#আপনিময়_তুমি?[ A unbearable Crazy love]
#Season: 02
#Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr[Mêhèr]
#Part: 13…
সময়টা মানুষের জীবনে ছন্নছাড়া নদীর মতো৷ কখন যে কোন পথে বাঁক নেয় কেউ বলতে পারে না? অতন্দ্রিত সে। নিজের মতই চলতে ভালোবাসে। এই সময়ের মাঝে মাঝে বিভিন্ন মানুষের সাথে দেখা হওয়া, পরিচিত হওয়া সবটাই যেন কোনো এক স্বপ্নের মতো।
জিহামের বাইকে বসে নিজের খেয়ালে কথাগুলো ভাবছে আনহা। তখনি ডাক পড়ে জিহামের। ‘এই যে খালাম্মা, বিগত ৩ঘন্টা যাবত আমার বাইকের পিছনে বসে আছেন, অথচ কোনো পাত্তা নেই কেন ভাই?’
জিহামের কথায় ধ্যান ভাঙে আনহার। খেয়াল থাকবেই বা কী করে—সে তো নিজের জীবনের ছন্দের পতনের মাপটা খুঁজে ফিরছিল। কিন্তু তা নির্ণয় করার আগেই বাধা দিল জিহাম। বিরক্ত হলো আনহা। দুনিয়ার সবচেয়ে বিরক্তিকর সময় বোধহয় এটাকেই বলে, যখন ভাবনায় ছেদ পড়ে। হোক তা দুঃখের কিংবা সুখের। আর যদি তা হয় এরকম কিছু হনুমানের জন্য তাহলে তো কথাই নেই৷ কণ্ঠে বিরক্তির রেশ নিয়ে বলল, ‘সিনেমা কী এখানেই দেখব?’
ভ্রু কুঁচকায় জিহাম। বলে, ‘সিনেমা দেখার এত তাড়া যে এতক্ষণ সিনেমায় ডুবে ছিলা?’
‘কী বলতে চাইছ?’
‘এটাই যে আমি বিগত ৩ঘন্টা যাবত আপনাকে বাইকে নিয়ে ঘুরছি। কিন্তু আপনি তো ভাই আপনি। মানে এম্বুল্যান্সের পেসেন্টও বোধহয় এরচেয়ে বেশী নড়াচড়া করে। আমার মতো মনে হলো আমি জলজ্যান্ত একটা মৃত দেহ নিয়ে যাচ্ছি। কতবার করে ডাকলাম। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না।’
কথাটায় কিছুটা লজ্জা পেল আনহা। সত্যি তো তিনঘণ্টা যাবত ঘুরছে অথচ আনহা এর মধ্যে নিজের খেয়ালে ব্যস্ত ছিল।
‘আচ্ছা এটা বলো অয়ন কই?’
‘এখানে।’ বলল জিহাম।
‘আবার কোথায়?’ বলেই আনহা সামনে তাকাল। সেখানে জ্বলজ্বল করে সিনেমার হলের নাম দেখতে পেল। জিহাম বাইক থেকে নেমে বলল, ‘চলো ওরা ভিতরের আছে।’
‘কিন্তু কথা সেটা না। কথা হচ্ছে আমি ভিতরে গিয়ে কী করব?’
‘সিনেমা দেখবা।’
‘কার সিনেমা? আলমগীর নাকি রাজ্জাক?’
ভ্রু কুঁচকায় জিহাম। বলে, ‘তাঁরা তোমার যুগের নায়ক নাকি তোমার মায়ের?’
