অবাধ্য বাঁধনে পর্ব-১৭+১৮

0
224

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ১৭]
______________________
বাড়ি ফিরে বরফ পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছে ঈশা।রাস্তায় খালি পায়ে এতটা দৌড়ানোর ফলে পায়ের তালু প্রচন্ড জ্বলছে।কিছু কিছু জায়গায় চামড়া ছিলে আছে।সুলতানা একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে কিন্তু এর জাবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছে না ঈশা।তার মাথা ভনভন করছে ঈশানের কারণে।যার ফলে আশেপাশে কি ঘটছে তার মাথায় ডুকছে না।

” তোমার পায়ের চামড়া উঠলো কি করে?”

কয়েক সেকেন্ড চুপ রইলেন সুলতানা।মেয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে কেন?প্রশ্নের জবাব দিলে কি তার জাত যাবে?মায়ের যে চিন্তা হয় তা কী সে বোঝেনা?নিজেকে সংযত রেখে পুণরায় প্রশ্ন করলেন তিনি।

” আমি কিছু জানতে চাইছি ঈশা তোমার পায়ে কি হয়েছে?জুতা কোথায় রেখে এসেছিলে?”

” মা আমাকে একটু স্থির হতে দাও।”

” কিন্তু আমি তো স্থির হতে পারছিনা বলো আমায় কি হয়েছে?”

” রাস্তায় কুকুর তাড়া করেছে।”

” কুকুর তাড়া করেছে মানে?তুমি কুকুরের সাথে কি করেছো?”

” কুকুরের বাচ্চাগুলোকে একটু আদর করতে চেয়েছি যার ফলাফল পুরোটা রাস্তা দৌড়ে মেইন রোডে উঠে সিএনজি নিয়েছি।”

শ্বাস ছাড়লো ঈশা পায়ের জ্বালা কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে।সুলতানা মেয়ের জন্য আরো কিছু বরফের টুকরো আনলেন।

” তোর বাবা জানলে তুফান করবে।”

” কেন করবে?”

” যদি কুকুর কামড়ে দিতো?”

” দেশি কুকুর কিচ্ছু করতে পারেনি তবে পাশে একটা জাঁদরেল ছিলো ওটা যা করার করে দিয়েছে।”

“মানে?”

” কিছু না আম্মু।আমার জন্য একটু চা করে দিবে?মাথাটা ভীষণ ধরেছে।”

সুলতানা মেয়ের কথা বুঝতে পারলেন না তিনি দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলেন কক্ষ ছেড়ে।জামাকাপড় বদলে অনুকে ফোন করলো ঈশা এবং দ্রুত তাদের বাসায় আসতে বললো।ঈশা ডেকেছে আর অনু আসবে না এতো হয় না।পাঁচ মিনিটে ঈশাদের বাসায় হাজির অনু।ঈশা একে একে ঈশানের সব কান্ড খুলে বলে অনুকে তখন সবটা শুনে অনু নির্বোধ চোখে তাকিয়ে রইলো ঈশার দিকে।

” তুই সত্যি প্রেম করবি?তাও যার সাথে পায়ে পা লেগে ঝগড়া করিস তার সাথে, এটাও সম্ভব!”

” বললেই হলো নাকি?আমি তো বিপদে পড়ে হ্যাঁ বলেছি কাল সকালে তাকে বুঝিয়ে বারণ করে দিব।”

” যদি ঈশান ভাইয়া না মানে?”

” না মানলে নাই।”
.

