#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_২৭
হট টপিক আবারো সামনে এলো আরও একটি তাক লাগিয়ে দেয়া খবর। মিস তাথই এর মৃত্যুর কয়েক মিনিট আগেই ওই একই হোটেলে মিস্টার অভি কে দেখা গেছিলো। তাহলে কি মিস্টার অভি তাথই এর মৃত্যুর সাথে জড়িত আছে। কি হতে পারে এর পিছনের আসল কারণ। এর আগের খবরে জানা গেছে অভির সাথে তাথই এর ঝামেলা ছিল। তাথই অভি কে নিয়ে ইনসিকিউওরিটিতে ছিল। তাহলে কি এর থেকে বড় কিছু ছিল ওদের মধ্যে যা নিয়ে ঝামেলা হয় আর তার ফল তাথই এর মৃত্যু। ছবিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মিস্টার অভির মুখে হাসি। ওনাকে ও ওই একই বিল্ডিং এ স্পট করা হয়েছে। কি আছে এর পিছে আসল রহস্য।
সকাল সকাল এই নিউজ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। আর সাথে সাথে আবারো জুড়ে গেছে নানা তথ্য। আবারও একবার গসিপ করার টপিক পেয়ে গেছে সবাই। আর পাবলিক তো তুমুল হারে খেপে গেছে অভির ওপরে এই নিউজ ভাইরাল হতে। মিস্টার এহসান মানান তো খবর দেখেই পুলিশ রিপোর্ট করে আগে থেকেই এর ইনভেস্টিকেট চল ছিল আর আজ তো এর পিছনের একটা প্রুফ ও পেয়ে গেছে। এতদিন শুধু সন্দেহের বশে কাজ চলছিল কিন্তু আজ তার প্রমাণ ও পেয়ে গেছে একটা আর এখন এটাই সব থেকে বড় হাতিয়ার।
মানান পরিবারে এখন কিছুটা ঝড় ও কিছুটা শান্ত পরিবেশ। তাথই এর ড্যাড আর মায়ের মধ্যে ঝড় ঝড় ব্যাপার চলছে আর বাকিরা শান্ত আছে। এতদিন পর তারা তাদের মেয়ের মৃত্যুর পিছনের অপরাধী কে খুঁজে পেয়েছে তাই কেউ শান্ত তো কেউ ঝড় হয়ে আছে।
-“আমার মেয়ে টা কে আমরা হারিয়ে ফেলেছি কিন্তু ওর অপরাধীদের কে শান্তিতে বাঁচতে দেবো কখনোই না। এহসান মানান বলে ওঠে।
-” তাথই এর জন্য কখনওই অভি ঠিক ছিল না। আজ ওর জন্য আমার মেয়ে টা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। ওর যাতে কঠিন শাস্তি হয় সেই ব্যবস্থা করো। তাথই এর মা বলে ওঠে।
-” শুধু মাত্র তোমাদের জন্য হয়েছে। তোমরা না জেনে শুনে দি এর ওই ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক করে ছিলে আজ তোমাদের জন্য আমাদের দি আমাদের কাছে নেই। তাথই এর ভাই তামিম বলে ওঠে।
-” আর তানি দি তুমিও তো ওদের সাথে ছিলে তুমি না বলেছিলে আমার দি ইনসিকিউওরিটিতে ছিল ওই অভি কে নিয়ে। তুমিও আমার দি কে ভুল প্রমাণ করার জন্য বলেছিলে কিন্তু দেখো তোমার চাল উল্টো ফলে গেছে। তামিম চিৎকার করে বলে ওঠে।
-” আর মা তোমার কেনো এখন এত মায়া হচ্ছে দি এর প্রতি। ও যখন আমাদের সাথে ছিল তখন তো ওকে তুমি দেখতে পারতে না তাহলে এখন কেনো? তামিম বলে ওঠে।
-” ড্যাড মা তোমাদের যতো ভালোবাসা সব আমার দি মারা যাওয়ার পর জেগে উঠেছে তাই না। দরকার নেই তোমাদের কিছু করার। তোমরা এর আগেও আমার দি এর প্রতি যেমন ঠান্ডা হয়ে থাকতে এখন ও তেমনি থাকো। একদম আলগা ভালোবাসা দেখাতে আসবে না। তামিম বলে ওঠে।
বাড়ির সবাই তামিম এর কথায় একদম চুপ হয়ে আছে হ্যাঁ তারা এর কোনো প্রতিবাদ এর আগে করিনি। তারা সব সময়ই তাথই এর প্রতি ঠান্ডা ব্যবহার করে গেছে এই বাড়িতে তার বাবা মা বোন এর থেকে ভালোবাসা পাইনি আর তানিয়া তো তাকে অপমান করা কষ্ট দেয়ার একটাও সুযোগ ছাড়তো না কারণে অকারণে অপমান করত ইনডাইরেক্টলি। আর তাথই ও মুখ বুজে মেনে নিত। এই বাড়িতে তাথই সাথে শুধু তার এই ভাই আর দাদু ভালো ব্যবহার করত তাকে ভালোবাসত। আর ছোটো বোন টা চুপ করে থাকত ও না কোনো ব্যাপারে থাকতো আর না কোনো কথা বলতো ও এই বাড়িতে থেকেও না থাকার মতো ছিল সব সময়ে নিজেকে নিয়ে থেকেছে তার এই সব ফ্যামিলি ব্যাপার পছন্দ ছিল না।
এই বাড়িতে সব সময়ে তানিয়া কে বেশি গুরুত্ব দিত। সব ভালো কিছু ওকে দেয়া হতো। এমনকি তাথই এর বাবা মা ও ওকে বেশি ভালোবাসত।
————-
স্টার গ্রুপ বিল্ডিং এর সামনে মিডিয়া প্রেস ঘিরে আছে তার সাথে আছে পাবলিক। সকাল থেকে এই খবর ভাইরাল হতেই সব একসাথে একজোট হয়ে গেছে। সবাই একসাথে অপেক্ষা করছে অভির বাইরে বেরোনোর। অফিসের বাকি থাকা স্টাফ গুলো ও তাদের সাথে যোগ হয়েছে।
অভি নিজের কেবিনে এক কোণে বসে আছে তার অবস্থা এখন ভীষণ শোচনীয় সে কি করবে বুঝতে পারছে না। সে কি ভাবে ফেসে গেছে এর মধ্যে বুঝতে পারছে না। আর সে কি ভাবে তাথই এর মৃত্যুর সাথে জড়িত থাকতে পারে। সে তো শুধু মাত্র ওকে রুমে রেখে এসেছিলো। কিন্তু কি করে কি হয়ে গেলো।
অভি নিজে পায়চারি করছে আর ভাবছে কি থেকে কি হয়ে গেলো আর এই ছবিটাই বা কোথায় থেকে এলো সে তো ওই মুহূর্তের সমস্ত ফুটেজ ডিলিট করিয়ে দিয়েছিলো। তাহলে কোথায় থেকে আসতে পারে ওই ছবি তাহলে কি তানিয়ার কথা মত কোনো ব্যাক প্ল্যান ছিল নাকি।
অভি নিজের সোর্স দিয়ে ও এই খবর বন্ধ করতে পারছে না। আর পারবে বা কি করে যেখানে স্টেট মিনিষ্টার এর ওপরে আছে সেখানে তো এইসব আগেই ভাইরাল হবে খবরে।
-“আচ্ছা তাথই মৃত্যুর পিছনে সত্যি কি কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে।
-” ওর মৃত্যু কি স্বাভাবিক নয়? কিন্তু তানিয়া যে বললো ও নেশার ঘোরে উপর থেকে পড়ে গেছে তাহলে?
