এই মন তোমারি পর্ব-১৬+১৭

0
233

#এই_মন_তোমারি
#পর্ব_১৬
#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন
-” চুমু খাবে মেয়ে?”

-” না।”

-” তাহলে এতো মোচড়ামুচড়ি করছো কেনো? দেখছো তো আমি তোমার উপকার করছি। তোমার চুলগুলো আঁচড়ে দিচ্ছি।”

-” আমার সুড়সুড়ি লাগছে সুন্দর ব্যাডা মানুষ। আপনার উপকারের কোনো দরকার নেই আমার। আমি আমার নিজের চুল নিজে আঁচড়ে নিতে পারবো।”

-” সকালের ঘটনা মনে আছে তো তোমার?
তুমি যদি ঠিকভাবে আমাকে আমার কাজ করতে না দাও, তাহলে কিন্তু আমি তোমাকে চুমু খাবো।আর সেটা কাঁধে বা গলায় নয় , সোজা তোমার ঠোঁটে।”

-” সূরা তৎক্ষণাৎ শাফায়াতের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, হায় আল্লাহ ! তাহলে আমি কি পোয়াতি হয়ে যাবো?”

-” সূরার এমন বোকা কথা শুনে কাশি উঠে যায় শাফায়াতের।সে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, চুমু খেলে কেউ প্রেগন্যান্ট হয়ে যায় না গাধা।”

-” হু আপনি বলবেন আর আমি বিশ্বাস করবো? মোটেও না। আমি তো সিনেমায় দেখেছি নায়ক জসিম আর নায়িকা শাবানা রাতে চুমু খেতো আর সকালে’ই শাবানা গলগল করে বমি করে ভাসিয়ে দিয়ে ,মাথা ঘুরে ঠাস করে নিচে পড়ে থাকতো। তারপর ডাক্তার এসে বলতো,আপনি মা হতে চলেছেন।”

-” শাফায়াত সূরার লম্বা চুলগুলো হাতে পেঁচিয়ে ধরে বললো, দেখো মেয়ে এমনিতেই আমার মাথা গরম হয়ে আছে। তুমি এসব ফালতু কথা বলে আমার মাথা আরো গরম করে দিও না। তোমার জন্য নাপিতের সামনে মাথা কা’টা গেছে আমার।এখন যদি আর একটা বাজে কথা বলো আমি তোমার লম্বা চুলগুলো কে’টে আর্মি ছাঁট করে দিবো।”

-” আমার চুল কাটবেন না দয়া করে।আমি আপনার সব কথা শুনবো।”

-” এইতো গুড গার্ল। অতঃপর শাফায়াত সূরা কে একটা চেয়ারের উপর বসিয়ে একটা প্যাকেট খুলে উকুননাশক তেল বের করে একটা ছোট বাটিতে ঢেলে নিয়ে সূরার চুলে তেল দিয়ে সুন্দর করে ম্যাসাজ করে দিলো। ব্যাপার টা বেশ ভালো লাগলো সূরার । আবেশে তার চোখ বন্ধ হয়ে এলো।তার বাবার সাথে কাটানো দিনগুলো মনে পড়ে গেল।তার বাবাও ঠিক এইভাবে সূরার মাথায় তেল দিয়ে ম্যাসাজ করে দিতো। পুরোনো কথা মনে পড়তে’ই সূরার চোখ থেকে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।সে শাফায়াতের আড়ালে চোখের পানি মুছে ফিসফিস করে বললো, আপনি এতো ভালো কেন পুলিশ?কথাটা কর্ণপাত হলো না শাফায়াতের।সে সূরার চুলে তেল দিয়ে চুল আঁচড়ে দেওয়ার সময় তার চুলে উকুন ভেসে উঠলো। শাফায়াত সূরার মাথা থেকে উকুন তুলে সূরার হাতে দেওয়ার সময় শফিকুল দেওয়ান রুমে প্রবেশ করে। তিনি এই দৃশ্য দেখে বললো,