বাম হাতের ব্যথায় ছটফট করছে ঈশান।কিছুক্ষণ আগে হসপিটাল থেকে ফিরেছে তারা। হাতের ঘা পরিপূর্ণ ভাবে শুকাতে এখনো প্রায় একমাস লাগবে অথচ এই মুহুর্তে হাতের ঝুঁকপূর্ণ অবস্থা নিয়ে ঈশাকে কোলে তুলেছিলো,কোলে তুলে আবার অনেকটা রাস্তা দৌড়েছে যার দরুনে হাতের দশা বেহাল।ঈশানের এই কান্ড শুনে ডাক্তার সাহেব না হেসে পারলেন না।রাসেলের মেজাজ বর্তমানে বেজায় চটে আছে কি প্রয়োজন ছিলো ঈশাকে কোলে নেওয়ার?সে কি রাস্তায় গাড়ি পায়নি?মাহমুদা হয়তো এই মাসেই দেশে ফিরবেন ছেলের এই অবস্থা দেখে কোন মা স্বাভাবিক থাকতে পারবেন না।সেই মুহূর্তে কি রাসেলের অপরাধবোধ হবে না?কেননা ঈশানের পাশে এই শহরে ছায়ার মতো লেগে থাকার লোক একমাত্র রাসেল।সেই রাসেল ঈশানকে বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে পারলো না।বুকটা ভারী হয়ে এলো তার।হতাশার শ্বাস ছাড়তে চোখে ভেসে উঠে ঈশানের হাস্যজ্বল মুখ।

” তুই এত চটে আছিস কেন?আমি তো ঠিক আছি এক সাপ্তাহ বেড রেষ্ট নিলে আবার ঠিক হবো।”

” তোর ঠিক হওয়ার কোন দরকার নেই।তুই আজ কয়টা ভুল করেছিস ভেবে দেখ।যদি আজ কুকুর কামড়ে দিতো?”

” ইনজেকশন নিয়ে নিতাম।”

” ঈশাকে কোলে তুললি কেন?রাস্তা ঘাটে কি মানুষ ছিলো না তোদের সাহায্য করার?”

” উটকো ঝামেলাটার ওজন বেশি না গড়ে একান্ন বায়ান্ন এটা আর কি এমন ওজন।”

“আরে বাহ! দৌড়তে দৌড়তে পরিমাপও করেছিস।ধরে নে কাল সকালে ঈশা তোর প্রপোজাল ফিরিয়ে দিলো তখন কি করবি?”

” তুই ধারণা কর আমি কি করবো?”

” কি আর করবি আবার কোলে নিয়ে দৌড়ে পালাবি।”

রাসেল মিহি হাসলো তবে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠলো ঈশানের মুখে সত্যি তো যদি ঈশা তার মত ফিরিয়ে নেয় তখন কী হবে?

৩৩.
আজ বন্ধের দিন সেই হিসেবে সারাটা দিন বাড়িতে কাটাবে ঈশা।কিন্তু মনের মাঝে ঈশান নামক কাঁটাটা যে যন্ত্রণা দিচ্ছে এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে ঈশা।ঈশানকে ডেকেছে একটা ক্যাফেতে।অনুকে নিয়ে বের হওয়ার কথা থাকলেও অনু তার মায়ের সাথে বাজারের উদ্দেশ্য বেরিয়েছে।বাধ্য হয়ে ঈশানের সাথে একাই দেখা করবে সে।

ভার্সিটির কাছে একটি ক্যাফেতে ঈশানকে আসতে বলে ঈশা।ঈশান এসে বসেছে প্রায় দশ মিনিট হতে চললো।রাসেল সাথে আসতে চেয়েছিলো কিন্তু সে বারণ করেছে।ঈশানের টেবিলের পাশে একদল ছেলে হই হুল্লোড় করছে তারা কি মাঠে আছে নাকি ক্যাফে আছে হয়তো সেটাও বেমালুম ভুলে বসে আছে।ছেলেগুলোর হট্টগোলে মাথা ধরেছে ঈশানের একবার তাদের আস্তে কথা বলার নির্দেশ দিলেও লাভ হলো না।বরং ধীরে ধীরে ছেলেগুলোর হট্টগোল বাড়তে থাকলো।

ঈশা ক্যাফেতে আসতে ঈশানকে পেয়ে গেলো।দুজন দুজনের মুখোমুখি ঈশা দুই কাপ কফি অর্ডার করে মূল কথায় ফিরলো।

” সরি একটু দেরিয়ে হয়ে গেলো।”

” সমস্যা নেই।তোমার পায়ের কি অবস্থা?ব্যথা আছে এখনো?”

