আমার_একটাই_যে_তুই পর্ব-১৩

0
6858

#আমার_একটাই_যে_তুই❤️
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
#পর্ব_১৩

বাস চলছে খাগড়াছড়ি দিকে। সময় রাত…১০ঃ২০ মিনিট।আমি মুখ গোমড়া করে জালানার দিকে বাহিরে তাকিয়ে আলো আধারের খেলা দেখছি। আর আমার ঠিক পাশেই বসে আছেন ইউসুফ ভাই। তার দিক না তাকিয়েও বুঝতে পাড়ছি তিনি আমার দিক চোখ গরম করে তাকিয়ে আছেন। তার যথেষ্ট কারণ আছে। তিনি কিছুক্ষণ আগে আমাকে এক গাদা খাবার এনে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,,

–” ফিনিশ ইট! ”

আমিও তখন ভেংচি কেটে খাবার সরিয়ে দিয়ে বললাম,,

–” খাবে না!”

তখন উনার থমথমে গলায় বললেন,,

–” কুহু বাচ্চামো কেন করিছিস? সকাল থেকে কিছু খাস নাই! এখন তামশা বাদ দিয়ে খেয়ে নে!”

–” আপনি শুন্তে পাননি? নাকি কথা কানে যায় না? বলছি না খাবো না?”কাটকাট জবাব দিলাম আমি।

ইউসুফ ভাইয়া কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। তারপর ছোট একটা শ্বাস ফেলে, স্লো ভয়েসে বললেন,,

–” বাবুইপাখি কেন এমন করছিস? প্লীজ খেয়েনে না! প্লীজ? পড়ে দেখা যাবে সবাই ঘুড়চ্ছে ফিরছে তুই অসুস্থ হয়ে হোটেলে পড়ে আছিস!”

আমি আগের মতোই জবাব দিলাম,,

–” খাবো না বলছি ব্যাস খাব না! আপনাকে কি বলছি আমাকে নিয়ে আসুন? কেন এনেছেন? তামাশাটা বরং আপনি করেছেন আমার সাথে! বুঝতে পারছেন! কতটা ট্রিপিক্যাল সিচুয়েশন তৈরি করেছেন আমার জন্য?? এমনিতে ঝামেলায় কম না আমার লাইফে! কেন করছেন এমন?হোয়াই??”

ইউসুফ ভাইয়া আমার কথায় অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন হয়তো ভাবেননি! তার সাথে এভাবে কথা বলবো আমি! তখনি পাশ থেকে তিথি বলল,,

–” খেয়েনে না বনু। সকাল থেকে তোর পেটে কিছু পড়ে নি! কান্না করে চলছিলি! এখন তো খা! আচ্ছা আমি খাইয়ে দেই?”

–” আমি খাবো না তিথি। আমার পেটে খুদা নাই! তোর মন চাইলে তুই খা! এক দিন না খেলে আমি মরে যাবো না! মরলেই ভাল হতো সবাই মুক্ত হতো!”

আমার কথা শেষ হতে না হতেই পাশ থেকে ইউসুফ ভাইয়া ধমকে উঠলেন,,

–” ভাল কথা শিখেচ্ছিস দেখছি তুই? অনেক বড় বড় কথা বলছিস?খুব বুলি ফুটেছে দেখছি তোর মুখে? খাবি না তো? তাই তো? দাঁড়া দেখচ্ছি মজা, তুই খাবি না তোর ঘাড় খাবে!”

বলে আচমকা ইউসুফ মুখ চেপে ধরলেন আমার। মুখ টা হা হতেই, মুখে খাবার পুড়ে দিয়ে মুখ বন্ধ করে দিলেন!চোখ চোখ বড় বড় করে তার এমন কাজ দেখছি আমি! উনি এমন কিছু করবেন ভাবনার বাহিরে ছিল। আমি খাবার না চিবুয়ে মুখে পুড়েই বড় বড় চোখে তাকিয়ে দেখেই যাচ্ছি।তখনি তিনি রাম ধমক দিলেন আমায়। সাথে সাথে চিবুনো স্টার্ট হয়ে গেল আমার। খাবার শেষ হতেই ইউসুফ ভাইয়া আমাকে বললেন,,

–” ঘুম পাচ্ছি কি তোর? ঘুম ধরলে আমার কাঁধে মাথা রেখে গুমিয়ে পর!”

আমি সাথে মাথে বললাম,,

–” আমি আপনার কাঁধে শুবো না!”

–“কেন?”

–“কারণ আমি পরপুরুষের কাঁধে মাথা রাখি না?”

