আমার_একটাই_যে_তুই পর্ব-৩৭

0
5157

#আমার_একটাই_যে_তুই❤️
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
#পর্ব_৩৭

কুহু আজকে নিজ হাতে রাধছে। বেগুন ভরা,কাঁচা কলা দিয়ে ইলিশ মাছ, মাসকলাই ডাল, মুরগীর তান্দুরি। তিন পদের ভর্তা, শুটকি ভর্তা, সরিষা ভর্তা, আলু ভর্তা। এ সবই ইউসুফে প্রিয় খাবার। ইউসুফের মা তখন বলল,,

–” জানিস কুহু। ছোট বেলায় ইউসুফ এগুলো কত স্বাদ করে খেত। হাত একদম চেটে পুটে খেত আর তৃপ্তির হাসি দিয়ে বলতো,, আম্মু তোমার হাতের রান্না অনেক সুস্বাদু। অতি সুস্বাদু। বড় হয়ে তোমাকে একটি রেস্টুরেন্ট খুলে দিবো আম্মু। যেখানের মালিকও তুমি শেফ তুমি। ”

বলে হাসলো ইউসুফের মা। সাথে কুহু ও।কুহুর সাথে ইউসুফের মার সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কুহু এক এক করে খাবার বক্সে ভরছে। দুপুরে ইউসুফের অফিসে নিয়ে যাবে! ড্রাইভার কে গাড়ি বের করতে বলল কুহু। কুহু একটি ক্রিম কালারের শাড়ি পড়ে টিফিন বক্স নিয়ে হেলতে দুলতে গাড়িতে উঠল। সাথে গুন গুন করে গান গাইতে লাগলো।

গাড়ি এসে থামলো ইউসুফের অফিসের সামনে।কুহু আগের মতোই গুন গুন করতে করতে উপরে উঠে গেল।

ইউসুফ কনফারেন্স রুমে। মিটিং চলছে। সকলেই খুব সিরিয়াস হয়ে ইউসুফের কথা শুনচ্ছে। মনে হচ্ছে রাজা তার প্রজাদের সাথে কথা বলছে। এদিক সেদিক হলেই গর্দান যাবে। এ ভেবেই কুহু ফিক করে হেসে দিল। কনফারেন্স রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে। স্বচ্ছ কাঁচের ভিতরে কি হচ্ছে সব দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কোনো কথাই বাহিরে আসচ্ছে না।

ইউসুফ দু হাত নাড়িয়ে কিছু বুঝাচ্ছে। তখনি বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা কুহুর দিক তার নযর যায়। অবাক হয়ে কিছুটা ভ্রু কুচকে তাকায়! সে! কুহু এখানে কেন ভাবতে লাগে। কথার মাঝে আরেক পলক তাকাতেই কুহু ২৮ পাটি দাঁত বের করে হাসচ্ছে সে! ইউসুফ সেদিকে না তাকিয়ে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তা দেখে কুহুর মুখ খানি ছোট হয়ে যায়। বিড়বিড় করে বলে,,

–” লম্বু খাসি! হু!”

ইউসুফের মিটিং প্রায় শেষের দিকে। সে আড় চোখ আবার তাকালো বাহিরে। কুহু হাত দিয়ে ইশরায় হাই বললো। ইউসুফ ইগনোর করলো। কুহু নাছড় বান্দা। সে ইশরা করেই যাচ্ছে। ইউসুফ কথার মাঝে আবার তাকালো। কুহু সুযোগ বুঝে ঠোঁট চোখা করে চুমু দেয়ার ইশরা করলো। ইউসুফ হকচকিয়ে গেল। তা দেখে কুহু ঠোঁট কামড়ে হাসলো। বেচারা ইউসুফের সব কথা গুলিয়ে গেল। এলো মেলো কথা বলতে লাগলো। মেইন টপিক যেন ভুলেই গেছে সে। রাগ লাগলো কুহুর উপর তার। চোখ দুটো রক্তবর্ণ ধারণ করলো। এসব দেখে কুহুর চোখ-মুখ শুকিয়ে গেল। এদিকে ইউসুফ মিটিং সেখানেই শেষ করে হন হন করে বেড়িয়ে আসলো।কুহুর হাত টেনে নিজের কেবিনে নিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।রাগে কঁপালের রগ দাঁড়িয়ে। কুহু ভয়ে ভয় তাকিয়ে রইলো। ইউসুফ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,

