#আপনিময়_তুমি?[ An unbearable Crazy love]
#Season: 02
#Written_By_Åriyâñà_Jâbiñ_Mêhèr[Mêhèr]
#Part: 24
রাত্রির বিন্দু বিন্দু জানা জ্বলে ওঠা আলোর নিচে বসে আছে ইহান। সকালে বলা আনহার কথা গুলো ভাবছে। এখন ভাবছে বললে ভুল হবে। সারাটা দিনই ভেবেছে। ভেবেই চলেছে। কিন্তু কোনো কিছুর দিক ঠিক করতে পারছে না। কী করবে? কী না করবে? মাহিদকে দেখে যতটুকু বুঝেছে ও আনহাকে এমনি এমনি ছাড়বে না। এমনি এমনি বললে ভুল হবে; ও আনহাকে ছাড়বে বলে মনে হয় না। কী করে বাঁচাতে ও মাহিদের হাত থেকে আনহাকে হাজার চিন্তা-ভাবনার পরেও তাঁর যেন দিশা করতে পারল না।
সহসা ওর কাঁধে হাত রাখে কেউ। ইহান চমকে তৎক্ষনাৎ তাকায় তার দিকে। ক্ষীণ কণ্ঠে বলে উঠল, ‘বাবা তুমি?’
আসাদ এসে ছেলের পাশে বসলেন। বললেন, ‘অলরেডি ১২টা বেজে গেছে৷ তুই এখানে বসে বসে কী ভাবছিস? আমি সারাটা বাড়ি খুঁজেও তোকে পেলাম না। শেষ-মেষ ছাদে এসে দেখি তুই এখানে বসে আছিস?’
‘এমনি ভালো লাগছিল না। তাই।’
‘আনহাকে সেফ করার কথা ভাবছিস?’
‘নাহঃ’
‘তাহলে…’
‘ভাবছি তোমার একটা ভুলের কারণে আজ আমার হাত-পা বাঁধা হয়ে গেল।’
ইহানের এ-কথায় কিছুটা অবাক হলেন আসাদ। প্রশ্নসূচক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমার জন্য তোর আবার কী হলো?’
ইহান ছোট একটা শ্বাস ছেড়ে সামনের দিকে তাকিয়ে রোবটের ন্যায় বলতে শুরু করে। ‘আমার জানা মতে আনহার বাবার এক বছর আগে তোমার সাথে মায়ের বিয়ে হয়েছে। তাহলে আমার প্রশ্ন আমি কেন আনহার তিন বছরের ছোট হলাম। পরিসংখ্যানিক হিসেবে আমার তো আনহার চেয়ে এক বছর বড় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা নাহয়ে উল্টে ৩বছরের ছোট হয়ে গেলাম। মানে ৪বছরের গেপ কেন?’
ইহানের প্রশ্নে কিছুটা ইতস্তত হলেন আসাদ। এমন প্রশ্ন কেউ বাবাকে করে? অন্য কেউ হলেও মানা যায়। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ‘হঠাৎ এমন উদ্ভট কথা ভাবছিস কেন?’
বাবার এ-কথায় হঠাৎ করেই ইহানের মেজাজ গরম হয়ে আসে। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ‘কেন? কেন বলছি এই কথা? কারণ একটাই তোমার জন্য আজ আমার এই পরিস্থিতি।’
ভ্রু কুঁচকায় আসাদ৷ ইহানের কথার মানে উদ্ধার করতে চাইছে। ছেলে যে পাগল ছিল তা একটু আধটু জানতো। কিন্তু এখন বুঝে গেছে ছেলের মাথা পুরোপুরি গেছে।তিনি কিছুটা অবুঝ ভঙ্গিমায় বললেন, ‘আমার জন্য তোর এই পরিস্থিতি মানে? কী বলতে চাইছিস তুই? আর কোন পরিস্থিতির কথাই বা বলছিস?’
ইহান গর্জে ওঠে বলল, ‘এটাই আমি যদি আনহার আগে দুনিয়ায় আসতাম তাহলে তো এত ঝামেলাই হতো না। সোজা গিয়ে আনহাকে বলতাম…’ পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই থেমে গেল ইহান। কিছুটা ইতস্তত হলো।
ইহান না বললেও আসাদ ওর বাকি কথা বুঝে নিলেন। বললেন, ‘কী বলতি আনহাকে?’
