আপনিময়_তুমি 2 Part-21

0
1642

#আপনিময়_তুমি?[ An unbearable Crazy love]
#Season: 02
#Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr[Mêhèr]
#Part: 21

ধুরঃ বাল আগে বল আনহারে নিয়া যাবি কেমনে?’

ইহান দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ল। বলল, ‘তুই শুধু জিপ নিয়া রেডি থাক। কেমনে বউ নিয়া ভাগী…’

তখনি বিয়ের জন্য ডাক পড়ে। কাজী সাহেব বউ সবকিছু রেডি করে বউয়ের কাছে কবুল বলানোর জন্য যাচ্ছে।

‘ঐ সালা আনহা তো কবুল বইলা দিব। এখন কী করমু?’ জিহামের হাত খামচে বলল ইহান।

‘ওরে বাবা ছাড় ব্যথা পাচ্ছি৷ আর আমি কেমনে জানতাম। সালা আরেকটু আগে আসলে টাইম পাইতাম না।’ দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল জিহাম।

-‘নাঃ, যা চাই নাই, তাই করতে হবে দেখছি।’

‘কী করবি এই সময়?’ দ্বিধান্বিত হয়ে জানতে চাইল জিহাম।

ইহান করুণ চোখে আনহার দিকে তাকায়। ছোট একটা নিশ্বাস ফেলে বলে, ‘আমি মইরা গেলে মাফ করে দিস দোস্ত।’

‘মানে…’

কিন্তু জিহামের কথার আর কোনো প্রত্যুত্তর ইহান করল না। আনহার দিকে এগিয়ে গেল। কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করে দিয়েছে। ঠিক তখনি সবার সামনে থেকে আনহাকে বিয়ের আসর থেকে জোর করে হাত ধরে টেনে তুলল। হকচকিয়ে গেল আনহা। জিহাম থ। শুকনো ঢোক গিলে বলল, ‘সালা তুই তো মরবি লগে আমারেও মারবি। এভাবে সবার সামনে…’

ইহান কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আনহাকে জড়িয়ে ধরে। আনহা কি করবে বুঝতে পারছে না। পাথর হয়ে গেছে। চোখে পানি চলে এসেছে। ইহানকে না আঁকড়ে ধরতে পারছে, না ছেড়ে দিতে পারছে। অজান্তেই চোখ দু’টো ছলছল হয়ে বলে ওঠে, ‘ইহান।’

আনহার মুখে নিজের নাম শুনে আরও জোরে জড়িয়ে ধরে আনহাকে। ইহানের সমস্ত দুষ্টামি, দর্শীপণা এক নিমিষে শেষ হয়ে বাচ্চামিতে পরিণত হয়৷ না চাইতেও ফুপিয়ে ওঠে। নিচের ঠোঁট কামরে বলে, ‘আপনি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা কিভাবে ভাবছেন আনহা? আপনার ইহান আপনাকে ছাড়া কিভাবে থাকবে? একটা বারও কি ভেবে দেখেছেন?’

আনহা কিছু বলতে পারল না। আটকে রাখা কান্নাটা ততক্ষণে বর্ষার বাঁধ ভাঙা অশ্রুতে পরিণত হয়েছে। সবকিছু ভুলে ইহানকে জড়িয়ে ধরে।

নতুন বউ নিজের বিয়ের আসরে আরেকটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরেছে। ব্যাপারটা গ্রামীণ পরিবেশে কতটা দৃষ্টিকটু তা হয়তো বলার অপেক্ষা রাখে না। সেখানে রীতিমতো হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে৷ হঠাৎ কোনো কিছুর টানে ইহান ছিটকে পড়ে। পিছনে ঘুরতেই লম্বাচওড়া, সুদর্শন এক যুবককে আবিষ্কার করে। ইহান ভ্রু কুঁচকে তাকায় তার দিকে। মানুষটাকে চেনার চেষ্টা করে। তখনি আনহার মুখে ভয়ার্ত চিৎকার শুনতে পায়। আনহা ‘না মাহিদ বলে চিৎকার করে ওঠে।’