-” ছিঃ শাফি !এটা তোর মতো একজন পুলিশ অফিসারের কাম্য নয় । তুই এই গাইয়া মেয়ের মাথা থেকে উকুন বেছে দিচ্ছিস। তুই যে আমার ছেলে ভাবতেই আমার লজ্জা লাগছে। মেরুদণ্ডহীন পুরুষ মানুষ তুই। এমনিতেই আমি টেনশনে আছি তোর বিয়ের ব্যাপার টা নিয়ে। লোকজন না জেনে যায় এই ব্যাপারে। কিন্তু তোর তো দেখছি কোনো মাথা ব্যথা নেই। তুই গাইয়া মেয়েটার সাথে এক ঘরে, এক বিছানায় থাকছিস , তার সেবা যত্ন করছিস , এখন তো আবার তার মাথার উকুন ও বেছে দিচ্ছিস। বাহ্ ! এই তুই একজন পুলিশ অফিসার?”

-” আপনি বারবার পুলিশ অফিসার তুলে প্রশ্ন কেন করছেন বাবা? পুলিশ অফিসার আমি বাসার বাইরে। কিন্তু বাসায় আমি একজন সাধারণ মানুষ।আর মানুষ হয়ে অন্য একজন মানুষের সেবা করাও একটা ডিউটির মধ্যে পড়ে।”

-” তুই আমাকে জ্ঞান দিচ্ছিস শাফি? এই গাইয়া মেয়ের জন্য তুই আমার মুখে মুখে তর্ক করছিস? তুই আর তোর মধ্যে নেই শাফি। আমার কি মনে হয় জানিস? মেয়েটা তোকে কালো যাদু করেছে।”

-” আমি আপনাকে আগেও বলেছি বাবা , আর এখনো বলছি, মেয়েটা আমার দায়িত্ব। আমি শুধু আমার দায়িত্ব পালন করছি।আপনার মতো আমি ও তাকে আমার স্ত্রী হিসেবে মেনে নেই নি ,আর না নিতে পারবো।”

-” দেখ শাফি! তোর বয়স টা আমি ও পার করে এসেছি।কোনটা দায়িত্ব, কোনটা ভালোবাসা সেটা তোর থেকে আমার শিখতে হবে না শাফি?”

-” শফিকুল দেওয়ান এর চিৎকার চেঁচামেচি শুনে নাজমা দেওয়ান কিচেন থেকে হাত মুছতে মুছতে উপরে এসে বললো , কি হয়েছে? চিৎকার চেঁচামেচি করছো কেন? মনে হচ্ছে বাসায় যেনো ডাকাত পড়েছে।”

-” চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ যতোক্ষণ শুনতে পেয়েছো , ততোক্ষণ নিশ্চয় এটাও শুনতে পেয়েছো কেন চিৎকার চেঁচামেচি করছি?”

-” হ্যাঁ শুনতে পেয়েছি দেখেই এসেছি।শাফি ভুল তো কিছু করে নি।শাফি আর যায় হোক তোমার মতো অমানুষ নয়। তুমি কোনোদিন আমাকে বুঝেছো বলো? না কোনদিন আমার কোনো কাজে হেল্প করছো। কোনদিন তো এক গ্লাস পানি ঢেলে ও খাও নি। এমনকি আমার প্রেগন্যান্সির সময় টাতে তোমাকে আমার পাশে পাই নি। অথচ এই সময় টাতে সব মেয়েরা চায় তাদের স্বামী তার পাশে থাকুক।তাকে সময় দিক,তাকে বুঝুক। কিন্তু তুমি মনে করো মেয়েদের কাজে সাহায্য করলে পুরুষের জাত চলে যায়‌।তারা মেরুদণ্ডহীন হয়ে যায়। অথচ স্ত্রীর কাজে সাহায্য করা , তাদের সাথে খুনসুটি তে মেতে থাকা , হাসিঠাট্টা করা সুন্নত। অবশ্য তুমি তো নামাজ কালাম’ই পড়ো না।তোমাকে আর হাদিসের কথা বলে কি লাভ?ম’রা’র তো কোনো ভয় নেই তোমার।থাকলে কি আর একটা পবিত্র সম্পর্ক ভাঙ্গার জন্য সবসময় নিজের ছেলেকে ফোর্স করতে পারতে?”

