অবাধ্য বাঁধনে পর্ব-১৯+২০

0
366

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ১৯]
______________________
” রাসেল ভাই আপনি এখানে কি করছেন?”

পরিচিত কন্ঠে চমকে তাকালো রাসেল।ঈশাকে দেখতে পেয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে ইশারায় ডাকলো তাকে।

” আপনি এখানে কি করছেন রাসেল ভাই?ছেলে পক্ষের কেউ হোন?”

” হুম হই।তার আগে শুনো তোমাকে একটা মেয়ে অনেক বার ডেকেছে।ঈশা ঈশা করে গলা ফাটানোর অবস্থা।আমি ভাবলাম এখানে ঈশা আবার কে?এখন বুঝতে পারছি মেয়েটা তুমি।”

” আমাকে ডাকছে?কিন্তু কেন?”

” আমি কি জানি।ছাদ থেকে ডাকলো।”

” তাহলে দেখে আসি।”

ঈশা পা বাড়ালো ছাদের দিকে।রাসেল যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।দ্রুত বসার ঘরে ফিরে নাজিমের পাশে গিয়ে বসলো।নাজিম এতক্ষণ তাদের খুঁজছিলো ঈশানকে বেশ কয়েবার ফোন করেছে তবে ছেলেটা ফোন তুলেনি।রাসেলকে দেখে নাজিম ব্যস্ত হয়ে বলে,

” ঈশান কোথায়?তোমরা হঠাৎ কোথায় উধাও হলে?”

” ঈশান আসবে একটু বেরিয়েছে।”
.

ছাদে প্রখর রোদে চোখ মেলে তাকানোর জো নেই।ঈশা সিড়ি বেয়ে উঠতে সর্তক দৃষ্টিতে তাকালো চারিদিকে।নাহ এখানে কেউ নেই রাসেল যে বললো কেউ তাকে ডাকছে।সিড়ি ঘর পেরিয়ে ছাদে প্রবেশ করতে ওড়নার সাহায্যে মাথা ঢাকলো ঈশা।প্রচন্ড রোদ্রে মাথাটা কেমন ঘুরে উঠলো।আশেপাশে তাকিয়ে কোন মেয়ের চিহ্ন পাওয়া গেলো না।ঈশা ছাদের পেছনের সাইডে যাওয়ার জন্য এগিয়ে গেলো ঈশানকে দেখতে পেয়ে চমকে উঠলো সহসা।

” আপনি এখানে কি করছেন?”

” নাচ করছি।নাচবে আমার সাথে?”

” কি সব বাজে বকছেন।আপনার আজেবাজে কথা শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে না আমার।”

” তাহলে অন্যকিছু বলি?প্রেমের কথা?বিয়ের কথা?সংসারের কথা?নাকি বাচ্চাকাচ্চার কথা?”

ঈশানের ঝাঝালো কথার সুরে ভ্রু কুচকে এলো ঈশার।এই মানুষটা অদ্ভুত আচরণ করছে কেন?সবচেয়ে বড় এখানে একটা মেয়ে থাকার কথা কিন্তু ঈশান কেন।

” একে তো রোদ তার উপর আপনার বাজে কথা শুনতে আমার প্রচন্ড বিরক্তি কাজ করছে। আমি গেলাম।”

ঈশা যেতে উদ্যত হলে ঈশান তার মুখোমুখি দাঁড়ালো।উদ্দীপ্ত দুচোখে চোখ রাখলো সে।

” এক পা গেলে খবর আছে বলে দিলাম।”

” আপনাকে এখানে দাওয়াত করেছে কে?এখানে এসেছেন ঝামেলা পাঁকাতে?”

” ঝামেলার দেখলে কি?আমার আড়ালে বিয়ে করে ফেলছো ভেবেছিলে আমি জানবো না?তোমার বিয়ে কি করে হয় আমিও দেখবো।”

” মানে?”

ঈশা অবাক হলো প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো ঈশানের দিকে।তবে ঈশানের হাভ ভাবে মনে হচ্ছে না সে সহজে মুখ খুলবে।

” আমার বিয়ে দেখার আপনার শখ?সরাসরি দেখবেন নাকি লাইভে এসে দেখাতে হবে।”

ঈশান এবারেও প্রত্যুত্তর করলো না।ঈশা যাওয়ার জন্য পুণরায় উদ্যত হলে ঈশান তার মুখোমুখি হয়।

” দাঁড়ালেন কেন?আমার শাশুড়ী অপেক্ষা করছে।”

ঈশা আবার যেতে চাইলো তবে এবারো ঈশান তার মুখোমুখি।বাড়াবাড়ি একটা সীমা আছে এই মানুষটাতো সেটাও ছাড়িয়ে যাচ্ছে।নিজের জেদটাকে কাজে লাগিয়ে
ঈশা ঈশানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলো কিন্তু তার আগে তার হাত জোড়া শক্ত হাতের মুঠোয় পুরে নেয় ঈশান।ঈশাকে টেনে নিয়ে যায় ছাদের এক কোণে।

” তোমার মাথায় কী কিছুই ঢুকে না?একটা বিষয় নিয়ে আর কতবার বোঝাতে হয়।”

” না আমি বুঝি না।এবার আমার হাত ছাড়ুন দয়া করে বাড়াবাড়ি করবেন না। ঈশান মনে রাখবেন আপনি আমার বাড়িতে আছেন।”

” আমায় হুমকি দিচ্ছো?তোমার হুমকির ভয়ে আমি থরথর করে কাঁপতে থাকবো এটা ভাবলে কি করে ঈশা।”

