ইষ্ক ইবাদাত পর্ব-৫৪+৫৫+৫৬

0
6060

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৫৪

তোড়ার শুটিং স্পট আজকে লাভাসা লেক ব্রীজ সংলগ্ন এলাকায় হবে। যথারীতি তোড়া কৃতী রাই লাভাসা পৌঁছতেই আগে স্পটে চলে গেছে। তোড়া নিজের মেকআপ ভ্যানে উঠে তৈরী হতে শুরু করে দিয়েছে। এদিকে রাই ও কৃতী পুরো জায়গা টা আগে থেকেই ভালো করে দেখে নিচ্ছে যাতে কোনও প্রবলেম থাকলে তারা বুঝতে পারে।

লেক এর মাঝ বরাবর থাকা ব্রীজ এর উপর জুড়ে হবে শুটিং। পুরোটা সেট আপ হয়ে গেছে আজকের শুটিং এ শেষের দিকে তোড়ার সাথে দেখা যাবে একজন মেল মডেল কে। আজকে শেষের দিকে দেখানো হবে তাদের দুজনের যুগল বন্দি। তবে তার আগেই হবে তোড়ার শুট। কিছুক্ষণ পর তোড়া রেডি হয়ে বাইরে আসতে সাথে সাথে দু দিকে থেকে কৃতী ও রাই তোড়া কে কভার করে নেয়।

তোড়ার পরনে আছে সাদা স্ট্রাপলেস লং বল গাউন। চুল গুলো কে মেসি স্টাইল করা। মুখে লাইট মেকআপ । পায়ে স্টিলেটো । এতে তোড়া কে একদম অন্য রকম লাগছে। তোড়া রেডি হতে শুরু হয়ে যায় শুট। প্রথমে কিছু ক্লোজ আপ পোজ দেয় তার পরে শুরু হয় প্রোর্টেট কিছু বোল্ড ও শেষে ব্রীজ এর শেষ প্রান্ত থেকে ছুটে আসার কিছু ভিডিও ও সাথে ক্যানডিড ছবি। তোড়ার শুট শেষ হতে শুরু হয় মেল মডেল এর সাথে যুগল বন্দি শুট। ব্রীজ এর শেষ প্রান্ত থেকে দুজন হাতে হাত রেখে একে অপরের দিকে তাকিয়ে আলতো হেসে ছুটে আসা। মাঝে এসে হঠাৎ তোড়া কে কোলে তুলে নিয়ে দু পাক ঘোরা ও শেষে কিসিং সিন তবে এটা রিয়েল নয় জাস্ট দেখানো হয়েছে। দুজন এমন ভাবে দাঁড়িয়ে পোজ দিয়েছে দেখলে মনে হবে দুজন তাদের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে মগ্ন আছে।

ওখানে থাকা বাকিরা এতক্ষণ তোড়ার শুট এর দিকে মুগ্ধ হয়ে ছিল। তোড়ার প্রতিটা এক্সপ্রেশন প্রতিটা মুভমেন্ট চোখের পলক এর মধ্যে রেডি ছিল আর তা ছিল দৃষ্টি আকর্ষন এর মত। শেষে ওদের দুজনের যুগল বন্দি টাও ছিল সেরা এতক্ষণ ওখানে থাকা বাকিরা প্রায় মুগ্ধ হয়ে ওদের শেষ ভিডিও শুট টা দেখছিল। শুটিং শেষ হতে তোড়া আর ওই মেল মডেল একে অপরের থেকে সরে দাঁড়িয়ে পড়ে। এতক্ষণ তোড়ার সাথে থাকা মেল মডেল টা তোড়ার অ্যাটেনশন পাওয়ার চেষ্টা করলেও তোড়ার একবার ও তার দিকে ফিরে ও তাকাইনি সে শুধু তার কাজ করে গেছে।

রাই ছুটে এসে তোড়া জ্যাকেট পরিয়ে দেয়। তোড়া নিজের ড্রেস চেঞ্জ করতে তার জন্য নির্দিষ্ট ভ্যানে চলে যায়। এদিকে এতক্ষণ দূর থেকে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হয়ে তোড়ার শুট দেখ ছিল কিন্তু শেষের দিকে গিয়ে কিসিং সিন চলে আসতেই তার চোখ মুখ কিছুটা শক্ত হয়ে যায়। তার তীক্ষ্ণ নজরে তোড়ার সাথের মেল মডেল এর কথা বলার চেষ্টা টাও তার চোখ এড়িয়ে যায়নি।

তোড়া চেঞ্জ করে বেরোতে তার চোখ পড়ে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির দিকে এটা দেখতেই তার চোখ দুটো খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সাথে সাথে সেদিকে পা বাড়ায়। গাড়ির কাছাকাছি আসতে তার সামনে খুলে গাড়ির দরজা। সাথে সাথে তোড়া হাসি মুখে গাড়িতে উঠে পড়ে।

গাড়িতে বসতেই তোড়ার নজরে আসে রেয়ান্স এর মুখ। তোড়া রেয়ান্স এর উপর ঝুকে এসে চকাস করে গালে দুটো চুমু বসিয়ে দিয়ে রেয়ান্স এর কাঁধে মাথা রাখে। রেয়ান্স কিছু বলে না সে চুপ করেই আছে তার মাথায় ঘুরছে এখনও শুট এর শেষ সিন টা। এদিকে তোড়া তো প্রায় খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছে হঠাৎ করেই রেয়ান্স চলে আসায়। রেয়ান্স এই হটাৎ হঠাৎ তাকে সারপ্রাইজড দেয়া টা কে খুব ইনজয় করে তোড়া।

