আমার তুমি পর্ব-৩৭+৩৮

0
311

#আমার তুমি
#পর্বঃ৩৭
#তানিশা সুলতানা

সায়ানের উন্মুক্ত বুকে মাথা রেখে তুলতুল আকাশ পাতাল ভাবনায় বিভোর। সায়ান গভীর ঘুরে আচ্ছন্ন। ভোর হয়ে এসেছে প্রায়। হঠাৎই তুলতুলের ঘুম ভেঙে গেছে। নিজেকে সায়ানের বুকে লেপ্টে থাকতে দেখে সরে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু সায়ান ছাড়ে নি। বরং আরও শক্ত করে ধরেছে। লোকটা ঘুমিয়ে আছে তবুও হাত বাঁধন একটুও হালকা হয় নি। বুকের লোম গুলো ভীষণ জ্বালাচ্ছে তুলতুলকে। তবুও তুলতুল কিছু বলে না।
ভাবতে থাকে সায়ানের কাছে টেনে নেওয়ার কথা। বেবি চাওয়া।
হঠাৎই লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে যায় তুলতুলের। এতখনে লজ্জা লাগে নি। সায়ান যখন কাছে এসেছিলো তখনও লজ্জা লাগে নি। আসলে তখন লজ্জা পাওয়ার কথা ভুলেই গেছিলো। কান্না করার ব্যস্ত ছিলো।

তবে নিসন্দেহে আজকে তুলতুল ভীষণ খুশি। কখনোই কেউ রাত বারোটার সময় বার্থডে উইশ করে নি। আদর করে চুড়ি পড়িয়ে দেয় নি৷ এতগুলো চুড়ি বার্থডে গিফটও করে নি কেউ।

“এই যে মিস্টার শুনছেন?
আজকে আপনাকে ভালোবাসি বলতে ইচ্ছে করছে। আপনার মুখ থেকে ভালোবাসি শুনতে ইচ্ছে করছে। আপনার হাতে হাত রেখে কুয়াশা ভেজা কানাডার পিচ ঢালা রাস্তায় হাঁটতে ইচ্ছে করছে। আপনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।

মনে মনে বলে তুলতুল। মুখে বলতে পারবে না। লজ্জা আর জড়তা ঘিরে ধরবে।

কিন্তু এখন তো জড়িয়ে ধরাই যায়। তুলতুল মুচকি হেসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সায়ানকে।

আজকে বোধহয় সূর্য উঠবে না। বা হয়ত উঠেছে। রুমটা এখনো অন্ধকার। অথচ বেলা দশটা বেজে গেছে। বাংলাদেশে তো জানালা ভেদ করে আলো ঢুকে পড়ে। কিন্তু এখানে আলো আসছে না কেনো?

সায়ান তুলতুলের মাথায় গভীর ভাবে চুমু খায়। তুলতুল চমকে ওঠে। সায়ান কি জেগে গেছে? তুলতুল ঘুমায় নি। সেই ভোর রাত থেকে জেগে আছে।

” এই তুলতুল
উঠবি না?

সায়ান তুলতুলের চুলের ভাজে হাত দিয়ে ঘুমঘুম কন্ঠে বলে। কেঁপে ওঠে তুলতুল। সায়ানের ঘুম ঘুম কন্ঠে বলা কথাটা হৃদয়ে আঘাত করে তুলতুলের। হৃদপিণ্ডে গিয়ে বারি খায়।
ঘুম ঘুম কন্ঠটা এতো আকর্শনীয় কেনো?

“কি হলো?

সায়ান আবার বলে।

” হুমমমম

তুলতুল আস্তে করে বলে।

“উঠ

তুলতুল উঠে বসে। সায়ানও বসে৷ তুলতুল সায়ানের দিকে তাকাচ্ছে না। সায়ান তুলতুলের দিকে এক পলক তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
তুলতুল হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। এই লোকটা এখন আশেপাশে থাকলে কেমন বেসামাল বেসামাল লাগে।

এলোমেলো চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করে হাত খোপা করে নেয়।
কাল রাতে সায়ান তুলতুলের জন্য ড্রেস এসেছে। সোফার ওপর রাখা। তুলতুল ধীর পায়ে বিছানা থেকে নামে। শপিং ব্যাগ গুলো খুলে। কয়েকটা গাউন।

