#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৪৮
তোড়া ওশিয়ান স্টার গ্রুপ থেকে বেরিয়ে দেখতে পায় রেয়ান্স এর গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। তোড়া একবার রাই এর দিকে দেখে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। গাড়িতে রেয়ান্স এর পাশে বসেই রেয়ান্স এর দিকে তাকিয়ে দেখে সে তার দিকেই দেখছে। রেয়ান্স এর মুখের দিকে তাকিয়ে তোড়া বুঝতে পারে সে ক্ষেপে আছে। আর এর কারণটা ও তোড়া খুব ভালো করে জানে। রাই যে তার পাশে থেকে রেয়ান্স কে সব আপডেট দিচ্ছিল সেটা তোড়া জানে। কিন্তু সে এটা নিয়ে কিছু বলিনি। রেয়ান্স এর দিকে তাকিয়ে তোড়া এগিয়ে গিয়ে রেয়ান্স কে জড়িয়ে তার বুকে মাথা রাখে । রেয়ান্স ও দু হাত দিয়ে তোড়া কে নিজের সাথে জড়িয়ে নিয়ে কপালে একটা উষ্ণ স্পর্শ দিয়ে দেয়।
-“রাওয়াত সাহাব কি রেগে আছে। তোড়া মৃদু আওয়াজে বলে ওঠে।
রেয়ান্স কোনো কথা না বলে শুধু তোড়া কে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখেছে । তার এখন কোনো কথা বলতে ইচ্ছা করছে না। সে তার রাগ টা তোড়া কে দেখাতে চাইছে না তাই নিজেকে শান্ত করছে তোড়া কে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখে। রাই এর মিস্টার নিমেষ এর কথা বলার পর পর সে এখানে চলে এসেছিলো আর তারপরেই নোমান এর কথা শুনেই তো তার মাথা ফেটে যেতে শুরু করেছিলো। আগের দিন ও ওই নোমান তোড়ার সাথে ফ্লর্ট করতে চেয়েছিলো আর আজকে তো সব সীমা পার করে দিয়েছে। তবে তোড়ার আক্রমণ এর করার কথা শুনেই সে নিজেকে শান্ত করে নেয় কিছুটা না হলে এতক্ষণে ওই নোমান এর যে কি হতো সে একমাত্র রেয়ান্স জানে।
তোড়া মাথা তুলে রেয়ান্স এর দিকে তাকিয়ে দেখে তার মুখ গম্ভীর হয়ে আছে। বুঝতে পারে এখনও ভেবে যাচ্ছে। তোড়া তার মুখ নামিয়ে রেয়ান্স গলায় কামড় বসিয়ে দেয়। রেয়ান্স তোড়ার কামড় দিতেই নিজের ভাবনা কে কন্ট্রোল করে নেয়।বুঝতে পারে তোড়া তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। রেয়ান্স মাথা নিচু করে তোড়ার মুখ দু হাতে তুলে নিয়ে তোড়ার ঠোঁটে একটা গভীর চুমু বসিয়ে দেয়।
পাঁচ মিনিট পর রেয়ান্স তোড়া কে ছেড়ে তার কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে তোড়া কে জড়িয়ে রাখে। আর তার কিছুক্ষণ পরেই শাহীন আর রাই গাড়িতে উঠে বসে। তারা এতক্ষণে বাইরে ছিল। রাই গাড়িতে বসে সামনের মিরর দিয়েই পিছনে বসা রেয়ান্স ও তোড়া কে দেখতে থাকে । তোড়ার মুখে ফুটে আছে একটা তৃপ্তির হাসি। এটা দেখেই রাই ও খুশি হয়ে যায়। সে সব সময়েই তোড়ার মুখে এমন হাসি দেখতে চেয়েছিলো। আর আজ রেয়ান্স এর সাথে তোড়ার জীবন জুড়ে যেতে তার মুখে সর্বদা এই হাসি দেখা যায়। রাই একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে বাইরের দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ করে।
————-
