#অভদ্র_প্রেমিক
#পর্বঃ২৩
#Arshi_Ayat
ঘুমের ঘোরেই নিশাতের মনে হলো কেউ একজন ওর পাশে শুয়ে আছে।নিশাত টিপটিপ করে চোখ খুলে দেখলো আসলেই কেউ শুয়ে আছে।অন্ধকারে চেহারা ভালো বোঝা যাচ্ছে না।নিশাত ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে বলল”ক কে আপনি?”
“তোর বর।”এমন উত্তর শুনে নিশাত বুঝে গেলো ব্যাক্তিটা কে।নিশাত এবার রেগে বলল” কেনো আসছো এখানে?”
তিহান উঠে বসে বলল”তুই তো জানিস আমার কোলবালিশ ছাড়া ঘুম আসে না।আর অয়নদের বাসায় কোলবালিশও নেই।কাকে জড়িয়ে ধরবো বল?সেইজন্য এখানে এসেছি তোকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো।”
“ফাইজলামি বন্ধ করো প্লিজ।যাও এখান থেকে।তোমার সাথে কথা বলতেও ঘেন্না লাগছে।কি করে পারলে বাবার নামে এতোগুলো মিথ্যা বলতে?”
তিহান এবার রেগে গেলো।নিশাত কি বলছে এগুলো!তিহান বেডসাইডে ল্যাম্পটা জ্বেলে নিশাতের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল”আমি একবিন্দুও মিথ্যে বলি নি।একসময় তুই বুঝবি সত্যিটা।হয়তো তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে।”
এতটুকু বলে তিহান নিশাতের রুম থেকে বের হয়ে গেলো।তারপর দারওয়ানের সামনে দিয়েই বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।আর দারওয়ান হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো।
★★★
আজকে তিনদিন হয়ে গেছে।তিহান একবারের জন্যও নিশাতের সাথে কথা বলে নি।তবে যখন ভার্সিটিতে যেতে তখন দূরে দাড়িয়ে থাকতো।নিশাতও তিনদিন তিহানকে ভিষণ মিস করেছে কিন্তু এই অনুভূতি প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না।
আজকে প্রান্তর সাথে নিশাত শপিংএ যাবে তাই ক্লাস শেষে নিশাত প্রান্তর জন্য অপেক্ষা করছিলো।প্রান্ত আসতেই দুজনে রওনা হলো।পিছনে ওদেরকে তিহান ফলো করছিলো কারণ তিহান কিছুতেই প্রান্তর সাথে ওকে একা ছাড়তে চায় না।এই প্রান্তের বিশ্বাস নেই।এতো মার খাওয়ার পরও লজ্জা নাই।আবার ধেই ধেই করতে করতে চলে এসেছে।তিহান মনে মনে বলল’শালা একবার সবকিছু হাতে আসুক তারপর তোকে এমনভাবে পিটাবো যে ছয়মাস তোকে বিছানায় পড়ে থাকতে হবে।আমার নিশুর সাথে শপিং করা বের করবো একটু অপেক্ষা কর শুধু।’
কিছুক্ষণ পর ওরা শপিংমলে পৌঁছে গেলো।নিশাত শাড়ি পছন্দ করছিলো আর প্রান্ত ফোনে কথা বলছিলো। হঠাৎ পাশের চেয়ার চোখ পড়তেই দেখলো তিহানও শাড়ি দেখছে।নিশাত ফিসফিস করে বলল”তুমি কি করো এখানে?”
“শাড়ি দেখছি।” তিহানও ফিসফিস করে জবাব দিলো।
“আমি জানি তুমি শাড়ি দেখছো না আমাকে ফলো করতে করতে এখানে এসেছো।”
“তাহলে আবার জিগ্যেস করছিস কেনো?”
“তুমি প্লিজ চলে যাও।প্রান্ত দেখলে কি বলবে?”
“আমি কি ওর কোলে উঠে বসে আছি যে ও আমাকে কিছু বলবে।”
নিশাত আরো কিছু বলবে তার তিহানকে থামিয়ে দিয়ে বলল”এই লাল শাড়িটা পরলে তোকে খুব সুন্দর লাগবে।এটা নিয়ে নে।”
“তোমার পছন্দ করা কোনোকিছুই আমি নেবো না।”
“না নিলে আমার কি।” তিহান মুখ ভেংচিয়ে বলল।তারপর উঠে বাইরে চলে গেলো।
দুমিনিট পর প্রান্ত এসে বলল”শাড়ি নিয়েছো?”