সাদা রংয়ের একটা গাউন বেছে নেয় পড়ার জন্য।
তারপর আবার বিছানায় এসে বসে। এখন সায়ান বের হওয়ার অপেক্ষা।

কিছুখন পর সায়ান তোয়ালে পড়ে বের হয় এক হাত দিয়ে চুল ঝাড়তে ঝাড়তে। আরেক দরফা ক্রাশ খায় তুলতুল। বুকটা ধক করে ওঠে। আচ্ছা কাল রাত থেকে লোকটাকে এতো ভালো লাগছে কেনো? যেভাবেই থাকুক তাতেই ভালো লাগছে।

তুলতুলের খুব করে ইচ্ছে করছে সায়ানের চুলে হাত বুলাতে৷ কিন্তু এটা তো করতে পারবে না ও। সায়ান হেংলা ভাববে।

“তোরই বর। এভাবে নজর দিয়ে রোগা কেনো করে দিচ্ছেস?

সায়ান ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আয়নার মধ্য দিয়ে তুলতুলের দিকে তাকিয়ে বলে।
হকচকিয়ে ওঠে তুলতুল। দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নেয়। এদিক সেদিক তাকায়।

” আববপনার দিকে তাকায় নি আমি।

জোর গলায় বলে তুলতুল।

“ওহহহ আচ্ছা।

মিটমিট করে হেসে বলে সায়ান।

” দাঁত কেলানোর কি হলো?

তুলতুল রাগী গলায় বলেন।

“তুই টেরা এটা তো জানতাম না। না মানে তুই অন্য দিকে তাকিয়ে আছিস তবুও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তুই আমার দিকেই তাকিয়ে আছিস।

তুলতুল দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বুকে হাত গুঁজে বলে সায়ান।
তুলতুল দাঁত কটমট করে। সায়ান ফিক করে হেসে ফেলে। এক পা এক পা করে তুলতুলের দিকে এগোতে থাকে।

” ওমন করে দাঁত কটমট করিস না। দাঁত ভেঙে যাবে তো। তারপর আমার ফিউচার বেবিরা তোকে মা না ডেকে নানু ডাকবে।

সায়ান তুলতুলের কোমর জড়িয়ে ধরে বলে। তুলতুল হা করে সায়ানের দিকে তাকায়। এই লোকটা ওর কথাই ওকে ফেরত দিচ্ছে? ভারি অসব্ভ লোক তো।

“ছাড়ুন

রাগী চোখে সায়ানের দিকে তাকিয়ে বলে তুলতুল।

” এভাবে হট হট গ্রীষ্মকাল সেজে থেকে আমাকে ছাড়তে বলছিস?

ঘোর লাগা কন্ঠে বলে সায়ান। চমকে ওঠে তুলতুল। নিজের দিকে তাকায়। সাথে সাথে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। কাল রাতের সেই উল্টো করে পড়ে থাকা শার্টটা। সামনের তিনটা বোতাম খোলা।
সায়ান তাকিয়ে থাকে তুলতুলের দিকে। এই মুখটা মায়া দিয়ে ভরা। এই মায়ার জালেই সায়ান আটকে পড়েছিলে। তাই তো মেয়েটার জন্য এতে পাগলামি করতো।
সায়ান তুলতুলের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ায়। তারপর ছেড়ে দেয় তুলতুলকে।

“যাহহ ফ্রেশ হয়ে আয়।

তুলতুল এক মিনিটও সময় নষ্ট না করে দ্রুত চলে যায় ওয়াশরুমে। দরজা ঠাস করে বন্ধ করে হাঁপাতে থাকে। উনি কাছে আসলে শ্বাসটাও আটকে যায়।

সায়ান রেডি হয়ে নেয়। সাদা শার্ট কালো জিন্স। তুলতুলের হাতে সাদা ড্রেস দেখেই সাদা পড়েছে।

এমন সময় দরজায় নক পড়ে। সায়ান চুল ঘড়ি পড়তে পড়তে দরজা খুলে দেয়।
এক গাল হাসি নিয়ে পাখি দাঁড়িয়ে আছে। পাখির পরেও সাদা শার্ট ফ্রক।

” ওয়াও সায়ান আমার আর তোমার মেচিং হয়ে গেছে।

সায়ানকে ভালো করে পরখ করতে করতে খুশিতে গদগদ হয়ে বলে পাখি।

“এটা সিম্পল। হতেই পারে মেচিং এসে লাফানোর কি আছে?