-“কি হতে পারে এর পিছনে। আর আমি তো ওর ড্রিংকে ঘুমের ওষুধ মিক্সড করেছিলাম তাও কিঞ্চিৎ পরিমাণে তাহলে কি ভাবে কি হলো আর ওকে তো রুমে রেখে গেছিলাম তাহলে ওখান থেকে বেরিয়ে কিছুটা দূর গিয়ে কিভাবে পড়তে পারে?
-” আর হঠাৎ করে আমার নাম বা জুড়ে যাচ্ছে কেনো উফ তানিয়াকে কে বলতে বলে ছিল সেদিন আমার আর তাথই এর মাঝের ঝামেলার কথা এখন তো আমি ফেসে গেলাম। অভি নিজের মনে বিড়বিড় করতে করতে বলে ওঠে।
এদিকে নিচেই স্টার গ্রুপ এর সামনে এসে দাঁড়ায় পুলিশ এর গাড়ি আর তার পরেই স্টেট মিনিষ্টার এর গাড়ি। সাথে ওখানে থাকা মিডিয়া প্রেস এহসান মানান কে ঘিরে ফেলে নানারকম প্রশ্ন করতে থাকে।
-“স্যার এই সব কিছু কি প্ল্যান অনুযায়ী হয়েছে?
-” আপনার মেয়ের মৃত্যুর এতদিন পর কেনো এতো বড় স্টেপ নিলেন এর আগে কেনো চুপ করে ছিলেন।
-“স্যার তাথই আর অভির বিয়ে পারিবারিক ভাবে ঠিক হয়েছিলো তাহলে কি আপনারা জানতেন না তাদের ভিতরের ঝামেলার ব্যাপারে।
-” স্যার তাথই এর মৃত্যুর ব্যাপারে আপনার কি মতামত আপনি কি বলতে চান।
-“স্যার খবর সূত্রে জানা গেছে নাকি তাথই এর সাথে আপনাদের সম্পর্ক ভালো ছিল না।
-“স্যার তাহলে কি মিস তাথই আপনার মেয়ে নয়।
মিডিয়ার লোক এইরকম নানা ধরণের কথা জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে এহসান মানান কে। এতক্ষণ তিনি একদম চুপ করে ছিলেন কিন্তু শেষের কথা শুনতেই তার মাথায় দপ করে আগুন জ্বলে ওঠে। মিডিয়ার দিকে রক্ত চক্ষু নিয়ে তাকায়।
-” তাথই আমার মেয়ে। এই এহসান মানান এর নিজের মেয়ে তাথই মানান। এহসান মানান চিৎকার করে বলে ওঠে।
ওখানে থাকা সবাই এমন চিৎকারে চুপ হয়ে যায় আর কেউ সাহস পায় না উল্টো পাল্টা কিছু জিজ্ঞেস করার। এহসান মানান এর সাথে আসা বডিগার্ড গুলো ভিড় ঠেলে সরিয়ে দেয় যাতে আর কেউ বিরক্ত না করে।
কিছুক্ষণ পর বিল্ডিং এর ভিতরে থেকে পুলিশ গার্ড অভি কে বাইরে নিয়ে আসে সব প্রমাণ এখন অভির পক্ষে তাই ওকে অ্যারেস্ট করা হয়। অভি কে বাইরে আসতে দেখে পাবলিক তার ওপরে আক্রমণ করে তাদের সাথে আনা টমেটো ডিম এমনকি রাস্তা থেকে পাথর কুড়িয়ে অভি কে মারতে থাকে। ওখানে এখন পুরো যুদ্ধ ময়দানে পরিণত হয়ে গেছে। পাবলিক এর এমন ভায়োলেন্স দেখে পুলিশ তাড়াতাড়ি করে অভি কে গার্ড দিয়ে প্রোটেক্ট করে। চারিদিকে থেকে পাবলিক কে ঘিরে ফেলা হয় যাতে আর না কিছু করতে পারে। অভি কে এখন দেখার মতো অবস্থা তার পুরো শরীর ডিম ও টমেটো তে ভরে আছে। ওখানে এখন এই মুহূর্তে যা কিছু হচ্ছে সব লাইভ দেখানো হচ্ছে সাথে বাকি থাকা সবাই এই নিউজ দেখে আরো ক্ষেপে যাচ্ছে আর তাদের রায় অভির সাথে যা হচ্ছে একদম ঠিক হচ্ছে তারা এর থেকেও আরো বেশি কঠিন শাস্তি চায় অভির।
অভি কে নিজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এহসান মানান আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনা সবার সামনেই অভির গালে দুই থাপ্পড় মেরে দেয়। আরো বেশি আক্রমণ করতে গেলে পুলিশ আটকে নেয়।
-“আমার মেয়ের সাথে যা করেছো তার ফল তোমাকে ভোগ করতে হবে।
-” আজ তোমার জন্য আমার মেয়েকে আমি হারিয়ে ফেলেছি তাই তোমাকে আমি ছাড়বো না তোমাকে সারাজীবন জেলের মধ্যে পচে মরার ব্যবস্থা করে দেবো। এহসান মানান চিৎকার করে সবার সামনে বলে ওঠে।
অভি কে আর কোনো কথা বলতে না দিয়ে তিনি গাড়িতে উঠে যায়। আর পুলিশরা অভি কে পুলিশ ভ্যান তুলে বেরিয়ে যায়। এদিকে এতক্ষণ রাস্তার ওপারে গাড়ির মধ্যে বসে থেকে তানিয়ার ওখানে হওয়া সব কিছু দেখ ছিল। অভি কে নিয়ে যাওয়ার পর তার মুখে একটা বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে।
-“সরি বেবি আমার হাতে আর কোনো ওয়ে ছিল না তাই তোমাকে মোহরা বানাতে হলো।
-” কি করতাম বলো তুমি জেলে না গেলে আমাকে জেলে যেতে হতো কিন্তু এটা তো হতে পারে না তাই না আমি জেলে গেলে আমার ক্যারিয়ার ইমেজ সব নষ্ট হয়ে যেতো সেটা তো আমি হতে দিতে পারি না। আর তাছাড়া তুমি তো আমাকে ভালোবাসো তাই আমার জন্য তো জেলে যেতেই পারো। এতেই না প্রমাণ হয় তুমি আমাকে কত ভালোবাসো অভি বেবি।
-“তুমি আমার পিঠ পিছে ভুল কাজ করে গেছো আর তার জন্য এই ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে তোমার জন্য আবারো তাথই এর কেস রি ওপেন হয়েছে আবারো তদন্ত হয়েছে তাই এর দায় তো তোমাকে নিতে হতো তাই তুমি জেলে গেলে এতে আমার কি দোষ আমি কিছু করিনি শুধু আমার দিকে যেটা ঘুরে যেতো সেটা আমি তোমার দিকে করে দিয়েছি। এখন তুমিও আমার হয়ে শাস্তি ভোগ করো। বলেই তানিয়া বিশ্রী ভাবে হাসতে থাকে।