ঈশা হাত ছাড়াতে বারবার চেষ্টা করে তবে ঈশান হাত ছাড়লো না।প্রচন্ড গরমে ইতোমধ্যে ঈশান ঈশা দুজনেই ঘেমে একাকার।

” আমি নিচে যাবো ছেড়ে দিন।চিৎকার করলে এখানে কিন্তু ভালো কিছু হবে না।”

” তুমি নিচে যাবে আর নাজিমকে বিয়ে করবে না, এটা সবাইকে জানাবে।যদি আমার শর্তে তুমি রাজি হও তবেই ছাড়বো তোমায়।”

হতভম্ব চোখে ঈশানের দিকে তাকিয়ে রইলো ঈশা।নাজিমের সাথে তার বিয়ে! নিশ্চয়ই মন গড়া ভেবে নিয়েছে সে।তাই তো তার ধারণা ভুল।মনে মনে হাসি পেলো ঈশার তবে এই মানুষটার সামনে ভুলেও হাসা যাবে না।

” এসব কি বলছেন নাজিমের সাথে আমার বিয়ে মানে?”

” নাটক করছো?নাজিমের মায়ের সাথে তো দেখছি সেই রকম ভাব।”

” হ্যা আন্টি আর আমার সম্পর্ক ভালো।তাই বলে আপনি….”

ঈশানের ফোন বেজে উঠলো।ফোন চেক করতে রাসেলের নাম্বার দেখে দ্রুত কেটে পুণরায় পকেটে রেখে দেয়। তার অস্থিরতা প্রবল বাড়লো।হাঁসফাঁস কর‍তে করতে জিভের সাহায্যে ঠোঁট ভেজলো।

“এবার কি করবো আমি,আজ ওদের এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেলে সামনে বিয়ে উফফ কি করবো আমি।আমি স্বার্থপর।এসব মেনে নেওয়া আমার ধাঁচে নেই।”

ঈশান বিড়বিড় করতে থাকে তাকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে সে অস্থির হয়ে উঠেছে।ঈশা তার হাত ছাড়াতে পুণরায় চেষ্টা চালায় কিন্তু ঈশান তাকে ধমক দিয়ে বকতে শুরু করে।দুজনের মাঝে লেগে যায় ঝগড়া কিন্তু এবার ঈশানের সাথে পাল্লা দিয়ে এগোতে পারলো না ঈশা।ঈশানের চোখ রাঙানো তার সাথে ধমকের মাঝে চোখে পানি চলে এলো ঈশার।রাসেল বার বার ফোন করায় অবশেষে ফোনটা ধরতে বাধ্য হলো ঈশান।

” ঈশান তুই ছাদে?ঈশা আছে তোর সাথে?”

” হ্যা কেন?”

” নাজিমের সাথে ঈশার কাজিনের বিয়ে মানে ওর খালাতো বোন শ্রেয়ার।আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।”

” কি!”

উত্তেজিত হয়ে পড়লো ঈশান।ততক্ষণে ঈশার চোখ দুটো জলে টইটম্বুর।তপ্ত শ্বাস ছাড়লো ছেলেটা।দ্রুত ফোন কেটে মনোযোগ বাড়ালো ঈশার দিকে।জলটা অন্য দিকে গড়িয়ে গেলো সন্দেহের দরুনে ঈশার মনে জায়গা করার আগেই আরেকবার তার চোখে খারাপ হলো সে।এইজন্যই রাসেল বলে এত বাড়াবাড়ি করিস না,সবসময় চড়া মেজাজের মাথা নিয়ে ঘুরবি না।সব ক্ষেত্রে রাগ জেদ প্রযোজ্য নয়।ঈশার হাতটা ছাড়লো সে এবং ডান হাতটা ঠেকিয়ে দিলো ঈশার মাথায়।পরম যত্নে আলতো হাত বুলিয়ে দিলো ঈশার মাথায়।

” মন খারাপ করেছো?”

ঈশানের নরম হয়ে আসাটা সহ্য হলো না ঈশার ঝটকায় সরিয়ে দিল তার হাত।

” দরদ দেখাতে আসছেন?”

” বকবো আমি, রাগ দেখাবো আমি, আবার আমি দরদ দেখাবো এটা আবার বলতে হয়?”

” আপনি এবার বেশি বাড়াবাড়ি করলেন।আমি বাবাকে সব বলে দিব।”

” তোমার বাবা আদৌ কিছু করতে পারবেন আমার বিরুদ্ধে? ”

ঈশা প্রত্যুত্তর করলো না।দ্রুত হস্তে চোখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো।মনে মনে ভেবে নিলো হয়তো ঈশান সরি বলবে আর সেই সু্যোগে দুই-চারটা কথা শুনিয়ে দিবে তাকে।কিন্তু তার ভাবনা মিথ্যা করে ঈশান বলে,

” যা হয়েছে ভালোর জন্য হয়েছে।ভবিষ্যতে অন্তত কিছু করার আগে এই দিনের কথা মনে পড়বে।আমি বরং নিচে যাই তুমি এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেকাআপ ঠিক করে নাও।বানের জলে সব আটা ভেসে গেছে।”

ঈশা তেঁতে উঠলো তার দামি দামি মেকআপ প্রডাক্টকে সে আটা বলছে।

” আপনি আমার মেকআপ’কে আটা বললেন কোন সাহসে।আপনার ধারণা আছে এগুলা কত দামি এক্সপেন্সিভ প্রোডাক্ট।”

” রিয়েলি এত দামি!বউয়ের মেকআপ কেনার জন্য হলেও এবার তো আমায় আরো বেশি বেশি কাজ করতে হবে।কাজ করলেই তো বেশি বেশি টাকা হবে।”

” অসভ্য লোক।”

ঈশার চোখে চোখ রাখলো ঈশান।মেয়েটার মন খারাপ উবে গেছে এখন শুধু জেদ টুকু বাকি আছে।মনে মনে নিশ্চিন্ত হয়ে ঈশাকে নরম স্বরে বলে,

” আলেয়া আন্টিকে শাশুড়ী বানালে কেন?”