ইহান রাগী চোখে বাবার দিকে তাকায়। বলে, ‘এটাই বলতাম—আনহা আপনি মাহিদ-ফাহিদকে ছাড়ুন আমাকে বিয়ে করে আমার বউ হয়ে যান। তারপর দেখি কোন মাহিদের কত সাহস আছে আপনাকে আমার কাছ থেকে কে আলাদা করতে পারে?’
‘এখন বলতে পারবি না?’ প্রশ্ন করলেন আসাদ।
ওনার প্রশ্নে কিছুটা ইতস্তত হয় ইহান। বাবার কথার মানে উদ্ধারে ব্যর্থ হয়। দ্বিধান্বিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, ‘কী বলতে চাইছ বলত?’
‘এটাই তুই আনহার চেয়ে বড় হলে ওকে প্রটেক্ট করার কথা বলতি। এখন পারবি না। তুই আনহার বয়সে মাত্র তিনবছরের ছোট। কিন্তু বয়সে যথেষ্ট হয়েছে। এই বয়সেই নিজের বিয়ের কথা বলিস। বাচ্চা কাচ্চার স্বপ্ন দেখিস। অথচ একটা মেয়ের নিরাপত্তা করতে পারবি না। এটা তো কোনো কথা হতে পারে না। তাই না?’
এবারেও বাবার কথা ইহান স্পষ্ট বুঝতে পারল না। বাবার কথার যে মানে ওর সামনে আসছে তা যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। কিন্তু ওনি মজা যে করবেন না তাও ওনার কাছে স্পষ্ট।’
সহসা আসাদ ইহানকে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে দিলেন। আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আনহাকে তোর কেমন লাগে বলত? মানে আমি যদি ওর জন্য একটা ছেলে ঠিক করি; তাহলে ঐ ছেলেকে আনহার ভালো খারাপ গুনগুলোর কথা বলতে হবে। তখন কী বলব?’
আসাদের কথায় ইহানের মুখ বিবর্ণতায় ছেয়ে যায়। কিছুটা স্তম্ভিত কণ্ঠে বলে, ‘তুমি আনহার জন্য ছেলে ঠিক করবে নাকি?’
‘এখনো তেমন চিন্তা-ভাবনা নেই। কিন্তু করতেও পারি। আনহার মতো মেয়ের জন্য পাত্র খুঁজে পেতে আমাকে বেশী কষ্ট করতে হবে না তা আমি জানি। তবে ওরকম একটা মেয়ের জন্য যোগ্য পাত্র খোঁজা আসলেই কঠিন হবে। তা বর্তমান ছেলেরা তো তোর স্বভাবেরই বেশী হয়৷ তুই আনহার ভালো-মন্দের বর্ননা দে না। ওর কথা নাহয় আজ তোর কাছেই শুনলাম।’
ইহান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সামনে তাকায়। নির্লিপ্ত নয়নে বলে, ‘কী বলব বলতো? ছোট বেলা থেকেই ওনার সবকিছুই আমার ভালো লাগে। ওনার বিরক্তও আমার ভালো লাগে। ওনার রাগও আমার ভালো লাগে। ভয় পেলে বোধহয় তাকে আরেকটু বেশীই সুন্দর লাগে। একদম ডলের মতো। সবসময় শান্ত-স্থীর ভাব। যেন প্রশান্তির নীর। যতই রাগ থাকুক বা মেজাজ খারাপ। আনহার মুখের এক হাসির ঝলকে সব শেষ। আর… ‘
আসাদ এতক্ষণ ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে ওর কথা শুনছি। তারপর ইহানকে থামিয়ে বলল, ‘হয়েছে হয়েছে থাম। আমি আনহার ভালো-খারাপ গুনের কথা বলেছি। ওকে নিয়ে কবিতা বলতে না। এসব গিয়ে আমি কি কোনো ছেলের সাথে বলতে পারব? আজব তুই ও না।’
রেগে গেল ইহান। আবার বাবার পাশ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘,তাহলে আমার কাছে জিজ্ঞেস করছ কেন? নিজেই খুঁজে নেও না ভালো-খারাপ গুন।’
‘তুই রাগ করছিস কেন? আমি তো… ‘
‘অনেক হয়েছে আর না। কোথাও গিয়ে একটু শান্তি নেই। কথাগুলো বলে বিরক্তি প্রকাশ করে চে গেল ইহান।