-” তুমি কিন্তু অনেক বেশি কথা বলছো নাজমা।”

-” তোমাকে বেশি কথা আমি কখনো কোনোদিন ও বলি নি।এই বাড়ি ,ধন দৌলত সব আমার নিজের হ‌ওয়ার পরেও আমি কিন্তু কখনো নিজের বলে দাবি করি নি।যদি বেশিই বলতাম তাহলে তোমার মতো অমানুষের সংসার করতাম না। কিন্তু আমি সেসব কিছুই করি নি।কারণ কি জানো? আমার কাছে টাকা পয়সার থেকে সম্পর্কের মূল্য অনেক বেশি। কিন্তু তোমার কাছে সম্পর্কের কোনো মূল্যে নেই।”

-” নাজমা দেওয়ান এর কথার পিঠে শফিকুল দেওয়ান কোনো কথা না বলে চুপচাপ তার রুমে চলে গেল।তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে নাজমা দেওয়ান ও কিছু না বলে চোখের পানি মুছে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।সে রাতে আর কারো খাওয়া হলো না। অবশ্য নাজমা দেওয়ান ডাইনিং টেবিলে সবার খাবার গুছিয়ে রেখে এসেছিলেন। কিন্তু কেউ’ই খেতে আসে নি। শাফায়াত নিচে ডিনারের জন্য গিয়ে দেখে যেরকম খাবার সেরকম ই রয়েছে।যা দেখে সে নিজেও রুমে চলে এলো।সব কিছুতে কেন জানি তার বিরক্ত লাগছে। শাফায়াত বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বিরক্তি তে এপাশ ওপাশ করতে লাগলো।সে বুঝে উঠতে পারছে না বিরক্তির কারণ।সে নিজের চুল টেনে ধরে বললো, তার মানে আমার সব বিরক্তির কারণ কি ঐ গাইয়া মেয়েটা? উফ্ এই বেয়াদব অ’স’ভ্য মেয়েটা আমাকে জ্বালিয়ে মারছে। কিছুতেই আমাকে শান্তি দিচ্ছে না। এতো দিন আমার সাথে থেকে আমাকে জ্বালিয়ে মেরেছে, আর আজ আমার দূরে থেকেও আমাকে জ্বালিয়ে মারছে। ধ্যাত আমি কেনো ভাবছি ঐ বেয়াদব অ’স’ভ্য মেয়েটার কথা। আমি তো নিজেই চেয়েছি ও আমার থেকে দূরে থাকুক। এজন্য সকালে মেয়েটা কে ভয় দেখিয়েছি। মেয়েটা আমার সাথে নেই, আমার তো খুশি হবার কথা। আমার শান্তি করে ঘুমোনোর কথা। অথচ আমি না পারছি মেয়েটার কথা ভুলতে,আর না পারছি শান্তি করে ঘুমোতে। মনটা বড্ড অশান্ত লাগছে আমার।তাহলে কি বাবার কথায় সত্যি হয়ে গেল। আমার মন কি ঐ বেয়াদব অ’স’ভ্য মেয়েটার হয়ে গেল?”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।।