কপালে ভাজ ফেলে বলে সায়ান। পাখির মুখটা থমথমে হয়ে যায়।

সায়ান দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়। পাখি ভেতরে আসে।

” আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই সায়ান।

পাখি আমতা আমতা করে বলে।

“আমি আগে বলি?
পাখি আমি বিবাহিত। আমি আমার বউকে খুব ভালোবাসি। খুব ভালো আছও তার সাথে। বাকিটা জীবন তার সাথে কাটাতে চাই। তোমার কিছু বাচ্চা মতো আমাদের মধ্যে ঝামেলা সৃষ্টি করে। ভুল বোঝাবুঝি হয়ে যায়।
তুমি নিশ্চয় চাইবে না। তোমার জন্য আমার কোনো পবলেম হোক?

সায়ান এক নাগারে কথা গুলো বলে৷ তুলতুল ওয়াশটুম থেকে বের হয়ে দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে আছে। সায়ানের বলা কথা গুলো শুনেছে।

চলবে

#আমার তুমি
#পর্বঃ৩৮
#তানিশা সুলতানা

“সায়ান

অস্ফুরণ কন্ঠে বলে ওঠে পাখি। চোখ দুটো ছলছল করছে। কান্না গুলো দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। বড়বড় শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে।

” ভালোবাসি তুলতুলকে। একদিন দুইদিন নয়। পুরো আঠারো বছর যাবত। অনেক অপেক্ষা অনেক সাধনার পরে পেয়েছি ওকে। হারাতে চায় না কোনোমতেই। আর এটাও চায় না তোমার জন্য আমাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা হোক। অনেক ঝড় ঝাপ্টা বয়ে গেছে।
এখন খুব ভালো থাকতে চায় আমরা।

সায়ান পাখির সোজাসুজি দাঁড়িয়ে গম্ভীর গলায় বলে সায়ান।

তুলতুল দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে পাখিকে। আজ পাখি যেভাবে কাঁদছে একদিন সায়ান এভাবেই কেঁদে ছিলো। বুক কেঁপে ওঠে তুলতুলের।

“সায়ান আমার দিকে দেখো।
আমার কান্না দেখে কিছু মনে পড়ছে তোমার? মনে পড়েছে মুখের অক্সিজেন মাক্স খুলে আমার হাত ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছিলে?
ওই তুলতুলের জন্য। নিজের শরীরে রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছি তোমায়। কেনো করেছি?
প্রতিমাসে রক্ত দেয় তোমায়। কেনো দেই?
বিকজ আই লাভ ইউ। তোমাকে ভালো রাখতে চায় আমি।
ছেড়ে যাওয়ার জন্য ভালোবাসি নি আমি।
কি করে পারছো এমনটা বলতে? কিভাবে পারছো ওই মেয়েটার মায়ায় আবার জড়াতে?

পাখি কাঁদতে কাঁদতে বলে। সায়ান বিরক্ত হয়।

” পাখি কি শুরু করলে তুমি?
এমনটা করার কোনো মানে হয়? আমি বিবাহিত। আমার বউ যদি খুনও করে তবুও সে আমার বউ। তাকে ছেড়ে দেওয়ার কোনো অবশন নেই।
ভীষণ ভালোবাসি। এই যে এখন তুমি আমার সাথে কথা বলছো। এটা দেখতে পেলে গাল ফুলিয়ে থাকবে। একটা বার জিজ্ঞেস করবে না “কি কথা বলছিলেন?
শুধু শুধু অভিমান পুষে রাখবে।
পাগল একটা।

তুলতুলের কথা বলতে গিয়ে সায়ানের ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি ফুটে ওঠে। পাখি সয্য করতে পারে না।

” তুলতুল এটা করলো। তুলতুল ওটা বললো। তুলতুল এটা খেতে ভালোবাসে। তুলতুল তুলতুল আর তুলতুল

