এক‌দিন বিকা‌লে সকাল হ‌য়ে‌ছি‌লো পর্ব-১০

0
543

#এক‌দিন_বিকা‌লে_সকাল_হ‌য়ে‌ছি‌লো
‌লেখাঃ শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্বঃ ১০

‘‌কে বলছেন?’
‘আ‌মি রাযীন।’
‘হ্যাঁ, বলুন।’
‘‌কেমন আছো?’
‘আপনার কী ম‌নে হয়? আপনার করা বোমা হামলার পরও ভা‌লো থাক‌তে পা‌রি?’
‌রাযীন হে‌সে বলল,
‘বোমাটা কি খুব বড় ছি‌লো?’
‘পারমান‌বিক বোমার চে‌য়েও বে‌শি ভয়াবহ ছি‌লো।’
শব্দ ক‌রে হাসল রাযীন। তারপর ব‌লল,
‘যাক আমার চেষ্টা ত‌বে স্বার্থক।’
দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে শশী বলল,
‘আর আমি ব্যর্থ।’
‘‌কেন?’
‘আপনা‌কে ব‌লে‌ছিলাম আমার বয়‌ফ্রেন্ড আছে।’
‘আজকালকার মে‌য়ে‌দের দু-চারটা রি‌লেশন থাকা যেমন স্বাভা‌বিক, তেমনই প‌রিবা‌রের পছন্দমত বি‌য়ে করাটাও স্বাভা‌বিক।’
‘সব মে‌য়ে রি‌লেশন নি‌য়ে ক্যাজুয়াল থা‌কে না। অনেক মে‌য়ে রি‌লেশন নি‌য়ে খুব সি‌রিয়াস থা‌কে।’
‘ওহ! ত‌বে তু‌মি সি‌রিয়াস রি‌লেশ‌নে আছো।’
‘হ্যাঁ ১০০%। ‌লি‌পি ভা‌বির কা‌ছে শুনলাম আপনা‌কে আমি পূ‌র্বেও ফোন ক‌রে বি‌য়ে ভে‌ঙে‌ছিলাম।’
‘হ্যাঁ।’
‘তাহ‌লে আপ‌নি এমন কেন কর‌লেন?’
‘কী করলাম?’
‘রাযীন কেন জে‌নেও না জানার ভান কর‌ছেন? আপনা‌কে বি‌য়ে‌তে না বলার পরও কেন আপ‌নি হ্যাঁ বল‌লেন? শুধু নি‌জে হ্যাঁ বলেই শান্ত হন‌নি, বরং সবাই‌কে মিথ্যা বল‌লেন যে, আমিও হ্যাঁ ব‌লে‌ছি। অতঃপর এন‌গে‌জমেন্ট ক‌রেই শান্ত হ‌লেন। কেন কর‌লেন আপ‌নি এমন?’
‘‌শশী আ‌মি সোজাসাপ্টা কথা বল‌তে পছন্দ ক‌রি।’
‘তাহ‌লে সোজাসাপ্তা ভা‌বেই বলুন।’
‘আই লাভ ইউ।’