” নাজিম ভাইয়ের ছোট ভাই নাদিমকে ভালো লাগে তাই ডাকি।”

ক্লাস ফাইভে পড়ুয়া নাদিম দেখতে গুলুমুলু বোকাসোকা ধরণের ছেলে।চোখে তার এটে থাকে মস্ত বড় গোল ফ্রেমের চশমা।মাঝে মাঝে ঈশার মনে হয় এই চশমাটা স্পেশালি তার জন্যই তৈরি।গুলু গুলু গাল দুটোতে এঁটে থাকে চশমা।ঈশা সুযোগ বুঝে ছেলেটার গাল চটকে দিতে দ্বিধাবোধ করে না।ঈশা যখন তার গাল চটকাতে ব্যস্ত ছেলেটা তখন না পারতে চিৎকার করে বলে, ‘ ঈশা বউ আমায় আর জ্বালিয়ে মেরো না।’ দুজনের খুনশুটি আলেয়া বেশ উপভোগ করেন।আর সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেন ঈশার হাতের তৈরি স্পেশাল কেক।

” নিচে যাও ঈশা আমি কিছুক্ষণ পর যাবো।”

” আপনি না গেলেও চলবে।”

৩৬.
শ্রেয়া এবং নাজিমের আংটি বদল হলো সন্ধ্যার পর।ঈশা অনু সহ কয়েকজন কাজিন মিলে পুরো আসরটা জমিয়ে রেখেছিলো।ঈশান তখন নির্বাক সবার কান্ড দেখতে ব্যস্ত এত বাজনা বাজিয়ে বিয়ে মোটেও পছন্দ না ঈশানের।আজ যদি আলেয়া আন্টি অনুরোধ না কর‍তো কখনো সে এতক্ষণ এখানে বসে থাকতো না।রাসেল হয়েছে আরেক খাটাশ সে সুযোগ বুঝে অনুর সাথে কথায় লেগে যায়।

বাড়ির মুরব্বিরা সব এক হয়েছে। শ্রেয়া এবং নাজিমকে আলাদা কক্ষে পাঠানো হয়েছে কথা বলার জন্য।অনু রাসেল ঈশান সহ ঈশার কাজিনরা একটা কক্ষে বসে টুকটাক আলাপ সারছে।রাসেলের জোরাজোরিতে ঈশানকে এই কক্ষে আসতেই হলো।বেডের পাশে থাকা সিঙ্গেল সোফাতে চুপচাপ বসে ফোনে ধ্যান রাখলো ঈশান।নাদিম তখন ঈশানের পাশে বসে গেমস খেলছে।ঈশা হঠাৎ কক্ষে এসে টেনে আনলো নাদিমকে।গঠনে ছোট হওয়ায় ছেলেটাকে নিজের কোলে বসিয়ে গালে গাল মিলিয়ে আদুরে সুরে ঈশা বলে,

” ভাসুরের বিয়ে ডান এবার আমাদের বিয়ে কখন হবে? ”

” আম্মু বলেছে আমার ফাইনাল এক্সাম শেষ হলেই আমাদের বিয়ে হবে তখন তুমি আমার কাছে থাকবে ঈশা বউ।”

নাদিমের আদুরে কথায় হেসে উঠলো সকলে ঈশান আড় চোখে দেখছিলো তাদের কান্ড।

” ঈশা বউ বিয়ের পর কিন্তু আমায় মজার মজার কেক খাওয়াবে সবসময়।”

” অবশ্যই আমার জান বলেছে আর আমি খাওয়াবো না তা কি হয়।তোমার গালটা এত চকচক করছে কেন জান?”

” জানো আম্মু আমায় নতুন একটা ক্রিম কিনে দিয়েছে তাই তো চকচক করছে।আম্মু বলেছে যদি নিয়মিত ক্রিমটা লাগাই আমাকে বেশি সুন্দর লাগবে আর তখন নাকি তুমি আমায় বেশি বেশি ভালোবাসবে।”

হেসে ফেললো ঈশা সহ বাদবাকি সকলে।ঈশা পুণরায় চটকে দিলো নাদিমের গাল।নাদিম তার আঁকাবাকা দাঁতে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে।শ্রেয়া এবং নাজিমের কথা শেষ তারা বেরিয়ে পড়েছে কক্ষ ছেড়ে তাদের কন্ঠে শুনে সবাই মিলে বের যায় তাদের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে।শুধু ঈশান দাঁড়িয়ে রইলো।আলমারির এক কোনায়।ঈশা তার চুল ঠিক করার উদ্দেশ্যে দরজা ভিড়ে দিলো তার জানা মতে কক্ষে আর কেউ নেই।ঈশা গা থেকে ওড়না সরাতে আয়নায় ভেসে উঠে এক কোনে দাঁড়িয়ে থাকা ঈশানকে।

“আপনি এখানে?”

