আমার আসক্তি যে তুমি Part- 56

0
3651

#আমার_আসক্তি_যে_তুমি
#Part_56
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
?
১০ বছর পর,
.
ড্রয়িংরুমে অবস্থিত একটি সোফায় বসে আছি আমি। সন্ধ্যা প্রায় নেমে এসেছে। পাখিরা ফিরে যাচ্ছে তাদের নীড়ে। সূর্য মামাও এখন অবসান নেওয়ার পুরো প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। গ্রীষ্মের অসহ্যকর গরমে হাপিয়ে উঠেছি আমি। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। রুমাল দিয়ে আমি ঘামটা মুছে নিলাম। ভিতরে কেমন যেন এক অস্থিরতা কাজ করছে। চিকন ফ্রেমের চশমার মধ্যে দিয়েই চোখ জোড়া দুটো কাউকে যেন দেখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে তাই আমি বার বার চারপাশে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছি। হয়তো একটু তৃপ্তির আশায়। তখনই কেউ এক গ্লাস ঠান্ডা কোকাকোলার গ্লাস আমার সামনে তুলে ধরে। আমি মাথা তুলে তার দিকে তাকিয়ে দেখি আরিশা এক মিষ্টি হাসি দিয়ে গ্লাসটা এগিয়ে দিচ্ছে। বিপরীতে আমিও এক মিষ্টি হাসি দিয়ে গ্লাসটা হাতে নেই।
আরিশা এইবার আমার পাশেই বসে পড়ে। তারপর বলে,
.
— তা কেমন চলছে দিনকাল তোর?
.
— এইতো। তোর! গ্লাসে চুমুক দিয়ে।
.
— এই আর কি! স্বামী, বাচ্চা, ক্লিনিক নিয়ে আছি কোন রকম। ভাগিস সিয়াশা শান্ত-শিষ্ট বলে। তা না হলে ওকে সামলাতে গিয়ে আমার জান চলে যেত। যেমন এখন রিংকির যাচ্ছে। কিছুটা শব্দ করে হেসে।
.
আমি হাল্কা হেসে বলি,
— সিয়াশার তো শান্ত হওয়ার কথাই। তুই আর সিয়াম ভাইয়া দুইজনেই শান্ত-শিষ্ট তাহলে সিয়াশা শান্ত না হয়ে কি অশান্ত হবে বল? চারদিকে একটু চোখ ঘুরিয়ে।
.
— সিয়াম আর শান্ত! সিয়াশার চেয়ে তো সিয়াম আমাকে বেশি জ্বালায়। সকাল হতেই তার ডাক শুরু হয়। এইটা পাচ্ছি না, ওইটা পাচ্ছি না, এইটা কোথায়, ওইটা কোথায়? উফফ! আমার ছাড়া যে এর কি হবে?
.
তখন পিছন থেকে কেউ বলে উঠে,
— আর কি হবে? তোমায় ছাড়া আমার নৌকা ডুবে যাবে৷ মরে যাব আমি।
.
তখন আমি আর আরিশা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি ড. সিয়াম দাঁড়িয়ে আছে। ঠোঁটের কোনে তার বাঁকা হাসি। গায়ের থাকা সবুজ শার্টটি ঘামে ভিজে একদম শরীরের সাথে লেগে গিয়েছে। কপাল বেয়েও টুপ করে ঘাম ঝড়ে পড়লো। আমি ড. সিয়ামকে দেখে হাল্কা হেসে বলি,
.
— কেমন আছেন ভাইয়া?
.
— কি আর বলবো শালিকা সাহেবা। খুব বাজে অবস্থায় আছি। তোমার প্রাণ প্রিয় বান্ধবীটা আমার একদমই খেয়াল রাখে না। তাহলে বলো আমি কিভাবে ভালো থাকতে পারি? দুঃখী দুঃখী একটা ভাব নিয়ে।
.
আরিশা এইকথা শুনে সিয়াম ভাইয়ার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকায় তারপর কর্কশ গলায় বলে,
— কি বললা তুমি?
.
আমি এদের কান্ড দেখে মুচকি হেসে বলি,
— তা ভাইয়া বলছি কি! আমার বান্ধবী যখন আপনাকে এতই বাজে অবস্থায় রেখেছে তাহলে ওকে আমার সাথে আজ নিয়ে যাই?
.
তখনই সিয়াম আতঙ্কিত গলায় বলে উঠে,
— এই না না! ওকে ছাড়া আমি জ্ঞান হারাবো মরেই যাব, বাঁচাতে পারবে না কেউ।
.
এই শুনে আমি আর আরিশা ফিক করে হেসে দেই। আমি বলি,
— থাক ভাইয়া বুঝেছি। ওকে নিয়ে গেলে আপনাকে মনে হয় আর খুঁজেই পাওয়া যাবে না।
.
— এইতো আমার শালিকা বুঝেছে আমার মনের কথা। ভাব নিয়ে।
.
আমি মুচকি হেসে চারদিকে চোখ বুলাতে থাকি তা দেখে আরিশা কিছুটা অনুমান করতে পেরে বলে,
— তুই যাকে খুঁজছিস সে পাশের রুমে গাল ফুলিয়ে বসে আছে। সিয়াশা গিয়েছিল ওর কাছে ওকে মানাতে কিন্তু জানিস এই তো ওর রাগ বরাবরই বেশি। তাই সিয়াশার সাথেও কথা বলে নি সে।
.
