এই মন তোমারি পর্ব-২৮+২৯

0
237

#এই_মন_তোমারি

#পর্ব_২৮

#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন

-” ও আমার হবু বউ।আজ থেকে বিয়ের আগ পর্যন্ত ওর সব দায়িত্ব তোমার।ওর কখন কি প্রয়োজন সবটা দেখবে তুমি। আফটার অল শফিকুল দেওয়ান এর হবু বউ বলে কথা বলে শাফায়াত সূরা কে চোখ টিপ মেরে দিলো।”

-” ও আমার হবু বউ কথাটা বারংবার কানে বাজতে লাগলো সূরার।ভেতর টা দুমরে মুচড়ে শেষ হয়ে যেতে লাগলো।সে আর এক মুহূর্ত দেরি না করে কিচেনে চলে গেল কফি বানাতে।সূরার পেছন পেছন শাফায়াত ও কিচেনে প্রবেশ করলো। সূরা মনে মনে বললো ডানা কাটা পরী তোরে আজ এমন কফি খাওয়াবো যে তুই জীবনেও ভুলতে পারবি না। অতঃপর সূরা চুলার উপর একটা পাতিলে পানি দিলো গরম হ‌ওয়ার জন্য। আর তখনি শাফায়াত সূরা কে পেছন থেকে জড়িয়ে তার চুলের ঘ্রাণ শুঁকে বললো, জ্বলে বুঝি? দেখেছো তো আমার হবু বউ কতো হট ,কতো স্মার্ট? আমি তো তার থেকে চোখ ই ফেরাতে পারছি না।তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে গেছি আমি। কি সুন্দর চোখ, নাক , ঠোঁট, চুল সবমিলিয়ে জাস্ট অসাধারণ।”

-” সূরা তৎক্ষণাৎ শাফায়াত কে এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে বললো, বাহ্ মিস্টার বাহ্। আপনি গাছের তলায় ও খাবেন আবার গাছের আগায় ও খাবেন।এটা তো আমি হতে দিবো না।ঐ ডানা কাটা পরীর সৌন্দর্যে আপনি মুগ্ধ হয়েছেন ভালো কথা।তো যান না তার কাছে। কেনো আমার পিছু নিয়েছেন?”

-” শাফায়াত সূরার হাত চেপে ধরে বললো, তুমি কি সত্যিই আমাকে কখনো ভালোবাসো নি সূরা? সবটা তোমার অভিনয় ছিলো? তুমি শুধু একবার আমাকে সব সত্যি টা বলো। তুমি আমাকে যে ক্লু দিয়েছো আমি সেই ক্লু খুঁজে চলেছি। কিন্তু এই ক্লু খুঁজতে যে বড্ড সময় লেগে যাবে। আমার কি মনে হয় জানো এই সব মিথ্যা। তোমার মনে এখন আরাব বসবাস করছে।তাই তো আমার কাছে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্যে তুমি এই মিথ্যে নাটক সাজিয়েছো। শুধু মাত্র আমার থেকে দূরে চলে যাওয়ার জন্য।প্লিজ সোনা ব‌উ একবার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো যে , সুন্দর ব্যাডা মানুষ আমি আপনাকে ভালোবাসি।আপনি প্লিজ বিয়ে টা করবেন না।আমি যা করেছি সবটা মিথ্যা ছিলো।আরাবের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।সবটা আপনাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য ছিলো।বলো না সূরা। তুমি শুধু তোমার সুন্দর ব্যাডা মানুষ কেই ভালোবাসো, আর কাউকে না।বলো না তুমি যা বলেছো সব মিথ্যা ছিলো।

-” আমি কোনো মিথ্যা বলছি না পুলিশ।আমাকে সত্যিই বাধ্য করা হয়েছে।আর এ সব কিছুর পেছনে রয়েছে আব বাকিটা বলতে পারে না সূরা।তার আগেই শফিকুল দেওয়ান এসে বললো, এই মেয়ে তোমার কাকা ফোন করেছে। তোমার সাথে কথা বলতে চায়। সূরা শফিকুল দেওয়ান এর থেকে ফোন নিয়ে সালাম দিয়ে বললো,

-” আপনি কেমন আছেন কাকা? এতো দিন পরে আমার কথা মনে পড়লো আপনার?”