” নাদিমের প্রতি এত ভালোবাসা।এত ভালোবাসা আমায়ও তো দেখাতে পারো।”

” আপনি বলতে চাইছেন নাদিমের মতো আপনার গাল চটকে দিতে?”

ঈশা এক গাল হাসে।চাপা জেদটাকে কাজে লাগায় সে।এগিয়ে যায় ঈশানের সম্মুখে।

” আমিও চাই আপনার গাল চটকে দিতে আপনি এত্ত কিউট কেন।”

ঈশা ঈশানের দুই গালে চেপে ধরে।তার বড় বড় ধারালো নখের সাহায্যে এতটা রুক্ষ ভাবে চেপে ধরে যে ঈশানের গালের চামড়া কেটে রক্ত ঝরার অবস্থা।ঈশান নির্বাক শক্ত চোখে তাকিয়ে রইলো ঈশার দিকে তার মুখে রা নেই।এই মেয়ে কতটা পারে সেও দেখবে।ঈশানের গালে রক্তের দেখা মিলতে তাকে ছেড়ে ছিটকে দূরে সরে যায় ঈশা।অবাক চোখে ঈশানের দিকে তাকাতে ঈশানের কোন প্রতিক্রিয়া মিললো না।

” র রক্ত!”

রক্ত দেখে ভয় পেয়ে গেলো ঈশা।
ঈশান এগিয়ে এলো ঈশার সম্মুখে।

“যতটা আঘাত করার করে নাও বাঁধা দেব না।”

ঈশা প্রত্যুত্তর করলো না।দৃষ্টি নামিয়ে নিলো পায়ের কাছে।ঈশান কিঞ্চিৎ হেসে আলতো হাতে ঈশার গাল টেনে বেরিয়ে গেলো কক্ষ ছেড়ে।

.
কাউকে কিছু না বলে বাড়ি ফিরে আসে ঈশান।তার গাল প্রচন্ড জ্বলছে।পানি লাগাতে সর্বাঙ্গে ঝিলিক মারছে।কোন মতে গালে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ লাগিয়ে ক্ষান্ত হলো সে।এই গালে যদি একবার দাগ পড়ে যায় হাজার খানেক কথার সম্মুখীন হতে হবে তাকে।

রাসেল বাড়ি ফিরলো রাত নয়টা বাজে।আগে ফ্রেশ না হয়ে দ্রুত ছুটে যায় ঈশানের কাছে।

” চলে এলি কেন ঈশান?এক মিনিট তোর গালে কি হয়েছে?”

” কিছু না।”

” ব্যান্ডেজ লাগিয়ে বলছিস কিছু না।

” বিরক্ত করবি না আমি কাজ করছি।”

” সত্য কথা না বললে বিরক্ত করবোই।আমরা বেরিয়ে যাওয়ার পর দরজা লাগিয়ে তখন তুই আর ঈশা কি করছিলি?আমি কিন্তু তোদের উপর নজর রেখেছি।”

” বাজে বকবি না সামনে থেকে সর।”

রাসেল ঠোঁট টিপে হাসলো।ঘেষে বসলো ঈশানের পাশে।

” সত্যি কথা বল তোদের মাঝে কি হয়েছিলো।এটা কি ভালোবাসার চিহ্ন ছিল নাকি?”

ঈশান ভ্রু কুচকে কপট রাগ দেখালো রাসেলকে।

” তুই ব্লাশিং হচ্ছিস কেন?তার মানে সত্যি?তাই বলে গালে কেউ এসব করে তোরাও না… ”

” থা প্প ড় দেওয়ার আগে এখান থেকে উঠে যা।”

ঈশানকে রাগিয়ে দিতে সিরিয়াস হয়ে রাসেল বলে,

” আমার পাপী মনে আমি কিন্তু অনেক অনেক কিছু ভেবে ফেলেছি ঈশান।”

” তুই যা ভাবছিস তা না।”

” তবে কী?”

” এসব তুই বুঝবি না এটা স্পাইসি ভালোবাসার ধরণ।”

রাসেল ঠোঁট বাঁকালো ঈশান যে স্বীকার করবে না তা তার বোঝা হয়ে গেছে।

৩৬.

মধ্য রাতে ঈশান যখন ঘুমে কাবু তখন নিস্তব্দ কক্ষে বেজে উঠলো তার ফোন।ঘুমকাতুরে ঈশান এলোমেলো হাতে ফোন খুঁজে কানে তুলতে ফসফস নিশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কিছুই শুনতে পেলো না।হ্যালো হ্যালো বলে ঈশান তাকে জানান দিলেও ফোনের অপর পাশের ব্যক্তিটি ছিলো নিরব।বিরক্ত হয়ে ফোন কাটলো ঈশান।কিয়ৎক্ষণ বাদে আবার ফোন আসে ঈশান আবার ফোন তুলতে কানে ভেসে আসে গুরুগম্ভীর চিরচেনা কন্ঠ।এই গলার স্বর শোনা হয়নি তার বহু বছর।

” আমি ঈশান শাহরিয়ারের বাবা বলছি।”

ঈশান থমকায়।তার রাগ জেদের কাছে কোন সম্পর্ক সে পরোয়া করেনা।এমনকি পিতার সম্পর্কে বেঁধে থাকা এই মানুষটাকেও না।ঈশান মাঝে মাঝে ভাবে এই মানুষটা তাকে সত্যি ছেলে মানে তো?যদি ছেলে মানতো তবে সেদিনের অপবাদটা তার গায়ে ছোড়ার আগে হাজার বার অনুসন্ধান,বিচার বিশ্লেষণ করতো।