শশী কিছু সময় চুপ ক‌রে রইল। তারপর বলল,
‘ক‌বে থে‌কে?’
‘ব‌লে‌ছিলাম তো সাত মাস আগে থে‌কে।’
‘ওহ। প‌রে এক‌দিন শুনব আপনার প্রে‌মে পড়ার গল্প। এখন শোনার ম‌তো মান‌সিক অবস্থা নেই। তার আগে আপ‌নি আমার কথা শুনুন।’
‘ব‌লো?’
‘আপ‌নি যেমন নি‌জের ভা‌লোবাসার মানুষ‌কে নি‌জের ক‌রে পে‌তে চান, আমিও তেমন চাই।’
‘‌তো চেষ্টা ক‌রো।’
‘আপ‌নি আমা‌দের বি‌য়ে‌তে, না ব‌লে দি‌লে আমার পথ ক্লিয়ার হ‌য়ে যায়?’
‘স‌ত্যি কি তা-ই? আমি না বল‌লে তোমার পথ ক্লিয়ার হ‌বে?’
‘হ্যাঁ।’
‘হাসা‌লে শশী। আমার হ্যাঁ বা না বলায় কিছু নির্ভর ক‌রে না! নির্ভর ক‌রে তোমার বয়‌ফ্রেন্ড এর কথায়! সে য‌দি তোমা‌কে এতই ভা‌লোবাসে ত‌বে এখনও সে কেন তোমার প‌রিবা‌রের কা‌ছে তোমার হাত চাই‌ছে না? তার প‌রিবার নি‌য়ে এসে কেন তোমা‌কে সামা‌জিক স্বকৃতী দি‌চ্ছে না? কই সে তো আমা‌দের বি‌য়ে ভাঙার কো‌নো চেষ্টা কর‌ছে না? বরং সে তো তোমা‌কে টেনশ‌নে রে‌খে দি‌ব্যি তার ফাইনাল ইয়া‌রের পরীক্ষার জন্য পড়ালেখা কর‌ছে।’

শশী বেশ অবাক হ‌য়ে বলল,
‘আপ‌নি সজল‌কে চি‌নেন?’
‘আমি যে‌হেতু তোমা‌কে সাত মাস আগে থে‌কে চি‌নি, সে‌হেতু তোমার সব কিছুই আমি খোঁজ খবর নি‌য়ে‌ছি, তোমার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, বয়‌ফ্রেন্ড কিংবা সজ‌লের বিষ‌য়েও সব রকম খোঁজ নি‌য়ে‌ছি।’
‘আপ‌নি সজ‌লের বিষয়ে জা‌নেন?’
‘সজ‌লের বিষ‌য়ে আমি এমন অনেক কিছুই জা‌নি, যা হয়‌তো তু‌মি জা‌নো না!’
‘তো সে না জানা কথাগু‌লো কি আমা‌কে বলা যা‌বে?’
‘না। সেসব কথা এখন বলা ঠিক হ‌বে না। যখন স‌ঠিক সময় আস‌বে তখন বলব।’

শশী, রাযীন‌কে বেশ অনুনয় ক‌রে বলল,
‘তাহ‌লে প্লিজ বি‌য়েটা ভে‌ঙে দিন।’
‘আজব! তু‌মি আমা‌কে কেন বি‌য়ে ভাঙ‌তে বল‌ছো? তু‌মি কেন ভাঙ‌ছে না? তোমার ভা‌লোবাসা য‌দি স‌ত্যি হ‌য়ে থা‌কে। ওহ স‌রি মাই মিস‌টেক। আমি জা‌নি তোমার ভা‌লোবাসা স‌ত্যি। তোমার য‌দি নি‌জের ভা‌লোবাসার প্র‌তি, ভা‌লোবাসার মানুষটার প্র‌তি ভরসা থে‌কে থা‌কে ত‌বে, তু‌মি কেন বি‌য়ে ভাঙ‌ছো না? মানলাম তু‌মি না হয়, মে‌য়ে ব‌লে ভাঙতে পার‌ছো না বা ভয় কর‌ছে। ম‌নে হয়‌তো সংশয় কাজ কর‌ছে। ত‌বে সজল কেন সবার স‌াম‌নে এসে বি‌য়ে ভাঙছে না? ও কেন সবসময় তোমা‌কে স‌াম‌নে ফে‌লে, নি‌জে তোমার পিছনে থাক‌ছে? ও যদি স‌ত্যি পুরুষ হ‌য়ে থা‌কে আর তোমা‌কে স‌ত্যি ভা‌লো‌বে‌সে থা‌কে, ত‌বে তা‌কে ব‌লো কাওয়া‌র্ড এর মতো পিছ‌নে না থে‌কে বরং সাম‌নে এসে তোমার প‌রিবা‌রে সা‌থে কথা ব‌লে, তোমা‌কে বি‌য়ে ক‌রে, তোমার প্রাপ্য সম্মান দিক।
তা না ক‌রে তু‌মি একা কেন সবসময় বি‌য়ে ভাঙা‌র চেষ্টা কর‌ছো? কই সজল তো একবার আমা‌কে কল করে বি‌য়ে ভাঙতে বলল না। তু‌মি যেমন সজল‌কে ভা‌লোবা‌সো ব‌লে, তা‌কে নি‌জের ক‌রে ‌পে‌তে চাও ব‌লে, আমা‌কে বি‌য়ে ভাঙ‌তে বল‌ছো। আমিও তেম‌নি তোমা‌কে ভা‌লোবা‌সি, তোমা‌কে নি‌জের ক‌রে পে‌তে চাই। ত‌বে আমি কেন সে‌ক্রিফাইস করব? হোয়াই?