-” ভালো নেই রে মা।আজকে বাজার থেকে ফেরার সময় হুট করে কোথা থেকে একটা মোটরসাইকেল এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়।যার কারণে অনেক টা আঘাত লেগেছে রে মা।তবে এখন মোটামুটি সুস্থ্য আছি।তোর শ্বশুর অনেক ভালো রে মা। আমার এক্সিডেন্টের কথা শুনে আমাকে দশ হাজার টাকা দিয়েছে ঔষধ খাওয়ার জন্য।সূরা মনে মনে বললো, আপনি বড্ড ভালো মানুষ কাকা।তাই তো সবাইকে নিজের মতো মনে করেন।ভালো মানুষের আড়ালে থাকা অমানুষ কে আপনি চিনতে পারেন নি।আপনি যাকে ভালো বলছেন সেই ভালো মানুষ টায় নিজের স্বার্থের জন্য আপনার এক্সিডেন্ট করিয়েছে।আবার সবার কাছে ভালো সাজার জন্য আপনাকে টাকা ও দিয়েছে।তার এই অসুস্থতার জন্য সূরা নিজে দায়ী ভাবতেই সূরা কান্না করে দিলো।ফোনের অপর প্রান্ত থেকে সেলিম সূরার নাক টানার আওয়াজ পেয়ে বললো, তুই কান্না করছিস কেনো মা? আমার সেরকম কিছু হয় নি মা। আমি ঠিক আছি।”

-” আপনার সাথে কাটানো মূহুর্ত গুলো বড্ড মনে পড়ছে কাকা।বাবার ভালোবাসা পায় নি । কিন্তু আপনি আমাকে সেই ভালোবাসা দিয়েছেন। আপনার কাছে যে আমি ঋনী কাকা।আমি আমার নিজের সুখের জন্য আপনার কোনো ক্ষতি হতে দিবো না কাকা।”

-” কি আবোল তাবোল বকছিস মা? তোর জন্য আমার কেনো ক্ষতি হবে? বরং তোর বিয়ের পর আমাদের পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে।তোর শ্বাশুড়ি আমাকে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছে।এখন আর আমাদের না খেয়ে দিন কাটাতে হয় না।তোর চাচি সারাক্ষণ সূরা সূরা করে। তোদের বিয়ের প্রায় ছয় মাস হতে চললো এর মধ্যে একটা বার আমাকে দেখতে আসলি না।আমি কি এতোটাই পর হয়ে গিয়েছি?”

-” আসবো কাকা।আপনি নিজের খেয়াল রাখবেন।”

-” ঠিক আছে মা।রাখছি তাহলে ।ভালো থাকিস।”

-‘ হ্যাঁ কাকা বলার সাথে সাথে টু টু শব্দে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।সূরা শফিকুল দেওয়ান এর হাতে ফোন দেওয়ার সময় তিনি কিছু বললেন না। কিন্তু সূরা তার চোখের ভাষা যেন পড়তে সক্ষম হয়ে গেল।তিনি এটাই বলতে চাচ্ছেন যে, ভুলে ও কোনো কথা যদি শাফির কর্ণপাত হয় তাহলে কিন্তু তোমার কাকার সাথে এর থেকেও বড় কিছু হয়ে যাবে।সো বি কেয়ারফুল। সূরা কিছু না বলে চুপচাপ কিচেনের দরজায় যাওয়ার সাথে সাথে শাফায়াত তাকে হ্যাঁচকা টানে ভেতরে নিয়ে গিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বললো, কি বলতে চায়ছিলে তাড়াতাড়ি বলো।একদম মিথ্যা বলার চেষ্টা করবে না।যা হয়েছে সবটা সত্যি সত্যি বলবে।”

-” সূরা কিছু না বলে শাফায়াতের থেকে নিজকে ছাড়িয়ে নিয়ে নিজের মতো করে কফি বানিয়ে কিচেন থেকে বেরিয়ে যায়।সূরার যাওয়ার পানে তাকিয়ে শাফায়াত দেয়ালে ঘুসি মেরে বললো, ড্যাম ইট।আমাকে ইগনোর করার পরিণতি তুমি হারে হারে টের পাবে সুইটহার্ট।”

-” সূরা তরী কে কফি দেওয়ার সাথে সাথে তরী খুশি মনে কফি তে চুমুক দেয়। আর তাতেই যেন তরীর প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।এটা কফি তো নয় যেনো মরিচের গুঁড়া গুলিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।তরী ওয়াক থু থু করতে করতে বললো, এই মেয়ে এটা কি বানিয়েছো তুমি?যাও আবার নতুন করে বানিয়ে নিয়ে এসো।”

-“লিসেন মিস তরী আমি আপনার মাইনে করা চাকর নয় যে আপনার সব কথা আমার মেনে চলতে হবে। আমি যেভাবে পেরেছি সেভাবে বানিয়েছি।এখন আপনি খাবেন কি খাবেন না সেটা আপনার ব্যাপার।”

-” তোমার সাহস তো কম নয় । তুমি জানো তুমি কার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছো?”