ইহান চলে গেলে আসাদ বসে পড়ে। গম্ভীর হয়ে ভাবে, আনহার প্রতি ইহানের ফিলিংস শুধু বন্ধুত্বের নয়। তারচেয়েও বেশী কিছু। কিন্তু ছেলে এটা মানতে পারছে না। আবার অস্বীকার করতেও পারছে না। দুইয়ের দ্বিধা-দ্বন্ধের মধ্যে রয়েছে। বয়সের ফারাকটা ইহান ঠিক পেরিয়ে উঠতে পারছে না।
তখনি আনহার কথা মাথায় আসে। আচ্ছা, আনহার মনে কি ইহানের প্রতি শুধুই স্নেহ কাজ করে অন্য কিছু নয়। নাকি ইহানের ভয়, ওর দ্বন্দ্বে পরিণত হয়েছে।
আসাদ গুলিয়ে গেলেন ঠিক ভুলের বিচারে। দু’দিকের বিচারে আলাদা আলাদা ফলাফল পাচ্ছে। তাছাড়াও কোনটা যে ইহানের জন্য ঠিক সেটা নিয়েও দ্বিধায় ভুগছেন। কিছুই ভেবে পেলেন না। সর্বশেষে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।
.
.
.
.
.
.
.
.
সকালে ইহান এক্সারসাইজ করার জন্য ছাদে যেতেই দেখে আনহা রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ইহান ওর পাশে দাঁড়িয়ে বলে, ‘মরার কথা চিন্তা করছেন লাফ দিয়ে?’
এ-কথায় আনহা শান্ত সুরে ইহানের দিকে না তাকিয়ে জবাব দিল। ‘মরার হলে এক বছর আগেই ট্রাই করতাম। এত কিছুর পরেও বেঁচে থাকতে চাইতাম না।’
‘কেন চাইছেন বাঁচতে?’
এবার আনহা ইহানের দিকে তাকায়। তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে, ‘বাঁচতে যাওয়ার কোনো নির্দিষ্ট কারণ নেই। মরতে চাই না তাই বেঁচে আছি। চড়াই-উতরাই তো থাকবেই। তাই বলে মরে যাব।’
‘হুমম। কিন্তু কী জানেন? আমার ইচ্ছে হচ্ছে আপনাকে মেরে ফেলতে?’
প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকায় আনহা। ইহান বলে, ‘এসব ভেজাল আমার ভালো লাগছে না। ঝামেলার চেয়ে ভালো আপনাকেই মেরে ফেলি। ঝামেলাই চুকে যাক।’
কথাটা শুনে আনহা কিছু বলল না। নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ভাবিস না আমি কোনোদিন কারও ঝামেলা হয়ে থাকতে শিখিনি। আমি আজ বিকেলেই চলে যাব।’
‘কোথায় যাবেন মাহিদের কাছে? আপনার মাও তো আছে?’
‘মাকে নিয়ে চিন্তা নেই আমার। আমি জানি মাহিদ ওনাকে কিছু করবে না। মা ভালোই থাকবে। আর যাওয়ার কথা যদি বলিস, ভার্সিটির শেষের দিন আমি চলে যেতাম। ঢাকার বাইরে থাকা-খাওয়া, আর একটা চাকরির ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু চলে যাওয়ার আগেই…’
‘আনহা আপনি এখানেই থাকবেন আমি আসছি। কোথাও যাবেন না এখানেই থাকবেন।’ আনহার কথা শেষ হওয়ার আগে কথা বলে দৌড়ে কোথাও চলে গেল ইহান। ব্যাপারটাই বুঝতে পারল না আনহা। তৎক্ষনাৎ খেয়াল করল বাড়ির সামনে পুলিশের গাড়ি। কিন্তু…
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
ইহান নিজেদের ফ্লাটে গিয়ে দেখে সেখানে মানুষ ভরপুর। মাহিদ পুলিশ নিয়ে এসেছে। ইহানকে দেখেই তেরে এসে বলল, ‘ইন্সপেক্টর এই সেই ছেলে যে আমার ওয়াইফকে কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছে।’
‘মিথ্যে বলছে ও। আমার ছেলে কিছু করেনি। আনহা নিজে…’ অপর্ণার কথা শেষ হওয়ার আগেই আনহা সেখানে উপস্থিত হয়। তৎক্ষনাৎ অপর্ণা ওকে টেনে সবার সামনে নিয়ে যায়। রাগী কণ্ঠে বলে, ‘এই মেয়ে তোমার জন্য আমার ছেলে।’
তৎক্ষনাৎ মাহিদ এসে আনহার হাত ধরে। বলে, ‘তুই এই মুহূর্তে আমার সাথে যাবে। আর ঐ ছেলেটা জেলে।’
ইহান কিছু বলতে গেলে থামিয়ে দেন আসাদ। বললেন, ‘মি. মাহিদ আমার ছেলের অন্যায়টা কী বলতে পারেন?’
