আমার গল্পে তুমি পর্ব-৪২

0
549

#আমার_গল্পে_তুমি
#সুমাইয়া_সুলতানা_সুমী(writer)
#৪২_পর্ব
,
গ্রামে সবাই আনন্দ করে চারদিন কাটিয়ে আবার নিজের গন্তব্যে চলে এসেছে সবাই৷ ইয়ানদের গ্রাম থেকে আসার আজ ১ সপ্তাহ হলো আর্দ্র তো গ্রাম থেকে এসেই ভীষণ ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে। অফিসে অনেক কাজের চাপ সেই সকালে যাই আর মাঝ রাতে ইয়ানা ঘুমানোর পড় বাড়ি ফিরে,, ইয়ানার সাথে কমই দেখা হয়। গ্রাম থেকে এসে ইয়ানা একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাই আর অফিসে যায় নাহ এই জন্য আরো দেখা হয় নাহ আর্দ্রর সাথে তবে আজকে ইয়ানা একটু সুস্থ আর আজকেই ওদের বিয়ের ছয় মাস হলো তাই আর্দ্র ভাবলো আজকে ইয়ানাকে একটা সারপ্রাইজ দেবে কেননা এতোদিন কাজের চাপে মেয়েটার সাথে সময় কাটানো তো দূর ভালো করে কথা বলাও হয়নি তাই আজকে আর্দ্র ভেবেছে যে অফিস থেকে ফিরে ইয়ানাকে নিয়ে ক্যান্ডেল লাইট ডিনারে যাবে আর প্রথম বারের মতো ওকে প্রপোজ করবে তাই কল দিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে সব কিছুর ব্যাবস্হা করতে বলল। ইয়ানা আজকে একটু ভার্সিটিতে গেছে অনেক দিন যাওয়া হয় নাহ তাই আজকে গিয়েছে রোজাকে সাথে নিয়ে গিয়েছে। ওরা ক্লাস করছিলো তখনি আর্দ্র ইয়ানাকে কল দিলো কিন্তু ও ক্লাসে থাকায় ফোনটা ধরতে পারলো না, পরে ক্লাস শেষে বাইরে এসে দেখল আর্দ্রর কল ইয়ানা রোজাকে বলে একটু সাইডে গিয়ে আর্দ্র কে কল দিলো কিন্তু আর্দ্র কল কেটে দিয়ে আবার ব্যাগ করল।

ক্লাসে ছিলে বুঝি এই জন্য ফোন ধরতে পারোনি??

আর্দ্রর কন্ঠ শুনে ইয়ানার জমে থাকা অভিমান ইঞ্চি ইঞ্চি করে বাড়তে লাগল, এতোদিন ইগনোর করে এখন আসছে দরদ দেখাতে, আচ্ছা মানলাম মানুষের কাজ থাকতেই পারে তাই বলে এমন করবে কাজ পেয়ে নিজের আপন বউকেই ভুলে যাবে,, আজকে যে আমাদের বিয়ের ছয়মাস হলো সেটাও বধেও ভুলে গেছে বলবো না কথা দেখি ওনি কি করে।

কি হলো ফোন রিসিভ করে কথা না বলে চুপ করে আছো কেনো, কেউ কি মুখে টেপ লাগিয়ে দিয়েছে নাকি মিসেস বকবক হমম??

কেনো ফোন দিয়েছেন ওহ আচ্ছা ভুল করে দিয়েছেন নাকি? হুম বুঝেছি মনে হয় অন্য কাউকে দিতে গিয়ে আমাকে দিয়ে ফেলেছেন তাই না আমি ঠিক বুঝতে পেরেছি।

বাবা এতো অভিমান?? তা বরকে বুঝি অনেক ভালোবাসো সেই জন্য বরের একটু ব্যাস্ততা মেনে নিতে পারছো নাহ।

মোটেও না কোনো ফোন দিয়েছেন বলুন।

শোনো আজকে সকাল সকাল বাসায় গিয়ে রেডি হয়ে থাকবে ওকে তোমাকে নিয়ে এক জায়গায় যাবো।

কোথায় যাবেন??

আমার বিয়ের অনুষ্ঠানে বুঝেছো,, সুন্দর করে সেজে থাকবে আমি অফিস থেকে ফিরেই নিয়ে যাবো।

একদম বাজে কথা বলবেন না ওকে,, আর আপনি তো অনেক ব্যাস্ত তাহলে আমাকে নিয়ে কোথায় কীভাবে যাবেন।

সেটা তোমার না ভাবলেও চলবে ওকে,, এতো বেশি কথা না বলে যেটা করতে বললাম সেটা করবে,, এখন রাখছি কাজ আছে আর হ্যাঁ সাবধানে বাসায় যাবা আর বাসায় পৌঁছে আমার ফোনে একটা মেসেজ দিয়ে দিবে নয়ত আমি টেনশনে থাকবো ওকে রাখছি৷