তোমার যেমন নি‌জের ভা‌লোবাসার মানুষটা‌কে নি‌জের ক‌রে পে‌তে ইচ্ছা ক‌রে? আমারও নি‌জের ভালোবাসার মানুষটা‌কে নি‌জের ক‌রে পে‌তে ইচ্ছা ক‌রে। ত‌বে সে‌ক্রিফাইজ আমি কেন করব? তু‌মিও তো কর‌তে পা‌রো?
আর য‌দি সে‌ক্রিফাইজ না-ই কর‌তে পা‌রো এবং নি‌জের ভা‌লোবাসার মানুষা‌টাকে ‌নি‌জের ক‌রে পে‌তে চাও এবং নি‌জের ভা‌লোবাসার মানু‌ষের উপর ভরসা থা‌কে, ত‌বে তোমার প‌রিবা‌রের সা‌থে কথা ব‌লে, তু‌মি কিংবা সজল বি‌য়েটা ভে‌ঙে দাও। আমি কথা দি‌চ্ছি জীব‌নে তোমা‌কে আমার ছাঁয়াটাও আর দেখাব না! আর য‌দি তা কর‌তে না পা‌রো ত‌বে শুক্রবার আমা‌কে বি‌য়ে কর‌বে এবং বি‌য়ের পর অনুষ্ঠান ফনুষ্ঠান সব বাদ। তু‌মি আক‌দের পরই আমার সা‌থেই চট্টগ্রাম চ‌লে যা‌বে। তার ব্যবস্থা আমি করব। তোমার ভা‌লোবাসা প্র‌তি ভরসা না থাক‌লেও আমার ভা‌লোবাসার প্র‌তি আমার ২০০% ভরসা আছে। আমি জা‌নি আমার শুদ্ধতম ভা‌লোবাসা ঠক‌বে না। আল্লাহ আমা‌কে নিরাশ করবেন না।
শশী ফট ক‌রে কলটা কে‌টে দি‌লো। এমন কথা ওর শুন‌তে ইচ্ছা কর‌ছে না। রাযী‌নের ভা‌লোবাসার প্র‌তি দৃঢ়তা দে‌খে ও হতবাক। ম‌নে ম‌নে বলল,
‘সজ‌লের ভা‌লোবাসায় কেন এমন দৃঢ়তা নেই? ও কেন আমা‌কে এমন ক‌রে ভা‌লো‌বে‌সে পে‌তে চায় না?’

১৪!!
সোমবার,
আজ ‌রেনু‌কে নি‌য়ে শিহাব ডাক্তা‌রের কা‌ছে যা‌বে। হাস‌পাতাল আর শিহা‌বের অফিস একই প‌থে। সকা‌লে শিহাব যাবার পূ‌র্বে ব‌লে গে‌ছে রেনু যে‌নো পাঁচটার ম‌ধ্যে শিহা‌বের অফি‌সে আসে, সেখান থে‌কেই ডাক্তা‌রের কা‌ছে যা‌বে। সন্ধ্যা ছয়টায় ডাক্তা‌রের এপ‌য়েনমেন্ট পে‌য়ে‌ছে। রেনুও শিহা‌বের কথাম‌তো শিহা‌বের অফি‌সের সাম‌নে এসে দাঁড়ি‌য়ে শিহাব‌কে করল,
‘‌কোথায় আপ‌নি?’
‘অ‌ফি‌সে। তু‌মি?’
‘আপনার অফি‌সের গে‌টের সাম‌নে।’
‘‌ভিত‌রে আসো। আমি দা‌রোয়ান‌কে তোমার কথা ব‌লে রে‌খে‌ছি।’

