আপনিময়_তুমি 2 Part -22

0
1869

#আপনিময়_তুমি?[ An unbearable Crazy love]
#Season: 02
#Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr[Mêhèr]
#Part: 22

বেশ কিছুটা এগিয়ে গাড়ির রাস্তায় উঠতে জিহাম থেমে গেল৷ আনহা আর ইহানকে জিপ থেকে নামতে বলে। ওরা প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকায়। জিহাম চিন্তিত মুখে বলে, ‘ওরা আমাদের পিছে ধাওয়া করছে। কিছুক্ষণের মাঝেই পৌঁছে যাবে। আর যদি একবার নাগাল পায় তাহলে কোনোভাবেই আনহাকে নিয়ে যেতে পারব না। তাছাড়া তোকেও ছাড়বে না। ওরা আমাকে খেয়াল করেনি। চেহারা ভালোভাবে দেখেছে কি না জানিনা। আমি জিপ রেখে যেতে পারব না। তোরা বরং সিএনজিতে করে এখান থেকে স্টেশনে যা। সেখান থেকে ট্রেনে ঢাকায়। আমি ওদের অন্য দিকে নিয়ে যাই।

‘কিন্তু এতে তোর রিক্স হয়ে যাবে জিহাম।’

‘হ্যাঁ, জিহাম। প্লিজ এমন কোরো না। আমাদের সাথে চলো৷’ সশঙ্কিত হয়ে বলল আনহা।

জিহাম হেসে বলল, ‘তুমিও কি ইহানের মতো অবুঝ হয়ে গেলে আনহা৷ পরিস্থিতিটা বুঝতে চাইছ না কেন? একসাথে থাকলে তিনজনই ধরা খাব। আর আলাদা গেলে আমাকে সন্দেহ করার চান্স আরও কমে যাবে। আমার সাথে তোমাদের না দেখলে ওরা আরও বেশী বিভ্রান্ত হয়ে যাবে, তোমরা যে জিপে গেছে সেটা এটাই কি না?’

‘কিন্তু…’

‘জিহাম ঠিকি বলছে আনহা। আমাদের আলাদা যাওয়া উচিত।’

‘প্লিজ আনহা…’ বলল জিহাম।

আনহা কিছুটা ভেবে ওদের কথায় সম্মত হয়। তখনি জিহাম অনেকটা দূরে মাহিদের লোকজনের আসার আভাস পায়। জিহাম ওদের দ্রুত সেখান থেকে সরে যেতে বলে জীপে উঠতে চায়। তখনি ইহান ওকে টেনে জড়িয়ে ধরে। জিহাম বিরক্তি নিয়ে ওকে ছাড়িয়ে বলে, ‘পরীক্ষায় ফেল করেছি তাই। নাহলে তোর সিনিয়র থাকতাম সালা। আনহার মতো শুটিং ছেড়ে তাড়াতাড়ি এখান থেকে যা।’