” একদম না।আসলে আপনাকে ডেকেছি একটা বিষয় কাটছাঁট করতে।”

” কোন বিষয়? আমার সাথে কোন সম্পর্কে যাবে না এই বিষয়?”

ঈশান সহজ গলায় ঈশার মনের কথা বলে ফেললো।ঈশা ঘাবড়ে গেলো তবে কি ঈশান শাহরিয়ার পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে।

” হুম আপনি ঠিক ধরেছেন।আপনার সাথে আমি কখনো কোন সম্পর্কে যেতে পারবো না।”

” কেন পারবে না?”

” আপনার প্রতি আমার কোন আবেগ, অনুভূতি নেই।”

” একদিনে কি আবেগ,অনুভূতি হয়ে যাবে নাকি?অদ্ভুত কথা বলছো তুমি ঈশা।সময় নাও আমি তোমায় সময় দিতে প্রস্তুত।”

ঈশা হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করলো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করছে সে এই ঈশান তো জোঁকের মতো লেগে গেছে।

” সাধারণ ভাবে ভাবুন আপনার ক্লাস আমার ক্লাস একদম যায় না আপনি হলেন উচ্চস্তরের মানুষ আমি মধ্যবিত্ত।”

” যেখানে তুমি আমার চোখে অসাধারণ সেখনে আমি সাধারণ বিষয় ভাববো কেন?আমার জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক আমি নিজে।”

ঈশা রেগে গেলো ঠোঁট কুচকে বসে রইলো কয়েক মিনিট।ওয়েটার কফি দিয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগে ঈশান নিশ্চিন্ত মনে কফি পান করছে অথচ ঈশার ছটফট ক্রমশ বাড়ছে।

” ঈশান দয়া করে আপনি কালকের কথা ভুলে যান মনে করুন কালকে আমাদের সাথে কিচ্ছু হয়নি আমি আপনাকে কোন কথা দি নাই।”

” কালকের কথা ভুলতে বলছো? অসম্ভব।তুমি জানো কাল বাড়ি ফিরে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। আমার হাত কিন্তু এখনো ঠিক হয়নি তোমায় কোলে নিয়ে দৌড়ানোর ফলে হাতে আবার আঘাত লেগেছে।”

” ব্যস হয়েছে আমি এসব শুনতে চাই না।আমি যা বলছি সোজাসাপটা বলছি আপনি আপনার পথে হাটুন আমার কথা ভুলে যান।”

হাতের কাপটা শব্দ করে টেবিলে রাখলো ঈশান।তার চোখে মুখে থাকা প্রফুল্ল ভাব কেটে গিয়ে গম্ভীরতা এঁটে গেছে।ঈশার দিকে তীর্যক চাহনি নিক্ষেপ করে বলে,

” তোমার কি মনে হয় আমি তোমার সাথে ফা ল তু মজা করছি?ঈশান শাহরিয়ারের হাতে অঢেল সময় যে তোমার সাথে এখানে এসে প্রেম ভালোবাসার মতো সিরিয়াস ইস্যু নিয়ে মজা করবে? ”

ঈশা বিচলিত হলো।সেই প্রথম দিন ঈশানকে যেমনটা দেখেছে এই সময়টাতেও ঠিক তেমনটা লাগছে।চোখে মুখে গম্ভীরতা,জেদ,সবটা মিলিয়ে ঈশার সাহসে এক বালতি জল পড়লো।ঈশা তার বাম হাতের আঙুলে তাকালো গোল্ডের একটা রিং চকচক করছে তার আঙুলে।এই রিংটা গতবছর জন্মদিনে ফুফুর পক্ষ থেকে পেয়েছিলো এই সুযোগটা কাজে লাগালো সে।

” হাতে এই রিংটা দেখছেন এটা আমার এঙ্গেজমেন্টের রিং।কয়েক মাস আগেই আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।হাজবেন্ড…”

ঈশার কথার মাঝে খপ করে ঈশান তার হাত ধরলো।এবং আঙুল থেকে আংটি খুলে ছুড়ে ফেললো ক্যাফের জানলার বাইরে।স্তম্ভিত হলো ঈশা একবার হাতের দিকে আরেকবার ঈশানের দিকে তাকিয়ে ঝাপসা হয়ে এলো তার চোখ।

” এটা আপনি কি করলেন!”