‌রেনু ভেত‌রে যে‌তেই পিওন ওকে বস‌তে বলল। আর বলল শিহাব দশ মি‌নি‌টের ম‌ধ্যে চ‌লে আসবে। কিছুক্ষণ পর শিহাব অাসল সা‌থে আসল জেবাও। জেবা‌কে দেখ‌লেই কেন জা‌নি রেনুর মাথাটা গরম হ‌য়ে যায়। তা-ও হা‌সি মু‌খে জেবার সাথে কুশল বি‌নিময় করল। জেবা বলল,
‘‌শিহাব সা‌হেব। তা ভা‌বি‌কে নি‌য়ে বু‌ঝি ডাক্তা‌রের কা‌ছে যা‌বেন?’
‘হ্যাঁ।’
‌রেনু দুষ্টু হে‌সে জেবার দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘আপু ডোন্ট মাইন্ড আপনার বয়স কত?’
‌জেবা বেশ অবাক হ‌য়ে বলল,
‘‌কেন?’
‘না মা‌নে আপনা‌কে দেখ‌লে ম‌নে হয় না আপ‌নি শিহা‌বের চে‌য়ে বয়‌সে বড়।’
‘‌কী বল‌ছেন কী ভা‌বি? আমি তো শিহাব সা‌হে‌বের চে‌য়ে অনেক ছোট। আপনার কেন ম‌নে হ‌লো বড়?’
‘না মা‌নে আপ‌নি শিহাব‌কে, ভাইয়া ব‌লে সম্ব‌োধন না ক‌রে, শিহাব সা‌হেব ব‌লে সবসময় ডা‌কেন ব‌লে আমি ভাবলাম আপ‌নি শিহা‌বের চে‌য়ে বড়।’
‌শিহাব ম‌নে ম‌নে বলল,
‘এই‌রে কাজ সার‌ছে। এ মে‌য়ে দেখ‌ছি জেবাকে ভাইয়া ডা‌কি‌য়েই শান্ত হ‌বে।’
‌জেবা, রেনু‌কে বলল,
‘না না ভা‌বি, তেমন কিছু না।’

‌রেনু অবাক হওয়ার ভান ক‌রে বলল,
‘‌কী ব‌লেন আপু? আপ‌নি তা‌কে ভাইয়া ব‌লে ডা‌কেন না বিধায় আমা‌দের বাসায় আমরা সবাই তো এটাই জা‌নি আপ‌নি শিহা‌বের অনেক বড়।’
‘তাই না‌কি? কী ব‌লেন?’
‘হ্যাঁ আমরা তো ভে‌বে‌ছি আপনার ছে‌লে-মে‌য়েও বি‌য়ের লা‌য়েক। আপ‌নি অনেকটা সি‌রিয়াল নাটকে দেখা‌নো মা‌য়ে‌দের ম‌তো, বয়স বোঝা যায় না।’
‌জেবা বিস্ম‌য়ে বলল,
‘কী ব‌লেন ভা‌বি! বাচ্চা! ও মাই গড! আমার তো এখনও বি‌য়েই হয়‌নি।’
‌রেন‌ু বিস্ম‌য়ের ভান ক‌রে বলল,
‘কী ব‌লেন? তাহ‌লে আপ‌নি বরং ওকে ভাইয়া ব‌লেই ডাক‌বেন। তাহ‌লে কেউ এমন ভুল ধারনা কর‌বে না।’