আমি এইবার কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করি,
— সিয়াশা কোথায় তাহলে এখন?
.
— কিছুক্ষণ আগেই ঘুম পারিয়ে এসেছি। নিজের রুমে ঘুমাচ্ছে। তুই যা ওর কাছে।
.
আমি কিছু না বলে মাথা দুলিয়ে ওই রুমের দিকে অগ্রসর হই।
আমি যেতেই সিয়াম দ্রুত আরিশার কাছে এসে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে বলে,
.
— তখন কি যেন বলছিলে? আমি তোমায় অনেক জ্বালাই তাই না? তা কি কি ভাবে জ্বালাই একটু শুনি তো? দুষ্টু হাসি দিয়ে।
.
হুট করেই এমন করায় আরিশা হতভম্ব হয়ে যায় আর অপ্রস্তুত কন্ঠে বলে,
— সিয়াম কি করছো এইসব? ছাড় বলছি। সিয়াশা আমাদের যদি এইভাবে দেখলে কি ভাববে?
.
— আমার প্রিন্সেস অনেক ভদ্র বুঝলা। ও কখনোই নিজের বাবা-মার রোমেন্সের মাঝে হাড্ডি হয় না। দেখতে হবে তো কার মেয়ে। ভাব নিয়ে।
.
আরিশা এইবার সিয়ামের পায়ে একটা গুতা দেয়। সিয়াম এইবার পা ধরে লাফাতে লাফাতে সোফায় বসে পড়ে। আরিশা তা দেখে হেসে বলে,
.
— আপনার মেয়ে ঠিকই কিন্তু তা বলে যে আমি আপনার তা কে বললো? আমি তো আপনার না বরং অন্য..
.
আর বলতে পারলো না। সিয়াম আরিশার হাত ধরে ওকে টান দিয়ে ওর পাশে বসিয়ে দেয় আর রাগে ফুসতে ফুসতে বলে,
— তুমি শুধু আমার বুঝলে। অন্য কাউরো না। আরেকবার যদি এই কথা বলেছো না তখন তোমার খবর আছে।
.
— আরেহ আমি তো শুধু মজা করছিলাম। রাগ কমাও। আমি শুধু তোমারই বুঝলে।
.
তখন রুম থেকে একটা ৪ বছরের একটি বাচ্চা মেয়ে চোখ কচলাতে কচলাতে বেরিয়ে আসে। পড়নে তার হাল্কা পিংক কালারে একটি ফ্রক। মাথায় একটা ছোট ঝুঁটি করা। সে আর কেউ না সিয়াশা। সিয়াশা বাইরে এসে সিয়াম দেখে চেঁচিয়ে উঠে,
— বাবা!! এই বলেই দৌড়ে সিয়ামের কোলে গিয়ে উঠে বসে।
.
.
?
.
আমি ধীর পায়ে রুমের ভিতরে ঢুকি। রুমের ভিতরে হাল্কা অন্ধকার হয়ে আছে। আমি সুইচ বোর্ডটা খুঁজে নিয়ে লাইফ জ্বালিয়ে দেই। তারপর রুমে চোখ বুলিয়ে দেখতে থাকি। তখনই নজর যায় খাটের কোনে বসে থাকা ৬ বছর বয়সী একটি ছেলের দিকে। পরনে তার লাল গেঞ্জি আর হাল্কা ব্লু কালারের জিন্স।
আমি এইবার মুচকি হেসে ওর দিকে এগিয়ে যাই আর ওর সামনে হাটু গেড়ে বসি। ওর ছোট ছোট হাত দুইটি নিজের এক হাতে নিয়ে অন্য হাত ওর গালে রেখে মিষ্টি সুরে বলি,
.
— আমার বাবাটা বুঝি খুব বেশি রাগ করে আছে আমার উপরে?
.
কিন্তু সে কোন কথার জবাব না দিয়ে আগের ন্যায় গাল ফুলিয়ে বসে থাকে। তা দেখে আমি বলি,
— আচ্ছা মা অনেক গুলো সরি। প্লিজ মাফ করে দাও। আমি ইচ্ছে করে তোমায় বকি নি। তুমি পাশের বাসার আন্টির ছেলেকে মেরেছো বলেই তোমায় বকেছি। তুমি জানো না আম্মু মারামারি আমি একদম পছন্দ করে না। তাহলে কেন করলে এমন বলো?
.
তখন সেই ছেলেটি মুখ খুলে,
— আম্মু ও সিয়াশাকে ধাক্কা দিয়েছিল বলে আমি ওকে মেরেছি। তুমি জানো না সিয়াশার কান্না আমি সহ্য করতে পারি না। তখন সিয়াশাকে কাঁদতে দেখে আমার রাগ উঠে যায় আর আমি ওকে মারি। ইনোসেন্ট একটা চেহেরা করে।
.
আমি এইবার ওর কথা শুনে হাসবো নাকি কাঁদবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। মনে মনে বলছিলাম,
— হাইরে! যেমন বাপ তেমন বেটা।
.
