#অভদ্র_প্রেমিক
#পর্বঃ২৪
#Arshi_Ayat
নিশাত রাস্তার সাইড দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে অয়নের নাম্বারে কল দিলো।নিশাতের নাম্বার দেখে অয়ন রিসিভ করতেই নিশাত বলল”ভাইয়া তিহান ভাইয়া কি আপনাদের বাসায়?”
“হ্যাঁ ও এই বাসায়।পাগলামি করছে প্রচুর।”
“আচ্ছা ওনাকে একটু সামলান আমি আসছি।”
বলে নিশাত ফোন রেখে একটা সি এন জি নিয়ে অয়নের বাসার দিকে রওনা দিলো।ওর বাসার সামনে আসতেই সি এন জি থেকে নেমে এক দৌড়ে ভেতরে চলে গেলো।পেছন থেকে সি এন জি ওয়ালা ভাড়ার জন্য ডাকতে লাগলো কিন্তু সেই ডাক নিশাতের কানে পৌছাচ্ছে না।নিশাত অয়নদের দরজায় নক করলো।দুইবার নক করতেই রুমি দরজা খুললো।নিশাত ভেতরে ঢুকতেই দেখলো অয়ন সোফায় বসে আছে।আর ভেতরের রুম থেকে তিহানের কথা বলার আওয়াজ আসছে আর সেটা স্বাভাবিক কন্ঠে বলছে না।অয়ন নিশাতকে দেখে বলল”দরজা খুলছে না।ভেতরে বসে বসে মদ গিলছে আর হাবিজাবি বকছে।”
নিশাত কিছু না বলে দরজায় নক করলো।নিশাত নক করতেই ভেতর থেকে তিহান বলল”ধূররররর শালাআআআ একটু শাআআন্তি মতোওওও মদ ও গিলতেএএএ দিবিইইই নাআআআ নাকিইইই।”
নিশাত এবার বলল”তিহান ভাইয়া দরজা খোলো আমি নিশাত।”
ভেতর থেকে তিহান হাসতে হাসতে বলল”শালা আমাররর মনেএএ হয় অনেককক বেশিইই নেশা চড়ে গেছেএএ খালিইই নিশাতের কন্ঠ শুননননতে পাইইই।”
“তিহান ভাইয়া প্লিজ দরজাটা খোলো।আমি সত্যিই নিশাত।”
এবার তিহানের টনক নড়লো।সে দরজা খুলতেই দেখলো তার নিশাত বউ সেজে দাড়িয়ে আছে।লাল টুকটুকে বউ।তিহান একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ মাতাল চাহনীতে তাকিয়ে থেকে আচমকাই জড়িয়ে ধরলো তারপর অয়নকে ডেকে চিল্লিয়ে বলল”শালাররর পো তাড়াতাড়ি কাজি ডাক।”
অয়ন ভ্রু কুঁচকে বলল”কেনো?”
“তোরে হাঙ্গা করমু।তাড়াতাড়ি ডাক।”
তিহানের এসব লাগামহীন কথা শুনে নিশাত,রুমির কান দিয়ে ধোয়া বের হতে লাগলো।আর অয়নের তেমন একটা গায়ে লাগলো না কারণ ও জানে তিহান নেশা করলে এর চেয়েও আরো বেশি উল্টা পাল্টা কথা বলে।অয়ন ওর এক পেশেন্ট কে কল দিলো।কারণ ও নিজেই কাজি।যেহেতু চেনাজানা আছেই তাই আর কষ্ট করার কি দরকার।
তিহান এখনও নিশাতকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে।নিশাত তিহানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল”এবার ছাড়ো আমাকে।আমি এখানেই আছি।”
“জীবনেও ছাড়বো না।তোকে ছেড়ে যেতে দিবোও না।আজই বিয়ে করবো তোকে।”
নিশাত আর কথা বাড়ালো না।কারণ ও জানে তিহান এখনো মাতাল অবস্থায় আছে।একটু পর কাজি আসলে তিহান নিশাতকে ছাড়লো।দুজনেই পাশাপাশি বসে আছে।তিহান ঢুলছে।আর নিশাত নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।তারপর রুমি,অয়নের সাক্ষীতে দুজনের বিয়ে হয়ে গেছে নিশাত আর তিহানের।বিয়ে পড়ানো শেষে কাজি চলে হেলো।কাজি যেতেই তিহান নিশাতের হাত ধরে টেনে ঘরে নিয়ে গিয়ে দরজা আটকে দিলো।অয়ন আর রুমি দরজা ধাক্কা দিতেই তিহান বলল”দোস্ত বাসর করবো আমি।ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।”
তিহানের কথায় দুজনই চলে গেলো।তারপর তিহান বিছানায় ধপ করে শুয়ে পড়লো সাথে নিশাতকেও টেনে ওর বুকের ওর ফেলে দিলো।নিশাত হতভম্ব!!তিহানের যে পুরো নেশা চড়ে গেছে এটা বোঝাই যাচ্ছে।তিহান নিশাতকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইলো।কিছুক্ষণ পর নিশাত তিহানের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হলো।তারপর বাইরে এসে গহনাগুলো খুলে বাইরে বের হতেই দেখলো রুমি টিভি দেখছে আর অয়ন কি একটা কাজ করছে।নিশাতকে দেখে রুমি বলল”কিছু লাগবে তোমার?”