জীপে উঠে জীপ স্টার্ট দেয়। কিছুক্ষণের মাঝেই সেখান থেকে মাহিদের গাড়ি পাস করে। ওরা জিহামের জীপের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। ওরা ওখান থেকে চলে যেতেই আনহা-ইহান রাস্তার পাশের ঝোপ থেকে বেরিয়ে আসে। একটা গ্রামীণ সিএনজি ভাড়া করে জিহাম যেদিকে গেছে ঠিক তার বিপরীত দিকে এগিয়ে যায়।
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
আধ ঘণ্টারর মাথায় ইহান-আনহা স্টেশনে পৌঁছায়। ঢাকার ট্রেন ছাড়ার হুইসেল দিয়ে দিয়েছে। ওরা কোনোমতে দৌড়ে ট্রেনটাকে ধরতে সমর্থ হলো। কিন্তু ট্রেনে উঠে বাঁধল বড় বিপত্তি। না আছে ট্রেনের টিকিট। ইহান নিজের পকেটে হাত দিয়ে দেখে মানিব্যাগ নেই। হয়তো হটকারিতায় কোথাও পড়ে গেছে। আর আনহার কাছে টাকা-পয়সা থাকার প্রশ্নেই আসে না। বিয়েতে তো টাকা নিয়ে বসেনি। তবে আগে থেকে পালানোর কথা জানত তাহলে বোধহয় টাকা নিয়ে আসত। কিন্তু এখন কী হবে? টি. টি. যদি এই কথা জানতে পারে তাহলে তো সর্বনাশ। এদিকে আনহা বিয়ের বেনারসিতে বউ সেজে রয়েছে। ইহান তো রক্তাক্ত। তখনি কারও ডাক শুনতে পেল ইহান। পেছন ফিরতেই চমকে ওঠে। এ তো ট্রেনের টি. টি। ইহান ভয়ে ভয়ে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি লোকটি চশমার ভেতর থেকে আড়চোখে আনহা আর ইহানকে দেখল। কিছু একটা লিখতে লিখতে গম্ভীর কণ্ঠে বলল, ‘বাড়ি থেকে পালিয়ে যাচ্ছ বোধহয়।’

ইহান আর আনহা নিজেদের মুখ চাওয়া-চাওয়ী করল। কিন্তু লোকটি তাতে ভ্রুক্ষেপ দেখাল না। বিরক্তি ঝরা কণ্ঠে বলল, ‘তোমাদের দেখেই বোঝা যাচ্ছে প্রেমিক-প্রেমিকা। বাবা-মা রাজি হয়নি বলে মেয়েকে নিয়ে পালিয়েছ। তোমার রক্তাক্ত হাত-পা তার জানান দিচ্ছে হে ছোকরা। তা মেয়ে আমি কি ঠিক বলেছি?’

আনহা কিছুটা অপরাধীর কণ্ঠে বলল, ‘সরি আমাদের কাছে ট্রেনের টিকিট বা টাকা কিছুই নেই।’

হাসলেন লোকটি। বললেন, ‘আমি কি এসবের কথা জিজ্ঞেস করেছি। তাছাড়া বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় এত খেয়াল থাকে না। জীবনে তো আর কম কিছু দেখলাম না। কত ছেলে মেয়ে এভাবে গিয়েছে-এসেছে তা অগণিত।’ দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লেন তিনি। বললেন, ‘আমি কখনো এমন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার সুযোগ হয়নি।’

‘তাহলে এখন?’ জানতে চাইল ইহান। লোকটি কিছুটা ইতস্তত হয়ে বলল, ‘তোমরা এখানে থাকতে পারবে না। তোমরা বরং ট্রেনের শেষ বগিতে চলে যাও। সেখানে আপাতত কেউ থাকবে না। একা সময় কাটাতে পারবে। তাছাড়া তোমাকে বউয়ের বেশে আর ছেলেটাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখলে।অবান্তর কিছু ভেবে নেবে। তা কখনোই সুখকর হবে না। তাই বলছি।’

আনহা আর ইহান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। অতঃপর তার সাথে পেছনের বগীতে যায়। আসলেই সেখানে কেউ নেই। লোকটি ওদের এখানে থাকতে বলে ওষুধ আনতে চলে যায়। তারপর সেই সরঞ্জাম দিয়ে আনহা নিজের বাহু পরিষ্কার করে। ইহানের কাঁটা জায়গা মুছে এন্টিসেপটিক দেয়।
.
.
.
.
.
.
.
ওদিকে মাহিদের লোকজন জিহামের গাড়ি থামিয়ে চেক করেছে। কিন্তু আনহা আর ইহানকে পায় না। এটাও ভেবে পায় না এই জীপটাই সেই জিপটা কিনা? কারণ জিহাম যাওয়ার সময় কয়েকজনকে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে জিপে ওঠায়।