” কি বলবেন বলুন।”

” বাড়ি ফিরবে কবে?এভাবে কতদিন জল ঘোলা করে রাখবে।এবার অন্তর এই নাটক শেষ করা জরুরি।”

প্রতিবারের ন্যায় আবিদ সাহেবের কন্ঠ গম্ভীর সরল।ঈশানের ঘুম ছুটে গেছে ইতোমধ্যে।সে বিছানা থেকে পা ফেলে ছোট ছোট পায়ে এগিয়ে গেলো বারান্দায়।

” আমার বাড়িতে আমি আছি।এ ছাড়া আমার কোন বাড়ি আছে বলে আমার মনে হয় না।”

” কথাবার্তা আগের মতোই আছে দেখছি।”

” এক চুলো পালটায়নি।সে বিষয়ে সন্দেহ রাখবেন না।”

” তর্ক কর‍তে ফোন করিনি।তোমার মাকে আর কতদিন ভুগাবে?এবার অন্তত এখানে আসো মানুষটার সাথে সময় কাটাও।”

” আমি মা’কে বলে দিয়েছি দেশে ফিরতে আর মা যদি দেশে না ফিরে আমার কিছু বলার নেই।”

” মাহমুদাকে একা ছাড়তে পারবো না আমি।যদি নেওয়ার ইচ্ছে থাকে তবে নিজে এসে নিয়ে যাও।”

” একা ছাড়তে হবে না আমার মা ততটাও অবুঝ নয়।তাকে এয়ার্পোরটে ছেড়ে আসলে হবে এদেশের এয়ারপোর্ট থেকে আমি রিসিভ করবো।”

” তার মানে তবুও আসবে না?”

” না।”

” ঠিক আছে আসতে হবে না।আমি মাহমুদাকে পাঠাবো না।”

” ভদ্রমহিলা আপনার স্ত্রী হলে উনি আমার মা। আমার অধিকার আছে উনার উপর।আপনার কারনে আমি বহু বছর মায়ের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছি এবার অন্তত বিবেক থাকলে আমায় বঞ্চিত করবেন না।”

ঈশানের কথা শেষ হলো তবে অপর পাশ থেকে কোন উত্তর এলো না।ঈশান তপ্ত শ্বাস ছাড়লো।বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে।রক্তের সাথে যেন মিশে গেছে অস্থিরতা।আবিদ সাহেব কি ভাবলেন কে জানে তবে ফোন কাটার আগে বললেন,

” ঠিক আছে মাহমুদাকে পাঠিয়ে দিব।তোমার মায়ের ভালো তুমি বুঝবে।”
#চলবে___

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ২০]
___________________
৩৭.
রাতটা তার যেমন তেমন কেটে গেলো।অনেক চেষ্টা করেও দু’চোখে ঘুম নামলো না তাই বাধ্য হয়ে কাক ডাকা ভোরে গোসল সেরে তৈরি হয়ে নিলো ঈশান।গায়ে পোলো শার্ট জড়িয়ে নিজেকে আয়নায় দেখলো কিয়ৎক্ষণ।রাসেল তখন ঘুমের মাঝ সাগরে অবস্থান করছে এই ছেলে ঘুম ভাঙিয়ে তীরে ফিরবে কখন কে যানে।ঈশান তাদের বাগানটায় ঘুরলো বেশ কিছুক্ষণ।বাগান করার শখ তার কোন কালে ছিল না।রাসেল বেশ পছন্দ করে গাছগাছালি। চাকচিক্যের জীবনে ব্যস্তময় দিন কাটিয়ে বাড়ি ফিরে যখন তখন সরু রাস্তার পাশে সুসজ্জিত ফুল ফলের গাছগুলো তার নজর কাড়ে।এছাড়াও এসব গাছের দেখা শোনা করেন বিশ্বস্ত লোক কাশেম।তিনি নিজেও গাছ প্রেমি তাই যখন যে গাছ পছন্দ হয় নার্সারি থেকে এনে লাগিয়ে রাখেন।প্রতি সাপ্তাহে লোক এনে পরিষ্কার করান।এই মানুষগুলোর সাথে থাকতে থাকতে ঈশান এখন নিজেও গাছ প্রেমি হয়েছে বলা চলে।বিল্ডিং এর পেছন সাইডে একটা পুল আছে।ঈশান এবং রাসেল ছুটির দিন এখানে দাপিয়ে বেড়ায়।বেশ কয়েকদিন হলো ব্যস্ততাকে আকড়ে ধরতে পুলে নামা হলো না তাদের।মনে মনে ঈশান ভেবে রাখলো আজ দুপুরে পুলে নামতে হবে।

হাত ঘড়িতে সকাল ছয়টা বাজতে দেখে দেহটা টান টান করে ছুটে চললো ঈশান।দায়োরায়নের সাথে কাশেমকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো মুহূর্তে।

” ভালো আছেন কাশেম চাচা?”

” আলহামদুলিল্লাহ বেশ ভালো।নাস্তা পানি তৈরি হচ্ছে এখন কি বের হবে?”

” হ্যা এক্ষুনি বের হবো।”

” নাস্তা করে যাও বাবা।”

” ফিরে আসবো আমি।একটা বিষয়ে জানার ছিলো এখানে সবচেয়ে বড় বাজার কোথায়?ফ্রেশ মাছ পাওয়া যাবে কোন বাজারে?”