‘আমার মায়ের।’
‘তাহলে তাদের দিয়ে কোনো কাজ নেই। আপাতত এ যুগের নায়ক দিয়েই কাজ চালাব।’
কিছুটা সংশয়িত হলো আনহা। জানতে চাইল, ‘এ যুগের নায়ক মানে শাহরুখ নাহলে সালমান।’
এ-কথায় বিরক্তির শ্বাস ছাড়ল জিহাম। বলল, ‘এঁরাও কী এই জেনারেশনের নায়ক! আচ্ছা আনহা তুমি কী মুভি দেখো না।’
‘ছোট বেলায় দেখতাম। এখন আর দেখিনা। দেখলেও সালমান শাহের মুভি দেখি।’
‘থাক থাক। আর বলতে হবে না এবার চলো।’
‘আগে তো বলো কার মুভি? আসলে জীবনে ফাস্ট টাইম সিনেমা হলে ঢুকব তো তাই…’
এ-কথায় জিহাম বলদের মতো দাঁত কেলায়। বলে, ‘এই না হলে বলির পাঁঠা। একদম পারফেক্ট জিনিস। আ…নহা…’ বিদ্রুপাত্মক গ্রে সুরে ডাকল জিহাম।
‘হ্যাঁ, বলো।’
‘তোমাকে শাহরুখ-সালমানের যুগের নায়কেই দেখাব।’
‘কাকে…’
‘ইমরান হাশমিকে। তোমার সোনালি যুগের বিখ্যাত রোমান্টিক নায়ক। মোস্ট এওয়ার্ড প্রাপ্ত।’
‘কিন্তু…’
‘আব্বে চল। তারপর বলিস। যত্তসব কলুর বলদ।’ বলেই আনহার হাত ধরে টানতে টানতে ভিতরে নিয়ে গেল জিহাম।
ভিতরে ঢুকে কিছুটা অবাক হলো আনহা। এই প্রথম হলের ভেতর আসল ও। হল অনেকটাই ভরা। অন্ধকারের জন্য ঠিক ভালোভাবে সবটা বোঝা যাচ্ছে না। স্কিনের দিকে তাকাতেই আনহা দেখে একটা ইংলিশ মুভি প্লে করা। দেখে একশান মুভি মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে রোমান্টিক কোনো মুভি। এটাইতেই বাজল সমস্যা। ইংলিশ রোমান্টিক মুভির কিছুটা হলেও ধারণা আছে ওর। ও যেতে চাইলে জিহাম ওকে ধাক্কা মেরে নিজের পাশে বসিয়ে দেয়। দেয়ালের কর্নারে ওকে বসানো হয়েছে। আর জিহাম ওর এপাশে। যেতে হলে জিহামকে ডেঙিয়ে যেতে হবে। আর নাহলে চেহারের উপরে উঠে। কিন্তু চেহারের উপরে উঠতে গেলে পাবলিক বাঁইন্ধা পিটাবে। আর জিহাম ওর থেকে উঠতে দেবে বলে মনে হচ্ছে না। কী যে আনহা করবে বুঝতে পারছে না। তাই আঁটসাঁট হয়ে বসে কয়েকটা ঢোক গিলল। অতঃপর মুভি দেখা শুরু করল। কিছুদূর ঠিকি ছিল। কিন্তু কিছু মুহূর্তে পর থেকেই কেমন একটা লাগল আনহার। উপরে স্ক্রিনে নায়ক-নায়িকা নিজেদের রোমান্টিক মুহূর্ত কাটাতে ব্যস্ত। একে-অপরের মাথায় মাথা দিয়ে নদীর পাশে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। নায়ক নায়িকার আঙুলের ভাজে হাত দিয়ে পাঠকাঠির নখ গুলোকে দেখছে আর প্রসংশা করছে। আর সেই প্রসংশার সাথে জিহামের কটমট করে চাবানো পপকনের শব্দ কানে আসছে। আনহা দাঁত কিড়মিড়িয়ে কয়েক দফা ওকে দেখল। কিন্তু জিহামের ভাবান্তর হলো না। তাই আনহা স্ক্রিনের মুভিতে চোখ দিল। কিন্তু হঠাৎ এমন কিছু দেখল যাতে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। নায়ক হঠাৎই করেই খুব সফটলি নায়িকার ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াল। ব্যস, আনহার অবস্থা সেখানেই খারাপ। ও লজ্জায় ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে ওড়নার ফাঁক দিয়ে স্ক্রিনের তাকিয়ে দেখল। আবার এটাও দেখল ও এই সিন দেখছে, সেটা আবার অন্য কেউ দেখছে না তো! যদি দেখে কী ভাব্বে আনহাকে। নাঃ, এসব জিনিস শয়তান থেকে আসে। একবার দেখলে না চাইলেও মন আঁকুবাঁকু করে দেখার জন্য। তাই আনহা ওখান থেকে উঠে যেতে চাইল। কিন্তু জিহাম হা করে দেখছে। না বোধহয় গিলছে।
জিহামের এই কান্ডে আনহা বেশ জোরেই একটা চিমটি কাটল। জিহাম আঃ করে উঠে রাগান্বিত কণ্ঠে বলল, ‘রোমান্টিক সিন দেখে মানুষের রোমান্স পায়। কিন্তু তোমার কী বান্দরী ব্যধি আছে না কি?’