এতক্ষণে ইহান নিজের কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিতে দেখতে পায়। কিছুটা ইতস্তত হয়। আড়চোখে জিহামের দিকে তাকায়৷ জিহাম দাঁত কেলিয়ে হাসে। কারণ ইহানের ধারণা ভুল। মাহিদ দেখতে ইহানের চেয়েও অনেক বেশী হ্যান্ডসাম। আসলে মাহিদের হাইটটা ইহানের থেকে বেশি। এই ৬ফুট ৩/৪ হবে। ইহানের তো ৬ফুট ১। ব্যাপারটা যেন ইহানের ভালো লাগল না। পরক্ষণেই ভাবল শালা মানুষ হিসেবে ছ’ফুটই ঠিক আছি। এর চেয়ে বেশি হলে তো তালগাছ তালগাছ লাগব। গার্লফ্রেন্ড কিস দিতে গেলে দু’এক ফুট নিচে নামতে হবে৷ আচ্ছে বেটায় আনহাকে কিস/টিস। ছিঃ ছিঃ কি ভাবছি?

তখনি একটা লাথি লাগল ইহানের বুকে। ইহান কিছুটা ছিটকে দূরে সরে যায়। আনহা ইহানের কাছে যেতে নেয়। মাহিদ আনহাকে ধরে লোক ডাকে। তারা এসে ইহানকে ধরে নেয়। ইহান ছোটার চেষ্টা করেও পারে না। মাহিদ দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলে, ‘কে তুই? আমার আনহাকে ধরার সাহস পেলি কোথা থেকে? ও আমার স্ত্রী?’

ইহান নিজেকে ছোটানোর চেষ্টা করে বলল, ‘ও তোর স্ত্রী। আর আমার প্রেমিকা। ছোট বেলা থেকে ভালোবাসি ওনাকে। একটা বছর একসাথে থেকেছি। সালা আমার গার্লফ্রেন্ডকে আমার থেকে নিয়ে এসে বলো তোমার বউ। ছেলের হাতের মোয়া।’

কথাটা শুনে মাহিদের মাথায় আগুন জ্বলে উঠল। আনহার এরকম প্রেমিক আছে বলে ওর জানা ছিল না। তাও আবার ছোট বেলার। আনহার দিকে তাকাতেই দেখে ও পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাহিদ ওর কাঁধ ধরে ঝাকিয়ে বলে, ‘আনহা ছেলেটা যা বলছে তা কি সত্যি।’

আনহা কোনো কথা বলতে পারল না। একবার ইহান আরেকবার মাহিদের দিকে তাকায়। নির্বিকার ও।

মাহিদ ধৈর্যচ্যুত কণ্ঠে বলল, ‘কি বলছি আমি? ছেলেটা কি সত্যি বলছে?’

তখনি ইহান চিৎকার করে বলে ওঠে, ‘আনহা I love u. আপনাকে ভালোবাসি আমি। আমি ভেবেছিলাম আমার পাগলামি দেখে আপনি বুঝে নেবেন। কিন্তু না… আপনি আমার পাগলামিগুলোকে ছেলে মানুষী ভেবেছেন। আজ আমি নিরুপায়। তাই বলতে বাধ্য হচ্ছি। ভালোবাসি আপনাকে।’

কথাটা শোনা মাত্রই মাহিদ আনহার হাত ছেড়ে ইহানকে চরম নিষ্ঠুর ভাবে মারতে লাগল। প্রতিটা আঘাতে ইহানের আর্তনাদ যেন আনহার বুকের রক্ত ক্ষরণ করছে। ও ইহানের কাছে যেতে চায়। কিন্তু ওখানের কিছু মহিলা মাহিদের কথায় ওকে ধরে রেখেছে। আনহা চিৎকার করে কাঁদছে। আর মাহিদকে বলছে, ‘প্লিজ ওকে ছেড়ে দেও। ও মিথ্যে বলছে। এরকম কিচ্ছু নয়। প্লিজ ওকে মেরো না।’