-“মিস্টার রাওয়াত আপনি কি পোড়া পোড়া কিছুর গন্ধ পাচ্ছেন ?তোড়া বাঁকা হেসে জিজ্ঞেস করে ওঠে।

রেয়ান্স কোনো কথা না বলে একবার কোনা চোখে তাকিয়ে আবারো নিজের ড্রাইভিং এর দিকে মন দেয়। তোড়া জানে রেয়ান্স কেনো এখন এমন গম্ভীর হয়ে আছে। রেয়ান্স কে দেখেই বুঝতে পারে সে তার শুটিং দেখেছে আর শেষের সিন দেখেই মিস্টার রেয়ান্স রাওয়াত জেলাস ফিল করছে।

-“ওহ আপনি পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছেন না বুঝি কিন্তু আমিতো স্পষ্ট বুঝতে পারছি আমার পাশের মানুষটার ভিতর টা কেমন জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। তোড়া দুষ্টুমি করে বলে তার একটা পা উঠিয়ে রেয়ান্স এর পায়ের উপর স্লাইড করতে থাকে।

তোড়া সারা রাস্তা রেয়ান্স এর সাথে দুষ্টুমি করতে থাকে কখনো হাত বাড়িয়ে রেয়ান্স এর গালে স্লাইড করতে থাকে তো কখনো গালে থেকে গলায় এসে থামে নিজের হাত। শার্ট এর বাটান খুলে আঙুল দিয়ে আঁকিবুকি কাটতে থাকে।

রেয়ান্স তোড়ার দুষ্টুমি সহ্য করে এক মনে গাড়ি চালিয়ে লাভাসার এক প্রাইভেট ভিলার মধ্যে চলে আসে। গাড়ি পার্কিং করেই। সাথে সাথে তোড়া কে টেনে কোলে এনে বসিয়ে দেয়। এতক্ষণ নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলেও এখন আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। তোড়া কে কোলে বসিয়ে কোমরে হাত রেখে নিজের বুকের ওপর জড়িয়ে রেখে। এক হাত দিয়ে তোড়ার কানের পাশে হাত রেখে মুখটা নিজের মুখ বরাবর টেনে আনে। তোড়ার দিকে একবার ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকায়। তোড়ার চোখে ও নেশা। রেয়ান্স আর কাল বিলম্ব না করেই তোড়ার ঠোঁটে ডুবে যায়। শুষে নিতে থাকে একে অপরের অধরসুধা। স্পর্শ গভীর থেকে আরো গভীর হতে চলে যায়। লড়তে থাকে একে অপরের জিভ নিয়ে। প্রায় কিছুক্ষণ পর শ্বাস আটকে গেলে দুজনেই সরে আসে। ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে একে অপরের দিকে তাকিয়ে দেখে।

-“হ্যাঁ আমি জেলাস । তোমাকে নিয়ে আমি সব সময়ে এর জন্য জেলাস । তোমার পাশে আমি কাউকে সহ্য করতে পারিনা। এটা আমার দোষ নয়। তোমার সাথে আমি কাউকে দেখতে পারিনা আর সেখানে তো ওই কিসিং সিন হোকনা সেটা পোজ কিন্তু ওটা আমি সহ্য করতে পারিনা। রেয়ান্স তোড়ার থুতনি চেপে ধরে তোড়ার ঠোঁটের সাথে ঠোঁট ছুয়ে বলে ওঠে।

-“আহারে তাহলে তো আমাকে মডেলিং থেকে সরে দাঁড়াতে হয়। তোড়া বলে ওঠে।

-” না এর পর থেকে তোমার প্রতিটা কন্ট্রাক্টড আমি সিলেক্ট করবো। তুমি মডেলিং থেকে সরে আসবে না তবে তোমার সাথে যাতে কোনও মেল মডেল কাজ না করে এমন দেখেই তোমার কাজ সিলেক্ট করে দেবো। রেয়ান্স তোড়ার থুতনিতে আলতো কামড়ে দিয়ে বলে ওঠে।

তোড়া রেয়ান্স এর কথা শুনে মৃদু হাসে। সে জানে এই মানুষটা তাকে পাগলের মত ভালোবাসে। তোড়া রেয়ান্স এর দিকে তাকাতেই রেয়ান্স এর চোখের ঘোর লাগা দৃষ্টি তোড়া কে আরো বেশি নেশা লাগিয়ে দিচ্ছে। রেয়ান্স তোড়ার দিকে তাকিয়ে তোড়া কে কোলে নিয়েই গাড়ি থেকে বেরিয়ে ভিলার ভিতরে এন্ট্রার করে। তোড়া কে কোলে নিয়ে চলে আসে সোজা দু তোলার বেড রুমে।

রুমে আসতেই তোড়া কে কোলে থেকে বিছানায় নামিয়ে দেয়। একে অপরের দিকে কিছুক্ষণ ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আবারও একে অপরের ঠোঁটের ওপর আক্রমণ করে বসে। দুজন আসতে আসতে একে অপরের ভালোবাসার সাগরে ডুবে যেতে থাকে। আসতে আসতে গভীর থেকে গভীরে মিশে যেতে থাকে। আসতে আসতে লুটিয়ে পড়ে তাদের ড্রেস মাটিতে। আজ যেনো রেয়ান্স তোড়ার প্রতি বেশিই অ্যাগ্রেসিভ হয়ে পড়েছে। সাথে তোড়া ও রেয়ান্স এর সাথে সমান তালে ভেসে যেতে থাকে নিজের ভালোবাসার উত্তাল সাগরে। মেখে নিতে থাকে একে অপরের উষ্ণ স্পর্শ মুড়ে নেয় দুজন দুজন কে ভালোবাসার চাদরে।