— বল আম্মু আমি কি ভুল করেছি?
.
— কিন্তু রোয়েন সোনা মারামারি করা ভালো না। তুমি আম্মুকে এসে বলতে আমি ওকে বকে দিতাম। আচ্ছা বাদ দাও যা হওয়ার হয়েছেই। এখন থেকে আর এমব করো না কেমন?
.
— হু!
.
— এইতো আমার সোনা বাচ্চাটা। জানো তুমি যখন আমায় না বলে সিয়াশার সাথে আরিশার আন্টির বাসায় এসে পড়েছিলে তখন আম্মু কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিল। আম্মুকে জ্বালাতে অনেক ভালো লাগে তোমার তাই না?
.
— সরি আম্মু। এই বলে আমায় জড়িয়ে ধরে গালে একটা চুমু দিয়ে দেয়। আমি এইবার মুচকি হেসে রোয়েনের গালে একটা চুমু একেঁ দেই।
.
.
?
.
আমি বাইরে দাড়িয়ে আরিশাকে বলি,
— আজ আসি তাহলে। পরে আবার আসবো নে।
.
আরিশা মুচকি হেসে বলে,
— হু আসিস। সামনের সপ্তাহে কিন্তু রিংকি আসছে। মনে আছে তো!
.
— তা আবার না থাকবে বল?
.
— ওকে কিন্তু পিক করতে যেতে হবে। ঠিক টাইমে চলিস কিন্তু আমার সাথে।
.
— হু।
.
এইদিকে,
রোয়েন সিয়াশাকে টেনে সামনে নিয়ে এসে ফিসফিস করে বলে,
— তোকে যেন আর কোন ছেলের সাথে কথা বলতে না দেখি। যদি দেখি না তাহলে এর পরের বার আমি অন্যকে মারা জায়গা তোর প্রিয় পুতুলটাকে মারবো।
.
সিয়াশা এইবার ভয় পেয়ে বলে,
— না রোয়ান ভাইয়া। আমি আল কাউলো সাথে কথা বলবো না। পোমিস (প্রমিস)। তাও তুমি আমাল ডলটাকে কিচু (কিছু) কলো না।
.
— আচ্ছা ঠিক আছে। আর হ্যাঁ আমাকে ভাইয়াও বলে ডাকবি না। ভাইয়া ডাক আমার ভালো লাগে না বুঝলি। ভাব নিয়ে।
.
— আছা (আচ্ছা)।
.
— রোয়ান তারাতারি আসো আমাদের যেতে হবে।
.
— হ্যাঁ আম্মু আসছি।
.
এই বলে সিয়াশার দিকে তাকিয়ে বলে,
— যা বলেছি তা মনে থাকে যেন।
.
— হু।
.
রোয়েন এইবার কিছু না বলে সিয়াশার গালে এক চুমু দিয়ে বলে,
— এইতো গুড গার্ল। এখন আমি চললাম বাই।
.
এই বলে রোয়েন দৌড়ে আমার কাছে চলে আসে।
.
.
.
?
.
বাসায় আসতেই রোয়েন দৌড়ে ভিতরে চলে যায়। ড্রয়িং রুমে আবিরকে দেখে দৌড়ে তার কাছে চলে যায় আর বলে,
.
— পপসি তুমি কখন আসলে?
.
— এইতো কিছুক্ষণ আগেই । তা তুমি কোথায় ছিলে??
.
— আরিশা আন্টির বাসায়। কিন্তু আমি না তোমার থেকে রাগ। তুমি আজ প্রায় ১ সপ্তাহ পড়ে আসছো যেখানে তোমার আরও ১ সপ্তাহ আগে আশার কথা।
.
— সরি চ্যাম্প। কাজের জন্য দেশের বাইরে গিয়েছিলাম তাই আসতে পারি নি। সরি। রক হাতে এক কান ধরে।
.
— ইট ইস ওকে।
.
–বাই দ্যা ওয়ে আমার কাছে না তোমার জন্য কিছু আছে।
.
— কি? উৎসুক চোখে।
.
— চোখ বন্ধ করো।
.
— ওকে।

আবির তখন পিছন থেকে একটা রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি বের করে রোয়েনের হাতে দেয়। আর বলে,
— সাপ্রাইস!!
.
রোয়েন এইবার চোখ খুলে গাড়িটা দেখে খুশি হয়ে উঠে। সে আবিরকে জড়িয়ে ধরে বলে,
.
— থেংক ইউ পপসি। আই লাভ ইউ সো মাচ।
.
— আই লাভ ইউ টু চ্যাম্প। যাও এখন এইটা দিয়ে খেলা করো।
.
— ওকে। এই বলে রোয়েন সেটা নিয়ে দৌড়ে রুমে চলে যায়।
.
আমি এতক্ষণ দুইজনের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। বেশ ভালোই লাগছিল ওদের দেখতে। আবির এইবার আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
.
— কেমন আছো রিয়ু?
.
— এইতো। তুমি?
.
— ভালো।
.
— তোমার হাতের ব্যথাটা এখন কেমন?
.
— বেশ ভালো। আচ্ছা এলিনা কোথায়?
.
