অবৈধ বিয়ে পর্ব-২৯+৩০

0
344

#অবৈধ_বিয়ে
#Sabriha_Sadi
পর্ব : ২৯+৩০

রাজ ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। রানি আলমারির সামনে দাঁড়িয়ে কাপড় ভাজ করছিল।

রাজ পিছন থেকে রানির পেট বরাবর জড়িয়ে ধরল।

– আরে আরে। ছাড়ুন।
– আমাদের হানিমুন টা হবে তাহলে।
– মানে?
– মানে হলো, ওখান থেকে তুমি আসার পর বাবা মা আমাকে বলল, তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে। আই মিন হানিমুন।

কথাটা বলে রাজ তার প্রাণোসী কে নিজের দিকে ঘুরাল।

– কোথায় যাবে বলো?
– কোথাও না।
– তোমার পাহাড় পছন্দ না?
– আপনি কি করে জানলেন? (বড় বড় চোখ করে বলল।)
– তুমি ঝারা আপুর সাথে একদিন বলে ছিলে আমি শুনেছি।
– আপনি একটা চোর।
– হুমম। আমি আমার প্রাণোসীর হাসি দেখতে তাকে সুখে রাখতে চুর হতে পারি। আপত্তি নেই “মহারাণী”।
– তা মহারাজ আপনি কোথায় যাবেন?
– আমার প্রাণোসীর যখন পাহাড় পছন্দের তাহলে আমরা সেখানেই যাবো। বান্দরবান যাবো।
– সত্যিই??
– হ্যাঁ।

রানি যে অনেক খুশি এত দিনের স্বপ্ন ছিল এটা। কিন্তু কি ভেবে যেন, রানির হাসি মাখা মুখটা কালো হয়ে এলো।

– কি হয়েছে প্রাণোসী?
– যাবো না।
– কেন?
– নিজের বাবা কে ছেড়ে তো খারাপ মেয়ের মতো থাকছি আমি। কিন্তু বাবা মা কে ছেড়ে থাকতে পারবো। দরকার নেই যাওয়ার।
– তোমার উত্তর কিন্তু পাবে।

রাজের কথা শুনে রানি তার দিকে তাকাল।

– হুম রানি। তুমি উত্তর পেয়ে যাবে। তাছাড়া বাবা মাও তাই চায়। আমরা যেন ঘুরতে যাই। আশা করি আর না করবে না।

রানি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। রাজ তার কাছে গেল। রানি কে বুকের মাঝে চেঁপে ধরে বলল,

– আমিও চাই। যাবে না?
– যাবো।
– আমার লক্ষ্মীটা। রেডি হয়ে নাও। আমরা কাল সকাল সকাল বের হয়ে যাবো।
– কালই?
– হ্যাঁ কালকেই। না হলে সময় যাবে। উত্তর যে তোমাকে দিতে হবে আমার।

রাজ রানির কপালে একটা চুমু দিয়ে গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ল।

রানি মুচকি হাসি দিয়ে নিচে চলে গেল।

রান্না করছে আর মার সাথে কথা বলছে রানি। ছোটবেলায় রাজের হাস্যকর ঘটনা নিয়ে কথা বলছে। আর দুজন মিলে খিলখিল করে হাসছে।

দুপুরে,

খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই মিলে এক সাথে আড্ডা দিচ্ছে। দুপুর গরিয়ে বিকেল এলো। রানি বিকেলের নাস্তা করে নিয়ে এলো। নাস্তা খেতে খেতে সবাই এক সাথে লুডু খেলতে বসল।

বাবা মেয়ে এক দল। আর ছেলে মা আরেক দল।

দান মারছে আর চারজনের মাঝে তুমুলঝগড়া চলছে। একজন আরেক জন কে রাগিয়ে তুলছে। দু দলই বলছে, “আমরা জিতব।”