-” এই মুহূর্তে আপনাকে নির্লজ্জ বেহায়া ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না আমার।আপনি নিজেকে এই বাড়ির পুত্রবধূ বলে দাবি করছেন। এইখানে আপনার হবু শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, আপনার হবু বর , বাড়ির ড্রাইভার , সবাই রয়েছে। তাদের সামনে এমন ডানা কাটা, ঠ্যাং বের করা পোশাক পরে দাঁড়িয়ে আছেন, অথচ আপনার মধ্যে নূন্যতম লজ্জাবোধ দেখা যাচ্ছে না।”

-” ইউ ব্লাডি গার্ল বলে তরী সূরার গালে থা’প্প’ড় মা’রা’র আগেই শাফায়াত এসে তরী হাত ধরে বললো, ছুঁচো মেরে হাত গন্ধ না করায় ভালো ডার্লিং।”

-” ইউ আর রাইট বেইবি।চলো না বাবু আমরা শপিং এ যায়। একবারে বিয়ের শপিং করে নিয়ে আসি।”

-” শাফায়াত সূরার দিকে তাকিয়ে বললো, অবশ্যই যাবো। তুমি শপিং এ যেতে চেয়েছো আর আমি নিয়ে যাবো না এমনটা হয় নাকি? অতঃপর শাফায়াত সূরা কে বললো, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।”

-” শাফায়াতের কথা শুনে তরী চোখ বড় বড় করে বললো, ঐ মেয়েটা রেডি হবে মানে কি বাবু?ও আমাদের সাথে যাবে?”

-” ইয়েস ডেয়ার। তোমার শপিং ব্যাগগুলো ক্যারি করার জন্য হলেও ওকে আমাদের সাথে নিয়ে যেতে ‌হবে।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

#এই_মন_তোমারি [ গল্পের নতুন মোড়]

#পর্ব_২৯

#লেখনীতে_নুজাইফা_নূন

-” দেখতে দেখতে কে’টে গেলো দুইদিন।এই দুই দিনের মধ্যে যেনো হুট করে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল।যার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না সূরা আর নাজমা দেওয়ান। তরীর বাবা রবিউল শিকদার হুট করে বিজনেস এর কাজে দেশের বাইরে যাবেন।তাই তিনি চাচ্ছেন দেশের বাইরে যাওয়ার আগে ঘরোয়া ভাবে মেয়ের বিয়ে দিতে। তারপর দেশে আসার পর আবার মহা ধুমধাম করে মেয়েকে তুলে দিবেন। নাজমা মঞ্জিল আলোকসজ্জায় সজ্জিত হয়ে উঠেছে। কিন্তু মঞ্জিলের মালকিন’ই মঞ্জিলে নেই। তিনি কিছুতেই বিয়ের ব্যাপার টা মানতে পারছেন না। ইনফ্যাক্ট তার তরী কে পছন্দ নয়।তাই তো তরী কে যখন শফিকুল দেওয়ান তাদের বাড়িতে নিয়ে আসে, তিনি তরীর ড্রেস আপ দেখে ঘৃণায় তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চলে যান।আর যতোক্ষণ তরী বাড়িতে ছিলো ততোক্ষণ তিনি নিচে আসেন নি। এমন নির্লজ্জ বেহায়া মেয়ের মুখ দেখতেও তার রুচিতে বাঁধে। তিনি প্রথমে ভেবেছিলো এসবের পেছনে শুধু মাত্র শফিকুল রয়েছে। শাফায়াত এই ব্যাপারে কিছু জানে না। কিন্তু তিনি যখন জানতে পারলেন শাফায়াত ঐ মেয়ের জন্য সূরা কে অপমান করেছে ,আর সূরা কোনো প্রতিবাদ না করে ব্যাপার মেনে নিয়েছে , তখন তিনি সূরা শাফায়াত কে একসাথে ডেকে বললেন,

