আমার তুমি পর্ব-৩৯

0
393

#আমার তুমি
#পর্বঃ৩৯
#তানিশা সুলতানা

সায়ান নিজে হাতে সাজিয়ে দিচ্ছে তুলতুল। তুলতুল ড্যাপড্যাপ করে তাকিয়ে আছে সায়ানের দিকে। আয়না দেখতে দিচ্ছে না। বিছানায় বসিয়ে সায়ান মুখোমুখি বসে সাজাচ্ছে।

“ভুত সাজিয়ে দেবেন জানা আছে আমার।

সায়ান তুলতুলকে লিপস্টিক দিতে গেলে তুলতুল বলে ওঠে।

” সাজাবো
তো? আমার যেমন খুশি সাজাবো। তো তোর পবলেম কি? ইডিয়েট, সব সময় বেশি কথা বলিস।

চোখ রাঙিয়ে বলে সায়ান। তুলতুল গাল ফুলায়। সায়ান ফোঁস করে শ্বাস নেয়।

“এখন বেরোবো আমরা। খুব তারা আছে। রোমাঞ্চ করার একদম মুড নাই।
এরকম হট হট লুক নিয়ে বেসামাল করিয়ে দিবি না একদম।

ফুলে যাওয়া গালটা টেনে দিয়ে ঠুস করে ডান গালে একটা চুমু দিয়ে বলে সায়ান।
তুলতুল বড়বড় চোখ করে তাকায় সায়ানের দিকে। সায়ান তুলতুলের মুখে ফু দেয়। সাথে সাথে তুলতুল চোখ বন্ধ করে ফেলে। সায়ান মুচকি হেসে লিপস্টিক দিতে থাকে তুলতুলকে।

সাদা হিজাব বেঁধে দেয় তুলতুলের মাথায়৷ ওড়নাটা এক সাইডে দিয়ে পিন দিয়ে আটকে দেয়।
তারপর দুচোখ ভরে তুলতুলকে একবার দেখে নেয় সায়ান।

“পারফেক্ট

তুলতুলকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে বলে সায়ান। তুলতুল ভেংচি কাটে।
” ঢং দেখে বাঁচি না। অসব্ভ্য লোক একটা।

তুলতুল বিরবির করে বলে।

দীর্ঘ দুই ঘন্টা জার্নি করে একটা পার্কে তুলতুলকে নিয়ে আসে সায়ান। গাড়ির জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখছে তুলতুল। জায়গাটা নিরিবিলি। আশেপাশে লোকজন নেই বললেই চলে। খুব বেশু বড় না জায়গাটা। পুরোটা জুড়ে বেলুন দিয়ে সাজানো।

সায়ান তুলতুলকে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি লক করে চলে গেছে। সেই যে গেছে এখনো আসার নাম নেই। তুলতুল বিরক্ত হচ্ছে।

“পাখির সাথে ডেটিং এ গেছে মনে হয়।
বিরবির করে বলে তুলতুল।

” তোর সাথে যাবো ডেটিং এ।

সায়ানের কথা শুনে চমকে ওঠে তুলতুল। এ আবার কোথা থেকে আসলো।

“আআমি আপনার সাথে ডেটিং যাবে না।
তুলতুল মুখ ভার করে বলে।

” কেনো?

গাড়ির দরজা খুলে তুলতুলের দিকে ঝুঁকে বলে সায়ান।
তুলতুল মাথা নিচু করে ফেলে।

“আপনাকে আমার পছন্দ না।

রিনরিনিয়ে বলে তুলতুল।

” আমারও তোকে পছন্দ না। তবে কষ্ট করে বিয়ে করেছি তো একদম সিনেমার মতো। এমনি এমনি তো আর ছেড়ে দিতে পারবো না। তাই সুধা হিসেবে দজন খানিক বাচ্চা রেখে ছেড়ে দেবো তোকে।

তুলতুলের গালে হাত বুলিয়ে বলে সায়ান। তুলতুল চোখ পাকিয়ে তাকায় সায়ানের দিকে।

“আজাইরা লোক
বিরবির করে বলে তুলতুল।

সায়ান মাথা চুলকে কোলে তুলে নেয় তুলতুলকে। চমকে ওঠে তুলতুল। চোখ দুটো বড়বড় করে সায়ানের গলা জড়িয়ে ধরে।