তোড়া বাড়ি ফিরতে খুশি হয়ে যায়। কারণ তার মম ও দাদু এসেছে। এটা ঠিক সে জানত সে তার মম এর দেখা পাবে। কারণ তোড়া তার এই মম কে পাওয়ার পর থেকেই তার প্রত্যেকটা সাকসেস এর দিন তার মম কে তার পাশে পেয়ে এসেছে তাহলে আজকে কেনো পাবে না আজ ও তার একটা সাকসেস এর দিন। তোড়া ছুটে গিয়ে তার মম কে জড়িয়ে ধরে।
-“আই মিস ইউ মম। তোড়া আদুরে ভাবে বলে ওঠে তাসনীম দেওয়ান কে জড়িয়ে ধরে।
-” আমি ও তোকে খুব খুব মিস করেছি আদর। তাসনীম দেওয়ান তোড়া কে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখেই বলে ওঠে।
-“আচ্ছা তোমরা আবারো আমাকে না বলে চলে এসেছ। তোড়া বাচ্চাদের মত গাল ফুলিয়ে বলে ওঠে।
-” আরে বাবা বলে আসলে কি এত খুশি লাগত আগে থেকেই জানতে পেরে যেতে তখন তো আমি আর আমার আদর এর মুখে এত হাসি দেখতে পেতাম না। তাসনীম দেওয়ান তোড়ার কপালে স্নেহ স্পর্শ দিয়ে বলে ওঠেন।
-” বাহ বাহ এসেই তার মেয়ে কে আদর করতে শুরু করে দিয়েছে আরে ভাই আমিও তো আছি নাকি আমিও এক সপ্তাহ আগে এখানে এসেছি আমাকেও তো কেউ মিস করো ধুর। লেখা বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে বলে ওঠে।
-” ওই এসে গেলো হিংসুটের রানী। তাসনীম দেওয়ান হেসে বলে ওঠে।
-“দিদিভাই । রাগিব রাওয়াত তোড়া কে ডেকে ওঠেন।
-“কেমন আছো দাদু? তোড়া এসে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে।
-” আরে দিদিয়া কি যে বলিস না আমি বুঝিনা আরে বাবা আমাদের দাদু এখন বেশ খুশ মেজাজে আছে বুঝলি তার এখন খারাপ থাকার সময় নাকি। লেখা বলে ওঠে।
-” মানে? তোড়া হতভম্ব হয়ে বলে ওঠে।
-” মানে হলো…কি দাদু বলবো নাকি? আচ্ছা বলেই দিই। দিদিয়া তোর মনে আছে আমাদের পাশের বাড়ির নয়ন আন্টি কে? লেখা এক চোখ টিপে বলে ওঠে।
-“হ্যাঁ ।মনে আছে কিন্তু কেনো? তোড়া অবাক হয়ে একবার দাদুর দিকে তো একবার লেখার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।
-” আরে বাবা তুই এখনও বুঝলি না। বুঝতে পারছি বেচারা আমার জিজুর দিন খুব কষ্টে কাটবে। লেখা অভিনয় করে বলে ওঠে।
এদিকে তাসনীম দেওয়ান মুখ টিপে টিপে হাসছে. আর রেয়ান্স এর দাদু রাগিব বাবু তো মুখ কাচুমাচু করে আছে। ওদের ওই অবস্থা দেখেই শুধু তোড়া অবাক চোখে একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আর লেখা সে তার দাদুর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে যাচ্ছে। ওদের ওই অবস্থা দেখে তাসনীম দেওয়ান ওখান থেকে চলে যায়।
-“আরে বাবা কি হয়েছে সেটা তো বল? তোড়া এবার ঝাঝিয়ে উঠে বলে ওঠে।
-” আরে দাদু আর নয়ন আন্টি এখন চোরি চোরি চুপকে চুপকে দিল দেওয়া নেওয়া করছে হায়ে। লেখা এক হাত মাথায় আর এক হাত কোমরে রেখে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে ওঠে।
-“চুপ কর অসভ্য। বলেই তাড়াতাড়ি ওখান থেকে কেটে পড়ে রাগিব রাওয়াত।
