এই মন তোমারি পর্ব-১৮+১৯

0
239

#এই_মন_তোমারি

#পর্ব_১৮

#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন

-” নাজমা দেওয়ান সবাইকে খাইয়ে দিয়ে নিচে প্লেট রাখতে যায়। শাফায়াত এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে রুমে নুজাইফা ও নাই। শাফায়াত এই সুযোগে সূরার দিকে এগিয়ে এসে সূরার হাত ধরে বললো, ঘুমোবে , রুমে চলো ।”

-” আপনি অনেক খারাপ একটা লোক।আমি যাবো না।”

-” তুমি তো আমাকে স্বামী হিসেবে মানো তাই না?”

-” সূরা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।”

-” তাহলে আমি খারাপের কি করেছি বলো তো? তোমাকে শুধু চুমু দিয়েছি। ইটস্ নরমাল। চুমু দিলে স্বামীরা খারাপ হয়ে যায় না গাধা। এবার তো চলো।

-“আমি যাবো না।”

-” কতো বড় বেয়াদব মেয়ে। বড়দের মুখে মুখে তর্ক করো? তুমি চায়ছো আমি তোমাকে কোলে করে নিয়ে যাই তাই না মেয়ে ?”

-” আমি কখন বললাম আমাকে আপনি কোলে করে রুমে নিয়ে যান। আমি তো বলছি আমি আপনার সাথে যাবো না। আমি মায়ের সাথে থাকবো।”

-“ওকে চলো তাহলে বলে শাফায়াত সূরা কে কোলে তুলার আগেই নুজাইফা বললো,

-” ভাইয়া ভাবিমনি কখন বললো ‌সে তোমার কোলে উঠতে চায়?”

-” তুই এখনো যাস নি?”

-” আমি তো বেলকনিতে ছিলাম। তুমি নাকি ভাবি মনি কে তোমার স্ত্রী হিসেবে মানো না।”

-” শুধু আমি কেনো পৃথিবীর কোনো পুরুষ’ই এই বেয়াদব অ’স’ভ্য মেয়ে কে নিজের স্ত্রী হিসেবে মানতে পারবে না‌।”

-” ও তাই নাকি? যাকে স্ত্রী হিসেবে মানো না,তাকে তোমার রুমে নেওয়ার জন্য এতো পাঁয়তারা করছো কেন?”

-” আমার দায়িত্ব পালন করছি। তাছাড়া তুই খুব ভালো করে জানিস আম্মি নিজেই অসুস্থ্য। মেয়েটা এখানে থাকলে আম্মির সমস্যা হবে।”

-” ওহ্ তাই বুঝি?”

-” তোর এতো বোঝাবুঝির কোনো প্রয়োজন নেই। তুই যা ভাগ এখান থেকে।”

-” আমি তো আজ থেকে এখানেই থাকবো।”

-” এখানেই থাকবি মানে?”

-” যতোদিন না ভাবিমনি পুরোপুরি সুস্থ্য হচ্ছে ততোদিন আমি এখানেই ‌থাকবো।”

-” ঠিক আছে। আমি যাচ্ছি তাহলে। মেয়েটার খেয়াল রাখিস বলে শাফায়াত রুমের বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই নাজমা দেওয়ান মলিন মুখে রুমে প্রবেশ করে।তাকে দেখে শাফায়াত বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? কি হয়েছে আম্মি?”

-” তোর বাবা আমার উপর রাগ করে সেই রুমের দরজা বন্ধ করেছে আর এ পর্যন্ত দরজা খুলে নি।রাতে খায়
ও নি। মানুষ টার রাতের খাবার খেয়ে ঔষধ খেতে হয়। ঔষধ ও খায় নি। ঔষধ না খেলে ও তার হার্টের সমস্যা দেখা দিবে।হয়তো আজ মানুষ টাকে আমি একটু বেশিই বলে ফেলেছি বলে চোখের পানি মুছলেন নাজমা দেওয়ান।”

-” নাজমা দেওয়ান এর চোখের পানি সহ্য হলো না সূরা। মানুষ টা যে তাকে বড্ড বেশি ভালোবাসে।সূরা বিছানা থেকে নেমে খোঁড়া তে খোঁড়া তে এসে নাজমা দেওয়ান কে জড়িয়ে ধরে তার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো, আমি বুঝতে পারছি মা আমার জন্য এই পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি হয়ছে।আব্বা আপনার সাথে কোট করছে।আমি এই বাড়ি থেকে চলে গেলে হয়তো আপনারা ভালো থাকবেন মা। আমি বরং এই বাড়ি থেকে চলে যায় মা। আমার জন্য আপনাদের অশান্তি হোক এটা আমি চাই না মা।”

