অভদ্র_প্রেমিক পর্ব-১৪

0
3065

#অভদ্র_প্রেমিক
#পর্বঃ১৪
#Arshi_Ayat

নিশাত পরবর্তী পৃষ্ঠা উল্টিয়ে একটা চিঠি দেখতে পেলো।এটা আরো ছয় বছর আগের লেখা।ও মনযোগ দিয়ে পড়া শুরু করলো।

“তুই এতো ছোট কেনো রে!আমার সব বন্ধুরা প্রেম করে কিন্তু আমি করতে পারি না তুই ছোট বলে।কি কপাল আমার!সবার গার্লফ্রেন্ড আছে বাট আমার নাই।আবার তোকে যে বলবো আমি তোকে ভালোবাসি ওই সাহসও নাই।কারণ তুই এইটে পড়িস।তোকে এগুলো বললে তুই আমার গালে কষে একটা থাপ্পড় মারবি।তারপর আর আমার মুখও দেখবি না।তাই কষ্টটা হজম করে নিলাম।আর তুই তো তুই এত্তো বলদ কি আর বলবো তোর বয়সই মেয়েরা তিন চারটা প্রেম করে আর সেই তুই ললিপপ খাস!”

এতটুকু পড়ে নিশাত কিঞ্চিৎ রেগে বলল’তোমার পেটে পেটে এতো কিছু চলে আমি কিভাবে বুঝবো?’

“আমি অতো ভদ্র না।কিন্তু তোর সামনে সাধু সেজে থাকতে হয় তা নাহলে তুই যদি আবার পাল্টি মারিস সেইজন্য।যেদিন আমার বন্ধুদের সাথে তোকে পরিচয় করাইছি সেদিন সিয়াম বলছিলো ও নাকি তোকে পছন্দ করে।তো আর কি দিছি এক থাপ্পড়!তারপর সুন্দর করে বুঝাইছি ‘আমি তোর সাইয়া,
ইটস বেটার দ্যান ভাইয়া।”

এতটুকু পড়ে নিশাত হাসলো।তারপর আবার পড়তে শুরু করলো।

“জানিস মাঝেমধ্যে মন চায় সারাদিন তোকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকি।কিন্তু ইচ্ছেটা পূরণ হলো না।কবে হবে জানি না।”

নিশাত মুচকি হেসে মনে মনে বলল”এতো ভালোবাসা ফিরিয়ে দেওয়ার সাধ্য আমার নেই।”

তারপর পরের পাতা পড়তে লাগলো

“নিশু,এই নিশু,শোন না,..এমন করে তোকে বিয়ের পর ডেকে ডেকে জ্বালাবো।নিশু জানিস আমি না তোর প্রেমে অভদ্র হতে চাই।একটু না অনেক অভদ্র হতে চাই।জানিস তো প্রেমিক রা ভদ্র হলে মানায় না।আমি তোর অভদ্র প্রেমিক হতে চাই।”

এরপর আস্তে পুরো ডায়েরিটা নিশাত পড়া শুরু করলো।পড়তে পড়তে শেষ পাতার তারিখটা দেখে নিশাত অবাক হলো।এটা রিয়াদের বিয়ের দিনের তারিখ।সময়ও লিখা আছে।রাত ২.০১বাজে।সেই সময়ের লেখা এটা।

“ইশ!হলুদের লেহেঙ্গায় তোকে যা মানিয়েছিলো না!কিন্তু সমস্যা হলো তোর পিঠের তিলটা নিয়ে।তিলটা দেখা যাচ্ছিলো।ওই তিলটা আমি ছাড়া অন্যকেউ দেখবে এটা আমি মানতে পারছিলাম না।তাই তোকে মিথ্যা বলে লেহেঙ্গাটা পাল্টিয়ে নিয়েছিলাম।”