এই শোনেন যাহ কেটে দিলো এই লোকটা এমন কেনো নিজের বলা শেষ হতেই ফোন কেটে দিলো,, চটাং করে ফোন দিয়ে ফটাং করে কেটে দিলো একটু ও ধর্য নেই লোকটার, মাঝে মাঝে মন চাই ওনাকে,,
—কিরে এভাবে একা একা বকবক করছিস কেনো?? আর কাকে কি বলছিস? কে ফোন দিছিলো?
— আরে মিস্টার আর্দ্র ফোন দিয়েছিলো বললো সন্ধ্যায় যেনো রেডি হয়ে থাকি আমাকে নিয়ে কোথায় যেনো যাবে।
— কোথায় যাবে??
— কোথায় যাবে জানি না, আমি অবশ্য জিগাস করেছিলাম যে কোথায় যাবে তখন কি বললো জানিস বলল যে ওনার বিয়ের অনুষ্ঠানে, কি খারাপ লোক ভাব একবার।
— ঠিকি তো বলেছে আচ্ছা আর্দ্র ভাইয়া যদি সত্যি আরেকটা বিয়ে করত তাহলে অনেক ভালো হতো বল আমরা দুজন বান্ধবী থেকে তিন জন হয়ে যেতাম।
—কি বললি কুত্তা তুই আমার বান্ধবী হয়ে আমার ঘর ভাঙ্গতে চাইছিস তোকে ধরে তো উত্তম মাধ্যম দেওয়া উচিত তোকে তো,,,ইয়ানার কিছু একটা মনে পড়তেই ও একটা দুষ্ট হাসি দিয়ে বলল, এই জানিস আকাশ ভাইয়া না মনে হয় কারো প্রেমে পড়েছে আমাকে বলছিলো।
— কিহ?? কি কি বলছিলো তোকে বল বল আর ওনি কার প্রেমে পড়েছিলে তোকে কি কিছু বলেছে??ছবি দেখিয়েছে??
— আরে থাম থাম এতোগুলো প্রশ্ন একবারে করলে উত্তর দেবো কেমনে, আর আকাশ ভাইয়া প্রেমে পড়লে তোর এতো কি তুই এতো শুনতে চাইছিস কেনো??
— ন,,,না কিছু নাহ তুই বরং আয় আমি গেলাম আমার একটা কাজ আছে এই বলে রোজা চলে গেলো।
— এই কোথায় যাস দাঁড়া আমিও যাবো যাহ চলে গেলো, তবে দিয়েছি প্যাঁচ লাগিয়ে কত্ত বড় সাহস বলে কিনা আমার বরের আবার বিয়ে দেবে এখন বোঝ ঠেলা আমি ঠিক জানি তুই এখন আকাশ ভাইয়া কে যেয়ে ধুবি এখন দ্যাখ মজা।
,,,,,,,
—আরে মিস্টার আর্দ্র আমায় আপনি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন এভাবে চোখ বেঁধে আমি পড়ে যাবো তো চোখটা খুলে দিন।
—কেনো আমার উপর বুঝি বিশ্বাস নেই তোমার ??
__ থাকবে না কেনো আপনার উপর আমার অনেক বেশি বিশ্বাস আছে তবে আমি কিন্তু আপনার উপর অনেক বেশি রেগে আছি।
__ তাই বুঝি ওকে,, আর্দ্র ইয়ানাকে ধরে নিয়ে গিয়ে একটা টেবিলের সামনে দাঁড় করালো তারপর ইয়ানার পিছনে দাঁড়িয়ে ওর চোখের বাঁধন খুলে দিতেই ইয়ানা আর্দ্র কে রাগ করা শুরু করলো তারপর যখন সামনে তাকালো তখন তো মুখটা হা হয়ে গেছে, এত্তো কিছু ইয়ানা খুশি হয়ে দুহাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে ফেলল তারপর কিছু বলার জন্য পিছন তাকিয়ে দেখল আর্দ্র নেই,। ওমা ওনি আবার কোথায় গেলো,,ইয়ানার ভাবনার মাঝেই দেখল আর্দ্র মাটিতে হাঁটু গেরে বসে আছে তারপর নিজের পিছন থেকে একটা বড় সড় টেডি বার করে সামনে সামনে এনে ধরে বলল,, হেই মিসেস বকবক তুমি কি আমার বাচ্চার মা হবে,, প্লিজ হ্যাঁ বলে দাও যদি না বলো না তাহলে কিন্তু বিনা হিসাবে ধরে বাচ্চার মা বানিয়ে দেবো।

আরে এটা কি আপনি আমায় প্রপোজ করছেন নাকি হুমকি দিচ্ছেন কোনটা?? আর এভাবে কি কেউ কাওকে প্রপোজ করে? মানুষ কেউ কাউকে প্রপোজ করতে গেলে বলে যে উইল ইউ ম্যারি মি?? বা আরো অন্য কিছু বলে আর আপনি কি বললেন সোজা আপনার বাচ্চার মা হওয়ার অফার দিলেন তাও যদি না বলি তাহলে নাকি বিনা হিসাবে ধরে বাচ্চার মা বানিয়ে দেবেন এটা কেমন কথা মগের মুল্লুক নাকি??

শোনো কে কি করল তাতে আমার কিছু যায় আসে না, সবাই যা করছে সেটাই যদি আমিও করি তাহলে আর হয় নাকি, আমি হলাম সবার থেকে আলাদা এই জন্য আমার প্রপোজ করার স্টাইল ও আলাদা, আর আমি তোমাকে বিয়ের অফার দেবো কেনো তুমি আমার অলরেডী বিয়ে করা বউ আর এই ছয় মাসে অনেক বার বাসর ও করছি তাই আর বিয়ের অফার করলাম না সরাসরি বাচ্চার মা হওয়ার অফার করলাম এখন তারাতারি একসেপ্ট করো পাতো বেথ্যা হয়ে গেলো।

যদি প্রপোজ একসেপ্ট না করি তাহলে কি করবেন,, ইয়ানা বুকে দুহাত গুজে ভাব নিয়ে মুখ টা অন্য দিকে ঘুরিয়ে বলল।

কিহ??

জি আমি আপনার প্রপোজাল একসেপ্ট করলাম না ওকে, ক্যান্সেল,, তা বাপি বাড়ি যাও,, সখ কত আমাকে ওনার বাচ্চার মা হওয়ার অফার দেয়।

চলবে,,,,,,,,??