#আমার_একটাই_যে_তুই❤️
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
#পর্ব_৩৮
রাত বাড়চ্ছে। ফিনফিনে কুয়াশায় ঢাকা চারিপাশ।স্টেডিয়াম লাইটের আলোতেও কুয়াশা ছাড়া কিছু দেখা মিলছে না। দেখতে দেখতে যাবার দিনগুলো ঘনিয়ে এলো। নভেম্বর মাস। চারিদিক হু হু করে ঠান্ডা বাতাস বিইছে। তা এসে জানালা দিয়ে প্রবেশ করে আমার শরীরে লাগতেই কাঁটা দিয়ে উঠছে।ফটফট করে পর্দাও উড়চ্ছে। কি তাজ্জব বিষয়। এ বাড়িটিতেই আমার প্রেমের কাহিনী শুরু হয়েছে প্রেমের কাহিনী শুরু হয়েছিল। এখানেই শেষ হতে চলেছে আজ। ইউসুফ ভাইকে এ কদিনেও নিজের করতে পারিনি আমি। আজ লাষ্ট দিন। কাল সকাল হতেই ব্যাগপত্র নিয়ে চলে যেতে হবে নিজের গন্তব্যে! সে কি আমায় আটকাবে না? হবে না কোনো মেজিক? আমাকে আচানক চমকে দিয়ে ইউসুফ ভাই বলবে,,
–” কুহু প্লীজ ডোন্ট গো? ”
ছোট শ্বাস ছাড়লো কুহু। ডায়রিতে এটুকু লিখে বড় বড় শ্বাস ফেলে কান্না আটকাতে লাগলো সে। কষ্ট বুক ফেটে যাচ্ছে কাঁদতে পাড়লে হয়তো কষ্ট কম লাগতো কিন্তু কাঁদতে চায় না আর। কেঁদে নিজেকে দূর্বল করে কি লাভ? ইউসুফ তো গলবে না তার চোখে পানি দেখে! উল্টো ধমকে বলল,,
–” এসব ফালতু ড্রামা বন্ধ কর! আই ডোন্ট লাইক দিস! তোর এসব ন্যাকা কান্নায় মন গলবে না আমার! সো গেট লষ্ট!”
কুহুর তখন খুব কষ্ট লাগবে। তখন হয়তো সে আরো কাঁদবে। হাউ মাউ করে কাঁদবে। গলা ছেড়ে চিল্লিয়ে কাঁদবে। এক সময় কাঁদতে কাঁদতে ইউসুফের পা জড়িয়ে ধরবে বলবে,,
–“ইউসুফ ভাই এমন করবেন না? আমি বাঁচবো না আপনাকে ছাঁড়া!”
ইউসুফ তখন হাসবে। তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলবে,,
–” কারো জন্য কখনো কেউ মরে না। বরং ভাল ভাবেই বেঁচে থাকে। এই যে পাঁচটি বছর দূরে থেকে ছিলি। মরিস নি তো? বরং বেঁচে ছিলি। হেপি ছিলি। খেয়ে দেয়ে মোটাও হয়েছিস! হোস নি? তাহলে এসব আজাইরা কথা বাদ!”