এতগুলো লোকের সাথে পেরে উঠছে না ইহান। তবুও অনেক কষ্টে বলছে, ‘আমি সত্যি বলছি আনহা। প্লিজ এবার অন্তত আমাকে বুঝোন। ক্লান্ত হয়ে পড়েছি আমি আপনার বোঝার অপেক্ষায়।’

কথাটা শুনে মাহিদের রাগ আরও বেড়ে গেছে। ইহানকে মারতে মারতে রক্তাক্ত করে ফেলেছে। আরেকটু হলে মরেই যাবে। তখনি লোকজন এসে ওকে আটকায়। মাহিদ নিজেকে শান্ত করে আনহার দিকে তাকায়৷ কিছু একটা ভেবে আনহার কাছে যায়। শক্ত গলায় বলে, ‘এই জন্যই চলে গিয়েছিলি তাই না।’

‘নাঃ।’ মাথা নাড়িয়ে না করল আনহা। কিন্তু মাহিদ শুনল না। ওর হাত ধরে বলল, ‘এখন তুই আমাকে বিয়ে করবি। তারপর তোর আর তোর প্রেমিকে মজা আমি দেখাব।’

বলেই টেনে-হিঁচড়ে আনহাকে নিয়ে যেতে লাগল। কিন্তু আটকে যায়। পিছন ফিরতেই বিস্মিত হয়। এত মার খেয়েও ছেলেটা উঠে দাঁড়িয়েছে। মাহিদ আর কিছু করার আগেই ইহান নিজের পকেট থেকে একটা ছুরি বের করে। মাহিদ আনহার ডান হাত ধরে আছে। তাই ইহান আনহার ডান হাতের বাহুতে ছুরে বসিয়ে নিচের দিকে টান দেয়। তৎক্ষনাৎ হাত কেটে রক্ত বের হতে শুরু করে আনহার। সঙ্গে সঙ্গে মাহিদ ওর হাত ছেড়ে দেয়। তক্ষুণি ইহান ছুরিটা মুখে ধরে নিজের পিঠে শার্টের নিচে লুকিয়ে রাখা গানটা বের করে আনহার কপালে ঠেকায়। আকস্মিক এমন ঘটনায় সবাই থ।

মাহিদ উত্তেজিত হয়ে বলে, ‘এই ছেলে তুমি না আনহাকে ভালোবাস। তুমি আনহাকে আঘাত করলে কেন?’

‘ওরে ভাই না হওয়া দুলাভাইয়ের, হতে যাওয়া সতীন। আমারে কি বাপ্পারাজ মনে হচ্ছে ভালোবাসার মানুষকে আরেকজনের হাতে তুলে দেব। নাকি দিলদার মনে হচ্ছে, ভয় পেয়ে পালাব। আমি বাংলা ছবির নায়ক না। ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর এখন পর্যন্ত একটা ছেলের সাথে ওনি কথা পর্যন্ত বলতে পারে নাই, তোমার সাথে বিয়ে দিমু দেইখা। ক্যা, আমার বুঝি কষ্ট হয় নাই। আনহারে আমি নিয়ে যেতে না পারলে, এখানেই শেষ করে দিয়া যামু। তারপর করিস তুই বিয়া।’

‘দেখো।’

‘চুপ সালা। বেশি কথা কইলে আনহার বদলে তোর পেটে ছ’টা গুলি ঝাইরা দিমু। সর এখান থাইকা।’

‘আচ্ছা আচ্ছা…’ মাহিদ কিছুটা সরে গেল।

ইহান জিহামকে জিপ বের করার ইশারা করল। জিহাম ইশারা পেয়ে চলে যায়। তৎক্ষনাৎ আনহা কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘কী পাগলামি করছিস? চলে যা এখান থেকে। আমার জন্য তোর কোনো ক্ষতি আমি চাই না ইহান।’

কথাটা শুনে বিরক্ত হয় ইহান। বলে, ‘আপনি না চাইলেও কিছু করার নেই। তাই শাবনূরের মতো কান্না কাটি বন্ধ করেন।