— বাহ এসেই নয়ন দুটো বউকে না খুঁজে পেয়ে অস্থির হয়ে পড়েছে বুঝি।
.
— ডোন্ট পিঞ্জ রিয়ু ওকে!
.
— মজা করছি। এলিনা আহিল নিয়ে প্লে গ্রাউন্ডে গিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে পরবে।
.
— অহহ আচ্ছা।
.
তখনই বাসার কলিংবেলটি বেজে উঠে। আমি গিয়ে দরজা খুলতেই এক ছয় বছর বয়সি ছেলে আমার দিকে মিষ্টি হাসি দিয়ে উঠে। চুল গুলো এলোমেলো হয়ে উঠেছে তার। গায়ে হাল্কা ময়লা লেগে আছে। সে আর কেউ না বরং আহিল। আমি আহিলকে দেখে মুচকি হেসে বলি,
.
— কি খেলা শেষ হয়েছে আপনার?
.
সে মাথা দুলিয়ে বলে,
— হ্যাঁ! চাচী জানো অনেক মজা করেছি আমি আজ।
.
— বেশ তো। এখন ভিতরে এসো, বাবা এসে পড়েছে।
.
— সত্যি!
.
— হ্যাঁ।
.
আহিল আর কিছু না বলে দৌড়ে ভিতরে ঢুকে আবিরের কাছে চলে যায় আর ওর কোলে চড়ে বসে ওর গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
— বাবা আই মিসড ইউ সো মাচ!
.
— আই মিসড ইউ টু। তো কেমন কাটলো তোমার দিন গুলা?
.
— অনেক ভালো। এই বলে আহিল গল্প জুড়ে দেয়।
.
আমি মুচকি হেসে এলিনার দিকে তাকিয়ে বলি,
— বেশ ক্লান্ত মনে হচ্ছে তোমায়? আহিল অনেক জ্বালিয়েছে বুঝি?
.
— আর বলো না ভাবী। তুমি তো জানোই আহিল ঠিক কতটা দুষ্টু। ওর পিছে দৌড়াতে দৌড়াতে আজ আমার জান বেড়িয়ে গিছে। আচ্ছা ভাবি রোয়েন এসেছে?
.
— হ্যাঁ এসেছে। রুমে খেলা করছে।
.
— যাক ভালো।
.
— তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে এসো আমি চা করে আনছি।
.
— হু।
এই বলে এলিনা চলে যায়। তখন আমি আবির আর আহিলের দিকে তাকিয়ে দেখি তারা দুইজন খুনসুটি করছে। আহিল দেখতে হুবহু আবিরের মত। শুধু চোখ গুলো পেয়েছে এলিনার মত। আহিল আবিরের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
.
— বাবা আমার জন্য কি এনেছো?
.
— তোমার জন্য আবার কি আনবো। না জানার ভান করে।
.
— বাবা তুমি ভুলে গিয়েছ তাই না? মনে নেই তুমি ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার আগে আমি কি বলেছিলাম। মন খারাপ করে।
.
— অহহ কিছু বলেছিলে বুঝি! সরি বাবা আমার মনে নেই।
.
আহিল এইবার মন করে বসে থাকে তখন আবির সাইড থেকে একটা ছোট গিটার বের করে আহিলের সামনে ধরে। এইবার আহিলের খুশি দেখে আর কে। সে যেন খুশিতে আত্মহারা।
আমি এইবার আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলি,
.
— আবির তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। আহিল যাও তুমিও ফ্রেশ হয়ে আসো কেমন?
.
— ওকে চাচী। এই বলে আহিল রুমের দিকে যেতে নেয় তারপর কি যেন ভেবে আমার কাছে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে বলে,
.
— চাচী এক গ্লাস চকলেট মিল্কসেক বানিয়ে দাও না প্লিজ। খুব খেতে ইচ্ছে করছে।
.
— এখনই দিচ্ছি। তুমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো আমি ততক্ষণে বানিয়ে ফেলছি।
.
— লাভ ইউ চাচী। উম্মাহ!
এই বলে আহিল দৌড়ে রুমে চলে যায়। আবিরও এইবার রুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
.
.
?
.
আবির ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে এলিনা আবিরের লাগেজ থেকে কাপড় গুলো বের করছে। যেগুলো ধুঁয়ে দিতে হবে সেগুলো আলাদা করছে। আবির এইবার এলিনার পিছনে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে। আর ওর কাধে থুতনি রেখে বলে,
.
— আমার বউ অভিমান করেছে বুঝি? আশার পর থেকে দেখছি আমার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। এই মাসুম বাচ্চাটার বুঝি কষ্ট হয় না?
.
এলিনা এইবার অভিমানী কণ্ঠে বলে,
— আজকে যে আসবে তা আমাকে আগে জানাও নি কেন? আগে জানলে তোমার জন্য কিছু বানিয়ে রাখতাম। আমাকে তুমি কখনোই তোমার জন্য বিশেষ কিছু করতে দাও না। এইটা ঠিক না। ঠোঁট উল্টিয়ে।
.