#এই_মন_তোমারি

#পর্ব_১৭

#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন

-“শাফায়াত বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বিরক্তি তে এপাশ ওপাশ করতে লাগলো।সে বুঝে উঠতে পারছে না বিরক্তির কারণ।সে নিজের চুল টেনে ধরে বললো, তার মানে আমার সব বিরক্তির কারণ কি ঐ গাইয়া মেয়েটা? উফ্ এই বেয়াদব অ’স’ভ্য মেয়েটা আমাকে জ্বালিয়ে মারছে। কিছুতেই আমাকে শান্তি দিচ্ছে না। এতো দিন আমার সাথে থেকে আমাকে জ্বালিয়ে মেরেছে, আর আজ আমার দূরে থেকেও আমাকে জ্বালিয়ে মারছে। ধ্যাত আমি কেনো ভাবছি ঐ বেয়াদব অ’স’ভ্য মেয়েটার কথা। আমি তো নিজেই চেয়েছি ও আমার থেকে দূরে থাকুক। এজন্য সকালে মেয়েটা কে ভয় দেখিয়েছি। মেয়েটা আমার সাথে নেই, আমার তো খুশি হবার কথা। আমার শান্তি করে ঘুমোনোর কথা। অথচ আমি না পারছি মেয়েটার কথা ভুলতে,আর না পারছি শান্তি করে ঘুমোতে। মনটা বড্ড অশান্ত লাগছে আমার।তাহলে কি বাবার কথায় সত্যি হয়ে গেল। আমার মন কি ঐ বেয়াদব অ’স’ভ্য মেয়েটার হয়ে গেল?না ! না । এটা কিছুতেই হতে পারে না। ও গড! আমি কেন ভাবছি মেয়েটার কথা? সে তো আমাকে ছেড়ে দিব্যি ভালো রয়েছে। আমি যে রাতে খাই নি , সে খেয়াল ও নেই তার।হু আবার আমাকে তার স্বামী বলে দাবি করে।শুনেছি বাঙ্গালী মেয়েরা নাকি স্বামী কে অনেক ভালোবাসে , শ্রদ্ধা করে। স্বামী না খেয়ে থাকলে স্ত্রী ও নাকি খায় না। কিন্তু মেয়েটা তো ঠিকই খেয়েছে।আরে আমি না হয় তাকে স্ত্রী হিসেবে মানি না। কিন্তু সে তো আমাকে স্বামী হিসেবে মনে প্রাণে মেনে নিয়েছে তাই না? সে কিভাবে পারলো আমাকে ছেড়ে নিজে খেয়ে নিতে? ধ্যাত আমি আবারো ভাবছি মেয়েটার কথা? আমি আর একবার ও মেয়েটার কথা ভাববো না বলে শাফায়াত বিছানার এপাশ ওপাশ করতে লাগলো। কিন্তু ঘুম যেন তার সাথে আজ লুকোচুরি খেলছে। কিছুতেই তার চোখে ঘুম ধরা দিতে চায়ছে না। শাফায়াত বিছানা থেকে উঠে কিছুক্ষণ বসে থেকে ও নিজেকে শান্ত করতে পারলো না।এক পর্যায়ে সে বিছানা থেকে নেমে গুটিগুটি পায়ে নাজমা দেওয়ান এর রুমের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো।সে ভেবেছিলো হয়তো সূরা ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু শাফায়াত দরজার সামনে এসে দেখলো রুমের লাইট এখনো অফ হয় নি।তার আম্মি , সূরা দুজনেই জেগে রয়েছে। নাজমা দেওয়ান এর হাতে খাবারের প্লেট রয়েছে।তার চেহারার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে সে কোনো কিছুর জন্য বিরক্ত হয়ে আছে সূরার উপর। সে বিরক্তি নিয়ে বললো,

-” অনেক রাত হয়েছে।খেয়ে নে মা।সেই সন্ধ্যায় একটু জাও ভাত খেয়েছিস। ক্ষুধা লাগে নি তোর?”

-” লেগেছে। কিন্তু আমি খাবো না মা। আপনি বললেন পুলিশ রাতে খায় নি। পুলিশ না খেলে আমি ও খাবো না। শ্বশুর আব্বা রাগ করে খায় নি বলে আপনি ও খান নি। আবার সুন্দর ব্যাডা মানুষ ও রাগ করে খায় নি,তাহলে আমি কেন খাবো মা?”