এমনি ভাবেই ভোর চারটা পর্যন্ত বসে বসে নিশাত তিহানের পুরো ডায়েরিটা পড়লো।সারাটা ডায়েরি জুড়েই তার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।এগুলো পড়ে নিশাত কখনো লজ্জায় লাল হয়েছিল আবার কখনো মুগ্ধ হয়েছিলো।পুরো ডায়েরিটা পড়ে নিশাত একটা লাজুক হাসি দিয়ে ডায়েরিটা লুকিয়ে ফেললো।তারপর শুয়ে পড়লো।

নিশাত সেই আধঘন্টা ধরে পায়চারি করছে কখন নিশাত বের হবে আর কখন ও ডায়েরিটা সহীহ সালামতে রেখে আসবে।কোনোভাবেই তিহানকে জানতে দেওয়া যাবে না যে নিশাত ওর ডায়েরিটা পড়ে ফেলেছে কিন্তু মুশকিল হচ্ছে তিহান বের হওয়ার নামও নিচ্ছে না।কম্পিউটারে কি যেনে করছে।নিশাত কয়েকবার উঁকি দিলো নাহ!তিহান বোধহয় আজকে বের হবে না।নিশাত পায়চারি করতে করতে ভাবছে কি করা যায়!মাথায় কোনো বুদ্ধি আসছে না।তাই মেহেরকে কল দিলো।
“হ্যালো মেহের।”

“হ্যা বলো।”

“শোনো বিপদে পড়ছি।”

“কি হইছে বলো?”

“তিহান ভাইয়ার ডায়েরিটা তার রুমে রেখে আসতে পারছি না।সে সুপার গ্লু লাগিয়ে খাটে বসে আছে।বের ই হচ্ছে না।”

“আচ্ছা ঘুরতে যাওয়ার বাহানা করে তো বের করতে পারো।”

“আমি ঘুরতে গেলে ডায়েরি কে রাখবে?”

“তাহলে কি করবে?আর কিছু তো মাথায় আসছে না।”

“আচ্ছা তুমি ভাবো।কোনো আইডিয়া পেলে ফোন দিও।”

“ওকে”

বলে মেহের ফোন রেখে দিলো।নিশাত আরো অনেক্ক্ষণ অপেক্ষা করলো কিন্তু তিহানের যাওয়ার নাম গন্ধও নেই।হঠাৎ নিশাতের মাথায় বুদ্ধি এলো তিহান গোসল করতে গেলেই তো রেখে আসা যাবে।তাই নিশাত অপেক্ষায় থাকলো তিহানের শাওয়ারে যাওয়ার।আরেকটু পর যখন তিহান সাওয়ার নিতে গেলো নিশাত টুক করে ঢুকে ডায়েরিটা সহীহ্ সালামতে রেখে পা টিপে টিপে বেরিয়ে নিচে চলে গেলো।নিচে গিয়ে দেখলো তিতির খান দুপুরের খাবার বাড়ছে।নিশাতকে দেখে বলল”নিশাত তুই একটু তনয় আর তিহানকে ডেকে দে তো।”

নিশাত তনয়কে ডেকে তিহানের রুমে এসে তিহান একটা কালো জিন্স পড়ে আয়নার সামনে খালি গায়ে দাড়িয়ে চুল মুচছে।তিহানকে এভাবে দেখে নিশাতের চোখ আটকে গেলো।এখন নিশাতেরই লজ্জা লাগছে।কোনমতে “খালামনি তোমাকে খেতে ডাকছে।”বলেই দৌড়ে চলে গেলো।তিহান ভ্রু কুচকে মনে মনে বলল’এই মেয়ের আবার কি হয়েছে!”

তারপর কালো একটা শার্ট পড়ে নিচে এসে খেতে বসলো।নিশাতের এখন কেমন যেনে লজ্জা লাগছে!এমন কেনো হচ্ছে!এতো লজ্জ কেনো?
তিহান খেতে খেতে বলল”নিশাত তুই রেডি থাকিস।খাওয়া শেষে বের হবো।রিয়াদের বউ দেখতে যাবি।তোর তো দেখা হয় নি।”

