#অবেলায়_ভালোবাসি
#মারিয়া_আক্তার
#পর্ব_২১
জুলাই মাসের ১৪ তারিখ আজ। এই দিনটাতেই তাহা পৃথিবীতে এসেছিল। সোনিয়া বেগমের কোল আলো করে এসেছিল মিষ্টি এক পরী। এই ছোট মেয়ের বড় বড় চোখগুলো দিয়ে যখন মায়া মায়া দৃষ্টিতে তাকাতো তখন দিনদুনিয়া ভুলে যেতেন সোনিয়া বেগম। আবার হাসলে ছোটছোট ফুলো দু’গালে দু’টো গর্তের সৃষ্টি হত। কি মায়াবী চেহারা এই সদ্যজাত মেয়েটার। ইব্রাহীম খলিল তখন ছোটখাট ব্যবসা করতেন। বেশ স্বাচ্ছন্দেই চলতো তাদের জীবন। তার মেয়ে অন্ত প্রাণ ছিল তখন। বাবা মেয়ের ভাব ছিল খুব। আস্তে আস্তে ইব্রাহীম খলিলের টাকার প্রতি লোভ জন্মালো। ধারদেনা করে দাঁড়ালেন নির্বাচনে। প্রথমবার নির্বাচনে হারলেও দ্বিতীয়বার নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে চেয়ারম্যান পদে নিজের জায়গাটা পাকাপোক্তভাবে আসীন করে নেন। আস্তে আস্তে পরিবর্তন দেখা দিলো ওনার মধ্যে। কথার এদিকসেদিক হলে সোনিয়া বেগমকে ধরে বেধড়ক মারতেন। তাহা মাকে ছাড়াতে গেলে সে নিজেও মার খেত বাবার হাতে। একদিন ইব্রাহীম খলিল আফসানা বেগমকে বিয়ে করে আনেন। সেদিন থেকে তাহা আর তার মায়ের জীবন পুরোপুরি পাল্টে যায়। তাহা ঘৃণা করা শুরু করে দেয় বাবাকে। তখন থেকেই তাদের সম্পর্কের মধ্যে দেয়াল তৈরি হয়ে যায়। অ্যালবাম ঘেঁটে পুরোনো সব ছবি দেখছেন সোনিয়া বেগম। নিজের ঘরের এককোণে বসে এসব দেখছেন। এমন সময় তাহা ‘আম্মু’ ‘আম্মু’ বলে চিল্লিয়ে ঘরে ঢুকে। তাহার গলা পেয়ে সোনিয়া বেগম অ্যালবামটা আঁচলের তলায় লুকিয়ে ফেলেন। তাহা’কে পুরোনো কিছুর সংস্পর্শে আসতে দেবেন না তিনি। মেয়েটার জীবনে তিনি কোনো আঁচ আসতে দেবেন না। অনেক ঝড়-ঝাপটাই তো গেল মেয়েটার ওপর দিয়ে। এবার না হয় একটু শান্তি মিলুক।
“আম্মু চলো আজ তোমার জন্য আমি ফার্স্ট টাইম নিজের হাতে রসমালাই বানিয়েছি। আজ আমার জন্মদিন উপলক্ষে তুমি আমার জন্য এতকিছু করলে তাই আমিও আজ তোমার প্রিয় রসমালাই তৈরি করলাম। চলো, চলো, খেয়ে দেখবে কেমন হয়েছে?”
তাহা হাত ধরে টানতে টানতে মাকে নিয়ে আসে ড্রয়িংরুমে। সোনিয়া বেগম শত কষ্টের মধ্যেও তৃপ্তির হাসি হাসেন। আল্লাহর অশেষ কৃপায় মেয়েটা তার পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আগের মত খিটখিটে মেজাজটা আর একদমই নেই। কেমন মিষ্টি হয়ে গেছে তাই না?