আর সাথে সাথে হাসিতে ফেটে পড়ে তোড়া আর লেখা তারা ঠিক তাদের দাদুর প্রেমের গাড়ির খবর বুঝতে পেরে গেছে। দুজন দুজন কে জড়িয়ে রেখেই খানিকটা নাচানাচি করে নেয়।
————
-” স্যার সমস্ত ইনফরমেশন কালেক্ট করে নিয়েছি। এর মধ্যে সমস্ত ডিটেইলস দেওয়া আছে। শাহীন রেয়ান্স এর সামনে ডকুমেন্ট এর একটা ফাইল রেখে বলে ওঠে।
-” গুড জব। রেয়ান্স বলে ওঠে।
-“স্যার মানান পরিবারে ভিতরের হিস্ট্রি এর থেকে কিছু বোঝা যাবে বলে মন হয় না তবু ও আপনি দেখুন পুরো টা কেমন একটা জটিল হয়ে আছে। শাহীন বলে ওঠে।
-“হুম ইন্টারেস্টিং । রেয়ান্স বলে ওঠে।
-“স্যার মানান পরিবারের সাথে আরো একটা নাম উঠে এসেছে অনিতা শর্মা। শাহীন বলে ওঠে।
-“অনিতা শর্মা মানে শর্মা কর্পোরেট এর বারিস। রেয়ান্স গালে হাত দিয়ে বলে ওঠে।
-” হ্যাঁ স্যার তিনি মৃত প্রায় আঠারো থেকে উনিশ বছর আগে ওনার মৃত্যু হয়েছে। আর ওনার সাথে কোনো ভাবে ম্যাডাম এর নাম জড়িত আছে। শাহীন বলে ওঠে।
-“তোড়া । রেয়ান্স নিজের কপালে আঙুল রাব করতে করতে বলে ওঠে।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে…..
#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৪৯
রেয়ান্স বাড়ি ফিরেছে কিছুক্ষণ আগেই। তার মাথায় এখনও চলছে শাহীন এর দেওয়া এভিডেন্স আর একটা নাম অনিতা শর্মা ও তোড়া। এরা দুজন কিভাবে কানেক্টটেড হতে পারে সেটাই নিয়ে ভেবে যাচ্ছে। অফিসে থেকে বাড়ি ফিরে সবার সাথে একটু দেখা করেই স্টাডি রুমে চলেছে। তোড়ার সাথে কোনো কথা হয় নি তবে রেয়ান্স তোড়া কে এক পলক দেখে চলে এসেছে। তার মাথায় এক সাথে স্লাইড করছে মানান পরিবারের ব্যাপার অনিতা শর্মা তোড়া আর শাহীন এর দেয়া এভিডেন্স। রেয়ান্স হাতে পাজেল সেট নিয়ে পাকিয়ে যাচ্ছে আর এক দৃষ্টিতে টেবিলের ওপর থাকা ডকুমেন্ট গুলোর দিকে দেখছে।
বাইরে থেকে দেখলে বোঝা যাবে না যে রেয়ান্স এর মাথায় এখন কি চলছে। তাকে দেখলে মনে হবে সে এখন পাজেল কিউব নিয়ে খেলছে। তার ভিতরের ঝড় এখন কেউ অনুভব করতে পারবে না। রেয়ান্স বসে বসে তার মাথার ভিতরে একটার পর একটা ক্লু মিলিয়ে যাচ্ছে সাথে সাথে তার হাতের পাজেল সেট টাও দ্রুত গতিতে চেঞ্জ হচ্ছে।
পায়ের আওয়াজ হতে মাথা ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে তোড়া ভিতরে ঢুকছে ট্রে হাতে। তোড়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে দেখে আর তার পর পরই হাত থেমে যায়। তার মুখের কোণে ফুটে এক উজ্জ্বল হাসি। সে এবার তোড়ার দিকের থেকে চোখ ঘুরিয়ে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে পাজেল সেট টা ও মিলে আছে। রেয়ান্স হাতের থেকে পাজেল সেট টা সরিয়ে রেখে দ্রুততার সাথে সামনে থাকা ফাইল টা বন্ধ করে কিছুটা দূরে সরিয়ে রাখে। তারপরেই চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে তোড়া কে দেখতে থাকে । কিন্তু তার চোখে আজকে তোড়া কে অন্য রকম লাগছে। সে তোড়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে. তার ঠোঁটের কোনায় ফুটে আছে সেই আগের হাসি।