“হুম হয়ে গেছে।”
“তাহলে চলো জুয়েলারি দেখি।”
“হুম।” প্রান্ত আর নিশাত শাড়ির কর্ণার থেকে বের হয়ে জুয়েলার্সের কর্নারে গেলো।তিহান দূর থেকে হলেও ওদের চোখে চোখে রাখছে।
মোটামুটি শপিং শেষ প্রান্ত আর নিশাত শপিং মল থেকে বাইরে বের হয়ে গাড়িতে উঠবে তার আগেই নিশাত হঠাৎ করে বলল”আপনি বসুন আমি আসছি।ভেতরে একটা ব্যাগ রয়ে গেছে।”
এটা বলে নিশাত আবার শপিংমলে ঢুকে শাড়ির দোকানে গিয়ে তিহানের দেখানো শাড়িটা কিনে নিলো।তারপর বাইরে এসে গাড়িতে উঠে বসলো।তিহান এগুলো সবই খেয়াল করে মুচকি হাসি দিলো।
★★★
গায়ে হলুদের ব্যাস্ততা শুরু হয়ে গেছে সকাল থেকে।মাঝখানে একদিন চলে গেছে।এই একদিনে কেউ কারো সাথে কথা বলে নি।আর নিশাত বাইরেও বের হয় নি।তিহান অনেকবার ওদের বাসার সামনে এসেছিলো।কিন্তু নিশাতের দেখা পায় নি।আর নিশাত বারান্দার দরজা আর রাস্তার দিকের দরজটা আরকে বসে ছিলো।
বিকেলের দিকে নিশাতকে ওর বান্ধবীরা সাজাচ্ছিলো।ওর বান্ধবীদের মধ্যে একজন অয়নের বউ রুমির বোন ছিলো।আর তিহান এটা জানতো তাই রুমির বোনের কাছে একটা চিঠি দিয়ে বলল এটা নিশাতকে দিতে।
সাজানো শেষ হলে রুমির বোন শিমু এটা নিশাতের হাতে গুঁজে দিয়ে কানেকানে তিহানের নাম বলে উঠে চলে গেলো।নিশাত চিঠিটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো কারণ ওর রুমে অনেক মানুষ আছে।যদি কেউ দেখে ফেলে তাহলে কেল্লাফতে।ওয়াশরুমে এসে চিঠিটা খুলে নিশাত পড়তে লাগল।
“জানিস ভালোবাসার ধর্মই হলো পোড়ানো।কাউকে সত্যিকারে ভালোবাসলে ভালোবাসার অনলে পুড়তেই হবে।যেমন আমি পুড়ছি।তুই পোড়াচ্ছিস।
বিয়েতো করেই ফেলবি অন্তত শেষবারের মতো দেখা করবি আজ?একটু দেখবো তোকে।”
নিশাত চিঠিটা বুকের সাথে ধরে কান্না চাপাতে লাগলো।এখন কাঁদলে সবাই সন্দেহ করবে তাই কোনোমতে কান্না চাপিয়ে মনেমনে বলল’তুমি তো তাও তোমার ক্ষত দেখাতে পারো কিন্তু আমি তো তাও পারি না একদিকে তুমি আরেকদিকে বাবা।আর যাইহোক তোমার জন্য বাবাকে কষ্ট দিতে পারবো না।মা মারা যাবার পর উনিই আমার একমাত্র সম্বল।তবে আজ আমি আসবো তোমার সাথে দেখা করতে।”
তারপর কাগজটা কুটিকুটি করে ছিড়ে ওয়াশরুমের জানালা দিয়ে ফেলে বাইরে চলে এলো।
একটু পর নিশাতকে ছাদে নিয়ে যাওয়া হলো।ছাদেই স্টেজ করা হয়েছে।নিশাতকে স্টেজে বসিয়ে ওর বান্ধবীরা ওকে খোঁচা মারা শুরু করলো।নিশাতের আত্মীয় স্বজন অনেকেই এসেছে কিন্তু তিতির খান, তনয় কেউই আসে নি।আসে নি বললে ভুল আসাদ সাহেব কাউকে জানায় নি।আর তিহানও জানায় নি।কেনো জানায় নি সেটা ও ই ভালো জানে।