__________
আজ তাহা এবং আহিরের শুভ পরিণয়। অনেক ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে আজ তাদের নতুন জীবনের শুভ সূচনা হবে। তাহা’র বাবার শোক কাঁটিয়ে উঠতে আহির তাহা’কে সবসময় সর্বাবস্থায় সাহায্য করেছে। অনেক কষ্টের পর তাহা’কে আগের মত করতে পেরেছে। এখন তাহা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। মাকে সামলিয়ে নিজেও নিজের জীবনের দিকে ফোকাস করেছে। তার বাবার মৃত্যু হয়েছে আজ প্রায় পাঁচ মাস হতে চললো। এইচএসসি ফাইনাল পরীক্ষার সময় আহির তাহা’কে অনেক সাহায্য করেছে। আহিরের ব্যাংকে চাকরি হয়েছে। সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ব্যাংকেই থাকতে হয়। এত ব্যস্ততার মধ্যেও সে তাহা’র খোঁজখবর নিতে ভুলবে না। শুক্র, শনি এই দুইদিন ব্যাংক বন্ধ থাকায় আফিয়া, তাহা দু’জনকে একসাথে নিয়ে কোথাও না কোথাও ঘুরতে যাবেই। সোনিয়া বেগমও আহিরকে পুরোপুরি ভরসা করেন। জামাই হিসেবে তিনি আহিরকে চান। তাহা নিজেও অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে গেছে আহিরের ওপর। আহিরকে ছাড়া কেন যেন সে কিছু ভাবতে পারে না। আগে না চাইলেও এখন সে নিজেও আহিরকে তার জীবনসঙ্গী হিসেবে চায়। আহিরের মা ফাতেমা বেগমও বেশ খুশি এতে। বাড়ির দুই ছেলের বিয়ে হয়েছে এখন আহিরকেও বিয়ে করিয়ে দেবেন। ছেলের কাছ থেকে মতামত চেয়ে বিয়ের কথা স্বামীর কাছে তুললে আহিরের বাবা নাকোচ করেন। চেয়ারম্যানের মেয়ের সাথে তিনি নিজের একমাত্র ছেলের বিয়ে দেবেন না। এসব নিয়ে আহিরের বাবার সাথে অনেক মনোমালিন্য হয়। বাপ-ছেলের সম্পর্কের এমন অবনতি দেখে ফাতেমা বেগম অনেক কষ্টে স্বামীকে রাজি করান। সব ঝামেলা মিটে গিয়ে আজ তাহা আর আহিরের বিয়ে। বউ সেজে নিজের রুমে বসে আছে তাহা। আহিরের অপেক্ষায় আছে। কখন সে আহিরকে নতুন বরের পোষাকে দেখবে? আহিরকে নিশ্চয়ই খুব মিষ্টি দেখতে লাগছে? সেই অপেক্ষার প্রহর গুনছে কখন থেকে। হঠাৎ করে তার কানে একটা কথা ভেসে আসলো, “বর এসেছে।” কথাটা শুনে তাহা হাত দিকে মুখ ঢেকে ফেলে। ইশ! কি লজ্জা।
___________
বিয়ের সব কাজ শেষ তাই তাহা’র এখন বিদায়ের পালা। বিদায় মুহূর্তটা এতটা বেদনাদায়ক কেন? পরিবার পরিজন ছেড়ে কেন একটা মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি যেতে হবে? নিয়মটা তাহা’র একেবারেই পছন্দ নয়। সে কেন আহিরের বাড়ি গিয়ে থাকবে? আহির কেন তার বাড়ি এসে থাকতে পারবে না? প্রশ্নটা মাথায় আসলেও কাউকে করার মত সময় হলো না তার। সবাই-ই এখন ব্যস্ত। আহির তাহা’র পাশে দাঁড়িয়ে আছে। লজ্জা লাগছিল বলে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। বিয়েতে লজ্জা কি শুধু মেয়েদেরই লাগে? অবশ্যই না। ছেলেদেরও লজ্জা লাগে। বিদায় মুহূর্তে তাহা মাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করে। শ্বশুরবাড়ি, বাপেরবাড়ি কাছাকাছি হলেও তার খুব কান্না পাচ্ছে। ও বাড়ি থেকে ডাক দিলে এ বাড়িতে শোনা যায়। তবুও