আমার গল্পে তুমি পর্ব-১১

0
607

#আমার_গল্পে_তুমি🍁🍁
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী(writer)
#১১_পর্ব
,
ঘড়ির কাঁটা আটটা ছেঁড়ে নয়টা ছুঁই ছুঁই আর্দ্রদের বাড়ির ডয়িং রুমে শেলী আর সুজন দাঁড়িয়ে আছে, সোফায় আশা আর কবির বসে আছে, আশা মুখে কাপড় চেপে কান্না করছে কবির সাহেব গম্ভীর মুখ করে বসে আছে,, পাশের সোফায় অন্তরা চুপচাপ কঠিন মুখে বসে আছে ওর পাশেই পরশ বসে চিপস খাচ্ছে,, ইয়ানা বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে কেননা মা বাসায় একা আছে নিশ্চয়ই অনেক বেশি চিন্তা করছে এই জন্যই তো মায়ের জন্য একটা ফোন কিনেছি আজকে গিয়ে এটা মাকে দেবো,, সব নিস্তব্ধতা দূর করে আর্দ্র বলে উঠল,, তা মিস শেলী আপনি বলতে চাইছেন ভাইয়া মানে অনিক স্যার আর আপনার মধ্যে কিছু একটা হয়েছে??

এটাই সত্যি স্যার আমি চেয়েও কিছু করতে পারিনি,, অনিক স্যার একটা ছেলে তারপর মাতাল ছিলো আমি ওনার থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারিনি,, আমার কথা বিশ্বাস না হলে আপনি মিষ্টার সুজন কে জিগাস করুন ওনি তো ওখানেই ছিলো।

হ্যাঁ স্যার, অনিক স্যার অনেক ড্রিংক করেছিলো তারপর আমি বললাম যে স্যার আমি আপনাকে রুমে দিয়ে আসি?? তো স্যার বলল না মিস শেলী আমাকে রুমে দিয়ে আসবে।

ইউ ব্ল্যাডি, মিথ্যা বলছো কেনো আমি মোটেও ড্রিংক করেনি,, রেগে বলল অনিক।

আহ ভাইয়া তুই চুপ কর আমি দেখছি তো ব্যাপার টা। আর্দ্র স্যার একটু বেশি বেশিই করছে এতো ভনিতা না করে পুলিশ ডেকে দুটোকে জেলে পুরে দিলেই তো সব ঝামেলা মিটে যায়।, মনে মনে বলল ইয়ানা।

আমি সব দিক বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যেহেতু ভাইয়া ভুল করেই ফেলেছে সেহেতু মিস শেলী কে সস্মানে শশুড় বাড়ি পাঠানো উচিত।

আর্দ্র কথা শুনে সুজন আর শেলী মনে মনে হাসল কেননা ওদের প্ল্যান মতোই সব কিছু হচ্ছে,, এখন নিশ্চয়ই অনিক স্যার এর সাথে বিয়ে দিবে তারপর বাকিটা জীবন আয়েশ করে কাটানো যাবে পরে সময় সুযোগ বুঝে আর্দ্র কেও ফাঁসানো যাবে।

তো কি বলছিলাম এই জন্য আমি ওনাদের আসতে বলেছি, ইন্সপেক্টর ভিতরে আসুন।

একি স্যার আপনি ওনাদের আসতে বলেছেন কেনো??

তোমাদের দুজনকে শশুর বাড়ি পাঠানোর জন্য। ইন্সপেক্টর আ্যারেস্ট করুন এই দুটোকে, মেয়েদের গায়ে হাত তুলিনা এই জন্য বেঁচে গেলে নয়ত মেরে তোমার দুগাল লাল করে দিতে ইচ্ছে করছে আমার।

এসব কি আর্দ্র??