— তুমি আমার পাশে আছো, কাছে আছো এইটাই আমার জন্য বিশেষ। তোমার সাথে কাটানো সকল মূহুর্তই আমার কাছে বিশেষ। এই কয়েকদিন অনেক মিস করেছি তোমায়। তোমায় ছাড়া থাকাটা যে আমার জন্য কত কষ্টকর তা বলে বুঝাতে পারবো না। এই বলে এলিনার গালে টুপ করে চুমু দিয়ে বসে।
.
এলিনা এইবার লজ্জায় লাল হয়ে যায়। মুখে ফুটে উঠে লাজুক হাসি। তারপর নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে টি-টেবিল থেকে চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বলে,
— এইটা খেয়ে নাও কিছুটা ক্লান্তি দূর হবে।
.
— হু। চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে।
.
— কন্সার্ট কেমন ছিল?
.
— ফাটাফাটি। কিন্তু তোমার কমতি ছিল। তুমি থাকলে আরও ভালো হতো। এই বলে খাটের উপর বসে চায়ের পেয়ালাতে চুমুক দেয়।
.
— তুমি ভুলে যাচ্ছ আমি আর এখন তোমার পিএ নই যে এখন সব জায়গাই তোমার সাথে ঘুরে ঘুরে বেড়াবো। আমি এখন তোমার এক বাচ্চার মা।
.
আবির চায়ের কাপটা পাশে রেখে এলিনাকে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলে,
— তাহলে এখন দুটো বাচ্চার মা বানিয়ে দেই। ভ্রু নাচিয়ে।
.
— যাহ শয়তান। লাজুক কণ্ঠে।
.
.
.
?
.
আমি ফ্রেশ হয়ে আসতেই হুট করে মোবাইলটা বেজে উঠে। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি রিংকি মেসেঞ্জারের ভিডিও কল দিয়েছে। আমি এইবার কলটি ধরার সাথে সাথেই রিংকি বলে উঠে,
.
— ওই বান্দরনী তোর ফোন ধরতে এতক্ষন লাগে? কই থাকস তুই? কখন থেকে ফোন দিচ্ছি।
.
আমি এইবার ছোট চোখ করে বলি,
— ঠিক কয়বার ফোন দিয়েছেন আপনি মেডাম।
.
— পাঁচবার রিং হয়েছে। পাঁচ বার! বুঝতাসিস তোকে কতক্ষণ ধরে ফোন দিচ্ছি তোকে।
.
আমি এইবার হতাশ হয়ে বলি,
— হো রে বোন বুঝছি৷ এর চেয়ে দেরি তো আর হতেই পারে না।
.
— হু! দেখেছিস আমি কত ধৈর্যশীল। তুই দেরি করে ফোন উঠানোর পরও তোকে আমি কিছু বলি নি। আমার থেকে শিখ কিছু। ভাব নিয়ে।
.
— চুপ! কাজ করে দুই আনার আর কথা বলে ১৪ আনার। তোকে ধরে উল্টো করে পিটাতে পারলে বেশ হতো। আচ্ছা একটা কথা বলতো তুই রশনিকে কিভাবে সামলাস? তুই যা আল্লাহ মাবুদ এই জানে রশনিকে তুই কিভাবে রাখোস?
.
— হেহে! মেরে পাস হ্যায় বাচ্চা পাল নেকি নিনজা টেকনিক। দাঁত কেলিয়ে।
.
— তা কি শুনি।
.
তখন ক্যামেরাটা পিছনের দিকে ঘুরিয়ে বলে,
.
— টানটানা।
.
আমি এইবার দেখি একটা তিন বছর বয়সী মেয়ে ইশানের কোলে বসে আছে। সে আর কেউ না রশনি। সে ইশানের কোলে বসে ওর মাথার চুল টানছে। চুল টানা শেষ হলে ইশানের পড়া গেঞ্জিটা টানছে। বলতে গেলে ইশানের অবস্থা একদম নাজেহাল করে ফেলেছে। হুট করে রশনি থেমে গিয়ে ইশানের দিকে তাকিয়ে বলে,
.
— বিতিস বানদর পাপা (ব্রিটিশ বান্দর) আই ডিড।
.
ইশান এইবার সন্দেহ দৃষ্টিতে রশনির তাকিয়ে বলে,
.
— হোয়াট ডিড ইউ ডিড?
.
— বুউউউ! রিংকির মত দাঁত কেলিয়ে।
.
ইশান কিছুক্ষণ রশনির দিকে তাকিয়ে থাকে। পরে নাকে গন্ধ আসতেই বুঝে যায় রশনি ঠিক কি করেছে। এইবার ইশান কাঁদো কাঁদো হয়ে রিংকির দিকে তাকায়। রিংকি তা দেখে বলে,
.
— এইভাবে তাকিয়ে লাভ নেই ব্রিটিশ বান্দর। আমি মাত্র নেইলপলিশ লাগিয়েছি সো আমি এখন এইসব করতে পারবো না। সো এই কাজটা এখন তোমায় করতে হবে।
.
ইশান এইবার কোন উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে রশনিকে পরিষ্কার করে দিতে থাকে।
.
আমি এদের কান্ড দেখে হাসতে হাসতে নাই। কোন মতে নিজের হাসি থামিয়ে বলি,
.
— রিংকি তুই ইশান ভাইয়ার কি অবস্থা করেছিস। বেঁচারা তো বিয়ে করে বেকা হয়ে গিয়েছে। হাসতে হাসতে।
.