রেয়ান্স তোড়া তাদের লাভ মেকিং এর পর একটা সুন্দর মুহুর্ত কাটিয়ে তোড়া উঠে রেডি হতে শুরু করেছে আর রেয়ান্স সোফায় বসে তার ট্যাব নিয়ে কিছু কাজ করছে। তোড়া একবার আড় চোখে রেয়ান্স এর দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়। রেয়ান্স গলায় তার কামড় এর দাগ স্পষ্ট হয়ে ফুটে আছে।

-“আচ্ছা রাই কৃতী ওরা কোথায়? তোড়া কিছুটা নিজেকে স্বাভাবিক করে বলে ওঠে ।

-” তোমার প্ল্যান এর জায়গাতেই আছে। রেয়ান্স ট্যাব এর মধ্যে মুখ ডুবিয়ে রেখেই বলে ওঠে।

-“মানে? তোড়া রেয়ান্স এর কথায় বিস্ময় হয়ে বলে ওঠে।

-” তোমার প্ল্যান মত ঘুটি সাজাতে হোটেলে গেছে। যেখানে আপাততঃ তুমি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছ। রেয়ান্স আবারো একই অবস্থায় থেকে বলে ওঠে।

এদিকে রেয়ান্স এর কথা শুনে তোড়া অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে রেয়ান্স এর দিকে। সে আজ কি করতে যাচ্ছে সেটা রেয়ান্স কি করে জানলো। সে তো তাকে বলেনি তাহলে। উফ এই লোক তাকে প্রতি মুহূর্তে অবাক এর চরম সীমায় নিয়ে পৌঁছে যায়। তার আজকের প্ল্যান মাত্রই রাই আর কৃতী জানে তাও সেটা ওরা লাভাসা আসতে আসতে ঠিক করেছে তাহলে রেয়ান্স কি করে জানলো তাহলে কি রাই বলে দিয়েছে রেয়ান্স কে? তোড়া রেয়ান্স এর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভেবে যাচ্ছে নিজের মনে।

রেয়ান্স নিজের হাতের ট্যাব নিচে রেখেই তোড়ার সামনে এসে দাঁড়ায়। তোড়ার কোমরে হাত রেখে নিজের কাছে টেনে নিয়ে নাকে আলতো কামড় দেয়। সাথে সাথে তোড়া ঘোর কেটে সন্দিহান দৃষ্টিতে রেয়ান্স এর দিকে তাকায় । সাথে সাথে রেয়ান্স মুচকি হেসে ওঠে।

-“এত অবাক হওয়ার কিছু নেই ওয়াইফি। রাই আমাকে কিছুই জানায়নি। আমি তোমাকে আগেই বলেছি আমার যা কিছু জানার হয় সেটা আমি মিনিটের মধ্যে জেনে যাই। তুমি আমার কাছে কি সেটা তুমি নিজেও হয়তো জানো না। তোমার ওপরে আমার নজর চব্বিশ ঘণ্টা থাকে। তাই তোমার গাড়ির পিছন পিছন যে কেউ তোমাদের ফলো করছিলো সেটা আমার জানতে বেশি টাইম লাগেনি আর তাছাড়া তুমি এসএমএস করার পর পরই আমি লাভাসার জন্য বেরিয়ে এসেছি। রেয়ান্স তোড়ার মুখের ওপরে উড়ে এসে পড়া চুল গুলো করে কানের পাশে গুঁজে দিয়ে বলে ওঠে।

রেয়ান্স এর কথা গুলো শুনেই তোড়ার মুখে হাসি ফুটে ওঠে সত্যি তো সে কি করে ভুলে গেলো যে সে কোনো সাধারণ কারোর ওয়াইফ নয়। ওয়ার্ল্ড টপ ওয়ান বিজনেসম্যানের ওয়াইফ। সে চাইলেই সব কিছুই তার নখ দর্পনের মধ্যে চলে আসবে। আর এটা তো সামান্য বিষয়।

-“আচ্ছা আমার কি এই টুকু জানার অধিকার নেই আমার ওয়াইফির ব্যাপারে। তাছাড়া তুমিও আমাকে এই ব্যাপারে কিছুই জানাও নি তুমি জানো তুমি যে পদক্ষেপ টা নিয়েছ সেটা কতটা রিস্ক হতে পারে? রেয়ান্স চিন্তিত সুরে বলে ওঠে।

-” এই জন্য তোমাকে বলিনি। তুমি আমাকে বিশ্বাস করো তো তাহলে দেখো আমার কিছুই হবে না বরং উল্টোটা হতে চলেছে কারোর সাথে। আর আমি আগেও বলেছি আমার উপর তোমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। তোড়া রেয়ান্স কে জড়িয়ে ধরে রেয়ান্স এর বুকে মাথা রেখে বলে ওঠে।

-” আচ্ছা চলো লেট হয়ে যাচ্ছে। তোমার শিকার তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। রেয়ান্স বাঁকা হেসে বলে ওঠে।

-” হুম । বলেই তোড়া রেয়ান্স এর সাথে বেরিয়ে পড়ে ভিলা থেকে।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে…… ।

