অভদ্র_প্রেমিক পর্ব-০৫

0
3216

#অভদ্র_প্রেমিক
#পর্বঃ০৫
#Arshi_Ayat

তিহান বারোটার সময় ঘুম থেকে উঠলো।তারপর ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখে ওর মা আর নিশাত বকবক করছে।তিহান ওর মায়ের পাশে বসে বলল”আম্মু কিছু খেতে দাও।খিদে পেয়েছে।”

“আচ্ছা তুই বস।আমি আনছি।” এটা বলেই তিতির খান চলে গেলেন।উনি উঠে যাওয়ার পর তিহান নিশাতকে বলল”কি রে তনয় কই?”

“বাইরে গেছে ওর ফ্রেন্ড কল দিছিলো।”

“ওহ!আমারো একটু বের হতে হবে।”

“কেনো কই যাবা তুমি?”

“এইযে এতোদিন পর নিজের এলাকায় ফিরলাম।একটু ঘুরাঘুরি করতে হবে না?তাই বের হবো দুপুরে।”

“তিহান ভাইয়া প্লিজ আমাকেও একটু নিয়ে চলো আমিও যাবো তোমার সাথে।এখানে এসে বসে থাকতে ভালো লাগে না।”

“আচ্ছা ঠিকাছে রেডি হয়ে থাকিস।”

ওরা কথা বলতে বলতে তিতির খান তিহানের জন্য বিরিয়ানি নিয়ে এলেন।যেহেতু প্রায় দুপুর হয়ে গেছে সেহেতু এখন আর নাস্তা না দিয়ে সোজা লাঞ্চের খাবার দিয়ে দিলেন।তিহান বিরিয়ানি দেখে দৌড়ে গিয়ে হাতটা ধুয়ে আসলো।তারপর গপাগপ খাওয়া শুরু করলো।তিতির খান নিশাতকে বললেন”তুই আর আমি একসাথে খাবো ঠিকাছে?”

“আচ্ছা খালামনি।” নিশাত হেসে উত্তর দিলো।

“এখন আমার সামনে এসে বস দেখি তোর মাথায় তেল দিয়ে দেই।কতো বছর ধরে তেল দিস না?চুলগুলো শুকিয়ে পাটকাঠি হয়ে আছে।”

তেল দেওয়ার কথাশুনে নিশাতের মুখ চুপসে গেলো।ও ভীত কন্ঠে বলল”না খালামনি তেল দেওয়া লাগবে না।এমনিতেই সুন্দর লাগছে।”

“তুই কথা বলিস না।সামনে এসে বসে পড়।”

তিহান নিশাতের অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে শেষ।নিশাত কি আর করবে মুখটা পেঁচার মতো করে খালার সামনে গিয়ে বসলো।তিতির খান ভালো করে চুলে তেল মাখিয়ে দিলেন।নিশাত মনে মনে বলল”শেষ সব শেষ।মে লুট গেয়া।আমার টাকা শেষ।সব জ্বলে গেলো।গত সপ্তাহে চুলের পিছনে একহাজার টাকা গেছে।আর আজকে তেল দিয়ে চুলের চৌদ্দটা বেজে গেলো।’

মনে মনে এগুলো বললেও মুখে কিছু না বলল না।তিতির খান ওর চুলে সুন্দর করে তেল মাখিয়ে চুল আচড়ে বেণি করে ওকে আয়নার সামনে নিয়ে গিয়ে বললেন”দেখ এখন কেমন লাগছে?খারাপ লাগলে বল খুলে দেই।”

নিশাত আয়নায় নিজের বেণি দেখছে।নাহ!নিশাত যতোটা খারাপ লাগবে ভেবেছিলো ততটা খারাপ লাগছে না।বরং একটা বৈচিত্র্যতা এসেছে।নিশাত তিতির খানকে জড়িয়ে ধরে বলল”থ্যাংকিউ খালামনি।তুমি এতো সুন্দর করে তেল দিয়ে বেণী করে দেওয়ার জন্য।সত্যিই একটু খারাপ লাগছে না।”

তিতির খান একটু হেসে বলল”আচ্ছা চল আমরা খেয়ে নিই।”

“তনয় খাবে না?”নিশাত জিগ্যেস করলো।

” তনয় খেয়ে গেছে।আসলে আবার খাবে।আমরা খেয়ে নেই এখন।”

নিশাত আর তিতির খান একসাথে খেতে বসলো।আর তিহান ঘরে গিয়ে শুয়ে শুয়ে ফোন চালানো শুরু করলো।ও এখনি বের হতো কিন্তু নিশাতের জন্য অপেক্ষা করছে।

নিশাতের খাওয়া শেষে ও তিহানের রুমে এসে দেখে সে ফোন বুকের ওপর ফেলে ঘুমিয়ে পড়েছে।নিশাত ওকে ধাক্কা দিয়ে বলল”তিহান ভাইয়া ওঠো।বের হবে না?”