‘আমার স্ত্রী কে জোরপূর্বক কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছে।’
‘কিন্তু আমার জানা মতে আনহা সেচ্ছায় আমার ছেলের সাথে এসেছে। কি আনহা?’
শঙ্কিত আনহা ঢোক গিলে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানাল। তৎক্ষনাৎ ইন্সপেক্টর বলে উঠলেন, ‘আরেকজন ওয়াইফকে নিয়ে আসাও অপরাধ।’
‘কিসের স্ত্রী আনহা যদি ওনার স্ত্রী হতো তাহলে তিনি আবার ওকে বিয়ে করতে চাই তো কেন? মি. মাহিদ আপনার সাথে আনহার বিয়ের কোনো প্রুভ আছে?’
এ-কথায় কিছুটা দমে গেল মাহিদ। গ্রামের সবাইকে বুঝিয়েছি ঠিকি বিয়ের কথা। কিন্তু মিথ্যে কাগজ পত্র দিয়ে এদের বোঝানো যাবে না। তাছাড়া আনহা নিজেও আছে। পরে নিজেই ফেসে যাবে।
তৎক্ষনাৎ মাহিদের পক্ষে আনহার দূরসম্পর্কের মামা আরমান বললেন, ‘বিয়ে না হলেও হওয়ার কথা ছিল। আর এভাবে বিয়ে থেকে মেয়ের গলায় চাকু ধরিয়ে আনা অন্যায়।’
‘তাই যদি হতো তাহলে আনহা চলে যেত। কিন্তু ও নিজেই বলেছে ও সেচ্ছায় এসেছে।’ বললেন আসাদ।
‘তাহলে ওর গার্জিয়ান হিসেবে আমি আমার ভাগ্নীকে নিয়ে যাব। এটাতে আমার অধিকার আছে।’ বলেই আনহার হাত ধরলেন। কিন্তু বাধ সাধলেন আসাদ। বললেন, ‘প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের মতের বিপক্ষে তাকে নিয়ে যাওয়া অন্যায়।’
‘কিন্তু আমার প্রাপ্ত বয়স্ক ভাগ্নীকে আমি এখানে কেন রাখব।’
তৎক্ষনাৎ আসাদ বলে উঠলেন, ‘কারণ এটাই আনহার ভবিষ্যৎ ঠিকানা। আমার ছেলে ইহান ও আনহা একে-অপরকে ভালোবাসে। তাই ওরা পালিয়ে আমার কাছে এসেছে। যাতে আমি ওদের বিয়ে দেই।’
কথাটা শুনেই সেখানের সবাই স্তব্ধ হয়ে গেল। অপর্ণা তেড়ে এসে বললেন, ‘কী বলছ তুমি এসব? ইহান…’
থামিয়ে দিলেন আসাদ। ইহানের কাছে গিয়ে বললেন, ‘আনহাকে আমার ছেলের বউ হিসেবে বানাবি ইহান। বাবা হিসেবে তোর কাছ থেকে কিছু চাইছি আমি। দিবি?’
কথাটা বলেই ইহানের হাত ধরলেন আসাদ। ইহান বিস্ফোরিত চোখে আসাদের দিকে তাকায়। ওর কী জবাব দেওয়া উচিত ঠিক করতে পারল না। বিয়ে তাও আনহাকে! কিভাবে সম্ভব? তাছাড়া আনহা…!
.
.
.
.
.
.
.
.
.
[বাকিটা পরের পর্ব গুলোতে জানবেন ]