হ্যাঁ এই সব কিছুর পিছনে তানিয়া আছে। তাথই এর নিউজ দেখে ঘাবড়ে যায় পরে প্ল্যান করে সব কিছু অভির হয়ে প্রুফ দেয়। যেহেতু সন্দেহের তীর আগে থেকেই অভির দিকে ছিল তাই আর বেশি কষ্ট করতে হয়নি শুধু কিছু ছবি ভাইরাল করতেই কাজ হয়ে গেছে। তানিয়াই ওই হোটেলে নিজের সোর্স লাগিয়ে তাদের ব্যাক আপ থেকে ফুটেজ নিয়ে এডিট করে নিজেকে বাদ দিয়ে ছবি পোস্ট করে আর তার অবস্থা এখন অভি জেলে।
—————
এদিকে তোড়া লিভিং রুমে বসে টিভি তে নিউজ দেখ ছিল তার আর বেশি কিছু করতে হয়নি। তার একটা চালেই সব কিছু পাল্টে গেছে শিকার নিজেই নিজের জালে ফেসে গেছে। আর হঠাৎ করেই অভির নিউজ সামনে আসতে বুঝে গেছে এর পিছনে ও তানিয়ার হাত আছে তবে অভির পাপের শাস্তি হয়েছে। এবার শুধু অপেক্ষার পালা বড় কিছু হওয়ার যা একদম গোড়ায় থেকে নির্মূল করে দেবে।
তোড়া এতক্ষণ শান্তি মনে নিউজ দেখলে ও শেষের দিকে দেখে তার চোখ মুখ কঠিন হয়ে গেছে। মুখের ভাব পাল্টে গেছে। তার ড্যাড এহসান মানান এর কথা শুনে তার মুখ কঠিন হয়ে গেছে।
-” হা হা হা হা আমি তার মেয়ে মিস্টার এহসান মানান এর মেয়ে আজ সে নিজের মুখে বলছে। কিন্তু আমি আর তোমার পরিচয় চাইনা মিস্টার এহসান মানান। চাইনা। বলে জোরে চিৎকার করে সামনে থাকা ফুলদানি টা ফ্লোর আছড়ে ফেলে
জোরে জোরে হাসতে থাকে পাগলের মত তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।
-” এখন ও অনেক কিছু বাকি আছে। শাস্তি তো সবে শুরু আরো দেখতে থাকি কি হয় তোমাদের সাথে কাউকে ছাড়বো না কাউকে ও নয়। এই তোড়া তার বাদলা পুরো করেই তবে দম নেবে।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে….
#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_২৮
রেয়ান্স বাড়িতে ঢুকেই লিভিং রুমে যেতেই দেখতে পায় তোড়া কে। কেমন বিধ্বস্ত হয়ে আছে। এলোমেলো চুল মেঝেতে হাঁটু ঠেকিয়ে মাথা গুঁজে বসে আছে। তোড়া কে এখন একদম স্বাভাবিক লাগছে না। সামনের ফুলদানি আরো সব ভেঙ্গে পড়ে আছে। যেনো এখানে ঝড় বয়ে গেছে। রেয়ান্স জানতো এমন কিছুই হবে তাই তাড়াতাড়ি করে অফিসে থেকে বাড়ি ফিরে আসে। সেও সকালের নিউজ টা দেখেছে। যদি ও সে জানে না এখনও তোড়ার পরিবারের সাথে আসলে ওর কি সমস্যা কিন্তু তোড়ার ড্যাড এর বলা কথা শুনে আর এর আগেও তার পিপিন এর কাছে থেকে যা শুনেছে তাতে তোড়ার এমন কিছু হবে আঁচ করতে পেরে ছিল।
রেয়ান্স তাড়াতাড়ি ভিতরে এসে সাবধানে তোড়ার পাশে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। আলতো ভাবে তোড়ার কাঁধে হাত রেখে মৃদু ভাবে ডেকে ওঠে।
-“তোড়া ।
তোড়া যেনো এই আওয়াজ এর অপেক্ষায় ছিল। রেয়ান্স এর স্পর্শ ও কন্ঠ শুনে হাঁটু থেকে মুখ তুলে ঝাঁপিয়ে পড়ে রেয়ান্স ওপর। রেয়ান্স এর বুকের মাঝে নিজের মুখ গুঁজে দু হাতে জড়িয়ে ধরে তোড়া রেয়ান্স কে। রেয়ান্স শক্ত করে জড়িয়ে নেয় নিজের বুকের মাঝে। এক হাত দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। তোড়া এই ভালোবাসার স্পর্শ পেয়ে নিজকে আর আটকে রাখতে পারিনি ফুফিয়ে কেঁদে ওঠে। এতক্ষণ নিজের মধ্যে লড়াই চালিয়ে গেছে গুমরে কেঁদেছে তার একটা ভালোবাসার উষ্ণ স্পর্শ দরকার ছিল নিরাপদ একটা স্থান খুঁজছিল যেখানে সে সব সময়ের জন্য নিরাপদ থাকবে। যে তাকে ভালোবেসে আগলে রাখবে তাকে কখনও একা হতে দেবে না এমন একটা আশ্রয়। হ্যাঁ সে পেয়েছে রেয়ান্সই সেই আশ্রয়। তার এই বুকটা তার নিরাপদ স্থান যেখানে সব সময়ে সে নিরাপদ থাকবে।
রেয়ান্স তোড়া কে এই প্রথম এত ভেঙে পড়তে দেখলো। তোড়ার এই কান্না যেনো তার বুকের মধ্যে হাজারো যন্ত্রণার সৃষ্টি করছে। সে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আসতে আসতে তোড়ার শান্ত হওয়ার অপেক্ষাতে আছে না সে বাধা দেইনি কাঁদতে। তোড়ার মনের মধ্যে যতো কষ্ট আছে তা তার এই চোখের পানির মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে যাক। তাই সে তোড়া কে নিজের মধ্যে জড়িয়ে রেখে তাকে তার কাছে থাকার অনুভূতি অনুভব করাচ্ছে।
-“কেনো রেয়ান্স কেনো এতদিন পর কেনো তাদের আমার কথা মনে পড়ছে। তোড়া কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে।
-” আমাকে নিয়ে তো তাদের লজ্জা হয়। সবার সামনে পরিচয় দিতে ও অপমান বোধ করে তাহলে কেনো?
