আপনিময় তুমি 2 Part-07

0
1731

#আপনিময়_তুমি?[ An unbearable Crazy love]
#Season: 02
#Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr[Mêhèr]
#Part: 07…

পরের দিন আনহা দ্রুত ভার্সিটিতে গেল। প্রথমদিন ভার্সিটিতে এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে যাবে তা আন্দাজা কখন করেছিল ও। ছেলেটাকে থাপ্পড়টা মেরে নিজেকে থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে হয়েছে ওর। পুরো দিনটাই নষ্ট করে দিয়েছিল। চেয়েছিল ভার্সিটির প্রথম দিনটা একটু আনন্দময়ভাবে কাটাবে। কিন্তু ছেলেটা এমন ভাবে আন্দাজে বাইক চালিয়েছিল আরেকটু হলে সিমিয়া মরতে বসত। অথচ ছেলেটার কোনো দিক-দিশা ছিলই না। উল্টে আরও সিমিয়া ছেলেটাকে কিছু বলতে নিষেধ করল। ওর কী? ধৈর্য বলে একটা ব্যাপার আছে। কিন্তু সেটা ছেলেটা অলরেডি ব্রেক করে ফেলেছিল। যখন ওর বন্ধু জিহাম এসে সিমিয়াকে বলেছে, দু’একটা মানুষের হাত-পা না ভাঙলে বাইকারদের নাম হয় না। ছেলেটা নাকি ইচ্ছে করে ওকে ফেলে দিয়েছে। তার উপর ও যখন কথা বলতে গেল কী বিশ্রি ভাষা। গেল রাগ উঠে। দিল ঠাস করে এক থাপ্পড় বসিয়ে। এখন তাএ জন্য যে ওকে এভাবে অপদস্থ হতে হবে কে জানত? যাইহোক, এবার আর কারও সাথে ঝামেলায় যাবে না। এমনিতেই জীবনে ঝামেলার কোনো কমতি নেই।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আনহা দ্রুত পায়ে ভার্সিটির দিকে হেঁটে চলল। উদ্দেশ্য একদম ক্লাস রুম। কিন্তু তা আজকেও যেন আনহার ভাগ্য ওর সাথ দিল না। ভার্সিটিতে ঢুকতেই দেখে কালকের ছেলেটা গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আছে। বার বার ঘড়ির দিকে দেখছে। মনে হচ্ছে কারও জন্য অপেক্ষা করছে। আনহা আর সেদিকে নজর দিল না। মাথা নিচু করে নিজের ভবনের দিকে পা বাড়াল। হঠাৎই আনহা আনহার মাথাটা কিছুতে আঘাত খায়। দু’কদম পিছনে গিয়ে সামনে তাকায়। মুহূর্তে চোখটা বড়বড় হয়ে যায়।

‘এই তুমি?’

ইহান ভ্রু নাচিয়ে ৩২দাঁত বের করে একটা হাসি দেয়। বলে, ‘৭টা ১২মিনিট ১সেকেন্ড ধরে আপনার অপেক্ষা করছি। আর আপনি ভাই আসতে আসতে পুরো ৯টা ১৭ বাজিয়ে দিলেন।’

ভ্রু কুঁচকায় আনহা। জিজ্ঞেস করে, ‘মানে?’

‘মানে-ফানে কিচ্ছু না। কালকে ভিজে গেছিলেন বলে মাফ করে দিয়েছিলাম। মোট দু’টা থাপ্পড় খেয়েছি। তাই বসে আছি সকাল থেকে। সরি অপেক্ষা করছি কাল রাত থেকে।’

‘কেন?’

‘আপনার জন্য। আপনি জানেন আজকে কী করব তা ভেবে ভেবে আমি দুই দুইটা বোতল শেষ করছি।’

‘দুই দুইটা বোতল মানে?’ সন্দিহান কণ্ঠে জানতে চাইলে আনহা।

‘বোতল মানে? ‘ওই জিহাম এ দেখি বুঝে না।’

‘কিহহ? দাঁড়া আমি দেখতাসি।’ আনহার মুখের কাছে এগিয়ে জিহাম বলে, ‘খালাম্মা বোতল মিন্স যা খায়। যা খাইলে ওইটা হয়?’

‘কোনটা?’

‘আরে… আরে মাথা ঘুরে, বমি বমি পায়।’

‘গ্যাস্টিকের ট্যাবলেট না খাইলে এমন হয়? কিন্তু কী খাইলে এমন হয়?’