” কি করলাম?আংটিটা ফেলে দিয়েছি এই আংটির আর দরকার নেই।ওঁই আঙুলে শুধু আমার আংটি থাকবে যদি তা না হয় আঙুলটাও কে টে এভাবে ছুড়ে ফেলবো।”

ঠান্ডা মাথায় হুমকি দিলো ঈশান।ঈশার গায়ে ঘাম ঝরছে ওড়নার সাহায্যে ঘাম মুছে শেষ বারের মতো ঈশানকে বোঝাতে উদ্যত হয় সে।

“ঈশান আপনি ঠান্ডা মাথায় ভাবুন আপনি চাইলে তো হবে না।আমাদের মাঝে সম্পর্ক গড়ে উঠুক এটা আমি চাই না।যেখানে মনের….”

বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো ঈশান।পাশে বসে থাকা ছেলেগুলো ঈশাকে নিয়ে কিছু একটা আলোচনা করছিলো বিষয়টা ঈশার নজরে না এলেও ঈশান বেশ কয়েকবার পরখ করেছে।তাদের নোংরা ইশারা ঈশান এতক্ষণ হজম করলেও এখন আর পারা যাচ্ছে না তাই তো রাগের মাথায় ছেলেগুলোর সাথে বেঁধে গেলো ঝুটঝামেলা।ঈশা কিংকর্তব্যবিমূঢ় সেদিন শপিং মলে ঈশান আর ছেলেগুলোর মা রা মা রির কথা মাথায় আসতে ভয়টা দ্বিগুণ বাড়লো।

তবে ঝামেলা বেশি দূর যেতে পারলো না বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ঈশানের গার্ডরা ইঙ্গিত পেয়ে ছুটে যায়। ঈশান ছেলেগুলোকে ছেড়ে ঈশাকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।

ঈশান গাড়ির কাছে গিয়ে ক্ষান্ত হয় রাগে এখনো তার শরীর কাঁপছে।ঈশার এবার রাগ লাগলো ঈশানের সম্মুখে আঙুল তুলে বলে,

” সেদিন আপনাকে বাঁচানো মোটেও ঠিক হয়নি।সেই দিন যদি ভুলটা না করতাম আজ এই দিন দেখতে হতো না।”

” সুন্দরী তুমি যা শুরু করেছো আমার তো মনে হয় না আমি বেশিদিন বাঁচবো।সিদ্ধান্ত তোমার কাছে আমাকে কি করে মারবে, তোমার ভালোবাসায় নাকি তোমার ভর্ৎসনায়।”
#চলবে___

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ১৮]
___________________
৩৪.
” এত করে বোঝানোর পরেও সে মানলো না?”

” না।”

” তবে এবার কি হবে?”

অনু প্রশ্নটা করে ঈশার পাশে বসে পড়লো।তার হাতে মুঠোফোন যা এক নাগাড়ে বেজে চলেছে।স্কিনে ভেসে উঠছে “পাষাণ” লেখাটি।অর্থাৎ পাষাণ নামে সেভ করা নাম্বার থেকে একের পর এক কল আসছে।সেদিন ঈশানকে এত করে বোঝানোর পরেও সে মানে নি।গতরাতে দুই ঘন্টা যাবৎ ঈশানকে ঈশা বুঝিয়ে চলেছে এ সম্পর্কের কোন ভিত্তি নেই।কিন্তু নাছোড়বান্দা ঈশান নিজের ইচ্ছায় অটল রইলো বরং সে ঈশাকে পয়েন্টে পয়েন্টে বুঝিয়ে দিচ্ছে তাদের সম্পর্কের পজেটিভ সাইট।ঈশানের এসব ভিত্তিহীন কথা ঈশার বড্ড বিরক্ত লাগলো।যার ফলে ফোন বন্ধ করে রাতে ঘুমিয়ে পড়লো।