ঝগড়া চলছে। তুমুলঝগড়া চলছে তাদের মাঝে। এখন দেখার অপেক্ষা কে জিতে।

অবশেষে মা ছেলের দল জিতে গেল। মুখ কালো করে আছে বাবা আর রানি।

– দেখলে তো? বলেছিলাম না আমি আর আমার ছেলে জিতব? তাই হলো। উমম খেলতে জানে না আবার খেলতে আসছে। ঢং।
– যাও যাও। এমন কত রসগোল্লা খায়িয়েছি তোমাকে। তোমার হিসাব নেই। আজ কিনা একটা খায়িয়ে বড়বড় কথা। আরে যাও তো।
– “নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা”
– “চোরের মায়ের বড় গলা।”
– কি বললে কি বললে তুমি আমাকে?
– কেন ঠিকি তো বললাম। তুমি চোখে দেখোনি? তোমার ছেলে একটা কাঁচা খুট পাঁকা করে ফেলেছে। তারপরেও বড়বড় কথা বলছো। কতটা চুরি করছে তোমার ছেলে তুমি দেখোনি?
– বাবা এটা কিন্তু তুমি মিথ্যে বলছো। হেরে গেছো। তাই মিথ্যে বলছো?

– আপনি চুপ করুন। বাবা কি মিথ্যে বলল? ঠিকি তো বলল। আপনি তো খেলার মাঝে চুরিই করেছেন।
– খেলতে জানো না। কখনো খেলেছো? বাবা তো তেমার জন্যেই হেরেছে। তোমার মতে কারে সাথে কেউ খেলে?
– কি বললেন? আপনি কি বললেন আমাকে?
– ঠিকিই তো বলেছি।

– রানি মা বাদ দে। বাদ দে রে। মা ছেলের চাঁপায় জোর আছে।
– কি বলছো কি? তোমার মুখে কি কম জোর আছে ঢং।

চলছে ঝগড়া। তুফান বইছে ওদের মাঝে।

একসময় রানি রাগে বিরক্ত নিয়ে চলে গেল রুমে। বাবাও ওদের সাথে আর একটু ঝগড়া করে চলে গেল।

রাজ নিজের রাগপরীর রাগ সামলাতে উপরে গেল।

রাগে যেন মেয়ের মুখ লাল মরিচ হয়ে গেছে। লাল টুইটুম্বুর হয়ে আছে। রাজ রানির কাঁধে হাত রাখলেই। রানি হাত সরিয়ে নেয়। অনেকবার এমন হলো।

এবার রাজ জোরে রানি কে জড়িয়ে ধরল। রানি রাজের বুকে দিল একটা কামোর।

– আহহ। কি করছো? এই ভাবে কেউ কামোর দেয়?
– আপনি কেন হারলেন না?
– যাব্বাবা এটা কোনো কথা হলো?
– হ্যাঁ এটাই কথা। আপনি কথা বলবেন না আমার সাথে।
– প্লিজজ।
– না মানে না। যান এখান থেকে।

রাজ নিচে হাটু গেড়ে বসে পড়ল।
– “তুমি চাইলে তো আমি সব করতে পারি। জীবনের কাছেও হারতে পারি।”

রাজ কে এইভাবে দেখে রানির রাগ উড়ে গেল।

রানি রাজের এক হাটুর উপর বসে পড়ল।

– আরে আরে পরে যাবো তো।
– তো?
– সরবে না?
– আপনার এই শক্তি আমাকে রাখতে পারবেন না?
– তা কখন বললাম?
– আপনি আমাকে আপনার পিঠের উপর বসিয়ে পুশআপ করবেন..
– কিইই?
– জ্বি। করুন।
– এখন?
– হ্যাঁ।
– কিন্তু এখন তো সন্ধে। একন কেউ করব?
– ঠিক আছে। কাল সকাল থেকে।
– কিন্তু প্রাণোসী আমরা যে সকালে বেড়িয়ে যাবো।
– ও। ঠিক আছে সেখানে গিয়ে।
– ওকে বাবা ওকে। এখন ব্যাগ রেডি করবে?
– আমাকে কেন করতে হবে? আপনি তে আছেন। আপনি করুন।
– ঠিক আছে মহারাণী। আপনি যা বলবেন।

