আমার_একটাই_যে_তুই পর্ব-২৬ | Emotional love story

0
5186

#আমার_একটাই_যে_তুই❤️
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
#পর্ব_২৬

সুখের সময় গুলো যেন অতি দ্রুত ফুরিয়ে যায়। সময়ের বাহ মানে ভাসিয়ে নিয়ে যায় সুখের ভেলা। দিয়ে যায় এক রাশ দুঃখের ছড়া-ছড়ি! এটাই হয়তো নিয়ম। দিনের পরে যেমন আসে রাত। রাতের পরে আসে আবার দিন। ঠিক তেমনি সুখের পর আসে দুঃখ!তেমনি সেদিনের পর থেকে আমার জীবনে ঢেকে গেল কালো রঙ্গের ছায়ায়। বার বার মনে হয় সে দিন টি যদি শেষ না হতো?

সেদিন ইউসুফ ভাইয়ের হাতটি ধরে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত হেটে বেড়িয়েছি অনেকক্ষন।হুট করে সেদিন ইউসুফ ভাইয় আমাকে থামিয়ে দিয়ে আমার ডান পাশে ইশরা করলেন তাকাতে। তখন কেবল চারিদিকে ভোরের আলো ফুটচ্ছিল। আমি সেদিকে তাকাতেই অবাক হলাম। খুশিতে চোখ দুটো চক চক করতে লাগলো আমার।সূর্যি মামা উঁকি দিচ্ছে। নিজের ঘর থেকে বের হয়ে পুরো পৃথিবীকে আলোকিত করে তুলছে! ততখনে আশে পাশে অনেক মানুষ এসে হাজির হয়েছে।কেউ কেউ ছবি তুলছে! আমি মুখে হাত দিয়ে দেখে যাচ্ছি! ইউসুফ ভাই তখন হেসে বললেন,,

–” কেমন লাগলো সারপ্রাইজ? ”

আমি উৎকণ্ঠা,,

–” মাশাল্লাহ্! সাজেকের সেই সূর্য উদয়ের থেকে এটি বেশি সুন্দর। ”

ইউসুফ ভাই হেসে ফেললেন। বললেন,,

–” নাহ্! দুটো দুরকম সুন্দর! একটি সাগরের বুক চিড়ে বের হয় তো আরেকটি পাহাড়ের বুক চিড়ে!”

–“হুম! সত্যি সুন্দর নেতা সাহেব আপানেক অনেক ধন্যবাদ! এত সুন্দর একটা সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য!”

ইউসুফ আবার হাসলেন। আমার কাছে এসে এক হাতে কোমর জড়িয়ে কাছে নিয়ে এলেন তার। আমি প্রথমে ভয় তো পরে তার স্পর্শ ভাললাগা কাজ করতে লাগলো। চুপ করে তার স্পর্শ উপভোগ করতে লাগলাম। লজ্জায় আমি আর তার দিক তাকালাম না।
ইউসুফ ভাই তখন আমাকে তার দিক ঘুরালেন।দু হাতে আমার মুখ খানা ধরে বললেন,,

–“বাবুইপাখি তুমি কি জানো? তুমি যখন লজ্জা পাও! কতটা ইয়াম্মি লাগে! মনে হয় গাপুসগুপুস করে খেয়ে ফেলি তোমাকে!”

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

আমি তো এমনিতে লজ্জা পাচ্ছিলাম। তার কথায় আরো বেশি লজ্জা পেতে লাগলা তাই তার দিকে না তাকিয়ে তার বুকে মুখ গুঁজে রইলাম।ইউসুফ ভাইয়াও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন আমায়। মনে হচ্ছিল আমি বুঝি এই হারিয়ে যাবো! ঠিক তখনি ইউসুফ ভাইয়ার ফোন ভাইব্রেট শব্দ হতে লাগলো। কেন জানি এই ফোনের শব্দে বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো। কেন এমন হয়েছিল তা সেদিন বুঝতে না পাড়লেও আজ হারে হারে তা টের পাচ্ছি!

সেদিন ফোনের ভাইব্রেট হয়ে চলছি! ইউসুফ ভাই ফোনটি তুলছিল না। বরং বিরক্ত হচ্ছিল। আমি বললাম,,

–“নেতা সাহেব! দেখুন কে কল করেছে! ইম্পর্টেন্ট ও হতে পারে!”

