আমার চারু পর্ব-১৬

0
411

#আমার চারু
#পর্ব-১৬
#ফারজানা নিলা(writer)

কাচাঁ রজনীগন্ধা ফুলের ঘ্রাণ।রজনীগন্ধা মানেই চারু।
কাব্য দৌড়ে ছুটে গেল ছাদে।
আজ চাঁদেরহাট বসেছে ছাদে।আরামদায়ক কেদারা বা ইজি চেয়ারে দোল খাচ্ছে কেউ একজন।সাদা শাড়ি কালো ছোট ছোট ফুল পাড়ের মধ্যে।খোলা চুল হালকা উড়ছে।গুনগুন করছে।

—-চারু
—কিছু বলবেন?
—কি করছেন মধ্যরাতে?
—কিছু ভূত এসেছিলো দূরের কবর স্থান থেকে, তাদের সাথে হালকা সময় কাটাচ্ছিলাম।
—বাহ,বেশ ভালো তো।চা খাবেন?
—আপনি যদি বানিয়ে আনেন,তাহলে খাওয়া যায়।

চায়ের খালি কাপ পরে আছে, ছায়া পরছে তাদের,কাপ যুগল।

—-চারু কেন এতো দেরি করলে?
—-সময় নিয়েছি।
—-কিসের সময় চারু,তুমি কি জানো এই একটি একটি দিন আমি কিভাবে কাটিয়েছি।
—-তা জেনে কি হবে আমার।
—-হ্যা,তোমার তো কিছুই আসে না।
—-হ্যা তা ঠিক।
—একদম চুপ।ভালোবাসি তোমায়।অনেকটা।

হামিদ সাহেবের বুকে ব্যাথা উঠেছে।ভালো ডাক্তার দেখাতে হবে।কলকাতায় নিয়ে আসা হলো হামিদ সাহেবকে।অপরাজিতা কান্নার সাগর তুলেছে।
জয় কলকাতায় এসেই কাব্যর ঠিকানায় এসে খোজ নিলো।কাব্য অফিসে চলে গিয়েছে।রিমা এখন আর এই বাড়িতে থাকেনা।

—–কাকে চাচ্ছেন?
—-কাব্য।এখানে কাব্য থাকেনা?
—-জ্বি এখানে কাব্য থাকে।কিন্তু উনি তো এখন অফিসে।
—-আপনি কে?
—-আমি চারু,এখানের পাশের ঘরে থাকি।আমি চাইলে আপনাকে ওনার অফিসে নিয়ে যেতে পারি।
—-হ্যা ঠিক আছে তাহলে চলুন।

এখনে তো কাব্য চাকরী করে।
—-আপনারা কারা?
—-আমরা ওনার বাড়ির লোক।বলুন জয় এসেছে।
—-আচ্ছা এখানে দাঁড়ান আপনারা।

বাবু আপনার বাসা থেকে লোক আইছে নাম কয় জয়।
—জয়!!এখানে।আচ্ছা আমি দেখছি।

—কি ব্যাপার তোরা এখানে
—-বাবা অসুস্থ হয়ে গিয়েছে।কলকাতা নিয়ে এলাম।
—কি হয়েছে জেঠুর আর কখন হলো?
—কাল রাতে বুকে ব্যাথা, বেড়েই চলেছে তাই নিয়ে এলাম।
—আচ্ছা দাড়া আমি বড় বাবুকে বলে আসি।

হাসপাতালে বসে আছে কাব্য জয় অপরাজিতা। সাথে চারু ও এসেছে।রিমাকে খবর পাঠানো হয়েছে।

অপরাজিতা চারুর দিকে অনেকটা রহস্য নিয়ে তাকিয়ে আছে।
—-এই মেয়ে এদিকে এসো তো
—আমায় বলছেন?
—হ্যা হ্যা তোমায়।
—জ্বি বলুন।
—তোমার নাম কি?
—আমি চারু।
—কই থাকো?
—আমি কাব্যর পাশের বাসায় থাকি।
—অহ প্রতিবেশী।
—জ্বি।
—তুমিতো বেশ সুন্দর দেখতে।তো তোমার বিয়ে হয়েছে?
—না এখনো না।

এর মধ্যেই রিমা হাজির।রিমা জানে চারু মানুষ না।রিমাকে আসতে দেখেই চারু আড়াল হয়ে গেল।কিন্তু একটা কিছু করতে হবে।