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৫৫

তোড়া তার কোম্পানী থেকে বুক করা হোটেল রুমে এসে পৌঁছয়। ভিতরে ঢুকতে তার মুখে একটা বাঁকা হাসি খেলে যায়। সে কোনো রকম প্রতিক্রিয়া ছাড়াই সোফায় বসে যায়। নিজের ফোন বের করে বসে বসে গেম খেলতে থাকে। কিন্তু মুখে ফুটে আছে এক রহস্য জনক হাসি। তোড়া যে কোনও পরিস্থিতি তে সব সময়ে নিজেকে শান্ত রাখার কৌশল এপ্লাই করে। আর এখনও তাই তোড়া কে দেখে মনে হচ্ছে যেনো কিছুই হয়নি। সে তার নিজের মত গেম খেলতে ব্যস্ত আর কোথায় কি হচ্ছে সেদিকে তার কোনো ধ্যান নেই। তোড়ার কানে লাগানো ব্লুথুট ইয়ার ফোন যেটা তোড়া তার চুল দিয়ে ঢেকে রেখেছে। সেটা থেকে ক্রমাগত রেয়ান্স আওয়াজ ভেসে আসছে। রেয়ান্স কোনোমতেই তোড়া কে একা ছাড়তে চায় ছিল না শেষে এই উপায় সে এর মাধ্যম দিয়ে সব কিছুর সাথে যুক্ত থাকবে।

বেশ কিছুক্ষণ পর তোড়ার রুমের দরজার আওয়াজ হতে থাকে। তোড়া তবুও চুপচাপ নিজের মত কাজ করে যাচ্ছে। তার কোনো নড়নচড়ন নেই।

-“হেই বিউটিফুল।

তোড়া এমনি একটা ডাকের অপেক্ষায় ছিল। কানে আওয়াজ আসতেই ফোন থেকে মাথা তুলে সামনে তাকাতে দেখে। দরজার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নোমান। আরেকটু ভালো করে তাকাতেই দেখে দরজা লক করা হয়েছে। তোড়া যখন রুমে এন্টার করেছিলো তখন আগে থেকে দরজার লক খোলা ছিল ওটা জাস্ট এমন ভাবে লাগানো ছিল যে মনে হবে লক আছে। তোড়া ভিতরে আসার সময়ে সব কিছু অবজার্ব করে নিয়েছে। তার অনুপস্থিতিতে যে তার রুমের মধ্যে কেউ এন্ট্রি নিয়ে রেখেছে সেটা বুঝতে তার একটু ও কষ্ট হয়নি। সেতো এতক্ষণ অপেক্ষায় ছিল যে তার রুমের মধ্যে লুকানো ব্যাক্তি টা কখন বাইরে বেরিয়ে আসবে। তোড়া নোমান এর দিকে তাকাতে নোমান বিশ্রী একটা হাসি তার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। তোড়া এখনও শান্ত ।তার মধ্যে কোনো হেলদোল নেই। যেনো এটাই স্বাভাবিক।

-“বিউটিফুল আজকে এত শান্ত কেনো তুমি। উফ আজকে তোমার একটু আগের শুট দেখে আমি বোল্ড আউট হয়ে গেছি। তোমার রূপের আগুন আমার সারা শরীরের জালা ধরিয়ে দিয়েছে। আজকে প্রাণ ভরে তোমার এই আগুন যেটা আমার শরীরে জালা ধরিয়েছে সেটা মিটিয়ে নেবো। নোমান তোড়ার সামনে এসে দাঁড়িয়ে তোড়ার দিকে কিছুটা ঝুঁকে এসে বলে ওঠে।

-“ওমা তাই নাকি? তা এত দেরি করলেন কেনো বাইরে বেরোতে আমি তো কখন থেকে এসে বসে আছি আপনার অপেক্ষায়। তোড়া ফোনটা টেবিলের ওপর রেখে হেলান দিয়ে বসে বলে ওঠে ।

-” যাক শেষ মেস তাহলে তুমিও ইন্টারেস্টটেড। আয় হায়ে আমার তাহলে আর কোনো কষ্ট করতে হবে না। নোমান লাফিয়ে উঠে তোড়ার পাশে এসে বলে ওঠে।

-” আমি তোর টুটি কেটে হাতে দিয়ে দেবো তুই জানিস না তুই কার লাইফ এর দিকে হাত বাড়িয়েছিস। তোর ওই হাত আমি ভেঙে দেবো। তোর শরীরের সমস্ত জ্বালা ও মিটিয়ে দেবো। রেয়ান্স তোড়ার রুমের বাইরের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে।

এদিকে তোড়ার এই সমস্ত কথা শুনেই হেসে ফেলে। সে বুঝতে পারে আজকে এই নোমান এর দিন শেষ। নোমান তোড়ার মুখে হাসি দেখে আরো খুশি হয়ে যায়। তোড়ার দিকে সরে এসে বসে তোড়ার একটা হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে নেয়। তোড়া শুধু জ্বলন্ত চোখ নিয়ে নোমান এর দিকে তাকিয়ে থাকে।

-“উফ তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম না সেদিন থেকে মনে মনে তোমাকে কাছে পাওয়ার স্বপ্ন দেখে গেছি। আর তারপরেই হটাৎ করে আমার স্বপ্ন পূরণ করতে ওশিয়ান গ্রুপে জয়েন করলে। আমি যেনো হাতে চাঁদ পাওয়ার মত আনন্দ পেয়েছিলাম। আর তারপর থেকেই একটু একটু করে তোমার কাছে আসার চেষ্টা করি অ্যান্ড সি আমি তোমার পাশে আছে একদম তোমার পাশে তোমার আমার হাতে নিয়ে। নোমান বিশ্রী এক হাসি দিয়ে তোড়ার হাতে স্লাইড করতে করতে বলে ওঠে।

-“তাই নাকি? তাই জন্য বুঝি আগে থেকে রুমের মধ্যে বসে ছিলেন? তোড়া বাঁকা হেসে বলে ওঠে।

-” ওহ তুমি বুঝতে পেরেছিলে আমি এখানে আগে থেকেই আছি। কিছুটা সন্দেহ নিয়ে বলে ওঠে নোমান।

-“হুম ।তোড়া ও স্বাভাবিকভাবেই উত্তর দেয়।

নোমান কিছুক্ষণ তোড়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করে আসলেই কি তোড়া কোনো প্ল্যান করে রেখেছে নাকি সে তার পাতা ফাঁদে এত সহজে পা দিয়ে দিয়েছে নাকি এই মেয়েটা ও আর সব মেয়েদের মতো। নোমান নিজের মনে ভেবে যাচ্ছে তারপরে নিজেই সমাধানে এসে একটা কুটিল হাসি দিয়ে তোড়ার হাত খুব বিশ্রী ভাবে স্লাইড করতে থাকে আর কোনা চোখে তোড়া কে দেখতে থাকে ।তোড়া কিছু না বলে মুখে একটা হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে। এটা দেখেই নোমান কিছুটা নিশ্চিত হয় যে কোনও প্ল্যান নেই এই মেয়েটা ও বাকি সব মেয়েদের মত।

-” তোমরা যখন কোম্পানী থেকে বেরিয়ে লাভাসার উদ্দেশ্য বেরিয়ে ছিলে আমি তখনই তোমাদের পিছু নেই। আর তার পর শুটিং এর ওখানে ক্র মেম্বার দের থেকে সোর্স লাগিয়ে জেনে নিয়েছি আর দেখো আমি এখানে। আমি ভেবেছিলাম তোমাকে বাগে আনতে অনেক কাঠ খড় পোড়াতে হবে তাই জন্য আগের থেকেই আমি সব কিছু অ্যারেঞ্জ করে রেখেছিলাম সি টেবিলের উপর তোমার জন্য জলের বোতল রেখেছিলাম আর তাছাড়া হোটেল স্টাফ কে টাকা দিয়ে তোমার জন্য কফির অর্ডার ও দিয়ে রেখেছিলাম যেটা খেলে তুমি জ্ঞানে তো থাকতে কিন্তু কিছু করতে পারতে না আর আমি সেই সুযোগে তোমার এই রূপ দিয়ে আমি আমার খিদে মিটিয়ে নিতাম। বাট দেখো তুমি তো কিছুই খেলে না তাই আমাকে বাধ্য হয়ে বাইরে আসতে হলো। বলেই বিশ্রী একটা হাসি দিয়ে তোড়ার ঘাড়ে হাত রেখে তোড়ার মুখের কাছে মুখে নিয়ে যায়।

-“তুমি কি ভেবে ছিলে আমাকে ধরে ফেলবে? আমি অত কাঁচা খেলোয়াড় নয়। আমি তো জানি তুমি এত সহজে হাতে আসবে না তাইতো এইসব করা ছিল। কিন্তু হয়নি তাতে কি তুমি এখনও আমার থেকে পালাতে পারবেনা বিউটিফুল। নোমান তোড়ার কাঁধের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে নাক টেনে বলে ওঠে।

এদিকে এতক্ষণ থেকে নোমান এর এই সব ফালতু নোংরা কথা গুলো শুনে রেয়ান্স মাথার আগুন চড়ে গেছে। মনে হচ্ছে সে তার দৃষ্টি দিয়েই এক্ষুনি ভষ্ম করে দেবে নোমান কে। রেয়ান্স রাগে আর অপেক্ষা না করে ব্যালকনিতে থেকে তোড়ার রুমের দিকে আসতে থাকে।

তোড়া নোমান কে তার কাছে আসতে দেখে কৌশলে তার প্যান্ট এর পকেট থেকে একটা পকার বের করেই নোমান হাত তার ঘাড়ে থেকে হ্যাচকা টান দিয়ে সরিয়ে দিয়েই তার হাতের উপর বসিয়ে দেয়। সাথে সাথে নোমান গগন বিধারি চিৎকার দিয়ে ওঠে। ওদিকে রেয়ান্স ও নোমান এর এই আওয়াজ শুনতে পেয়ে থেমে যায় এক মুহুর্ত।

তোড়া নোমান এর হাতে পকার বসিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে তার পায়ে থাকা হাই হিল স্টিলেটো থাকা অবস্থায় নোমান এর আরেক হাতের ওপর তার পা চেপে ধরে। সাথে সাথে আবারো চিৎকার করে ওঠে নোমান। হাত নিয়ে গিয়ে পরপর কয়েকটা ঘুষি merei দেয় ঠিক নাকের বরাবর। তার এতদিন থেকে শেখা ফাইটিং আজ কাজে লেগে গেছে। ইচ্ছা মত পিটিয়ে নিয়ে এক লাথি মেরে সোফায় থেকে নিচে ফ্লোরে ফেলে দেয় । তোড়ার এই আচমকা আক্রমণের জন্য নোমান কোনো রকম ডিফেন্স করার সুযোগ পাইনি। নোমান মুখের দিকে তাকিয়ে তোড়া বাঁকা হেসে ওঠে। নাক ফেটে গিয়ে রক্ত পড়ছে। চোখের কোন ফুলে আলু হয়ে গেছে। ঠোঁটে কেটে গেছে গাল থেকে ও রক্ত পড়ছে। দুই হাতের থেকে রক্ত পড়ছে এক হাতে পকার এখনও গাঁথা আছে আর এক হাতে তোড়ার পা তুলে দেয়ার জন্য হিল ভিতরে ঢুকে বীভৎস দেখতে হয়ে গেছে। তোড়া পাশে থাকা টেবিলের ওপর এক পা তুলে দিয়ে দু হাত দিয়ে পকেট থেকে দুটো প্যাকেট বের করে আনে। একটা টেবিলের উপরে রেখে ইচিং পাউডার এর প্যাকেট কেটে নোমান এর পুরো শরীরের উপর ছাড়িয়ে দেয়। নোমান এখন শুধু চিৎকার করা ছাড়া কিছুই করতে পারছে না। তোড়া এবার চিলি পাউডার এর প্যাকেট নোমান এর কেটে যাওয়া জায়গা গুলো ভালো ভাবে ছাড়িয়ে দেয়। আর শেষে লবণ দিয়ে দেয়। প্রথমে ইচিং পাউডার দেয়ার জন্য কিছু মনে না হলেও তারপরেই চিলি আর লবন দিতেই চিৎকারে ভরে যায় পুরো রুম।
তোড়া নিচু হয়ে নোমান চুলের মুঠো ধরে।

