অভদ্র_প্রেমিক পর্ব-২২

0
2815

#অভদ্র_প্রেমিক
#পর্বঃ২২
#Arshi_Ayat

নিশাত ভয় চুপসে গেছে তিহানের এই রুপ দেখে।তিহান একেবারে নিশাতের কাছাকাছি চলে এসেছে।তিহানকে এতো কাছাকাছি দেখে নিশাতের বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটা শুরু হয়ে গেছে।নিশাত চোখ বন্ধ করে ঢোক গিলতে লাগলো।কিন্তু তিন/চার মিনিট পার হওয়ার পরও তিহান কিছু করছে না দেখে নিশাত চোখ খুলতেই দেখলো তিহান ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এবার নিশাত তোতলাতে তোতলাতে বলল”তততততুমি এএএভাবে তাকিয়ে আআছো ককেনো?”

তিহান কিছু না বলে টুপ করে নিশাতের গালে একটা চুমু দিয়ে সরে গেলো।নিশাতের মনে হলো ৪৪০ ভোল্টেজে ঝাটকা খেলো মুহুর্তেই।পুরো শরীর স্থির হয়ে আছে।তিহান নিশাতের সামনে থেকে সরে গিয়ে ফ্যান ছেড়ে দিয়ে বলল”তুই কি ভয় পেয়েছিস?ভায় পাস না।গরম লাগছিলো বলে শার্ট খুলেছিলাম।”

নিশাত পুরে জমে গেছে।কোনো কথাই বের হচ্ছে না মুখ থেকে।একটু আগের দৃশ্যটা চোখের সামনে ভাসতেই লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে তার ওপর তিহান শার্ট খুলে বসে আছে।লজ্জায় মাটি ফাক করে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে।এভাবে তিহানের দিকে তাকাতে বেশ লজ্জা লাগছে তাই নিশাত বলল”শ শার্ট টা প পরে নাও প্লিজ।”

“কেনো?”তিহান বলল।

” আমার লজ্জা করছে।”নিশাত অন্যদিকে তাকিয়ে বলল।

“কিহ!শার্ট খুলেছি আমি লজ্জা আমার পাবার কথা তুই কেনো পাচ্ছিস?”

তিহানের কথা শুনে নিশাত মনে মনে বলল’তুমি লজ্জা পাবা কেমনে?তুমি তো হাড়ে হাড়ে অসভ্য,অভদ্র।তোমার দ্বারা লজ্জা অসম্ভব।’মনে মনে এগুলো বললেও মুখে বলল”জানি না।তুমি শার্ট পরো প্লিজ।”

তিহান শার্টটা গায়ে জড়িয়ে হাসতে হাসতে নিশাতের দিকে এগুতে এগুতে বলল”এতো লজ্জা পেলে আমি বাসর করবো কেমনে আল্লাহই জানে।”

“আচ্ছা তোমার কি হইছে বলো তো?আজকে সারাটাদিন তুমি এসব অসভ্য,লুচু মার্কা কথাবার্তা বলছো কেনো?”

“কই বললাম লুচু মার্কা কথা?আমি যে তোর সাথে লুচু মার্কা কথা বলছি এটার কোনো প্রমাণ আছে?”

“প্রমাণ লাগবে কেনো?আমি তো নিজেই প্রমাণ।”

“জ্বি না ম্যাডাম আপনার মুখের কথায় চলবে না।আমার হাতে কলমে প্রমাণ লাগবে।”

এটা বলেই আবার টুপ করে নিশাতের গালে চুমু খেলো।নিশাত তড়িৎ গতিতে গালে হাত দিয়ে বলল”কি করলে তুমি?”

তিহান একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল”কি করলাম আমি?”

“তুমি মাত্রই আমাকে চুমু দিলে।”

“কোনো প্রমাণ আছে যে আমি তোকে চুমু দিয়েছি।”

নিশাতের এবার প্রচন্ড রাগ উঠছে।দুইবার চুমু দিয়েও অস্বীকার করছে।রাগে হিতাহিত জ্ঞান ভুলে নিশাত তিহানের কলারটা টেনে ধরে ওর গালে একটা কামড় দিয়ে দিলো।নিশাতের এমন কান্ডে এবার তিহানের চোখ বের হওয়ার উপক্রম হলো।তিহান নিশাতের দিকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বলল”কি করলি তুই এটা?”

এবার নিশাতের হুশ আসলো।ও মুখ চেপে ধরে পিছনে ঘুরে গেলো।ইশ!কি লজ্জা!নিশাত মনে মনে বলছে’এটা আমি কি করলাম।আল্লাহ!

আর তিহান গালে হাত দিয়ে বলল”প্রথম বার ছুলি তাও চুমু না ডাইরেক্ট কামড়!!”