-“কেনো মিস্টার এহসান আমাকে নিজের মেয়ে হিসাবে পরিচয় দিলো।
-” আমি মানতে পারছি না রেয়ান্স। আমি ওনার পরিচয় চাইনা।আমি কেউ নয় ওনার কেউ না।
-” আমার চাইনা ওদের ভালোবাসা কিচ্ছু চাইনা ওদের থেকে। আমি যখন ওদের কাছে ছিলাম তখন আমাকে ওরা দেখতে পারতো না কি দোষ করেছিলাম আমি কেনো আমাকে তারা পরের মত করো ট্রিট করত? কেনো আমি তাদের দু চোখের বিষ ছিলাম? আমি তো ওই বাড়ির মেয়ে ছিলাম ওদের নিজেদের মেয়ে ছিলাম তাহলে আমি কোন অপরাধে ওদের ভালোবাসা পেলাম না রেয়ান্স বলোনা। ছোটো থেকেই আমার সব কিছুতেই তানিয়া ভাগ বসিয়ে দিত। কেনো? তবু ও আমি চুপ করে মেনে নিতাম আমার ড্যাড মা কিছুই বলত না কেউ আমার দুঃখ কষ্ট বুঝতো না আমি খেলাম কি না সেটাও না। কেনো? তাহলে এখন কেনো আমাকে নিজের হিসাবে পরিচয় দিচ্ছে আমি চাইনা। আমি ছোটো থেকে ওদের অবহেলা পেতে পেতে নিজের কাজ নিজে করে নিতাম।কখনো আমি আমার পরিচয় ব্যবহার করিনি। সব সময়ে চেষ্টা করে গেছি নিজের পায়ে দাঁড়ানোর নিজেকে স্বাবলম্বী করার। আর সেটা সফল হওয়ার পর আমি সেটা কে অন্য জনের হাতে দেই যে কিনা একটা বিশ্বাসঘাতক। আজ ওদের জন্য আমাকে অভির মত একটা নোংরা জানোয়ার এর হাতে নিজের পরিশ্রম তুলে দিতে হয়েছিলো। ওদের জন্য আমি মেনে নিয়েছিলাম সব কিছু কিন্তু আমাকে কি পেতে হল ধোঁকা। আমার এক্সিডেন্ট এর পর ও আমার ব্যাপারে কোনও তদন্ত করেনি আর এতদিন পর কেনো করছে তাহলে। কেনো? আমি চাইনা ওদের পরিচয়। তোড়া চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে।
রেয়ান্স শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে রাখে তোড়া সে এর আগে তোড়া কে কখনও এই অবস্থায় দেখিনি আর তোড়া তার শেষ কান্না ছিল সেই অভিশপ্ত রাতের দিন তার পর থেকে কখনও কান্না করে নিজেকে সবার স্ট্রং হিসাবে প্রকাশ করেছে। রেয়ান্স নিচু হয়ে তোড়ার মাথায় নিজের ঠোঁট রেখে উষ্ণ স্পর্শ এঁকে দেয়। তার পরেই মৃদু কন্ঠে বলে ওঠে।
-“হুসসস । চুপ আর না ।
-” তুমি এখন তোড়া রেয়ান্স রাওয়াত। তোমার এখন একটাই পরিচয় আর সেটা হলো রেয়ান্স রাওয়াত ওয়াইফ মিসেস তোড়া রেয়ান্স রাওয়াত। বুঝতে পেরেছ। রেয়ান্স বলে ওঠে।
-“কে তাথই আমি তাকে চিনি না আমি চিনি আমার এই ওয়াইফ কে যে সবার কাছে নিজেকে বড় দেখালেও আমার কাছে একটা বাচ্চা লাগে। এটা তোমার পূর্ণজন্ম তুমি তোমার নাম পরিচয় সব কিছুই ছেড়ে এসেছ তাই ওরা পরিচয় দিলো কি না সেটা ভাবতে হবে না। তুমি শুধু আমার এই রেয়ান্স এর ওয়াইফ এটা মনে রাখলেই হবে।
রেয়ান্স এর কথা গুলো শুনে আসতে আসতে শান্ত হতে থাকা। রেয়ান্স এর বলা প্রত্যেকটা কথা যেনো তার হৃদয়ে ধাক্কা দিয়ে একদম গহীনে প্রবেশ করে গেছে তার এখন এটাই মনে হচ্ছে। মনে মনে সে এটাই আওড়াচ্ছে সে রেয়ান্স ওয়াইফ। রেয়ান্স একমাত্র তার পরিচয়। সে তো তার পরিচয় ফেলে এসেছে হ্যাঁ তাথই মারা গেছে সেই দিন। এখন তো আর তাথই নেই। এখন সে তোড়া দেওয়ান আর তোড়া রাওয়াত। হ্যাঁ এটাই তার পরিচয় আর কিছুই না।
-“তুমি সব সময়ে তোমার পাশে আমাকে পাবে। কখনো নিজেকে একা মনে করতে দেবো না। আমার ভালোবাসার চাদরে মুড়ে রাখব তোমায় । রেয়ান্স বলে ওঠে।
-“তোমাকে যদি এখন এই অবস্থায় কেউ দেখে না তাহলে খুব ভাইরাল হয়ে যাবে। টপ নিউ কমার মডেল যে কিনা এখন পুরো পাগলিদের মত হয়ে আছে। রেয়ান্স দুষ্টুমি করে বলে ওঠে।
তোড়া কোনো কথা না বলে রেয়ান্স এর বুকে মাথা রেখেই পিঠে একটা কিল মেরে দেয়। তোড়া কে স্বাভাবিক হতে দেখেই রেয়ান্স এর মুখে হাসি ফোটে। রেয়ান্স তোড়া কে কোলে নিয়েই উপরে রুমের দিকে পা বাড়ায়। রেয়ান্স তোড়া কে ওয়াশরুমে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয় সাওয়ারের নিচে। তোড়া কে ফ্রেশ হতে বলে বাইরে চলে আসে। তোড়া তাকিয়ে শুধু দেখলো রেয়ান্স এর চলে যাওয়া। সে এখন অনেকটাই স্বাভাবিক।
