আসক্তিময়_ভালবাসা পর্ব-১৮

0
2983

#আসক্তিময়_ভালবাসা
#Part_18
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat

— ডু ইউ লাভ মি?

কথাটি বলে আমি নিজেই হতভম্ব হয়ে গেলাম। কেমন এক ইতস্তত ভাব চলে এসেছে নিজের মধ্যে। কিভাবে যে মুখ ফসকে এইটা জিজ্ঞেস করলাম তা ভেবেই কুল পাচ্ছি না। এত বেহাইয়া কিভাবে হলাম কে জানে। নিজেকে এখন গালি দিতে ইচ্ছে করছে। উফফ! অতঃপর অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে রিয়ানের দিকে তাকাই। সে আমার দিকে ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে আছে। তার হাবভাব একদম স্বাভাবিকই লাগছিল। তার মধ্যে কোন বিস্মিত ভাব না। আমার এমন ভয়ংকর প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়ার পরও সে স্বাভাবিক কিভাবে তাই আমি বুঝে উঠতে পারছি না। অবশেষে তিনি মুখ খুলেন। সে মৃদু কন্ঠে আমায় বলেন,

— তোমার কি মনে হয়?

আমি রিয়ানের দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলি,

— আমার কিছুই মনে হয় না।

সে শান্ত চোখে তাকিয়ে বলেন,

— প্রশ্নের উত্তরটা জানা কি তোমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

আমি বাম হাত দিয়ে সামনে পড়ে থাকা চুলগুলো কানের পিছে গুঁজে দিতে দিতে বলি,

— এতটা না।

রিয়ান এইবার কাঠ কাঠ গলায় বলে,

— তাহলে উত্তরটাও দেওয়া আমি গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি না।

আমি রিয়ানের দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে থাকি। মনে মনে প্রশান্তির নিঃশ্বাস নেই। আমি নিজেও চাইছিলাম রিয়ান যাতে আমায় উত্তরটা না দেয়। তাই তো ইচ্চে করে এমন ভাবলেশহীন ভাবে উত্তরটি দিলাম। হয়তো রিয়ান এমন আশা করেন নি। কিন্তু আমিও যে নিরুপায়। আমায় চুপ থাকতে দেখে রিয়ান বলে উঠে,

— গুরুত্বহীন জিনিস নিয়ে এত ঘাটাঘাটি করে লাভ নেই। তাই আমার মতে তোমার অফ যাওয়া উচিৎ।

আমি দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে মাথা দুলাই। সে আমার মাথায় আলতো করে টোকা দিয়ে বলেন,

— বাই দ্যা ওয়ে, এত ষ্টুপিড ষ্টুপিড প্রশ্ন কিভাবে তোমার মাথায়? তুমি কি পণ নিয়েছ যে ‘ষ্টুপিড’ পদবীটা তুমি একদম আয়ত্ত্ব করেই ছাড়বে?

আমি রিয়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেই। সে যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এমন করছে তা বুঝতে আমার আর দেরি নেই। আমিও আর কথা এগুলাম না। মাথা নুয়ে রাখলাম। সে আর কিছু না বলে রুম থেকে চলে যেতে থাকে। দরজার সামনে আসতেই তিনি হুট করে দাঁড়িয়ে পড়েন। পিছে না ঘুরেই বলেন,

— এক্সামের আগ পর্যন্ত তোমায় আর মেডিক্যাল যেতে হবে না। বাসায় থেকেই রেস্ট নিয়ে স্টাডি গুলো কমপ্লিট করবে। আর বাকি ক্লাসের নোটসগুলো আমি রাতে এনে দিব নে। সো ডোন্ট ওয়ারি।

এই বলে দরজা ভিরিয়ে তিনি বাইরে চলে যান। আমি দরজার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস নেই। এইদিকে রিয়ান আমার দরজার বাইরে কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আনমনে কিছু একটা ভেবে ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস নেয়। মনে মনে করে বলে,

— আজ আমায় বড্ড অগোছালো করে দিলে। বড্ড! বাইরে নিয়ে নয় ভিতর দিয়ে।

অতঃপর সে নিজের রুমের দিকে হাঁটা দেয়। তার এখন একটা ঘুম প্রয়োজন। গভীর ঘুম!

___________________________________________

দেখতেই দেখতে আদিব আর পায়েলের বিয়ের এক মাস হয়ে গেল। কিন্তু আদিবের মান-অভিমান এক চুল পরিমাণও নড়ে নি। সেই আগের মতই আছে। পায়েল অনেক চেষ্টা করেছে ওর মান অভিমান ভাঙ্গানোর জন্য। এমন কিছু নেই যে পায়েল করে নি। কিন্তু কোন কিছুই কাজে আসেনি। তাও পায়েল দমে যায় নি। আদিবের মান-অভিমান না ভাঙ্গানো পর্যন্ত সে দম নিবে না।

রাত প্রায় ১১ টা। আদিব খাটে বসে আছে। ল্যাপটপে কিছু একটা কাজ করছে। এমন সময় পায়েল হেলতে দুলতে রুমে আসে। রুমে এসে দরজা দিয়ে দেয়। অতঃপর ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে চুল আঁচড়াতে শুরু করে সাথে হাল্কা গুনগুন করতে থাকে। পায়েলের কর্মকাণ্ড দেখে আদিব ল্যাপটপ থেকে নজর সরিয়ে পায়েলের দিকে ভ্রু-কুটি কুঞ্চিত করে তাকায়। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু এতে পায়েলের মধ্যে কোন ভাবান্তর দেখা গেল বলে মনে হয় না। সে তো আপন মনে নিজের কাজ করেই চলেছে। অতঃপর পরিপাটি হয়ে বিছানায় এসে বসে। ফোন হাতে নিয়ে কাকে যেন ফোন করে। ফোন রিসিভ হতেই সে বলতে থাকে,

— হ্যালো জান। কেমন আছ?

অপর পাশের কোন কথায় শুনা গেল না। এইদিকে “জান” শব্দটি শুনে আদিব হতভম্ব হয়ে যায়। সাথে প্রচন্ড পরিমাণ রাগও হতে থাকে। এইদিকে পায়েল হেসে হেসে বলতে থাকে,

— উফফ! কি যে বলো না জান। তোমাকে তো আমি এত এত মিস করছিলাম। তোমাকে মিস করবো না তো কাকে করবো শুনি। জান!!!

……………………..

— ধুর! জামাইকে মিস করতে যাব কোন দুঃখে? ওই লোকটার প্রতি আমার কোন ফিলিংসই নেই। আর এমনেও ও তো আমার দিকে ঘুরেও তাকায় না। ভালবাসা তো দূরে কথা। ওই ব্যাটার আমার প্রতি কোন ইন্টারেস্ট নাই। তাই বলছি, তুমি ওইসব নিয়ে এত টেনশন করো না তো জাননননন…

……………………..

— ইশশ! আমার বুঝি তোমার সামনে আসতে লজ্জা করে না। এমনেই আমি তোমার সামনে আসলে তুমি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাক জান। তখন আমার কত লজ্জা করে তা কি তুমি জানো? জাননননননন!!!!!

……………………..

— আমি তোমাকেই ভালবাসি জাননন। তোমাকে ভালো না বাসলে আমি কাকে ভালবাসবো বলো? তুমি তো আমার জানননন।

……………………..

— আচ্ছা এখন রাখি কেমন। জাননন! তুমি কিন্তু রাত জেগো না। শরীর খারাপ করবে। জাননন! গুড নাইট! উম্মাহ!

এই বলে পায়েল কট করে ফোনটা রেখে দেয়। পাশে ফিরতেই দেখতে আদিব রাগে ফুসছে। চোখ মুখ একদম লাল হয়ে আছে। দাঁত দুইটো কিড়মিড় করছে। পায়েল তা দেখেও না দেখার ভ্যান করে। সে উঠে যেতে নিলে আদিব ওর হাত ধরে হেচকা টান দিয়ে ওকে একদম ওর কাছে নিয়ে আসে। কটমট চোখে তাকিয়ে থেকে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

— কার সাথে কথা বলছিলে?

