উষসী হাসবে বলে পর্ব-০১

0
507

#উষসী_হাসবে_বলে(১)
লিখা- Sidratul Muntaz

” স্যার, আপনার সাথে দেখা করতে কিছু মেয়ে এসেছে। আমি তাদের বসতে বলেছি।”

” মানে?” ক্যানভাস থেকে চোখ তুলে আশ্চর্য দৃষ্টিতে তাকাল ইয়ামিন।

অনম আমতা-আমতা করে বলল,” মানে স্যার… আমি তাদের বলেছি আপনি বিজি। সকাল থেকে শত শত মানুষ এসে ফিরে যাচ্ছে। কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি৷ সন্ধ্যার আগে দেখা হওয়া কোনোভাবেই সম্ভব না। কিন্তু ওরা বলছে দেখা করতে না দিলে যাবে না৷ এখানেই সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকবে।”

ইয়ামিন বেশ বিরক্ত হলো। দায়সারা গলায় বলল,”এখন আমি কারো সাথে দেখা করব না।মেয়েগুলোকে বিদায় করো। ”

ক্যানভাসে মুখহীন একটা নারী অবয়ব দেখা যাচ্ছে। খুব যত্নের সাথে ছবিটিতে ফিনিশিং দিচ্ছে ইয়ামিন। কিন্তু মুখ ছাড়া রমণীটিকে ভূতের মতো দেখাচ্ছে।

অনম শুকনো মুখে বলল,” কিন্তু স্যার… মেয়েগুলো খুব আগ্রহ নিয়ে বসে আছে। আমি কি করে চলে যেতে বলব? মানে আমার খুব মায়া লাগছে তাদের জন্য…”

হাতের ব্রাশ রেখে গরম দৃষ্টিতে তাকাল ইয়ামিন। অনম চুপসে গেল। বিব্রতমুখে বলল,”ঠিকাছে… আমি ওদের এখনি যেতে বলছি।”

সে যেতে নিলেই ইয়ামিন ডাকল,” দাঁড়াও। আগে বলো ঘটনা কি? তুমি আমার সাথে দেখা করানোর জন্য ওদের থেকে টাকা নিয়েছো নাকি?”

অনম জীভ কাটল। এমন অভ্যাস তার আছে। আগেও ধরা খেয়েছিল কয়েকবার। তাই ইয়ামিনের সন্দেহ অযৌক্তিক নয়। অনম কানে হাত রেখে বলল,” ছি, ছি, স্যার। একদম না। এসব আমি ছেড়ে দিয়েছি।”

ইয়ামিন সন্দিহান চোখে তাকিয়ে রইল। তার ওই ধারালো দৃষ্টির সামনে নিরুপায় হয়ে পড়ল অনম। নিভু গলায় বলল,” মাত্র দুইহাজার নিয়েছি স্যার। মেয়েগুলো জোর করে পকেটে গুঁজে দিল। ”

ইয়ামিন একটা পাতলা কাপড় দিয়ে ক্যানভাস কভার করতে করতে বলল,” কাজটা ঠিক হয়নি। তুমি ওদের টাকা ফিরিয়ে দেবে। আমি একজন শিল্পী আর তারা আমার ভক্ত। আমার শিল্পকে ভালোবেসে আমার সাথে দেখা করতে এসেছে। তাদের থেকে এভাবে সুযোগ নেওয়া উচিৎ হয়নি।”

অনম দুঃখী মুখে বলল,”স্যরি স্যার। ভুল হয়েছে।”

” তাদের সাথে ক্যামেরা-ট্যামেরা নেই তো?”

” না স্যার, একদম ক্লিয়ার। আমি দেখে-শুনেই ঢুকিয়েছি। তারা সবাই একসাথে ট্যুরে এসেছে। মেয়েগুলো ব্যালকনিতে অপেক্ষা করছে।”

ইয়ামিনের গায়ে হাফ হাতা পাতলা ফিনফিনে একটা টি-শার্ট। সেটা পাল্টে ফুলহাতা পোলো টি-শার্ট পরল।ক্যামেরা ব্যাপারটা আজ-কাল একটা আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তার কাছে। সে পাঞ্জাবি পরে জুম্মায় গেলেও সেটা নিয়ে আর্টিকেল বের হয়ে যায়। সেদিন তো রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আমড়া খাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেল৷ কি সাংঘাতিক ব্যাপার!