পাগল হয়ে যাচ্ছি ওই নামটা শুনতে শুনতে। জাস্ট বিরক্ত লাগে।

পাখি মাথার চুল খামচে ধরে চিৎকার করে বলে।

তুলতুল চমকে ওঠে। চোখের কোণে পানির ছড়াছড়ি। কান্নার মাঝেও ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে।

আচমকা পাখি জড়িয়ে ধরে সায়ানকে। সায়ানের বুকে মাঝে লেপ্টে গিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে।

“আমি শেষ হয়ে যাবো সায়ান। প্লিজ ডু সামথিং।
আমি নিতে পারছি না। ভীষণ কষ্ট হয়।

তুলতুলের বুকের ভেতর ধক করে ওঠে। চোখ বন্ধ করে ফেলে।

” সায়ান পাখির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

“তুমি তো আমাকে ভালো রাখতে চাও তাই না?
তাহলে তুমি এটা কেনো বুঝো না আমি তুলতুলের সাথে ভালো থাকি। আমি থাকতে পারবো না ওকে ছাড়া। একটু বুঝো পাখি। ওই একটা নাম ছাড়া আমি অচল। পাগল পাগল হয়ে যাই।
তুমি আমার থেকেও ভালো কাউকে ডিজার্ভ করো।

পাখি ছিটকে দুরে সরে যায় সায়ানের থেকে।

” আমি তোমাকে চাই। ওই মেয়েটা তোমাকে ডিজার্ভ করে না। ওই মেয়েটা আবারও তোমায় কষ্ট দেবে। তোমাকে শেষ করে দেবে ওই মেয়ে।

চিৎকার করে বলে পাখি।

“পাখি শান্ত হও। আমরা ঠান্ডা মাথায় কথা বলবো। একটা সলিউশন খুঁজে বের করবো।

সায়ান পাখির হাত ধরে বলে। পাখি শান্ত হয়ে যায়।

” সত্যি সলিউশন খুঁজে দেবে? আমার হবে তুমি? ওই মেয়েটাকে ছেড়ে দেবে?

আদুরে গলায় নাক টেনে বলে পাখি।

“তুমি না গুড গার্ল। একটু সময় নাও। ঠান্ডা মাথায় ভাবো। নিজেই সলিউশন পেয়ে যাবে। আর যদি না পাও আমি তো আছিই। সবটা ঠিক করে দেবো আমি।

পাখির মাথায় হাত বুলিয়ে মুচকি হেসে বলে সায়ান।

পাখি আবারও হু হু কেঁদে ওঠে সায়ানকে জড়িয়ে ধরে।

“এবার রুমে যাও।
বুক থেকে পাখির মাথাটা তুলে যত্ন করে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে সায়ান।
পাখি নাক টেনে চলে যায়।

তুলতুল এবার ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। সায়ান ছেড়ে দেবে তুলতুলকে? কি করে পারবে? ছেড়েই যদি দেবে কাছে কেনো আসলো? মনে মনে তো নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছিলো তুলতুল। তাহলে কাল রাতে হঠাৎ করে ভালো কেনো বাসলো? এখন নিজেকে সামলাবে কি করে তুলতুল?

কান্নার আওয়াজ পেয়ে সায়ান তুলতুলের দিকে তাকায়। কান্নার কারণটা বুঝে যায়। তবুও নিজের সম্পর্কে বলার প্রয়োজন মনে করছে না সায়ান।

একটা সম্পর্কের মূল ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস। আর তুলতুলের সায়ানের প্রতি এইটুকু বিশ্বাস নেই। মস্তিষ্ক পুরোটাই ফাঁপা। এইটুকুও বোঝে না মেয়েটা। সায়ান আর যাই হোক ওকে ছাড়বে না।

” ওখানে দাঁড়িয়ে কাঁদছিস কেনো? কেউ মরেছে?