–” এসব কি ধরণের অসভ্যতা! লাজ শরম কি গেছে? নাকি বেঁচে খেয়েছিস? এখানে কি করছিস তুই?”

কুহুর এতক্ষণ ভয় লাগচ্ছিল। সে ভয় গিলে রোমান্টিক মুডে চলে গেল। সে হাসি দিলে সেই ঝিম ধরনো হাসি।ইউসুফের শরীর ঝিম ঝিম করে উঠলো।ইউসুফ হতবুদ্ধি। কুহু তার এক আঙ্গুল দিয়ে ইউসুফের কঁপালের চুল সরিয়ে কানের কাছে এসে স্লো ভয়েসে বলল,,

–“কি করেছি!”

ইউসুফ কিছু বললো না। বিব্রত বোধ করলো। কুহুর এ রূপ হজম হচ্ছে না। কুহু ইউসুফের সাথে ঘেষে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল,,

–” বলো না কি করেছি!”

ইউসুফ ঘামতে লাগলো।কুহু কি করছে এসব। কুহু তাকে তুমি বলে সমর্থন করছে। তাকে এ জন্য খুশি হওয়া উচিত কিন্তু সে পারছে না কেন পারছে না? এনিথিং রং?? ইউসুফ কুহুর থেকে দূরে গিয়ে পিছন ফিড়ে দাঁড়ালো। কুহু আবার তার কাছে গেল। কুহুকে আজ সুন্দর লাগচ্ছে। শরীর থেকে পারফিউম মিষ্টি ঘ্রাণ নাকে লাগচ্ছে। সাথে তার দুষ্টু মিষ্টি কাজ গুলোতে অবাক হয়ে যাচ্ছে। তাকে এ মুহূর্তে কি করা উচিত?কুহুকে ঝাঁপটে ধরে বলা উচিত? চল বিয়ে করে ফেলি। কুহু চমকে যাবে কি? কিন্তু ইউসুফের কিছুই বলতে ইচ্ছে করছে না ম এখন নিজেকে ভাব শূন্যহীন মানুষ মনে হচ্ছে।

কুহু তার শাড়ির আচঁল দিয়ে ইউসুফের ঘাম মুছে দিল। বলল,,

–” কি হয়েছে? এভাবে ঘামচ্ছো কেন?”

ইউসুফ ডানে- বামে মাথা নাড়িয়ে বলল,,

–” কিছু না!

বলে আবার পিছ মুড়ে তার চেয়ারে বসে পড়লো। এ সি ছেড়ে দিলো। টেবিলের উপর গ্লাসে পানি রাখা। ডক ডক করে সব টুকু খেয়ে নিল। তা দেখে মুখ টিপে হাসলো কুহু।

_______________________

বাসায় বড়সড় জটলা বসেছে। ধীরে ধীরে মেহমান আসা শুরু হয়েছে।মেয়রের মেয়ের অদ্রির জম্মদিন বলে কথা। তখন অদ্রির নানু বললেন,,

–” কই সব? গান ধর? আমার নাতনী জম্মদিন কলে কথা! গান, বাজবে, শানাই বাজবে? কি হলো বাজাও?”

তখন ভাবি বলল,,

–” আম্মা কি শুরু করলা? অদ্রির কি বিয়ে নাকি? এসব কেন? আপনারা বন্ধ করিন এসব?সব বন্ধ?”