বাংলাদেশে এসে নতুন যে সকল সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে তার মধ্যে এটা সবচেয়ে ভয়ংকর। তবে এই দেশের সৌন্দর্য্যে সে ডুবে আছে। নিজের দেশটাকে কোনোদিন ভালো করে দেখার সুযোগ হয়নি। তাই এবার সিলেটে কনসার্টের আয়োজন করেছে সে। ভ্রমণও হবে আবার ভক্তদের সাথে সাক্ষাৎও হবে।

রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে উষসী ঘামছে অনবরত৷ ফ্যানের বাতাস গায়ে লাগছে না বললেই চলে। পাশেই যুঁথি প্রবল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে অপেক্ষা করছে। তার চোখে-মুখে আনন্দ উপচে পড়ছে। আর উষসীর লাগছে বিরক্ত। সে ত্যক্ত গলায় বলল,” আসবে না দেখিস। নিজের আরামের এসিওয়ালা ঘর ছেড়ে ইয়ামিন ইব্রাহীম এই রোদের মধ্যে ফ্যানদের সাথে খোশগল্প করতে আসবে! আমার তো বিশ্বাস হয় না… তাছাড়া লোকটা প্রচন্ড অহংকারী।”

শম্পা আঁড়চোখে উষসীর দিকে তাকাল। যুঁথি ক্ষোভ নিয়ে বলল,” ইয়ামিন ইব্রাহীমকে অহংকারী বলবি না।উনি ফ্যানদের সাথে অনেক বিনয়ী।”

উষসী অন্যদিকে চেয়ে বলল,” ক্যামেরার সামনে সব নাটক। ব্যক্তিগতভাবে এরা অহংকারীই হয়।”

প্রীতি বলল,” তুই এতো জানলি কিভাবে উষু? একবার দেখা হলেই তো বুঝবি।”

উষসী বিড়বিড় করে বলল,” আমি দেখা করব না। উনি এলেই এখান থেকে চলে যাব। তারপর তোরা যত খুশি মাথায় তুলে নাচিস। ”

হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল মেয়েরা।নেভি ব্লু পোলো টি-শার্ট, জিন্স আর চোখে সানগ্লাস পরিহিত অবস্থায় ইয়ামিনকে নামতে দেখা যাচ্ছে। উষসী বাদে বাকিরা হুড়মুড়িয়ে ছুটে গেল। সিঁড়ির গোঁড়ায় দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছে ইয়ামিন ইব্রাহীম। ঠোঁটে বিনয়ী, ভদ্র হাসি।

উষসী এক-পা, দু’পা করে পিছিয়ে যায় অনেকটা। সে মোটেও সামনে যাবে না। ব্যালকনি থেকে বেরিয়ে জারুল গাছের ছাউনিতে এসে দাঁড়ায়। ইয়ামিনকে সে চিনতে পারছে না। অনেক বদলে গেছে সে, অনেক!

আগের মতো রগচটা, ঔদ্ধত্য ভাবটা নেই। ওই চোখের মধ্যে তো তীক্ষ্ণ তেজ জ্বলজ্বল করতো সবসময়। আজ সেই চোখ দু’টো সানগ্লাসের কালো কাঁচে ঢাকা। উষসী তাকিয়ে থাকে চুপচাপ। তার অসহ্য অনুভূতি হয়। বুকের মধ্যে কেমন ঢিপঢিপ করে।

মানুষটার সাথে প্রায় নয়বছর আগে শেষ দেখা হয়েছিল। তখন উষসীর বয়স ছিল মাত্র নয় কি দশ। এখন সে উনিশ বছরের তরুণী। আর ইয়ামিন সাতাশ বছরের যুবক! সময় বদলে গেছে কতটা..

বিখ্যাত শিল্পী ইয়ামিন ইব্রাহীমকে কাছে পেয়ে মেয়েদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। যুঁথি প্রায় পাঁচমিনিট ইয়ামিনকে জড়িয়েই ধরে রেখেছে। শিল্পীদের বুঝি চাইলেই ওভাবে জড়িয়ে ধরা যায়? এসব ওদের জন্য কত সাধারণ ব্যাপার তাই না? উষসী তো জীবনেও পারবে না। সে নিজের বান্ধবীদের কান্ডে বেশ বিরক্ত।

প্রায় আধঘণ্টা যাবৎ উষসীর তিন বান্ধবী ইয়ামিনের সাথে আনন্দপূর্ণ সময় কাটায়। অটোগ্রাফ, ফটোগ্রাফ শেষ করে তারা ফিরে আসার সময় হঠাৎ শম্পা বলল,” উষসীকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না যে?”