–” নাহ্! এই মুহূর্তে তুই ছাড়া আমার কাছে কোন কিছুই ইম্পর্টেন্ট নয়!”

আমি হেসে দিলাম। বললাম,,

–” হে আমি জানি! কিন্তু তুলুন তো ফোনটি? বাসা থেকেও কেউ দিতে পারে? আমরা তো না বলে এসেছি হয়তো টেনশন করছে!”

আগত আমার পিড়াপিড়িতে ফোন হাতে নিয়ে ভ্রু কুচকালো। বলল,

–” মিশু কল করেছে! কিন্তু এতো সকালে কেন?”

চিন্তায় পড়ে গেলেন ইউসুফ ভাই! ফোনটা তুলতেই তিনি স্তব্ধ হয়ে গেলে। শূন্যে তার দৃষ্টি! হুট করেই পাল্টে গেল তার হাসি মুখখানা। সেদিন হাজার জানতে চেয়েও জানতে পারি নি কি হয়েছে! শুধু অস্থিরতা দেখছি তার!সে খানে সেদিন আর এক মুহূর্ত না থেকে বের হয় গেলেন আমায় নিয়ে! আমি পুড়োটা রাস্তা শুধু ইউসুফ ভাইয়াকে দেখেই গেছি! চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।চুল গুলো অগোছালো। কিছু ঘন্টার ব্যবধানে যেন সব পাল্টে গেল! আমি হাজার বার জিগ্যেস করেও উত্তর পাইনি।

______________________________________________

সেদিন গাড়ি এসে থামে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। আমি অবাক হয়ে রইলাম। হাসপাতালে কেন হঠাৎ! কারো কি কিছু হয়েছে! হু হু করতে লাগে আমার বুক খানা।গাড়ি সাইডে রেখেই তিনি ছুটে গেলেন হাসপাতালের ভিতরে! পিছনে গেলাম আমি! আই সি ইউর সামনে আসতেই! বড় মামি ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলেন ইউসুফ ভাইকে! আর কাঁদতে লাগলেন ডুকরে। আমি এখনো অবাক চোখ তাকিয়ে দেখচ্ছি সব।তখনি রাহুল ভাই কোথা থেকে দৌঁড়ে এসে বলল,,

–” ইউসুফ চাচুকে ইমিডিয়েটলি ঢাকা শিফট করতে হবে! হাতে সময় কম! ”

ইউসুফ ভাই মাথা নেড়ে রাহুল ভাইয়ার সাথে চলে গেলেন মামিকে ওয়েটিং রুমে বসিয়ে। কেমন থমথমে পরিবেশ। বাড়ির সবাই উপস্থিত! আমি কি করবো বুঝতে পাড়ছি না। চোখ ভিজে উঠছে বার বার! বড় মামার কি এমন হয়েছে যে তাকে ঢাকা নিচ্ছে? বা কেনই বা হাসপাতালে। একদিন আগেও তো সুস্থ ছিলেন তিনি! শেষ পরীক্ষার দিন তিনি নিজেই ড্রপ করেছিলেন আমায়! মানুষটি যে তার বাবার থেকে কম না!বরং বাবার থেকে বেশি। অনেক আদর করেন তিনি আমায়।

মামি আবার গুমের কেঁদে উঠলেন ছোট মামি সামলাচ্ছেন! নানু মাকে ভাবি সামলাচ্ছে। সবাই কাঁদচ্ছে। ওয়েটিংরুমের ফলকের মাঝে কেমন একটা গম্ভীরতা ছেয়ে আছে।তাদের কাছে যেতে কেমন অপরাধ বোধ কাজ করছে! যাবো কি যাবো না দ্বিধায় আছি!

তখনি মিশুপি এলেন হাতে কফির কাপ। মামির দিক এগিয়ে দিতেই চোখ পড়ে তার আমার দিক তেড়ে এসে থাপড় লাগায় আমার গালে। কটমট করে বললে,,

–” রং না তোর শরীরে খুব! খুব জ্বালা তোর? হে!”