তারপর নিশাতকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে মুখ থেকে দুইহাত সরিয়ে বলল”এতো লজ্জা এখন পাওয়া লাগবে না এমনিতেও কামড় দিছিস যদি চুমু দিতি তাহলে লজ্জা পেলে কিছু বলতাম না কিন্তু কামড় দিয়ে এতো লজ্জা পাওয়া উচিত না।”

“তোমার মতো এতো অভদ্র না আমি।”

তিহাম মুখ ভেঙচিয়ে বলল”আর আপনার মতো আমি এতো লজ্জাবতী না।”

তিহানের মুখ ভেঙচানো আর কথা বলার স্টাইল দেখে নিশাত হেসে দিলো।তিহান নিঃশব্দে নিশাতের দিকে তাকিয়ে ওর হাসিটা দেখছে।নিশাত হঠাৎ হাসি থামিয়ে বলল”কি দেখছো?”

তিহান নিশাতকে আচমকা জড়িয়ে ধরে বলল”তোকে অনেক ভালোবাসি।যতে বলবো ততই বোধহয় কম হয়ে যাবে।প্লিজ তুই আমাকে ছেড়ে যাস না।”

নিশাত তিহানের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে অনুভব করছে কিন্তু হঠাৎই আসাদ সাহেবের কথা মনে হতেই নিশাত তড়িৎ গতিতে তিহানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলল”আ আমি পারবো না তোমাকে ভালোবাসতে?আমি বাবাকে কথা দিয়েছে তার পছন্দমতো ছেলেকে বিয়ে করবো।”

তিহান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নিশাতের দিকে তাকিয়ে বলল”আসাদ সাহেব তোর বাবা না।”

নিশাত চমকে ফিরে তাকিয়ে বলল”কি বললে তুমি?”

“যেটা বলেছি একদম সত্যি বলেছি।আসাদ সাহেব তোর বাবা না।তোর বাবা ছোটবেলায় মারা গেছেন।তখন নানুরা জোর করে খালামনিকে আসাদ সাহেবের কাছে বিয়ে দেয়।যাকে তুই এখন বাবা হিসেবে চিনছিস।এই লোকটা তোকে কখনোই ভালোবাসে নি শুধু ভালোবাসার অভিনয় করেছে।কেনো জানিস?সম্পত্তির জন্য।তোর সৎ বাবার আগেও আরো বিয়ে হয়েছে সেখানে একটা ছেলে আছে যার নাম প্রান্ত।তোর সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে।কারণ তোর বাবা উইল করে গেছে তোর নামে সম্পত্তির ৩০% আর তোর হাজবেন্ড পাবে ৭০%।এখন এই সম্পত্তি পাওয়ার জন্য তোকে প্রান্তের সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছে।”

নিশাত বিষ্ময়ের চূড়ায় পৌঁছে গেলো।তিহান এসব কি বলছে?কিছুই মাথায় ঢুকছে না।নিশাত তিহানের দিকে তাকিয়ে বলল”আমি তোমার কথা বিশ্বাস করি না।”

এই বলে নিশাত দৌড়ে ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো।তিহানও পিছন পিছন আসতে লাগলো।নিশাত মেইনডোর খুলে অয়নদের বাড়ি থেকে বের হয়ে দ্রুত একটা সি এন জি নিয়ে চলে গেলো।তিহান পিছন থেকে অনেকবার ডাক দিলো কিন্তু নিশাত কোনো কথা বলে নি।তিহানের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।

নিশাত তাড়াতাড়ি বাসায় এসে আসাদ সাহেবের ঘরে এসে দেখলো সে কি একটা কাজ করছে।নিশাত হুট করে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল”বাবা তুমি নাকি আমার আসল বাবা না?”

আসাদ সাহেবের ভেতরে মোচড় দিলো।সে নিশাতকে বিশ্বাস করানোর জন্য বলল”কে বলছে তোকে মা?আমই তোর বাবা।কারো কথাই বিশ্বাস করবি না।আর আমি যদি তোর বাবা না হতাম তাহলে তোর মা ই তো বলতো।”

নিশাত আসাদ সাহেবের গলা জড়িয়ে ধরে বলল”আমি জানি তুমিই আমার বাবা।আমি কারো কথা বিশ্বাস করি নি।”

এবার আসাদ সাহেব কৌশলে নিশাতকে জিগ্যেস করলো”কে বলল তোকে এসব কথা নিশু?”