ইয়ামিন নামটা শুনে এক মুহূর্তে থামে। তারপর সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠে যায়। যুঁথি এদিক-সেদিক চেয়ে বলে উঠল,” ওইতো, পাগলিটা ওখানে দাঁড়িয়ে আছে।”

” কি করছে ও ওখানে?”

” কে জানে?”

সবাই উষসীর কাছে এগিয়ে আসে। উষসী দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে প্রশ্ন করল,” তোদের আদিখ্যেতা শেষ হয়েছে?”

প্রীতি বিস্মিত কণ্ঠে বলল,” তুই সত্যিই গেলি না? একটাও ছবি তুলতে মন চাইল না তোর উনার সাথে?”

উষসী ভ্রু কুঁচকে শুধাল,” উনার সাথে ছবি তুললে কি আমি টাকা পাবো? কেন আজাইরা ছবি তুলতে যাবো? এতে আমার কি লাভ?”

প্রীতি দুইহাত জড়ো করে কপালে ঠেঁকিয়ে বলল,” ক্ষ্যামা দে মা। বড্ড ভুল হয়েছে তোকে আন্ডারেস্টিমেট করে। তুই সত্যিই একটা অন্যরকম চীজ।”

যুঁথি বুকের উপর হাত রেখে বলল,” ইয়ামিন ইব্রাহীম কিন্তু আসলেই অনেক সুইট পারসন তাই না? আমার তো এখনও হাত কাঁপছে। শরীর অবশ অবশ করছে। ইশ…বিশ্বাসই হচ্ছে না উনাকে আমি জড়িয়ে ধরেছি! এই ছবি তুলেছিলি তোরা?”

শম্পা বলল,” আমি তুলেছি। এইতো।”

যুঁথি আবেগভরা দৃষ্টিতে ছবির দিকে চেয়ে রইল। তার আজকের দিনটা স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে। উষসী ঠেস মেরে বলল,” হয়েছে এবার চল। ঢাকায় গিয়ে এই ছবি প্রিন্ট করে গলায় ঝুলিয়ে রাখিস।”

শম্পা আর প্রীতি হেসে ফেলল। যুঁথি গান শুনতে ভীষণ ভালোবাসে৷ ইয়ামিন ইব্রাহীম তার প্রিয় শিল্পী। লোকটার গলায় জাদুর মতো একটা ব্যাপার আছে। তার এমন স্যাড সং নেই যেটা শুনলে চোখে পানি আসবে না। পাথর হৃদয় অবধি গলতে বাধ্য।

তারা কটেজে ফিরছে। মূল সড়কে গিয়ে সিএনজি’তে উঠবে। হাঁটতে হাঁটতে শম্পা বলল,” তুই শুধু শুধুই উনাকে এতো অপছন্দ করিস উষু। উনি মানুষটা আসলেই নাইস। আমাদের সাথে কত্ত সুন্দর করে কথা বলল। কি ভালো ব্যবহার! মনেই হয় না উনি যে একজন সেলিব্রিটি। এতো দুষ্টমি করল!”

উষসী মুখ বেঁকিয়ে বলল,” সবই টাকার খেলা। উনার সাথে দেখা করার জন্য দুইহাজার টাকা খসিয়েছিস বলেই ভালো আপ্যায়ন পেয়েছিস। এটা ভুলে যাস না।”

শম্পা ভ্রু কুঁচকে বলল,” তোর কথাগুলো শুনে মনে হচ্ছে ইয়ামিন ইব্রাহীমের সাথে বুঝি পূর্ব জন্মে কোনো শত্রুতা ছিল তোর।”

উষসী চুপ করে যায়। হঠাৎ অনম নামের লোকটা পেছন থেকে ডাকল তাদের।যুঁথিসহ বাকিরা ঘুরে তাকায়। অনম তার পকেট থেকে এক হাজারের দুইটি নোট বের করে যুঁথির দিকে বাড়িয়ে দিল,” টাকাটা রাখুন ম্যাডাম। স্যার ঘুষ দেওয়া আর নেওয়া দু’টোই খুব অপছন্দ করে। তাই আমাকে পাঠিয়েছে আপনার টাকা ফেরত দেওয়ার জন্যে।”

যুঁথি উষসীর দিকে তাকিয়ে বলল,” কি যেন বলছিলি? সব টাকার খেলা তাই না? সেই টাকাও এখন ফেরত চলে এলো। তোর কি আর কিছু বলার আছে?”

উষসী কথা বলে না। যুঁথি অনমের দিকে ঘুরে হাসি মুখে বলল,” আজকে আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন ভাইয়া। আপনার জন্য আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে৷ আমরা সবাই খুব খুশি। তাই টাকাটা আপনি রাখুন। ভেবে নিন এটা আমাদের থেকে আপনার জন্য সামান্য ধন্যবাদ।”

অনম গদগদ স্বরে বলল,” এমন করে বললে… আমি আর ফেরাই কিভাবে?”