তাহা’র মায়ের জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে। মা’টা যে তার খুব একা হয়ে যাবে। সবাই অনেক কষ্টে জোর করে তাহা’কে সোনিয়া বেগমের কাছ থেকে ছাড়িয়ে নেন। আফিয়া তাহা’কে ধরে নিয়ে রাস্তা পার হয়। রাস্তার এপাড়, ওপাড় বাড়ি বলে গাড়ির প্রয়োজন হয়নি। তাহা’কে সরাসরি আহিরদের ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করানো হয়। বয়স্ক মহিলারা বলছিল কিসব আচার-অনুষ্ঠান পালন করার কথা। ফাতেমা বেগম এতে সরাসরি না করে দেন। এসব কুসংস্কার পালনের কোনো মানেই হয় না। তাহা’কে সোফার ওপর বসিয়ে রাখা হয়েছে। সবাই এসে এসে নতুন বউ দেখে যাচ্ছে। যদিও তাহা’কে এই এলাকার সবাই-ই চেনে। তাও আজ নতুন বউতো! নতুন বউ দেখতেই হবে। নতুন বউ দেখার মজাই আলাদা। তাহা এসবে একদম হাঁপিয়ে উঠেছে। এবার এসব ভারি শাড়ি, গহনা খুলতে হবে। কাউকে দেখতেও পাচ্ছে না। আপাতত কাছাকাছি কেউ-ই নেই। তাই সে শাড়িটাকে উঁচু করে ধরে দো’তলার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। হাঁটতে হাঁটতে আহিরের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। এখন কোন রুমে ঢুকে গিয়ে কোন বিপদে পড়বে? সে ভয়ে আহিরের রুমেই ঢুকে পড়ে। চাপা দেওয়া দরজা আকস্মিক এভাবে খুলে যেতে দেখে রুমের ভেতরের সবাই হকচকিয়ে ওঠে। আহির স্টাডি টেবিলের ওপর উঠে বসে ছিল। তামিম সাথে আহিরের বন্ধুরা মিলে রুমটাকে ফুল দিয়ে সাজাচ্ছিল। তাহা’কে এখন এখানে দেখে তারা হাত থেকে ফুল রেখে দিয়ে নিচে এসে দাঁড়ায়। আহির টেবিল থেকে নেমে এসে তাহা’র সামনে দাঁড়ায়। ভ্রুঁ উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“তুমি এখন এখানে কি করছো?”
তাহা একবার সবার দিকে তাকিয়ে একটা ক্যাবলামার্কা হাসি দেয়। তারপর মাথা চুলকে বলে,
“আসলে এসব পরে খুব গরম লাগছিল। তাই চেঞ্জ করার জন্য এখানে এসেছি।”
সবাই অবাক হয়ে তাকায় তাহা’র দিকে। তামিম বলে উঠে,
“কি? তুমি চেঞ্জ করার জন্য সরাসরি এই রুমে চলে আসলে? আফিয়াকে বলতে, ও তোমাকে ওর রুমে নিয়ে যেত।”
“আসলে আমি কাউকে খুঁজে পাইনি। তাই এখানেই চলে এসেছি।”
তাহা এবার আহিরের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর ফিসফিসিয়ে বলে,
“আপনারা এখন একটু যান না এখান থেকে। আমি একটু চেঞ্জ করবো।”
আহির চোখ বড়বড় করে তাকায়। বাকি সবাই তাহা কি বলেছে তা কান পেতে শোনার চেষ্টা করে। কিন্তু বিফল হয়। তাহা এতটাই ফিসফিসিয়ে বলে যে তারা কিছুই শুনতে পায়নি।
“আরে তুমি দেখছো না ওরা কাজ করছে? তুমি আফিয়ার রুমে যাও। না ওর রুমে এখন মেহমান আছে। এই তামিম যা আফিয়াকে ডেকে নিয়ে আয়। বল তাহা’কে আম্মুর রুমে নিয়ে যেতে। ও চেঞ্জ করবে।”
আহিরের কথায় তাহা জেদ ধরে বলে,
“লাগবে না রুম সাজানো। যান এখান থেকে এখন। আমি এ রুমেই চেঞ্জ করবো। আপনারা যান।”
আহির শান্ত কন্ঠে তাহাকে বলে,
“তুমি বোঝার চেষ্টা করো। ওরা একটা কাজ করছে। তুমি আম্মুর রুমে গিয়ে চেঞ্জ করলে কি হবে?”