-” তোরা ঠিক কি করতে চায়ছিস বল তো? আমার সাজানো সংসার টা কেনো এলোমেলো করে দিলি তোরা?আর সূরা তোকে আমি কতোবার বুঝিয়েছি কিন্তু আমার কথার কোনো দাম নেই তোর কাছে। নিজেকে অনেক বড় ভাবতে শুরু করেছিস তুই। বারংবার তোর কাছে জিজ্ঞেস করছি তোর কি হয়েছে বল মা? চুপ করে থাকা কোনো সমস্যার সমাধান নয়।সবটা খুলে বল। কিন্তু তুই? যায় হোক তোর প্রতি যে ভালোবাসা তৈরি হয়েছিলো সেটা তুই নিজে হাতে শেষ করে দিলি।আজকের পর থেকে আমি ভুলে যাবে সূরা নামের কাউকে আমি মেয়ের জায়গা দিয়েছিলাম।আজ থেকে আমার একটাই মেয়ে নুজাইফা‌। তুই আমার ভরসা বিশ্বাসের জায়গা হারিয়েছিস।আমি তোর কাকা কে কথা দিয়েছিলাম তোকে নতুন একটা জীবন উপহার দিবো।তোকে এমন একজন করে গড়ে তুলবো যেনো সারা বিশ্ব তোকে চিনতে পারে। কিন্তু আমি ব্যর্থ হয়ে গেলাম।আমি পারলাম না তোর কাকা কে দেওয়া কথা রাখতে।”

-” প্রতিত্তরে সূরা কিছু বললো না। শুধু চোখের পানি ফেলতে লাগলো।যা দেখে শাফায়াত বললো, যে থাকতে না চায় তাকে জোর করে রাখার কোনো মানে হয় না আম্মি।আমি তার সবটা যেনে তাকে ভালোবেসেছি , আমার মন তার নামে লিখে দিয়েছি। কিন্তু সে আমাকে চায় নি।তাই আমি বাবার কথায় মেনে নিয়েছি।”

-” এতো দিন তোর বাপ জ্বালিয়ে মারছে আমাকে , আর এখন তোরা দুজন ও শুরু করেছিস। ঠিক আছে তোদের যা ভালো মনে হয় কর বলে তিনি রাগে , দুঃখে ক্ষোভে নাজমা মঞ্জিল ছেড়ে গ্ৰামে নিজের বাপের বাড়ি চলে আসেন। অবশ্য শফিকুল, শাফায়াত গ্ৰামে এসেছিলো তাকে ফিরিয়ে যেতে । কিন্তু তার এক কথা তরীর সাথে শাফায়াতের বিয়ে হলে তিনি আর কখনো নাজমা মঞ্জিলে ফিরবেন না।”

___________________________________

-” বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে।যদিও বিয়েটা একদম ঘরোয়া ভাবে হবে তবুও তরীর শপিং চলছে পুরোদমে। শপিং এ সূরা কেও সাথে নেওয়া হয়েছে। শাফায়াত সূরা কে দেখিয়ে দেখিয়ে তরীর সাথে হাসাহাসি করছে , যা দেখে সূরার কোমল হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু শাফায়াতের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই।সে তরীর সাথে শপিং এ ব্যস্ত।সূরা কি করবে বুঝতে না পেরে শপিং মল টা ঘুরে ঘুরে দেখছিলো।আর তখনি একটা লাল জামদানি শাড়ি দেখে তার চোখ আটকে যায়। সূরা শাড়িটার দাম জিজ্ঞেস করলে দোকানদার জানায় শাড়িটার দাম চার হাজার টাকা। অথচ সূরার কাছে এক টাকাও নেই ভাবতেই সূরা মন খারাপ করে শাড়ির দোকান থেকে বেরিয়ে আসে।যা নজর এড়িয়ে যায় না শাফায়াতের।সে দোকানদার কে শাড়ি টা প্যাক করে দিতে হবে। শুধু তাই নয়। লাল শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে লাল চুড়ি, লাল টিপ ও কিনতে ভুলে যায় না শাফায়াত। শপিংয়ের এক পর্যায়ে তরী বললো, বাবু চলো না আমরা কিছু খাই। খুব ক্ষুধা লাগছে আমার।”

