অবৈধ বিয়ে পর্ব-২১+২২

0
361

#পর্বঃ২১+২২
#অবৈধ_বিয়ে
#Sabriha_Sadi
পর্ব : ২১

দুজনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে বেলকুনিতে। নীরবতা যেন তাদের গ্রাস করেছে।

– রানি।
– বলুন।
– তখন জানতে চাইলে না আমি কেন কাঁদছি।
– হ্যাঁ তার কারণ টা বলুন। আমিও জানতে চাই।
– তখন কান্নাটা তোমার জন্যে কেঁদেছিলাম।
– আমার জন্যে?
– আমি না সত্যিই কখনো ভাবি নি যে আমি আমার মায়াপরীর হাসিটা ওই ভাবে দেখতে পাবো এত কাছ থেকে। তোমার ওমন হাসি আমি লুকিয়ে অনেক বার দেখেছি। কিন্তু আজ এই প্রথম কাছ থেকে দেখতে পেলাম।
সাদা কালো রং টা আমার বরাবরই ভালো লাগে বেশি। “সেই সাদা কালো ড্রেসে, কাজল কালো চোখে, মুখের মিষ্টি হাসিটা আমায় অন্য দেশে নিয়ে গিয়েছিল।”
আমি তোমাকে আমার নিজের জীবনের থেকে বেশি ভালোবাসি। চাইলে জীবন টা তোমার জন্যেও দিতে পারি দরকারে। আবেগের বসে না। তেমন যদি কোনো দিন দরকার হয় তোমার জন্যে নিজের জীবন দিয়ে দিব। কিন্তু আমি এই একটা বছর চাইলেও নিজেকে একে বারে শেষ করে দিতে পারিনি। তবে জানো তো নিজের কষ্ট টা একটু ভুলে থাকার জন্যে বেয়ার, মদ, সিগারেট খেতাম। হ্যাঁ রানি আমি নেশা করতাম। “যে ছেলেটা কোনো দিন সিগারেটের ধোঁয়াটা নিতো না। সে ছেলেটা তোমার নেশা কাটাতে মাদকের নেশার আশ্রয় নিল।” যে দিন আমাকে সবার সামনে অপমান করে ফিরিয়ে দিলে, সেই দিনই নেশা টা কে আপন করে নিয়েছিলাম। খুব মদ খেয়েছি বেয়ার খেয়েছি। মনে হয় ৪/৫ বক্স সিগারেট শেষ করেছিলাম সে দিন। বিকেল থেকেই এই সব করতে শুরু করেছিলাম। রাতে তো মদ খেয়েই টাল হয়েছিলাম। বাকিটা মনে নেই। সেই দিনের পর থেকেই নেশাটা নেওয়া শুরু করেছিলাম। আমি তোমাকে সে দিন অনেক গুলি খারাপ কথা বলেছিলাম। কারণ টা আমার বাবা মা কে তুমি ও ভাবে বলেছিলে। “আমার বাবা মা আমার সম্পদ। আর তুমি আমার ভালোবাসা। মানে আমার আরেকটা সম্পদ। এই দুই সম্পদ মিলে আমার এক পৃথীবি।” এই পৃথীবিকে বাঁচাতে সব করতে পারি। আমি আমার বাবা মার জন্যেই দেড় বছর এখানে একা আছি। যে জন্যে এসেছিলাম তার কাজ শেষ। তারপরেও সন্দেহর বসেই এখানে পরে আছি। আমি চাইলে সেদিনের পর থেকে নিজেকে শেষ করার জন্যে চেষ্টা করতে পারতাম। কিন্তু করিনি। কারণ “আমি যে তোমাকে ভালোবেসে মরতে চাই না। তোমাকে ভালেবেসে, ভালোভাবে বাঁচতে চাই।”
আমি তোমার জন্যে অনেক কষ্ট করেছি। কি ভাবে কাটিয়েছি এই একটা বছর জানি না আমি। খুব কষ্ট যন্ত্রণায় কাটিয়েছি হয়তো।
“আমি চাইলে সব করতে পারতাম তোমার সাথে। কিন্তু ভালেবেসে ছিলাম তোমায়। তাই সহ্য করে গেলাম।”
লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতাম তোমায়। কষ্ট লাগত।
আজ যখন এতটা কাছ থেকে তোমার ওই রূপে এক চিলতে হাসি দেখলাম। তখন নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারি নি। আল্লাহ আমাকে সেই সুযোগ টা দিয়েছে, তোমার জন্যে কষ্টে থাকার সময় গুলি মনে পড়া, তোমাকে নিজের করে পাওয়াটা সব মিলিয়ে আমি আর ঠিক থাকতে পারিনি। জড়িয়ে ধরে কান্না করলাম। চলে যাওয়ার সময় যখন হাত ধরে কথা গুলি বললে,, আমাকে জিজ্ঞেস করলে কেন কান্না করছি, কি কষ্ট। আরো কষ্ট লেগে গেল। না পেরে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলাম।