রাজ রানি কে কোলে নিয়ে বিছানার উপর বসাল।

আলমারির কাছে গিয়ে কাপড় চোপড় এনে বিছানার উপর রাখল। রাজ নিজেই ব্যাগ রেডি করছে। তার প্যাকিং করা শেষ।

– হয়ে গেছে?
– তাই? আমার বর তো খুব কাজের।
– দেখতে হবে না। রাজ চৌধুরী বলে কথা।
– তো চৌধুরী সাহেব আপনি যে একটা ভুল করলেন।
– কি ভুল?
– আপনি আমার নাইট ড্রেসটা তো নেন নি।
– আল্লাহ। আচ্ছা বাদ দাও। তোমার জন্যে ওখান থেকে অন্যরকম কিছু কিনে নিব।
– কিরকম?
– পরে বলব। তুমি এত কথা কেন বলো?
– কি? আপনি আমাকে বলতে চাইছেন আমি বকবক করি?
– কই তা তো বলি নি।
– আপনি তাই বলেছেন। তাই বলেছেন আপনি।

রানি কুশন নিয়ে রাজ কে মারলে লাগল। রাজও দুষ্টুপরীর দুষ্টুমি তে মেতে উঠেছে।

রাতে,
রাজের বুকের উপর রানি শুয়ে আছে। এ যেন এক নিরাপদ জায়গা। যেখানে জগতের সব সুখ বিদ্যমান। রাজের বুকে মাথা রাখলেই রানি সুখের দেশে চলে যায়।

– কাল কিন্তু সকাল সকাল উঠতে হবে প্রাণোসী।
– উঠব। এখন ঘুমান। ঘুম পেয়েছে।
– ঠিক আছে টুনটুনি। ঘুমিয়ে পড়ো।

রানি রাজের বুকের উপর ঘুমাচ্ছে। আর রাজ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

ভোরে রাজ ঘুম থেকে উঠে রানি কে ডাকতে শুরু করল।

– রানি। উঠো।
-…..
– প্রাণোসী উঠো এখন।
-…

রাজ ডেকেই যাচ্ছে রানি তো ঘুম থেকেই উঠছে না। রাজ হুট করেই রানি কে কোলে তুলে নিল। নিয়ে বেলকুনিতে গেল। বাহিরের আবছা আলো রানির মুখপ পড়ছে। বেশ মায়াবী লাগছে মেয়ে টা কে। এবার রানি কে রাজ নামিয়ে দিল।

ঘুমপরী রাজের উপর ঠলে পড়ল। মেয়েটা এতটাই ঘুমাচ্ছে, যে কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। রাজ এবার রানি কে ধরে ওর ঠোঁটে ঠোঁট বসাল।

ভিজে ঠোঁটের স্পর্শে রানি কেঁপে উঠল। চোখ খুলে দেখে রাজ।

রাজের বুকে কিল ঘুষি দিয়েই যাচ্ছে। রাজ ছেড়ে দিল রানি কে।
– অসভ্য লোক লম্পট।
– কি করলাম।
– আপনি জানেন না?
– তুমি তো গরুর মতো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছো। আর কি করতাম আমি?
– হয়েছে হয়েছে। আর বানিয়ে বলতে হবে না। ফ্রেশ হয়ে নিন।
– তুমি এসো আগে। না হলে বিছানায় গা এলিয়ে দিলে আজ যাওয়া আর হবে না।
– ঠিক আছে, যাচ্ছি। ভালো লাগে না। ঘুমাতে পারলাম না।

বিড়বিড় করতে করতে রানি ওয়াশরুমে গেল।

রানির ফিরার পর রাজ গেল।

তারপরে দুজন মিলে রেডি হয়ে একেবারে নিচে নামল। নিচে গিয়ে দেখে মা রান্নাঘরে।

– এত সকালে তুমি রান্নাঘরে?
– তো?
– আমি তোমাকে ডাকতে যেতাম। তুমি উঠলে কেন?
– তোরা চলে যাবি তাই তোদের বাবা বলল কিছু বানিয়ে দিতে।
– মা আমরা বাহিরে খেয়ে নিতাম।
– বাদ দে। চল খেতে আয়। বউ মা তুমিও এসো।

