এই মন তোমারি পর্ব-৪০ এবং শেষ পর্ব

0
426

#এই_মন_তোমারি [ মহা মিলন পর্ব😘]

#পর্ব_৪০

#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন

-” তরীর বাচ্চা দেখে সূরার চোখ জ্বলতে লাগলো। সূরা ওয়াশরুমে চলে গেল। সূরা ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি ছিটা দিচ্ছে এমন সময় খট করে ওয়াশরুমের দরজা লাগানোর শব্দ হয়।সূরা অয়নার মধ্যে শাফায়াত কে ওয়াশরুমের দরজা লাগাতে দেখে তার বুক ধুক করে উঠে।সে তড়িঘড়ি করে চোখে মুখে পানি দিয়ে শাফায়াতের পাশ কাটিয়ে চলে আসার আগেই শাফায়াত হ্যাঁচকা টানে সূরা কে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে সূরার অধরে নিজের অধর মিলিয়ে দিলো।যেনো দশ বছরের সমস্ত রাগ ক্ষোভ সূরার অধরের উপর দিয়ে যাচ্ছে। সূরা জোর পূর্বক নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।গালে কিছুটা নোনতা স্বাদ অনুভব করলো। বুঝতে পারলো তার ওষ্ট ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছে তার সামনে থাকা বিধ্বস্ত পুরুষের দন্ত দ্বারা।সূরা আর এক মুহূর্ত দেরি না করে শাফায়াতের গালে ঠাস ঠাস করে থা’প্প’ড় মে’রে দিয়ে বললো,

-” হাউ ডেয়ার ইউ? আপনার সাহস হয় কিরে আমার সাথে এমন অ’স’ভ্য’তা নোং’রা’মি করার?একটা দিয়ে হয় না আপনার তাই না।বাইরে ব‌উ বাচ্চা রেখে এখন এইখানে এসেছেন অন্য মেয়ের সাথে অ’স’ভ্য’তা করতে? ছিঃ লজ্জা হওয়া উচিত আপনার। আপনি জানেন এই মুহূর্তে আমি চাইলে আপনার ঠিক কি করতে পারি?”

-” হ্যাঁ জানি তো।আমি তোমার অধরে লাভ বাইট দিয়েছি । তুমি চায়লে আমার অধরে ও লাভ বাইট দিতে পারো।”

-” ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট মিস্টার শাফায়াত দেওয়ান।”

-” বাহ্! এতো চেঞ্জ? হাউ অদ্ভুত!কানাডা গিয়ে নিজেকে এতোটাই পরিবর্তন করে ফেলেছো যে বরের নাম ধরে ডাকতে ও দ্বিধাবোধ করছো না?”

-” এক্সকিউজ মি মিস্টার ? আপনি ভুল ভাবছেন।আমি আপনাদের সূরা নয়।আ’ম শানজানা চৌধুরী। ডটার অফ শাহিন চৌধুরী। শাফায়াত তৎক্ষণাৎ সূরার কোমর জড়িয়ে ধরে সূরার কপালে গভীর চুমু দিয়ে বললো ,

-“নিজেকে খুব চালাক মনে করেন তাই না মিস সূরা উফ্ সরি মিস শানজানা চৌধুরী? আপনি কি মনে করেছেন নিজের নাম , ভাষা চেঞ্জ করলেই আমি আপনাকে চিনতে পারবো না?দশ বছর আগে আমার সাথে থেকে আমাকে জ্বালিয়ে মেরেছো।আর দশ টা বছর আমার থেকে দূরে থেকে আমাকে জ্বালিয়ে মেরেছো। প্রতিনিয়ত তোমার দহনে পুড়তে পুড়তে ছাই হয়ে গিয়েছি।কতো রাত যে নির্ঘুমে কাটিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। তোমার জন্য আমার সব কিছু বিসর্জন দিয়েছি। এমনকি পুলিশের চাকরি ও ছেড়েছি। সিগারেট কে নিত্যদিনের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছি। রাতের পর পর তোমার ছবি বুকে নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছি।এখন কি চাও আমি মা’রা যাই? শাফায়েতর কথায় সূরা নরম হলো।গলা ভিজে এলো তার।সে ভেজা কণ্ঠে বললো,

-” আপনার ভালোবাসার মানুষ , আপনার স্ত্রী থাকতে আপনি অন্য কারো কথা ভেবে রাত কাটিয়েছেন কেনো? আর সে কেমন স্ত্রী যে নিজের স্বামী কে নিজের আঁচলে বেঁধে রাখতে পারে নি?”