-” তুই ইদানিং বড়দের মতো কথা বলতে শুরু করেছিস সূরা। ছোট মানুষ ছোট মানুষের মতো থাকবি।আর যদি কখনো এই বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কথা বলিস ,তাহলে আমি তোকে অনেক মার মারবো সূরা।”

-” যে হাতের খাবার তৃপ্তি সহকারে খাই সে হাতের মার ও তৃপ্তি সহকারে খেতে পারবো মা। আমার জন্যই তো আব্বা রাতে খায় নি তাই না? আপনি খাবার নিয়ে আসেন মা। আমি নিজে আব্বার খাবার নিয়ে যাবো। দরকার হলে তার হাতে পায়ে ধরবো।”

-” শফিকুল এমনিতেই তোকে পছন্দ করে না। তুই খাবার নিয়ে গেলে সে আরো রেগে যাবে মা।”

-” নাজমা দেওয়ান এর কথা শুনে নুজাইফা বললো, ভাবি মনি যখন বলছে দেন না আম্মি।ভাবি মনি যদি সবসময় বাবার থেকে দূরে দূরে থাকে ,তাহলে বাবা কখনোই ভাবি মনি কে নিজের পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিবে না আম্মি। বরং ভাবি মনি যদি ‌বাবার আশেপাশে থাকে ,তার খেয়াল রাখে, বাবার আস্তে আস্তে ভাবি মনির প্রতি মায়া সৃষ্টি হবে।আর সেই মায়া থেকে একসময় ভালোবাসার সৃষ্টি হবে।”

-” এটা অবশ্য তুই ঠিক বলেছিস। আমি আগে কখনো এমন টা ভেবে দেখি নি। ঠিক আছে আমি খাবার নিয়ে আসছি বলে নাজমা দেওয়ান নিচে চলে গেল।তার যাওয়ার সাথে সাথে শাফায়াত এসে নুজাইফার মাথায় চাটি মেরে বললো, ইদানিং খুব ভালোবাসা নিয়ে পড়ছিস মনে হয়? কি ব্যাপার ?সামথিং সামথিং?”

-” তেমন কিছু না ভাইয়া। পুলিশের বোন দেখে কেউ কোনদিন কথা বলার’ই সাহস পায় না। তোমার কাছে লুকোনোর কোন কিছুই নেই ভাইয়া। আমার একটা ছেলেকে ভালো লাগে। যদিও তার আমাকে ভালো লাগে কিনা এটা আমি জানি না।”

-” কে সেই ছেলে?”

-” সময় হলে জানাবো ভাইয়া।”

-” ঠিক আছে।”

-” এর‌‌ই মধ্যে নাজমা দেওয়ান রুমে খাবার নিয়ে প্রবেশ করে। সূরা এক হাতে খাবার নিয়ে শফিকুল দেওয়ান এর রুমে এসে দরজায় নক করে। কিন্তু ভেতর থেকে শফিকুল দেওয়ান এর কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যায় না দেখে সূরা আবারো দরজায় নক করে।এক পর্যায়ে শফিকুল দেওয়ান বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে দিয়ে তার সামনে সূরা কে দেখে বললো, তুমি কেনো এসেছো আমার রুমে? আমাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করেও তোমার শখ মেটেনি?”

-” আপনি ভুল ভাবছেন আব্বা। আমি আপনার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি।”

-” শফিকুল তৎক্ষণাৎ সূরার দিকে তেড়ে গিয়ে বললো, তোমার সাহস হয় কি করে আমাকে আব্বা ডাকার?”

