আমিও নিজেকে বাঁচানোর জন একপা একটা করে পিছাতে থাকি আর মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে থাকি। আমি এবার বলতে থাকি,প্লিজ আমার দিকে আসবেন না। প্লিজ আমাকে পথের মধ্যে এমন করবেন না আপনাদের পায়ে ধরি। আমিতো আপনাদের বোনের মতো তাইনা.?
‘একটা ছেলে বলতে লাগলো,সবি যদি বোন হবে,তাহলে কাদের নিয়ে ফুর্তি, মাস্তি করবো.?ওপাশ থেকে চুল বড় বড় একটা ছেলে বলতে লাগলো,মামা মালটা একদম একের।মনে হচ্ছে এলাকাতে নতুন এসেছে। আজকে অনেক মাস্তি করবো। তারাতাড়ি বসকে কল করে গাড়ি নিয়ে চলে আসতে বল। কথাগুলো শুনছি আর আমার ভেতরের রুহ কেপে উঠছে। নিজেকে বাঁচানোর কোন পথ দেখতে পারছি না। তাহলে কি আমার শেষ রক্ষা হবেনা। কথাগুলে ভাবতেই আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
-হ্যালো বস। আজকে একটা সেই জিনিস পেয়েছি। একদম একের জিনিস। ফোনের ওপাশ থেকে বললো,তোরা কোথায়.?
-চৌ রাস্তায় মৌড়ে আছি।আপনি তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে চলে আসুন। আর বেশি দেরি করলে কিন্তুু ধরা খেয়ে যেতে পারি।ওকে তোরা চিন্তা করিস না আমি ৫ মিনিট এর ভেতরে চলে যাচ্ছি, ততক্ষণ মেয়েটাকে সাবধানে রাখ। একটা ছেলে আমার থেকে মাত্র এক হাত দূরত্বে দাড়িয়ে আছে আর একটা ছেলে পিছনে দাড়িয়ে আছে। মুখে কোন গাড়ির আলো পরতেই আমি চিৎকার দিয়ে বললাম,বাঁচাও। তখুনি মনে পড়ে যেতে লাগলো,একটু আগে ওই লোকটা হয়তো আমাকে তুলে নিতে এসেছে। কথাটা ভাবতেই আমার চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো। গাড়িটা থামতেই পিছন থেকে একটা ছেলে আমার মাথায় পিস্তল ধরলো,বুঝতে পারলাম ওনাদের লোক নাই হয়তো। ওনাদের লোক হলে আমার মাথায় কেনো পিস্তল ধরবে।
(লেখক_আহম্মেদ_নীল)
‘আমার চিৎকার ওনার কান পর্যন্ত তো যাওয়ার কথা না,প্রাইভেট কাড়ের গ্লাস যদি দেওয়া থাকে তাহলে বাইরে কোন শব্দ তো ভেতরে প্রবেশ করবে না। তারমানে গ্লাস খোলা ছিলো তার কারনে আমার চিৎকার ওনার কান পর্যন্ত সহজে পৌঁছে গেছে। ওনি কি আমার জন্য নিজের বিপদ ডেকে আনবে। আমার জন্য বেচারা বিপদে পড়বে গাড়ি থেকে নামলেই।
-গাড়ি থেকে নামতেই আমিতো,,,
চলবে,,