নিশাত মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।কিন্তু মুখে কিচ্ছু বলল না।কি আশ্চর্য এতো আড়ষ্টতা কেনো?নিশাত খাওয়া শেষ করে ওপরে গিয়ে ধূসর রঙের একটা শাড়ি আর কালো ব্লাউজ পড়লো।চেয়েছিলো তিহানের সাথে ম্যাচ করে কালো কালার শাড়ী পড়বে কিন্তু পাছে ওর সন্দেহ হয় যায় কি না!এই ভেবে আর পরে নি।
তারপর চুল ছেড়ে দিয়ে।কানে ঝুমকা,চোখে কাজল,ঠোটে হালকা লিপস্টিক,হাতে কাচের কালো চুড়ি পরে আয়নায় এক ঝলক নিজেকে দেখে হাসলো।দুইহাত দুই মুখ ডেকে বলল’ইশ!কি লজ্জা লাগছে।”
তারপর মুখ থেকে হাত সরিয়ে ফোনটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।তিহান বাইকের ওপর বসে ফোন টিপছিলো।নিশাত এসে বলল”হ্যা চলো আমি রেডি।”

তিহান মাথা তুলে তাকাতেই বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।এতো সুন্দর লাগছে যে কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে।চোখের পলকও ফেলতে ইচ্ছে করছে না।তিহানের এমন চাহনীতে নিশাতের খুব লজ্জা লাগছে।তাই তাড়া দিয়ে বলল”চলো!চলো!যাবে না?”

নিশাতের কথায় তিহান নিজেকে সামলে বলল”হ্যা তুই বাইকে উঠে বস।”

নিশাত বাইকে উঠে একহাত তিহানের কাধে রাখলো।তিহান বাইকের সামনের মিররটা এমন ভাবে রাখলো যেনো পিছন থেকে ওকে দেখা যায়।নিশাত বুঝতে পেরে মুচকি হাসলো।আর মনে মনে বলল’আসলেই তুমি অভদ্র।খালি লজ্জা দাও আমায়।এভাবে তাকালে তো আমি মরে যাবো।’

তিহান আর নিশাত আধঘন্টা পর রিয়াদের বাড়ি পৌঁছালো।নিশাত বাইকে থেকে নামতেই তিহান বলল”তুই যা ভেতরে আমি আসছি।”

নিশাত ওর কথায় সায় দিয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকলো।নিশাতকে দেখে মেহের এসে ওর হাত ধরে বলল”বাহ!আজকে তো আমার জা…”

এতটুকু বলার পর নিশাতের চোখ রাঙানোতে কথা চেঞ্জ করে বলল”ইয়ে মানে নিশাতকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।”

“থ্যাংকিউ।” নিশাত একটু হেসে বলল।তারপর রিয়াদের মা আর নানির সাথে হালকা কথা বলার পর মেহের ওর ভাবির কাছে নিয়ে গেলো।ওইখানে কিছুক্ষণ কথা বলে মেহের নিশাতকে নিজের ঘরে এনে দরজা অফ করে বলল

“ওগো আমার বড় জা একটু বলতে পারবা আমার জামাই কই?সে ফোন ধরছে না কেনো?”

“তোমার জামাই পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।”

মেহের রেগে বলল”ওর ঘুম আমি ছুটাচ্ছি।একবার ফোনটা ধরুক মজা বুঝাবো।”

নিশাত মেহেরের কথায় হাসলো।মেহের পুনরায় বলল”আচ্ছা আজকে শাড়ি পরার কারণ কি?”

“এমনই।”

“না না এমনিই না।তোমার মনে রঙ লাগছে আমি জানি।তো তিহান ভাইয়াকে কবে বলবা?”

“ভাবছি সারপ্রাইজ দিবো।কাল তার বার্থডে।আজ বারোটায় যখন সবাই তাকে উইশ করবে তখন আমি তার বার্থডে ভুলে গেছি এমন মুডে থাকবো।তারপর কাল রাত ১১.৫৮ তে উইশ আর প্রপোজ একসাথে করবো।”

“বাহ!কি আইডিয়া তিহান ভাই…”

মেহের আর কিছু বলতে পারলো না তার আগেই কে যেনো দরজায় নক করলো।

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)