— হুহ! বাই দ্যা ওয়ে বাংলাদেশে কি বেশি গরম নাকি রে?
.
— হ্যাঁ। আচ্ছা তোরা কি হংকং এই সেটেল হচ্ছিস নাকি আবার লন্ডনে ব্যাক করবি।
.
— এখনো সিউর না।
.
তারপর আমরা আরও কিছুক্ষণ কথা বলে রেখে দেই। রিংকি ফোন রেখে পিছেই ঘুরতেই দেখে ইশান রশনিকে ঘুম পারিয়ে দিয়েছে। ইশান এইবার স্বস্থির এক নিশ্বাস নিয়ে রিংকির দিকে তাকিয়ে বলে,
.
— যেমন মা তেমন মেয়ে। দুইজনকেই সামলানো ইজ জাস্ট ইম্পসিবল।
.
— তাতে তোমার কি হ্যাঁ? তোমাকে জ্বালাই নাকি আমরা। আমরা মা ও মেয়ে কত শান্ত তুমি জানো?
.
তখন ইশান বিরবির করে বলে,
— আমি না জানলে কে জানবে? শান্ত না ছাই! কোন দুঃখে যে এই এলিয়ানটাকে বিয়ে করতে গিয়েছিলাম। জীবনটাই বেদনাময় হয়ে গেল আমার।
.
— ওই ওই ব্রিটিশ বান্দর কি বলবা?
.
— আরে বাবা চুপ। রশনি উঠে যাবে তো। চাঁপা কন্ঠে।
.
— হুহ!
.
.
.
?
.
রিংকির সাথে কথা শেষ হতেই আমি এক কাপ কফি নিয়ে বারান্দায় চলে যাই। বাইরে হাল্কা বাতাস বইছে। রাস্তায় গাড়ির জ্যাম পড়ে গিয়েছে। দুই একটা গাড়ি মাঝে মধ্যে বিকট শব্দে হর্ণ বাজিয়ে চলেছে। সকলেই আজ গ্রীষ্মের গরমে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। বেশ গতি নিয়ে যদি বাতাসটা প্রবাহিত হতো তাহলে হয়তো বা গরমের ভাবটা কিছুটা কমতো।
আমি আকাশের পানে তাকিয়ে কফির পেয়ালেতে চুমুক দিচ্ছি। আর ভাবতে থাকি সেই ১০ বছর আগের কথা।
.
.
?
১০ বছর আগে,
সেইদিন সেই গুলি ঠিকই চলেছিল কিন্তু আমার গায়ে না। আবিরের গায়ে। আবির আমায় ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে গিয়ে নিজের বা হাতে গুলিটা খায়। আমি আবিরকে সামলিয়ে নেই আর রিয়ান গিয়ে ড. আজিজকে ইচ্ছা মত মারতে থাকে। তারপর সে যখন আধমরা হয়ে যায় তখন আমি রিয়ানকে থামিয়ে দেই। আমি আর আবির এইখানে আশার আগেই পুলিশকে জানিয়ে এসেছিলাম বলে কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা চলে আসে আর ড. আজিজকে নিয়ে যায়।
এইদিকে আমি ও রিয়ান মিলে আবিরকে হসপিটালে নিয়ে যাই। গুলিটা বা হাতের ছুঁয়ে চলে যায় বলে আবিরের বেশি ক্ষতি হয় নি। অল্পতেই সেরে উঠে সে। কিন্তু তাও এখন পর্যন্ত সেই জায়গাটা মাঝে মাঝে ব্যথা অনুভব করে সে।
সেইদিনের পর থেকে রিয়ান আর আবিরের মাঝে সব ঠিক হয়ে যায়। দুইজনের মধ্যে থাকা সব দূরত্বও শেষ হয়ে যায়। অতঃপর দুইজনেই একই ছাদের নিচে থাকা শুরু করে। আবির আবার গান গাওয়া শুরু করে। আর তখন ওর নিউ এসিস্ট্যান্ট হয় এলিনা। এলিনার সাথে থাকতে থাকতে আবিব ওকে ভালবেসে ফেলে। আর বিয়ে করে ফেলে। আর তাদেরই সন্তান আহিল।
গ্রেজুয়েশন শেষে আরিশা আর ড. সিয়াম বিয়ে করে নেয়। পরে আরিশা একটা ক্লিনিকে এস আ ডক্টর হিসাবে জয়েন করে। সিয়াশা ড. সিয়াম আর আরিশার এক মাত্র মেয়ে।
রিংকির আর ইশানের মধ্যে কিভাবে যেন ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠে আর রিংকির গ্রেজুয়েশন শেষে ওরা দুইজনও বিয়ে করে ফেলে এবং রিংকি ইশানের সাথে লন্ডনে শিফট হয়ে যায়। রিংকি সেখানের একটা হসপিটালে ইশানের সাথেই ডাক্তার হিসাবে নিযুক্ত হয়। আর কয়েকবছর আগেই ওদেরকে হংকং হসপিটালে শিফট করা হয় বলে ওরা সেখানে চলে যায়। আর সেখানেই রশনির জন্ম হয়।
আর রইলো ড. আজিজ এর কথা। সেইদিন ড. আজিজকে যখন পুলিশরা নিয়ে যাচ্ছিল তখন মাঝ রাস্তায় সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বলে তখন পুলিশ বাধ্য হয়ে তার উপর গুলি চালায়। আর সে সেখানেই মৃত্যুবরণ করে। অতঃপর আবিরের কাছে জানা যায় যে সে সূর্যেরও খুন করেছিল। কেন না সূর্য রিয়ানের লোক ছিল আর সবকিছুর খবর এই রিয়ানকে দিত বলে।
?