‘এসব কী? আমার কেমন লাগছে? আমি এখানে থাকবে না…’
এ-কথায় দুষ্ট ভরে হাসল জিহাম। বলল, ‘কেমন লাগছে?’
ভ্রু কুঁচকায় আনহা। মনে মনে বলল, ‘আগেরটা শুনল না। শেষের টাও বুঝল না। কানে আটকালো মাঝের কথা।’
‘বুঝেছি রোমান্টিক সিন দেখছো তো তাই। আচ্ছা আমি…’
‘এই এই দূর হাঁটো।’
‘কী যে বলো। এখানে আর এমন কী? আমাদের সামনের সিটেই দেখো কী হচ্ছে?’
জিহামের কথাটা শেষ না হতেই আনহা সামনের দিকে তাকাল। যা দেখল তাতে মাথা ঘোরার উপক্রম। স্ক্রিনের যা হচ্ছে সেটাই যেন ওর সামনে কেউ প্রাকটিস করতে চাইছে। আর সেটা অন্য কেউ নয় ইহান। তাও আবার রাইসার সাথে। সঙ্গে সঙ্গে আনহা একটা চিৎকার করে উঠে দাঁড়ায়। পুরো হল রুমের সবার ফোকাস আনহার দিকে। আনহা তা খেয়াল না করে বড় বড় চোখ করে ইহান আর রাইসার দিকে তাকিয়ে। আনহার এমন বিহেভে রাইসা কিছুটা ইতস্তত। বিরক্তি ফুটে উঠেছে ওর মুখে। আনহার এমন বিহেভে বিরক্ত ওখানে থাকা অনেকেই। কেউ কেউ আবার হাসছে। তো কেউ আনহাকে ধমকা-ধমকি শুরু করে দিয়েছে। হঠাৎই আশ-পাশের আঁচে ভাবনা হতে বেরিয়ে এল আনহা। ক্রোধান্বিত জনতার প্রবল গ্রাসে ইতস্তত হলো। নিজের এমন বাচ্চামো বিহেভে কিছুটা লজ্জিত ও অপমানিত হলো। ইহান বসে বসে হাসছে। ও জানত হঠাৎ এমন কিছুতে আনহা এরকমই রিয়েক্ট করবে। আবছা অন্ধকারে হঠাৎই আনহার ইহানের হাসিমাখা মুখটার দিকে চোখ পড়ল। রাগে-অপমানে আনহার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল। ও আর একমুহূর্ত দাঁড়াল না। এক ছুটে সেখান থেকে বেরিয়ে এল।
আনহার চোখে পানি ইহানের মনেও অদ্ভুত এক অপরাধবোধ জন্ম দিল। আনহাকে এভাবে দেখে ভেবেছিল মজা নেবে। কিন্তু এখন ব্যাপারটা উল্টো হয়ে গেল। ও নিজেও আনহার পিছে যেতে ধরল। বাধ সাধল রাইসা। বলল, ‘কোথায় যাচ্ছ?’
