অভদ্র_প্রেমিক পর্ব-০৪

0
4106

#অভদ্র_প্রেমিক
#পর্বঃ০৪
#Arshi_Ayat

নিশাতের মন চাইছে তিহানকে থাপ্পড়িয়ে সোজা করে ফেলতে।ওর জন্য ছেলেটা নিশাতের সাথে কথা না বলে চলে গেছে।ছেলেটা অনেক হার্ট হইছে এটা ওর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো।নিশাতের মায়ের বান্ধবীরা চলে যাওয়ার পর নিশাত তিহানের রুমে এসে দেখে ও আবার মুভি দেখছে।নিশাত ওর পাশে এসে ধড়াম করে বসে পড়লো।তারপর রোষপূর্ণ গলায় বলল”তোমার কি সমস্যা বলো তো?বারবার আমার বিয়েটা ভেজতে দাও কেন”

“আর কয়বার বলবো তোরে।প্রান্তর জন্য এমন করছি।তা নাহলে আমার ঠেকা নাই তোর বিয়ে আটকাবো।তোর বিয়ে হলেতো আমার আরো ভালো আমি কব্জি ডুবিয়ে খেতে পারবো।”

“আচ্ছা তাহলে তোমার বন্ধুর নাম্বারটা দাও।”

“না এখন না।প্রান্ত তোকে সারপ্রাইজ দিবে তাই নাম্বার দিতে মানা করেছে।”

“ধূর তোমার বন্ধুর জন্য এখন আমি অপেক্ষা করবো?সবসময় শুনি যে ছেলে মেয়ের জন্য অপেক্ষা করে আর এখন আমার চেনা নাই জানা নাই এমন একটা ছেলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।কি কপাল আমার আল্লাহ!”

এটা বলে নিশাত উঠে চলে গেলো।নিশাত যাওয়ার পর তিহান প্রান্তকে ফোন দিলো।প্রান্ত রিসিভ করতেই তিহান বলল”কুত্তা,শালা তোর জন্য আমি মাইনকাচিপায় পড়ছি।নিশাত বিয়ের জন্য উঠে পড়ছে।ও বিয়ে করে ছাড়বেই।এদিকে তোর জন্য ওর বিয়ে ভাঙতে ভাঙতে আমি অস্থির।আবার নিশাত এখন আমাকে প্রেমও করতে দিবে না যতদিন না পর্যন্ত ওর বিয়ে হয়।বল আমি কি করবো?তর জন্য ফাসলাম আমি।”

একনাগাড়ে কথাগুলো বলে থামলো তিহান।তিহান থামতেই প্রান্তর হাসির শব্দ শুনতে পেলো।তিহান রেগে বলল”শালার নাতি হাসছিস কেনো?মজা পাচ্ছো খুব তাই না?একবার আসো তারপর তোমারে বুঝাবো আমি।”

প্রান্ত হাসি থামিয়ে বলল”বন্ধুর জন্য এতটুকু করতে পারবি না?আরে কয়দিন পর তো তুই আমার শালা হবি।তো দুলাভাইর জন্য একটু কষ্ট কর।”

“হুম সবাই মিলে আমারেই বলি দে।”

“আচ্ছা আমি আসি তারপর তোর জন্যও কিউট একটা মেয়ে খুঁজে দিবো।ঠিকাছে শালাবাবু।” এটা বলে প্রান্ত হাসা শুরু করলো।

প্রান্তর হাসির শব্দ শুনে তিহান ফোনটা কুট করে কেটে দিলো।ও ফোন রাখতে না রাখতেই ওর মা তিতির খান ফোন দিয়েছে।তিহান ফোন রিসিভ করতেই তিতির খান বললেন”কি রে তিহান কেমন আছিস?”

“মা আমি ভালো আছি।তুমি?”

“এইতো আমরা ভালো আছি।নিশুপাখি কেমন আছে রে?ওরে একটু নিয়ে আয় না।কতদিন দেখি না। নিহি আর তোর খালুর কি অবস্থা?”