আমি কিছুই বুঝলাম না বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলাম তার দিক। এ ব্যক্তির মুখ থেকে কখনো একটা ধমক শুনে নি! নিজের বাচ্চার মতো আগলে রাখতো তার মুখ থেকে এমন কটু কথা মানতে কষ্ট হচ্ছিল আমার।চোখ থেকে বড় ফোঁটার জল পড়তে লাগলো গাল গড়িয়ে নাক বেয়ে। আমি নিজেকে কোনো রকম সামলে শুধু বললাম,,

–” কি বলছো এসব মিশুপি আমি কি করেছি? এসব বিশ্রী কথা কেন বলছো!”

তখনি পিছন থেকে ছোট মামি তাচ্ছিল্য করে বলল,

–” তিনি রাত দিন ছেলেদের সাথে রাত কাটাবে! ফুর্তি করবে! আর আমরা বললেই হবে বিশ্রী কথা! নষ্ট ছেলে মেয়ে কোথাকার!”

ছোট মামীর কথায় আকাশ থেকে পড়লাম। আমি ছেলেদের সাথে রাত কাঁটাই মানে? তখনি বড় মামি ছুটে এসে আমার চুলে টেনে ধরে মারতে লাগলেন এলো পাথারি।কড়মড় করে বললেন,,

— “তোর জন্য এক মাত্র তোর জন্য আমার সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে! তোরে আমি আজ মেরে ফেলবো। তোর জন্য আমার স্বামী মৃত্যুর সাথে পান্জা লড়ছে! তোর জন্য আমার ছেলে অবাধ্য! খুব জ্বালা না তোর এ শরীরে! দু দিন পর পর আমার ছেলেকে নিয়ে রাত কাঁটাতে চলে যাস? হুম বল! কি হলো বলিস না কেন? বল!”

আমি আমাকে মেরেই যাচ্ছেন। আর এসব কথা বলেই যাচ্ছেন! আমি মারের থেকে তার কথায় আহত হলাম বেশি! তার থেকে বেশি অবাক আমার পাশে আজ কেউ নেই! কেউ না। সবাই নিজের মত বসে! মিশুপির ও কোনো হেলদুল নেই। নিজেকে এখন সত্যি নিকৃষ্ট লাগচ্ছে! তাউ নিজেকে ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছি! পারছি না। এক পর্যায় আমি ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। জুতা খুলে এবার মারতে শুরু করে। আর বলে,,

–” আজ তোর রূপের জ্বালে না ফাসাতি আমার ছেলেকে না সে তোর আগে পিছে ঘুড়তো। আর না আজ তার বাবাকে ছেড়ে তোর সাথে রঙ্গ লিলা করতো। আর না আমার স্বামীকে কেউ খুন করার ট্রাই করতো!”

মামি কাঁদচ্ছে আর মারছে আমায়। বড় মামাকে খুন করার ট্রাই করেছে শুনে বুক ফেঁটে যাচ্ছে কিন্তু আমি মুহূর্তে কি করবো বুঝতে পাড়ছি না। সারা শরীরে এক ফোঁটা শক্তি নেই।সারা শরীরে জখম হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও কেঁটে গেছে, জ্বালা করছে খুব। আমি বসা থেকে লুটিয়ে পড়লাম মাটিতে। ঠিক তখনি মামি আমার তলপেটে খুব জোড়ে লাথি মারতেই মুখ দিয়ে আর্তনাদ বের হয়ে গেল খুব জোড়ে, ” ও মা গো”। আমার চিৎকারে মামি তো থেমে গেলেন। কিন্তু কেউ এগিয়ে আর আসলেন না। আমি পেট ধরে “মা গো, ও মা গো, আল্লাহ, ” বলে কাতরাতে লাগলাম। ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছি। কেউ তখন আর এগিয়ে এলো না আমার কাছে। সবাই নির্বিকার ভাবে দাঁড়িয়ে। আমার গলা ফাটানো চিৎকার যেন শুন্তেই পাচ্ছেনা তারা। ধীরে ধীরে সবাই ওয়েটিংরুম থেকে উঠে চলে গেলেন। আজকে যেন আমার ব্যথা কারো চোখেই পড়চ্ছে না।
আমার চোখের সামনে সব ঘোলা হতে লাগলো। হয়তে মরে যাবো আজ! এখন থেকেই হয়তো মরন যাত্রা শুরু আমার। বিড়বিড় করে শুধু ইউসুফ ভাইকে ডাকলাম। তারপর আর কিছু মনে নাই আমার।

চলবে,

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।