সায়ান চুল ব্রাশ করতে করতে বলে।
চট করে চোখের পানি মুছে নেয় তুলতুল। হাতে থাকা সায়ানের ভেজা শার্টটা নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। বেলকনিতে তোয়ালে আর শার্ট মেলে দিয়ে আসে।

সায়ান খাবার নিয়ে বিছানায় বসে আছে।
তুলতুল সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
নিজেকে খুঁটিয়ে জানা দেখতে থাকে।

“আচ্ছা তুলতুলের থেকে পাখি কি বেশি সুন্দর?
অবশ্যই পাখি বেশি সুন্দরী, স্মার্ট, মর্ডান, বাবার ভুরি ভুরি টাকা আছে।

নিজের ওপর নিজেই বিরক্ত হচ্ছে তুলতুল। চিটুনিটা ফেলে দেয়।

” তোর থেকে পাখি অনেক সুন্দর। এখন এসব চিন্তা না করে খেতে আয়।

সায়ান তুলতুলের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে।

দাঁতে দাঁত চেপে কটমট চোখে সায়ানের দিকে তাকায় তুলতুল।
“তো যান না পাখির কাছে। এখানে থাকতে কে বলেছে আপনাকে?
মনে মনে বলে তুলতুল। মুখে বলার সাহস নেই। যদি সত্যিই চলে যায়। তখন?

গাল ফুলিয়ে সায়ানের পাশে গিয়ে বসে।
সায়ান রুটি ছিঁড়ে তাতে ভাজি পুরে তুলতুলের মুখের সামনে ধরে।

” পাখি নিয়ে জেলাস?

মিষ্টি হেসে বলে সায়ান।
তুলতুল চমকে ওঠে। মাথা নিচু করে ফেলে।

“নননাহ তো
আমি কেনো জেলাস হবো? পাখিকে বিয়ে করে তিন বাচ্চার বাবা হয়ে গেলেও আমার কিচ্ছু যায় আসে না।

অভিমানে বুক ভরে আসছে তুলতুলে। গলা টাও ধরে আসছে। কথা গুলো বলার সময় বুকের ভেতর অসয্য ব্যাথা হচ্ছিলো।

সায়ান শব্দ করে হেসে ফেলে। তুলতুল গোলগোল চোখে সায়ানের দিকে তাকায়।

” খাবারটা মুখে না নিলে এখুনি চলে যাবো পাখির কাছে৷ ওকে খায়িয়ে দিয়ে আসবো।

সায়ানের কথা শেষ হওয়ার আগেই তুলতুল তারাহুরো করে খাবারটা মুখে পুরে নেয়।
আবারও হেসে ফেলে সায়ান।

“কাল না বলছিলি তোর ডিভোর্স চাই?
ওকে দিয়ে দেবো তোকে ডিভোর্স। তুই যা চাইছিস তাই হবে। ডিভোর্স অলরেডি তুই বানিয়ে ফেলছিস। বাংলাদেশে ফিরেই তোকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো। আর আমি পাখিকে বিয়ে করে নেবো।
তোকে বিয়েতে অবশ্য নেমন্তন্ন করবো। দামি গিফট নিয়ে আসবি কিন্তু।

ফুরফুরে লাগছে সায়ানকে। কতো নিঃসংকোচে কথা গুলো বলে দিলো। তুলতুলের নিশ্বাস ভারি হয়ে আসছে। চোখের অবাধ্য পানি গুলো ঝড়ে পড়া শুরু করে দিয়েছে।
সয্য করতে পারেন না তুলতুল৷ হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে।
সায়ান ভরকে যায়। এটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।

সায়ানের হাতে থাকা খাবারের প্লেটটা পাশে রেখে সায়ানকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে তুলতুল।

” আমাকে কেনো এতো কষ্ট দেন আপনি?
কাঁদতে কাঁদতে বলে তুলতুল।
সায়ান মুচকি হেসে তুলতুলকে জড়িয়ে নেয়।

“পাখি খুব অবুঝ মেয়ে। বাবার আদরে বড় হয়েছে তো। যখন যা চেয়েছে তাই পেয়ে। এখন ওর সাথে বাজে বিহেব করলে হিতে বিপরীত হবে। ওকে বোঝাতে হবে।
সায়ান মনেমনে বলে।
এবার তুলতুলকে একটু জ্বালানোর মতলব এঁটে বসে।

” কান্না কাটি করে আমার মন গলাতে পারবি না তুই।

গম্ভীর গলায় বলে সায়ান।

চলবে

বানান ভুল থাকতে পারে। একটু মানিয়ে নেবেন।