‘আসছি। তুমি একটু বসো।’ বলেই আনহার পিছু ছুটল। আনহা ওয়াসরুমে ঢুকে চোখেমুখে পানি ছিটাল। আর নিজের বাচ্চামির জন্য নিজেই নিজেকে কথা শুনাল। ও হয়তো এসবে অভ্যস্ত নয়। তারমানে এখানের মানুষগুলো তো আর ওর মতো নয়। শুধু শুধু রিয়েক্ট করে নিজেকে হাসির পাত্র বানাল। সবাই কেমন একটা দৃষ্টিতে দেখছিল। যেন কোনো এক জঙ্গল থেকে অদ্ভুত জীব উঠে এসেছে। হঠাৎ আয়নায় দিকে চোখ পড়তেই ইহানকে দেখতে পেল। মুহূর্তে রাগটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। ও গিয়ে ঠাস করে ইহানের গালে একটা চড় বসিয়ে দিল। ওর শার্টের কলার ধরে বলল, ‘নিজের সাথে আমার পার্থক্যটা কি ভুলে গেছ অয়ন? তুমি আমার সাথে ফাজলামি, ইয়ার্কি যাই কোরো তার একটা লিমিট রাখা উচিত ছিল। আমি তোমার বয়সে বড়। আজকের ব্যাপারটা খুব বেশীই বাজে ছিল।’
ইহান কোনো কথা বলল না মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। ইহানের নীরবতায় আনহার রাগটা আরও বেড়ে গেল। ও রাগে ইহানকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিতে চাইল। কিন্তু ইহান দূরে গেল না। আনহার হাত ধরে টেনে ওকে দেয়ালে সাথে লাগিয়ে দু’হাত শক্ত করে ধরে বলল, ‘আপনি জাস্ট আমার তিন বছরের বড়। আর সেটা কেউ বলবেই না যে আপনি আমার বড়। আপনাকে দেখে আমাদের বয়সের তফাৎ করা যায় না। আর তাছাড়া কী আসে যায় বলুন তো কে বড়? কে ছোট?’
আনহা দ্বিধান্বিত চোখে ইহানের দিকে তাকিয়ে রইল। ইহান কী মিন করতে চাইল বুঝল না। ওর হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলল, ‘কী বলতে চাইছ তুমি?’
আনহার সিরিয়াস মুড দেখে ইহান তৎক্ষনাৎ নিজের ভঙ্গিমা পাল্টে ফেলল। শক্ত চোয়ালকে স্বাভাবিক করে সফটভাবে হেসে উঠল। সেই হাসিতে দমে গেল আনহা। কেন জানি হাসিটা খুব চেনা লাগল। যেন তা আগেও দেখেছে। কিন্তু মনে করতে পারল না।
আনহার এমন সংশয়িত দৃষ্টিতে ইহান হালকা ফু দিল ওর কপালে। আনহা চোখ বিরক্তিতে চোখ বন্ধ করতেই ইহান ওর ডান গালে বাচ্চাদের মতো করে একটা পাপ্পি দিয়ে নাক দিয়ে ঘঁষে দ্রুত আনহাকে ছেড়ে দিল। আনহা হা করে বিস্ফোরিত চোখে ইহানের দিকে তাকাতেই ইহান লজ্জায় দু’হাতে মুখ ঢেকে বলল, ‘আনহা আনহা প্লিজ এভাবে আমার দিকে তাকাবেন না। আমার লজ্জা করছে।’
‘মানে!’ জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে জানতে চাইল আনহা।
কিন্তু ইহান যেন লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। আনহার দিকে তাকাতেই পারছে না। মেয়েদের মতো নখ কামরে নিচের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘অনেক শখ ছিল সিনিয়র আপুকে কিস করব। আজ করে দিলাম। আপুদের রাগলে ভালো লাগে। আপনাকে কিউট লাগছিল। তাই পাপ্পিটা দিয়ে শখটা মিটিয়ে নিলাম। কিছু মনে করবেন না।’
‘এই তুমি কী পাগল হয়ে গেছ?’ ভুত দেখার মতো রিয়েলশন দিয়ে বলল আনহা।
‘আপনাকে টিজ করার জন্য বড়দের মতো আমাকে শাসন করে থাপ্পড় মেরেছেন। তাই আমি ছোটদের মতো রাগ ভাঙাতে কিসি করে দিলাম। উম্মা… ফ্লায়িং পাপ্পি এটা… ইসস কী লজ্জা!’
বলেই ইহান দৌড়। আনহা মুখের হা বজায় রেখে বলল, ‘এটা কেমন রাগ ভাঙানো, আর ওটাই বা কেমন লজ্জা!’
.
.
.
.
.
.
.
.
[ বাকিটা পরের পর্ব গুলোতে জানবেন ]
ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। চেক করার সুযোগ হয়নি।