-” সূরার এহেন কথায় শাফায়াত যেনো প্রাণ ফিরে পেলো।সে সূরা কে নিজের বক্ষ পিঞ্জরে আবদ্ধ করে বললো, তুমি বড্ড বোকা মেয়ে।কোনটা ভালোবাসা কোনটা নাটক তুমি বুঝো নি মেয়ে।আরাব তোমাকে পড়াতে না আসলে আমি ও হয়তো উপলব্ধি করতে পারতাম না যে আমি ঠিক কতোটা ভালোবাসি তোমাকে।আমি তোমাকে আমার ভালোবাসার কথা জানানোর পর হুট করে তোমার পরিবর্তন আমি মেনে নিতে পারছিলাম না।আমি তরীর সাথে মিলে মিথ্যা বিয়ের প্ল্যান করেছিলাম। তোমার মনে আছে সেদিন তোমার একটা লাল শাড়ি পছন্দ হয়েছিলো? সেই লাল শাড়ি , লাল চুড়ি, লাল টিপ এখনো আমার আলমারির তে যত্ম করে তুলে রেখেছি।রোজ রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে আমি তোমাকে ঐ লাল টুকটুকে শাড়ি পরা অবস্থায় কল্পনা করতাম। তুমি আমার কল্পনায় আসতে। তোমাকে না ছুঁতে পারার যন্ত্রণা অনুভব করতাম। সেই যন্ত্রণা তুমি বুঝতে পারবে না মেয়ে বলে চোখের পানি মুছলো শাফায়াত।”

-” তার মানে সেদিন তরী আপুর সাথে আপনার বিয়ে হয় নি ?”

-” না। তরীর বয়ফ্রেন্ড ছিলো।আমার বাবার মতো তরীর বাবাও ছিলো স্বার্থ লোভী।তাসিন বেকার ছিলো তাই তরীর বাবা তাসিনের সাথে তরীর সম্পর্ক মেনে নেয় নি।কথা ছিলো শুক্রবার আমাদের বাড়িতে আমার সাথে তোমার বিয়ে হবে ।আমার তরীর সাথে তাসিনের।এই ব্যাপার টা কিভাবে যেন তরীর বাবা জেনে যায়।তাই তরী বাধ্য হয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই তাসিনের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে নেয়।আর তুমি ও বোকার মতো আমাদের নাটক সত্যি মনে করে আমার উপর অভিমান করে আমার বুক খালি করে দিয়ে চলে যাও।”

-” সবকিছু শুনে যেনো সূরা পাথর হয়ে যায়।সে দুহাতে শাফায়াত কে আঁকড়ে ধরে বললো, আমি সবার ভালোর জন্যই নাজমা মঞ্জিল ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম পুলিশ।”

-” শাফায়াত সূরার চোখের পাতায় চুমু দিয়ে বললো, হ্যাঁ আমি জানি। মাজেদা খালা সবটা বলেছে আমাকে।আমার বাবা তোমাকে এই বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করেছিলো। কিন্তু জানো আমার বাবা এখন অনেক ভালো হয়ে গিয়েছে।সে তার কাজের জন্য অনুতপ্ত। অসুস্থ হ‌ওয়ার আগে বাবা বারবার বলতো, আমি যদি একটা বার মেয়েটার দেখা দেতাম , আমি মেয়েটার পায়ে ধরে হলেও ক্ষমা চাইতাম।”

-” তার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই।তার দেওয়া আঘাত আমাকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ।”

-” জানো তুমি যাওয়ার পর আমি তোমাকে কতো খুঁজেছি। ইনফ্যাক্ট আমাদের সবার কাছে তুমি মৃত ছিলে। সেদিন রাতে তুমি যে বাসে ছিলে সেই বাসের অত্যন্ত বাজে ভাবে এক্সিডেন্ট হয়।বাসে থাকা কেউই জীবিত ফিরে আসে নি।তাই সবাই ধরে নিয়েছিলো তুমি মারা গিয়েছো। কিন্তু তুমি সবার কাছে মৃত থাকলেও আমার কাছে জীবিত ছিলে। তুমি আমার হৃদয়ে ছিলে।আমি তোমাকে অনুভব করতে পারতাম। একদিন রাতে একটা আননোন নাম্বার থেকে কল আসে।আমি কল রিসিভ করতে না চাইলে ও রিসিভ করি।তখন মনে হচ্ছিল যেনো আমি তোমার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম। কিন্তু সাথে সাথে কল কেটে যায়।আমার ধ্যান জ্ঞান সবটা জুড়ে তুমি ছিলে। তুমি ছাড়া দ্বিতীয় কারো প্রতি আকৃষ্ট হতে পারি নি আমি।”

-” তাহলে ঐ‌ বাচ্চাটা যে আপনাকে বাবা বলে ডাকলো? কে ঐ বাচ্চা টা?”