-“ছোটবেলায় মা বাবা কে হারিয়েছি। আমাদের গ্ৰামের বড়লোক বাড়ির ছেলেমেয়েদের তাদের বাপ মা যখন হাত ধরে স্কুলে নিয়ে যেতো, আমি চেয়ে চেয়ে দেখতাম।ঐ ছেলেমেয়েদের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করতাম। তখন খুব আফসোস হতো আমার। ভাবতাম ইশ্ আমার বাবা মা যদি আমার সাথে থাকতো তাহলে আমি ও কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলে যেতে পারতাম। কিন্তু সবার ভাগ্যে তো আর সব কিছু থাকে না। আমার ভাগ্যে ও হয়তো বাপ মায়ের আদর ভালোবাসা লেখা ছিলো না।গ্ৰামের লোকেরা বলতো, বিয়ের পর নাকি শ্বশুর বাড়ি নিজের বাড়ি হয়ে যায়। নতুন করে বাবা মা পাওয়া যায়। সত্যিই আমি একজন মা পেয়েছি। মা কে যদি মা ডাকতে পারি ,তাহলে আপনাকে আব্বা ডাকতে পারবো না কেন? আপনার রাগ আমার সাথে আব্বা। খাবারের সাথে তো না। দরকার হলে আপনি আমাকে মা’রে’ন , কা’টে’ন । তবু ও আপনি না খেয়ে থাকবেন না আব্বা।মা বললো রাতের খাবার শেষ করে আপনার ঔষধ খেতে হবে। ঔষধ না খেলে তো আপনার অসুখ করবে। অতঃপর সূরা কিছু একটা ভেবে শফিকুল এর দিকে নিজের গাল এগিয়ে দিয়ে বললো, এই যে আমি আমার গাল এগিয়ে দিলাম আপনার কাছে। আপনি আমাকে চড় মারেন। তবু ও খাবার খান আব্বা।”

-” সূরার এহেন কথাবার্তায় শাফায়াত সহ সবাই অবাক হয়ে যায়। তাদের ধারণার বাইরে ছিলো যে সূরা এমনটা করতে বা বলতে পারবে। কিন্তু সূরার কথায় সবার মন গললেও পাষান শফিকুল দেওয়ান এর মন গলে না। তিনি সূরার হাত থেকে খাবারের প্লেট নিয়ে ছুড়ে মারলো ফ্লোরে। মূহুর্তের মধ্যে প্লেটে থাকা খাবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লো রুমের চারিদিকে।

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

#এই_মন_তোমারি

#পর্ব_১৯

#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন

-” সময় বহমান।সময় তার আপন গতিতে বয়তে থাকে। নদীর স্রোত যেমন কারো জন্য অপেক্ষা করে না, তেমনি সময় ও কারো জন্য অপেক্ষা করে না। আমাদের প্রত্যেকের কাছে সময় খুবই মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ।সময় হচ্ছে এমন একটা সম্পদ যা মহান আল্লাহ তায়ালা সবাইকে দিয়েছেন।সময় যা একবার অতিক্রম করলে তা আর কখনো ফিরে আসে না। ঠিক যেন চোখের পলকে দিন থেকে রাত,রাত থেকে দিন,দিন থেকে সপ্তাহ, সপ্তাহ থেকে মাস পেরিয়ে যায়।দেখতে দেখতে সবার জীবন থেকে হারিয়ে যায় বেশ কয়েকদিন।এই কয়েকদিনে সবার জীবনে’ই আমূল পরিবর্তন ঘটেছে।সূরা এখন পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে গিয়েছে।তার হাতের প্লাস্টার খুলে দেওয়া হয়েছে।সে এখন আগের মতো সারা বাড়ি ট‌ইট‌ই করে ঘুরে বেড়ায়।সবাই তাকে আপন করে নিয়েছে, শুধু মাত্র শফিকুল দেওয়ান ছাড়া।তিনি সূরা কে দুচোখে সহ্য করতে পারেন না। সেদিন অনেক আশা নিয়ে সূরা শফিকুল দেওয়ান এর জন্য খাবার নিয়ে যায়। কিন্তু শফিকুল দেওয়ান যখন খাবার না খেয়ে নিচে ফেলে দেয় সূরার কোমল হৃদয় ব্যথিত হয়ে উঠে।সূরা আর কখনো তার মুখোমুখি হয় নি। যথাসম্ভব তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছে। অবশ্য শাফায়াতের সাথে ও আগের থেকে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। শাফায়াত রোজ থানা থেকে ফিরে সূরা কে খাইয়ে দেওয়া , চুলে তেল দেওয়া, চুল আঁচড়ে বেনি করে দেওয়া সবটা করেছে।যেটা চোখ এড়িয়ে যায় নি নাজমা দেওয়ান এর। নাজমা দেওয়ান এতো দিন সূরা কে শাফায়াতের রুমে যেতে দেয়নি । অবশ্য শাফায়াত ও জোর করে নি। কিন্তু সে নিজে ঠিকই ছটফট করেছে ।তার বিধ্বস্ত চেহারা দেখে নাজমা দেওয়ান স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে তার ছেলে ব‌উকে ছাড়া ভালো নেই। তিনি ঠিক করেছেন আজ থেকে সূরা কে শাফায়াতের রুমে শিফট করবে। অনেক হয়েছে পরীক্ষা।তিনি তার ছেলের কষ্ট সহ্য করতে পারবেন না।”
______________________________________________
-” শাফায়াত সবে শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে এমন সময় সূরা গুটি গুটি পায়ে তার রুমে প্রবেশ করে। শাফায়াত সূরার দিকে লক্ষ্য করে দেখে সে একটা তাঁতের থ্রি পিস পরেছে। লম্বা ভেজা চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে।যা থেকে টুপটাপ করে পানি পড়ে ফ্লোর ভিজে গিয়েছে। শাফায়াত কিছুদিন আগে কাজের জন্য সিলেট গিয়েছিলো।সেখান থেকে সূরা আর নুজাইফার জন্য নিজে পছন্দ করে দুই টা তাঁতের থ্রি পিস নিয়ে আসে। শাফায়াত ভাবতে পারে নি থ্রি পিস টা এতো ভালো মানাবে সূরার গাঁয়ে। মেয়েটা শাড়ি , থ্রি পিস , কুর্তি যায় পরুক না কেন ,সবটা তে সুন্দর লাগে তাকে। শাফায়াত বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না সূরা দিকে।সে নেশাগ্রস্ত হয়ে যায়। শাফায়াত নিজেকে সামলে নিয়ে সূরা কে ধমক দিয়ে বললো, এতো সকালে শাওয়ার নিয়েছো কেন মেয়ে? অফিসে যাবে নাকি ভার্সিটি তে যাবে?”