-“আমার দিকে হাত বাড়ালে তার ঠিক এই অবস্থা হয়। উম না না এর থেকেও বেশি এটা তো শুধু আমার টেকনিক ছিল এর পরে ও আরও অনেক কিছু বাকি আছে তোর সাথে হওয়ার। খুব শখ না আমার রূপ দিয়ে তোর শরীরের জালা মেটাবি। নে আমি তোর শরীরের জালা মিটিয়ে দিলাম. আর এর পরেই তো তোর শরীর একদম হালকা হয়ে যাবে। মনে হবে তুই একদম স্বর্গে পৌঁছে গেছিস। তোড়া দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে ওঠে।

তোড়া উঠে দাঁড়িয়ে নোমান উপর কয়েকটা লাথি মেরে বলে ওঠে।

-“তুই কি ভেবেছিলিস আমায়। আমি ও অন্য সব মেয়ের মত তোর ডাকে সাড়া দেবো তোর এখনও আমাকে চিনতে বাকি আছে।

তোড়ার বলতে বলতে ধড়াম করে রুমের দরজা খুলে যায় সাথে সাথে স্পষ্ট হয় রেয়ান্স রাগী ভয়ঙ্কর মুখ। তোড়া রেয়ান্স এর দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে ওঠে।

-” নে তোর জম এসে গেছে এবার তোর বাঁচা মরা নিয়ে আমি নিশ্চিত কিছু বলতে পারছি না। তোড়া নোমান এর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে ।

রেয়ান্স রুমে ঢুকে নোমান কে নিচে পড়ে থাকতে দেখে তাও বীভৎস অবস্থায় আর সামনে তোড়া কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। সাথে সাথে ছুটে এসে তোড়া কে জড়িয়ে ধরে। তোড়ার মুখে হাত রেখে কপালে একটা উষ্ণ স্পর্শ একে দেয়। চোখের ইশারায় তোড়া রেয়ান্স কে তার ঠিক থাকার কথা বলে দেয়। রেয়ান্স তোড়ার থেকে মুখ সরিয়ে ফ্লোরে পড়ে থাকা নোমান এর দিকে তাকাতেই তার একটু আগের সব কথা মনে পড়ে যায়। তার
ওয়াইফি কে স্পর্শ করার সাহস দেখিয়েছে এটা ভেবেই আবারো রেয়ান্স এর মাথার রগ ফুলে উঠছে। তোড়া কে দেখে যে রাগ টা পানি হয়ে গেছিলো সেটা আবারো দপ করে জ্বলে ওঠে। এখন রেয়ান্স কে দেখতে ভয়ংকর লাগছে।

তোড়া রেয়ান্স এর থেকে সরে গিয়ে টেবিলের ওপরে থাকা তার ফোন তুলে নিয়ে রেকর্ডিং টা অফ করে দেয়। তোড়া নোমান কে রুমে অনুভব করার পর পরই ফোনের রেকর্ডিং অন করে দিয়েছিলো। তোড়া তার ফোন থেকে কৃতী ও রাই কে এসএমএস করে দিয়ে সোফায় চুপচাপ বসে যায়। এদিকে নিচে পড়ে থাকা নোমান এর তো প্রাণ যায় যায় অবস্থা এতক্ষণ তোড়ার মার সহ্য করলেও এখন তার সামনে স্বয়ং রেয়ান্স কে দেখতেই তার পিলে চমকে গেছে। সে এখন নিজে জানে তার প্রাণ আজকে যেতে বসেছে সে তোড়ার থেকে বেঁচে গেলেও তার সামনে দাঁড়ানো এই জমরাজ এর থেকে বাঁচতে পারবে না. এর আগেও সে রেয়ান্স এর নিষ্ঠুর ব্যবহার এর কথা শুনেছে আর আজকে তার সাথে হতে চলেছে। আর একটু আগেই তোড়ার জন্য রেয়ান্স এর কেয়ার দেখে বুঝে গেছে তাদের মধ্যে কোনো গভীর সম্পর্ক আছে আর সে ভুল জায়গায় হাত দিয়ে ফেলেছে। এখন তার অবস্থা প্রায় ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।

রেয়ান্স কোনো কথা না বলেই নোমান এর দিকে এগিয়ে গিয়ে হাত তুলে নিয়ে পিছন দিকে মুচড়ে ধরে। সাথে সাথে আবারো চিৎকার করে ওঠে।