ইউসুফ ভাইয়া চমকে গেলেন। নিজেকে সামলে বলল,,

–” কে পরপুরুষ? ”

ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দিলাম,,

–“আপনি!”

তিনি যেন আকাশ থেকে পড়লেন এমন ভাব করে বললেন,,

–” আমি পরপুরুষ! ”

–” আমি কি উর্দু ভাষা বলেছি? পিউর বাংলায় বলেছি, কোনো মিক্সড ছাড়া! যে, ইউ আর পরপুরুষ ফর মি!”

তখন থেকেই “পরপুরুষ” কথাটা আমার মুখ থেকে শুনার পর থেকেই রাগ মিশ্রীত চোখে চেয়ে আছেন তিনি। যা আড় চোখে বার কয়েক দেখতে পেয়েছি আমি।সরাসরি তাকা বার সাহস আমার নেই। পড়ে দেখা যাবে সেই চোখ দিয়েই জলিয়ে পুড়িয়ে ছাই ছাই করে দিবেন। তাই আমি বাহিরে তাকিয়ে। বুঝতে পাড়চ্ছি খুব আমার কথাটা হজম করতে পারেন নি উনি। ভাল হয়েছে রাগ করেছে! রাগ হলেও বরং আমার থেকে দূরে থাকবেন তিনি! এটাই ভাল সবার জন্য!

ইউসুফ ভাইয়া এভাবে বসে থেকে উঠে গেলেন কিছুক্ষণ পর। তার সিটে তিথি এসে বসতে বসতে বলল,,

–” কুহু? কি করেছিসরে তুই? ভাই রেগে নাক মুখ লাল করে আছে?”

আমি চুপ রইলাম। কি বলবো? তখন তিথি আমাকে ধাক্কা দিয়ে বলল,,

–” কি হলো বলছিস না কেন?”

আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম,,

–” কি বলবো?”

–“ওই যে ভাইয়া উঠে গেল কেন?”

–” আমি তাকে পরপুরুষ বলছি!”

আমার কথা শুনে তিথি ভুত দেখার মতো তাকিয়ে রইলো ড্যাব ড্যাব করে। তারপর হালকা ঢোক গিলে বলল,,

–” সিরিয়াসলি কুহু! তুই এটা কি করলি? তুই কি বুঝিস না ভাই তোকে লাইক করে? তুই তো ছোট না! কোনো মেযের প্রতি কোনো ছেলের ফিলিংস কাজ করছে? তা একটা মেয়ে ইজিলি বুঝে যায়? তুই কেন পাড়চ্ছিস না? তুই তো রুমে বসেছিল দরজা আটকে যাবি না বলে! তুই কি জানিস? কতটা লড়েছে তোর জন্য ভাইয়া চাচীর সাথে??”

–” তাইতো আমি চাই না তিথি! আমি চাই না আমার জন্য কেউ লড়ুক কারো সাথে। বুঝেছিস?”

–” তাহলে এটা কি! এখন বলিস না কুহু এসব মিথ্যা? ভাইয়ার কথা বাদ দিলাম! তোর মনে কিছু নেই!

আমার ফোন এগিয়ে দিয়ে বলল তিথি। যেখানে ইউসুফ ভাইয়ার কাল রাতের ছাদের ভিডিওটা চলছে!

আমি অবাক হলাম! তারপর আমতা আমতা করে বললাম,,

–” তুই এটা কিভাবে!”

–” ছাদে পেয়েছিলাম আজ ভোরে তোর ফোন দরজার কাছে! ভিডিও চলছিল। কৌতুহল জাগচ্ছিল। তাই দেখেছিলাম যেহেতু তোর পাসওয়ার্ড জানি তাই কষ্ট হয়নি! সরি তোর পার্সোনাল বিষয় ছিল এটা বাট আমার তো জানিস কৌতুহল জেগেছে তাই আর কি! প্লীজ ডোন্ট মাইন্ড!”