” কককি করছেন? নামান বলছি।

তুলতুল হরবরিয়ে বলে।

“আজ কোনো ছাড়াছাড়ি নামা নামি নেই। জাস্ট ডেটিং আর ডেটিং

চোখ টিপে মিষ্টি হেসে বলে সায়ান।
তুলতুল লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। গাল দুটো লাল হয়ে যায়।

” আপনার এই রুপটা তো কখনো দেখি নি।

তুলতুল আমতা আমতা করে বলে।

“আরও অনেক রুপ আছে আমার। আস্তে আস্তে দেখতে পারবা।

কেঁপে ওঠে তুলতুল। এই প্রথমবার সায়ানের মুখ থেকে তুমি ডাকটা শুনলো। অদ্ভুত শিহরিণ বয়ে যায় মনের ভেতর।
বুকের ধুপবুকানি বেরে চলেছে। হার্টটাও দ্রুত গতিতে লাফাচ্ছে।

সায়ান সায়নের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে৷ তুলতুল সায়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মুচকি হেসে সায়ানের বুকে মাথা রাখে তুলতুল।
এই দিনটা একদিন না একদিন আসবে এটা জানতো তুলতুল। কিন্তু এতে তারাতাড়ি আসবে এটা জানতো না।

সাদা, লাল, গোলাপি, গোলাপ ফুলের পাপড়ি দিয়ে লাফসেক আঁকা তার মাঝখানে তুলতুলকে বসিয়ে দেয় সায়ান। ঠিক মাঝখানটায়।
ডান পাশে আই লেখা নাল নীল মোমবাতি দিয়ে। আর বা পাশে গোলাপ ফুলের পাপড়ি দিয়ে #আমার তুমি লিখে ইউ লেখা।

সায়ান তুহিনকে কল করে। তুলতুল চারপাশে দেখছে। নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না৷ সায়ান ওর জন্য এসব করেছে?

কয়েক মিনিটের মধ্যেই তুহিন চলে আসে। সায়ান তুহিনের হাতে ক্যামেরা দিয়ে তুলতুলের পাশে চলে যায়। বিভিন্ন এঙ্গেলের ছবি তুলে দেয় তুহিন। তুলতুল শুধু সায়ানকে দেখছে।

ছবি তোলা শেষ হতেই তুহিন চলে যায়। সায়ান তুলতুলের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। তুলতুল সায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে অনমনে।

“এসব তোমার জন্য করি নি। আমার ডজন খানিক বাচ্চাকাচ্চার জন্য করেছি।

সায়ান তুলতুলের কোমর জড়িয়ে ধরে বলে।
তুলতুল বুঝতে পারে সায়ান ওকে রাগানোর জন্য বলছে।

” ভাববেন না আপনাকে ভালোবেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
এসব আমি আমার ডজন খানিক বাচ্চা কাচ্চার জন্য করছি।

তুলতুলও বলে।
সায়ান ফিক করে হেসে ফেলে।

“চালাক হয়ে গেছিস?

তুলতুল সায়ানের নাক টেনে দেয়।

” আপনার জন্য।

সায়ান উঠে বসে তুলতুলের মুখোমুখি। পকেট হাতিয়ে একটা আংটি বের করে।

“তোকে প্রপোজ করবো বলে সেই দশ বছর আগে কিনেছিলাম। প্রপোজও করা হয় নি আর তোকে দেওয়াও হয় নি।
টিফিনের টাকা জমিয়ে আর টিউশনি করিয়ে এটা বানিয়েছিলাম।
বছর যেতে যেতে তোর আঙুলের মাপ পাল্টে গেছে তাই নতুন করে ভেঙে গড়িয়েছি।
এখন থেকে সব সময় এটা পড়ে থাকবি কেমন?