পায়েল হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,

— তা যেনে তোমার কি? নিজের চোরক্কায় তেল দাও।

আদিব এইবার রেগে গিয়ে ল্যাপটপ আওয়াজ করে বন্ধ করে সাইড টেবিলে রেখে দেয়। অতঃপর পায়েলের এক হাত পিছনে নিয়ে মচকে ধরে। ওকে এক টানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে রাগান্বিত কন্ঠে বলে,

— মুখের বলি দেখি বেশ ফুটেছে। বড্ড বার বেড়ে গিয়েছ তাই না? এই জান কে হ্যাঁ? কে সে? স্পিক আপ!

পায়েল হাল্কা ব্যথা পেলেও তা প্রকাশ করলো না। নিজেকে শক্ত রেখে বলে,

— আমার প্রেমিক পুরুষ। পেয়েছ উত্তর? এখন আমার হাত ছাড়। আমার জান যদি জানে আমি তোমার এত কাছে এসেছি তাহলে রাগ করবে। ছাড় বলছি আমায়।

পায়েলের এমন উত্তরে আদিবের মাথায় আগুন ধরে যায়। ও হাল্কা চেঁচিয়ে বলে,

— তাই না! তাহলে আজ তোমার এত কাছে আসবো যে তোমার জান রেগে জ্বলে ভস্ম হয়ে যাবে। খুব ভালো হবে তখন তাই না।

এই বলে পায়েলকে সে আরও কাছে টেনে নিয়ে আসে। তারপর কাঠ কাঠ গলায় বলে,

— একটা কথা মাথায় ঢুকিয়ে রেখ তোমার প্রেমিক পুরুষ ও আমি, তোমার জীবনের প্রথম পুরুষও আমি আর শেষ পুরুষও আমি। তোমার উপর শুধু আমার অধিকার। আমি ব্যতীত তুমি কাউরো না।

পায়েল কিছু না বলে হাত ছাড়ানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আদিব চেঁচিয়ে বলে,

— ফোন দাও তোমার। এখনই তোমার জান নাকি ফানের ব্যবস্থা করছি। আর এর শেষ আমি দেখেই ছাড়বো।

এই বলে পায়েলের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নেয়। অতঃপর পায়েলকে ছেড়ে দিয়ে কললিস্ট চেক করতে থাকে। কল লিস্টে গিয়ে সে বোকা বনে যায়। হতভম্ব দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। পায়েল তা দেখে উঁচু স্বরে হেসে উঠে। আদিব কিছুক্ষণ পায়েলের দিকে তাকিয়ে বিস্মিত কন্ঠে বলে,

— তুমি এতক্ষণ এই নাম্বারে কথা বলছিলে?

পায়েল কোন মতে হাসি থামিয়ে মাথা নাড়ে। আদিব এইবার মাথায় হাত দিয়ে বসে। কেন না, নাম্বারটা হচ্ছে ২৪০০। মানে সিম কোম্পানির নাম্বার। আদিবের এইবার বুঝতে দেরি নেই পায়েল এতক্ষণ ওকে রাগানোর জন্যই এমন করেছে। আদিব পায়েলের দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকায়। পায়েল তা দেখে হেসে বলে,

— ইশ কি বোকা নাই বানালাম। জীবনেও এত “জান” কাউকে বলেছি কি না সন্দেহ যতটা না এই সিম কোম্পানিকে বলেছি। উফফ!!

আদিব দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

— খুব মজা লাগছে তাই না?

পায়েল দাঁত কেলিয়ে বলে,

— আবার জিগায়!

— এইসবের মানে?

— কাউকে বুঝালাম যে, জামাইয়ের কাছ থেকে যদি ভালবাসি না পাই তাহলে কিন্তু আমি বাইরে অন্য কাউরো কাছে গিয়ে ভালবাসা খুঁজবো।

আদিব পায়েলের হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলে,

— যতই খুঁজো না কেন ঘুরে ফিরে আমার কাছেই আসতে হবে। কেন না আমার মত করে কেউ কখনো তোমায় ভালবাসতে পারবে না।

পায়েল আদিবের বুকে মাথা রেখে বলে,

— তাহলে এই ভালবাসার জন্য কি মান-অভিমান ভাঙ্গা যায় না? এইবারের মত মাফ করে দাও না আমায়। প্লিজ!