“তিহান ভাইয়া বলেছে তুমি নাকি আমার বাবা না।আমি কিন্তু একদম বিশ্বাস করি নি।”

আসাদ সাহেব ভেতরে ভেতরে ফেটে পড়লো।কিন্তু এখন নিশাতকে বোঝাতে হবে তিহান মিথ্যা কথা বলছে।তাই আসাদ সাহেব বললেন”তিহান মিথ্যা কথা বলেছে।ও চায় আমাদের মধ্যে ফাটল ধরুক।তুই একদম ওর কথা বিশ্বাস করবি না।আর ওর সাথে কোথায় যাবিও না।

“আচ্ছা বাবা।”

তারপর নিশাত নিজের রুমে চলে গেলো।নিশাত যাওয়ার পর আসাদ সাহেব বাড়ির দারওয়ানকে বলল তিহান আসলে যেনো ঢুকতে না দেয়।

নিশাতের পিছনে পিছনে তিহানও এসেছে কিন্তু এসে দেখে বাড়ির দারওয়ান ওকে ঢুকতে দিচ্ছে না।দারওয়ানকে জিগ্যেস করার সে বলল”বড় সাহেব আপনাকে ঢুকতে দিতে মানা করেছে।”

এমনিতেই রাগে আগুন হয়ে আছে তারওপর এখন আরো রাগ হচ্ছে।তিহান নিশাতের ফোনে কল দিলো।নিশাত তিহানের কল দেখে রেসপন্স করলো না।তিহান কলের ওপর কল দিচ্ছে।একপর্যায়ে নিশাত বিরক্ত হয়ে নিজের ফোনই বন্ধ করে দিলো।এবার নিশাতের ফোন বন্ধ পেয়ে মাথা আরো বিগড়ে গেলো।মানে এই মেয়ে কি পেয়েছে!তিহান ওদের বাড়ির সামনে থেকে চলে গেলো।একে অন্যভাবে সায়েস্তা করতে হবে।

মোটামুটি রাত একটা বাজতে চললো।সারদিন তিহান অয়নদের বাসায় ছিলো।এখন নিশাতদের বাসার সামনে আসলো।উদ্দেশ্য নিশাতের রুম!কিন্তু যাবে কিভাবে?গেটে তালা ঝুলানো।দেয়ালও টপকানো যাবে না।দেয়ালের ওপরে কাচ বসানো।কিন্তু যাওয়াটা অনেক প্রোয়জন।তিহান গেটের সামনে দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভাবতে লাগলো।হঠাৎ মাথায় আসলো মিরাজের কথা।মিরাজতো রাতে বাড়িতেই থাকে।তিহান মিরাজকে কল দিলো।রিং হওয়ার কিছুক্ষণ পর মিরাজ রিসিভ করতেই তিহান বলল”মিরাজ তুমি কি বাসার ভেতরে?”

“জ্বি ভাই আমি মাত্রই শুয়েছি।”

“একটা হেল্প করবে?”

“জ্বী ভাই আপনি বলেন।”

“আমি বাসায় ঢুকতে পারছি না।আমাকে ঢুকতে একটু হেল্প করবে?”

“কিভাবে ভাই?”

“তুমি একটা চাদর নিয়ে বাইরে আসো।বাকিটা আমি দেখছি।”

মিরাজ নিজের কালো চাদরটা নিয়ে গেটের সামনে আসতেই দারওয়ান বলল”কই যাও?”

“আরে আমার ভাই আসছে গ্রাম থেকে।ওর লগে কথা বলমু।”

মিরাজের কথা শুনে দারওয়ান দরজা খুলল।মিরাজ বাইরে এসে তিহানকে দেখতে না পেয়ে ফোন দিলো।

“হ্যা ভাই আপনি কোথায়?”

“একটু সামনে আসো।”

“আচ্ছা।”

মিরাজ আরেকটু এগিয়ে যেতেই দেখলো তিহান দাড়িয়ে আছে।মিরাজ ওর কাছে যেতেই বলল”তোমার চাদরটা দাও।”

মিরাজ চাদরটা দিতেই তিহান ওটা মাথার ওপর দিয়ে মুখের অর্ধেকটা ঢেকে বলল”দারওয়ান কিছু জিগ্যেস করলে বলবে আমি তোমার বড় ভাই।গ্রাম থেকে এসেছি।আজকে থাকবো।”

“আচ্ছা ভাই চলেন।”

মিরাজ আর তিহান বাসার ভেতর ঢুকে গেলো দারওয়ানকে বুদ্ধু বানিয়ে।বাসায় ঢুকে মিরাজ চাদরটা মিরাজকে দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল”থ্যাংকিউ মিরাজ।আমি কখনো তোমার এই উপকার ভুলবো না।”

তারপর ছেড়ে দিয়ে নিশাতের রুমের সামনে গিয়ে দেখলো দরজা লক করা।তিহান বাঁকা হেসে ডাবল চাবি বের করলো।এই চাবিটা তিহানের কাছে আগেই ছিলো।যাক এখন এটা কাজে লাগলো।ঘরে ঢুকে ভেতর থেকে লক করে দিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো নিশাত ঘুমাচ্ছে।তিহান ওর দিকে তাকিয়ে বলল”আহা!কি ঘুম।আমাকে জ্বালিয়ে তুই ঘুমাচ্ছিস।এতো আরামে ঘুমাতে তো আমি দিবো না।”

এটা বলে তিহান বাঁকা হেসে নিশাতের পাশে শুয়ে পড়লো।নিশাত ঘুমের ঘোরে পাশ ফিরে তিহানকে জড়িয়ে ধরলো।

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)