‌জেবা বুঝ‌তে পারল রেনু কৌশ‌লে ওকে কুপোকাত ক‌রে‌ছে। ‌জেবাও কম যায় না। সেও রেনু‌কে আঘাত কর‌তে বলল,
‘ভা‌বি তা নাহয় শিহাব সা‌হেব‌কে, ভাইয়া ব‌লেই ডাকব। কিন্তু কথা কী জানেন? আজকাল লোক কুমা‌রী মে‌য়ে‌দের বাচ্চার মা ভা‌বে, আর দুই বিবা‌হিত, বিধবা, নিজ বাচ্চা গ‌র্ভেই মে‌রে ফে‌লে তা‌দের অবিবা‌হিত ভা‌বে, বি‌য়ে ক‌রে, সংসার ক‌রে।’

‌জেবার কথায় রেনু পাথ‌রের মতো শক্ত হ‌য়ে দাঁ‌ড়ি‌য়ে রইল। শিহাব রেনুর কাঁ‌ধে হাত দি‌য়ে জেবা‌কে বলল,
‘‌জেবা এতক্ষণ বিষয়টা মজার ম‌ধ্যে ছিলো বিধায় আমি চুপচাপ মজা নি‌চ্ছিলাম। কিন্তু তু‌মি আমার চুপ থাকার বিষয়টা‌কে কী ভাব‌লে, যে আমার স্ত্রী‌কে অপমান কর‌লে? ও যেমন বিষয়টা মজা রে‌খে‌ছে তোমারও সেটা করা উচিত ছি‌লো। কিন্তু তু‌মি ওর ক্ষত স্থা‌নে আঘাত ক‌রলে। ছি জেবা! তোমার কাছ থে‌কে এটা আশা ক‌রি‌নি।’
‌জেবা বলল,
‘‌কিন্তু শিহাব সা‌হেব…!’
‘আমা‌কে শিহাব ভাইয়া ডাক‌লে বে‌শি খু‌শি হ‌বো। চ‌লো রেনু। ফালতু লোক‌দের সা‌থে কথা ব‌লে সময় নষ্ট ক‌রে লাভ নেই।’

তারপর পু‌রোটা রাস্তা রেনু চুপচাপ গা‌ড়ি‌তে ব‌সে ছি‌লো। শিহাব কত কথা বলল কিন্তু রেনু তার জবাব কেবল হুঁ হা তে দি‌য়ে‌ছে। ডাক্তার দে‌খি‌য়ে ফেরার প‌থে শিহাব রেনু‌কে নি‌য়ে একটা ফাস্টফু‌ডের দোকা‌নে ঢুকলো। শিহাব ফুচকা অর্ডার কর‌তেই রেনুর ম‌ু‌খে হ‌া‌সি ফুটল। রেনু ফুচকা অনেক পছন্দ ক‌রে। কিন্তু শিহাব ফুচকার টক পা‌নিটা রেনু‌কে খে‌তে দি‌লো না। মাত্র ক‌দিন হ‌লো ওর মিসক্যা‌রেজ হ‌য়ে‌ছে এখন টক খাওয়া ওর জন্য ঠিক না। ‌রেনু তার বদ‌লে বিফ হা‌লিম খাওয়া‌তে বলল। শিহাবও হা‌লিম অর্ডার করল। খে‌য়ে ফেরার প‌থে, কিছু একটা দে‌খে শিহা‌বের মনটা খারাপ হ‌য়ে গেল। শিহাব, রেনু‌র দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘য‌দি আমার অতীত সম্প‌র্কে উল্টা পাল্টা কিছু জা‌নো ত‌বে কি ক্ষমা কর‌তে পার‌বে আমায়?
‘‌রেনু অবাক হ‌য়ে তা‌কি‌য়ে রইল শিহা‌বের দি‌কে।’