-” এটা তরী আর তাসিনের ছেলে তানভীর। তানভীর খুব ছোট থাকতে তাসিনের এক্সিডেন্টে হয়। ঘটনাস্থলে’ই তাসিন মারা যায়। ছোট তানভীর মুখে বাবা ডাক শোনার ও সৌভাগ্য হয় নি তাসিনের।তার আগেই সে এই পৃথিবীর ছেড়ে চলে যায়।সিজদা কখনো আমাকে বাবা আবার কখনো বড় আব্বু ডাকে।সিজদার দেখাদেখি তানভীর ছোট বেলা থেকে আমাকে বাবা বলে ডাকে।আমি ও আর দ্বিমত করি নি। নিজের বাচ্চাদের মুখে কখনো তো আর বাবা ডাক শোনার সৌভাগ্য হবে না তাই বোনের , ফ্রেন্ডের বাচ্চার মুখে বাবা ডাক শুনে কলিজা ঠাণ্ডা করতে হয়।ঐ যাকে বলে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো আরকি!”

-” সূরা শাফায়াতের বুকে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি দিয়ে বললো, আমি যখন বাচ্চা চেয়েছি তখন আপনি বলেছেন আমি ছোট , আমি নিজেই বাচ্চা , ব্লা ব্লা।আর এখন যে নিজে বুড়ো হয়ে গিয়েছেন তার বেলায়?”

-” আমি বুড়ো হয়ে গেলে ও ভালোবাসা কিন্তু বুড়ো হয়ে যায় নি মিস।এখনো যথেষ্ট স্ট্রং আছি। তুমি চায়লে হালি হালি বাচ্চা ও পয়দা করতে পারবো।”

-” হালি হালি বাচ্চার কোনো প্রয়োজন নেই।আমার একটা ছোট্ট সাফ‌ওয়ান হলেই চলবে।”

-“উফ্ আমার বাচ্চা ব‌উ টা দেখি অনেক বড়ো হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তুমি এখন আর আগের সূরা ন‌ও। একজন নামকরা ডক্টর ।শানজানা চৌধুরী।তো মিস শানজানা চৌধুরী এই দশ বছরে আপনার জীবনে কেউ আসে নি? আই মিন সিট খালি আছে আপনার?”

-” আমি নাজমা মঞ্জিল থেকে বেরিয়ে কিছু বখাটে ছেলেদের খপ্পড়ে পড়ে যায়। তাদের হাত থেকে বাঁচতে বাসে উঠি। কিন্তু সেখানেও একই অবস্থা।বাধ্য হয়ে বাস থেকে নেমে যায়।আর সেই ছেলেগুলো আমার পিছু নেয়।এক পর্যায়ে দৌড়াতে দৌড়াতে আমি এক ভদ্রলোকের গাড়ির সামনে গিয়ে পড়ি। সেই মানুষটা আমাকে নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে।আমাকে হসপিটালে এডমিট করা যায়।যে ডক্টর আমার ট্রিটমেন্ট করে তিনি আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন।আমি নাকজ করে দেয়। এরপর আমি পড়াশুনার জন্য কানাডা চলে যায়।শুনেছি আমার কানাডা যাওয়ার পর আমার নতুন বাবা মা আমার অতীত সম্পর্কে তাকে জানিয়ে দেয়। এরপর তিনি নাকি আর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন নি। এরকম অসংখ্য প্রস্তাব এসেছে।আমার সিনিয়র ডক্টর , বিসিএস ক্যাডার ,ব্যাংকার, অনেক প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু তাদের কে আমার ঠুনকো মনে হয়েছে।”

-” তুমি রাজি হ‌ও নি কেনো? সুন্দরী রমণীর সিঙ্গেল থাকা উচিত নয় ।যখন তখন অঘটন ঘটে যেতে পারে বলে শাফায়াত সূরার অধরে নিজের অধর মিলিয়ে দিয়ে মধু সুধা পান করতে লাগলো।সূরা ও শাফায়াতের সাথে তাল মেলাতে লাগলো।এক পর্যায়ে সূরা শাফায়াতের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, #এই_মন_তোমারি ছিলো ।আর সারাজীবন থাকবে ও । দ্বিতীয় কাউকে এই মনের উঠোনে কিভাবে ঠাঁই দিবো বলো তো?”

-” তাহলে কেনো এতো কষ্ট দিলে?কেনো আমার থেকে দশটা বছর কেড়ে নিলে?”

-” এতো দিনের জমে থাকা সব কষ্ট ভালোবাসা আদর দিয়ে দূর করে দিবো সুন্দর ব্যাডা মানুষ।”

-” আমার কিন্তু একটু ভালোবাসা হলে পোষাবে হবে।দশ দশ টা বছর ব‌উ ছাড়া কাটিয়েছি । অনেক সুখ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এখন আমার…

-” একটা সুখী পরিবার চায় তাই তো? আই মিন আমাদের ছোট্ট পরিবার পরিপূর্ণ করার জন্য ছোট্ট সাফ‌ওয়ানের আগমন চাও তাই তো?”

-” হ্যাঁ ।বাট তুমি কিভাবে আমার মনের কথা বলে দিলে?”

-” কারণ মনটা যে আমারি।।”

☘️🍀 সমাপ্ত🍀🍀