সব বলছি বাবা দাঁড়াও,, তারপর আর্দ্র ভিডিও টা সবাইকে দেখাল আর সবকিছু বলল,,,তোমাদের দুজন কে যদি আজকে ছেঁড়ে দিতাম তাহলে তোমাদের সাহস বেড়ে যেতো তোমরা এর থেকেও আরো নিকৃষ্ট কাজ করতে একবারও ভাবতে না তাই তোমাদের দুজনের একটা শাস্তি হওয়া উচিত,,

অনিক রেগে গিয়ে সুজনের কলার ধরে নাকে কয়েকটা ঘুষি মারল বেচারার নাকদিয়ে রক্ত বার হচ্ছে নিচে পরে বারবার বলছে স্যার মাফ করে দেন,, পরে আর্দ্র গিয়ে অনিককে থামালো,, ছাড় ভাইয়া ওকে ইন্সপেক্টর ওদেরকে নিয়ে যান।

সবকিছ শুনে অন্তরা মনে মনে অনেক খারাপ লাগল শুধু শুধু অনিককে কষ্ট দিলো,,, অনিক ওর বাবার সামনে গিয়ে বলল,, কে যেনো বলেছিলো যে তার নাতি আর বউমার কাছে যেনো আমি না যায় তো কি চলে যাবো আমি??

কবির সাহেব সোফা থেকে উঠে একটা শুকনো হাসি দিয়ে বলল,,রাগ করছিস কেনো আসলে আমি একটু বাগী বাবা হতে চেয়েছিলাম হিহি আশা কোথায় তুমি আমার ওষুধ টা দাও কতবার বলেছি টাইম টু টাইম ওষুধ দিবে।

সেকি তুমি তো একটু আগেই ওষুধ খেলে,।

আব আ,,তাতে কি আমি গেলাম ঘুমাতে।

বাবা তুমি এই সাড়ে নয়টায় ঘুমাবে?? যেখানে তোমার এগারোটার আগে ঘুমই আসে না,, খেয়েছো??

দুটো ছেলে হয়েছে দুটোই সেই লেভেলের হাই বড়টার থেকে ছোটটাই বেশি আমি ভেবেই পাই না আমার মতো এতো শান্তশিষ্ট লোকের ছেলে এতো রাগী কেমনে হয়,, নিশ্চয়ই মায়ের মতো হয়েছে হুমম ঠিক ওর মতোনই হয়েছে ,, মনে মনে বলল কবির সাহেব।

অনিকে একবার অন্তরার দিকে তাকিয়ে রেগে সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিজের রুমে চলে গেলো কিছুক্ষণ পরই অন্তরাও আশেপাশে তাকিয়ে বলল,,ইয়ে মানে আমি একটু আসছি, এই বলে অন্তরাও রুমে চলে গেলো।

আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। আর্দ্র হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে উপরে চলে গেলো।

সবাই তো সবার মতো চলে গেলো এখন আমি কি করবো?? আংকেল আমিও গেলাম অনেক রাত হয়ে গেছে বাড়ি যেতে হবে আম্মু একা আছে।

না না তা কি করে হয় তুমি এতো রাতে একা কি করে যাবে বসো খেয়ে নাও তারপর আর্দ্র তোমায় দিয়ে আসবে।

কিন্তু আন্টি,,

কোনো কিন্তু নয় আসো আমার সাথে,,

এতোক্ষণ পরে পরশ কথা বলে উঠল, হাতের চিপস গুলো খেয়ে খালি প্যাকেটটা ফ্লোরে ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে হাতটা প্যান্টে মুছে বলল,,যাই মাম্মাম এর কাছ থেকে শুনে আসি বেবি কবে আনবে,আমি তো বেবির সাথে খেলবো,,, এই বলে ফুরুত করে দৌড়ে সিঁড়ি কাছে চলে গেলো।

এতোকিছুর পর এখন অনিক ভাইয়া আর আপু এক হয়েছে ওদের এখন একটু সময় দেওয়া উচিত এই বিচ্ছুকে থামাতে হবে নয়ত গিয়ে ভাইয়া আপু রোমান্স এর বারোটা বাজাবে,,, কথাটা মনে মনে বলে ইয়েনা দৌড়ে পরশের কাছে চলে গেলো পরশ ততক্ষণে মাঝ সিঁড়িতে উঠে গেছে এক পা এক পা করে,, ইয়ানা দৌড়ে পরশের কাছে যেতেই উপর থেকে নিচে নামতে আসা আর্দ্রর মাথার সাথে খেলো ধাক্কা।

উফ,, আল্লাহ! এবার আমি নিশ্চিত সৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলবো আমার মাথা শেষ, এটা মাথা নাকি পিলার।

সবসময় এমন ট্রেনের মতো ছোটো কেনো?? এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে পারো না,,,ইডিয়ট।

এই একদম ইডিয়ট বলবেন না এটা আপনার অফিস নয় যে আপনি যা খুশি বলবেন আর আমি তা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হজম করবো আর আপনিই বা সব সময় আমার সাথেই কেনো ধাক্কা খান আশে পাশে এতো ধাক্কা খাওয়ার জিনিস ওতে খেতে পাননা??

তোমাকে,,আচ্ছা কিছু বললাম না শোনো তোমাকে কিছু বলার আছে।

হুম জানি কি বলবেন ধন্যবাদ দিবেন তো ও আমি জানি এসব কাজ আমার বা হাতের খেল এতে ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই,, শুধু একটা সরি বললেই হবে , ভাব নিয়ে বলল ইয়ানা।

সবকিছুতেই তুমি একটু বেশি বেশিই ভাবো এতো অ্যাডভান্স ভাবা ঠিক নয় আমি মোটেও তোমায় ধন্যবাদ দেবো না,, এটাই বলতে চাইলাম যে কাল ঠিক টাইমে অফিসে চলে এসো নয়ত বেশি কাজ করতে হবে,,, আর হ্যাঁ এই আর্দ্র চৌধুরি কখনো কাউকে সরি বলে না আর তোমাকে তো একদমই না এই বলে আর্দ্র চলে গেলো।

এই লোকটারে মনে চাই,,আর কিছু বলার আগেই শুনতে পেলো পরশ অনিক আর অন্তরাকে ডাকছে,, মাম্মাম দরজা খোলো পাপ্পা কি হলো দরজা খোলো বলছি।

এই রে এই বিচ্ছুটা আবার কোন ফাঁকে চলে গেলো যায় নিচে আসি।

,,,,,,,,

শুনুন গাড়ির এসিটা বন্ধ করে দিন আমার ঠান্ডা লাগছে।

ইয়ানার কথা শুনে আর্দ্র এসিটা আরো বাড়িয়ে দিলো।

আরে আপনি কি কানে কম শোনেন?? বললাম এসিটা অফ করে দিতে তা না করে আরো বাড়িয়ে দিলেন কেনো?? এখন রাত ১০ টা বেশি বেজে গেছে প্রায় বাইরে কি সুন্দর ঠান্ডা বাতাস সেটা অনুভব না করে আপনি কৃত্রিম ঠান্ডা অনুভব করছেন?? বাইরে বিশুদ্ধ প্রকৃত বাতাস।

হুম তোমার ওই ঠান্ডা বিশুদ্ধ প্রকৃত বাতাস এর সাথে ধূলাও আছে ওটা তোমার ভালো লাগতে পারে কিন্তু আমার নয়,, ওকে চুপচাপ মুখটা অফ করে বসে থাকো নয়ত গাড়ি থেকে নামিয়ে দেবো।

নামিয়ে দিলেই কি আমি মনে হচ্ছে বাড়ি চিনি না নেহাত রাস্তায় কুকুর আর বাইরে অন্ধকার তাই আপনার গাড়িতে যাচ্ছি নয়ত যেতাম না হুম??

বিরবির করে না বলে যা বলার জোরে জোরে বলো।

কিছু না, আপনি মন দিয়ে গাড়ি চালান তো, বাড়ি গিয়ে আবার এক বস্তা বকা শুনতে হবে, উফ জীবনটা বেদনা।

চলবে৷,,,,,,,,??