“তোমার নিশুপাখি ভালো আছে।বিয়ের জন্য লাফাচ্ছে।সে এখনি বিয়ে করে ফেলতে চায়। খালামুনি আর খালুজান ভালোই আছে।”

“কেনো এখন কিসের বিয়ে ওরে নিয়ে আয় তুই।আমি ওরে বুঝাবো।আগে গ্রেজুয়েট হোক পরে বিয়ে।”

“হুম কাল আসবো ওরে নিয়ে।”

“আচ্ছা আসিস।তোর খালাকে ফোনটা দে তো।ওর সাথে একটু কথা বলি।ওর ফোনে ফোন দিলে টাকা বেশি কাটে।তোর ফোনে আবার কম কাটে।বাংলালিংক থেকে বাংলালিংক তো এইজন্য।”

“😑মা তুমি আর নিশাত একই টাইপ দুজনই ছ্যচড়া।দাড়াও দিচ্ছি।”এই বলে তিহান ফোনটা নিয়ে নিহিতা বেগমকে দিলো।দুইবোন সেই আলাপ জুড়ে দিলো।

তিহান নিশাতের রুমে গিয়ে দেখে ও বসে বসে গান শুনছে।তিহান গিয়ে ওর মাথায় গাট্টা মেরে ওর কান থেকে হেডফোন খুলে ওর পাশে বসে পড়লো।নিশাত বিরক্তি নিয়ে জিগ্যেস করলো” কি হইছে তোমার গাট্টা মারছো কেন?”

“আম্মু ফোন দিছিলো।কাল তোকে যেতে বলছে।”

“সত্যি!! ” নিশাত খুশী হয়ে বলল।

“হুম এতো খুশী হয়ে লাভ নাই।বই খাতা নিয়ে নিবি।সামনে তো তোর পরীক্ষা।ওইখানে গিয়েও পড়তে হবে।”

“আচ্ছা ঠিকাছে নিবো।আগে বলো কালকে রওনা হবো কখন?”

“কাল রাত সাড়ে দশটার বাস ধরবো।তুই প্যাকিং করে নে।”

তিহান নিশাতকে প্যাকিং করতে বলে চলে গেলো নিহিতা বেগমের রুমে ওর ফোন নিতে।গিয়ে দেখে দুইবোন এখনো বকবক করছে।তিহান কি আর করবে বেচারা রুমে গিয়ে ল্যাপটপ ওপেন করে মেইলগুলো চেক করছে।কয়েকদিন আগে তিহান ফরেইন কোম্পানিতে কয়েকটা মেইল করেছিলো।সেগুলোর কোনো রিপ্লাই এসেছে কি না সেটা দেখছে কিন্তু কোনো রেসপন্স নেই।তিহান হতাশ হয়ে ল্যাপটপ অফ করে দিলো।তিহান সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ার।তিহানের ছোটকাল থেকেই ইচ্ছে ফরেইন কোম্পানিতে জব করবে।

সারদিন তিহান কি একটা কাজে বাইরে ছিলো।আর নিশাত হালকা শপিংয়ের জন্য বেরিয়েছিলো।তারপর বিকেলে তিহান বাসায় এসে প্যাকিং শুরু করলো।আর নিশাত তিহানকে হেল্প করছে।সাথে বকা ফ্রি!দুজনে মিলে প্যাকিং শেষ করে খাওয়া দাওয়া করে নিহিতা বেগম আর আসাদ সাহেবের থেকে বিদায় নিলো।তারপর বেরিয়ে পড়লো।এবার গিয়ে মোটামুটি একমাসের মতো থাকা হবেই।নিশাতের সেই আনন্দ লাগছে।