রানির নিজেকে কেমন যেন একটা অপরাধী মনে হতে লাগল। তার জন্যে কেউ এতটা কষ্ট পেয়েছে ভাবতেই বুক ফাটছে।
সে একটা মানুষ কে এত টা কষ্ট দিয়েছে? তার জন্যেই একটা ছেলে এত কিছু করল?

রানি হুট করেই রাজ কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল।

চলবে……

(আসসালামু আলাইকুম। দুঃখিত কম করে দেওয়ার জন্যে। আমার লেখার মন মানসিকতা ছিল না। তারপরেও একটু লিখলাম। আমি সত্যিই দুঃখিত। আসল কথা হলো, এই গল্প নিয়ে অনেকেই দ্বিমত প্রকাশ করছে। কেউ বলছে ছোট করে দিতে কেউ বা বড় করে চাইছে। এটাও বলা হয়েছে স্টার জলসার মতো হয়ে যাচ্ছে। আরে একটা লেখক যদি তার মনের মতো করে মনের ভাব প্রকাশই করতে না পারে, সেই লেখার কি দাম? যারা এই রকম মনে করেন তারা প্লিজ এটা এড়িয়ে চলেন। কারণ আমি যেভাবে ভেবেছি সেইভাবে দিলে পর্ব অনেক গুলি হবে। তাই যারা পছন্দ না করেন তারা পড়বেন না। আমি যদি পারতাম তাহলে শেষই করে দিতাম। কারণ আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে উনার রহমতে আমি ট্যুরে যাবো। মানে ঘুরতে যাবো চট্টগ্রাম। সেখানে থাকলে সমস্যা ছিল না। আবার সেখান থেকে রাঙ্গামাটি চলে যেতে হবে। আশা করি অনেকেই জানেন সেখানের নেটওয়ার্ক এর সমস্যার কথা। নেটওয়ার্ক বাদ দিলাম। আসল সমস্যা হবে আমি যেখানে যাবো সেখানে কারেন্ট নেই। সৌর বিদুৎ তে কাজ হয়। যদি সেখানে যাই তাহলে তার দিকটা পাঠকরাই দেখবে। যদি যাই তাহলে গল্প দিতে একটু সমস্যা হবেই। আর যদি না যাই তাহলে তো আর কিছু বলার নেই। আমি পরশু দিনের পর থেকে বেশি দেওয়ার চেষ্টা করব। যাদের ভালো লাগবে না বেশি পর্ব পড়তে তারা এড়িয়ে যাবেন। কারণ আমি জোর করছি না আমার গল্প পড়ার জন্যে। এটা ব্যক্তিগত ইচ্ছা। আর ব্যক্তিগত ইচ্ছার উপর অন্য কারো জোর খাটে না।)

— হ্যাপি রিডিং….