.
.
সব ভেবেই আমি এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলি। দেখতে দেখতে কফিটাও ফুরিয়ে আসে। আমি যেই না রুমে যেতে নিব ঠিক তখনই কেউ এসে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে আর চুলে মুখ গুজে। আমার নাকে সেই চিরচেনা গন্ধটি আসতেই আমি বুঝে যাই লোকটি কে। আমি এইবার তার উপর নিজের ভরটা ছেড়ে দেই। ঠোঁটের কোনে একটি মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে বলি,
.
— কখন আসলেন?
.
রিয়ান এইবার ধীর কণ্ঠে বলে,
— তুমি যখন পলকহীনভাবে আকাশের পানে তাকিয়ে ছিলে ঠিক তখনই। তা সেই দিকে তাকিয়ে এত বিভোর হয়ে কি ভাবছিলে?
.
— জীবনের হিসাব মিলাচ্ছিলাম। যে কিভাবে দেখতে দেখতে ১০ টা বছর কেটে গেল। সেইদিনের পর সব কিছুই যেন বদলে গেল তাই না।
.
— যা হয়েছে তা সবকিছুই ভালোর দিকে গিয়েছে। খারাপের দিকে তো আর নয়। তাহলে এত ভেবে কি হবে বল?
.
— কি করবো বলুন হুট করেই সেইদিনের কথাগুলো মনে পরে যায়। ভাবি যদি সেইদিন খারাপ কিছু হয়ে যেত তখন?
.
— যেটা হয়নি তা ভেবে লাভ নেই। সকলেই সবার জীবনে সুখী আছে, ভালো আছে। যার যার ভালবাসার মানুষের সাথে আছে। তাই এখন এইসব চিন্তা ভাবনা নিজের মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও তো।
.
— হুম।
.
— আজকে হসপিটালে আসো নি বলে কত মিস করেছি তোমায় জানো। তোমায় ছাড়া কিছু ভালো লাগে না।
.
— আমি আজকে হসপিটালে গেলে রোয়েনকে কে আনতো শুনি?
.
— অহ হ্যাঁ মনে পড়েছে। তা রোয়েন কোথায়? শুনলাম রাগ করে নাকি সিয়ামের বাসায় চলে গিয়েছিল।
.
— দেখতে হবে না কার ছেলে। রাগ যেন ওর নাকের ডগায় বসে থাকে।
.
— হেই আমি কিন্তু আর আগের মত নেই বুঝলে। তোমার বলাতে নিজের রাগ সামলিয়েছি। নিজের হিংস্রতাকে কখনো তোমার সামনে আসতে দিব না বলে আজ পর্যন্ত নিজের হিংস্রতাকে দমিয়ে রেখেছি।
.
— দমিয়ে রাখতে তো আপনাকে হবেই। তা না হলে আবার ওইসব করলে আমি কিন্তু এইবার আপনাকে ছেড়ে দিব বলে দিলাম।
.
রিয়ান এইবার কিছুটা রেগে আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে আচমকা আমার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেঁপে ধরে। প্রায় কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে চোখে চোখ রেখে বলে,
.
— এই মুখে যাতে আর কোন দিন আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা না শুনি। তা না হলে আমি আবার আমার সেই হিংস্র রুপে ফিরে আসবো বলে দিলাম।
.
— আরেহ আমি মত মজা করছিলাম। আমি আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাব না। আপনার এক বাচ্চার মা হয়ে যদি এখন আপনাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবি তাহলে আল্লাহ আমাকে পাপ দিবে পাপ।
.
রিয়ান এইবার আমাকে নিজের সাথে আরেকটু চেঁপে ধরে বলে,
— তাহলে আরও ১ ডজন বাচ্চার মা বানিয়ে দেই তোমায়। তখন আমায় ছেড়ে যাওয়ার কথা তুমি ভাবা তো দূরে থাক তোমাকে দেখেই সেই ভাবনাটা আরও ৫০০ কিলোমিটার দূর থেকে পালাবে।
.
— রিয়ানন আপনি না অনেক বেশি অসভ্য।
.
— আই নো। বাই দ্যা ওয়ে আমার কিন্তু তোমার প্রতি একটা অভিযোগ আছে।
.
— কি? কৌতূহলি কন্ঠে।
.
— তুমি এখন পর্যন্ত আমাকে “তুমি” বলে সম্মোধন করো না। এইটা কিন্তু ঠিক না রিয়ুপাখি। বড় অন্যায়।
.