রেয়ান্স রুম থেকে বের হতে তার ফোন বেজে ওঠে। ফোন নিয়ে দেখে তার পিপিন ফোন করেছে। রেয়ান্স একবার রুমের দিকে তাকিয়ে বাইরে বেরিয়ে ফোন রিসিভ করে।
-“রেয়ান্স আমার আদর কেমন আছে এখন? ও ঠিক আছে তো বাবা? কিছু হয়ে যায়নি তো ওর? রেয়ান্স ফোন ধরতে তাসনীম দেওয়ান এক নিঃশ্বাসে বলে ওঠে।
-” পিপিন শান্ত হয়ে যাও সব ঠিক আছে। আর তোমার আদর ও ঠিক আছে তবে…. । রেয়ান্স কে পুরো শেষ করতে দেয় না।
-“তবে কি? তাসনীম দেওয়ান চিন্তিত ভাবে বলে ওঠে।
-“তবে কিছুটা অশান্ত হয়ে গেছিলো তবে এখন ঠিক আছে বলেই ওর আসা থেকে সব কিছু খুলে বলতে থাকে রেয়ান্স।
-” ও কান্না করেছে সত্যি বলছিস? ওর অ্যাক্সিডেন্ট এর পর কখনই ওকে কাঁদতে দেখিনি আর না তো মন মরা দেখেছি সব সময়ে ওর ভিতরে একটা আগুন জ্বলতে দেখেছি। তাসনীম দেওয়ান বলে ওঠে।
-হুম পিপিন ।ও না কান্না করলে নিজেকে হালকা করতে পারতো না। ভিতরে ভিতরে গুমরে থাকলে এই নিয়ে আরো প্রবলেম দেখা দিত। রেয়ান্স বলে ওঠে।
-“আমি জানতাম পারলেই একমাত্র তুই ওকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারবি। আমার বিশ্বাস ছিল। তাসনীম দেওয়ান আবেগ প্রবণ হয়ে বলে ওঠে।
-” হুম ঠিক আছে এখন রাখছি পরে কথা হবে। বলেই ফোন কেটে দেয় রেয়ান্স।
-“ওকে তো আমাকে আবারো স্বাভাবিক করতে হবে। সাথে ওর সমস্ত দুঃখ কষ্ট সব কিছুই মুছে দেবো আমার ভালোবাসা দিয়ে। ওকে সব সময়ে আগলে রাখব নিজের মাঝে। ওর কিছু হলে আমি কাউকে ছাড়াবো না সবাই কে শেষ করে ফেলবো সে যেই হোক না কেনো। রেয়ান্স নিজের মনে বলে ওঠে।
————–
তোড়া ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখে রেয়ান্স কিচেনে খাবার বানাচ্ছে পরনে এখনও অফিসের শার্ট টাই আছে। তোড়া আলতো পায়ে এগিয়ে যায় রেয়ান্স এর কাছে। রেয়ান্স এক মনে কাজ করে যাচ্ছে তাই তোড়ার উপস্থিতি বুঝতে পারিনি। তোড়া রেয়ান্স এর পিছনে দাঁড়িয়ে পিছন থেকে রেয়ান্স কে জড়িয়ে ধরে। রেয়ান্স হঠাৎ কাজের মধ্যে থেমে যায়। মাথা নিচু করে নিজের পেটের দিকে তাকায়। সাথে সাথে মুখে একটা মুচকি হাসি খেলে যায়। তোড়ার দুই হাত তার পেটে জড়িয়ে আছে। তার পিঠ এর শার্ট ভেদ করে ঠান্ডা তরল স্পর্শ পায়। তার বুঝতে বাকি থাকে না এটা তোড়ার চুলের পানি। তোড়া কোনো কথা না বলে ওই ভাবে জড়িয়ে ধরে চুপ চাপ দাঁড়িয়ে আছে। রেয়ান্স কিছুক্ষণ ওই ভাবে থেকেই আবারো নিজের কাজ করতে থাকে।
-“তোড়া বাইরে গিয়ে বসো আমি কিছুক্ষণ এর মধ্যে খাবার নিয়ে আসছি। এখানে থাকতে হবে না আগুনের কাছে। রেয়ান্স বলে ওঠে।
-” উহুমমমম । তোড়া নিজের মুখ রেয়ান্স এর পিঠে ঘষতে ঘষতে বলে ওঠে।
-“এখানে গরম তো বাবা। রেয়ান্স বলে ওঠে।
তোড়া কোনো কথা না বলে আরো শক্ত করে রেয়ান্স কে জড়িয়ে ধরে। রেয়ান্স এর কথায় নিজের বিরক্তি প্রকাশ করতে পিঠে ছোটো ছোটো কামড় বসায়। আর পেটের ওপর থেকে হাত স্লাইড করে এনে শার্ট এর ওপরে কয়েকটা বাটান খুলে আদুল বুকে খামছি দেয়। তোড়ার এমন কাজে রেয়ান্স মাথায় রক্ত চড়ে ওঠে। তার সারা শরীরে যেনো একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায়। নিজের কাজ থামিয়ে রেয়ান্স চুপ করে চোখ বুজে দাঁড়িয়ে যায় নিজেকে কন্ট্রোল করতে। কিন্তু তোড়ার স্পর্শ গুলো তাকে ঠিক থাকতে দিচ্ছে না পাগল করে দিচ্ছে। এদিকে তোড়া ক্রমাগত তার পিঠে কামড় দিয়ে যাচ্ছে আর বুকে খামছি কেটে দিচ্ছে। রেয়ান্স এর এখন একদম পাগল পাগল অবস্থা।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে….