“আমি বলছি না আমি এখানেই চেঞ্জ করবো? আপনারা এখন এখান থেকে যাবেন নাকি আমি চিল্লাপাল্লা করবো?”
তাহা’র একরোখা জবাবে আহির চুপটি করে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“এই চল তোরা। তাহা চেঞ্জ করে নিক।”
সবাই দু’জনের কাণ্ড দেখে মুখ টিপে হাসতে হাসতে বাহিরে বেরোয়। আহির একপলক তাহা’র দিকে তাকিয়ে কপাল চাপড়ায়। বিয়ে হতে না হতেই মেয়েটা তাকে কেমন ধমক দিচ্ছে। মেয়েটা মনে হচ্ছে তাকে শান্তি দেবে না। তার পুরো জীবনটা বরবার করার আজ শুভ সূচনা হলো।
চলবে,,,ইনশাআল্লাহ
#অবেলায়_ভালোবাসি
#মারিয়া_আক্তার
#পর্ব_২২
কোমরে ওড়না গুঁজে হাতে ঝাড়ু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাহা। এখন দুপুর ১টা হবে হয়তো। শুক্রবার বিধায় সবাই আজ বাড়িতে। সবাই গোসলে ব্যস্ত। কিছুক্ষণ পরই জু’মার নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে চলে যাবে। তাহা চেঁচামেচি করে সকলকে ডাকে। আহির, আরহাম, আফিয়া আর আরহামের বউ তৃষাও আসে। তাহা তৃষাকে দেখে ঝাড়ু নিয়ে তেড়ে গিয়ে বলে,
“তোকে আজ আমি ঝাড়ু দিয়ে পিটিয়ে পুরো ডিমচপ করে দেবো শাঁকচুন্নি।”
আহির তাহা’র কাছে এগিয়ে এসে বলে,
“কি হয়েছে তাহানিয়া? এমন করছো কেন তুমি তৃষার সঙ্গে?”
“এই শাঁকচুন্নি আমার ছাটনি নিয়ে নিয়েছে।”
আরহাম এগিয়ে এসে তার বউকে বলে,
“তৃষা! তুমি সত্যি ওর থেকে ছাটনি নিয়েছো?”
তৃষা আরহামের কথা শুনে আমতাআমতা করে। সে সত্যি-ই তাহা’র ছাটনি চুরি করে নিয়েছে। তাহা’র ঘরে সবসময় এসব থাকবেই। আর তাহা সারাদিন এসব খাবে। তার বুঝি খেতে ইচ্ছা করে না? আরহামতো তার জন্য কিছু আনেই না। তার কি লাগবে, না লাগবে এসবের কোনো ভাবনাই নেই আরহামের মধ্যে। ওদিকে দেখো আহির ভাইয়া কত্ত ভালো। বউয়ের সবদিক খেয়াল রাখবে। বউয়ের প্রয়োজন, অপ্রয়োজন সবকিছুর তদারকি করবে। কিন্তু তার কপালে এক রামছাগল জুটেছে। না করে কোনো কামকাজ না করে কিছু। সারাদিন ভবঘুরে হয়ে ঘুরবে।
“একটা ছাটনি-ইতো নিয়েছি তার জন্য এমন করার কি আছে?”
তাহা কোমড়ে আবার হাত গুঁজে বলে,
“কেন? তুই আমার ছাটনি নিবি কেন? এগুলো আমার বর আমার জন্য এনেছে। তোর বর তোর জন্য আনতে পারে না?”
আহির পরিস্থিতি সামলাতে এগিয়ে এসে তাহা’কে একহাতে আগলে নিয়ে বলে,
“শান্ত হও তাহানিয়া। এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে এত চেঁচামেচি করার কিছু নেই। আরহাম যা তৃষাকে নিয়ে ঘরে যা। আর শোনো তাহানিয়া আমি তোমাকে আরো ছাটনি এনে দেবো। এবার ঠিক আছে?”
