অভদ্র_প্রেমিক পর্ব-১৮

0
3090

#অভদ্র_প্রেমিক
#পর্বঃ১৮
#Arshi_Ayat

তিহান দৌড়ে গিয়ে ওর পা চেপে ধরে ওপরে ঝাকিয়ে তুললো।আর জোরে জোরে “মিরাজ ,মিরাজ ” বলে ডাকতে লাগলো।মিরাজ ওদের বাসার কাজের লোক।তিহানের গলার আওয়াজ পেয়ে নিচ থেকে মিরাজ দৌড়ে রুমে চলে গেলো।মিরাজ এসেই রুমের লাইট জ্বেলে দিলো।তিহানের কপাল দিয়ে দরদর করে ঘাম ঝরছে।তিহান দ্রুত গলায় বলল”মিরাজ তাড়াতাড়ি চেয়ারটা দাড় করাও।”

মিরাজ তিহানের কথা মতো চেয়ারটা দাড় করাতেই তিহান নিশাতকে চেয়ারের ওপর দাড় কারালো।তারপর ওর গলার দড়িটা খুলে ওকে শুইয়ে দিলো।তিহানের প্রচুর ভয় করছে।ও কাঁপাকাপা হাতে নিশাতের পালস দেখলো।খুব আস্তে চলছে পালস।গলায় লাল দাগ পড়েছে।তিহান দ্রুত অয়নকে কল দিলো।
“ভাই দ্রুত বাসায় আয়।আমার অনেক ভয় লাগছে।” অয়নকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কথাগুলো বলল।

অয়ন তিহানের কথা বলার ধরণ দেখে বুঝতে পারলো সিরিয়াস কিছু একটা হয়েছে।তাই কথা না বাড়িয়ে ফোনটা রেখে নিশাতদের বাড়ির দিকে চলে গেলো।মিরাজ ওকে নিশাতের রুমে নিয়ে গেলো।তিহান নিশাতের হাত ধরে বসে আছে।ওর চেহারায় স্পষ্ট ভয় বোঝা যাচ্ছে।অয়ন আসতেই তিহান ওর হাত ধরে বলল”ভাই কিছু কর প্লিজ!আমি ওকে ছাড়া বাচবো না।”ধরা গলায় বলল।

“কি হয়েছে ওর সেটা তো বলবি।” অয়ন বলল।

“ও একটু আগে সুইসাইড করতে গিয়েছিলো।ভাগ্য ভালো আমি দেখে ফেলেছিলাম কিন্তু এখন চোখ খুলছে না।পালস খুব স্লো।”

অয়ন একটা ইনজেকশন দিয়ে বলল”সমস্যা নেই কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান ফিরবে।আর আমি বলেছিলাম ওকে একা ছাড়তে না।ও কিন্তু এখনো স্বাভাবিক না।”

“আসলেই ভুলটা আমারই ছিলো।আমি ওকে একা ছেড়েছি।এমনটা একদমই উচিত হয় নি।”

“হ্যাঁ আরেকটা কথা।ও একা একা থাকতে থাকতে আরো বেশি ডিপ্রেশনে চলে গেছে।ওকে জোর করে হলেও ভার্সিটিতে পাঠা।অনেকের মধ্যে থাকলে হয়তো স্বাভাবিক হবে।”

“হ্যা তুই ঠিকই বলেছিস।ওর সাথে জোর না করলে হবে না।”

“আচ্ছা দোস্ত তাহলে আসি আমি।”

অয়ন চলে যাওয়ার পরও তিহান নিশাতের হাতটা ওর বুকে ধরে বসেছিলো।আর ওর দিকে তাকিয়ে ভাবছিলো ‘তোর কষ্ট আমি সহ্য পারছি না।যেভাবেই হোক এখান থেকে তোকে বের হতেই হবে আমার জন্য।আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না।’

আরো কিছুক্ষণ পর নিশাতের জ্ঞান ফিরতেই ও চোখ মেলে চাইলো।তিহান ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল”কেনো ওমন করতে গিয়েছিলি?”

নিশাত কিছু বলল না।একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ালো।নিশাতকে কিছু বলতে না দেখে তিহান বলল”তুই ঘুমিয়ে যা।আমি এখানে আছি।”

“না তুমি তোমার রুমে যাও।”মুখ খুললো নিশাত।

“আজকের মতো ভুল আমি দ্বিতীয়বার করবো না।সো আমি যাচ্ছি না।”

নিশাতের আর তর্ক করতে ইচ্ছে হলো না।চুপচাপ আবার চোখ বন্ধ করে ফেললো।কি ছিলো আর কি হলো!আগের নিশাত আর এখনকার নিশাতের মধ্যে অনেক পার্থক্য।আগের নিশাত হাসি ছাড়া কথাই বলতে পারতো না আর এখনকার নিশাত হাসতেই জানে না।এই জিনিসটা তিহানকে প্রচুর পোড়াচ্ছে।চোখের সামনে প্রিয় মানুষের ধ্বংস দেখা যায় না।

সারারাত তিহান কানে হেডফোন গুজে জেগে ছিলো।ঘুম আসতে চাইলেও ঘুমালো না।একটু চোখ লেগে আসতে চাইলেও কষ্ট করে নিজেকে ধরে রাখলো।

জানালা দিয়ে সূর্যের তীর্যক আলো নিশাতের মুখে পড়তেই নিশাত হাত মুখ ঢেকে ফেললো তারপর চোখ খুলে বিছানায় বসতেই দেখলো ঘরের প্রত্যেকটা জানালা খোলা।বাইরে থেকে আলো এসে নিশাতের রুম চকমক করছে।নিশাত উঠে সেগুলো বন্ধ করতে গেলেই পিছন থেকে একটা হাত এসে ওর থামিয়ে দিলো।নিশাত পিছনে ঘুরতেই তিহানকে দেখতে পেলো।তিহানের থেকে নিজের হাতটা ছুটিয়ে আবার লাগিয়ে দিতে নিলেই তিহান ওর হাত ধরলো।এবার নিশাত রেগে বলল”তিহান ভাই প্লিজ যাও।আমাকে শান্তিতে থাকতে দাও।”

“না না না তোকে আমি কিছুতেই শান্তিতে থাকতে দিবো না।এখন যা ফ্রেশও একসাথে নাস্তা খাবো।তারপর তোর ভার্সিটিতে যাবো।বিয়ের বয়স হয়ে গেছে এখনো বিয়ে করতে পারছি না মেয়ের অভাবে।তাই মেয়ে পটাতে যাবো তোর ভার্সিটিতে।”

“দেখো তিহান ভাই আমি মজা করার মুডে নাই।তুমি যাও প্লিজ আমার ভালো লাগছে না।”

“যাবো না তো কি করবি?”

“এমন অভদ্রের মতো কথা বলছো কেনো তুমি?” নিশাত বিরক্তির সুরে বলল।

“ভাল্লাগে আমার।এখন যা তুই ফ্রেশ হয়ে আয়।”

তিহানের সাথে আর তর্ক করতে ইচ্ছা হলো না নিশাতের তাই ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে।ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে তিহান নাস্তা নিয়ে বসে আছে।নিশাত থমথমে মুখে বলল”আমি সকালে নাস্তা খাই না।”

“না খেলে আজকে থেকে খাবি।” এটা বলে তিহান নিশাতের হাত ধরে টেনে বিছানায় বসালো।তারপর নাস্তা ওর মুখে তুলে দিতেই নিশাত ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।নিশাতের আচরণে তিহান রেগে গেলো।যার জন্য এতো কষ্ট করে নাস্তা বানালো সে ই নাকি খাবে না।তিহান মুহুর্তেই ওর বাম হাত পিছনে দিকে মুচড়ে ধরে ওর একদম কাছাকাছি এসে বলল”খাবি না তো তুই তাই না?আচ্ছা ঠিকাছে খাওয়া লাগবে না।আমিও খাবো না।দুজনে উপোস থাকবো তারপর না খেয়েই মরবো।দেখি কে আগে মরতে পারে।খেয়ে কি হবে?তুই তো মরতে চাস।তাই তো কাল ওইরকম একটা কাজ করতে গেছিলি।তোর মরার প্রচুর শখ।তাহলে এই শখটা আমিই পূরণ করি।আজ থেকে তুই কিচ্ছু খাবি না।”

এটা বলেই নিশাতকে ছেড়ে দিয়ে মিরাজকে ডাক দিতেই মিরাজ নাস্তা নিয়ে চলে গেলো।তিহান এমন একটা রাগ নিশাত আগে দেখে নি।তিহান কড়া গলায় বলল”তাড়াতাড়ি রেডি হ।ভার্সিটিতে যেতে হবে।পাঁচ মিনিটের মধ্যে যদি রেডি না হয়েছিস তবে আমি নিজেই তোকে রেডি করে দিবো।”

এটা বলেই তিহান রুমের বাইরে চলে গেলো।নিশাতের এখন আর কিছু করতে ইচ্ছে করে না তবুও তিহানের জন্য রেডি হলো।তিহান পাঁচ মিনিট পর এসে দেখে নিশাত রেডি হয়েছে।তারপর ওকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য।ভার্সিটি সামনে এসে তিহান বলল”ক্লাস শেষ কখন?”

“একটার সময়।”

“আচ্ছা ঠিকাছে এখন যা।ক্লাসে গিয়ে সবার সাথে কথা বলবি।থম মেরে বসে থাকবি না।”

নিশাত কিছু না বলে ক্লাসে চলে গেলো।ক্লাসে আসতেই নিত্য ওকে হাগ করলো।তারপর বলল”তোকে অনেক মিস করেছি।কেমন আছিস তুই?”

“ভালো। তুই?” নিশাত শান্ত কন্ঠে বলল।

“ভালোই আছি।আয় আমার পাশে বস।” নিত্য নিশাতকে ওর পাশে বসিয়ে বকবক শুরু করলো।নিশাত চুপচাপ শুনছে মাঝেমধ্যে উত্তর দিচ্ছে।এভাবেই ক্লাস শেষ হলো।নিশাত বাইরে এসে দেখে তিহান দাড়িয়ে আছে।নিশাতকে আসতে দেখে এগিয়ে এসে বলল”অয়নদের বাসায় যাবো অয়নের বউ বারবার বলেছে তোকে নিয়ে যেতে।”

“ইচ্ছে করছে না।” নিশাত বিরক্ত হয়ে বলল।

“তোমার ইচ্ছা আমি শুনতে চাই নাই।যেতে হবে ব্যাস।”

তারপর নিশাতের হাত ধরে হাটতে লাগলো।কিছুদূর এসে রিকশা খুঁজতে লাগলো কিন্তু কোনো রিকশাই পাওয়া গেলো না।তিহান রিকশা না পেয়ে নিশাতকে নিয়ে হাটতে লাগলো।নিশাত প্রচুর বিরক্ত লাগছে কিন্তু মুখ দিয়ে কিচ্ছু বলছে না।তারপর সারা রাস্তা হেটে অয়নদের বাসায় গেলো।ওদের বাসায় আসতেই অয়ন আর রুমি ওদের বসার ঘরে বসালো।তারপর রুমি টেবিলে খাবার দিয়ে দুজনকে খেতে আসতে বললেই তিহান বলল”না ভাবি আমরা খেয়েই এসেছি।এখন আর খাওয়া সম্ভব না।”

তিহানের কথা শুনে নিশাতের মুখ অটোমেটিক হা হয়ে গেলো।এ কি বলল তিহান!কখন খেলো?ভার্সিটি থেকে সোজাতো এখানেই এলো।কিন্তু মুখে কিচ্ছু বলল না।এদিকে পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে।কিন্তু জিদ ধরে বসে আছে।সকাল থেকে তিহান, নিশাত কেউই কিছু খায় নি।

তারপর অয়ন আর রুমির খাওয়া শেষ হলে চারজনে মিলে আড্ডা দিলো।তবে নিশাত সবার কথা চুপচাপ শুনছিলো আর মাঝেমধ্যে দু একটা কথা বলছিলো।বিকেলের দিকে তিহান আর নিশাত দুজনেই অয়নের বাসা থেকে বের হলো।তিহানের মাথাব্যথা করছে।রাতে না ঘুমালেই এমন হয়।তবে ঘুম আসে না।এখন এক কাপ কফি হলেই হয়ে যেতো কিন্তু নিশাতকে শিক্ষা না দিয়ে তিহান ক্ষ্যান্ত হবে না।তাই আর কফি।খেলো না।

অয়নদের বাসা থেকে সোজা দুজনই বাসায় চলে এলো।বাসায় এসে নিশাত ফ্রেশ হয়ে চুপচাপ খাটের এককোনায় বসে রইলো।তিহান ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে নিশাত খাটের এককোণায় থম মেরে বসে আছে।তিহান ঘরে ঢুকে বলল”এভাবে বসে আছিস কেনো?পড়তে বস।আজকের লেকচারগুলো পড়।”

“ভালো লাগছে না।” নিশাত শান্তকন্ঠে বলল।

“না লাগলেও পড়তে হবে।দ্রুত বস পড়তে।”

তিহানের চোখ রাঙানো দেখে নিশাত চুপচাপ পড়তে বসলো।কিন্তু পড়ছে না শুধু বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।তিহান বুঝতে পেরেও কিছু বলছে না।কারণ তিহানের উদ্দেশ্য হলো ওকে বিরক্ত করা।তিহান ওর সামনে বসে বসেই গেম খেলছে।নিশাতের এতো বিরক্ত লাগছে যে বলে বোঝাতে পারবে না।একে তো সারাদিনে কিছু খায় নি তারওপর এখন পড়তে বসিয়ে দিলো।

এভাবেই এগারোটা পর্যন্ত বসে রইলো দুজনেই।তারপর নিশাত বলল”আমি এখন ঘুমাবো।”

“ঠিকাছে ঘুমিয়ে যা।” তিহান গেম খেলতে খেলতে বলল।

“তুমি ঘুমাবে না?”

“হ্যা তুই ঘুমা আগে।”

“আচ্ছা তাহলে তোমার ঘরে যাও।”

“না তুই শুয়ে পড়।তোর ঘুম আসলে আমি চলে যাবো।”

নিশাত আর না ঘেটে শুয়ে পড়লো।আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে গেলো।
তারপর যখন ক্ষুধার চোটে মাঝ রাতে খাট থেকে নামতে যাবে তখনই আর সামনে যেতে পারলো না কিছু একটা ওকে আটকাচ্ছে।পিছনে ফিরে যা দেখলো তাতে নিশাত বিষ্ময়ের চূড়ায় পৌঁছে গেলো।

চলবে…

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)