—মা কি হয়েছে?
—রিমা এদিকে আয়,তোর বাপের বুকে ব্যাথা।
—থাক মা কান্না করো না ঠিক হয়ে যাবে।

রিমা দরজার কাছে দাঁড়ালো, অনেকটা সন্ধ্যা হয়ে আসতেছে।ঠিক তখনি চারু অদৃশ্য অবস্থায় এসে রিমার কপাল ছুঁয়ে তার সেই স্মৃতি টুকু ভুলিয়ে দিয়েছে।যেখানে চারুকে হুজুররা ঘিরে ধরেছিলো।

চারু হাজির।

—চারু আপা তুমি?কতদিন দেখিনা তোমায়।
—হ্যা আমিও তোমায় অনেকদিন পর দেখলাম।

কাব্য পুরাই হতভম্ব।রিমা যেন জানেই না কিছু।চারু দূর থেকে ইশারা দিলো।

—-আন্টি আমি আপনাদের জন্য রাতের খাবার টা নিয়ে আসব।এখন আমি আসি।
—-ইস কি ভালো মেয়ে।যাও মা যাও।

অপরাজিতার চারুকে খুবই পছন্দ হয়েছে।যেন এখনি ঘরের বউ করে নিয়ে যাবে।

চারু ঘরে গিয়ে হাজার রকম খাবার রেডি করে ফেললো।সব বক্স করে হাসপাতালে নিয়ে গেল।
সবাই খাবার খাওয়ার পর এখন বসে আছে।

—-হাসপাতালে আমি আর জয় থাকব।তোমরা আমার বাসায় চলে যাও।চারু তুমি ওদের আমার বাসায় নিয়ে যাও।

একটি গাড়ি ডেকে, তাতে উঠে চলে গেল বাসায়।
কাব্যের ঘরে রিমা আর অপরাজিতা থাকবে।চারু তার ঘরেই থাকবে।
চারু কিছু শাড়ি নিয়ে এলো অপরাজিতার জন্য।
—আন্টি এগুলো আপনার জন্য।আপনি বাসি কাপড় ছেড়ে এখান থেকে নতুন কাপড় পড়ে নিন।
—আহ কি ভালো মেয়ে।

অপরাজিতা আর রিমা শুয়ে পরলো।
—-এই রিমা এই মেয়েরে তুই চিনোস
—হ্যা উনি তো এখানেই থাকেন।উনি নাকি কাব্য ভাইয়ার ওখানেই কাজ করেন।
—কি সুন্দর দেখছিস।জয় এর লগে যদি এর বিয়া দেই কেমন হয়।
—হ্যা ভালো হয়।দিয়ে দাও।এখন আমি ঘুমাবো।

চারু কাব্যের কাছে চলে গেল। কেউ চারুকে দেখছেনা।শুধু কাব্য দেখে।কাব্য বসে আছে।চারু তার হালকা হাতে চুল টেনে দিচ্ছে।প্রচন্ড ক্লান্তির শরীরে যদি এমন চুল টেনে দেয়, আরামে ঘুম চলে আসে।কাব্য ঘুমাচ্ছেনা তবে চোখ বন্ধ করে আছে।
জয় বাইরে গিয়েছে।বিড়ির নেশা উঠেছে।খেতেই হবে।

—-চারু
—হু
—-ভালোবাসো?
—উহু।
—কি!!
—হা হা হা,আরে বোকু তোমায় ভালোবাসি বলেই তো বারবার ফিরে আসি।একটা মজার কথা শুনবে?
—কি মজার কথা শুনি
—তোমার জেঠিমা আমার সাথে তোমার ভাই জয়ের বিয়ে ঠিক করতে চাচ্ছে।
—কি!!!কি বলছো কি,তুমি কিভাবে জানলে?
—আমি না জানলে জানবে টা কে শুনি।

কিরে একা একা কার সাথে কথা বলিস?
আর কার সাথে বলমু।একাই কথা বলি।
চারু মেয়েটা তো বেশ সুন্দর।এর কথা বলছিলি তাই না।
হ্যা এর কথাই বলছি।
তো বিয়েটা করে নে।
বিয়ে করে নিব।আরে তুই তো দারুন বললি।
হ্যা, শুভ কাজ ফেলে রাখতে নেই।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেড়ে নেওয়া ভালো।
ওহ হো ওহ হো বিয়ে বিয়ে।