– মা বাবা কোথায়?
– তোমার বাবা উপরে।
– আমরা আজ বাবা কে রেখে খাবো? না। খাবো না।
– বউমা তুমি খেয়ে নাও। তোমার বাবা আর আমি পরে খেয়ে নিব।
– না মা আমি খাবো না।

– কি? আমার মেয়ে বুঝি আমাকে রেখে খাচ্ছে না?
– না বাবা তুমি আসো।
– ঠিক আছে।

সবাই মিলে খাওয়া দাওয়া করে বিদায় নিল। এবার যাওয়ার পালা।

– বউ মা কে দেখে রাখিস কিন্তু।
– ঠিক আছে মা।
– সাবধানে যাও মা।
– ঠিক আছে।
– পৌঁছে ফোন করবি রাজ।
– করব বাবা। চিন্তা করো না। তোমরা সাবধানে থেকো।
– আসছি।
– সাবধানে যাবে।
– ঠিক আছে।

রাজ রানি বেড়িয়ে গেল।

চলবে…..

#অবৈধ_বিয়ে
#Sabriha_Sadi
পর্ব : ৩০

দুজন বাসে বসে কত রকমই না গল্পগুজব করছে।

হাসছে, মন খারাপ করছে, এক জন আরেক জনের সাথে অভিমান করছে, মুখ গোমরা করে রাখছে। আরো কতো কি। আর গাড়ি তার আপন গতি তে চলছে।

বান্দরবান পৌঁছাতে তাদের বিকেল হয়ে গেল। সেখানে গিয়ে একটা হোটেল বুক করল।

হোটেলে পৌঁছে মা বাবা কে ফোন করে জানিয়ে দিল তারা ভালো ভাবেই এসেছে।

রুমে ডুকতেই যেন রানির মুখে রাজ্যের ক্রান্তির ছাপ ফুটল। অথচ সে রাজের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে এসেছে। তারপরেও যেন সে কি কাজ করেছে।

– খারাপ লাগছে?
– হুম।
– খুব বেশি?
– হুম।
– কিন্তু তুমি তো আমার কাঁধে ঘুমিয়ে এলো। আমার কাঁধ টার ১৩ টা বাজিয়ে। খারাপ লাগার কথা আমার। সেখানে লাগছে তোমার?
– দেখুন এত কথা বলবেন না। আমার সত্যিই খারাপ লাগছে।

রাজ রানির দুই বাহুতে নিজের হাত রাখল।

– যাও ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি খাবার দিয়ে যাওয়ার কথা বলি।
– ঘরে?
– জ্বি।
– ঠিক আছে। ফোন করে বলে দিন।
– কেন আমি গিয়ে বললে কি হবে?
– আমার একা থাকতে ভয় লাগবে।
– ওকে জানপাখিটা। তুমি যাও আমি ঘরেই আছি।
– ঠিক আছে।

রানি কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ডুকল।

ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে এসে দেখে রাজ বসে আছে সোফায়।

– আপনিও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন।
– হুম। ওয়েটার এসে হয়তো খাবার দিয়ে যাবে। বেশি কিছু জিজ্ঞেস করলে কথা বলবে না। আর দরকার ছাড়া যেন একটা কথাও না হয়। মনে থাকে যেন।
– ঠিক আছে। আপনি যান। আমি এত বোকা না যে, কথা বলব।
– আমার নিজের জন্যে বললাম কথা গুলি। কারণ প্রাণোসী যে আমার। প্রাণোসীর কিছু হলে তো আমি বাঁচতেই পারব না।
– চুপ। একদম চুপ। চুপ করে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন।
– ঠিক আছে মহারানী। যাচ্ছি আমি।