১৫!!
মঙ্গলবার রা‌তে কিছু একটা ভে‌বে শশী আদ্র‌কে কল করল।
‘হ্যা‌লো আদ্র ভাইয়া।’
‘হ্য‌াঁ বল শশী।’
‘ভাইয়া কাল তোমা‌কে সজ‌লের সা‌থে দেখা কর‌তে হ‌বে না।’
‘‌কেন? কো‌নো সমস্যা?’
‘আস‌লে ভে‌বে দেখলাম সমস্যাটা যে‌হেতু‌ আমা‌দের দুজনার, তো সমাধানটাও দুজনার করা উচিত। তু‌মিও তো ব‌লো স্বামী-স্ত্রী কিংবা প্রে‌মিক-প্রে‌মিকার মা‌ঝে তৃতীয় ব্য‌ক্তির ঢোকা ঠিক নয়! তা‌তে সম্পর্ক আরও বিগ‌রে যায়। তো সেখা‌নে আমি আমা‌দের সম্প‌র্কে তোমা‌কে তৃতীয় ব্য‌ক্তি কিভা‌বে বানাই ব‌লো?’
‘‌কিন্তু শশী…!’

আদ্র‌কে থা‌মি‌য়ে শশী বলল,
‘ভাইয়া তোমার আর অথৈর ভা‌বির লাভ স্টো‌রি সমবয়সী সম্পর্ক করা বহু কাপ‌লের কা‌ছে আদর্শ গল্প। তো তোমা‌কে কেউ সামন্য একটু অপমান জনক কথা বল‌লেও সেটা আমি নি‌তে পারব না। সে যেই হোক, অন্য কেউ অথবা আমার ভা‌লোবাসার মানুষটা। আমি তোমার সম্মানহা‌নি কর‌তে পারব না।’
‘আ‌রে ছোট বো‌নের জন্য এসব করা কো‌নো ব্যাপার না।’
‘না ভাইয়া। আমি অনেক ভে‌বে‌ছি আমা‌দের ব্যাপারটা নি‌য়ে। সজল এম‌নিও তোমা‌কে তেমন পছন্দ ক‌রে না। কারণ ইতিপূ‌র্বে আমি বার-বার, কথায়-কথায় তোমার সা‌থে, তোমা‌দের লাভ স্টো‌রির সা‌থে ওর তুলনা দিত‌াম। সে কার‌ণেই ও তোমার প্র‌তি কিছুটা তিক্ত ম‌নোভাব পোষণ ক‌রে। তাছাড়া সম্পর্ক যে‌হেতু আমা‌দের, সমস্যাও আমা‌দের আর তাই সমাধান করার দা‌য়িত্বটাও আমা‌দের। আমা‌কে আমার সমস্যার মোকা‌বেলা কর‌তে দাও প্লিজ। তু‌মি আর কথা বা‌ড়িও না।’