সে টাকাটা পুনরায় পকেটে গুঁজে নিল। উষসী ছাড়া বাকিরা হাসতে লাগল। বন্ধুদের সাথে তিনদিনের ট্যুরে সিলেট এসেছে উষসী। তারা সবাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। একই ডিপার্টমেন্টে রসায়নবিদ্যায় পড়াশুনা করে।

দুইদিন আগেই তাদের ঢাকায় ফেরার কথা ছিল। ইয়ামিন ইব্রাহীমের কনসার্টের খবর শুনে সেই পরিকল্পনা স্থগিত। সবাই টিকিট কেটে অপেক্ষায় আছে কনসার্ট দেখবে বলে৷ আজ সন্ধ্যায় কনসার্ট শেষ করে রাতেই তারা ফিরে যাবে। যদিও উষসীর কনসার্ট দেখার প্রতি কোনো আগ্রহ নেই। সে তো বন্ধুদের সিদ্ধান্তে বাধ্য হয়ে মেনে নিয়েছে।

উষসীদের গ্রুপে সদস্যের সংখ্যা দশজন। চারজন মেয়ে আর বাকিরা সব ছেলে। প্রথমে শুধু ছেলেরাই নিজেদের গাড়ি নিয়ে ঘুরতে আসার পরিকল্পনা করেছিল। হঠাৎ মেয়েরাও জেদ ধরে বসল। তারাও সঙ্গে যাবে। প্রথমে মেয়েদের সংখ্যা হয়েছিল আটজন। কিন্তু বাসা থেকে সবাই অনুমতি পেল না। চারজন সাহসী মেয়ে যাদের বাসায় কোনো ঝামেলা নেই তারাই কেবল আসতে পেরেছে।

উষসীরও আসার কথা ছিল না। কিন্তু সৌভাগ্যবশত তার দুলাভাই তৃষাণ ব্যবসার কাজে থাইল্যান্ড গেছে। তাই উষসী তার উষ্ণতা আপু আর মাকে সহজেই মানিয়ে আসতে পেরেছে। যদিও এখন তার মনে হচ্ছে, এখানে না এলেই ভালো হতো।

কটেজে ফিরতেই দেখা গেল ছেলেরা মাঠে ফুটবল খেলতে নেমে গেছে। এই জায়গাটা প্রাকৃতিক ভাবে ভীষণ সুন্দর। ঘন সবুজে ঘেরা বিশাল বিশাল মাঠ। মাথার উপর ছাউনির মতো বড় বড় গাছ। চক্ষুশীতল করার মতো দৃশ্য চারদিকে। অজান্তেই মন ফুরফুরে হয়ে ওঠে।

উষসীদের দেখেই রোহান আর জায়িন খেলা রেখে ছুটে এলো। জায়িন কোমরে হাত গুঁজে জিজ্ঞাসা করল,” কিরে, দেখা হয়েছে?”

তার প্রশ্নে বিদ্রুপের সুর। তারাও গতকাল ইয়ামিন ইব্রাহীমের সাথে দেখা করতে গিয়ে ফিরে এসেছে। দেখা হয়নি। মেয়েদের ক্ষেত্রেও তাই হবে… এমনটাই তাদের ধারণা।

যুঁথি উচ্ছ্বাসপূর্ণ কণ্ঠে বলল,” অফকোর্স দেখা হয়েছে। বলেছিলাম না, আমরা দেখা করেই ছাড়ব? এবার দ্রুত তিনহাজার টাকা বের কর।”

শম্পা আর প্রীতি হৈ হৈ করে তাল মেলায় যুঁথির কথায়। জায়িন আর রোহানের মুখ শুকিয়ে যায়। ছেলেরা আর মেয়েরা এই নিয়ে বাজি লেগেছিল। যারা আগে দেখা করতে পারবে তারা প্রতিপক্ষ দলকে তিনহাজার টাকা দেবে। রোহান বলল,” এতো সহজে বিশ্বাস করব না। আগে প্রুভ দেখা।”

প্রীতি দ্রুত নিজের ফোন বের করে। ইয়ামিনের সাথে তোলা ছবিগুলো বের করে দেখাতে থাকে। রোহান আর জায়িন হতবাক। তারা কি দোষ করেছে তাহলে? কেন তাদের সাথে দেখা করেনি ইয়ামিন ইব্রাহীম? জায়িন কিছু না পেয়ে বলল,” শা’লা একটা লুই’চ্চা। সুন্দরী মেয়ে দেখে বের হয়েছে। আমরা যখন গেলাম তখন তো বের হলো না।”