‘উফফ… সোজা কথা অয়ন কালকে দুই… ‘

‘ওকে ওকে বুঝছি।’

‘বুঝলে হবে না। আপনি জানেন কালকে আমার অবস্থা কী ছিল?’ উত্তেজিত হয়ে বলল ইহান।

‘কী ছিল?’

‘আসুন বলছি৷’ বলেই আনহাকে গাছের বাঁধাই করা বসার স্থানে বসিয়ে দেয়। তারপর আনহার সামনে দাঁড়িয়ে বলে, ‘কালকে রাতে আমি আপনার উপর কেমনে প্রতিশোধ নিব সেইটা ভাবছিলাম। ভাবতে ভাবতে দুই বোতল খেয়ে ফেলেছি। যেখানে নেশা করলে এতদিন আলিয়া বা ক্যাটটিনা অথবা এই কলেজের সবচেয়ে হট গার্ল রাইসাকে দেখতাম, সেখানে আমি আপনারে দেখছি। কী মারাত্তক ব্যাপার জানেন?’

‘নাহ..’ কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল আনহা। ও এটা জানবে কী করে? ছেলেটা কী বলছে তাই বুঝতে পারছে না।

‘আপনি জানেন আমি পুরোটা রাত আপনাকে দেখছি। কিন্তু কীভাবে কী করব ভেবেই পাচ্ছিলাম না। তখন কী করেছি জানেন?’

আনহার দিকে এগিয়ে রেগে বলল। আনহা ওকে সরাতে না পেরে নিজেই মাথাটা পিছনে নিয়ে নিল।৷ ইহান আবার বলল, ‘বমি করেছি। তাও আবার জিহামের গায়ে। সে কী শ্রী…’

‘একদম বিশ্রি… পুরো শরীর আমার ছ্যা ছ্যা ছ্যা… বমিতে গন্ধে ভাসিয়ে দিল রে।’

‘তাই নাকি?’ জানতে চাইল আনহা।

‘হুমম। শুধু কি তাই? সকালে যাতে আপনার সাথে দেখা করতে পারি তাইতো রাত দু’টোও দোকানদের বাড়ি থেকে তুলে এনে দোকান খুলে তেঁতুল নিয়েছি৷ তারপর তা খাইছি।’

‘দোকানদার দিল?’

‘দেবে না। ওর একটা মেয়ে ছিল তো। তাই দিয়েছে। সেটা কেন আপনি নাই বা জানলেন? এখন আসল কথায় আসি। তেঁতুল খেয়ে সকাল ছ’টায় ঘুম থেকে উঠেছি। আপনার জন্য বসে আছি। আর আপনি এখন এলেন৷ বলুন কী শাস্তি নেবেন?’

আনহা ওদের কথার আগামাথা পেল না। শাস্তি তো বুঝল। তাই একটু কনফিউজড হয়ে জানতে চাইল, ‘শাস্তি তো বুঝলাম। কিন্তু কিসের শাস্তি। আমি কি কিছু করেছি?’

এটা শুনে জিহাম আর ইহান নিজেদের দিকে চাওয়া-চাওয়ী করল। এতক্ষণ ধরে কাকে কী শুনাচ্ছিল।

‘অয়ন, সাত খন্ডে রামায়ণ পইড়া সীতা কার বাপ। খালাম্মার দশা সেই। এতক্ষণ ধইরা তারে কী শুনাইছি।’

‘বাদ দে…. ‘ বলেই আনহার হাত ধরল। বলল, ‘চলুন আমার সাথে।’ তারপর আনহাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগল।

‘কোথায় নিয়ে যাচ্ছ আমাকে?’ জানতে চাইল আনহা।

ইহান কোনো কথা না বলে আনহাকে নিয়ে বাংলা বিভাগের লেকচারের আব্দুল বরাকাতের কাছে নিয়ে গেল। ভিতরে ঢুকে ওনার চেহারের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ‘স্যার, আসব?’

তিনি চোখ থেকে চশমা নামিয়ে উৎফুল্ল কণ্ঠে বললেন, ‘আরে অয়ন আসো আসো। কী হয়েছে?’

আনহা নিজ মনেই বলল, ‘আচ্ছা পাগলের পাল্লায় পড়া গেল। একজন ভিতরে এসে বলছে আসবে কিনা? আরেকজন সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলছে ভিতরে আসো। এইটা ভার্সিটি নাকি পাগলা গারত?’

‘স্যার, আপনাকে যে মেয়েটার কথা বলেছিলাম ওনি সে?’

এইটা শুনে গর্জে উঠলেন, বরাকাত স্যার। বললেন, ‘এই মেয়ে তোমার এত সাহস তুমি অয়নের মতো একজনকে চড় মেরেছ! কেন মেরেছ?’

‘স্যার, আসলে…’

‘তুমি জানো ও কত ভালো স্টুডেন্ট, কত ভালো একটা ছেলে, কত ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট। সব বাজে অভ্যাস থেকে মুক্ত…’

‘স্যার, আমি তো বলিনি ও…’

‘বেয়াদব মেয়ে টিচারের মুখে মুখে তর্ক করা। আচ্ছা আগে এটা বলো তুমি এত ভালো একটা ছেলেকে মারলে কেন।’

‘স্যার, আমি…’

‘আবার কথা বলছ। ফের যদি শুনি তুমি অয়নকে মেরেছ তাহলে সেদিন এই ভার্সিটিতে তোমার শেষ দিন। নাউ গেট লস্ট। কীহল যাচ্ছ না কেন?’

আনহা আর কথা বলল না। বেরিয়ে গেল। আজব ইয়ার! ওর কথাই তো শুনল না। হাসের মতো বলে গেল তো বলেই গেল। খালি প্যাকপ্যাক করেই গেল।

কিছুদূর যেতেই সিমিয়ার সাথে দেখা। সিমিয়া ওকে দেখে তরিঘরি করে কাছে আসল। আনহা ওকে দেখে কিছু বলবে তার আগেই সিমিয়া বলল, ‘থ্যাংস গড তোমাকে পেয়ে গেলাম। তুমি তো কাল আমার কথা না শুনেই অয়নের কাছে চলে গেলে।’

আনহা ওর কথা না শুনে স্লো ভার্সনে ওকে দেখে চলল। মনে হচ্ছে ইউটিউবে কোনো ভিডিও দেখছে টাইমিং স্পীড বাড়িয়ে। সালা যে আসছে কথা বলেই যাচ্ছে বলেই যাচ্ছে। ওকে না বলার সুযোগ দিচ্ছে না বোঝার। সিমিয়ার কথাও তাই মনে হচ্ছে ও হাম্বা হাম্বা সুরে বলছে, ‘আ….মি… জা….নি… তু…মি…’

আনহা কুংফু মুভির মতো সবার মাথা নাড়িয়ে সবার পজিশন দেখছে।

‘আনহা এই আনহা….’

‘কীহহহ!’ বাজ পড়ার মত করে কেঁপে বলল আনহা।

‘আমি বলছি তুমি কী শুনছ?’.

‘এত চিল্লাও কেন? আমি কী কালা নাকি নাকি কানে শুনি না।’ চেঁচিয়ে বলল আনহা।

ভয় পেয়ে গেল সিমিয়া। বলল, ‘ওকে ওকে আমার মনে হচ্ছে, তুমি একটু ডিপ্রেসড। আমি বরং যাই। নাহলে আবার কী করে বসো?’

বলেই দ্রুত সেখান থেকে চলে গেল। ব্যাপারটা আনহার বোধগম্য হচ্ছে না। ও সুস্থ মানুষ নাকি পাগল বুঝতে পারছে না। হঠাৎই খেয়াল করল ছেলেদুটি আবার এদিকে আসছে নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে। আনহা আর সেখানে দাঁড়াল না দ্রুত সেখান থেকে চলে গেল। এদের সামনাসামনি হওয়া যাবে না। নিজের ক্লাসে চলে গেল।

ভার্সিটি শেষ করে আনহা বাড়ি চলে গেল। কয়েকটা টিউশন ছিল তাই ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা নেমে গেছে। আনহা সন্ধ্যার কিছুটা পর বাড়ি ফেরে। কিন্তু গিয়ে দেখে দরজা খোলা। মুহূর্তে একটা ভয় আনহার মনে হানা দিল। আনহা দ্রুত ঘরের মধ্যে ঢুকে গেল। গিয়ে যা দেখল তাতে বুক কেঁপে উঠার মতো অবস্থা। পুরো রুমের জিনিসপত্র ছড়ানো ছিটানো ভাঙা। আনহা সাহানকে ডাকতে লাগল। ‘ মা…মা…’ কিন্তু কোথাও সাহানার দেখা পেলেন না। তখনি একটা মহিলা রুমে আসলেন। আনহা ওনাকে দেখে ভয় পেয়ে গেল। মহিলাটি ওকে অভয় দিয়ে বলল, ‘ভয় পেয়ো না। আমি এখানে তোমাকে কিছু বলতে এসেছি।’