দুজন মিলে খাওয়াদাওয়া শেষ করে নিল। খিদে পেয়েছিল খুব। তাই সন্ধে ৭ টায় খাওয়া দাওয়ার পর্ব চুকিয়ে নিল।

খাওয়া শেষ করে তারা হোটেলের চারপাশটা দেখতে লাগল।

একটা ছোট টিলার উপর হোটেলটা। তার চারিপাশে শুধু পাহাড় আর পাহাড়। শীত ছাড়া পাহাড়ে যাওয়ার কোনো মজা নেই। হিম শীতল বাতাস বইছে চারপাশে। পাতলা একা চাদরে দুজন আবদ্ধ হয়ে আছে। একই চাদরে দুজনের শরীর ঢাকা। এই ভাবেই এক চাদরের নিচে তারা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। হোটেলের আশেপাশের জায়গা গুলি তে ঝুরি বাতি রয়েছে। হাল্কা আলোয় মারাত্মক রকমের সুন্দর লাগছে পরিবেশটা। এমন পরিবেশ দেখলে যে কোনো কবি টুক করেই কবিতা লিখতে বসে যাবে। বা কোনো লেখক ছন্দের সাথে তাল মিলিয়ে গল্প সাজিয়ে ফেলবে।

রাত প্রায় ১০ টা বেজে যাচ্ছে। হোটেল থেকে হাল্কা কিছু খাবার খেয়ে তারা রুমের দিকে গেল।

রুমে কাছাকাছি আসতেই রাজ রানি কে কোলে তুলে নিল।

– কি করছেন আপনি?
– কেউ দেখে ফেলবে।
– তাতে কি?
– আপনার লজ্জা না থাকতে পারে। আমার তো আছে। নামান আমায়।
– আমি আমার বউ কে কোলে নিলাম তাতে কোন বেটার কি?
– আপনি ছাড়বেন আমায়?
– না।
– কামোর দিব কিন্তু।
– তাতেও না।

রানি রাজের বুকে কামোর বসিয়ে দিল। রাজ ব্যথা পেলোও ছাড়ল না। নাছোড়বান্দা তো। ঘরে এসে রানি কে বিছানার উপর ছেড়ে দিল।

– আহহহ।
– কি?
– ব্যথা পেলাম তো।
– আমি পাই নি?
– প্রতিশোধ?
– জ্বি। আমি কি তোমাকে নিয়ে আকাশে চলে যাবো নাকি?
– তাই বলে ওখানে কোলে নিবেন?
– হুম।
– আমি কোমরে ব্যথা পেয়েছি।
– আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমালে সব ঠিক হয়ে যাবে।

কতাটা বলেই রাজ গিয়ে লাইট টা নিবিয়ে দিল। রানির পাশে গিয়ে শুয়ে নিজের বুকে রানির মাথাটা রাখল। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

– চুপ করে আমার লক্ষ্মী বউয়ের মতো ঘুমিয়ে পড়ো।
– ঠিক আছে।

সকালে, ভোর হতেই রানির ডাক পড়ল। রাজ হামাগুরি দিয়ে ডাকছে তার ঘুমপরী কে। কিন্তু ঘুমপরীর ঘুম কি ভাঙ্গবার মতো? সে তো ঘুমিয়েই যাচ্ছে।

রাজ রানির চুল ধরে দিল এক টান। রানি ঘুমের ঘোরেই বলে উঠল,

– আহহহহ।
– উঠো।

ঘুম ঘুম চোখে রাজের দিকে তাকাল রানি।

– আপনি আমার চুল ধরে টান দিলেন।
– সুওও। চুপ।

রানির ঠোঁটে রাজ আঙ্গুল দিয়ে কথা থামিয়ে দিল। হুট করেই রানির চোখ আটকে ধরল নিজের হাত দিয়ে।

– আস্তে করে নামো। আর কোনো কথা না বলে চুপ করে হাটো। এখন অনন্ত ননস্টপ বকবক টা একটু বন্ধ রাখো।
– ঠিক আছে। ঠিক আছে। কিন্তু নিয়ে যাচ্ছেন টা কোথায়?