তোড়া রেয়ান্স এর কাছে এসে হাতে থাকা খাবারের প্লেট টা টেবিলের এক প্রান্তে রাখে। সাথে সাথে অনুভব করে তার কোমরে চারপাশের দুটো শক্তিশালী হাতের উষ্ণ স্পর্শ। রেয়ান্স তোড়ার কোমরে হাত রেখে তাকে তার কোলে বসিয়ে নেয়। তোড়া ও রেয়ান্স কোলে বসে দু হাত দিয়ে গলা জড়িয়ে রেয়ান্স এর ঠোঁটে ঠোঁট ছুয়ে দেয়। সাথে সাথে রেয়ান্স এর হাসিটা আরো গভীর হয়। সে এতক্ষণ এই মিষ্টি ছোয়ার উপস্থিতি খুব মিস করছিলো। রেয়ান্স হেসে তোড়ার কাঁধে মুখ গুঁজে দেয়।
-“কি ব্যাপার হুম আজকে এসেই স্টাডি রুমে চলে এসেছ। তাও তোমার পাওনা না নিয়ে? তোড়া হেসে রেয়ান্স এর মাথার চুল ঘেঁটে দিয়ে বলে ওঠে।
-” উম কিছু হিসাব মেলানোর ছিল। রেয়ান্স তোড়ার কাঁধে মুখ ঘষতে ঘষতে বলে ওঠে।
-” তোমার উপরে খুব কাজের পেশার যাচ্ছে বলো। আর বুঝতেই পারছি তোমার হিসাব ও নিশ্চয়ই মিলে গেছে তাইতো তোমার মুখে এই হাসিটা দেখতে পাচ্ছি যেটা অফিসে থেকে ফেরার পর ছিল না। তোড়া বলে ওঠে।
-“তাই নাকি তা অফিসে আসার সময়ে তাহলে আমার মুখ কেমন ছিল? রেয়ান্স মাথা উঁচু করে তোড়ার গালে আলতো আলতো করে কামড় দিয়ে বলে ওঠে।
-” তোমার মুখ পুরো হুকোমুখো হয়েছিলো যেনো মনে হচ্ছিলো গভীর চিন্তার সাগরে ডুবে আছো। তাইতো তুমি এসে আমাকে একবার ও দেখলে না। না আমার সাথে কথা বলেছ। শুধু আসার সময়ে একবার দেখে চলে এসেছ। তোড়া গাল ফুলিয়ে বলে ওঠে।
-” আচ্ছা তাই। তাই জন্য বুঝি আমার ওয়াইফি টা গাল ফুলিয়ে রেখেছে। রেয়ান্স তোড়ার গালে তার জিভ দিয়ে গোল গোল স্পর্শ করতে করতে বলে ওঠে।
তোড়া রেয়ান্স এর এমন স্পর্শে শিহরিত হচ্ছে তার পুরো শরীরের মধ্যে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যাচ্ছে। সে এক হাত দিয়ে রেয়ান্স কাঁধ খামছে রেখেছে।
-“হুম । তোড়া কিছুটা আমতা আমতা করে বলে ওঠে।
রেয়ান্স তোড়ার কথা শুনে তোড়ার দিকে তাকিয়ে দেখে সে চোখে বন্ধ করে রেখেছে তার ঠোঁট গুলো তিরতির করে কাঁপতে শুরু করেছে তার হাতের মুঠো তার কাঁধে শক্ত হয়ে চেপে বসেছে। রেয়ান্স তোড়ার এই অবস্থা দেখে মনে মনে হেসে ফেলে। পাগলি টা তার এই আলতো স্পর্শে ও শিউরে ওঠে। আর তার এই রূপ তাকে আরো বেশি করে নেশায় বুঁদ করে তার দিকে আরও বেশি করে আকর্ষণ করে সেটা কি এই মেয়েটা বোঝে না। রেয়ান্স তোড়ার নাকে আলতো করে কামড় বসিয়ে দিয়ে তোড়ার ঠোঁটের দিকে তাকায়। তোড়ার ঠোঁটের ওই কম্পন তাকে স্থির থাকতে দিচ্ছে না। রেয়ান্স তোড়ার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে নেশায় আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে সে আস্তে আস্তে নেশায় ডুবে যাচ্ছে। রেয়ান্স এবার ধীরে ধীরে তোড়ার ঠোঁটের মাঝে নিজের জায়গা করে নেয়। শুষে নিতে থাকে তোড়ার ঠোঁটের সমস্ত সুধা। রেয়ান্স তার মাঝের এতক্ষণে সব চিন্তা ভাবনা সব কিছু তোড়ার উপর দিয়ে নিচ্ছে ডুবে যাচ্ছে তোড়ার ঠোঁটের মাঝে। গভীর থেকে গভীরে গিয়ে শেষে জিভ এর লড়াই শুরু হয়। দুজন এর শ্বাস ফুলে আসতে একে অপরের ঠোঁট থেকে বিচ্যুত হয়। তোড়ার রেয়ান্স বুকে মুখ গুঁজে ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিতে থাকে। আর রেয়ান্স তোড়ার মাথায় নিজের মুখ ডুবিয়ে দেয়।
-“আচ্ছা ওয়াইফি এই হুকোমুখো টা কি তুমি আমাকে বললে? রেয়ান্স বেশ কিছুক্ষণ পর বলে ওঠে।
তোড়া রেয়ান্স এর কথা শুনে হেসে ফেলে। রেয়ান্স এর বুকের থেকে মুখ তুলে রেয়ান্স এর মুখের দিকে তাকায় দেখে রেয়ান্স মুখটা কেমন ফুলিয়ে আছে।
-” আরে বাবা হুকোমুখো মানে যে তুমি মুখটা কেমন একটা গম্ভীর করে রেখেছিলে মনে হচ্ছিলো একদম রাম গরুর ছানা হাসতে যার মানা। তোড়া রেয়ান্স এর গাল দুটো টেনে বলে ওঠে।
-“আচ্ছা তাই নাকি আমি রাম গরুর ছানা। আমি হাসতে পারিনা। আমি হুকোমুখো ।দেখাচ্ছি তোমার মজা। বলে রেয়ান্স তোড়ার ওপর আক্রমণ করে।
দুটো তে মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। ডুবে যায় ঝগড়া দিয়ে নিজেদের ভালোবাসার মধ্যে। ভেসে বেড়ায় একে অপরের ভালোবাসার সাগরে। মুড়ে নেয় একে অপরের ভালোবাসার চাদরে।
————-
ঘড়ির কাঁটায় ঠিক সকাল দশটা তোড়া ও রাই ইতি মধ্যে উপস্থিত হয়েছে ওশিয়ান স্টার কোম্পানির অফিসে। তারা এখন আপাততঃ সিইও মিস্টার নিমেষ এর কেবিনে বসে আছে। তোড়া চুপ চাপ বসে থাকলেও রাই বিরক্তি নিয়ে বসে আছে। নিমেষের এই এক্সট্রা কেয়ার ব্যাপার টা ঠিক রাই হজম করতে পারছে না। নিমেষ কাজ নিয়ে তোড়া কে বেশ কিছু উপদেশ দিচ্ছে আর তোড়ার দিকে তাকিয়ে থাকছে এটা যেনো রাই এর কাছে বিষ লাগছে। তবে তোড়া শান্ত হয়ে বসে আছে তার মধ্যে এর কোনো ভাবান্তর নেই। রাই তোড়ার এই শান্ত থাকা দেখে নিজেও শান্ত আছে কারন সে জানে তোড়া কখন কি করতে পারে আর কখন শান্ত থেকে ভায়োলেন্ট হতে হবে।
-“মে আই কামিং স্যার।
দরজার বাইরে থেকেই কারোর নক শুনে নিমেষ তার এতক্ষণে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে।
-” ওহ ইয়েস কাম। নিমেষ বলে ওঠে।
সাথে সাথে ওদের সামনে এসে দাঁড়ায় একটা মেয়ে। আট ইঞ্চি উঁচু হাই হিল পরে দাঁড়িয়ে আছে। ব্ল্যাক নি স্কির্ট। সাদা টপ ক্রপ আর তার ওপরে ব্লু কোট পরে আছে। চুল গুলো কে হাই পনিটৈইল করে বাঁধা। তাদের সামনে মুখে একটা অ্যাটিটিউড নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে।
-“তোড়া মিট কৃতী সাক্সসেনা। তোমার ম্যানেজার। নিমেষ বলে ওঠে।
নিমেষ এর কথা শুনে তোড়া মুখ তুলে তাকায় এতক্ষণ সে নিজের ফোনের মধ্যে ডুবে ছিল। রেয়ান্স এর সাথে এসএমএস এর মাধ্যমে কথা বলছিলো। তোড়া কোনো কথা না বলে মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে তার সামনে দাঁড়ানো কৃতী কে দেখে। যে তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কৃতী এর দৃষ্টি দেখে তোড়া নিজের মনে হেসে ওঠে।
-“সো তোড়া আজ থেকে তোমার অফিসিয়ালি কাজ স্টার্ট হয়ে গেলো আর এখন থেকে সমস্ত কাজ কৃতী হ্যান্ডেল করবে। নিমেষ হালকা হেসে তোড়া কে বলে ওঠে।
-” সো বেস্ট অফ লাক মিস তোড়া দেওয়ান। নিমেষ তোড়ার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে ওঠে।
-“থ্যাঙ্কস মিস্টার রয় । তোড়া আলতো করে হ্যান্ডশেক করে বলে ওঠে।
তোড়া একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে রাই ও কৃতী কে ইশারা করেই রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে কৃতী কোনো কথা না বলেই তোড়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে এগিয়ে যায়। কিন্তু লিফ্ট এর সামনে গিয়েই দাঁড়িয়ে পড়ে সাথে সাথে তোড়ার মুখের এক্সপ্রেশন চেঞ্জ হয়ে যায়।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে……
#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৫০
-“হাই বিউটিফুল । ওদের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে ওঠে নোমান ।
তোড়া কোনো কথা বলেনা তবে আগের দিনের মতো তার মুখে কোনো হাসি নেই সে চুপচাপ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রাই রাগে দাঁত পিষে যাচ্ছে। এমনিতেই সে একটু তাড়াতাড়ি রেগে যায় আর সেখানে এই নোমান কে দেখতেই সে রাগে ফায়ার হয়ে গেছে। সে তোড়ার হাত টেনে লিফ্ট এর ভিতরের দিকে পা বাড়ায়। এতক্ষণ ওখানে দাঁড়িয়ে কৃতী তার সামনে দাঁড়ানো নোমান ও তার পাশে দাঁড়ানো তোড়া কে পর্যবেক্ষণ করছিলো। সে তার সামনে দাঁড়ানো এই লোকটা কে চেনে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও তার ভালো করে জানা আছে তাই কি হতে সে সেটা কৃতী ভালো মতো বুঝতে পেরেছে। সে আর দাঁড়িয়ে না থেকেই লিফ্ট এর ভিতরে চলে যায়। রাই বাটন প্রেস করে নোমান এর মুখের লিফ্ট দরজা দিয়ে দেয়। আসলে নোমান ঠিক খেয়াল করিনি আর সেই সুযোগে রাই বাটন প্রেস করে দেয়। তখন নোমান তার দৃষ্টি দিয়ে তোড়ার পা থেকে মাথা পর্যন্ত তার কুৎসিত চোখ দিয়ে স্ক্যান করে যাচ্ছিলো।
লিফ্ট দরজা অফ হতে নোমান এর ঘোর কেটে যায়। সামনে তাকাতেই দেখে তার শিকার তার হাত থেকে ফসকে গেছে। এটা দেখেই তার দাঁত কিড়মিড়িয়ে ওঠে।
-“আজ পালিয়ে গেলে বিউটিফুল। তবে তোমার ব্যবস্থা ও করে রেখেছি যাতে তুমি আর কোনো ভাবেই পালাতে না পারো আমার নজর থেকে। এখন যতো ইচ্ছা পালিয়ে নাও সুন্দরী তোমাকে তো এই নোমান এর খাঁচা তে ঢুকতে হবে। তখন দেখব তোমাকে কে বাঁচাতে আসে। বলেই বিশ্রী ভাবে হাসতে থাকে নোমান।
————–
এদিকে ভিতরে ভিতরে তোড়া নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলেও তার মুখে স্পষ্ট রাগে ছাপ ফুটে উঠেছে। তোড়া আজকে কোনো মতেই নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করতে পারছে না। কোম্পানী থেকে বাইরে চলে আসে।
-“কৃতী আজ তোমাকে আমার ছাড়তে যেতে হবে না বরং তুমি কাল থেকে তুমি তোমার ম্যানেজার এর ডিউটি পালন করো। আর রাই তোমাকে আমার ডিটেইলস তোমাকে দিয়ে দেবে তুমি ওটাকে দেখে নিও কেমন। তোড়া কৃতীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।
-” ওকে মিস তোড়া। কৃতী বলে ওঠে।
তোড়া গাড়িতে উঠে বসতে রাই গাড়ি স্টার্ট করে। কৃতী এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তোড়ার দের যাওয়ার দিকে। ওদের গাড়ি চোখের আড়াল হয়ে যেতেই কৃতী তার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে তার নিজের কাজে ফিরে যায়।
-” রাই কৃতীর সমস্ত ডিটেইলস আমার চাই ছোটো থেকে বড় সমস্ত কিছুর ইনফরমেশন লাগবে। তোড়া সিটে হেলান দিয়ে বসে বলে ওঠে ।
-” ওকে পেয়ে যাবি। রাই কার ড্রাইভ করতে করতেই বলে ওঠে।
-“ওহ হ্যাঁ আরো একটা ডিটেইলস লাগবে আমার। তোড়া বলে ওঠে।
-” নোমান সোমানি তাই তো? রাই হেসে বলে ওঠে।
-” হ্যাঁ তাই ওর ব্যাপারে ও সব রকম ইনফরমেশন লাগবে আমার তার পরেই তো শুরু হবে আসল খেলা। তোড়া দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।
তোড়া নিজের শরীর এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করতেই তার চোখের পর্দায় ভেসে ওঠে রেয়ান্স এর হাসি ভরা মুখ। সাথে সাথে তোড়ার ঠোঁটের কোণে একটা মিষ্টি হাসি ফুটে ওঠে।সে একে একে তাদের একান্ত মুহুর্ত গুলো ভাবতে থাকে আর তার সাথে তার গাল লাল হয় আবারো কখনো লজ্জা ও পায়। আবার তার মাথায় আজকের কথা আসতেই মাথা আবারো দপ করে জ্বলে ওঠে। হ্যাঁ তার এখনই রেয়ান্স কে চাই তার এই রাগ মেটানোর একমাত্র উপায় রেয়ান্স যতক্ষণ না সে রেয়ান্স কে নিজের সামনে দেখবে যতক্ষণ না তার বুকে মাথা রাখতে পারছে ততক্ষণ তার রাগ কমবে না।
-“রাই আর আর এন্টারটেইনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের দিকে চল। তোড়া বলে ওঠে।
-” ওহ হোওও জিজুর সাথে দেখা করতে নাকি। রাই তোড়ার কথা শুনে মজা করে বলে ওঠে।
কিন্তু তোড়া কোনো কথা না বলে আবারো চোখ বন্ধ করে নেয়। সে এখন কোনো কথা বলতে চায় না। কিছুক্ষণ পর ওরা পৌঁছে যেতেই তোড়া একবার তার ডান দিকে দাঁড়ানো বিশাল দ্বিগুজ তেইশ তোলা বিল্ডিং টা দেখে নেয় এটাই আর আর এন্টারটেইনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ । এর টপ ফ্লোরে আছে রেয়ান্স এর কেবিন এবং পুর টপ ফ্লোর জুড়েই আছে স্পেশাল মেম্বার দের কেবিন। এর আগেও এটা দেখেছে তোড়া রাস্তা থেকে যাতায়াত এর সময়ে কিন্তু কখনো কল্পনা করতে পারিনি এর ভিতরে ঢুকতে পারবে বলে। এখানের সিকিউরিটি সিস্টেম খুব কড়াকড়ি। এই কোম্পানির মেম্বার না হলে ভিতরে এলাও নেই তাও আবার প্রত্যেক কে চেক করে ভিতরে ঢোকানো আবার চেক করেই বাইরে বের করা হয়। আর এই কোম্পানীর নামে একটা কথাও বাইরে সমালোচনা করতে পারবে না আর না কোনো তথ্য বাইরে বের করা যাবে। আর এটা হলেই তাহলে দু লাখ টাকা ফাইন দিতে হবে আর তার সাথে আছে চাকরি নিয়ে টানাটানি। তাই এই কোম্পানির নামে না কোনো স্ক্যান্ডেল আছে আর না আছে স্টাফ দের মধ্যে কোনো বিরোধীতা। এখানে সবাই একটা পরিবারের অংশ আর সবাই সেই ভাবেই থাকে। রেয়ান্স এর রুথবা বাইরের সবার কাছে তার এই ইন্ডাস্ট্রির কিং হওয়া প্রমাণ করে। সে চাইলে মুহূর্তে একজনের ক্যারিয়ার গড়ে দিতে আবার চাইলেই মুহূর্তে তাকে নিঃশ্ব করে দিতে পারে। এটা এই ইন্ডাস্ট্রির সবাই জানে।