#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_২৯
রেয়ান্স তোড়ার মুভমেন্ট এর জন্য এখনো স্থির হয়ে মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। তার সব ধৈর্য এখন কন্ট্রোল এর বাইরে চলে যাচ্ছে। রেয়ান্স চোখ বন্ধ করে বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে এক ঝটকায় ঘুরে গিয়ে তোড়া কে টেনে পাশেই দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। রেয়ান্স এর অবস্থা কিছুটা না পুরোটাই অস্বাভাবিক।
রেয়ান্স তোড়ার দিকে তাকিয়ে থমকে যায়। দু চোখে যেনো আরো বেশি করে নেশা লেগে যায়। তোড়ার মাথার চুল টুপ টুপ করে এখনও পানি গড়িয়ে পড়ছে। সামনের চুল গুলোর থেকে পানি কপাল গাল হয়ে গড়িয়ে গলা আর তার থেকেও গভীরে গড়িয়ে যাচ্ছে। তোড়া ও তার দিকে তাকিয়ে আছে। যে চোখে আছে তার জন্য ভালোবাসা সমর্পণ এর ইচ্ছা। ঠোঁট দুটো হালকা করে কেঁপে কেঁপে উঠছে। রেয়ান্স তার চোখ দিয়ে তোড়ার পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করতেই যেনো তার চোখে মুখে আরো বেশি নেশা আর ঘোর ঘোর লাগছে। রেয়ান্স একবার তোড়ার মুখের দিকে দেখে তো আরেকবার পা থেকে মাথা পর্যন্ত। তোড়া রেয়ান্স এর একটা লাইট লেমন কালার এর শার্ট পরে আছে। যেটা হাঁটুর কিছুটা উপরে পর্যন্ত স্থান পেয়েছে। চুলের থেকে পানি পড়ায় শার্ট এর প্রায় অংশ ভিজে গেছে যার জন্য তোড়ার শরীরের প্রত্যেকটা ভাঁজ স্পষ্ট হয়ে আছে। যার জন্য তোড়া কে অনেক বেশি আবেদনময়ী লাগছে। আর যা রেয়ান্স কে পাগল করার জন্য যথেষ্ঠ রেয়ান্স তোড়া কে এই ভাবে দেখে নিজেকে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না। তার মাথায় এখন এটাই চলছে কোনো ভাবে তোড়া কি তাঁকে সিডিউস করার চেষ্টা করছে। আর কত ভাবে তাকে জ্বালাবে এই মেয়ে এই ভাবে তাকে কে আসতে বলেছিলো তার কাছে এখন যদি সে কোনো ভুল করে। সে যদি এখন খেয়ে ফেলে তাঁকে কি হবে। রেয়ান্স যেনো আসতে আসতে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। রেয়ান্স নিজেকে সামলানোর জন্য চোখ বন্ধ করে বড় করে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিতে গেলে তোড়া দু হাত দিয়ে আবারও রেয়ান্স কোমরের চারিদিকে জড়িয়ে ধরে। রেয়ান্স আর নিজেকে রুখতে পারে না। চোখ খুলেই দু হাত দিয়ে তোড়ার মুখ উঁচু করে তুলে ধরে তোড়ার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। শুষে নিতে থাকে রেয়ান্স তোড়ার ঠোঁট। তোড়া ও নিজেকে রেয়ান্স এর সাথে মিশিয়ে নিয়ে সমান তালে রেয়ান্স কে কিস করতে থাকলে। দুজন যেনো খেলায় মেতে আছে একে অপরের ঠোঁট নিয়ে। গভীর থেকে গভীর হতে থাকে তাদের চুম্বন পর্ব। প্যাশনেটলি কিস করতে থাকে যতক্ষণ না দুজনের দম আটকে আসে।। প্রায় আধা ঘন্টা পর একে অপরের ঠোঁট ছেড়ে হাফাতে থাকে। রেয়ান্স ঠোঁট ছেড়ে বড় বড় কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়েই তোড়ার গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। আসতে আসতে লিক করতে থাকে রেয়ান্স তোড়ার গলায়। তোড়া ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিতে থাকে। তার হাত দিয়ে রেয়ান্স মাথা ও পিঠ খামছি দিয়ে রাখে। রেয়ান্স এর এমন স্পর্শ যেনো তোড়া কে পাগল করে দিচ্ছে রেয়ান্স উপস্থিতি তার মনের মধ্যে ঝড় তোলে আর এখন তার স্পর্শ গুলো তাকে সুখের সাগরে মেরে ফেলছে।তার চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। রেয়ান্স এখনও তোড়ার গলায় মুখ ডুবিয়ে রেখেছে। ছোটো ছোটো চুমুর বর্ষণে তোড়ার গলায় ভিজে যায়। তোড়া আর এই ভালোবাসার স্পর্শ সহ্য করতে না পেরে রেয়ান্স এর পিঠের থেকে হাত সরিয়ে নিজেকে ছাড়াতে নিতে গেলে বেখেয়ালে তোড়ার হাত পাশের থাকা গরম পাত্রে ঠেকে যায় সাথে সাথে তোড়ার মুখ দিয়ে একটা মৃদু চিৎকার বেরিয়ে যায়।
রেয়ান্স তোড়ার এমন চিৎকার শুনেই চটজলদি তোড়ার গলায় থেকে মুখ তুলে তোড়ার মুখের দিকে তাকায় দেখে তোড়ার কিছুটা যন্ত্রণার ছাপ আর চোখের কোণে পানি জমে গেছে। তোড়ার এমন মুখ দেখেই রেয়ান্স এর ঘাবড়ে বুঝতে পারে না কি হলো।
-“তোড়া কি হয়েছে তোমার? কোথায় ব্যাথা পেয়েছ আমাকে বলো? রেয়ান্স চিন্তিত হয়ে হড়বড়িয়ে বলে ওঠে।
তোড়া রেয়ান্স এর এমন করতে দেখে সে তার ব্যাথা ভুলে রেয়ান্স এর দিকে তাকিয়ে থাকে. সে বুঝতে পারে ব্যথা টা আসলে কার লেগেছে তার না রেয়ান্স এর। তার মধ্যে থাকা এতক্ষণ এর ঘোর লাগা নেশা ভাব কেটে গিয়ে তার জায়গা এখন চিন্তা ভয় কষ্ট গ্রাস করে ফেলেছে।