সকাল প্রায় সাড়ে নয়টা বাজতে চলেছে অনু ঘুমে ছিল।
সকালে ঈশা ফোন অন করে যাওয়ায় ঈশানের নাম্বার থেকে একের পর এক ফোন আসতে থাকে।ঘুম চোখে ঈশার ফোনে ” পাষাণ ” নামটা দেখে এক ঝটকায় ঘুম ভেঙ্গে যায় তার।মস্তিষ্ক জুড়ে হানা দেয় কিছু প্রশ্ন এ আবার কেমন নাম?পরে যখন জানতে পারে পাষাণ মানে ঈশান হেসে কুটিকুটি হয়ে যায় অনু।

ঈশার দুই পাউন্ডের একটা কেক তৈরি করছিলো অনুর আগমনে মনোযোগ ভঙ্গ হলো তার ফলে কেকটা টেবিলের এক কোনে রেখে বসে পড়ে অনুর পাশে।

” ঈশান শাহরিয়ার প্রতিশোধের খেলায় মেতে উঠেছেন।তিনি কি ভেবেছেন ভালোবাসার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে আমাকে ডুবে মা র বে ন? নওশীন ঈশা ততটাও বোকা না।”

” প্রতিশোধ নিবে কেন?আমরা তার উপকার করেছিলাম।”

” তাকে কম অপমান করিনি আমি।পাব্লিক প্লেসে একটু বেশি অপমান করেছি। তার আবার এসবের প্রতিশোধ নিতে হবে না।”

” সত্যিও তো ভালোবাসতে পারে?সিনেমায় দেখিস না হিরো ঝগড়ার মাঝে ফিদা হয়ে যায়।তুই একটু বেশি বেশি ভাবছিস।”

” মোটেও না।”

মুখ বাঁকালো ঈশা।ঈশাকে কাজ ফেলে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে এলেন ঈশার খালামনি “সুমাইয়া।”

“ঈশা তুমি বসে আছো?দ্রুত হাতের কাজটা শেষ করো।কেক ডেকোরেশন করা হলে গাজরের হালুয়া বানাতে হবে।”

” এই তো আমি শেষ করছি আন্টি।শ্রেয়া আপু কি করছে?”

” সে ফেইস প্যাক লাগিয়ে বসে আছে।হাতের কাজ শেষ করে তোমরাও তৈরি হয়ে নিও মেহমান আসবে বারোটায়।অনু বরং শ্রেয়ার কাছে যাও।”

অনু মাথা দুলালো উঠে গেলো ঈশার পাশ থেকে।

৩৫.
ঈশানের বন্ধু নাজিম চাকরির সুবাধে দেশের বাইরে থাকেন।ঈশান বাংলাদেশে আসার পর পড়াশোনার সূত্রে তার সাথে পরিচয় হয়েছিলো।একটা সময় পর নাজিম দেশের বাইরে চলে গেলেও তাদের বন্ধুত্ব হারায়নি বরং অটুট ছিলো।নাজিমের মা আলেয়া নিজের ছেলের চোখে দেখেন ঈশান এবং রাসেলকে নাজিম দেশের বাইরে থাকলেও আলেয়ার সাথে তাদের মুলাকাত সর্বদা ছিলো।
বেশ কয়েকমাস আগে থেকে আলেয়ার পছন্দের পাত্রীর সাথে নাজিমের বিয়ের আলাপ আলোচনা চলছিল।অপেক্ষা ছিল কখন নাজিম দেশে ফিরবে।অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটলো নাজিম দেশে ফিরে মায়ের পছন্দ করা মেয়েকে বিয়ে করতে সম্মতি জানায়।সবার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আজকের দিনটি এঙ্গেজমেন্ট হিসেবে ধার্য করা হয়।ছেলে পক্ষরা বেশ কয়েক ঘন্টা আগে পৌঁঁছে গেছে মেয়ে পক্ষের বাড়িতে।দুপুরের খাওয়ার শেষ করে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য সবাই বসার ঘরে অপেক্ষা করছিলো।ঈশান, নাজিম,রাসেল সবাই এক পাশে সিঙ্গেল সোফায় বসে টুকটাক কথা বলছিলো।বাড়ির বড় সদস্যরা নিজেদের মাঝে কথায় ব্যস্ত।
.
ঈশা অনু শ্রেয়াকে নিয়ে পার্লার থেকে মাত্র ফিরেছে।পেটে ক্ষুধায় ঈশার জান যায় যায় অবস্থা।আগে পরে না ভেবে দ্রুত রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ায় মেয়েটা।