কুহু তখন নিরবে চেয়ে থাকবে। ড্যাব ড্যাব করে ইউসুফকে দেখবে। ইউসুফ তখন বিরক্তি হয়ে বলবে,,
–“ডো নট লুক লাইক দিস! যা বলেছি সত্যি বলেছি। এবার বিদেয় হো।”
কুহু এবার ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকবে। তার ইউসুফ ভাই তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিচ্ছে? কি করবে সে? তার এখন এ মুহূর্তে দেয়ালের সাথে মাথা ঠুকে ঠুকে মরে যেতে ইচ্ছে করছে। ইউসুফকে দেখাতে ইচ্ছে করছে। যে, ” দেখো ইউসুফ তোমাকে ছাড়া আমি মরে গেলাম। বাই!” এসব ভেবে সে তাই করবে।। দেয়ালে বাড়ি দিতেই ইউসুফ তাই কুহু বলে চেঁচাবে। কুহুর সেদিকে ভ্রূক্ষেপ করবেই না। সে তার কথা রাখবেই। সে আবার বাড়ি দিতে যাবে ইউসুফ কুহুকে তার দিক ঘুড়িয়ে প্রকান্ড আওয়াজ
থাপর কসাবে। কুহু ছিটকে মাটিতে পড়ে যাবে।
কুহুর ঘুম ছুটে গেল। সে মাটিতে পরে আছে। চারিদিকে শীতের সকালের মিষ্টি রোদ খা খা করছে। মাথার উপর ফেনটি খেচর খেচর করছে। শরীরে ঘামে ভিজে গেছে। নিজের কঁপালে আর গালে হাত দিলো না বেঁচে আছে সে। স্বপ্ন দেখছিল এতক্ষণ সে! ভেবেই স্বস্তির নিশ্বাস না ফেললো সে।
তখনি কফি হাত ঘরে ঢুকলো তিথি। কুহুকে নিচে বসে থাকতে দেখে জিগ্যেস করলো,,
–” কি করে? এত ঠান্ডার মাঝে নিচে কি করিস তুই?”
কুহু চকিতে তাকলো। তার ভাব এমন চুরি করে ধরা খাওয়ার মতো। সে উঠে মাটি থেকে চাদর তুলতে তুলতে আমতা আমতা করে বলল,,
–” গ-র-ম লাগচ্ছিল তাই!”
তিথি অবিশ্বাসের চোখে বললো,,
–” তোর কথা বিশ্বাস করতে কষ্টে হচ্ছে!এত শীতে গরম কিভাবে লাগে তোর? এমনতো না ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখে খাট থেকে পড়ে গেছিস?”
কুুহু হকচকিয়ে গেল। দিগুন জোড়ে মাথা নাড়িয়ে বলল,,
–” না না তেমন কিছু না সত্যি!”
তিথি কিছু বললো না। হেসে দিলো। সে জানে কুহু নির্ঘাত ঘুমের ঘরে বেড থেকে পড়ে গেছে। আগেও কতবার এমন দেখেছে সে। প্রতিবার বাহানা দিয়ে কেঁটে পড়েছে। তিথি বলল,,
–” নিজে চল! কাজ অনেক”
কুহু চুলে হাত খোঁপা করতে করতে বললো,,
–“হুম চল!”
খাবার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে ইউসুফ। আরেক হাতে ফোন। ঢুকে গেছে যেন ফোনে। প্লেটে রুটি শেষ খেয়ালি নেই যেন সেদিকে তার। তা দেখে ছোট শ্বাস ছেড়ে ইউসুফের মা কুহুকে বলল,,
–” মা যাতো প্লেটে রুটি নেই সেদিকে তার খেয়ালি নেই!রুটি দিয়ে সেখানে বসে থাকবি । কাবার শেসে উঠে আসবি। যা।”
কুহু তখন হলে বসে আলপনা করছিল। অদ্রির নাকি খুব পছন্দ সে নেট থেকে একটি আলপনা বের করে কুহুকে বলল,,
–” এটা কববা। সুলদর না?”
কুহু অদ্রির গালে চুমু খেয়ে বলল,,
–” ওকে আম্মু!”
কুহু সেই ডিজাইন করছিল।বড় মামির কথায় সে বলল,,
–” আচ্ছা বড় মামি!”