“হ্যাঁ ভাবি এই শাড়িতে থাকা যাচ্ছে না।একটা শাড়ি দিবে?”
রুমি হেসে বলল”তুমি বসো আমি আসছি।”
রুমি ভেতরে গিয়ে ওর জন্য একটা সুতি শাড়ি এনে দিলো।শাড়িটা হাতে নিয়ে নিশাত বলল”ভাবী কষ্ট করে একটু লেবু জল দিবে?তিহানকে খাওয়াবো।”
“ঠিকাছে তুমি চেঞ্জ করো আমি নিয়ে আসছি।”
রুমি এটা বলেই কিচেনে চলে গেলো।আর নিশাত ঘরে এসে কাপড় পাল্টে নিলো।একটু পর রুমি লেবুর শরবত নিয়ে এলো।নিশাত শরবতটা হাতে নিতেই রুমি বলল”কিছু দরকার পড়লে বলো।আর তুমি কি খাবে?”
“না ভাবি খেতে ইচ্ছে করছে না।ও যদি খায় তাহলে বলবো।”
“আচ্ছা।তাহলে জামাইকে সামলাও।” এটা বলে রুমি চলে গেলো।রুমি যেতেই নিশাত দরজা আটকে তিহানের মাথার পাশে এসে বসলো।তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল”তিহান ওঠো।”
তিহান সাড়াশব্দ নেই।সে একবার নেশায় বুদ হয়ে আছে।নিশাত অনেক্ক্ষণ ডাকাডাকি করার পর তিহান টিপটিপ করে চোখ খুললো।তিহানকে চোখ খুলতে দেখে নিশাত বলল”ওঠে বসো।”
তিহান আস্তে আস্তে উঠে বসতেই নিশাত ওকে লেবুর শরবত খাইয়ে দিলো।লেবুর শরবত খেয়ে আবার শুয়ে পড়লো।নিশাত আর ঘাটলো না।তিহানের পাশেই শুয়ে পড়লো।আনুমানিক এখন রাত দশটা বাজে।এখন শুয়ে পড়লেও ঘুম আসবে না।কিন্তু তবুও শুয়ে থাকলো।
★★★
আনুমানিক ঘড়িতে রাত একটা বাজে।তিহানের ঘুম ভেঙে গেলো।আস্তে উঠে বসলো।মাথাটা ভার ভার লাগছে।নেশা কেটে গেছে।মাথাটা ধরে দু’মিনিট বসে ছিলো হঠাৎ নিশাতের কথা মনে পড়তেই পাশ তাকিয়ে দেখলো নিশাত ঘুমিয়ে আছে।নিশাতকে দেখে বিয়ের কথা মনে পড়ে গেলো।বিয়ে হওয়ার পর আর কিছু মনে নেই।কিন্তু নিশাত আসলো কিভাবে?আর ও তো নিজের ইচ্ছেতে প্রান্তকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো কিন্তু এখানে আসলো কেনো?তিহানকে এই বিষয়টা ভাবাচ্ছে ঠিকই কিন্তু ভেতরে ভেতরে চাপা আনন্দও হচ্ছে।তিহানকে বসে থাকতে দেখে নিশাতও উঠে বসলো।চোখ লেগে এসেছিলো কিন্তু হঠাৎ চোখ খুলে দেখলো তিহান বসে আছে তাই নিশাতও উঠে বসলো।নিশাত তিহানের কাঁধে হাত রাখতেই তিহান ওর দিকে তাকালো।নিশাত জিগ্যেস করলো”এখন ঠিকাছো?”
“হ্যা,কিন্তু আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমাদের বিয়ে হয়েছে।”
নিশাত হেসে তিহানকে জড়িয়ে ধরে বলল”এখন বিশ্বাস হয়েছে?”