নিশাতের ডাকে তিহান উঠে বসলো।তারপর বলল”আচ্ছা তুই বস আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”

“ওকে যাও।”

তিহান ফ্রেশ হয়ে নিশাতকে নিয়ে বের হলো।বের হয়েই নিশাত বলল”হরিপুর ব্রীজে চলো না প্লিজ।নদী দেখবো।”

তিহান বাইকে বসে বলল”আচ্ছা ঠিকাছে তুই বাইকে উঠে বস।”

নিশাত ওর কথামতো বাইকের পিছনে উঠে বসলো।তিহান বাইক স্টার্ট দিলো।নিশাতের অনেক ভাল্লাগে বাইকে চড়তে।ওর শুধু কুষ্টিয়াতে আসলে তিহানের বাইকে চড়া হয়।মোটামুটি একঘন্টার মধ্যেই ওরা হরিপুর ব্রীজে পৌঁছে গেলো।তিহান বাইকটা স্ট্যান্ড করে নিশাতের পাশে এসে দাড়ালো।নিশাত আগেই রাস্তার রেলিং ধরে দাড়িয়ে নদী দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।এই নদীর নাম গরাই নদী।এটা পদ্মার সাথে গিয়ে মিলিত হয়েছে।নিশাত মাথা ঝুকিয়ে ব্রীজের নীচেও দেখার চেষ্টা করছিলো।তিহান ওর কান্ড দেখে তাড়াতাড়ি মাথাটা সোজা করে বলল”তোর কি দিনদিন বুদ্ধিসুদ্ধি লোপ পাচ্ছে রে নিশাত?আরেকটু হলেতো উল্টে পড়তি।তখন আর বাঁচা লাগতো না।আর বিয়েতো দূরের কথা।”

“আরে আমি সাবধানেই দেখছিলাম।”

“হইছে সাবধানীর মা আপনি কি এখন এখানেই দাড়িয়ে থাকবেন নাকি হাটবেন।”

“আচ্ছা চলো হাটি।”

নিশাত আর তিশান হাটতে শুরু করলো।এমন ওদের মতো আরো অমেকেই এসেছে।একটু সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই তিহান বলল”চল বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসি তোকে।”

“আমায় বাসায় দিয়ে তুমি কই যাবা?”

“আমি একটু রিয়াদ এর বাসায় যাবো।”

“ওহ!”
তারপর তিহান নিশাতকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে চলে গেলো।বাসায় এসে দেখে তিতির খান বসে বসে নাটক দেখছে।নিশাত কিছুক্ষণ তিতির খানের পাশে বসে নাটক দেখলো।তারপর একটা কল আসতেই দেখলো তিহান কল দিছে।নিশাত রিসিভ করতেই বলল”নিশাত পড়তে বসছিস?”

“ইয়ে মানে আর কি..” নিশাতের তোতলানো শুনেই তিহান বুঝে ফেললো।ধমকে বলল”যা তাড়াতাড়ি পড়তে বস।তনয়ের সাথে গিয়ে পড়।কিছু না বুঝলে ওলে জিগ্যেস করিস।আবার দুজনে গল্প জুড়ে দিস না।আর শোন বাসায় এসে যদি দেখি পড়তে বসিস নাই তাহলে তোরে আর কোথাও নিয়ে যাবো না।”

“আচ্ছা যাচ্ছি।😑”
বলে ফোন রেখে নিজের রুমে গিয়ে বই খাতা নিয়ে তনয়ের রুমে গিয়ে দেখলো তনয় পড়ছে।ও গিয়ে তনয়ের পাশে বসে বলল”কি রে কি পড়ছিস?”

“সমাজতত্ত্ব।তুই কি আমার সাথে পড়বি?”

“হুম।বাট এই সমাজবিজ্ঞান আমার পড়তেই ইচ্ছা করে না।এইজন্যই তো বিয়ে বিয়ে করি।”

“আচ্ছা তোর কোন টপিক সমস্যা সেটা বল আমি দেখি পারি কি না।”

তারপর দুজনে পড়া শুরু করলো।একঘন্টা পর নিশাত পড়া থামিয়ে বলল”আয় একটা গান গাই।এখন আর পড়তে ভাল্লাগতাসে না।”

“আমি তো পারি না।ভাইয়া পারে।” তনয় বলল।

“ধূর তোর ভাইয়ের থেকে আমি ভালো পারি।”

“আচ্ছা তাহলে তুই শুরু কর।দেখি তুই কেমন পারিস।”

নিশাত ঝেড়ে কেশে শুরু করলো

“তু খিচ মেরি ফটো
তোর বাপে চালায় অটো
তুই ঘুরিস খালি টোটো
পিয়ায়ায়ায়া😎”

নিশাত এক লিরিক গাওয়ার পরই মাথায় একটা গাট্টা পড়লো।নিশাত পিছনে ঘুরতেই দেখলো তিহান কোমরে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।আর তনয় মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসি আটকাচ্ছে।তিহান চোখ পাকিয়ে বলল”তোরে বলছিলাম পড়তে কিন্তু তুই পড়া বাদ দিয়ে গানের আল্ট্রা প্রো ম্যাক্স লিরিক্স গাইতেছিস।”

নিশাত কিছু বলল না।মনের দুঃখে মরে যেতে ইচ্ছে করছে।এতক্ষণ যে পড়ছিলো তখন কেনো আসেনি যেই একটা গান শুরু করলাম সেই চলে আসলো।খবিশ একটা!!

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।