-“আরে বলবে তো কি হয়েছে? তুমি চিৎকার করলে কেনো? রেয়ান্স তোড়া কে ঝাকিয়ে বলে ওঠে।
তোড়ার থেকে কোনও রেসপন্স না পেয়ে রেয়ান্স নিজেই এবার দেখতে থাকে তোড়ার কি হয়েছে। রেয়ান্স তোড়ার হাতের দিকে তাকাতেই তার চোখে যন্ত্রণার ছাপ ফুটে ওঠে চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। চটজলদি রেয়ান্স গ্যাস অফ করে তোড়া কে কোলে নিয়ে লিভিং রুমে এসে তোড়া কে বসিয়ে দিয়েই ফ্রিজে থেকে আইস আর ফাস্টেড কিট নিয়ে ফিরে আসে। তোড়া বসে বসে শুধু রেয়ান্স এর কাজ দেখতে থাকে। সে কেমন অস্থির হয়ে আছে তার জন্য তাকে দেখেই কেমন পাগল পাগল লাগছে। তার এই টুকু কষ্ট দেখেই সহ্য করতে পারছে না। ভেবেই তার হাতের দিকে দেখে হাত এর উপরিভাগ পুরো লাল হয়ে পুড়ে গেছে হালকার ওপর থেকে। তখন হাত সরাতে গিয়ে গ্যাস ওপর ফুটতে থাকা পানির মধ্যে হাত চলে গিয়েছিলো আর তার জন্য এই অবস্থা অবশ্য বেশি লাগেনি অল্প লেগেছে।
রেয়ান্স তোড়ার পাশে বসেই তোড়ার হাতের ট্রিটমেন্ট করতে থাকে আর তোড়া অপলক হয়ে তাকিয়ে আছে। রেয়ান্স এর আলতো আলতো হাতে তোড়ার হাতে আইস রাব করা মেডিসিন লাগানো যেনো একটু জোরে করলেই সে প্রচণ্ড ব্যথা পাবে আর তার সাথে কিছুক্ষণ পর পর তার হাতে ফু দিচ্ছে আর তার মুখের দিকে দেখছে তার কষ্ট হচ্ছে কি না বোঝার জন্য। কিন্তু তোড়ার তো তার ব্যথার কথা মনেই নেই সে তো রেয়ান্স এর কাজ এর মধ্যে ডুবে গেছে। তার একটু ব্যথাতেই রেয়ান্স এর এই অবস্থা তাহলে এর থেকে বেশি কিছু হলে রেয়ান্স কি করবে।
-“তুমি আর কোনো দিনও কিচেনে যাবে না। রেয়ান্স কিছুটা গম্ভীর হয়ে বলে ওঠে।
রেয়ান্স এর কথা শুনে তোড়ার ঘোর কেটে যায়। অবাক হয়ে যায় রেয়ান্স এর কথা শুনে। কিচেনে যাবে না মানে এটা আবার কি কথা তোড়া অবাক হয়ে রেয়ান্স এর দিকে তাকায় ।রেয়ান্স দেখে তোড়া তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তাই আবারো বলে ওঠে।
-“আজ থেকে তোমার কিচেনে যাওয়া বন্ধ। আমি চাইনা তোমার এক টুকু ও আচড় লাগুক তাই তুমি আমার কথা শুনবে যাবে না কিচেনে। গম্ভীর হয়ে বলে ওঠে।
-” রেয়ান্স…
তোড়া কিছু বলতে নিলেই রেয়ান্স তোড়ার মুখে হাত রেখে চুপ করিয়ে দেয় তোড়া রেয়ান্স এর মুখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে যায় আর কোনো কথা বলার চেষ্টা করেনা রেয়ান্স এর চোখ মুখ এখন শক্ত হয়ে গেছে।
-” আর একটাও কথা নয় তুমি যাবে না মানে যাবে না এরপর থেকে খাবার আমি বানাবো আর দরকার হলে বাড়ির সব কাজ সার্ভেন্ট করবে তবুও তুমি নয়। আমি যেনো না দেখি। রেয়ান্স বলে ওঠে।
-” তুমি কিচেনে থাকলে আমি তোমাকে কোম্পানি দিতে তো যেতে পারি। আমি কোনো কাজ করব না প্রমিস। তোড়ার বাচ্চাদের মত মুখ বানিয়ে বলে ওঠে।
-” না মানে না। আর একটাও কথা নয়। বলেই রেয়ান্স উঠে যায়।
হুম না মানে না বিড়াল চোখ ওয়ালা। শুধু আমাকে দূরে রাখে। আমিও দেখব কেমন করে না মানে হ্যাঁ হয়। আরে বাবা একটু তো পুড়ে গেছে নাকি। আর এটা কি ইচ্ছে করে হয়েছে নাকি কাজ করতে গিয়ে। আমি তোমার স্পর্শ আর নিতে পারছিলাম না তাই তো সরে যেতে গিয়ে ভুলে হয়ে গেছে। আর পুড়ে গেছে আমার আর যন্ত্রণা ওনার হচ্ছে। তাই বলে আমাকে যেতে দেবে না হু আমি ও দেখব কি করে আটকাও আমাকে আমিও মিসেস রেয়ান্স। তোড়া বাচ্চাদের মত গাল ফুলিয়ে নিজের মনে বলে ওঠে।
তারপরেই আবার হেসে ওঠে নিজের মনে। রেয়ান্স এর এতক্ষণ এর উৎকন্ঠা দুশ্চিন্তা যন্ত্রণা দেখে তোড়া বুঝতে পারে যে তার হাত পুড়ে যাওয়া তে সে কষ্ট পেয়েছে। তাকে কতটা ভালোবাসে এই মানুষটা যে তার গায়ে এক টুকু ও আচড় ও লাগতে দিতে চায় না। তার কপালে ও এতটা সুখ ছিল ভাবতেই তার রেয়ান্স এর মুখ মনে আসে সাথে সাথে ভয় পেয়ে যায়।
এদিকে রেয়ান্স কিচেনে এসে ওই গরম পানির পাত্রের মধ্যে নিজের হাত ডুবিয়ে দেয়। তার যেনো এখন একটু শান্তি লাগছে। এতক্ষণ সে যন্ত্রণায় ফেটে যাচ্ছিলো। রেয়ান্স এর মনে করে এটা তার জন্য হয়েছে। তোড়ার হাত চোখে ভেসে আসতেই তার যেনো যন্ত্রণা টা দ্বিগুণ হতে থাকে। তার মনে হচ্ছে তার হাত যদি পুড়িয়ে ও ফেলা হয় তাতে ও যেনো তার যন্ত্রণা টা কম হবে না। তার হাত যে এদিকে গরম পানির মধ্যে থাকার জন্য পুড়ে গিয়ে ফোসকা পড়তে শুরু করেছে এতে তার কোনো ধ্যান নেই। রেয়ান্স এর তার হাতের জন্য কোনো কষ্ট হচ্ছে না তার কষ্ট হচ্ছে শুধু হচ্ছে শুধু তোড়ার হাত এর কথা ভেবে। একটা মানুষ কতটা ভালোবাসলে তবেই তার নিজের কষ্ট ভুলে অন্যের কষ্টের কথা ভেবে যন্ত্রণায় ছটফট করতে পারে।