একটা দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে আদ্র বলল,
‘‌ঠিক আছে। ত‌বে ম‌নে রা‌খিস আমি সবসময় তোর সা‌থে আছি। আর শোন সজ‌লের সা‌থে যখন কথা বল‌বি তখন এটা খেয়াল রাখ‌বি ও যে‌নো বুঝ‌তে না পা‌রে তুই ওর প্র‌তি কতটা দুর্বল? আমরা ছে‌লেরা না মহা পা‌জি। য‌দি একবার বুঝ‌তে পা‌রি, স্ত্রী বা প্রে‌মিকা আমা‌দের প্র‌তি কতটা দুর্বল তাহ‌লেই তা‌দের প্র‌তি আমা‌দের এ্যা‌টেনশন ক‌মি‌য়ে দেই। য‌দিও সব ছে‌লেরা এক রকম চিন্তা ক‌রে না। তবুও অধিকাংশ পুরুষ-ই এক।
তুই নি‌জের সব‌চে‌য়ে শক্ত ম‌নোভাবটা ওর সাম‌নে দেখা‌বি। যা বল‌বি কড়া ক‌রে, স্ট্রেইট-কাট কথা। আবেগ‌কে একদম প্রশ্রয় দি‌বি না! ম‌নে রাখ‌বি তোর সত্ত্বা সম্পূর্ণ আলাদা। তো তুই নি‌জে‌কে একদম দুর্বল ক‌রবি না। তাহ‌লেই সজল তোর সত্ত্বায় প্র‌বেশ ক‌রে তো‌কে দুর্বল কর‌তে চাই‌বে। নি‌জের মন‌কে শক্ত রাখ‌বি। ম‌নে রাখ‌বি সজ‌লের জন্য তোর পৃ‌থিবী থে‌মে থাক‌বে না। কা‌রো জন্যই কা‌রো জীবন থে‌মে থা‌কে না। জীবন জীব‌নের গ‌তি‌তে চ‌লে যায়। হয়‌তো কিছু‌দিন কষ্ট হয়, তারপর সব ঠিক হ‌য়ে যায়। শুধু নি‌জের আত্ম‌বিশ্বাস হারাস‌নে। ম‌নে থাক‌বে?’
শশী বেশ আত্ম‌বিশ্বা‌সের সা‌থেই বলল,
‘হ্যাঁ ম‌নে থাক‌বে।’

কল কে‌টে আদ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে নি‌জে নি‌জে বলল,
‘যাক এত‌দি‌নে আমার মাথার টেনশনটা একটু কম‌ছে। নয়ত ভে‌বেই পা‌চ্ছিলাম না সজ‌লের সা‌থে কী কথা বলব বা কী ক‌রে ওকে কন‌ভিনস করব?’
ফোনটা বিছানার উপর রে‌খে আদ্র অথৈর দি‌কে তাকাল। অথৈ তখন আয়নার সাম‌নে দাঁ‌ড়ি‌য়ে চুলে চিরুনী কর‌ছে। আদ্র অথৈ‌কে পিছন থে‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে গাই‌তে শুরু করল,
কন্যা রে, কন্যা রে-
বাঁকা চুলেতে খোঁপা,
আর বাঁইধো না রে ।
ঐ চুলেতে জাদু আছে রে,
আমার ঘুম আসেনা রাতে
একলা ঘরে রে ।
বাঁকা চুলেতে খোঁপা,
আর বাঁইধো না রে ।

অ‌থৈর, আদ্রর দি‌কে ঘু‌রে হে‌সে বলল,
‘এই গান শু‌নি‌য়েই তো পু‌রো ভা‌র্সি‌টি লাইফ পাগল ক‌রে রে‌খে‌ছি‌লে।’
আদ্র হে‌সে বলল,
‘শুধু গা‌নে?’
অ‌থৈ, আদ্রর চো‌খের দি‌কে তাকাল। গভীর নীল চোখ আদ্রর। আদ্র জা‌নে অথৈ আদ্রর চোখ দু‌টো কতটা পছন্দ ক‌রে! অথৈ আদ্রর চো‌খে চু‌মো খে‌য়ে বলল,
‘এই চোখ দুটো। এই দুষ্টু ছে‌লেটার নীল চোখ দু‌টো আমা‌কে সবসময় নেশায় ডু‌বি‌য়ে রা‌খে।’
‘আ‌মি জা‌নি।’
‘আদ্র তু‌মি শশী‌কে বল‌লে কা‌রো জন্য কা‌রো জীবন থে‌মে থা‌কে না। ত‌বে সে‌দিন…।’