#অবৈধ_বিয়ে
#Sabriha_Sadi
পর্ব : ২২

রানি রাজ কে পিছন থেকে দুহাত বরাবর জড়িয়ে ধরল।

রানি কেন তাকে জড়িয়ে ধরল জানে না। কেনই বা হঠাৎ তাকে নিজে থেকে জড়িয়ে ধরল। নিজের কাছে খারাপ লাগছিল। ব্যাস ধরতে ইচ্ছে হলো ধরল।

রানি এখন কেমন একটা শান্তি একটা অজানা অনুভূতি অনুভব করছে।

রাজ সামনে থেকে তার বুকে হাত রাখা রানির হাতের উপর নিজের হাত গুলি রাখল। রানি মনে হয় রাজ কে আরো একটু শক্ত করে ধরল।

দুজনে এইভাবেই অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল।

রানির মনে হলো রাজ কে এখন প্রশ্ন গুলি করা যাবে? সে কি রাজ কে জিজ্ঞেস করবে?
হ্যাঁ। করবে নাই বা কেন? অবশ্যই করবে।

রানি রাজ কে ছেড়ে দিল। তার সামনে গেল।

– কিছু প্রশ্ন করব উত্তর দিবেন।
– কেন নয়? বলো কি বলবে।
– আচ্ছা আপনি সেদিন রাতে আমাকে ইচ্ছে করেই অন্যদের দিয়ে ধরিয়ে এনেছিলেন তাই না?
– আমাকে তোমার তাই মনে হয়?
-……
– রানি আমি যদি ওইরকম টা চাইতাম তাহলে কি আগেও করতে পারতাম না? মন থেকে বলো তো করতে পারতাম না কি?

রানি মনে মনে এটা ভাবছিলোই। উনি চাইলে আগেও করতে পারত। কিন্তু এতো প্রশ্নের উত্তর তো তার জানা নেই। জানাটা দরকার। তার নিজের মাঝেও তো এমন প্রশ্ন ছিল। উনি চাইলে আগেও করতে পারতেন। কিন্তু এত দিন পরই বা কেন করল?

– আপনি কি আমার উত্তর দিবেন?
– রানি, সেই দিন টা কি তোমার মনে আছে? জানি মনে নেই। যে দিন তোমাকে তুলে আনা হয়েছিল, সে দিনটা স্পেশাল ছিল।
১ বছর আগে সেই দিনটাতেই তোমাকে আমি প্রথম দেখেছিলাম। ছোট্ট পরীর মতো আমার গাড়ির চাকার নিচে বসে তোমার ওড়না ছারাচ্ছিলে। জানো সেই দিনই তোমার জন্যে মনের গহীনে এক অজানা অনুভূতি হতে শুরু করেছিল। প্রথম দিন দেখার পর থেকে ঠিক থাকতে পারছিলাম না। সব জায়গায় তোমাকে দেখতে পারছিলাম। চোখ বন্ধ করলেই তোমার মুখটা দেখছিলাম। সেদিন তোমার মুখের কোণোয় হাসি ছিল না। কেমন পেঁচির মতো মুখ করেছিলে। তবে তোমার ওই মুখ দেখেই আমার মুখে এক চিলতে হাসি ভেসে আসত।
আমার যে তোমাকে দেখতে ইচ্ছে হতো। প্রথম দিন দেখার পর থেকেই তেমার পিছুপিছু তোমার ছায়ার মতো থাকতাম।
তোমাকে আমি তুলে আনি নি। তোমাকে তুলে আনা হয়েছিল যেদিন, সেদিন আমাদের প্রথম দেখার ১ বছর ছিল। সারাটা দিন মদের উপর ছিলাম। আমার এই অবস্থা দেখে আমার দিন দিন এই ভাবে শেষ হওয়া দেখে মাফি আমাকে জোর করেছিল। আমার বন্ধু ভেবেছিল, “কাঁটা দিয়েই কাঁটা তুলবে।” ও আমাকে জোর করেই রাজি করিয়েছিল, একটা অন্য মেয়ের সাথেই থাকার জন্যে। তোমার জন্যে আমার মাথা খারাপ হয়েছিল কিন্তু বিবেক খারাপ হয়নি। আমি খুব করে মানা করেছিলাম। মদের ফলে বেশিক্ষণ থাকতে পারিনি। জ্ঞান হারিয়েছিলাম। রাতে মাফি মুখে পানি দিয়ে পাশে ঘরে যেতে বলল। একটা মেয়ে নাকি তুলে এনেছে। তা শুনেই মাথা কাজ করছিল না। ঘরে ডুকে যখন চেনে মুখটা দেখলাম, আর ঠিক রাখতে পারনি নিজেকে।
বাহিরে গিয়ে যারা তোমাকে তুলে এনেছিল, তাদের অনেক মেরে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেন তোমাকে আনল। তারা বলল, রাস্তায় তোমার সাথে ওদের একদিন ঝামেলা হয়েছে। একা পেয়েছিল, তাই তুলে নিয়ে এসেছে। কি করব তখন বুঝতে পারছিলাম না। সত্যিই বিশ্বাস করো মাথা কাজ করছিল না আমার।
আশা করি বুঝতে পেরেছো, আমি ইচ্ছে করে তোমাকে তুলে আনায় নি। ভাগ্যের ভুলে চলে এসেছিলে তুমি।