” লাগবে?আমি এনে দিবো কি কি মাছ লাগবে আমাকে লিস্ট দিও।”

” না মাছ লাগবে না তবে আমি আজ বাজার ঘুর‍তে যাবো।”

“একা যাবে কেন চলো আমি নিয়ে যাই।”

” না চাচা আজ শুধু দেখবো।মা আসছেন ইচ্ছে আছে আমার হাতে বাজার করে মা’কে খাওয়াবো।”

চকচক করে উঠলো কাশেম চাচার চোখ জোড়া।এই দুইটা ছেলে মা বাবাকে ছাড়া কতটা বছর কাটিয়ে দিলো।মাঝে মাঝে মা’কে নিয়ে আফসোস শোনা যায় তার মুখে।

” আমি ড্রাইভার কে বলে রাখবো তোমায় নিয়ে যাবে বাবা।”

ঈশান বাজারে পৌঁছালো সাড়ে ছয়টা নাগাদ।আজ ছুটির দিন বলে বাজারে বেশ ভীড়।ঈশান ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো বাজারের ভেতর।আশেপাশে মানুষের সঙ্গে ধাক্কা লাগতে সাত সকালে মেজাজটা বেশ চড়া হলো।তবে আবার মনে মনে ভাবলো বাজার মানেই এমন। এভাবে রেগে যাওয়া ঠিক নয়।ঈশান পকেট থেকে মাক্স বের করে দ্রুত লাগিয়ে নিলো।

ঈশান মাছ বাজারের সামনে এসে দাঁড়ালো।দোকানিরা সাহেব বাবু দেখে হুমড়ি খেয়ে পড়ার জোগাড়।ঈশানের হাভ ভাবে বোঝাই যাচ্ছে ছেলেটা বাজার সংক্রান্তে অপটু।মাছ দোকানি তাকে খুঁজে খুঁজে নরম মাছগুলো দেখাচ্ছে।তার উপর বলছে চড়া দামে।দোকানিদের চাপার জোরটা এতো যে নরম মাছটাকে ঈশান তাজা মাছ ভেবে কেনার জন্য মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো।দোকানিদের এসব বাটপারি দেখে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অন্য ক্রেতা রেগে গেলেন।

” ছেলেটা বুঝে না বলে তাকে ঠকাচ্ছেন কেন?”

ঈশান চমকে তাকালো পাশে।ঈশার বাবাকে দেখতে পেয়ে কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়ে।তবে ঈশার বাবা মুজাহিদ হাসান এখনো চিনলেন না ঈশানকে।হয়তো মাক্সের কারনে।তিনি ঈশানের চোখে চোখ রেখে বলেন,

” এর আগে মাছ কিনো নাই তাই না?”

ঈশান মাথা দুলালো।স্মিথ হাসলেন মুজাহিদ হাসান।

” মাছ কিনতে সবসময় কানকোতে নজর রাখবে।কানকো কাকে বলে চিনো?”

” না আঙ্কেল।”

মুজাহিদ হাসান একটি মাছের কান উলটে দেখালেন ঈশানকে।

” যে মাছের কানকো লাল থাকবে সেটা ফ্রেশ।আর যে মাছের কানকো ফ্যাকাসে মাছটা নরম সেগুলো নষ্ট।কিছু মাছ বরফ দিয়ে রাখা হয় বরফের মাছ অতি প্রয়োজন ছাড়া কিনবে না সবসময় ফ্রেশ মাছ কেনার চেষ্টা করবে।টাটকা মাছ কখনোও শক্ত হবে না, আবার নরমও হবে না। তাজা মাছ হবে বাউন্সি। তুমি আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিয়ে দেখবে যে মাছ একদম শক্ত, বুঝবে যে সেটা ফ্রিজে রাখা ছিল। আর যদি আঙ্গুল দিলেই দেবে যায় ভেতরে, বুঝবে মাছের বয়স হয়েছে। তাজা মাছে আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিলে দেবে যাবে। কিন্তু আঙ্গুল সরিয়ে নিলেই জায়গাটা ঠিক হয়ে যাবে”

“আমি বুঝতে পেরেছি। ধন্যবাদ আঙ্কেল।”

ঈশান তার মুখের মাক্স খুলে নিলো সঙ্গে সঙ্গে চমকে তাকালেন মুজাহিদ হাসান।তার বিচলিত মুখখানি দেখে মনে মনে হাসলো ঈশান।

” আসসালামু আলাইকুম স্যার ভালো আছেন?”

মুজাহিদ হাসান সালামের জবাব পেলেন না।ঈশান চুপচাপ তাকিয়ে আছে তার দিকে।

” আমায় আপনি করে ডাকা বন্ধ করুন আঙ্কেল।তাছাড়া স্যার বলবেন না।আপনার সাথে আমার কোন অফিসিয়াল লেনদেন নেই যা ছিল সেটা পূর্বেই মিটমাট।এখন আপনার চোখে আমি সাধারণ একজন মানুষ হিসেবে থাকতে চাই।একটু আগে যেভাবে কথা বলেছেন সেভাবে কথা বলুন প্লিজ।”

মুজাহিদ হাসান হাসলেন।ঈশানের সঙ্গে ধীরে ধীরে তার সম্পর্কটা বেশ ভালো হয়ে উঠে।তিনি যেহেতু বাজার করতে এসেছেন সেই ক্ষেত্রে নিজেও ক্রয় করছেন তার সাথে ঈশানকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন কোনটা ভালো কিংবা খারাপ।মুজাহিদ হাসানের চারটা ব্যাগ হয়েছে দুইটা ঈশান সেচ্ছায় বহন করলো।তিনি রিক্সা ডাকতে চাইলে ঈশান জোরাজোরি করে তাকে গাড়িতে বসালেন।ঈশানের এতটা আন্তরিকতা তিনি এত তাড়াতাড়ি হজম করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।