তোড়া তার ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে রেয়ান্স কে ফোন করে। কিছু সেকেন্ডের মধ্যে ফোন রিসিভ হতে ওপারে থেকে ভেসে আসে রেয়ান্স এর গলা।
-“ওয়াইফি
-” তুমি কি বিজি আছো? আমি কি তোমাকে ডিসট্রাব করলাম? তোড়া মৃদু আওয়াজে বলে ওঠে।
রেয়ান্স তোড়ার গলার আওয়াজ শুনেই বুঝতে পারে তোড়া নিজেই এখন কোনো কিছু নিয়ে ডিসট্রাব আছে তাই সে চিন্তিত হয়ে যায়।
-“ওয়াইফি আমি একদম বিজি নেই আর তুমি কি আমাকে কখনো ডিসট্রাব করতে পারো। রেয়ান্স বলে ওঠে।
-” আচ্ছা তুমি কোথায় আছো এখন? বাড়ি পৌঁছে গেছো? রেয়ান্স বলে ওঠে।
-“আমি তোমার অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। তোড়া বলে ওঠে।
-” আমার অফিসের সামনে? রেয়ান্স অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে। তারপরেই আবার বলে ওঠে আচ্ছা ঠিক তুমি বেসমেন্ট এর কাছে এসে দাঁড়াও শাহীন গিয়ে তোমাকে নিয়ে আসছে।
-“কিন্তু আমি কি করে তোমার অফিসে যাব যদি সবাই জেনে যায় না তুমি বাড়িতে এসো আমি চলে যাই। তোড়া বলে ওঠে।
-“কোনো কথা নয় যেটা বললাম সেটা করো। বলে রেয়ান্স ফোন কেটে দেয়।
শাহীন এতক্ষণ রেয়ান্স এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর তার কথা গুলো শুনে তো তার মাথায় চক্কর দিতে শুরু করেছে। রেয়ান্স এর টেবিলে ফাইল এর স্তূপ রাখা আছে সব গুলোতে তার সাইন লাগবে আর বলে কিনা সে বিজি নেই। যে লোক তার কাজের সময়ে কেউ বিরক্তি করলে তার গার্দান নিতে ছুটতো। আর সেই কিনা নিজেই বলছে বিজি নেই। এটা ভাবতেই তার মাথা চক্কর দিচ্ছে এই মানুষটার সাথে সে শুরু থেকে আছে প্রায় সাত বছর আছে কখনো তাকে কারোর প্রতি এতটা কেয়ার নিতে দেখেনি। আর যে সে কি কি দেখবে এটাই ভেবে তার মাথা চক্কর দিচ্ছে।
-“শাহীন তোড়া বেসমেন্টে আছে তুমি ওকে নিয়ে এসো। আর আজকে আমার সমস্ত মিটিং ক্যানসেল করে দাও। রেয়ান্স বলে ওঠে।
-” ইয়েস বস। বলেই শাহীন বের হয়ে যায়।
আর এদিকে রেয়ান্স ভাবতে বসে তোড়া কে নিয়ে ।হটাৎ করে কি হলো সেটাই ভাবছে বাড়ি থেকে বেরোনোর সময়ে তো ঠিক ছিল। তাহলে কি ওশিয়ান স্টার গ্রুপে কোনো প্রবলেম হয়েছে আবার কি নোমান কোনো কিছু করেছে। রেয়ান্স এর মাথায় এই নামটা আসতেই তার চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে যায়। তাকে এই মুহূর্তে কেউ দেখলে ভয় পেয়ে যাবে।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে…..
ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন……. ।