‘জি বলুন।’

‘আমি তোমাদের পাশের রুমে থাকি। তোমাদের পাকঘরের সামনে যে ঘরটা সেটা আমাদের। কিছুক্ষণ আগে কয়েকজন লোক এসে তোমার মাকে নিয়ে গেছে। লোকগুলোকে দরজার সামনে দেখে তোমার মা পাকঘরের জানালার ফাঁক দিয়ে এই চিঠিটা আমাকে দিয়েছে। আর বলেছে, তুমি এলে যেন আমি চিঠিটা আর এই খামটা দিয়ে দেই। এই নেও।’

আনহা ওনার থেকে চিঠিটা আর খামটা নেয়। তারপর মহিলাটি চলে যায়। আনহা চিঠিটা খুলে পড়তেই দেখে তাতে লেখা…

আনহা…
ওরা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে। তুই আমাকে নিয়ে চিন্তা করিস না। ওরা আমার কিছু করবে না। কিন্তু তুই মা? আমার চিন্তা করে ফিরে আসিস না। তুই এই বাড়িতেও থাকিস না। চলে যা কোথাও। আমি ওদের বলেছি, তুই কয়দিনের জন্য ঢাকার বাইরে গেছিস। তাই ওরা আমাকে নিয়েই চলে গেছে। ওরা আবার ফিরে আসবে তোকে নিতে। এখানে পরিচিত তেমন কেউ নেই আমাদের। তবুও তুই যেখানে পারিস থাকার ব্যবস্থা করে। আর আমার কাছে ফিরে আসার চেষ্টাও করবি না। কসম দিলাম আমি। যাই হয়ে যাক। তোর জন্য কিছু টাকা আমি খামে দিয়ে রেখেছি। নিজের মতো করে বাঁচ আনহা।

ইতি তোর মা।

চিঠিটা পরেই আনহা ধপ করে মাটিতে বসে পরে। অঝোরে কাঁদতে লাগল। ওর আপন বলতে শুধু ওর মা ছিল। এখন সেও চলে গেল। পরক্ষণেই মাথায় আসল। ওকে যেতে হবে। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। এখানে থাকাটা সেফ নয়। তাই দ্রুত নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিল আনহা। কিছুক্ষণের মাঝেই বেরিয়ে পড়ল।

রাস্তার মাঝ দিয়ে হাঁটছে। কোথায় যাবে ঠিক বুঝতে পারছে না। এখানে চেনা বলেও কেউ নেই। কোথায় যাবে? এদিকে রাতও কম হলো না। আচ্ছা এই শহর ছেড়ে চলে যাবে। কিন্তু তাহলে তো পড়াশোনা থেমে যাবে। অনেক কষ্টে এই ভার্সিটিতে এডমিশন নিয়েছিল। যাহোক, এখানে থেকেই যা করার করতে হবে। কিন্তু এখন ভাবার বিষয় ও যাবে কই? মোবাইলের দিকে তাকালে দেখে ৯টা বাজতে চলল। এতক্ষণ ধরে হেঁটেই চলেছে। কোথায় যাবে কূল-কিনারা নেই। চেনা বলতে সামিয়া আছে। কিন্তু দু’দিনের আলাপ মেয়েটির সাথে। ও তো হোস্টেলে থাকে। কিন্তু এভাবে ওর কাছে কীভাবে হেল্প চাইবে? কিন্তু না চেয়েও বা উপায় কী? তাই ভার্সিটিতে সিমিয়ার হোস্টেলে যাওয়ার সিন্ধান্ত নিল। কিন্তু তখনি বাঁধল বিপত্তি। ঝুম করে বৃষ্টি নামতে শুরু হলো। অসময়ের বৃষ্টি আনহা দ্রুত বাস থামার জায়গায় আশ্রয় নিল।

দেখতে দেখতে ঘন্টা পেরিয়ে গেল। কিন্তু বৃষ্টি থামার নাম নিচ্ছে না। এদিকে রাস্তা প্রায় ফাঁকাই বলা চলে। ভয়ও করছে। ওর আশেপাশে তেমন কোনো মানুষ নেই। দূরে একটা ল্যাম্পপোস্ট জ্বলছে। কিন্তু নিভু নিভু অবস্থায়। আর ক্ষণে ক্ষণে সাই সাই করে করে দু’একটা মোটর গাড়ি চলে যাচ্ছে।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.