-“তোর এই নোংরা হাত দিয়ে তুই ওকে স্পর্শ করে ছিলি না। নে তোর হাত আর কাউকে ছোয়ার মতো রইলো না। রেয়ান্স রাগে হিসহিসিয়ে বলে ওঠে।

রেয়ান্স নোমান এর দুটো হাত ভেঙে ফেলে। আরো মারতে এগিয়ে গেলে সাথে রুমের মধ্যে ঝড়ের গতিতে রাই কৃতী শাহীন ও তাদের সাথে পুলিশ অফিসার ঢুকে আসে। এদের দেখেও রেয়ান্স থামে না। আর রেয়ান্স ভয়ে ও শাহীন আর পুলিশ অফিসার এগিয়ে আসার সাহস করে না। আর রাই তো নোমান কে মার খেতে দেখে আরো বেশি খুশি হয়েছে আর তার পাশে দাঁড়িয়ে কৃতী অবাক চোখে রেয়ান্স কে দেখছে। সে এখানে নিজের চোখের সামনে রেয়ান্স কে দেখে অবাক হয়ে গেছে তার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে শুধু রেয়ান্স কে দেখে যাচ্ছে ।

তোড়া অবস্থা বেগতিক দেখে নিজেই এগিয়ে গিয়ে রেয়ান্স এর হাত ধরে থামিয়ে নেয়। রেয়ান্স তার পাশে তোড়া কে দেখে নোমান কে ছেড়ে এক হাত দিয়ে তোড়া কে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয় । অফিসাররা এসে নোমান কে তুলে নিয়ে যায়। আর এদিকে রুমের মধ্যে শাহীন আর কৃতী অবাক হয়ে দেখছে তবে দুজনের দেখার দৃষ্টি ভঙ্গি আলাদা আলাদা। কৃতী দেখছে রেয়ান্স কে আর শাহীন দেখছে তোড়া কে ।শাহীন ভাবতেই পারিনি তার ম্যাডাম ও এত ভয়ঙ্কর। সে জানত তার স্যার শুধু ভয়ংকর কিন্তু এখন দেখতে পাচ্ছে এরা দুজনই ভীষণ ভয়ংকর।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে…..

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৫৬

প্রাইভেট ভিলার লিভিং রুমে বসে আছে কৃতী রাই । কৃতী এখনও আগের অবস্থায় বসে আছে। হোটেল থেকে ফেরার পর ও এখনও স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারেনি। তার মাথার ভিতরে এখনও রেয়ান্স ভাসছে সাথে তোড়ার আর রেয়ান্স এর কেমিস্ট্রি। সে এখনও যেনো বিশ্বাস করতে পারছে না যে রেয়ান্স এর সাথে তোড়ার কোনো সম্পর্ক আছে। হোটেল থেকে ফিরেই রেয়ান্স তার অনলাইন মিটিং সারতে বসে গেছে। শাহীন গিয়েছে পুলিশ স্টেশন আর তোড়া তাকে তো রেয়ান্স ভিলাতে ফিরেই ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে। এমনিতেই আজকে তোড়ার শুট আর তারপর যা গেলো তাতে তোড়ার রেস্ট এর প্রয়োজন সেই জন্য হোটেল থেকে ফিরে আগে তোড়া কে ঘুম পড়িয়ে দিয়েছে।

রাই একবার কোনা চোখে কৃতী কে দেখে নিয়ে আবারো নিজের ফোনে মনোযোগ দেয়। রাই আজ তোড়ার শুট এর কিছু ছবি তোড়ার সোশ্যাল মিডিয়া তে পোস্ট করছে।

-“কৃতী শক লেগেছে? রাই বলে ওঠে।

-” উম…!! হুম তা তো লেগেছে। কৃতী চমকে বলে ওঠে।

-“হুম আমারও লেগেছিলো। আমি যখন প্রথম দেখেছিলাম। রাই মুচকি হেসে বলে ওঠে।

-“হুম । মানে ইন্ডাস্ট্রির কিং এর সাথে তোড়ার সাথে কেমন সম্পর্ক? কৃতী কৌতুহল নিয়ে বলে ওঠে।

-“হাজবেন্ট ওয়াইফ। রাই স্বাভাবিকভাবেই বলে ওঠে।

-” মানে? কিছুটা চিৎকার করে বলে ওঠে কৃতী ।

-” হুম ওরা হাজবেন্ট ওয়াইফ ওদের বিয়ের কথা কেউ জানে না আসলে তোড়া কাউকে জানাতে চাইনি। তোড়া চেয়েছে সে নিজের পরিচয় তৈরী করতে। তোড়া রেয়ান্স এর পরিচয় নিয়ে নাম কিনতে চাইনি। তাই তাদের বিয়ের বিষয় টা এখন গোপন আছে ওদের বিয়ের ছয় মাস হয়ে গেলে তারপরেই ওদের বিয়ের অ্যানাউন্স করবে। রাই হেসে বলে ওঠে।

-“কিন্তু আমি যতদূর জানি যে তোড়া দেওয়ান এর পরিবারের মেয়ে তাহলে? কৃতী বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ তোড়া দেওয়ান পরিবারের মেয়ে। কিন্তু ও কখনোই ফ্যামিলি পরিচয় নিয়ে বাঁচতে চাইনি নিজের পরিচয় গড়তে চেয়েছে নিজের দমে নাকি ফ্যামিলি পরিচয় দিয়ে। রাই এবার কিছুটা কঠিন ভাবে বলে ওঠে।

রাই এর কথা শুনে কৃতী নিজের মনের মধ্যে তৈরী হওয়া সব চিন্তা ভাবনা পাল্টাতে থাকে। সে প্রথম থেকেই ভেবে ছিল যে তোড়া হয়তো আর সব বড়লোক ঘরের মেয়েদের মত নাক উঁচু বেশি অহংকার হবে। তাই সে প্রথম থেকেই চুপ থেকে তোড়া কে অবজার্ব করছিলো ।সে প্রথম থেকেই তোড়া কে দেখে ছিলো সে তার ভাবনার থেকে আলাদা কিন্তু তবুও তার মন থেকে অহংকারী ভাবনা দূর হয়নি কিন্তু এখন তার মনে একটুও সংশয় নেই।

ওদের কথার মাঝেই শাহীন চলে আসে। শাহীন আসতেই রাই একবার শাহীন এর দিকে কোনা চোখে তাকিয়ে আবারো নিজের কাজ করতে বসে। এদিকে শাহীন আসতেই কৃতী লাফিয়ে উঠে শাহীন পাশে গিয়ে বসে পড়ে।

-“শাহীন জি। নোমান এর খবর কি হলো? কৃতী বলে ওঠে।

-” উম ওকে হসপিটালাইজড করতে হয়েছে প্রথমে ম্যাডাম ওকে যা অবস্থা করেছে আর তারপর আবার স্যার ও ওকে মেরেছে আবার হাত ও ভেঙে দিয়েছে। শাহীন বলে ওঠে।

-“বেশ হয়েছে। আমি ওই নোড়া কে একদম সহ্য করতে পারিনা। প্রথম থেকেই কেমন একটা লাগত সবার সামনেই একদম সাদা সিধে সেজে থাকতো আর ভিতরে ভিতরে শয়তান এর দাদু ছিলো। কৃতী বলে ওঠে।

-” ওর সারা গায়ে গুটি গুটি ফোসকার মত বের হয়ে গেছে আর তার সাথে চিলি ও লবণ এর জন্য আরো বেশি খারাপ অবস্থা হয়ে গেছে আর নাক মুখ এর অবস্থা আরও গুরুতর। তার সাথে হাত দুটো ও ভাঙা সারতে প্রায় বছর পার হয়ে যাবে। শাহীন বলে ওঠে।

-” ঠিক হয়েছে এই সব লোকদের সাথে এই সব হওয়া উচিত। রাই কিছুটা ঝাঝিয়ে বলে উঠে ওখান থেকে চলে যায়।

রাই এর কেনো জানি খুব রাগ লাগছে কিন্তু কেনো লাগছে সে জানে না তবে রাগ হচ্ছে খুব রাগ আর সব থেকে বেশি রাগ হচ্ছে শাহীন এর উপর। কিন্তু রাই কোনো মতে কারণ খুঁজে পাচ্ছে না তার রাগের তাই সে ওখান থেকে উঠে চলে যায়।

রাই উঠে চলে যেতেই শাহীন এর ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। সে এতক্ষণ কৃতীর সাথে কথা বললেও তার নজর ছিল রাই এর ওপর। রাই এর রাগী মুখটা দেখতে তার হাসি পেয়ে যায়। আর রাই এর শেষের কথা গুলো শুনে বুঝে গেছে ম্যাডাম খুব রেগে গেছে। শাহীন প্রথম থেকেই রাই এর প্রতি একটা অনুভূতি অনুভব করে। তবে সেটা যতো দিন যাচ্ছে তত বেশি তীব্র হচ্ছে। আর শাহীন তার বস আর ম্যাডাম কে দেখে এটা বুঝতে পারছে তার অনুভূতির নাম কি হতে চলেছে।

রাই এর তোড়ার সোশ্যাল মিডিয়াতে তোড়ার শুট এর ছবি পোস্ট করতেই তুমুল হারে ভাইরাল হয়ে গেছে। তোড়ার ছবি এখন টপ ট্রেন্ডিং চলছে। সাথে সাথে আরো নতুন করে ফলোয়ার্স বাড়তে থাকে। মুম্বাই এর মধ্যে এখন রীতিমতো নিউ কমার মডেল হিসেবে টপ ওয়ান লিস্টে পৌঁছে গেছে তোড়া।

————–

ওশিয়ান স্টার গ্রুপে নোমান এর খবর পৌঁছে গেছে সে তোড়ার সাথে কি করেছে। আর এটা জানার পর থেকেই নিমেষের মাথার মধ্যে আগুন জ্বলে উঠে। নিমেষ রাগে টেবিলে হাত ঠুকছে। সে ভাবতেই পারিনি নোমান এইরকম করতে পারে বলে। এইরকম জানলে সে কখনোই তোড়ার দায়িত্ব নোমান কে দিত তার সুযোগ নিয়ে সে তোড়ার কে নোংরা মানুষিকতা পুষে রেখেছিলো মনে মনে।

আসলে নিমেষ নোমান কে দিয়ে তোড়ার সমস্ত রকম ইনফরমেশন জোগাড় করিয়ে ছিল। তোড়া কে নিজের কোম্পানী তে জয়েন করানোর জন্য আর এখন বুঝতে পারছে সে ভুল মানুষের কাছে তোড়ার কথা বলে তাকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছিলো।

হ্যাঁ নিমেষ এর মনে তোড়ার জন্য একটা সফ্ট কর্নার আছে যেটা তোড়ার প্রথম ওশিয়ান গ্রুপে জয়েন করতেই দেখা গিয়েছিলো। সেটা যে কি রকম অনুভূতি সেটাই দেখার পালা।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
.চলবে……

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন…. ।