-“সব আমার জন্য হয়েছে। আমি কি করে এতটা অসবধান হতে পারলাম। কি ভাবে। আমার জন্য শুধু আমার জন্য তোড়ার হাত পুড়ে গেছে। তাই আমার হাত ও পুড়ে যাক। বলেই পাগলের মত করতে থাকে রেয়ান্স।
রেয়ান্স আবারো গ্যাস জ্বালিয়ে দেয় এবার ফুটতে থাকা পানির মধ্যে হাত দিতে গেলেই পিছন থেকে তোড়া এসে টান মেরে রেয়ান্স কে সরিয়ে ফেলে। গ্যাস অফ করে রেয়ান্স এর হাতের দিকে দেখতে তার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। রেয়ান্স এর অবস্থা দেখেই তার বুকটা যেনো যন্ত্রণায় ফেটে যাচ্ছে তার জন্য সে নিজের হাত পুড়িয়ে ফেলেছে। তোড়া কঠিন চোখে রেয়ান্স এর দিকে তাকায় । রেয়ান্স কোনো কথা না বলে তোড়ার মুখের দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে অন্য হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে দিতে গেলে তোড়া হাত সরিয়ে দিয়ে রেয়ান্স কে নিয়ে বাইরে গিয়ে বসিয়ে দেয়। রেয়ান্স তোড়ার মুখের দিকে চেয়ে কোনো কথা বলতে পারে না।
তোড়া কাঁদতে কাঁদতে রেয়ান্স হাতে ট্রিটমেন্ট করতে থাকে। হাতের দিকে তাকাতেই যেনো তার ভয় লাগছে। তার হাত একটু লাগতে পুড়ে গেছে আর রেয়ান্স তো হাত পানির মধ্যে ডুবিয়ে রেখেছিলো তাই হাত দেখার মত নেই। রেয়ান্স তোড়ার কান্না দেখে অন্য হাত তোড়ার কোমরে ধরে তার কাছে এনে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। তোড়া সরে যেতে চাইলেও পারে না। রেয়ান্স নিচু হয়ে তোড়ার চোখের পানি গুলো তার ঠোঁট দিয়ে শুষে নেয়। তোড়া রেয়ান্স এর বুকে মাথা রেখেই রেয়ান্স এর পিঠে খামছি কাটে। এতে রেয়ান্স আরো শক্ত করে তোড়া কে তার সাথে জড়িয়ে নেয়।
-“কেনো করলে এমন? হাতের কি হয়েছে দেখেছ তুমি? তোড়া কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে।
-“শশশশশসস । কিছু হয়নি আমার দেখো আমি একদম ঠিক আছি। কোনো কষ্ট হচ্ছে না আমার বরং যন্ত্রণা থেকে শান্তি পেয়েছি। রেয়ান্স মুচকি হেসে বলে ওঠে।
-” আমার হাত পুড়ে গেছে তার জন্য তুমি কেনো… তোড়া আর কিছু বলতে পারে না কেঁদে ফেলে।
-“তোমার হাত পুড়ে গেছে কষ্ট পেয়েছ সেখানে আমি কেমন করে চুপ করে থাকি তোমার হাত দেখে আমার যন্ত্রণা হচ্ছিল খুব যেটা আমি মেনে নিতে পারছিলাম না তাই যন্ত্রণায় থেকে মুক্তি পেতেই আমার হাত কে সেই একই কষ্ট দিয়েছি। না হলে যে আমি শান্তি পেতাম না। আর তাছাড়া আমি তোমাকে বলেছি যে তোমার গায়ে একটা আচড় এর দাগ ও আমি মেনে নেবো না। তাহলে এটা কি করে মেনে নিতাম বলো। বরং এখন আমার শান্তি লাগছে প্রচণ্ড শান্তি লাগছে।
-“রেয়ান্স । আমি জানি তুমি নিজেকে দোষী মনে করছো এর জন্য। কিন্তু এতে তোমার কোনো হাত ছিল না সবটাই আমার জন্য হয়েছে তুমি কেনো কষ্ট দিলে নিজেকে। তোড়া চিৎকার করে কান্না করতে করতে বলে ওঠে।
রেয়ান্স তোড়ার কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। তোড়া তার মনের কথা বুঝতে পারলো কি করে তার মনের ভিতরে কি চলছে সে কি ভাবছে সেটা কি এখন তোড়া ও তার মত বুঝতে পারে যেমন সে তোড়ার মনের কথা বুঝতে পারে তার মুখ দেখেই ভাবতেই হাসি খেলে যায় রেয়ান্স এর মুখে।
-” তুমি কষ্ট পেলে আমি কি করে মেনে নেবো বলো। তাই আমাকে ও তো তোমার কষ্ট টা ভাগ করে নিতে হবে তাই না। আর আমার কষ্ট ভাগের ধরন ও আমার মতো। হেসে বলে উঠে রেয়ান্স তোড়া কে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়।
তোড়া আর কোনো কথা না বলে রেয়ান্স কে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে। তোড়া মনে মনে ভাবতে থাকে। এবার তাকে আরো সাবধান হয়ে চলতে হবে না হলে তার জন্য রেয়ান্স নিজেকে কষ্ট দেবে। তার কিছু সেটা রেয়ান্স নিজের ওপর ও এপ্লাই করবে। তাই তার নিজের জন্য না হলেও এখন থেকে তাকে রেয়ান্স এর জন্য সাবধানে থাকতে হবে সুরক্ষিত থাকতে হবে। হ্যাঁ এই মানুষটার জন্য তাকে ঠিক থাকতে হবে। এই মানুষটার জন্য সে সব করতে পারবে সব কিছু ভালোবাসে যে সে মানুষটা কে। কবে কি ভাবে ভালোবেসে ফেলেছে তার জানা নেই শুধু এটুকু জানে যে সে ভালোবাসে রেয়ান্স কে।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে….