ইষ্ক ইবাদাত পর্ব-৬৩+৬৪

0
4501

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৬৩

তোড়া সামনের দিকে বিস্ময় চোখে তাকিয়ে আছে। তার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটা কে দেখে সে বোঝার চেষ্টা করছে। যে সে সত্যি দেখছে নাকি তার চোখের ভুল। তার সামনে মানুষটা কি সত্যি সেই মানুষটা যাকে সে ভাবছে। এত পরিবর্তন কি করে হতে পারে। কিন্তু মানুষ টা এখানে কি করছে। এটা কি তার চোখের ভুল হতে পারে? তোড়া সামনের মানুষটির দিকে তাকিয়ে ভেবে যাচ্ছে।

-“কি তাথই রানী চিনতে অসুবিধা হচ্ছে নাকি? সামনের ব্যাক্তি টি হাসতে হাসতে বলে ওঠে।

-” অনিতা আন্টি! তোড়া বিস্ময় নিয়ে অস্পষ্ট ভাবে বলে ওঠে ।

তোড়ার মনের মধ্যে এতক্ষণ দ্বন্দ্ব থাকলেও সামনের মানুষ টি কে নিয়ে কিন্তু তার কথা শুনে বুঝে গেছে না সে ভুল দেখছে না এটা তার চোখের ভুল নয়। তার সামনে সত্যি সত্যি অনিতা শর্মা দাঁড়িয়ে আছে। আর এটা ভেবেই তোড়ার মুখ এর এক্সপ্রেশন চেঞ্জ হতে থাকে।

-“বাহ চিনতে পেরেছ তাহলে। হেসে উঠে বলে ওঠেন অনিতা শর্মা ওরফে অনামিকা রয়।

-” আপনি! আপনি বেঁচে আছেন? এখানে কি করছেন? তোড়া বলে ওঠে ।

-“আরে আসতে আসতে এত অধৈর্য্য হলে চলে নাকি। অনিতা বলে ওঠেনি।

-” অবশ্যই আমি বেঁচে আছি নাহলে কি আর তোমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে পারতাম। হুম? আমি মরে গেলেই তো খেলা শেষ তাইনা। বলেই আবারো জোরে হেসে ওঠেন।

-“আপনি এখানে কি করছেন? আর আপনি যদি বেঁচেই থাকেন তাহলে সেদিনের ঘটনা টা কি ছিলো? তোড়া বলে ওঠে ।

-“হুম সত্যি তো সেদিনের ঘটনা কি ছিল বলতো? অনিতা ব্যাঙ্গ করে বলে ওঠেন।

-“তামাশা বন্ধ করুন? আর সোজা সোজা উত্তর দিন। তোড়া রুক্ষ ভাবে বলে ওঠে।

-” আরে বাবা আমি তো সব। আমি এখানে থাকবো না তো কে থাকবে? এই নিমেষ এ তো শুধু আমার খেলার একটা ঘুটি মাত্র। অনিতা ফ্লোরে পড়ে থাকা নিমেষ এর গায়ে পা দিয়ে ঠেলে বলে ওঠে।

অনিতার কথা শুনেই তোড়ার মাথার মধ্যে সেল গুলো দৌড়াতে থাকে দ্রুত গতিতে। তার এবার একের পর এক নিমেষ এর বলা কথা মনে পড়ে যাচ্ছে আর সব গুলো সাজালে উত্তর তার সামনে চলে আসছে।

-“ওহ তার মানে আপনি সেই মহিলা মিসেস রয়? তোড়া বলে ওঠে ।

-“বাহ তারমানে আমার এই গুনোধর ছেলে এটাও বলে দিয়েছে দেখছি। অনিতা বলে ওঠে।

তোড়ার যেনো চমক খাওয়ার সময় এটা। সে একের পর এক চমক খেয়েই যাচ্ছে আজকে। আর কি কি তার অজানা আছে। আর তার পিছে আর কি হচ্ছে এটা তার মাথায় চলছে। তবে এখন তাকে উত্তেজিত হলে হবে না। তাকে নিজকে শান্ত রাখতে হবে। এখনও অনেক কিছু জানার বাকি।

-“আপনার ছেলে মানে? তোড়া কিছুটা অবাক হয়ে বলে ওঠে।

-” না আমার নিজের পেটের ছেলে নয় তবে আমার ছেলে। নামের ছেলে। বুঝতে পারলে না নিশ্চয়ই। তাহলে থাক আর বুঝে কাজ নেই তোমার। অনিতা বলে ওঠে।

-“স্টেপ মাদার! তোড়া বিস্ময় নিয়ে বলে ওঠে।

-” এইতো বুঝে নিয়েছ। তুমি সেই ছোটো বেলার মতই আছো বুঝলে তুখোড় বুদ্ধি তোমার। তুমি সব কিছুই একটু জলদি জলদি বুঝে ফেলো। অনিতা বাঁকা হেসে বলে ওঠেন।

-“আমাকে এখানে নিয়ে আসার মানে কি? আমাকে কেনো তুলে নিয়ে এসেছেন? তোড়া বলে ওঠে ।

-“আরে তুমি তো সব। তোমাকে তুলে নিয়ে আসব না যতো হোক তুমি আমার এক্স হাজবেন্ট এর মেয়ে বলে কথা। তুমি নাহলে কি খেলা জমে বলো। অনিতা তোড়ার চারিদিকে ঘুরে বলে ওঠে।

-“ওহ জাস্ট সাট ইউর ফাকিং মাউথ ।তোড়া মৃদু চিৎকার করে বলে ওঠে।

-“বাহ সেই তেজ আছে দেখছি। অনিতা তোড়ার গাল চেপে বলে ওঠে।

-“আমাকে এখানে কেনো নিয়ে এসেছেন সেটা বলুন? আর আপনার কাছেই রাখুন। তোড়া রুক্ষ ভাবে বলে ওঠে।

-” তুমি কি ভাবলে তুমি আমার কাছে থেকে আমার পাওয়ার কেড়ে নেবে আর আমি চুপচাপ তোমাকে যেতে দেবো এটা তো হতে পারে না। সেদিন শুধু মাত্র তোমার জন্য আমাকে নতুন প্ল্যান সাজাতে হয়েছে। নিজেকে মৃত বানাতে হয়েছে। অনিতা ক্রোধে ফেটে পড়ে বলে ওঠেন।

-” আমার জন্য? আমি কি করেছি? তোড়া প্রচণ্ড অবাক হয়ে বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ হ্যাঁ শুধু তোর জন্য। তোর জন্য আমি আজ সবার কাছে মৃত অনিতা শর্মা থেকে আমাকে অনামিকা রয় হতে হয়েছে শুধুমাত্র তোর জন্য। সেই ছোটো বেলা থেকেই তুই আমার পথের বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিস। আমি সেই থেকেই অপেক্ষায় ছিলাম আজ দিনটার জন্য। তোকে নিজের চোখের সামনে বন্দি অবস্থায় দেখার জন্য। অনিতা প্রচণ্ড ক্রোধে হিসহিসিয়ে বলে ওঠে।

তোড়ার মাথায় জট পাকিয়ে গেছে। সে প্রচণ্ড অবাক ও হয়েছে সাথে। এই অনিতা কি বলতে চাইছে তার জন্য সে সবার কাছে মৃত সেজে আছে। সে তার পথের বাধা কিন্তু কেনো কি এমন কারণ। তখন তার বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর তাহলে? আর সেদিনের ঘটনা টাও ছিল অন্য। সেই ঘটনার জন্য সে আজ ও সবার চোখে অপরাধী হয়ে আছে। কিন্তু এতে তার দোষ টা কোথায় সে আজও জানে না। আর আজ এই মহিলা বলছে ইনি তার জন্য মৃত হয়ে আছে সবার কাছে। তোড়া এক দৃষ্টিতে অনিতার দিকে তাকিয়ে নিজের মনে ভেবে চলেছে।

-“আমি আপনার পথের বাধা? আমার জন্য কেনো আপনাকে মৃত হয়ে থাকতে হয়েছে? তোড়া বলে ওঠে ।

-” কারণ তোর উপস্থিতি আমার সমস্ত প্ল্যান ভেস্তে দিয়েছে তোর জন্য সেদিন আমি তীরে গিয়ে তরী ডুবিয়ে ফেলেছিলাম। তোর জন্য আমাকে প্ল্যান করে আবার মৃত সাজতে হয়েছে। মনে পড়ে সেই রাতের কথা? অনিতা শর্মা বলে ওঠেন।

অনিতার কথায় তোড়ার চোখ জ্বলে ওঠে। কি করে ভুলতে পারে তোড়া সেই রাতের কথা। যে রাতের পরের দিন সকাল থেকে নেমে এসেছিল তার জন্য দুর্যোগ। সেখান থেকেই তো শুরু হয়েছে তার জীবনে অন্ধকার নেমে আসে । সে কি কোনোদিন ভুলতে পারে সে রাত কে। সাথে সাথে তোড়ার চোখের সামনে ভেসে আছে কিছু ভয়ংকর নোংরা স্মৃতি।

————–

সেদিন ছোট্ট তাথই খুব আনন্দে ছিল। তারা এক সাথে ঘুরতে যাচ্ছিলো খান্ডালা তে। অনেকদিন পর তাথই তার ড্যাড এর সাথে ঘুরতে যাচ্ছে। তাই সব থেকে বেশি খুশি ছিল সেই। কিন্তু তখন হয়তো ওই ছোটো মেয়েটা এটা জানতো না এটাই তার শেষ ট্রিপ হবে তার ড্যাড মা এর সাথে। সারাদিন মজা করে হোটেলে পৌঁছে ডিনার করার পর তার ড্যাডের একটা ফোন আসতেই তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে একটা কাজ আছে বলে। তাথই এর মা সারাদিন এর টানাপোড়েন এর জন্য শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু ছোটো তাথই তখন ও তার আনন্দের রেশ কাটিয়ে উঠতে পারিনি। তার ক্লান্তি তখন ছুটি নিয়েছিলো তাই সে তার মা ঘুমিয়ে যেতেই গুটি গুটি পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তার দাদু পাশের রুমে আছে। তিনি অনেক আগেই শুয়ে গেছেন। তাই তাথই আপন মনে একা একা এদিকে ওদিকে ঘুরতে থাকে। রাতের বেলা চারিদিকে আলোয় আলোয় সজ্জিত থাকার জন্য তার ভয়ের জায়গায় প্রচণ্ড আনন্দ হতে থাকে। তাই সে নিজের মত ঘুরতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ হোটেল একদম শেষ প্রান্তে পৌঁছে তার কানে আসে তার ড্যাড এর গলা। ছোটো তাথই সেদিকেই অগ্রসর হয়। আওয়াজ ভেসে আসছিলো কোণের এক রুম থেকে। দরজার সামনে এসে দাঁড়াতে তার কানে আসে ড্যাড এর গলা সাথে আরো একজন মহিলার গলা। তাথই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে দরজা ভেজানো আছে লক করা নেই। তাই সে আস্তে আস্তে দরজা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে ভিতরে দেখতে থাকে। কিন্তু ভিতরে দেখতেই তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।

তার ড্যাড আর সাথে একজন মহিলা খুবই ঘনিষ্ঠ হয়ে আছে। একে অপরকে চুম্বনে ব্যস্ত আছে। এটা দেখতেই তাথই এর চোখ দিয়ে তার অজান্তে পানি গড়িয়ে পড়ে। তার এই দৃশ্য দেখে বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসতে থাকে। সে তখন পাঁচ বছরের বাচ্চা ছিল। সব কিছু না বুঝলেও সে এটা বুঝে ছিল যে এটা খারাপ খুব খারাপ। এমনিতেই বাচ্চারা তাদের আশেপাশের ছোয়া আর চাহনি দেখেই কিছুটা হলেও বুঝতে পারে। আর সেখানে তার ড্যাড অন্য কোনো মেয়ে কে চুমু খাচ্ছে মানেই সেটা খুব খারাপ। তার ছোটো মাথায় সেই হটাৎ করেই বাজে ভাব টা ধরে ফেলে। তারই চোখের সামনে প্রায় অর্ধ নগ্ন অবস্থা অন্য কোনো মহিলার সাথে তার ড্যাড কে দেখে হঠাৎ করেই তার মধ্যেকার শিশু ভাবটা সরে গিয়ে অনেক বড় চিন্তা ভাবনা চলে এসেছিলো।

তাথই তার গায়ের জোর ধড়াম করেই পুরো দরজা টা খুলে ফেলে। প্রচণ্ড আওয়াজে কেঁপে উঠে তার ড্যাড আর সেই মহিলা টি একে অপরের থেকে সরে যায়। আর এতে মহিলাটির মুখ ও সামনে চলে আসে। সে আর কেউ না তার মায়ের বান্ধবী অনিতা আন্টি। তাথই ভিতরে ঢুকতেই ওরা দুজন একে অপরের থেকে ছিটকে দূরে সরে যায়। আর তাথই গিয়ে প্রচণ্ড আক্রোশের সাথে অনিতার হাতে কামড়ে নিয়েছিলো।তাথই এর তাকে দেখে কিছুক্ষণ হতভম্বের মত দেখতে থাকলেও অনিতার চিৎকারে সে তাথই কে ছুটিয়ে নিয়ে তাথই এর গালে থাপ্পড় মেরে দেয়। সাথে সাথে তাথই ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে। আর এটা দেখেই অনিতা তাথই এর দিকে তাকিয়ে চোখ মুখে অসম্ভব যন্ত্রণার চিহ্ন ফুটিয়ে তোলে। আর তাথই এর ড্যাড এটা দেখেই সাথে সাথে ছুটে যায় অনিতার কাছে। তার এদিকে খেয়াল নেই সে তার মেয়ের সামনে প্রায় অর্ধ নগ্ন অবস্থায় আছে। সে অনিতার এত কষ্ট পেতে দেখেই অনিতা কে নিয়ে পড়ে যায়। তাথই তার ড্যাড এর কাছের থেকেই এমন থাপ্পড় খেয়ে আরো রেগে যায়। একে তো সে প্রথম থেকেই এই মহিলা কে সহ্য করতে পারেনা। তাদের বাড়িতে যখনই আসতো সে দেখেছে তার ড্যাড এর সাথে মিশে থাকতো। আর আজ তো সব সীমা পার করে দিয়েছে। এই মহিলা তার মায়ের জায়গা নিয়ে নিয়েছে। ভেবেই তাথই রেগে উঠে দাঁড়িয়ে তার ড্যাড কে সরিয়ে দিয়ে জোরে ধাক্কা মেরে অনিতা কে নিচে ফেলে দেয়। অনিতা কে ফেলে দিতেই তার ড্যাড এসে তাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়। অনিতার কাছে গিয়ে তার মাথায় হালকা কেটে যাওয়া দেখতেই তার ড্যাড উঠে দাঁড়িয়ে তার গালে থাপ্পড় মারতে থাকে। তার ড্যাড কখনোই তার গায়ে হাত তোলেনি। আর আজ তার ড্যাড এই বাইরের মেয়েটার জন্য তাকে মারছে ভেবে তার বুক ফেটে কান্না চলে আসে।

-“ড্যাড তুমি এই খারাপ মহিলা টার জন্য আমাকে মারছো? এই মহিলা টা তোমাকে ও খারাপ বানিয়ে দিয়েছে। আমি তোমাকে ঘৃণা করি ড্যাড। মার খেতে খেতে ছোটো তাথই কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে।

-” চুপ বেয়াদব মেয়ে। আজ আমি তোমাকে মেরে ফেলবো। তোমার এত বড় সাহস তুমি অনিতা কে ফেলে দাও। বলেই রাগে মারতে থাকে তার ড্যাড।

-” বেবি আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। বলে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদতে থাকে অনিতা।

সাথে সাথে তাথই এর ড্যাড তাকে ধাক্কা মেরে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে অনিতার দিকে ছুটে যায়। তার মেয়ের দিকে খেয়াল থাকে না। তাকে যে মেরে প্রায় আধমরা করে দিয়েছে সে দিকে তার খেয়াল নেই সে মেতে আছে তার অনিতা কে নিয়ে। তাথই ঘৃণা ভরা চোখে তাদের দিকে একবার তাকিয়ে বিছানার দিকে তাকাতেই দেখে তার ড্যাড এর ফোন পড়ে আছে সে অনেক কষ্টে হাত বাড়িয়ে ফোন নিয়ে তার দাদু কে সব ঘটনা বলে দেয়। তাথই এর ড্যাড অনিতা কে নিয়ে পড়ে থাকায় সে খেয়াল করে না তাথই এর দিকে। তাথই তার ওই ছোটো শরীরে এত যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আসতে আসতে ওখানেই লুটিয়ে পড়ে। তারপর আর তার কিছু মনে নেই। সকাল হতে তার জ্ঞান ফেরে। চোখ খুলে তাকাতে পাশে দাদু কে বসে থাকতে দেখে। দাদু কে কিছু বলার জন্য উঠতে নিলেই সপাটে তার গালে একটা থাপ্পড় পড়ে যায়। সে অবাক হয়ে পাশে তাকাতেই দেখে তার মা দাঁড়িয়ে। অবাক চোখে মা কে দেখতে থাকে। মায়ের এই ব্যবহার তার কাছে অন্য রকম মনে হয়। তার মা তাকে টেনে তুলে বসিয়ে আরো একটা থাপ্পড় মেরে দেয়। আরো মারতে নিলেই তার দাদুর হুঙ্কারে থেমে যায়।

-“বাবা আজ এই মেয়ের জন্য অনিতা আমাদের মাঝে নেই। আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। এই মেয়ে একটা অভিশাপ হয়ে গেছে। তাথই এর মা চিৎকার করে বলে ওঠে।

-“বৌমা কি সব বলছো তুমি? তাথই এর দাদু রেগে বলে ওঠেন।

-“ঠিক বলেছি বাবা এই মেয়ের জন্য অনিতার মৃত্যু হয়েছে। আমি ভাবতেও পারছি না এই মেয়ে এই বয়সে এমন খুনি তৈরী হবে। ওকে জন্ম দিয়েই আমি ভুল করেছি।

তাথই তার মায়ের এই ব্যবহারের পুরো পাথর হয়ে গেছে তার কানে বেজে যাচ্ছে তার মায়ের কথা গুলো। তারপরেই সে জানতে পারে রাতে অনিতা হোটেল থেকে বেরিয়ে পাহাড় থেকে ঝাঁপ দিয়ে সুইসাইড করেছে। নীচে তার খণ্ড বিখন্ড লাশ পাওয়া গেছে। এটা শুনতেই তাথই পুরো জমে গেছিলো। কিন্তু সেই ছোটো তাথই এটা বুঝতে পারেনি এতে তার কি দোষ। সে কি করেছিলো? আর তার মা কেনো তাকে দোষ দিচ্ছে? তার নিজের মা ও তাকে ভুল বুঝলো? সেই দিনের সেই মৃত্যু এখনও তোড়ার কাছে রহস্যে ঘেরা। সে এখনও জানতে পারেনি কি হয়েছিলো সেই রাতে। আর সেই দিনের পর থেকেই শুরু হয় তার একা বাঁচার লড়াই। তার বাবা মা বেঁচে থেকেও তার ছিল না। সব জায়গায় সে হয়ে গেছিলো একা।

————–

তোড়ার ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। তার চোখ ছলছল করছে কিন্তু না সে চোখের পানি ফেলবে না। ওই স্বার্থপর মানুষ গুলোর জন্য তো নয় তার এই চোখের পানি।

-“কি মনে পড়েছে তাহলে? অনিতা শয়তানি হাসি দিয়ে বলে ওঠে।

-” সেদিন আমার দোষ কোথায় ছিলো? আর আপনি বা কেনো বলছেন আমি আপনার মৃত সাজার কারণ? তোড়া নিজের ইমোশন কন্ট্রোল করে বলে ওঠে।

-“তুই সেদিন রাতে এসেই আমার কাজে বাধা হয়ে দাড়াস। শুধু মাত্র তোর জন্য আমি আমার লক্ষে পৌঁছতে পারেনি। আর তোর ওই বুড়ো দাদু সব কিছু শেষ করে দিয়েছে তাই আগে তোকে মারবো তারপর ওই বুড়ো টা কে। বলেই জোরে জোরে হাসতে থাকে অনিতা।

কিন্তু হটাৎ করে গালে একটা জোরদার থাপ্পড় পড়তেই যন্ত্রণায় চিৎকার দিয়ে ওঠে। সাথে সাথে তোড়া পাশে তাকাতেই তার চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে……..

#ইষ্ক_ইবাদাত
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৬৪

-“আরে শালা মারতে এলাম এই মালটাকে কিন্তু সামনে যে এই হারামি বজ্জাত মহিলা টা কে পেয়ে যাব ভাবতেই পারিনি। রাই আনন্দে ফ্লোরে পড়ে থাকা নিমেষ কে লাথি মেরে অনিতার গাল টিপে বলে ওঠে।

-” কি টুসটুসে মামনি লেগেছে বুঝি আহারে গালে যে দাগ বসে গেছে। রাই মুখের আওয়াজ তুলে বলে ওঠে।

অনিতা বিস্ফোরিত চোখে রাই কে দেখতে থাকে। হ্যাঁ থাপ্পড় টা রাই মেরেছে। এদিকে রাই এর কথা শুনে কৃতী আর শাহীন মুখ টিপে হাসছে। প্রথমে কৃতী রাই এর কথা শুনে অবাক হয়ে গেলেও এবার সে হাসছে। আর রেয়ান্স ওদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এরা এতক্ষণ এখানেই ছিল তবে আড়ালে ছিল আর এতক্ষণ এর হওয়া সব কথা শুনেছে। তোড়ার সব কথা শুনে রেয়ান্স মাথা টা দপ দপ করে আগুন জ্বলছে যেনো এক্ষুনি সবাই কে তার এই আগুনে পুড়িয়ে দেবে। অনিতার শেষের কথা গুলো শুনেই রেয়ান্স আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি রুমের দিকে অগ্রসর হয়। এদিকে রাই সব কথা শুনে আর অনিতা কে দেখেই তার রাগ তুমুল আকারে বেড়ে গেছে সে রেয়ান্স কে এগিয়ে যেতে দেখেই তার আগেই দৌড় দিয়ে রুমে ঢুকে অনিতার মুখে হাতের ছাপ সেটে দেয়। রাই এই কাজটা করতে পেরে যেনো খুব খুশি হয়েছে।

কৃতী রেয়ান্স কে দেখেই রুমের চারিদিকে নজর বুলিয়ে ওখানে থাকা একটা চেয়ার এনে দেয় রেয়ান্স এর দিকে। রেয়ান্স এক দৃষ্টিতে তোড়ার দিকে তাকিয়ে আছে । তোড়া রেয়ান্স কে দেখেই তার উজ্জ্বল হয়ে ওঠা মুখে একটা হাসির রেস ফুটে ওঠে। রেয়ান্স কে দেখেই তার হাতের খুলে ফেলা পেচিয়ে রাখা বাঁধন ও খুলে ফেলে দিয়ে সোজা হয়ে বসে। রেয়ান্স তোড়ার হাতের দিকে তাকাতে তার লাল হয়ে থাকা চোখ দুটো থেকে যেনো এবার আগুনের ফুলকি বেরোতে থাকে। তোড়া রেয়ান্স এর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে রেয়ান্স এর মনোভাব। রেয়ান্স তোড়ার দিকে তাকিয়ে নিয়ে তোড়ার পাশের চেয়ার নিয়ে বসে পড়ে আর এক দৃষ্টিতে অনিতার দিকে তাকিয়ে থাকে।

-“কি ফুলটুস মামনি সব কিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তাই না সোনা? রাই অনিতার দিকে ঝুঁকে গিয়ে বলে ওঠে।

-” আরে শালা এই মালটার মুখে কেউ একটু জল দেরে। আরে না একে তো ইন্ডাস্ট্রির হিসাবে একটু খেলা দেখাতে ইচ্ছে হচ্ছে, কী বলিস তোরা? রাই সবার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে।

রাই এর কথা শুনে সবাই হেসে ওঠে। ইন্ডাস্ট্রির হিসাবে খেলা মানে হলো বডি গার্ড দিয়ে মুখে টয়লেট নিক্ষেপ করা। তবে এটাতে শাহীন আর কৃতী মজা পেলেও তোড়া সাথে সাথে নাকচ করে দেয়। রেয়ান্স তোড়ার দিকে একবার তাকিয়ে সে ও বারণ করে দেয়। তাই রাই এর কথা মত একজন গার্ড এসে নিমেষ এর মুখের উপর পানি ঢেলে দেয়। কিছুক্ষণ পর পিট পিট করে চোখ খুলে তাকায় ।

-“আরে নে চোখ খুলেছেরে তারকাটা টা। রাই বলে ওঠে।

অনিতা নিজের গালে হত দিয়ে এতক্ষণ পুরোটা দেখছিল। নিজের সামনে তোড়া কে এমন ভাবে হাত খুলে নিতে দেখে সে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। তার সামনে রেয়ান্স কে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে যায় অনিতা। সে জানে তার সামনে এখন যে বসে আছে সে তাকে এক ঝটকায় পায়ের তলায় চেপে মেরে ফেলবে।

-“কি ফুলটুস মামনি চোখে সর্ষে ফুল দেখছ বলে মনে হচ্ছে। রাই বলে ওঠে।

-” আরে আরে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা তো আপনাকে কিছু করব না শুধু একটু খেলা করব। কৃতী বলে ওঠে।

-“তো মিস অনিতা। ওপস না না মিসেস অনামিকা রয় রাইট? তো এবার বলে ফেলুন তো দেখি তোড়া আই মিন তাথই আপনার মৃত সাজার জন্য কেনো দায়ী? রেয়ান্স তীক্ষ্ণ ভাবে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে ওঠে।

রেয়ান্স এর এমন তীক্ষ্ণ আওয়াজ শুনেই অনিতা কেঁপে ওঠে। আর রেয়ান্স এর চোখের ওই ঝলসে দেওয়া আগুন যেনো এক নিমেষে তাকে পুড়িয়ে ফেলবে।

-“কি হলো শুনতে পেলে না বস কি বললো? রাই অনিতার কাছে এসে মাথার চুল টেনে ধরে বলে ওঠে।

রাই এর হাতের ভিতরে চুলের চাপ পড়ায় অনিতা মুখ দিয়ে মৃদু চিৎকার করে ওঠে। অন্য দিকে থেকে কৃতী এসে অনিতার মুখ চেপে ধরে। দুজন দু দিকে থেকে অনিতা কে চেপে ধরেছে। আর রেয়ান্স বসে বসে দেখছে। এটা যদি কোনো ছেলে হতো তাহলে এতক্ষণ তার সামনে এভাবে বসে থাকার সাহস দেখাতে পারতো না এতক্ষণ তার ডেড বডি পড়ে যেতো হয়তো।

রেয়ান্স বসে থাকলেও তোড়ার চোখে মুখে থেকে যেনো এবার আগুন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে। তার সেই পাঁচ বছর বয়সের সেই দিন টা মনে পড়তেই তার ভিতর যেনো জ্বলে যাচ্ছে আর তার সাথে এই আগুনে সে অনিতা কে জ্বালিয়ে দিতে চাইছে। তোড়া অনিতার দিকে তাকিয়ে নিজের হাত দুটো ভালো করে রাব করে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। সাথে সাথে রেয়ান্স তার গায়ের থেকে কোট খুলে তোড়ার গায়ের উপর চাপিয়ে দেয়। তোড়া একবার রেয়ান্স এর দিকে তাকিয়ে নিয়ে কোট টা ভালো করে গায়ে জড়িয়ে নিয়েই অনিতার দিকে এগিয়ে যায়। অনিতার চুলের মুঠো ধরে বসে থেকে টেনে তুলে ধরে দাঁড় করিয়ে দেয় সাথে সাথে রাই ও কৃতী সরে দাঁড়িয়ে যায়। নিমেষ ফ্লোরে পড়ে থেকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। তার জ্ঞান ফিরলে ও সে এতক্ষণ মাথা যন্ত্রণা আর চোখে ঝাপসা দেখার জন্য ঠিক করে বুঝতে পারছিল না কিন্তু এখন দেখেই তার চোখ দাঁড়িয়ে যায় সে শুধু ভীত হয়ে তাকিয়ে থাকে।

-“তো অনিতা আন্টি। আমার জন্য মৃত সেজে ছিলেন তাই না। তো তুমি এখন পৃথিবীর বুকে মৃত হিসাবে পরিচিত তাহলে তোমাকে যদি আমি এখন মেরে ফেলি তাহলে তো আর কোনো ঝামেলা হবে তাই না? তোড়া অনিতার মাথা দেয়ালে ঠুকে দিয়ে রুক্ষ ভাবে বলে ওঠে।

-“আরে তোড়া একে এখুনি মেরে ফেল একে মারলে পৃথিবীর বুকে থেকে একটা নোংরা কীট দূর হয়ে যাবে এতে যদিও কোনো অপরাধ লাগবে না। রাই বলে ওঠে বাঁকা হেসে।

-” কি বলেন আন্টি মেরে ফেলি তাহলে? তোড়া আবারো ঠুকে দিয়ে বলে ওঠে।

-“না না প্লিজ না। অনিতা আর্তনাদ করে বলে ওঠে।

-“তাহলে বলে ফেলুন সেদিন রাতে আসলেই কি হয়েছিলো আর তারপরে আপনার মরা সাজার নাটকটি কেনো রচিত হলো কেনো? তোড়া অনিতা কে দেয়ালে ছুড়ে দিয়ে চিৎকার করে বলে ওঠে।

এই মুহূর্তে তোড়া কে দেখতে খুব ভয়ঙ্কর লাগছে। তার ভিতরের এত দিনের জমে থাকা রাগ টা আসতে আসতে আগুন হয়ে বেরিয়ে আসছে আর সেটা আছড়ে পড়ছে অনিতার উপর। ইতি মধ্যেই অনিতার কপাল ফেটে গিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করেছে ঠোঁটের কোল কেটে গেছে।

-“কি হলো কানে কথা যায়নি? আরে তোড়া শালা এই ফুলটুসি মাল টা কে আরো একটু ডোজ দিতে হবে তার পরেই মুখ খুলবে। রাই বলে ওঠে।

-” ওকে দিয়ে দে। তোড়া বলে ওঠে ।

-“ওহহো মামনি তোমাকে তো পুরো টমেটোর মত চিপে চিপে সস বের করব আহারে ছোটো বেলা থেকে প্রচুর জালিয়েছ। তখন তো মনে হতো তোমার উঁচু হিল ভেঙে তোমার কোমর ভেঙে দেই। কিন্তু বুঝতেই পারছ ছোটো ছিলাম তাই পূরণ করতে পারিনি কিন্তু আমার মনের ইচ্ছা টা দেখছি এখন পূরণ হতে চলেছে। আর তোমার মতো একজন মহিলা কে মারলে কোনো পাপ হবে না বরং তোমাকে মেরে দিলে পাপ মোচন হবে। বলেই রাই দুম দুম করে মাথা ঠুকে দেয় অনিতার।

-“কি এখন মুখ ফুটবে নাকি সেলাই করে দেবো? এই কেউ সূচ নিয়ে আয়রে। রাই হেকে বলে ওঠে।

-” বলছি বলছি। অনিতা হাপিয়ে উঠে বলে ওঠে।

রাই অনিতা কে ছেড়ে দিয়ে তোড়ার পাশে এসে দাঁড়িয়ে যায়। শাহীন তার বস এর পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আর রেয়ান্স সে শুধু দেখে যাচ্ছে এই লেডি বাহিনীর কাজ গুলো সে নিজে অনিতা কে তো মারতে পারবে না। তাই সে শুধু বসে বসে দেখে যাচ্ছে। সে যদি মারতে পারতো তাহলে এতক্ষণ আর অনিতা কথা বলার অবস্থা থাকতো না।

-“সেদিন রাতে তুমি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পর আমি তোমার ড্যাড কে তোমার বিরুদ্ধে ভুল বুঝিয়ে দেই। যাতে সে তোমাকে ঘৃণা করে। আর তোমার প্রথম থেকেই আমার প্রেমে পাগল ছিল আর তার উপরে সেদিন রাতে তুমি হঠাৎ এসে আমাকে আক্রমণ করায় তোমার ড্যাড রেগে গেছিলো। আর তার উপরে আমি তোমাকে আরো বেশি মারার জন্য কষ্ট পাওয়ার নাটক করতেই সে তোমাকে আরো মারে। এটুকু বলে অনিতা থেমে যায়।

-“তারপর? তোড়া হুঙ্কার ছেড়ে বলে ওঠে।

-” তুমি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর রুমে তোমার দাদু এসেছিল। আমাদের দুজন কে ওই অবস্থায় দেখে তিনি ঘৃণা চোখ ফিরিয়ে নেয়। তোমাকে ফ্লোরে পড়ে থাকতে ছুটে গিয়ে বিছানায় শুয়ে দিয়ে তোমার ড্যাড কে থাপ্পড় মারে। তোমার কিন্তু তখন ও তোমাকে নিয়ে চিন্তিত ছিল না, তোমার দাদু তোমার ড্যাড কে মেরে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে থাপ্পড় মারে। তোমার ড্যাড আমাকে সরিয়ে নিতে গেলেই তাকেও মারে। তবে তুমি হয়তো জানো না তোমার ড্যাড সাথে আমার বিয়ে হয়েছিলো। তবে সেটা আমি নিজেই সবাই এর কাছে থেকে গোপন রাখতে চেয়েছিলাম।

-“কারণ তোমার লক্ষ ছিল মানান পরিবারের সম্পত্তি। তুমি তোমার বান্ধবীর পরিবারে মিত্র হয়ে ঢুকে তার সংসার নিজের করতে চেয়েছিলে। তাই তুমি মিস্টার মানান কে নিজের প্রেমের জালে ফাসিয়ে তার সমস্ত সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে চেয়েছিলে কিন্তু মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তোড়া। কারণ তোড়ার দাদু তোড়া পৃথিবীতে আসার খুশিতে তার অর্ধেক সম্পত্তি তার নামে করে দেয় সেটা তার জন্ম নেওয়ার আগেই। তাই তুমি প্ল্যান করেই বিয়ে করে নিলে। কিন্তু আফসোস তুমি তোমার প্ল্যান সফল করতে পারলে না কারণ তোড়ার দাদু আগেই তোমাকে ধরে ফেলেছিল তাই তুমি দ্বিতীয় প্ল্যান সাজিয়ে নিলে তোড়া কে তার বাবার কাছে খারাপ বানিয়ে দিয়ে। যদি বা তার বাবার মনে তার জন্য একটু ভালোবাসা বেঁচে ছিল সেটাও তুমি ওই রাতে কেড়ে নিলে। তুমি চেয়েছিল সেদিন তোড়ার বাবার কাছের থেকে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি নিয়ে সব কিছু হাসিল করতে। যেটা কিছুদিন আগেই তোড়ার দাদু তার ছেলে কে দিয়েছিলো। কিন্তু সেখানেও বাধা হয়ে এসে দাঁড়ায় তোড়া। আর সেই রাগ মেটাতে তুমি নাটক করে ওর বাবা কে দিয়ে মার খাওয়ালে। তুমি ভেবেছিলে শেষ মুহুর্তে নিয়ে নেবে কিন্তু সেটা তোড়ার দাদু হতে দেয়নি। সেদিন তোড়ার বুদ্ধির জন্য আরো একবার হেরে গেলে। তোড়ার দাদু তার বাবাকে তাজ্য পুত্র করার ভয় দেখিয়ে বের করে দিয়ে তোমাকে অপমান করে তোমার থেকে ডিভোর্স নিয়ে নিয়েছিলো পুলিশের ভয় দেখিয়ে। আর তার পরেই তুমি তোমার বয় ফ্রেন্ড এর সাথে মিলে তোমার শেষ চাল চেলে দিলে। যার সাথে তুমি পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করেছিলে তোড়ার বাবার কাছে থেকে সব কিছু নিয়ে। ছোটো একটা ভিডিও ক্লিপ ছেড়ে তোমার নাটক তৈরী করলে সুইসাইড করার। যেখানে তোমার মৃত্যুর পিছনে ইনডাইরেক্টলি তোড়া কে ব্লেম করে গেলেন । আর তার ফলে তোড়া তার বাবা মার কাছে সারাজীবন এর জন্য অপরাধী হয়ে থেকে গেলো। তাইনা। ব্রিলিয়ান্ট সত্যি তারিফ করার মত প্ল্যান বানিয়ে ছিলে। রেয়ান্স এক নিঃশ্বাসে হাত তালি দিয়ে বলে ওঠে।

রেয়ান্স এর কথা শুনে তোড়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। একবার অনিতার মুখ ভঙ্গি দেখে নিয়ে রেয়ান্স এর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার বলা প্রত্যেকটা কথা শুনে সে অবাক থেকে অবাক এর সীমা পৌঁছে গেছে। সে এত কিছু জানতো না। এগুলো সব তার কাছে অজানা ছিল। ওখানে থাকা রাই কৃতী শাহীন ও ঘৃণা ভরা চোখে তাকিয়ে আছে। নিমেষ সব কিছু শুনেই ঘৃণা নিয়ে তাকিয়ে থাকে। আর অনিতা শুধু রেয়ান্স মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। সে জানে তার সামনে এমন একটা মানুষ দাঁড়িয়ে আছে যে যা কিছু জানতে চায় সব তার হাতের মুঠো তে চলে আসে। এখন অনিতার মনে হচ্ছে তার ফাঁদে তোড়া পা দেইনি বরং সে নিজেই ওদের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে।

-“ছিঃ ছিঃ তোমাকে বিশ্বাস করেই আমি ভুল করেছিলেন। তুমি আমার সাথে আমার বাবার জীবন টাও শেষ করে দিলে। তার মানে আমার মায়ের মৃত্যুর পিছনে ও তোমার হাত আছে? নিমেষ প্রচণ্ড রাগে বলে ওঠে।

-” আরে বাহ তারকাটা টার দেখছি তার জোড়া লাগতে শুরু করেছে। রাই কটাক্ষ করে বলে ওঠে।

-“তোমার মা কে এই মহিলা মারেনি বরং তোমার বাবা আর ইনি মিলেই তোমার মা কে মেরে ফেলেছে। আরেকটা কথা কি জানো এই অনিতার ওই বয়ফ্রেন্ড কিন্তু তোমার বাবা ছিলো। রেয়ান্স বলে ওঠে।

এটা শুনে আরেক প্রস্থ সবাই অবাক হয়ে গেলো। তোড়া রাগে ঘৃণা নিয়ে একবার অনিতা তো একবার নিমেষ কে দেখতে থাকে। আর রাই তো মার মুখো হয়ে আছে পারলে এখুনি মেরে দেয় শুধু শাহীন আটকে রেখেছে বলে।

-“তোমাকে আমি এখানেই মেরে দিতাম তোড়া কে এখানে তুলে নিয়ে আসার অপরাধে। আমি আমার ওয়াইফির এক বিন্দু চোখের জল মেনে নিতে পারিনা আর সেখানে আজকে ওকে কতটা কষ্ট দিয়েছ। কিন্তু তোমাকে মেরে কোনো কাজ নেই কারণ তুমি আগের থেকেই ধজাভঙ্গ। রেয়ান্স দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে ওঠে।

-“ওয়াইফি? নিমেষ অবাক হয়ে বলে ওঠে।

-” হ্যাঁ তোড়া আমার ওয়াইফ। মিসেস রেয়ান্স রাওয়াত । রেয়ান্স তোড়ার কোমরে হাত দিয়ে কাছে টেনে নিয়ে বলে ওঠে।

এবার যেনো নিমেষ মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। সে এবার বুঝতে পারছে তার কি অবস্থা হতুলে নিয়ে যায়। তার আর কথা বলার অবস্থা নেই।

রেয়ান্স তার চোখের ইশারা করতে কয়েক জন গার্ড এসে অনিতা কে টেনে হিচড়ে রেয়ান্স এর পাশাপাশি আসতেই রেয়ান্স নিচু স্বরে বলে ওঠে।

-“ওহ হ্যাঁ আরেকটা কথা আপনি যে আপনার ট্রাম কার্ড যেটা মিস্টার মানান কে দিয়ে গেছিলেন মৃত সাজার আগে সেটা এখন আমার কাছে আছে আপনার সমস্ত খেলা শেষ। এবার বুঝবেন খেলা কাকে বলে আর কিরকম হয় তার ধরন।
.
.
.
. ❤️❤️❤️
. চলবে…..