আদ্র অথৈর ঠোঁটে চু‌মো খে‌য়ে বলল,
‘হুঁস। আমি পু‌রা‌নো কথা শুন‌তে চাই না। আমি জা‌নি তু‌মি কী বল‌তে চাও! তোমার জন্য আমি কতটা পাগল তা তোমার চে‌য়ে ভা‌লো কেউ জা‌নে না। আমার, তোমা‌কে ছাড়া জীব‌নে পথ কেন, সময়ও চলত না। যা‌তে অচল হ‌য়ে না যাই, সে কার‌ণে-ই তো তোমা‌কে নিজের করার জন্য কত পাগলা‌মি, কত প‌রিশ্রম ক‌রে‌ছিলাম! আজ এতটু‌কো বয়‌সে আমি লাখ লাখ টাকা ইনকাম ক‌রি, সবটা তোমার জন্য। তোমা‌কে যাতে হারা‌তে না হয় সে কার‌ণে কম প‌রিশ্রম ক‌রি‌নি। আমার সব প‌রিশ্রম সার্থক তোমার আগম‌নে। আমি স‌জেলর ম‌তো চু**য়া না যে, নি‌জের ভা‌লোবাসা‌কে আগ‌লে রাখ‌তে পারব না। অথৈ আমার তোমা‌কে ছাড়া চল‌বে না, একদম চল‌বে না, কখনও চল‌বে না। জীব‌নের শেষ নিঃশ্বা‌সেও তোমা‌কেই চাই। ভা‌লোবা‌সি খুব।’
অশ্রু‌সিক্ত ক‌ন্ঠে অথৈ বলল,
‘আমি জা‌নি। পাগল একটা।’
‘‌তোমার জন্য।’
‘ভা‌লোবা‌সি পাগলা‌টাকে।’

১৬!!
অতীত যখন বর্তমান‌কে আঘাত ক‌রে তখন তার চে‌য়ে ভয়ানক আর ক্ষ‌তিকর আর কিছু হ‌তে পা‌রে না! শিহাব ভয় পা‌চ্ছে ওর অতীত না আবার ওর বর্তমান‌কে প্রভা‌বিত ক‌রে?
‌রেনু শিহা‌বের পাশেই ঘুমা‌চ্ছে। শিহা‌বের আজ ঘুম আস‌ছে না। হস‌পিটাল থে‌কে ফেরার প‌থে নৌ‌শিন‌কে দে‌খে‌ছে। তারপরই অতী‌তের স্মৃ‌তিগু‌লো চো‌খের সাম‌নে সি‌নেমার ম‌তো ভাস‌ছে। শত চে‌ষ্টা ক‌রেও ম‌স্তিষ্ক থে‌কে তাড়া‌তে পার‌ছে না তা‌দের। শিহাব ম‌নে ম‌নে বলল,
‌’‌নৌ‌শিন ক‌বে এ শহ‌রে আস‌ছে? ওর তো এ শহরে আসার কথা না? ও তো ঘৃণা ক‌রে এ শহরটা‌কে। শিহাব মাথা চে‌পে ধ‌রে ম‌নে ম‌নে বলল, মাথাটা বড্ড ব্যথা কর‌ছে। আমি সে ভয়ানক অতীত কেন ভুল‌তে পার‌ছি না? রক্তাক্ত সে মুহূর্ত! উফ কী যন্ত্রনা! আমি আর নি‌তে পার‌ছি না অতী‌তের বোঝা! কী যন্ত্রনায় কে‌টেছিলো আমার জীব‌নের ক‌য়েটা বছর! এক‌দিন বিকা‌লে একটা দূর্ঘনা হ‌য়ে‌ছি‌লো, যে বিকা‌লের হয়‌নি সন্ধ্যা, হয়‌নি রাত, একসা‌থে হ‌য়ে‌ছি‌লো সকাল। নতুন সোনালী সকাল নয় বরং দু‌র্বিষহ সকাল। আমি ম‌নে কর‌তে চাই না সে সকাল।

‌শিহাব গভীরভা‌বে রেনু‌কে জ‌ড়িয়ে ধরল। জ‌ড়িয়ে ধ‌রে বলল,
‘আ‌মি তোমা‌কে খুব ভা‌লোবা‌সি রেনু। কো‌নো কিছুর বি‌নিম‌য়ে আমি তোমা‌কে হারা‌তে পারব না। একদম না।’

চল‌বে…..