আহির এভাবে তৃষাকে ছেড়ে দেওয়াতে তাহা অসন্তুষ্ট হলেও মুখে বলে,
“আচ্ছা।”
আহির অন্যদিকে ফিরে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে। বিয়ের তিন মাস যেতে না যেতেই মেয়েটার জ্বালানোর শেষ নাই। আজ এটা নিয়ে চিল্লাপাল্লা করবে আবার কাল ওটা নিয়ে চিল্লাপাল্লা করবে।
______________
“আজ তাহা রাতের রান্নাটা করবে। যাও তাহা রান্নাঘরে যাও।”
তাহা ভ্রুঁ কুঁচকে তাকায় আরহামের মায়ের দিকে। সে নাকি রান্না করবে? হাহ! সে গুড়ে বালি। তাহা আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে ডাইনিং টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে ধপ করে বসে পড়ে। জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে আস্তে আস্তে করে পুরো গ্লাসটা খালি করে। তারপর অলস ভঙ্গিতে বলে,
“কেন? আমি কেন রান্না করবো? আপনারতো আরো দু’টো বউ আছে তারা রান্না করতে পারে না?”
মার্জির বেগম কটমট দৃষ্টিতে তাহা’র দিকে তাকিয়ে বলেন,
“আমার বড় বউ মা সরকারি চাকরি করে। সারাদিন খেটেখুটে মেয়েটা এখন রান্না করতে বসবে? আর ছোট বউ মা পড়াশুনা করে। সে পড়াশুনায় খুব ভালো। তোমার মত পড়াশুনায় এমন ডিব্বা না।”
“ওহো চাচি শাশুড়ি আম্মা! আমি পড়াশুনায় ডিব্বা এটা আপনাকে কে বললো? আমারও অনেক পড়াশুনা আছে। তবে সেটা আমি আপনার ছোট বউমার মত দেখিয়ে বেড়াই না। আচ্ছা যাই হোক। আমার শাশুড়ি মা বলেছে আমি যাতে রান্নাঘরে না যাই। তাই আমি রান্নাঘরে যাচ্ছি না।”
“তোমার পড়া নেই তাহানিয়া? যাও রুমে যাও।”
হঠাৎ করে আহিরের কন্ঠ পেয়ে তাহা দৌড়িয়ে সদর দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর উৎফুল্ল হয়ে হাত এগিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“আমার চকলেট কই? দিন আমার চকলেট।”
আহির ভ্রুঁ কুঁচকে তাকায় তাহা’র দিকে।
“বাচ্চাদের চকলেট খেতে নেই। যাও পড়তে বসো।”
তাহা ঠোঁট ফুলিয়ে বলে,
“আমি বাচ্চা নই। আমার আঠারো হয়েছে আরো আগে। তাই আমাকে একদম বাচ্চা বলবেন না এসব ছাড়ুন, আগে আমার চকলেট দিন।”
আহির বুকে হাত গুঁজে দাঁড়ায়। তারপর ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে,
“তাই? তুমি বাচ্চা নও?”
তাহাও আহিরের ন্যায় বুকে হাত গুঁজে দাঁড়ায়। সেও এক্সট্রা ভাব নিয়ে বলে,
“অবশ্যই আমি বাচ্চা নই। দু’দিন পর আমার বাচ্চা হবে। আর আপনি আমাকে বাচ্চা বলছেন!”
তাহা’র কথা শুনে আহিরের কাঁশি উঠে যায়। কাঁশতে কাঁশতে আড়চোখে ড্রয়িংরুমে চোখ বুলায়। ডাইনিং টেবিলের কাছে দাঁড়িয়ে আছে মার্জিয়া বেগম। এতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন সেখানে। তাহা’র আকস্মিক কথা শুনে উনিও অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। তারপর আহিরের সাথে চোখ মিলে গেলে উনি সাথে সাথে সেখান থেকে প্রস্থান করেন।
“আমার বউটার দেখছি বাচ্চার খুব শখ!”