কুহু টেবিলের কাছে এসে দাঁড়িয়ে দেখলো ইউসুফ কিছু একটা ফোনে পড়চ্ছে খুব গভীর মনে। সে কি খাচ্ছে সে দিকে খেয়াল নেই তার। কুহুর মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে যায়। সে পা টিপে রান্না গরে গিয়ে কাঁচা মরিচের বাটি নিয়ে হাজির হয় আবার। কুহু একটি কাঁচা মরিচ রাখলো ইউসুফের প্লেটে। ইউসুফ খেয়ে নিলো কোনো রিয়েক্ট করলো না। কুহু হা হয়ে রইরো। সঙ্গে সঙ্গে দু চারটে আরো দিলো। তা খেলো ইউসুফ। কুহু এবার অবাকের শেষ চূড়ায়। এমন ভাবে ঢুকে আছে মনে হচ্ছে ৭ তলা থেকে ফেলে দিলেও তার খবর থাকবে না। এবার কুহু বোম্বাই মরিচ এনে রেখে দিলো। তা কামড় দিতেই। ইউসুফের কান দিয়ে ধোয়া বের হতে লাগলো। সে পানি পানি করতে লাগলো। কুহু হেসে জগ থেকে পানি ঢেলে ইউসুফের সামনে ধরলো। ইউসুফ নিতে গেলেই সরিয়ে নিল। রসিকতার সুরে বলল,,
–” হুশ ফিরলো তাহালে এমপি সাহেবের? আমিতো ভেবেছি আপনার আজ হুশই আসবে না। ”
ইউসুফ ঝালে হাসফাস করতে লাগলো। চোখ মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে সে হাপাতে হাপাতে বলল,,
–” পানি, পানি, কুহু পানি দে! প্লীজ! আহ্ মুখ জ্বলে যাচ্ছে! প্লীজ ফাজলো করিস না! দে”
কুহু দিলো না দুষ্ট বুদ্ধি বাড়লো। সে পানি ফেলে দিল
ইউসুফ চেঁচালো,
–” কি করলি এটা! উফ! ঝালে মরে যাচ্ছি! অসভ্য মেয়ে। ঝালে আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে!”
ইউসুফ চিল্লাচ্ছে সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই। সে ইউসুফের ঠোঁটে দিকে তাকিয়ে আছে।ঝালে লাল ঠোঁট জোড়া আরো লাল হয়ে ফুলে গেছে। কুহুর কাছে ইউসুফের ঠোঁট জোড়া টানচ্ছে। খুব করে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। কুহু তার ইচ্ছা দমালো না। ইউসুফের কোলার টেনে ধরে ইউসুফের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। ইউসুফ নিজেও আঁকড়ে ধরলো। এ মুহূর্তে ঝালে ইউসুফের কোনো হুশ নেই। সে আবেশে কামড়ে ধরলো কুহুর ঠোঁট জোড়া। দুজনেই যেন ভেসে যেতে লাগলো অন্য জগতে..!
এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর ইউসুফ কুহুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। কুহু নির্বিকার ভাবে তাকিয়ে রয়। ইউসুফ রাগে ফুসচ্ছে। কুহুর দিক চোখ গরম করে হনহন করে উপরে চলে যায়।
ইউসুফ যেতেই হেসে দেয়। ঠোঁট কামড়ে লাজুক হাসি। কিছুক্ষণ আগেই এই ঠোঁট জোড়া ছিল ইউসুফের ঠোঁটে ভেবেই শরীরে আলাদা শিহরণ খেলে যায়।
পরক্ষনেই আজ তার শেষ দিন এ ভেবেই মুড ওফ করে হলে চলে আসে আলপোনা করতে শুরু করে।
সন্ধ্যা হয়ে এলো। মেহমানদের সোমাগোম শুরু। জায়গায় জায়গায় দেখা যাচ্ছে সম বয়সীদের জটলা। কোথাও আন্টিদের, কোথাও নানু-দাদুদের, কোথাও আঙ্কেলদের।আবার ইউসুফ আর রাহুল ভাইয়াদের মতো পাঞ্জাবি পড়েছে হোয়াইট কালারের। বেশ রমরমা পরিবেশ। এক সাইডে ফুড জোন। তো অন্য সাইডে ড্রিংক্সিং জোন!তখনি…!
চলবে,