অর্ধাঙ্গিনী (An Ideal Wife)
#পার্ট০১+২
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
-মেঘ চলনা একটু বারান্দায় বসি।অনেকদিন তোমার সাথে চাদ দেখি না।
.
.
সোফায় বসে টেবিলে পা তুলে ল্যাপটপে অফিসের একটা প্রেজেন্টেশন রেডি করছি।এই অসময়ে বৃষ্টির এমন সোহাগী আবদার শুনে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল।হালকা বিরক্তির সুরে বললাম
-তোমার ওসব সোহাগী আলাপের জন্যে আমার সময় নেই।আমার অনেক কাজ পরে আছে। একটু একা থাকতে দিবে প্লিজ?
কথাগুলো বলেই আবার ল্যাপটপে মাথা গুজলাম।এই প্রেজেন্টেশনটা রেডি হলেই নতুন আরেকটা হাতে পাব।
.
ল্যাপটপ থেকে মাথা তুলে দেখি রাত ১২টা ২৫ বাজে।বৃষ্টির কথা ভাবতেই মনে পড়ল তখন মেয়েটার সাথে ও রকম ব্যবহার করা মোটেও ঠিক হয় নি। বিছানার কাছে গিয়ে দেখলাম কায়া ঘুমিয়ে গেছে।কামিজটা সরে গিয়ে সাদা পেটটার কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে।নিজেকে কন্ট্রোল করা খুব কঠিন হচ্ছে।টুপ করে বৃষ্টির পাশে শুয়ে পরলাম।একটা হাত ওর জামা গলিয়ে পেটের উপরে চালান করে দিয়ে ওর খোলা চুলে নাক ডুবালাম। আস্তে আস্তে বৃষ্টির পেটের উপর স্লাইড করছি।যে মুহুর্তে ওকে জড়িয়ে ধরব
-আমার মেদ জমা পেটটা এখন তোমার ঘৃনার বস্তু তাই না মেঘ?
এরকম রোমান্টিক একটা মুহূর্তে বৃষ্টি এমন কিছু বলে ফেলবে সেটা কোনদিনও আমার কাম্য ছিল না।আমি বৃষ্টিকে নিজের দিকে ফেরানোর চেস্টা করছি।কিন্তু সে শক্ত হয়ে আছে।কয়েকবার চেস্টা করার পর ছেড়ে দিলাম।তারপর একটা হেচকা টানে ওকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিলাম।চারদিকে আধার হলেও বাইরে থেকে আসা ল্যাম্পপোস্ট এর আলোয় ওর চোখের কোনটা চিকচিক করে উঠল।বৃষ্টি ভেবেছিল হয়তো আমার চোখে পরবে না। তাই বার কয়েক চোখটাকে পিটপিটিয়ে পানি গুলোকে আড়াল করে নিল।
.
.
-মেদ থাকলেও তোমার এই শরীর আমার।না থাকলেও আমার।শুধু তোমার শরীর না তোমার রুহ,তোমার ভালবাসা তোমার ভাল খারাপ সব কিছুই আমার। সব কিছুতেই শুধু আমার অধিকার।তুমি আমার ভালবাসা বৃষ্টি।আমার স্ত্রী। আমার অর্ধাঙ্গিনী। তোমার সবকিছুই আমার ভাললাগা।আমি সরি তখনকার বিহেবের জন্যে
-জানো তো মেঘ। অসুখ কখনো এক দিনে বাধে না। বার কয়েক অনিয়ম করলে শরীর সহ্য ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। রোগ দানা বাধে। যাক গে ঘুমিয়ে পড়।সকালে তোমার অফি….
আর কথা বলতে দেওয়া যাবে না। বড্ড অভিমান করে আছে মেয়েটা। ঠোট দিয়ে ওর ঠোট দুটো দখল করে নিলাম।বৃষ্টি একহাত আমার চুলে আরেক হাত দিয়ে শার্ট খামচে ধরল।দুহাত দিয়ে ওর কোমড় জাপটে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলাম।অনেক দিন থেকে ভালবাসা হয়নি বউটাকে।আজ ভালবাসা দিয়ে সব অভিযোগ মিটিয়ে দিব।আমার সময়ের উপরে যে তারও অধিকার আছে।সে যে আমার অর্ধাঙ্গিনী।
.
ঘুম ঘুম চোখে বিছানা হাতাচ্ছি।বৃষ্টিকে না পেয়ে চোখ খুলে এপাশ ওপাশ তাকালাম।জানালার পর্দাগুলো বাতাসে উড়ছে।খুট করে শব্দ শুনে চোখ গেল ওয়াশরুমের দরজার দিকে।বৃষ্টি মাত্র গোসল সেড়ে বের হচ্ছে।হালকা হাতে তোয়ালা দিয়ে আঙুল গলিয়ে চুলের পানি মুছছে।হয়তো ভেবেছিল আমি ঘুমিয়ে আছি তাই বিছানার সামনে দাড়িয়ে চুল ঝারতে লাগল।আমার উপর চোখ পড়তেই সড়ে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়াল।আমি সন্তপর্ণে বিছানা থেকে নেমে আলমাড়ি খুলে একটা শাড়ি বের করলাম।অনেক সুন্দর করে শাড়িগুলা গুছিয়ে রেখেছে। কিন্তু উপরে থ্রি পিছের ছড়াছড়ি।আমি আলমারিটা বন্ধ করে বৃষ্টির পেছনে গিয়ে দাড়ালাম।সে এখনো চুল মুছতে ব্যস্ত৷ পেছন থেকে দুহাতে ওর পেট জরিয়ে ধরলাম।হঠাত করে জড়িয়ে ধরায় বৃষ্টি হালকা ভয় পেয়ে গেল।ডান হাতটা আস্তে ওর বুকে উঠিয়ে জামার গলাটা ধরে সজোরে টান মারলাম।হঠাত হেচকা টান পড়ায় জামার অনেকটাই ছিড়ে গেছে।বৃষ্টি আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।তোলায়াটা বুকে জড়িয়ে চেচিয়ে উঠল তুমি কি পাগল হয়ে গেছ?