★★★
হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হতেই নিশাত ঘরে এসে শাওয়ার নিয়ে বাইরে এসে দেখলো ফোনে তিহানের দশ বারোটা কল।নিশাত কল ব্যাক করতেই তিহান রিসিভ করে বলল”আমি তোদের বাড়ির বাইরে আছি।চলে আয়।”
নিশাত কিছু বলল না।ফোনটা রেখে ঘর থেকে চুপিচুপি বের হয়ে দেখলো সবাই শুয়ে পড়েছে।নিশাত মেইনডোর খুলে গেটের কাছে আসতেই দারওয়ান গেট খুলে দিলো।নিশাত বাইরে গিয়ে দেখলো তিহান দাড়িয়ে আছে।রাস্তার পাশের ল্যাম্পের আলোতে তিহানের মুখটা প্রচুর বিষন্ন লাগছে।চুলগুলো উসকোখুসকো।মুখে হাসি নেই।নিশাতের ভেতরে ভেতরে অপরাধ বোধ কাজ করলো।ধীর পায়ে তিহানের সামনে গিয়ে দাড়ালো।তারপর ওর গালে একহাত দিয়ে বলল”এই অবস্থা কেনো তোমার?”
“সেটা তুই ভালো জানিস।”
“নিজেকে গুছিয়ে নাও।মুভ অন করো।”
“আমার দ্বারা হবে না।”
“চাইলেই সম্ভব।”
“তাহলে তুই আমায় ভালোবাসলি না কেনো?”
“ভালোবাসা এতো সহজ না।”
“ভুলে যাওয়া সম্ভব না।”
“এবার তোমারও বিয়ে করে নেওয়া উচিত।”
“তুই রাজি থাকলে এখনি করবো।”
“আমার কথাগুলো সিরিয়াসলি নাও।”
“আমি সিরিয়াসলি বলছি।”
“আচ্ছা থাকো তোমার মতো।আমি যাচ্ছি।”
বলে নিশাত চলে যেতে নিলেই তিহান ওর হাত ধরে ফেললো।নিশাত ওর দিকে ঘুরে তাকাতেই দেখলো চোখে পানি ছলছল করছে।ওই চোখের ভাষা স্পষ্ট,কোথাও একটু ভুল নেই,পরিস্কার ভাবে বলছে ‘তুই ফিরে আয়।”
নিশাত তিহানের থেকে হাতটা ছাড়িয়ে চলে গেলো।ওর চলে যাওয়ার দিকে তিহান কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘচ্বাস ফেলে চলে গেলো।দুইজন দুইদিকে।শেষপর্যন্ত ওদের রাস্তা কি এক হবে?
★★★
একটু পরই নিশাতের বিয়ে।নিশাতকে ঘিরে সবাই বসে আছে।বরপক্ষ কিছুক্ষণের মধ্যেই আসবে।সবার মাঝেই আনন্দ কিন্তু এতো আনন্দের মাঝেও নিশাতের কিছু ভালো লাগছে না কেনো যেনো মনে হচ্ছে কিছু একটা ভুল হচ্ছে।
আর এদিকে তিহান অয়নদের ফ্ল্যাটে এসে একটা রুমের দরজা বন্ধ করে বসে বসে মদ গিলছে।আর আবোল তাবোল বলছে।বাইরে থেকে অয়ন আর রুমি দরজা ধাক্কালেও দরজা খুলছে না।অয়ন আর রুমি আজ সকালেই বাসায় ফিরেছে আর তখন থেকেই দেখছে তিহান এমন আচরণ করছে।অয়ন দরজায় কান পেতে শুনতে পেলো তিহান মাতাল অবস্থায় বলছে’ছেলেরররররাই কেনোওওওওও দেবদাসসসসস হয়?মেয়েরাআআআ দেবদাসী হয় নাআআআআআ কেনোওওওও?”
তিহানের এসব আবোল তাবোল কথা শুনে রুমি আর অয়ন দুজনেরই মাথা ঘুরতে লাগলো।
চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)