-” হুম চলো বলে শাফায়াত তাদের কে নিয়ে নামকরা একটা রেস্টুরেন্টে আসে।সূরা তখনো নিশ্চুপ।তবে শাফায়াত সূরার ব্যথিত চেহারা দেখে বেশ বুঝতে পারে মেয়েটা ভেতরে ভেতরে জ্বলছে খুব।তার জ্বলন বাড়িয়ে দিতে শাফায়াত তরী কে খাইয়ে দেয় ।আর তরী শাফায়াত কে।যা দেখে সূরা খাবার ফেলে বাইরে চলে আসে।সূরার যাওয়ার পানে তাকিয়ে হো হো করে হেঁসে উঠে শাফায়াত তরী দুজনে‌ই।এক পর্যায়ে তরী হাসি থামিয়ে বললো, অনেক হয়েছে ভাই মেয়েটা কে আর জ্বালাস না।দেখ না বাচ্চা মেয়েটার কি হাল হয়েছে? মুখখানি শুকিয়ে এতো টুকু হয়ে গিয়েছে।আমারি কেমন মায়া লাগছে। ইচ্ছে করছে জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করে দেই।তোর এমন ইচ্ছে করছে না?”

-” ইচ্ছে তো অনেক কিছু করার জাগে।মেয়েটা কম জ্বালায় নি আমাকে।এখন নিজে একটু জ্বলে দেখুক ভালোবাসার দহনে পুড়তে কেমন লাগে।আমি জানি মেয়েটা আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে।ও আরাব কে ভালোবাসা দূরে থাক ওর দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে নি পর্যন্ত। শুধু মাত্র আজকের রাতটা । আগামীকাল ওর সব কষ্ট আদরে আদরে ভুলিয়ে দিবো। নতুন এক গল্পের সূচনা করবো।”

-” কিন্তু আন্টি যে ভুল বুঝে দূরে সরে গেলো?”

-” আম্মির ব্যাপার টা আমার উপর ছেড়ে দে।এটা আম্মির জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ।আম্মি যখন জানতে পারবে এ সব টা আমার আর তোর প্ল্যান ছিলো সূরা কে নিজের করে নেওয়ার তখন খুব খুশি হবে। থ্যাংক ইউ তরী।আমার জন্য আম্মির কাছে তোকে এতো ছোট হতে হলো। আম্মি ভুল বুঝলো তোকে। অথচ আম্মি জানে না তুই আমার জন্য কতো কিছু করলি।”

-” থ্যাংকস তো আমার তোকে দেওয়া উচিত শাফি। শুধু মাত্র তোর জন্য আমি আগামীকাল আমার বয়ফ্রেন্ড তাসিন কে বিয়ে করতে যাচ্ছি।যার সাথে আমার দশ বছরের সম্পর্ক। কিন্তু বেকার বলে বাবা আমাদের সম্পর্ক মেনে নিতে চান না। তুই’ই বল ভালোবাসা কি কখনো ধনী , গরিব , চাকরিজীবী , বেকার দেখে হয়? বাবা শুধু মাত্র নিজের স্বার্থের জন্য আমাকে তোর সাথে বিয়ে দিতে চায়ছেন।কিন্তু একজন মানুষের মন তো একটাই থাকে তাই না। আমার মন যে তাসিন কে দিয়ে দিয়েছি।সেটা যে আর কাউকে দেওয়া সম্ভব নয়।বাবা আর শফিকুল আঙ্কেল এর ইচ্ছে অনুযায়ী সবটা হচ্ছে তবে বিয়ে হবে আমাদের ইচ্ছে অনুযায়ী। অর্থাৎ আমার আর তাসিনের , তোর আর সূরার।”

__________________________________

-” রাত এগারোটা। প্রত্যেকের রুমের লাইট অফ হয়ে গিয়েছে।সূরা যেনো এই সময়টার অপেক্ষায় ছিলো।তার হৃদয় চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।সে কিছুতেই তার সুন্দর ব্যাডা মানুষের সাথে অন্য কোনো মেয়েকে মেনে নিতে পারছে না। শুধু মাত্র আর কয়েক ঘণ্টা বাকি‌। এরপর তার সুন্দর ব্যাডা মানুষ সারাজীবনের জন্য অন্য কারো হয়ে যাবে এটা কিছুতেই চোখের সামনে দেখতে পারবে না সূরা।তাই তো সে এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সূরা একটা চিরকুট লিখে টেবিলের উপর রেখে আলমারি থেকে কিছু টাকা নিজের হ্যান্ডপার্সে নিয়ে রাতের আঁধারে চুপিচুপি নাজমা মঞ্জিল থেকে বেরিয়ে পড়ে।।

চলবে ইনশাআল্লাহ।।