-” এবার কিন্তু তোর পিঠে খুন্তির মার পড়বে সূরা। খাওয়ার ব্যাপারে আমি শাফি, নুজাইফা কেও ছাড় দেই না।খাবারে অনিয়ম করলে আচ্ছা করে কান মলে দেই। এখন কিন্তু তোর সাথে ও সেটা করবো, যেটা শাফি , নুজাইফার সাথে করি।”

-” মার খাওয়ার অভ্যাস আছে আমার মা।চাচির সংসারে থাকতে প্রতিনিয়ত মার খেতে হয়েছে।আপনি মারেন মা। আমি সয়ে নিতে পারবো ।”

-” নাজমা দেওয়ান কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার চোখ যায় দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা শাফায়াতের দিকে। তিনি শাফায়াত এই সময়ে তার রুমে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, তুই এতো রাতে আমার রুমে?”

-” শাফায়াত কি বলবে বুঝতে না পেরে মাথা চুলকে আমতা আমতা করে বললো, আম্মি আসলে হয়েছে কি?”

-” হ্যাঁ বল কি হয়েছে?”

-” আসলে আম্মি আমার নীল রঙের একটা ফাইল খুঁজে পাচ্ছি না।”

-” তোর ফাইল তোর আলমারিতে থাকে। আমার রুমে কিভাবে আসবে?”ফাইলের নিশ্চয় হাত পা গজিয়ে যায় নি যে তারা হেঁটে হেঁটে আমার রুমে চলে আসবে। আমার রুমে তোর কোনো‌ ফাইল টাইল নেই ।যা ভাগ এখান থেকে।”

-” থাকতেও তো পারে আম্মি।এই যে দস্যি মেয়েটা সারাক্ষণ আমার রুমে ট‌ইট‌ই করে ঘুরে বেড়ায়।হতেও পারে মেয়েটা আমার রুম থেকে ফাইল এনে কোথাও ফেলে দিয়েছে।”

-” শাফায়াতের কথা শুনে সূরা চেঁচিয়ে বললো, সব মিছে কথা মা। আমি কারো কোন ফাইলে হাত দেই নি।আর হাত দিবো কিভাবে মা? আমি তো লুলা হয়ে আছি। পুলিশ শুধু শুধু আমার নামে বদনাম করছে।”

-” শাফায়াত তৎক্ষণাৎ সূরার দিকে তেড়ে এসে বললো, এই মেয়ে তুমি একদম চুপ থাকবে। তুমি যতো নষ্টের গোড়া। তোমার জন্যই সব হয়েছে।”

-” আমি কি করলাম পুলিশ?”

-” শাফায়াত সূরার হাত ধরে বললো , তুমি আমার সাথে রুমে চলো। তুমি যেহেতু ফাইল হারিয়েছো সেহেতু তোমাকে’ই ফাইল খুঁজে দিতে হবে।”

-” নাজমা দেওয়ান তৎক্ষণাৎ শাফায়াতের হাত ছাড়িয়ে বললো, ও কোথাও যাবে না।”

-” কেনো আম্মি?”

-” রাত প্রায় এগারোটা বাজতে চলেছে। তুই খাস নি বলে মেয়েটা এখনো খায় নি , মেডিসিন নেয় নি।তুই রুমে যা‌।আমি সূরা কে ভাত খাইয়ে মেডিসিন দিয়ে তারপর তোর রুমে গিয়ে ফাইল খুঁজে দিবো।”

-” নাজমা দেওয়ান এর কথা শুনে শাফায়াত নিজেকে নিজেই গালি দিয়ে বললো, তুই শুধু শুধু বাচ্চা মেয়েটাকে ভুল বুঝলি।তোর জন্য মেয়েটা না খেয়ে বসে আছে তার তুই কি না? ছিঃ ছিঃ এটা তোর কাম্য নয় শাফি।”

-” কি হলো যা? তুই ও গিয়ে কিছু খেয়ে নে।রাতে না খেয়ে থাকতে হয় না শাফি।”