তুলতুলের হাত টেনে আংটিটা পড়িয়ে দেয় সায়ান। তুলতুল মাথা নারায়।

“তোকে ভীষণ ভালোবাসি রে। অনেকটা বেশি। বিশ্বাস করে যদি তুই ছাড়া আমি থাকতে পারতাম তাহলে কখনোই কোনো হ্মমা করতাম না।
সবটা অন্য রকম হতো যদি সেদিন তুই আমার হাতটা ধরতি। গল্পটা এতোটা লম্বা হতো না রে।

বিশ্বাস করে তুই যদি আবারও এমনটা করিস তাহলে তোকে আমি খুন করে ফেলবো।
না থাকতে তুলা আর না থাকবে জ্বালাপোরা।

তুলতুলের হাতের ভাজে নিজের হাত গলিয়ে বলে সায়ান।

” কখন আপনাকে ছেড়ে যাবো না।

তুলতুল সায়ানের বুকে মাথা রেখে বলে।

“আজকের আমি সবটা নতুন করে শুরু করে চাইছি। সবটা মানে সবটা। ধরে নে আজকেই আমাদের বিয়ে হয়েছে।
তুলতুল মুচকি হাসে।

” আচ্ছা ধরে নিলাম।

“রুম সাজিয়েছি ফুল দিয়ে। তুমি লাল টুকটুকে বউ সেজে অপেক্ষা করবে আমার জন্য। আমি বর সেজে তোমার কাছে আসবো। কেমন?

তুলতুলের দুই গালে হাত দিয়ে বলে সায়ান।
তুলতুল লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। ঠোঁটের কোনে ফুটে ওঠে এক চিলতে হাসি।
সায়ান তুলতুলের ললাটে অধর ছোঁয়ায়।

সায়ান আবার পকেট থেকে ফোন বের করে তুহিনকে কল করে। সাথে সাথে তুহিন ছোট একটা চকলেট কেক আর ছুড়ি এনে দিয়ে যায়।

” কেটটা কাটো।

দুজন মিলে কেট কাটে।
আরও কিছুখন দুজন দুজনকে অনুভব করে নরম গোলাপের পাপড়ির ওপর বসে।

এই পার্কের পাশেই ছোট ছোট কয়েকটা ঘর আছে। সেখানের একটা ঘর বেছে নিয়েছে সায়ান।

সন্ধার পরে তুলতুলকে সাজতে পাঠিয়ে দেয় সায়ান। নিজেও তুহিনের সাহায্যে বরের বেশে সাজে।

পাখি দেখছে শুধু। সায়ান যখন আয়নায় নিজেকে দেখে মুচকি হাসে তখনই পাখির দিকে নজর পরে।

পাখির চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে।
সায়ান পাখির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

“সরি সায়ান। বাট ভালোবাসা তো পাপ না বলো?
নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি নি। বাট পরে রিলাইজ করতে পেরেছি। আমি মরিচিকার পেছনে ছুটছি।

পাখি মাথা নিচু করে বলে। সায়ান মুচকি হেসে পাখির হাত ধরে।

” তুমি আমাকে প্রাণে বাঁচিয়েছো পাখি। তোমাকে সরি বলতে হবে না।
তোমার আমাকে ভালো লাগে। তবে তুমি আমাকে ভালোবাসো না। সেটাও তুমি খুব তাড়াতাড়ি টের পাবে।
মা সুমু আর তুলতুলের পরে যদি আমার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ কোনো নারী থেকে থাকে তাহলে সেটা তুমি।
সারাজীবন তোমার বেস্টফ্রেন্ড হয়ে থাকবো আমি। তুমি কষ্ট পেলে চোখের পানি মুছিয়ে দেবো। ঠিক যেমন সুমুকে দেই।
ছোট বোনের মতো আগলে রাখবো তোমায়।

পাখি মলিন হাসে।
“বেস্ট অফ লাক

সায়ান মুচকি হাসে।

ফুল সাজানো খাটে সায়ানের জন্য অপেক্ষা করছে তুলতুল। এই রুমের প্রতিটি জায়গায় ফুলের পাপড়ি দিয়ে #আমার তুমি লেখা।
” পাগল একটা
তুলতুল মুচকি হেসে বলে।

খট করে দরজা খুলে যায়। তুলতুলের বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। মানুষটা তুলতুলের খুব চেনা। তবুও নার্ভাস লাগছে। অস্বস্তি হচ্ছে। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
ঘোমটা আরও একটু টেনে দিয়ে তুলতুল কাচুমাচু হয়ে বসে।
ধপ করে দরজা লাগানোর শব্দ হয়। তুলতুল কেঁপে ওঠে। বিছানার চাদর খামচে ধরে।
ইচ্ছে করে ছুটে পালিয়ে যেতে।

“নাহহহ আজকে মনে হচ্ছে আমি শ্বাস বন্ধ হয়ে মরেই যাবো।
তুলতুল মনে মনে বলে।

চলবে