আনহার প্রচন্ড ভয় হচ্ছে। কিন্তু নিজের জন্য নয়। ইহানের জন্য। মাহিদ ইহানের সাথে কী করবে জানে না। ইহান বন্দুক দেখালেও আনহাকে আঘাত করবে না সেটা আনহা জানে। আর কোনোভাবে মাহিদ সেটা টের পেলে ওকে আস্তা রাখবে না। তাই আনহা মিনতি করে আবার বলল, ‘প্লিজ ইহান তুই চলে যা।’

‘আনহা চলুন।’

‘ইহান তুই। একটা কাজ কর বন্দুকটা দিয়ে আমাকে মেরে ফেল।’

‘ধুরঃ বাল।’ আনহাকে নিয়ে গেটের দিকে যাচ্ছে। আর ফিসফিস করে বলছে, ‘ইচ্ছে হচ্ছে সত্যি সত্যি আপনাকে মেরে ফেলি। কিন্তু খেলনার বন্দুক দিয়ে তো আর মানুষ মারা যাবে না।’

কথাটা শুনে আনহা বিস্ফোরিত চোখে ইহানের দিকে তাকায়। ইহান অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, ‘এত তাড়াতাড়ি আসল বন্দুক যোগাড় করতে পারি নাই। তাই রাস্তা দিয়ে আসার সময় ৬০টাকা দিয়ে খেলনার বন্দুক কিনা আনছি। আসল বন্দুকের মতো দেখতে বইলা। বাকিটা আপনার উপর। আপনি কি করতে চান।’

আনহা করুণ চোখে মাহিদের দিকে তাকায়। এবার ভয় হচ্ছে। এই ছাগলটা কী বলবে বুঝতে পারছে না। শেষ পর্যন্ত খেলনার বন্দুক! এখানে যদি কেউ ঘুনাক্ষরেও এই কথা জানতে পারে সর্বনাশ হবে।

তৎক্ষনাৎ ইহান বলল, ‘আনহা আপনার পায়ে ধরি, প্লিজ ন্যাকামি বন্ধ কইরা চলেন। বেশি তিরিং বিরিং করলে আমারে গুলি চালাইতে হইব। যা করলে মরা ছাড়া উপায় নেই। প্লিজ চলেন। এই বয়সে মরার শখ নেই। কম করে হলেও আমার তিনটা বাচ্চার বাপ হতেই হইব। বাজি ধরছি। তাই বলছি চলেন।’

আনহা কিছু বলতে পারছে না। ধম নিতে কষ্ট হচ্ছে। ইহানের কথা শোনার চেয়ে বোধহয় বিষ খাওয়া বেটার ছিল।

আনহার নীরবতায় ইহান আবার বলল, ‘আনহা আপনার বিয়ে করার শখ থাকলেও আমার মরার ইচ্ছে নাই। তাই পায়ে ধরতাসি চলেন।’

তৎক্ষণাৎ গেটের কাছে যায়। জিহাম জিপ স্টার্ট দিয়ে দাঁড়িয়ে। ইহান বাইরে বেরিয়ে আনহাকে গেটে তালা লাগাতে বলে। আনহা তালা লাগাতেই ইহান আনহাকে জিপে তুলে মাহিদকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘ভাই তুই ভুল মানুষের সাথে পাঙ্গা নিয়েছিস। আমি ভাই মানুষ ভালা না। আমি….। তারপর জানি কী ছিল? জিহাম ডায়লজ ভুলে গেছি।’

কথাটা শুনে আনহা সজোরে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। জিহামকে তাড়াতাড়ি যেতে বলে ইহানের কলার ধরে বলে, ‘সালা খচ্চর পোলা। ডায়লক বাজি কম কর। এতকিছু কইরাও তোর শিক্ষা হয়নাই?’

এই কান্ডে সবটা যেন সবার মাথার উপর দিয়ে গেল। কী হতে কী হয়ে গেল?

.
.
.
.
.
.
.
[বাকিটা পরের পর্ব গুলোতে জানবেন ]
???