রাজ কোনো উত্তর না দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায় রানির চোখে হাত রেখে।

বেলকুনিতে গিয়ে রাজ নিজের হাত সরিয়ে দিল রানির চেখের উপর থেকে। রানি ঘুম চোখ ডলতে ডলতে রাজের দিকে তাকাল। রাজ নিজের আঙ্গুল টা পূর্বদিকে স্থির করল। রানি রাজের আঙ্গুলের ইশারার দিকে নিজের দৃষ্টি দিল।

রানি অবাক চোখে দেখছে ভোরের উঠা সূর্যটা কে। মনে হচ্ছে পাহাড়ের ওপাশ থেকে একটা সোনালি থালা ভেসে আসছে এদিকে। যা আলোকিত করে তুলবে একটু পর দুনিয়াটাকে। প্রাকৃতিক এমন রূপ দেখে হা করে তাকিয়ে আছে। এমন একটা প্রভাত মনে হয় এই প্রথম তার জীবনে এলো। জীবনে মনে হয় এমন একটা সুন্দর সকাল শুধু রাজ নামক ব্যক্তিটার জন্যে দেখা সম্ভব হলো।

রানি রাজ কে জড়িয়ে ধরল। রাজ অনুভব করছে তার বুকে ফোটা ফোটা পানির দানায় ভিজিয়ে দিচ্ছি তার বুক টা। রাজ নিজের বুক থেকে রানির মুখটা তুলল। রানির চোখে পানি দেখে রাজ তো অবাক।

– কি হয়েছে রানি?

রানি আবার রাজ কে জড়িয়ে ধরে জোরে কেঁদে উঠল।

– “আমি কখনো ভাবতে পারিনি, আপনার মতো কাউকে জীবনে পাবো। এত ভালেবাসবে আমায়। প্রতিটা মেয়েই চায়, তার স্বামী তাকে খুব ভালোবাসুক। তার যত্ন নিক। মনের কথা মুখ ফুটে বলবার আগেই যেন তার প্রিয় মানুষটা বুঝে নেয়। তার প্রতিটা ইচ্ছে যেন স্বামী পূরণ করে। তার স্বামী যেন তাকে অনেক বেশি ভালোবাসে। আমি না চাইতেই আপনার মতো কাউ কে পেয়েছি। যে আমার ইচ্ছে পূরণ করে, যত্ন নেয়, আগলে রাখে আমাকে। আর আমাকে খুব বেশি ভালোবাসে। আমি আল্লহর কাছে অনেক শুকরিয়া। আমি খুব সুখি আপনাকে নিজের স্বামী হিসেবে পেয়ে।”

রানির এমন কথা শুনে রাজের চোখে যে দুই ফোটা পানি চলে এসেছে। তা যে টের পায় নি। চোখের পানিটা মুছে ফেলল রানি কে বলল,
– ধুর, পাগলি বউ আমার।

রাজ খেয়াল না করলেও রানি রাজের চোখের পানি খেয়াল করল।

– আপনি কাঁদছেন?
– ককই না তো। কাঁদছি না।
– সত্যি কথা আপনি কাঁদছেন।

– “পাগলি, আমি তোকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি। খুব যত্নে রাখব তোকে। অনেক অনেক ভালোবাসি।”

রাজ রানির কপালে ভালোবাসার প্রমান দিল। রানি লজ্জায় মুখ লাল করে নিল।

– হয়েছে, আর লজ্জাবতীর মতো লজ্জা পেতে হবে না। ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নাও। বের হবো।
– কোথায়?
– হানিমুন করতে এসেছি। তাই বলে কি ঘুরতে মানা নাকি?
– আপনার মুখে কি কিছু আটকায় না।
– আল্লাহ মুখ তো দিয়েছে, কথা বলার জন্যেই। এবার যাবে?
– হুম।

দুজনে ফ্রেশ হয়ে হোটেল থেকে খাবার খেয়ে বেড়িয়ে গেল।

চলবে….