” আম্মু খাওয়ার দাও আমার খিদে পেয়েছে।”

” আগে তোর আলেয়া আন্টির সাথে দেখা করে আয়।আসার পর থেকে তোকে অনেকবার খুঁজেছে।”

” এক্ষুনি যেতে হব?”

” তোর কাপ কেক এখনো ফ্রিজে রয়ে গেছে তাদের দেওয়া হয়নি কেক নিয়ে দেখা করে আয়।তারপর।এসে খেতে বসবি।যা যা এক্ষুনি যা।”

খাওয়া দাওয়া শেষ করে ডেজার্ট আইটেম না হলেই নয়।ঈশা তার বানানো কাপ কেক গুলো একটি ট্রেতে নিয়ে এগিয়ে যায় বসার ঘরে।আলেয়ার সাথে তার ভীষণ ভাব জমেছে আর ভাব জমানোর মূল কারণ এই কেক।আলেয়া ভীষণ পছন্দ করেন ঈশার হাতে বানানো কেক।

বসার ঘরে অনেক মানুষের ভীড়।মুরব্বিদের দেখে দ্রুত মাথায় কাপড় টানলো ঈশা।হাতে কেক নিয়ে এগিয়ে গিয়ে একটু জোরে সালাম জানালো যেন সবাই শুনতে পায়।ঈশাকে দেখতে পেয়ে মুহূর্তে স্থানটি নীরবতায় ঢেকে যায়।সবাই উৎসুক চোখে তাকালো সামনে থাকা মেয়েটার দিকে।ঈশার কণ্ঠ কানে ঝংকার তুললো ঈশানের।কলিজার ভেতরটায় মুচড়ে উঠলো সহসা মনে মনে বার বার চাইলো এই মেয়েটি যেন ঈশা না হয়।ঈশান মাথা তুলে তাকালো সামনের দিকে, মেয়েটিকে জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে আলেয়া।আলেয়াকে দেখে বোঝা যাচ্ছে তিনি বড্ড খুশি।ঈশা কাপ কেক সেন্টার টেবিলে রাখলো সবাই যার যার ভাগের কেক হাতে তুলে নিলো।আলেয়া এক চামচ কেক মুখে তুলতে ঈশা বলে,

” রূপবান শাশুড়ী কেমন হয়েছে কেক?তোমার জন্য কিন্তু স্পেশাল ভাবে বানানো।”

” আমার বউমার কেক কখনো খারাপ হয়েছে?”

ঈশা আর আলেয়ার খুনশুটি দেখে নিশ্চল হয়ে রইলো ঈশান।নাজিমকে তখন ডেকে নিয়ে গেলেন আলেয়া ঈশার সাথে আলাপ করানো হচ্ছে তার।রাসেল ঈশানের চোখে চোখ রাখলো,ঈশান ঘামছে তার চোয়াল শক্ত হয়ে এসেছে।দ্রুত ঈশানের হাত ধরলো রাসেল এবং স্বগোতক্তি স্বরে বলে,

” প্লিজ ঈশান সিনক্রিয়েট করিস না প্লিজ আমার এই অনুরোধ রাখ।”

ঈশান নিশ্চুপ চোখে তাকিয়ে রইলো ঈশার দিকে তবে ঈশা এখনো দেখেনি তাকে।

” ঈশা তোকে বলেছিলো তার এঙ্গেজমেন্ট হয়েছে তাহলে কী নাজিমের সাথে?”