ঢাকার কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ১০.৩০ এর বাসে উঠে পড়লো তিহান আর নিশাত।রাতের জার্নি সেই লাগে।একটা ঠান্ডা আবহাওয়া!নির্জনতায় ভরপুর একটা মুহুর্ত ফিল করা যায়।তিহান আর নিশাত পাশাপাশি সিটে বসে পড়লো।নিশাত কানে হেডফোন গুজে সিটে হেলান দিয়ে রইলো।তিহানও সেম কাজ করছে।দুজনই পরিবেশটা উপভোগ করছে।বাস চলছে,বাসের ভেতরে লাইট বন্ধ।যে যার মতো আছে।কেউ ঘুমাচ্ছে তো কেউ রাতের আধারের বিশালতরা পরিমাপ করছে।চারপাশে গাছপালা মাঝে মাঝে আলোর ঝলকানি,মৃদু বাতাস প্রকৃতিতে খেলে যাচ্ছে।এসব উপভোগ করতে করতে নিশাত কখন যে ঘুমিয়ে পড়ছে নিশাত নিজেও জানে না।ঘুমের ঘোরে মাথাটা তিহানের কাধে পড়ে গেলো।তিহান পাশে চেয়ে দেখলো নিশাত ওর কাঁধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।বাসের দুলুনিতে বারবার ওর মাথাটা কেপে উঠছে।তিহান আলতো করে ওর মাথাটা নিজের কাধে চেপে ধরে জানালাটা বন্ধ করে দিয়ে নিজেও হেলান দিয়ে চোখ বুজে রইলো।কিন্তু নিশাতের মতো ঘুম আসছে না ওর।

সকাল সাতটায় বাসটায় বাস কুষ্টিয়ার মজমপুর বাসস্ট্যান্ডে থামলো।নিশাতের ঘুম আরো আগেই ভেঙেছিলো।আর তিহান তেমন একটা ঘুমায় নি।শেষ রাতে চোখ লেগে এসেছিলো।আর সকালে সূর্যের আলো চোখে পড়তেই তন্দ্রাভাবটা চলে গেলো।ওরা বাস থেকে নেমে রিকশা নিলো কুষ্টিয়া সদরে যাওয়ার জন্য।

বাসায় এসেই তিহান ব্যাগটা সোফার ওপর ধড়াম করে ফেলে দিয়ে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো।ঘুমে চোখ খোলা রাখা যাচ্ছে না।আর নিশাত দৌড়ে এসে খালাকে জড়িয়ে ধরলো।তিতির ওকে সোফায় বসিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল”হ্যা রে নিশাত খাওয়া দাওয়া করিস না?এতো শুকালি কেনো?”

“কই শুকাইছি খালামনি?আগের থেকে এককেজি ওজন বেড়ে গেছে।”

“হইছে তুই কথাই বলবি না।তুই বস আমি নাস্তা নিয়ে আসি।” বলেই তিতির খান উঠে গেলো

তনয় হলো তিহানের ছোটভাই। ও এসে নিশাতের চুল টেনে বলল”কি রে কি অবস্থা তোর?”

“এইতো ভালো তোর খবর কি?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।শুনলাম তুই নাকি বিয়ের জন্য লাফাচ্ছিস।”

“হ্যা তো বড়ো হইছি না!বিয়েতো করতেই হবে।” নিশাতের সোজাসাপটা উত্তর।

“হুম শুধু তুই ই বড় হইছিস।আর আমরা বড় হই নাই।আমিও তো তোর সমান।আমরা সেম এইজের।কিন্তু তুই বিয়ে করে ফেলতে পারবি।কিন্তু বিয়ের কথা যদি আমি মুখ দিয়ে উঠাই তাহলে আমাকে আম্মু জুতো পিটা করে এলাকা ছাড়া করবে।দেখছিস কি অবিচার!আমাদেরও সমান অধিকার চাই।”

তিতির খান পিছন থেকে নাস্তার প্লেট আনতে আনতে বলল”কিসের সমান অধিকার রে?”

তনয় কিছু বলার আগেই নিশাত বলে উঠলো”খালামণি তোমার ছেলে মেয়েদের মতো আগে বিয়ে করার অধিকার চাইছে।”

তনয় বেচারা নিশাতের দিকে তাকিয়ে দাত কটমট করছে। নিশাত হাসতে হাসতে শেষ।আর তিতির খান তনয়ের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে।

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।আর গতপর্বে নাম নিয়ে সমস্যা হয়েছিলো।আমি তাড়াহুড়ায় তিহানের জায়গায় তাহিন লিখে ফেলেছিলাম।কিন্তু আসল নাম হলো “তাশরিফ খান তিহান”।আপনার এই বিষয়টা ক্ষমা করবেন প্লিজ।হ্যাপি রিডিং🥰)