৩৮.
মুজাহিদ হাসানকে কল করেছে ঈশা তিনি নাকি বাসার কাছে এসে গেছেন।প্রতিবার বাবা বাজার করে ফেরার পথে অপেক্ষায় থাকে ঈশা।তার অপেক্ষার স্থানটি হলো গেটের সামনে।বাবা যখন রিক্সা থেকে নেমে দাঁড়ায় তখন সে কিছু ব্যাগ নিয়ে উপরে উঠে যায় এতে বাবার কষ্ট কিছুটা লাঘব হয় বলা চলে।রাস্তায় ঈশানের গাড়ি থামতে অবাক চোখে তাকালো ঈশা।গতকালের কথা ভেবে ভয়ে কুঁকড়ে উঠলো সে।নিজেকে আড়াল করতে চাইলেও পারলো না ঈশান তাকে দেখে ফেলেছে।ঈশান গাড়ি থেকে নেমে অপর দরজাটি খুলে দেয় তৎক্ষণাৎ মুজাহিদ হাসান বেরিয়ে এসে বাইরে দাঁড়ান।ঈশান ড্রাইভারকে বলে ব্যাগ গুলো ঈশাদের ফ্লাটের সামনে রেখে আসতে।

” ঘরে চলো বাবা এতটা রাস্তা এসেছো যখন ফিরে যেতে দিচ্ছি না যে।”

” আঙ্কেল অন্য দিন আসবো আজ যাই।”

” না তা আমি শুনবো না চলো তুমি।”

মুজাহিদ হাসান ঈশানের হাতটা আঁকড়ে ধরলেন ঈশান আর বারণ করতে পারলো না।ঈশা পূর্ণ দৃষ্টিতে ঈশানের দিকে তাকালেও ঈশান সম্পূর্ণ তাকে এড়িয়ে গেছে যেন এই মেয়েটার সাথে তার পূর্বে দেখা সাক্ষাৎ হয়নি।

সুলতানা দরজার সামনে ঈশানকে দেখে থমকে গেলেন।ঈশান শাহরিয়ার তাদের নিকট এক আতঙ্কের নাম।মুজাহিদ হাসান তাকে নিয়ে সোফায় বসতে বললেন ঈশা তখন তাদের পিছনেই দাঁড়িয়ে ছিলো।
.

সামনে তেল চটচটে আলু পরোটা নিয়ে বসে আছে ঈশান।মুজাহিদ এবং সুলতানা তাকে জোর করে নাস্তা করতে বসিয়েছেন।আজ বন্ধের দিন আর সেই হিসেবে আজকের নাস্তার দায়িত্ব ঈশার।সকালের নাস্তায় আলু পরোটা সাথে গরুর মাংস তাদের কাছে জবরদস্ত লাগলেও ঈশানের কাছে বিষয়টি মোটেও পছন্দ হয়নি।সে কখনোই সকালে খালি পেটে এত তেলের খাবার খায় না অথচ এখানে কাউকে কিছু বলা যাবে না নিশ্চয়ই তারা মনে কষ্ট পাবে।

” লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই আমরা আমরাই তো।”

সুলতানার কথায় স্মিথ হাসলো ঈশান।শাশুড় বাড়ির আপ্যায়ন ভেবে দ্বিধাহীন খেতে শুরু করলো।গরুর মাংসের সাথে আলুর পরোটা মুখে তুলতে আড় চোখে ঈশার দিকে চাইলো ঈশান।মেয়েটা এত ভালো রান্না করে!গতকাল নাজিম আর শ্রেয়ার আংটি বদল শেষে কেক কাটা হয় সেই কেক মুখে তুলে সবাই পঞ্চমুখ ঈশান নিজেও তৃপ্তি নিয়ে কেক খেয়েছিলো আজ আবার আলুর পরোটা না খেলে জানতেই পারতো না এই ঝগড়ুটে মেয়ে এত ভালো রান্না পারে।

ঈশান মনে মনে বেশ হাসলো।তার চোখে মুখে খুশির ঝলক ছড়িয়েছে।
ঈশার দিকে তাকাতে চোখাচোখি হয়ে যায় দুজনের।ঈশানের এত খুশি হওয়ার কারণটা বুঝে এলো না ঈশার।অপর দিকে ঈশান মনে মনে বলে,

” আম্মু তুমি জিতছো তোমার বউমা তো পাক্কা রাধুনি এক কথায় জ্ঞানী,গুনী,লক্ষ্মী।”

৪০.
ঈশান ঈশার অপেক্ষা দাঁড়িয়ে আছে ঘন্টা খানেক।অফিসের কাজ মোটামুটি শেষ করে বাকি দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে এসেছে অন্য সদস্যদের।অথচ এই মেয়েটা এতক্ষণ যাবৎ ভার্সিটির ভেতর কি করছে?তার জানা মতে ক্লাস শেষ হওয়ার কথা আধা ঘন্টা আগে।ঈশান না পেরে ভার্সির ভেতর চলে যায়।আশেপাশে কপোত-কপোতীর অভাব নেই।প্রতিটা মেয়ের সাথে একটা করে ছেলে জুড়ে আছে।কোথাও কোথাও দল বেধে ছেলে মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ঈশান মাঠের দিকটা খোঁজার চেষ্টা চালালো তবে ঈশাকে পেলো না।অস্থির হয়ে ফোন করলো অনুকে অনু জানায় তারা ক্যান্টিনে আছে আসতে দেরি হবে।