আদিব মুচকি হেসে পায়েলের কপালে ছোট এক চুমু দিয়ে বলে,

— মাফ করতে পারি কিন্তু এক শর্তে।

পায়েল মাথা তুলে বলে,

— কি?

আদিব মুচকি হেসে বলে,

— তোমায় কথা দিতে হবে যে তুমি পরবর্তীতে আমার কাছ থেকে আর কোন কথাই লুকাবে না। যত যাই হোক না কেন। আমাকে এসে সব বলবে। যদি পরবর্তীতে এমন করো তাহলে আমার মুখ দেখতে পাবে না তুমি। চিরতরের জন্য হারিয়ে যাব আমি।

পায়েল আদিবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,

— এমন বলো না আর কখনো আমি কোন কথা লুকাবো না। কথা দিলাম!

আদিব কিছু না বলে নিবিড়ভাবে পায়েলকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়।

____________________________________________

আমার এক্সিডেন্ট হয়েছে আজ তিন মাস হতে চললো। এক্সিডেন্টের পর আমি প্রায় দুই সপ্তাহ বাসায় ছিলাম। বাবা-মাও এক সপ্তাহ থেকে চলে যায়। এরপর আমি বাসায় বসেই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। রিয়ান প্রতিদিনের নোটসই আমায় এনে দিত আর বুঝিয়ে দিত। এর মধ্যেও তিনি আমার খাবার আর মেডিসিনের খোঁজ নিতে ভুলতেন না। সবসময় খেয়াল রাখতেন আমার কি দরকার আর কি না। সে বলার আগেই সব হাজির করতো। মাঝে মধ্যে আনিশা আর পায়েল এসেও দেখে যেত। অতঃপর সুস্থ হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে আমার পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। পরীক্ষা শেষে বেশ কয়েকদিন আরামেই ছিলাম। রিয়ানের সাথে বেশ কয়েক জায়গায় ঘুরতেও গিয়েছিলাম। অতঃপর রেজাল্ট দেয়। মোটামুটি ভালো রেজাল্টই হয়। রিয়ানও বেশ খুশিই হয়েছিল। কিন্তু তাও আরও ভালো করে পড়তে বলেছেন আমায়। এরমধ্যে আমাদের মাঝে সেই কথাটা নিয়ে আর কোন প্রসঙ্গ উঠেনি। প্রশ্নটা যেন সবকিছুর মাঝে চাপা পড়ে যায়। আর আমরা দুইজনও একে খুঁড়ে বের করি নি। বলতে গেলে দরকারবোধ করিনি।

আজ থার্টি ফাস্ট নাইট। সকলের বাসায় এই নিয়ে তোড়জোড় লেগে থাকলেও রিয়ানদের বাসায় এ নিয়ে কোন তোড়জোড় নেই। এর মূখ্য কারণ আঙ্কেল নাকি এইসব পালন করা পছন্দ করেন না। এমনে তিনি অনেক মিশুক। সবকিছুতে তার উত্তর সর্বদা হ্যাঁ-এই হয়। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে তিনি বেশ কঠোর। তার মধ্যে থার্টি ফাস্ট নাইট পালন করাটাও পরে। যার জন্য সকলেই দশটার মধ্যে খেয়ে উঠে পড়ি। আর যে যার রুমে চলে যাই। ঠিক এগোটা তিরিশ নাগাদ আমার দরজায় টোকা পড়ে। আমি তখন একটা উপন্যাস হাতে নিয়ে বসেছিলাম। ঘুম আসছিল না বিধায় উপন্যাস নিয়ে বসেছিল। দরজায় কড়া পড়তেই আমি উঠে দাঁড়াই। গায়ের চাদরটা ভালো মত জড়িয়ে নিয়ে এগিয়ে যাই।

দরজা খুলতেই রিয়ানকে দেখার সাথে সাথে আমার ভ্রু কুটি কুঞ্চিত হয়ে আসে। সে চাপা কন্ঠে বলে,

— রেডি হয়ে নাও বাইরে যাব।

আমি মৃদু কন্ঠে জিজ্ঞেস করি,

— কই?