তাহা আড়চোখে তাকায় আহিরের দিকে। খানিকটা লজ্জাও পায় নিজের কাণ্ডের জন্য। মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে কথাটা। সে যে লজ্জা পেয়েছে তা এখন আহিরের সামনে প্রকাশ করবে না। আহিরকে একেবারেই বুঝতে দেওয়া যাবে না। নিজের শৈলী বঝার রাখার জন্য বলে,
“শখ হবে না কেন? বাচ্চা কার না ভালো লাগে? এই আপনি আগে আমার চকলেট দেন তো।”
“চকলেট দেওয়ার আগে এটা বলো পড়া কতটুকু হয়েছে। কাল তোমার ভার্সিটি আছে। মনে আছেতো?”
তাহা মাথা নাড়িয়ে বলে,
“আছে আছে মনে আছে। আপনি আগে আমার চকলেট দিন।”
আহির সামনে এগোতে এগোতে বলে,
“রুমে এসো। তারপর দিচ্ছি।”
তাহা দৌড়ে গিয়ে আহিরের সাথে পা মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে রুমের দিকে যায়। আর অন্যদিকে আহিরের গোষ্ঠী উদ্ধার করছে। এখানেই চকলেটটা দিয়ে দিলে কি এমন হতো? এই ছেলেটা দিনদিন বহুত বজ্জাত হয়ে যাচ্ছে। এর একটা ব্যবস্থা তাহা’কে করতেই হবে।
________
“তাহানিয়া!”
চেঁচিয়ে তাহা’কে ডাকে আহির। তাহা বারান্দায় বসে ইউটিউবে ফানি ভিডিয়ো দেখছিল। হঠাৎ করে আহির এত জোরে ডাকায় মোবাইল রেখেই একপ্রকার হুড়োহুড়ি করে রুমে ঢুকে। দৌড়ে এসে আহিরের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি থমকে যায়। একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একপর্যায়ে আহিরের কাছাকাছি গিয়ে আহিরকে চারপাশ থেকে দেখে নিয়ে বলে,
“দেখি দেখি। এত সেজেছেন কেন? আবার বিয়ে করতে যাচ্ছেন নাকি হ্যাঁ?”
আহিরের চোখেমুখে অবাক হওয়ার রেশ দেখা গেল না। সে বিরক্তি নিয়ে তাকায় তাহা’র দিকে। মুখ থেকে ‘চ’ সূচক শব্দ উচ্চারণ করে বলে,
“ফাজলামো রাখো। আগে বলো আমার ওয়ালেটটাকে পানিতে কেন ভিজিয়েছো?”
তাহা জিহ্বে কামড় দিয়ে অন্যদিকে ফিরে তাকায়। তারপর মাথা চুলকে বলে,
“আসলে আমি সকালবেলা আপনার প্যান্ট ধুঁতে গেছিলাম তখন প্যান্টটা চেক করিনি। ভিজিয়ে ফেলেছিলাম। আচ্ছা দিন আমি এটাকে ছাদে নিয়ে যাই। রোদে শুকালে ঠিক হয়ে যাবে।”
আহির তাহা’কে দু’হাতে আগলে ধরে বলে,
“তোমাকে কে বলেছে আমার প্যান্ট ধুঁতে? আমার কাপড়চোপড় আমি নিজেই ধুঁতে পারবো। আর করবে না এমন। ঠিক আছে?”
তাহা ভদ্র মেয়ের মত মাথা নাড়ায়। তারপর আহিরকে আবার দেখে নিয়ে বলে,
“আপনি এমন সেজেগুজে কোথায় যাচ্ছেন?”
আহির মুচকি হেসে বলে,
“একটা দাওয়াতে যাবো। আর আমি কিন্তু আবার বিয়ে করতে যাচ্ছি না। আমার এমন কিউট একটা বউ থাকতে আবার বিয়ে করার কি প্রয়োজন আছে শুনি?”
তাহা মিষ্টি করে হাসে বিপরীতে। আহিরও বিপরীতে হাসে।
চলবে,,,ইনশাআল্লাহ