আমি শান্ত দৃষ্টিতে বৃষ্টির দিকে চেয়ে ব্লাউজ আর পেটিকোটটা এগিয়ে দিয়ে বললাম
-চেঞ্জ করে আসো।
বৃষ্টি কোন কথা বলল না।আমার হাত থেকে কাপড়গুলো নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।৫মিন পর বৃষ্টি গায়ে তোয়ালে জড়িয়ে বেরিয়ে এল।আমি বিছানা থেকে শাড়িটা তুলে বৃষ্টিকে পড়াতে শুরু করলাম।শাড়ির কুচি গুজতে গিয়ে ওর পেটে আলতো করে একটা চুমু দিলাম।বৃষ্টি চোখ বুজে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।আমি ওর কোমড় জড়িয়ে আরও বেশ কয়েকটা চুমু খেয়ে আচলের দিকে এগোলাম।
একটা কথা খুব ভালোভাবে মনে পড়ছে। বৃষ্টি শাড়ি পরতে পারে না।ও অনেকবার শাড়ি পড়া শিখতে চেয়েছিল কিন্তু আমি দেই নি। আমার ইচ্ছা ছিল আমি নিজে হাতে ওকে শাড়ি পড়াব।কুচি গুজে দেবার বাহানায় ওর মেদহীন পেটে ঠোটের ছোয়া দিতে পারব।সেজন্যে কখনো ওকে নিজেই শাড়ি পরতে দিতাম না।বিয়ের পর ছয়মাস যখনই ওর শাড়ি পরতে হতো আমিই ওকে শাড়ি পরিয়ে দিতাম।কিন্তু হুট করে একদিন অফিস যাওয়ার সময় ও জেদ ধরে বসল ওকে শাড়ি পরিয়ে দিতে হবে।এদিকে অফিসে সেদিন ইম্পর্ট্যান্ট একটা মিটিং ছিল। একে তো দেরী তার উপর বৃষ্টির অহেতুক বায়না। রাগে ওর মুখে শাড়ি ছুরে মেরে চলে যাই।তারপর থেকে আর ওকে একদিনও শাড়ি পরতে দেখেছিলাম বলে মনে হয় না।পরবেই বা কি করে। সে তো শাড়ি পরতে জানে না।
আচলটা ঠিক করে আবার ওকে তুলে বসিয়ে দিলাম।চুলগুলো আচড়ে দিলাম যত্ন করে।বৃষ্টিতে আয়নাতে আমাকে দেখছে। ওর চোখদুটো টলমল করছে।আমার হাতটা চেপে ধরে বলল
-এত ভালবেসো না প্লিজ। সহ্য হবে না।
বলেই বৃষ্টি উঠে চলে গেল।আমি জানি বৃষ্টি কেন এমন বলছে।ও ভয় পাচ্ছে হয়তো আমি আবার ওকে অবহেলা করব। কিন্তু আর না। কাজের নেশায় এতোটা বুদ হয়েছিলাম যে আমার অস্তিত্বকেই আমি ভুলে গেছি।
ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ চলে গেলাম।মা আগেই নাস্তা সেড়ে নিজের রুমে চলে গেছেন।বৃষ্টি আমার জন্যে প্লেট সাজাচ্ছে।
-তুমি খাবে না?
-আগে তুমি খাও। আমি পরে খেয়ে নিব।
-না এখনি খাবে।বসো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
হাত ধরে বৃষ্টিকে আমার পাশের চেয়ারটাতে বসিয়ে দিলাম।নিজে হাতে তুলে ওকে খাওয়াচ্ছি।ও অপলক আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
খাওয়া শেষে বৃষ্টি প্লেট গুলো নিয়ে চলে গেল।আমি গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরলাম মার্কেটের উদ্দেশ্যে।
.
.
শাড়ির দোকান থেকে শাড়ি কিনে বের হব এমন সময় নজর গেল পাশের একটা জুয়েলারির দোকানের দিকে।বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত একটা সোনার কনাও দেইনি বৃষ্টিকে।সারাদিন বাড়ির কাজেই ব্যস্ত সে। অথচ এই আমিই ওকে বলেছিলাম ওকে রাজরানীর মত করে রাখব।সামান্য কষ্টও ওকে পেতে দিব না।কথাগুলো ভেবেই একটা তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠল ঠোট জুড়ে।দরজা ঠেলে দোকানে ঢুকলাম।এই সেট ওই সেট দেখতে দেখতে চোখ গেল একটা লাল পেন্ডেন্ট এর উপর।এগিয়ে গিয়ে সেলসম্যানকে বললাম ওটা দেখাতে। প্রাইজট্যাগ দেখেই চক্ষু চড়কগাছ।১লাখ টাকা।কারন জিজ্ঞেস করতেই সেলসম্যান বলে উঠলেন
-স্যার পেন্ডেন্ট টাতে সোনার চেয়েও দামী হল লকেটটা যেটা পেন্ডেন্টটাকে আকর্ষণীয় করে তুলছে।
এই সামান্য একটা পাথরের পিছনে এক লাখ টাকা খরচ করার কোন মানেই হয় না।টাকা তো আর উড়ে আসে না।রাতদিন পরিশ্রম করতে হয় টাকা উপার্জনের জন্যে। পেন্ডেন্টটা ফেরত দিয়ে শো রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।…
চলবে…….