— গেলেই জানতে পারবে। এখন জলদি রেডি হয়ে নাও তো। এন্ড নো মোর ওয়ার্ডস।

আমি চেয়েও আর কিছু বলতে পারলাম না। অতঃপর চট জলদি রেডি হয়ে নিলাম। গায়ে চাদরটা ঠিক করতে করতে রিয়ানের সামনে গিয়ে দাঁড়াই। রিয়ান আমার হাত ধরে ধীর পায়ে দরজার দিকে যেতে থাকে। এমন সময় আন্টি সামনে পড়ে যায়। সম্ভবত তিনি পানি খেয়ে উঠেছেন। তাকে দেখার সাথে সাথে রিয়ান আমার হাত ছেড়ে দেয়। আন্টি কিছুক্ষণ আমাদের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে রিয়ানকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করে,

— এত রাতে কই?

রিয়ান মিষ্টি হাসি হেসে বলে,

— আর কই?

রেনু আন্টি হাল্কা হেসে বলে,

— ওকে নিয়ে যাচ্ছিস?

রিয়ান মাথা দুলায়। আন্টি হেসে বলে,

— আচ্ছা যা। বেশি রাত করিস না। এইবার তুই কিন্তু একা না। রাত করা এইভাবেও ঠিক হবে না।

রিয়ান আন্টিকে মৃদু কন্ঠে বলে,

— বাবাকে মেনেজ করে নিও। কেমন!

আন্টি হেসে বলে,

— সে তো প্রতিবারই করি। নতুন কি?

রিয়ান আন্টিকে সাইড দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,

— লাভ ইউ মা।

এই বলে রিয়ান আমাকে বাইরে নিয়ে আসে।

____________________________

গাড়ি এসে থামে একটা ব্রিজের উপর। ব্রিজটা বেশ নির্জন। পরিবেশটা একদম থমথমে। বাইরে হিম শীতল বায়ু বইছে। পানির থৈথৈ শব্দ ভেসে বেড়াচ্ছে চারদিকে। মাথার উপর মস্ত বড় চাঁদ। সে চারদিকে তার স্নিগ্ধ আলো বিতরণ করছে। মন ভালো করার মত পরিবেশ একটি৷
রিয়ান গাড়িতে থাকা অবস্থায় কালো কাপড় দিয়ে চোখটা বেঁধে দেয়। আমি বার বার এমন করার কারণ জানতে চাইলেও সে কিছু বলে নি। বরং এক ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দেন। অতঃপর আমায় নিয়ে বের হন। আমার হাত ধরে অতি সাবধানে কোথায় যেন নিয়ে যায়। অতঃপর বেশকিছুক্ষণ নিরব থাকে। একটুপর আমার চোখের কাপড় আলগা করে ধরে আমার কানের কাছে মুখ এনে মৃদু কন্ঠে বলে,

— থ্রি……..টু……..ওয়ান!!

সাথে সাথে তিনি আমার চোখ খুলে দেন। কানে ভেসে আসে বিকট বিকট শব্দ। আমি ঝাপসা চোখে উপরে তাকাই। রঙিন আলো চোখে পড়ে। অতঃপর সব পরিষ্কার হতেই আমি থমকে যাই। পুরো আকাশ জুড়ে হচ্ছে রঙে-বেরঙের আতসবাজি। সাথে উড়ে চলেছে অজস্র ফানুশ। সবকিছু মিলিয়ে যেন ফুটে উঠেছে রঙ-তুলিতে আকাঁ এক আকাশ। মনে হচ্ছে অন্ধকারে আলোর মেলার। নিচে শহরের ঝিকিমিকি আলো। তার মাঝ দিয়ে বুক চিরে বয়ে চলেছে নদী। আকাশের মনোরোম দৃশ্যের প্রতিফলন হচ্ছে যে নদীর পানিতে। যার ফলে পানিটা দেখাচ্ছে রঙিন আর ঝলমলে। হিম বায়ুর ছোঁয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে ভালো লাগা। আমি মুগ্ধ চোখে আকাশের পানে তাকিয়ে আছি। সবকিছু উপভোগ করছি। এমন সময় রিয়ান আমার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে,

— হ্যাপি নিউ ইয়ার রিয়ুপাখি।

#চলবে