রানির এই সময়ে কি বলা উচিৎ সেই জ্ঞান মনে হয় তার মাঝ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। একটা ছেলে এত কিছু করেছে শুধুমাত্র তার জন্যে? কি করে সম্ভব এই মানুষটার দ্বারা এই গুলি করা?

ভয় কাটিয়ে বলে উঠল,,

– আমি ছাড়া অন্য কেউ সেদিন থাকলে আপনি কি করতেন? তার কোনো ক্ষতি করতেন না আপনি? নাকি আমার সাথে যা করলেন আমাকে যে ভাবে বিয়ে করলেও তাকেও…….
– কখনোই না। আমি জানি না তুমি ছাড়া অন্য কেউ থাকলে কি করতাম। যদি অচেনা মুখ দেখতে পেতাম, কি করতাম তখন জানি না। হয়তো তার ক্ষতি করতাম। না হয় তোমার মতোই তাকে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলতাম। যেমনটা তোমাকে বলেছিলাম। হ্যাঁ জানি তুমি আমাকে খারাপ ভাবো। তোমার চোখে আমি অনেক খারাপ। হয়তো বা আমি সত্যি খারাপ।
কিন্তু সেদিন আমি তোমাকে বাড়ি ফিরিয়েই দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তোমার উল্টোপাল্টা কথা শুনে মাথা গরম করে চলে এসেছিলাম। তখন মনে হচ্ছিল তুমি নিজের ক্ষতি করতে পারো। তেমার বয়সটাও তেমনই ছিল। “খারাপ সময় গুলি তে নিজেকে দুর্বল না রেখে শক্ত থাকা উচিৎ। কিন্তু আমরা তা জানলেও মানতে চাই না বা করতে চাই না।”
তখন মনে হচ্ছিল তুমি কিছু করে ফেলবে। আর না ভেবে দৌড় দিলাম। যা ভেবেছিলাম তাই হলো। রাস্তার মাঝে আনমনে হাটাছিলে। যার ফলে গাড়ি চাইলেই কিছু করে দিতে পারত। আল্লহর রহমতে সময় মতে গুয়ে টান দিয়েছিলাম। জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলে। অনেক ভেবেই কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করে ছিলাম।

রানি হা করে আছে। কি বলবে সে?

রাজ রানি কে জড়িয়ে ধরল।

– বিশ্বাস করো রানি আমি তোমাকে ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি। আমি আমার প্রাণোসী কে নিজের প্রাণের থেকেও বেশি ভালোবাসি। আমাকে কষ্ট দিও না প্লিজ। তোমার দেওয়া কষ্ট গুলি আমি নিতে পারি না। খুব ভালোবাসি আমার প্রাণোসী কে।

রানি এই ভাবেই রাজের বাহুডোরে অনেকক্ষণ আবদ্ধ ছিল।

কিন্তু কিছুটা সময় যাওয়ার পর রানি রাজ কে ছেড়ে দিল। দৌড়ে পাশের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।

অন্য সময় হলে হয়তো রাজ তার পিছু ছুটত। কিন্তু আজ রাজ দাঁড়িয়ে আছে। রাজ বেলকুনিতে যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানেই ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে।

এত গুলি কথা, এত দিনের কথা বলে সে যেন দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়াল।

এদিকে রানি পাশের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। দুটি মানুষ এতটা কাছে থেকেও দূরত্ব কোথাও না কোথায় রয়েই গেল।

রানি আবার দরজার ওপাড়ে চলে গেল।

..

..