চারু দুই ভাইয়ের কান্ড দেখে হাসে।হামিদ সাহেব আগে থেকে অনেকটাই সুস্থ মনে হচ্ছে।সুস্থ হলে বাড়ি নিয়ে যাবে।সাথে কাব্যও যাবে গোবিন্দপুরে।

এক সপ্তাহ পর হামিদ সাহেব পুরো ফুরফুরে হয়ে গিয়েছেন।তেল যুক্ত খাবার খেয়ে বুকে ব্যাথা হয়েছে।ডাক্তার বলেছে,তেলের খাবার বেশি না খেতে।
আজ সবাই গোবিন্দপুরে চলে যাবে।সাথে চারুও যাবে।তবে সেটা কেউ জানবেনা।
অপরাজিতা বারবার বলছে,আহ জোয়ান মেয়েটা ওখানে একা আমরা সবাই চলে এলাম।ওকেও নিয়ে আসা যেতো।
অপরাজিতার কথা শুনে সবাই অবাক।অপরাজিতা মেহমান পছন্দ করেন না।মেহমান মানে তার কাছে উটকো ঝামেলা।আর সে কিনা এই কথা বলছে।
অবশ্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে বদল হওয়া ভালো।

বাড়ি চলে গেল সবাই।রিমার চোখ তার বাবার থেকে বেশি কাব্যর দিকে।

আজ বাড়ির সবাই দাওয়াতে যাবে দূরের এক আত্মীয়ের বাড়ি।কাব্য যাবে না।তার এসব অপছন্দ।কাব্য যাবে না শুনে রিমাও যেতে নারাজ।তাই সেও রয়ে গেলো।

রাত দশটা।কাব্য পাড়ায় ক্রিকেট খেলে এসে বাসায় এসেছে।খেলার পর গোসল সেরে নিলে বেশ আরাম হয়।কাব্য গোসলে চলে গেল।
রিমা শাড়ি পড়েছে।খুব সুন্দর ভাবে সেজেছে।কাব্যর ঘরের দরজা খোলা দেখে সে কাব্যর ঘরে চলে এলো।বিছানায় এসে বসে আছে উঠে।
কাব্য চুল মুছতে মুছতে গোসল খানা থেকে বের হয়ে দেখে রিমা শুয়ে আছে।
কাব্য যেন শক খেল।
রিমা একটা পাতলা শাড়ি পড়েছে।পুরো শরীর ভেসে উঠছে কাব্যের সামনে।কাব্য চুপ করে আছে।কি বলবে ভাষা খুজে পাচ্ছেনা।
রিমা উঠে কাব্যকে টেনে বিছানায় নিয়ে নিলো।কাব্যের খালি ভেজা গায়ে রিমা জড়িয়ে ধরলো।

—-কি হচ্ছে কি রিমা।ছাড়ো আমায়।তোমার মাথা কি পুরো খারাপ হয়ে গিয়েছে।
—হ্যা খারাপ হয়ে গিয়েছে।

অমনি কাব্যর ঠোঁটে ঠোট মিলিয়ে দিলো রিমা।কাব্য ঝাটকা দিয়ে রিমাকে সরিয়ে দিলো।
রিমা শাড়ি সরিয়ে নিলো বুক থেকে। পুরো শাড়ি খুলে বিছানায় রেখে দিলো।কাব্যের সামনে রিমা এই খালি শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।আর তার চোখে একটু ও লজ্জা নেই।
প্রেম মানুষকে হয়তো অনেকটা বেহায়া করে দেয়।
কাব্য রুম থেকে চলে গেল।সে বাড়ি থেকে বাইরে চলে গেল।চারু সবটা বসে বসে দেখছিলো।

রিমা কান্নায় ভেংগে পরলো।মাটিতে বসে কাঁদছে। শাড়ি তুলে ঘরে চলে গেল।কাপড় পরে নিলো।
রিমা আয়নায় নিজের মুখ দেখে লজ্জায় মরে যাচ্ছে।

কাব্য সেই আত্মীয়ের বাসায় চলে গেল।রাতে জয় কে সাথে নিয়ে ফিরে এসেছে।

চলবে…….

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হলো জানাবেন)