-” কোনো উত্তর আসে না সূরার থেকে। শাফায়াত সূরার থেকে রেসপন্স না পেয়ে সূরার চুল নিজের হাতে পেঁচিয়ে তাকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বললো, সুস্থ্য হয়েছো একদিন ও হয় নি, এর মধ্যে আবার চায়ছো চুলের পানি গাঁয়ে বসিয়ে ঠান্ডা লাগিয়ে জ্বর বাঁধাতে? তুমি আমার একটা কথাও শোনো না মেয়ে।তোমাকে কতোবার বলছি গোসল করে ভেজা চুল ভালো করে মুছে নিবে।”

-” আমি জানি আপনি প্রথমে আমাকে বকা দেবেন তারপর ঠিকই নিজে আমার ভেজা চুল মুছে দিবেন।তাই তো আমি আর কষ্ট করে চুল মুছতে যাই না বলেই দাঁত দিয়ে জিভ কাটে সূরা।”

-” ওহ্! তাহলে এই ব্যাপার? আমাকে জ্বালানোর নতুন ফন্দি এঁটেছো তাহলে?আমাকে তোমার বেতনভুক্ত কর্মচারী মনে হয়?”

-” হ্যাঁ।”

-“এই যে এতো গুলো দিন থানা থেকে ফিরেই তোমার পিছনে সময় ব্যয় করেছি, খেটেছি, কয় টাকা বেতন দিয়েছো ? বলো কয় টাকা দিয়েছো?”

-” শাফায়াতের কথা শুনে সূরা কোনো উত্তর না দিয়ে শাফায়াতের পায়ের উপর পা দিয়ে দাঁড়িয়ে উঁচু হয়ে শাফায়াতের গলা জড়িয়ে ধরে সোজা শাফায়াতের অধরে নিজের অধর মিলিয়ে দেয়। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যায় শাফায়াত। শাফায়াত তৎক্ষণাৎ সূরার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।তার ঠোঁটে এখনো ভেজা ভেজা ভাব রয়েছে। সূরা এমনটা করবে শাফায়াতের ধারণার বাইরে ছিলো। অথচ সূরা স্বাভাবিক ভাবেই রয়েছে।যেনো কিছুই হয় নি। শাফায়াত অনেক টা রেগে গিয়ে সূরার দুই বাহু ধরে বললো, এটা কি করলে তুমি? তোমার সাহস হলো কি করে এমন টা করার? কে বলেছে তোমাকে এমন টা করতে? আম্মি?”

-” না ।আমি সিনেমায় দেখেছি নায়ক নায়িকার কাজ করে দেয় তাই নায়িকা উপহার স্বরূপ নায়কের সাথে এমনটা করে।এতে তো নায়ক খুশি হয় । কিন্তু আপনি রাগ করছেন কেন পুলিশ?”