অদ্রির নানু মুখ চুপসে গেল। তখনি রাহুল ভাই বলল,,

–” কেন বন্ধ করবে? কোনো বন্ধ টন্ধ নাই! আরো জোরে বাজাও? আনন্দ করো? কাল আমার জম্মদিন। দশ টা না, পাঁচটা না, এক মাত্র মেয়ে আমার! আনন্দ উল্লাস হবে না? এটা কোনো কথা? কি হলো বাজাও। নয়তো সব কটার গর্দান যাবে!”

ভাইয়ার কথায় আবার শানাই ঢোল বেঁজে উঠলো। নুশরা- বুশরা, ছোট অদ্রি নাচতে লাগলো? অদ্রির নানুও তাল দিল। নুশরা এসে কুহুকে টেনে নিয়ে গেল। সে যোগ দিল।

রাত বারটা বাজতেই ফট ফট করে বাজি ফুটাতে লাগলো। পুড়ো ময়মনসিংহে খুশির আমেজ। শুধু খুশি নেই কুহুর চোখে-মুখে। আর দু দিন সময় বাকি তার কাছে! কি করবে সে? ইউসুফ সেই আগের মতোই ঘাড় ত্যাড়া করে আছে। মাঝে মাঝে তার ব্যাপক ইচ্ছে জাগে ঘাড় ত্যাড়া লোকের ঘাড় হাতুড়িয়ে দিয়ে পিটিয়ে সোজা করতে! কিন্তু আফসোস। হুহ! দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো কুহু। তখনি পিছনে এসে দাঁড়ালো জয়ীতা। বলল,,

–” কুহু সময়ের উপর সব ছেড়ে দাও দেখবে সব ঠিক হবে!”

কুহু বিষন্নতা নিয়ে বলল,,

–” সময়ের উপর ছেড়ে দিয়েছি কমতো ট্রাই করলাম না। দেখি এবার কি থাকে কঁপালে!”

জয়ীতা কুহুর কাঁধে হাত রেখে আশ্বাস দিয়ে বলল,,

–” যা হবে ভালোর জন্যই হবে!”

কুহুও মাথা নাড়ালো।

_______________________

ইউসুফের রুম থেকে মৃদু আওয়াজের গান ভেষে আসচ্ছে। কুহু পানি নিতে এসে এতো রাতে গানের শব্দে ইউসুফের রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো। বাহির থেকে আসা চাঁদের আলোয় ঘর আলোকিত করেছে। ইউসুফ এক হাটু তুলে খাটের সাথে ঘেঁষে বসে আছে। কোলে তার গিটার। যা দেকে টুং টাং শব্দ ভেসে আসচ্ছে। কুহু ভিতরে আসলো। কানে ভেসে আসলো ইউসুফের সেই চিড়চেনা কন্ঠের গান। অনেক দিন পর আবার শুনে চোখে দিয়ে পানি উপচে পড়তে শুরু করেছে। ইউসুফেরো চোখ বন্ধ। হয়তো সেও কাঁদচ্ছে।কন্ঠ ভার হয়ে আসচ্ছে মাঝে মাঝে। ইউসুফ গাইছে,,

–“মনের কোনে গহীন ঘরে থাকবি রে শুধু তুই
কল্পনাতে ভেলায় ভেসে ঘুরবো আমি তুই
সে যেনো…মন থেকে সরে না
সে যেনো…তাকে ভোলা যায় না

দূরে দুরে,বহু দূরে যাবিনা তুই মোরে ছেড়ে
দূরে দুরে যাবিনা তুই মোরে ছেড়ে
স্বল্পক্ষন ব্যবধান সহেনা হৃদয় আমার,

তারে ছাড়া দিন কাটে না,
তারে ছাড়া মন হাসে না রে
সে যেনো…মন থেকে সরে না
সে যেনো…তাকে ভোলা যায় না

দূরে দুরে,বহু দূরে যাবিনা তুই মোরে ছেড়ে
দূরে দুরে যাবিনা তুই মোরে ছেড়ে”

চলবে,