.
.
.
.
.
.
.
অনেকটা সময় কেটে গেছে। এখন প্রায় মধ্যরাত। ক্লান্তির ধকলে ওখানেই একসময় ঘুমিয়ে যায় আনহা ইহান। কিন্তু বাতাসের দাপটে শিউরে উঠছে আনহা। হঠাৎ ওর ঘুমটা হালকা হয়ে ভেঙে যায় কারও আবছা ডাকের শব্দে। আনহা চোখ মেলে দেখে ইহান কাঁপছে। প্রচন্ড কাঁপছে। আনহা দ্রুত ইহানকে ধরে। তখনি বুঝতে পারে ইহানের শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। ব্যথার কারণে ঝাঁকিয়ে জ্বর এসেছে ইহানের। যদিও ব্যথার ওষুধ খাইয়েছিল। টি. টি লোকটি এনে দিয়েছিল। কিন্তু তবুও জ্বর আসছে। ইহান শীতে রীতিমতো কাঁপছে। আনহা কুল-কিনারাহীণ ভাবে ইহানকে জড়িয়ে ধরে। শাড়ির আঁচল দিয়ে ইহানকে আগলে নেয়। তখনি ইহান ঘোর কণ্ঠে বেঁধে যাওয়া কণ্ঠে আনহাকে ডেকে উঠে। আনহা কান্নারত অবস্থায় বলে, ‘কী হয়েছে ইহান? তোর কষ্ট হচ্ছে? আমি বরং টি. টি আংকেলকে ডেকে আনি।’

আনহা উঠে যেতে চাইলে বাধ সাধে ইহান। বলে, ‘আপনি জানেন আনহা আমি আপনাকে ভালোবাসি? সেই ছোট্ট বেলা থেকেই আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনি জানেন?’

আনহা স্তব্ধ হয়ে গেল৷ এর কি উত্তর হবে ভেবে পেল না। কিন্তু তবুও নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল, ‘জানি তো। ছোটবেলা থেকে তুই আমাকে জ্বালাস। ভালোবাসা না থাকলে কি জ্বালাতি?’

কথাটা শুনে বিদ্রুপাত্মক হাসল ইহান। বলল, ‘আপনি আবার ভুল ভাবছেন আনহা। আমি এই ভালোবাসার কথা বলিনি। আমি তো…’ ব্যথায় কুঁকড়ে উঠল ইহান। আনহাকে অস্থির হতে দেখেই বলল, ‘আচ্ছা আনহা আমাদের মাঝে কি অন্য ধরনের সম্পর্ক হতে পারে না। আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের যেমন হয়।’

আনহা চুপ। ইহান তাতে আবার বলল, ‘আমি না জানিনা আনহা আপনার প্রতি আমার কিসের এত টান। আপনি আমাকে ছেড়ে চলে গেলেও বিশ্বাস করেন আমি একদিনের জন্যও আপনাকে ভুলতে পারেনি৷ বার বার কেবল এটাই মনে হতো কবে আপনার সাথে আমার দেখা হবে। আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করব কেন মিথ্যে বলেছিলেন সেদিন।’

‘কেন মিথ্যে বলেছি শুনবি।’ হাসল ইহান। বলল, বলতে হবে না বড় হওয়ার সাথে সাথে বুঝে গেছি। কিন্তু এটা এখনো বুঝলাম না—আপনি আমার কে? কী সম্পর্ক আমার আপনার সাথে। সেদিন যখন ভার্সিটিতে আপনার সাথে দেখা হয়েছিল, আপনি জানেন না আমার অবস্থা কেমন ছিল। কতটা খুশি ছিলাম আমি। তারপর যখন আমার দেওয়া লকেটটা আপনাকে এতটা যত্নে রেখে দিতে দেখি না চাইতেও মনে একটা লোভ জন্ম নেয়।’

‘কিসের লোভ?’ দ্বিধান্বিত হয়ে জানতে চাইল আনহা।
.
.
.
.
.
.
.
.
[বাকিটা পরের পর্ব গুলোতে জানবেন।]