-” আমার খেতে ইচ্ছে করছে না আম্মি।”

-” আমি তো সূরার জন্য পাতলা খিচুড়ি আর ডিম করেছি। কিন্তু তুই তো পাতলা খিচুড়ি খাস না।তোর ঝরঝরে খিচুড়ি পছন্দ। তুই বরং নিচে গিয়ে খাবার নিয়ে আয় ।আমি সূরাকে খাইয়ে দিয়ে তোকে ও খাইয়ে দিবো।”

-” একদিন পাতলা খিচুড়ি খেলে কিছু হবে না আম্মি।আমি না হয় আজ পাতলা খিচুড়ি’ই খেলাম।”

-” শাফায়াতের কথায় নাজমা দেওয়ান খুব খুশি হন।তিনি এক লোকমা খাবার সূরার গালে দিচ্ছেন অন্য লোকমা শাফায়াতের গালে। শাফায়াত সূরা দুজনে তৃপ্তি সহকারে খাবার খাচ্ছে এমন সময় নুজাইফা এসে বললো, বাহ্ আম্মি বাহ্ । নিজের ছেলে ছেলের ব‌উ কে খাইয়ে দিচ্ছেন ,আর আমি যে না খেয়ে আছি সেদিকে কারো খেয়াল নেই। আপনার ছেলে ছেলের বউ আপনার আপন হয়ে গেল আম্মি? আমার কথা এভাবে ভুলে গেলেন আম্মি?”

-” শাফায়াত দেখলো নুজাইফা বেশ রেগে আছে। চোখে পানি টলটল করছে। শাফায়াত নুজাইফা কে আরো রাগিয়ে দিতে বললো, তুই কবে আমাদের আপন ছিলি বল তো? তুই সত্যিই আমাদের নিজেদের কেউ না।তোকে তো আমরা ব্রীজের তলা থেকে কুড়িয়ে পেয়েছিলাম।”

-” নুজাইফা দৌড়ে এসে শাফায়াতের বুকে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি মেরে বললো, তুমি আমাদের পরিবারের কেউ না।তোমাকে তো আমরা বেদের মেয়েকে চাল দেওয়ার বিনিময়ে কিনে এনেছিলেন।”

-” শাফায়াত নুজাইফা কে এক হাতে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বললো, তাহলে তো আমি তোর ছোট তাই না।”

-” হ্যাঁ আজ থেকে আমাকে আপু বলে ডাকবে।”

-” যথা আজ্ঞা মহারানী ।”

-” নাজমা দেওয়ান এর তার ছেলেমেয়েদের খুনশুটি দেখতে বড্ড ভালো লাগছে। নাজমা দেওয়ান তিন জনের মুখেই খাবার তুলে দিচ্ছেন। তিনি শাফায়াত কে পাতলা খিচুড়ি তৃপ্তি সহকারে খেতে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছেন।যে ছেলেটা পাতলা খিচুড়ি দেখলে নাক ছিটকায় সে আজ পাতলা খিচুড়ি তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে ব্যাপার টা বেশ ভালো লাগে নাজমা দেওয়ান এর ।তিনি মনে মনে বললেন , আমি জানি শাফি সূরা একটু একটু করে তোর মনের মালকিন হয়ে যাচ্ছে।সূরার শূন্যতা তুই উপলব্ধি করতে পেরেছিস। আর তাই তো ফাইলের বাহানায় সূরা কে নিজের কাছে নিয়ে যেতে এসেছিস। কিন্তু আমি সূরা কে যেতে দিবো না। তুই আগে সূরা কে পুরোপুরি উপলব্ধি কর।সূরার মনটা আগে তোর হোক। তুই যেদিন পুরোপুরি বুঝতে পারবি সূরার মন টা যেনো সূরার নয়, মনটা তোরি , সেদিন আমি নিজে সূরা কে তোর হাতে তুলে দিবো।।

চলবে ইনশাআল্লাহ।।