আমি কিছু বললাম। তিথি ও চুপ! এখন চলছে নিরবতা। মাঝে মাঝে গাড়ির ঝাঁকি আর স্ব স্ব বাতাসের শব্দ। তখনি তিথি আমার হাত ধরে আবার বলতে শুরু করলো,,

–” কুহু তুই ইউসুফ ভাইয়াকে ভালবাসিস আমি জানি! কিন্তু কেন বলিস না তাকে! কেন বুঝতে দিস না? ”

আমি এক পলক ইউসুফ ভাইয়ার দিকে তাকালাম। চোখ বুজে আছেন উনি। হয়তো ঘুমিয়ে আছেন! তার গুমন্ত চেহারা দেখতে ভাল লাগে আমার খুব বেশী ভাল লাগে। আলতো করে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে হয়নতার মাথা চুল গুলো। তার দিক তাকিয়েই ছোট্ট শ্বাস নিয়ে তিথির দিক অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে মলিন হেসে বললাম,,

–” সব ভালবাসা যে পরিপূরণতা পেতে নেই।”

তিথি তখন আমার হাত টা শক্ত করে আকড়ে ধরে বলল,,

–” ঠিক আছে মানলাম। সব ভালবাসা পরিপূরণতা পেতে নেই! কিন্তু কুহু! বোন আমার, প্রকৃতি যখন কিছু মুহূর্ত উপহার দেয়! তখন কিন্তু দু হাত তুলে ঝাঁপটে ধরতে হয়!”

আমি কিছু বললাম শুধু তিথির কথায় চেয়ে রইলাম তার দিক।
__________________
সকাল…..৫ঃ৩০।
গাড়ির ঝাঁকুনিতে ঘুম ভাঙ্গেইতেই নিজেকে ইউসুফ ভাইয়ার বুকে পাই আমি। সাথে সাথে সরে আসতেই মিটমিটে হেসে ইউসুফ ভাইয়া বললেন,,

–“কেউ একজন কাল বলেছিল, পরপুরুষের কাঁধে মাথা রাখবে না। কিন্তু ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে সেই পরপুরুষের বুকে ঘুমিয়ে!

আমি তখন লজ্জায় কিছু বলতে পাড়চ্ছিলাম নিচের ঠোঁট কামড়ে জানালার বাহিরে তাকিয়ে হাসচ্ছিলাম বিনা শব্দে! লোকটি প্রতিবার লজ্জায় ফেলার একটি চান্স মিস দেয় না! কিন্তু উনি এখানে কি করছেন? এখানে তো তিথি ছিল!তার দিক ফিরে চোখ ছোট ছোট করে বললাম তাকে,,

–” এখানে তিথি ছিল! আপনি কেন? ও কই গেল? ”

ইউসুফ ভাইয়া বলল,,

–“আমার সিট আমি তিথিকে দিছি কিছু সময়ের জন্য! আবার নিয়ে নিয়েছি! এনি প্রবলেম??আর হে দূরে গিয়ে বসুন! আমি পর মহিলার সাথে কথা কম বলি ওকে!!”

আমি তখন উনার কথায় হা হয়ে গেলাম। কিসুন্দর আমার কথা আমাকে ফিরে দিচ্ছে। আমিো কম না। আমিও ভেংচি কেঁটে সোজা হয়ে বসে গেলাম।তখন ইউসুফ ভাইয়ার ঠোঁটে হাসি! এই হাসি দেখে অন্য কোনো সময় মুগ্ধ নয়নে চেয়ে দেখতাম। কিন্তু এখন রাগ উঠছে। গা জলছে তার হাসিতে হুহ!!

দেখতে দেখতে গাড়ি এসে থামলো খাগড়াছড়ি বাস স্ট্যান্ডের সামনে। একে একে নেমে এলো নুশরা, বুশরা, তিথি, রাহুল ভাইয়া, ভাবী, রাহুল ভাইয়ার খালার দু ছেলে, হাসান, ফুয়াদ আর আমি আর ইউসুফ ভাই।সব মিলিয়া হৈ-হুল্লোড় বিষয়। কিন্তু আমার কাছে মোটেও না। কেন জানি চেয়েও খুশি হতে পারছি না।

তখনি শুনা গেল নুশরার ন্যাকা কান্নার কন্ঠ,,

–” ভাইয়া গাড়ি আনলেই হতো। বাসে বসে আমার ঘুম হয়নি রাতে! গাড়িতে আরাম করে ঘুমাতাম উফ..!”

তখনি পাশ থেকে হাসান ভাইয়া চাটি মেরে বরল নুশরাকে,,

–” এটা পাহাড়ি এলাকা গাধী! গাড়ি দিয়ে নে এভাবেই মজা বেশী! খোলা মেলা জিপে বসে, চাঁন্দের গাড়ি করে যাবো! আহ্ কি খুশি খুশি লাগেরে মামা!”

সাথে সাথে হেসে দিল সবাই!!সাথে আমিও।তারপর হাঁটা ধরলাম সবাই চার্ন্দের গাড়ির দিক!তখনি একটি ছেলে এসে বলল…!!!

চলবে,