” জানি না।”

ঈশান দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেলো তার পিছু পিছু গেলো রাসেল।ঘর থেকে বের হলে সিড়ি, সেই আর সিড়ির সাহায্যে ছাদে যাওয়া হয়।ঈশান গটগটিয়ে ছাদে উঠলো তার পিছু গেলো রাসেল।

ঈশান দেয়াল ঠেসে দাঁড়ালো তার শরীর কাঁপছে।
” এটা হতে পারে না।নাজিমের সাথে ঈশাকে আমি কখনো মেনে নিতে পারবো না।”

” আমি বুঝি না এত মিল কেমনে?রুদবার জন্মদিনে গেলাম সেখানে ঈশা আবার নাজিমের এঙ্গেজমেন্টে এলাম সেখানেও ঈশা।এই ঈশা কি গোটা শহর বিচরণ করে?”

” তুই এক্ষুনি নিচে যাবি ঈশাকে যেভাবে হোক ছাদে পাঠাবি।”

” আরে ও পাত্রী তোর সাথে এখানে দেখলে কে কি ভাববে?”

” আমার এসব ভাবার সময় নেই।”

রাসেল দ্রুত পায়ে বের হলো ঈশা এখন কি করছে দেখা দরকার।তবে তার আগে অনুর সাথে কথা বলা জরুরি।রাসেল অনুকে বেশ কয়েকবার ফোন করে তবে অনু ফোন ধরছে না।ঈশান যে এবার কি করবে ভাবতে গলা শুকিয়ে এলো রাসেলের।দ্রুত ঘরে প্রবেশ করতে অনুর মুখোমুখি হয় রাসেল।

” তুমি এখানে?”

রাসেলের প্রশ্নে হকচকিয়ে উঠলো অনু।রাসেলকে এখানে দেখতে পাবে স্বপ্নেও ভাবেনি সে।

” আপনি এখানে কি করছেন?আপনাকে দাওয়াত করলো কে?”

” হাওয়ায় উড়ে এসেছি।তুমি আমার কাছে এত বড় কথা কি করে আড়াল করলে?”

” কোন কথা?”

” তার আগে বলো ঈশা কই?”

” সে খেতে বসেছে কেন তাকে কি দরকার।”

অনুর হাত টেনে তাকে আড়ালে নিয়ে গেলো রাসেল।স্বগোতক্তি স্বরে বলতে থাকে,

” তুমি জানো না ঈশান ঈশাকে পছন্দ করে?”

” হ্যাঁ জানি।”

” ঈশান যদি ঈশাকে না পায় তবে তোমার আমার মিল কখনো হবে না।এটা অসম্ভব হয়ে যাবে।”

” কিন্তু ঈশা ঈশানকে মোটেও পছন্দ করে না।আমার তো সন্দেহ লাগছে ঈশান ভাই কি আসলে ঈশাকে ভালোবাসে?”

” তুমি আমার বন্ধুর ভালোবাসায় সন্দেহ করছো?”

রাসেল চোখ পাকিয়ে তাকালো।অনু থতমত খেয়ে চুপসে যায়।

” অনু ঈশাকে এক্ষুনি ছাদে পাঠাবে।”

” কিন্তু কেন?”

” ঈশান ওঁর সাথে কথা বলবে।”

” বাড়ির কেউ দেখলে রক্ষে থাকবে না।আমায় মাফ করো আমি এটা কর‍তে পারবো না।”

” কেউ দেখবে না প্লিজ একবার ওদের দেখা করার সুযোগ করে দাও।ঈশাকে মিথ্যা বলে ছাদে পাঠাও।”

” পারবো না।ঈশা জানলে আমায় কুচি কুচি করে ফেলবে আপনার দরদ থাকলে আপনি যা করার করুন।”

অনু মুখে ভেংচে চলে গেলো।রাসেল মাথায় হাত রেখে পাইচারি করতে থাকে। কী করবে সে এই মুহূর্তে?
#চলবে__