আমি তখন মুচকি হেসে বলি,
— আপনিতে একটা মধুরতা আছে যা তুমিটা নেই। তুমিটা বেশ তুচ্ছ লাগে আমার কাছে। তুমিটা তো সবাই বলেই আপনিটা কতজনই বলে শুনি? সকলে পারে না এই আপনিটাকে ধরে রাখতে। এর মাধুর্য টিকিয়ে রাখতে। আর এমনেও আমার হৃদয়ের খুব নিকটে এই “আপনিটা”। আর তাই আপনাকে আমি সবসময় “আপনি” বলে সম্মোধন করি। বুঝলেন মি. খারুস।
.
— জ্বী আজ্ঞে মেডাম।
.
তখন পিছন থেকে রোয়েন বলে উঠে,
— বাবা!!
.
রোয়েনের আওয়াজ কানে আসতেই রিয়ান আর আমি সাথে সাথে দূরে স্বরে যাই। নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে ওর কাছে যাই। রিয়ান তো রোয়েনকে কোলে তুলে ওর গালে চুমু দিয়ে কথা বলতে থাকে। আমি তা দেখে মুচকি হাসতে থাকি।
.
.
.
??
.
.
.
রাত ২ টা বেজে ৩৯ মিনিট।
চারদিকে পিন পিন নিরবতা। নিস্তব্ধতা ছড়িয়ে আছে চারদিকে। সকলেই পারি দিয়েছে ঘুমের রাজ্যে।
আমিও ঘুমের রাজ্যে নিজেকে হারিয়ে গিয়েছি। আমাকে ঘুমে একদম বিভোর দেখে রিয়ান এইবার জেগে উঠে। তারপর কোন সারাশব্দ না করে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। অতঃপর ফুল স্প্রীডে গাড়িটা চালিয়ে চলে যায় উত্তরার দিকে।
একটা রুমে হাত বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে একটি লোক। চোখে মুখে ভয়ের ছাঁপ স্পষ্ট। নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু বার বারই ব্যর্থ হচ্ছে। তখনই সেই রুমে রিয়ান প্রবেশ করে। হাতে তার সেই ধারালো ছুরি। রিয়ান সেই লোকটির সামনে গিয়ে তার চারদিকে ঘুরতে থাকে আর বলতে থাকে,
.
— তোর সাহস কিভাবে হলো আমার রিয়ুপাখির সাথে অসভ্য আচরণ করার। ওকে বাজে দৃষ্টিতে দেখার বল। হুংকার দিয়ে।
এর শাস্তি তো তোকে পেতেই বলে। তাও খুব ভয়ংকর শাস্তি।
.
লোকটি ছটফট করতে থাকে কিন্তু কিছু বলতে পারে না। কেন না তার মুখটি বাঁধা। রিয়ান এইবার সেই লোকটির সামনে এসে তার নখগুলো উপড়ে ফেলে। তারপর ওর চোখ দুটো তুলে ফেলে। এরপর খানিকটা বাজে মৃত্যু প্রদান করে সেই ব্যক্তিটাকে।
রিয়ান তার লোকদের ডাক দিয়ে লাশটাকে নিয়ে যেতে বলে আর নির্দেশ দেয় যেন এই লাশটি কেউ খুঁজে না পায়। তারাও তাদের আদেশ অনুযায়ী সেই লাশটিকে নিয়ে যায়।
রিয়ান এইবার নিজের হাত পরিষ্কার করতে করতে বলে,
.
— আমি কিন্তু আমার কথার বিরুদ্ধে যাই নি রিয়পাখি। আমি তোমায় কথা দিয়েছিলাম যে, ” নিজের হিংস্রতাকে আমি আর কখনো তোমার সামনে আসতে দিব না। ” আর ঠিক সেই কথাটাই রাখছি আমি। সেইদিনের পর থেকে তোমার সামনে আমি আমার হিংস্রতা কখনো বেরিয়ে আসতে দেই নি। আর না পরবর্তীতে দিব। একটা কথা জানো কি? আমার হিংস্রতার কোন প্রমাণও পাবে না তুমি। কেন না আমি যে আগেই সব প্রমাণ মুছে ফেলেছি।
তুমি কেন বার বার ভুলে যাও যে আমার ভালবাসা সকলের থেকে আলাদা। তুমি আমার ভালবাসা না বরং আমার আসক্তি। যা অকালের জন্য অপরিবর্তনশীল। যত যাই হোক তোমার জন্য আমার ভালবাসার ধরণটি কখনোই পরিবর্তন হবে না। কিন্তু সেটা তুমি দেখতে পারবে না। কেন না এইটি থাকবে তোমার আড়ালে। আগেই বলেছিলাম এইটা রিয়ানের আসক্তিময় ভালবাসা। যেটাকে বুঝার ক্ষমতা কাউরো নেই।
তুমি সর্বদাই আমার আসক্তি যে তুমি হয়ে থাকবে। আমার এই আসক্তি থেকে তুমি কোনদিনও নিস্তার পাবে না। এই বলে বাঁকা হাসে সে।
অতঃপর গুনগুন করতে থাকে,
.
“❤ হামে তুমসে পেয়ার কিতনা
ইয়ে হাম নেহি জানতে
মাগার জি ভি নেহি সাকতে
তুমহারে বিনা
হামে তুমসে পেয়ার কিতনা ❤”
.
.
.
.
.
.
???? সমাপ্ত ????