“হয় নি।” তিহান মুচকি হেসে বলল।
নিশাত তিহানের ঘাড়ে একটা চুমু দিয়ে বলল”এবার হলো?”
“নাহ!এখনো হচ্ছে না।”তিহান মুখ টিপে হাসলো।
নিশাত তিহানের ফাইজলামি বুঝতে পেরে বলল”বিশ্বাস নাহলে আমি প্রান্তর কাছে যাচ্ছি।”এটা বলেই তিহানের গলা ছেড়ে দিয়ে বিছানা থেকে নামার জন্য পা বাড়াতেই তিহান ওকে ঘুরিয়ে ধরে বিছানার ওপর আটকে ধরে নিশাতের মুখের ওপর ঝুঁকে বলল” একদম মেরে ফেলবো।”
নিশাত কিছু না বলে অন্যদিকে তাকিয়ে হাসলো।তিহান টুপ করে নিশাতের নাকে একটা চুমু দিয়ে বলল”আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাস।আমিও দেখি।”
নিশাত ওপরের পাটি দাত দিয়ে নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরে হাসি আটকানোর চেষ্টা করছে।তিহান ওকে নিজের বুকে নিয়ে বলল”হঠাৎ এই অধমের প্রতি আপনার দয়া হলো কেনো?”
“সরি তিহান ভাইয়া… নিশাতকে আর কিছু বলতে দিলো না তিহান তার আগেই ঠোটে আঙুল ঠেকিয়ে চুপ করিয়ে দিয়ে বলল” এই লাস্টবার বললাম আমাকে ভাইয়া বলবি না।শুধু তিহান বলবি।ভাইয়া বললে দিলে চোট লাগে।”
নিশাত ফিক করে হেসে দিলো।তারপর বলল”তাহলে আমি আরো বলবো।”
তিহান কপট রাগ দেখিয়ে বলল”তাহলে আমি তোকে নিশাত আপু বলবো।তিহান ভাইয়া+নিশাত আপু নাইস জোড়ি।”
তিহানের কথা শুনে নিশাতের হাসি বন্ধ হয়ে গেলো।এবার তিহান হাসা শুরু করলো।তারপর নিশাতের নাক টেনে দিয়ে বলল”আর বলবি ভাইয়া?”
“না কখনো না😐”।
তিহান আবার হাসলো তারপর বলল “এবার বল কিভাবে কি হলো?”
নিশাত তিহানের চুলগুলো আউলাঝাউলা করে বলল”আমাকে মাফ করে দাও না প্লিজ।”
“কিসের জন্য?” তিহান ভ্রু কুচকে বলল।
“এই যে আমি তোমার কথা বিশ্বাস করি নি সেইজন্য।”
নিশাতের কথায় তিহান হালকা হেসে নিশাতের মাথা একটা চুমু দিয়ে বলল”আমি জানতাম তুই বিশ্বাস করবি না আর এটাই স্বাভাবিক কারণ ছোটবেলা থেকেই তুই তাকেই বাবা মেনে এসেছিস।আর খালামনিও তোকে কিছু বলে নি এই বিষয়ে।তাই তুই বিশ্বাস করিস নি।তুই নিজের জায়গায় ঠিক।ধর এখন কেউ এসে যদি আমাকে বলে তিতির খান আমার মা না তাহলে কি আমি বিশ্বাস করবো?অবশ্যই না।কারণ ছোটবেলা থেকে তাকে আমি মা বলে এসেছি।সেইজন্য তার প্রতি আমার একটা অন্ধবিশ্বাস আছে।তেমনই তোরও এমন হয়েছে।এইজন্য তোর প্রতি আমি রেগে নেই।আমি সবসময় আমার ভালোবাসায় বিশ্বাস রেখেছি।আমি নিজেও জানি না আমি তোকে কতোটা ভালোবাসি।আর আমার ভালোবাসায় আমার বিশ্বাস আছে।”
তিহানের কথায় নিশাত কান্না করে দিলো।সবসময় এই মানুষটাই কেনো ওকে এতো বোঝে।নিশাতের কান্না দেখে তিহান ওর চোখ মুছে দিয়ে বলল”আবার কান্না করলে কিন্তু আপু বলে ডাকবো।”
নিশাত কান্নার মাঝেই হেসে দিলো।তিহান এই দৃশ্যটা প্রাণভরে দেখতে লাগলো।টেবিল ল্যাম্পের ম্লান আলোয় নিশাতের ভেজা চোখ আর হাস্যজ্বল মুখটা দেখে তিহানের বুকে একটা শীতল পরশ বয়ে গেলো।
চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)