-” তুমি বের হ‌ও আমার রুম থেকে।তোমাকে যেনো আমার রুমের আশেপাশে আর কখনো না দেখি বেয়াদব অ’স’ভ্য মেয়ে।আর শোনো আজ থেকে তোমার সিনেমা দেখা বন্ধ। সিনেমা দেখে এসব উল্টো পাল্টা জিনিস মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তোমার। বেয়াদব হয়ে যাচ্ছো দিন দিন।”

-” আপনার কাছে ভালো কবেই বা ছিলাম পুলিশ। আপনি তো সবসময়’ই আমাকে বেয়াদব বলেন। সেদিন তো আপনি আমার সাথে কতো খারাপ কাজ করলেন, ক‌ই আমি তো আপনাকে বেয়াদব বলি নি। তাহলে আমাকে কেন আপনি সবসময় বেয়াদব অ’স’ভ্য বলেন?”

-” শাফায়াত কিছু বলতে যাবে তার আগেই নুজাইফা এসে বললো, ভাবি মনি আম্মি তোমাকে নিচে ডাকছে ।”

-” ঠিক আছে চলো।”

-” সূরার যাওয়ার পানে তাকিয়ে শাফায়াত দরজায় লাথি মেরে বললো, ড্যাম ইট! মেয়েটা দিন দিন আমাকে দূর্বল করে তুলছে।ও আমার কাছে আসলেই বেসামাল হয়ে যাই আমি। একদিকে বাবা চায়ছে আমি মেয়েটাকে দূরে সরিয়ে দেই । আবার অন্যদিকে আম্মি চায়ছে মেয়েটাকে আমি ভালোবেসে কাছে টেনে নেয়। ওহ্ গড! কোনদিকে যাবো আমি? মেয়েটাকে দূরে ঠেলে দিলে আম্মি কষ্ট পাবে,কাছে টেনে নিলে বাবা কষ্ট পাবে। কিন্তু আমি কি করবো? আমার মন টা ইদানিং আমার কন্ট্রোলে নেই। শা’লা নিজের খেয়ে অন্যের কথা ভাবছে।এতো বেপরোয়া মন তো আমার কখনো ছিলো না। মেয়েটা কি সত্যিই আমার দায়িত্ব , নাকি ভালোবাসা?”
__________________________________

-” আজ মাসের এক তারিখ।আরাবের দিনে নিজের ভার্সিটি , পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় রাতে এসেছে সূরা কে পড়াতে।আরাব কে ড্র‌য়িং রুমে বসতে দেওয়া হয়েছে। এইখানে আরাব সূরা কে পড়াবে।আরাব নাজমা দেওয়ান এর পাশের ফ্ল্যাটে থাকলেও কখনো তাদের বাসায় আসে নি। নাজমা দেওয়ান এর বাসায় প্রথম বার আসা উপলক্ষ্যে তিনি বিভিন্ন রকমের নাস্তা তৈরি করছেন আরাবের জন্য। আরাব সবে কাঁটা চামচ দিয়ে একটা মিষ্টি মুখে তুলে নিয়েছে , এমন সময় সূরা কে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে দেখে তার হাত থেকে কাঁটা চামচ নিচে পড়ে যায়।সূরা বেগুনি কালারের থ্রি পিস পরেছে, চোখে হালকা কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিয়ে হাঁটু পর্যন্ত লম্বা চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে। সূরা কে দেখে আরাবের বুক ধুকপুক করে উঠলো।যা আগে কখনো হয়নি।তার মনে হচ্ছে সূরা তার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে।বড্ড হাঁসফাঁস লাগছে আরাবের নিজের কাছে।এক পর্যায়ে আরাব নিজেকে সামলে নিলো। নাজমা দেওয়ান এসে সূরার সাথে আরাবের পরিচয় করিয়ে দিলো। পরিচয় পর্ব শেষ হলে আরাব সূরা কে পড়াতে শুরু করলো। কিন্তু আরাবের পড়ানোর প্রতি কোনো মন নেই।তার বেহায়া মন বারবার সূরাকে এক নজর দেখতে চায়ছে। মন বলছে দেখ না আরাব দেখলে ক্ষতি কি?”

___________________________________

-” রাত দশটার সময় শাফায়াত এসে কলিং বেল দিলে মাজেদা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। শাফায়াত রুমে প্রবেশ করতেই দেখতে পায় , সূরা আজ সাজগোজ করেছে ।বেশ অন্যরকম লাগছে তাকে।সে নিজের মতো করে পড়ছে। তাদের থেকে একটু দূরে নুজাইফা বসে এক ধ্যানে আরাবের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।আর আরাব এক রাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে সূরার দিকে।যা দেখে হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসে শাফায়াতের।

চলবে ইনশাআল্লাহ।।