উষসী হাসল। তারা যে চিটিং করেছে সেই কথা তো ছেলেরা জানে না। দুইহাজার টাকার বিনিময়ে ইয়ামিনের এসিস্ট্যান্ট অনমকে হাত করতে হয়েছে আগে। নাহলে এতো সহজে দেখাটা হতো না। তবুও খারাপ কি? বাজি জিতে তারা অন্তত একহাজার টাকা হলেও লাভ করতে পারবে।

প্রীতম ছুটে এলো। গম্ভীর ভঙ্গিতে প্রশ্ন ছুঁড়ল,” কি হচ্ছে এখানে?”

রোহান আফসোস নিয়ে বলল,” আমরা বাজিতে হেরে গেছি দোস্ত। এখন নাকি ওদের তিনহাজার টাকা দিতে হবে। এটা কোনো কথা?”

বাজির ব্যাপার নিয়ে প্রীতমকে তেমন বিচলিত মনে হলো না। সে উষসীর দিকে চেয়ে ঠান্ডা গলায় বলল,” এদিকে আয়।”

চোখে-মুখে হালকা অস্বস্তি ছড়িয়ে পড়ল উষসীর। বন্ধুরা সবাই তার দিকেই চেয়ে আছে। সে কিছু বলতে না পেরে নীরবে প্রীতমের সাথে গেল। নির্জনে এসে থামল প্রীতম। কোমল গলায় জানতে চাইল,” আমার রাতের মেসেজ পুরোটা পড়েছিলি তুই?”

” হুম।”

প্রীতম একটু আমতা-আমতা করে বলল,” তারপর তো কিছুই বললি না আর!”

উষসী সরাসরি জবাব দিল,” দ্যাখ প্রীতম, সম্পর্কটাকে শুরু থেকেই বন্ধুত্ব ভেবে এসেছি আমি৷ এখন অন্যকিছু চিন্তা করা আমার পক্ষে সম্ভব না।”

প্রীতম বিরক্ত গলায় বলল,” বন্ধুত্ব থেকে কি প্রেম হয় না? তুই এমন ভাব করছিস যেন আমিই পৃথিবীর প্রথম যুবক যে তার বেস্টফ্রেন্ডকে প্রপোজ করেছে। আজব!”

” আমি পারব না।”

উষসী যেতে নিলেই প্রীতম হাত টেনে ধরল। অনুরোধের ভঙ্গিতে বলল,” আমি ভয়ংকরভাবে তোর প্রেমে পড়ে গেছি উষু। কিছুতেই বিষয়টা সরাতে পারছি না মাথা থেকে।আরেকবার ভেবে দ্যাখ না!”

উষসী চোয়াল শক্ত করে বলল,” আমার হাত ছাড় প্রীতম।”

প্রীতম হালকা কাছে এসে বলল,” না ছাড়লে কি করবি? আমার তো ধরে রাখতেই ভালো লাগছে।”

সে উষসীর হাতটা নিয়ে নিজের গালে ছোয়ালো। উষসী বন্ধুত্ব ভুলে গেল মুহূর্তেই। তীব্র ক্রোধে জ্বলে উঠল তার শরীর। আচমকা পেছনে ঘুরে প্রীতমের গালে চড় মেরে বসল। তার এমন কাজে প্রীতম ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। কিন্তু অবাক হয় না। উষসীর মতো মেয়ে এমনটাই করবে, স্বাভাবিক। বরং সে নিজেই বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে।

উষসী নিজের হাত ছাড়িয়ে গটগট করে যেতে থাকে। সামনে দেখতে পায় বন্ধুরা তর্ক করছে। প্রীতি তার দিকে চেয়ে বলল,” দ্যাখ না উষু, আমাদের টাকা দিতে কঞ্জুসি করছে ওরা। তুই কিছু বল।”

উষসী কোনো কথা বলে না। থমথমে মুখে নিজের ঘরে চলে যায়। তার আচরণে অবাক হয় বাকিরা। কিন্তু ব্যাপারটা বেশিক্ষণ পাত্তা দেয় না কেউ। উষসীর অন্যরকম স্বভাব সম্পর্কে অবগত সকলে। তার মেজাজ কখন ভালো থাকে আর কখন খারাপ সেটা বোঝা বড় দায়। সন্ধ্যায় সবাই কনসার্টে যাওয়ার জন্য তৈরী হয়।

চলবে