ঈশান ক্যান্টিনের দিকে হাঁটা শুরু করলো।একটু খুঁজতে তাদের পেয়েও গেলো।ক্যান্টিনের ভেতর ঈশার সাথে বেশ কয়েকটি মেয়ে তর্ক করছে ঈশা মাথা নিচু করে কয়েকটি কথার জবাব দিয়ে আবার চুপ হয়ে যাচ্ছে।
দলের একটা মেয়ে আকস্মিক ঈশার কাঁধে ধাক্কা দেয়।মেয়ে গুলো একটু বেশি বাজে ব্যবহার করছিলো দেখে ঈশান এগিয়ে এলো এবং দাঁড়ালো ঈশার পাশাপাশি।হঠাৎ কেউ পাশে দাঁড়াতে চোখ তুলে তাকালো সে ঈশানকে দেখে ঘাবড়ানোর সাথে সাথে অস্বস্থি বাড়লো দ্বিগুণ।
সিনিয়র মেয়েগুলো তর্ক ছেড়ে ঈশানের দিকে তাকালো অবাক চোখে।কালো স্যুট গলায় টাই চোখে কালো সানগ্লাস অফিসিয়াল লুকের এই ছেলেটির সাক্ষাৎ এর আগে পায়নি তারা।ঈশান তাদের নজর পাত্তা না দিয়ে বলে,

” এখানে কি হচ্ছে?”

ঈশা দৃষ্টি নামিয়ে নেয়।সে কখনো চাইবে না তার অপমানের কথা ঈশানের প্রকাশ্যে আসুক।

” কথা বলছো না কেন ঈশা?এরা তোমায় ধাক্কা দিলো কেন?দেখেই বোঝা যাচ্ছে এরা তো তোমার ফ্রেন্ড না।”

ঈশা কাচুমাচু করতে থাকে।দলের মেয়েগুলো একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে।এর মাঝে একজন বলে,

” আপনি এই বেয়াদব মেয়েটার কি হন?”

মেয়েটির কথা শুনে ঈশান চশমা খুলে সন্দিহান গলায় বলে,

” স্যরি বেয়াদব বললেন কাকে?”

” আপনার পাশে যে আছে তাকে।”

” ওঁকে বেয়াদব বলার আপনি কে?কি করেছে সে?”

অনু ভিড়ের মাঝে হাত তুললো।এগিয়ে এলো ঈশানের কাছে।সে কিছু বলতে চায়।

” এই সিনিয়র আপুগুলো কয়েকমাস থেকে আমার জ্বালাচ্ছে অযথা গাল মন্দ করে।”

” তোমরা কি করেছো তাদের সাথে?”

” ওনারা ক্যাম্পাসে স্মোক করছিলেন আমরা দেখেছিলাম ওনারাও আমাদের দেখে ফেলে।এর কয়েকদিন পর স্যারদের কাছে কারা যেন ওনাদের নামে এই বিষয়ে নালিশ করে তবে আমরা করিনি।কিন্তু ওনাদের সন্দেহ আমরা করেছি এরপর থেকে আমাদের সাথে ভীষণ বাজে ব্যবহার করেন।একটু আগে ইচ্ছাকৃত নিজেদের গায়ে পানি ফেলে ঈশার দোষ দিয়ে এখন এত ঝামেলা করছে।”

ঈশান প্রতিটা মেয়েকে পরখ করলো।মেয়েগুলো নিজেদের অতিমাত্রায় স্মার্ট সাজাতে গিয়ে জোকার বানিয়ে ফেলেছে।

” ওরা বলেছে নালিশ করেনি তাহলে শুধু শুধু তাদের বিরক্ত কেন করছেন?”

ঈশানের প্রশ্নে দলের একটি মেয়ে বলে,

” আমাদের ঝামেলা আমরা বুঝবো আপনি কে?”

” আমি কে সেটা আর কিছুটা সময় অপেক্ষা করুন।এই মেয়ে আপনি ঈশার গায়ে ধাক্কা দিয়েছেন? মেয়ে না হয়ে যদি ছেলে হতেন এতক্ষণ আপনার এই হাত শরীর থেকে আলাদা করে দিতাম।”

ঈশান ঈশার হাত টেনে বেরিয়ে গেলো ক্যান্টিন থেকে।তার পিছু নিলো অনু।আজ দিহান আসেনি যদি দিহান আসতো তবে এ ঝামেলা এতটা দূর যেতো না।ঈশানের সামনে লজ্জায় কান্না পেলো ঈশার।দু’চোখে নেমেছে জলের ফোয়ারা।ঈশা ফুঁপিয়ে উঠলো।ঝটকায় সরিয়ে দিলো ঈশানের হাত।ভার্সিটির গেট থেকে বের হয়ে দ্রুত পায়ে হাটতে থাকলো বাস স্ট্যান্ডের রাস্তার দিকে।ঈশানের সামনে যে অপমানটা হয়েছে এরপর নিশ্চয়ই ঈশানের সাথে উঁচু গলায় কথা বলতে জড়তা কাজ করবে।অনু ঈশার পিছু পিছু ছুটতে থাকে ঈশান পকেট থেকে গাড়ির চাবি বের করে রাসেলের দিকে ছুড়ে মারে এবং বলে,

” রাসেল তোর বউ সামলা।এই মুহূর্তে আমার আর ঈশার মাঝে যেন না আসে ”
#চলবে____