এক‌দিন বিকা‌লে সকাল হ‌য়ে‌ছিলো পর্ব-০৯

0
418

#এক‌দিন_বিকা‌লে_সকাল_হ‌য়ে‌ছিলো
‌লেখাঃ শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্বঃ০৯

১১!!
শিহাব তৈরি হ‌চ্ছে। রেনু মন খারাপ ক‌রে ব‌সে আছে। তা দে‌খে শিহাব মিটমিট হাস‌ছে। শিহা‌বের হা‌সি দে‌খে রা‌গে রেনুর গা জ্ব‌লে যা‌চ্ছে। শিহাব তবুও হাস‌ছে দে‌খে রেনু বেশ রাগ ক‌রে বলল,
‘আর একবার এমন পা‌জির ম‌তো হাস‌লে খবর আছে।’
মুচ‌কি হে‌সে শিহাব বলল,
‘ কী করবা?’
‌রেনু টে‌বি‌লের উপর থে‌কে পা‌নি ভ‌র্তি গ্লাসটা নি‌য়ে, পু‌রোটা পা‌নি শিহা‌বের মাথায় ঢে‌লে, রা‌গে গজগজ কর‌তে কর‌তে রুম থে‌কে বের হ‌য়ে গেল। শিহাব বোকার ম‌তো কিছুক্ষণ তা‌কি‌য়ে থে‌কে বলল,
‘রেনু এত হিংসু‌টে মে‌য়ে তা তো জানা ছি‌লো না! আরে কতবার বললাম জেবা শুধুমাত্র আমার ক‌লিগ। অফি‌সের কা‌জেই ওর সা‌থে মা‌ঝেমা‌ঝে কথা বল‌তে হয়। কিন্তু তার এককথা জেবা কেন আমা‌কে শিহাব সা‌হেব ব‌লে? শিহাব ভাই কেন ব‌লে না? আজব মে‌য়ে! জেবা কেন ভাই ডাকে না তা-ও আমার দোষ। নাহ মে‌য়ে মানু‌ষের মন বোঝা সত্যি বড্ড দায়! যত ভা‌লো মে‌য়েই হোক না কেন, নি‌জের স্বামী অন্য কো‌নো মে‌য়ের সা‌থে ভা‌লো মাই‌ন্ডে কথা বল‌লেও দোষ। রেনুও তা‌দের বাই‌রে না। যাই শার্টটা বদ‌লে অফিসের জন্য তৈরী হই।’

নাস্তা খে‌তে ব‌সেও রেনু শিহা‌বের দি‌কে বড় বড় চোখ ক‌রে বারবার চে‌য়ে‌ছে। শিহাব অসহায় চো‌খে নাস্তা খে‌য়ে বের হ‌তে যা‌বে তখন রেনু বলল,
‘সাবধা‌নে যা‌বেন।’
‘ওকে।’
‘আর জেবার কাছ থে‌কে হাজার হাত দূ‌রে থাক‌বেন। কা‌জ ছাড়া ওর সা‌থে কো‌নো কথা বল‌বেন না। আর ওকে বল‌বেন আপনা‌কে যে‌ন সবসময় ভাইয়া ব‌লে ডা‌কে এবং ভাইয়া-ই ম‌নে ক‌রে। আপ‌না‌কে অফিস প্র‌য়োজন ছাড়া যে‌নো কল না ক‌রে। আর প্র‌তি‌দিন সকা‌লে কেন তার কল করা লাগ‌বে? ফো‌নে বে‌শি টাকা থাক‌লে কল সেন্টা‌রে কল ক‌রে কথা বল‌তে বল‌বেন।’
‘এগুলা কীভা‌বে ব‌লি?’
‘মুখ দি‌য়ে যেভা‌বে কথা ব‌লেন সেভা‌বে বল‌বেন।’
‘ই‌য়ে মা‌নে রেনু।’
‌রেনু ক‌ঠিন ক‌ন্ঠে বলল,
‘আপনা‌কে কল ক‌রে এত মিষ্টি মি‌ষ্টি কথা বলার কী দরকার? সে জা‌নে না আপ‌নি বিবা‌হিত?’
‘জা‌নে তো?’
‘তাহ‌লে ‌রোজ সকা‌লে-‌বিকাল ফোন ক‌রে ন্যাকু ক‌ন্ঠে কেন ব‌লে, শিহাব সা‌হেব ভা‌লো আছেন? কী ক‌রেন? ভাত খে‌য়ে‌ছেন? হ্যান কর‌ছেন? ত্যান কর‌ছেন?’
‘ও বল‌লে আমার কী দোষ?’
‘আপ‌নিও কী কম না‌কি?’
‘আ‌মি কী করলাম?
‘‌সে কল দি‌লেই কেন রি‌সিভ করতে হ‌বে? তার কথার উত্তর, এত ঢঙ ক‌রে কেন দি‌তে হ‌বে?’
‘তাহ‌লে কিভা‌বে উত্তর দিব?’
‘‌সে ফোন কর‌লে প্রথ‌মে জি‌জ্ঞেস কর‌বেন কী কাজ? কাজ থাক‌লে কথা বল‌বেন, নয়তো কল কে‌টে দি‌বেন?’
‘‌সেটা কি শোভনীয় দেখা‌বে?’
‘আপনা‌কে তার কা‌ছে এত শোভনীয় দেখা‌তে হ‌বে না। তার কা‌ছে ক‌ঠিন দেখা‌নোই বেটার।’
‘তু‌মি কিন্তু দিন দিন খুব প‌জে‌সিভ হ‌য়ে যাচ্ছ‌ো রেনু।’
‌রেনু কোম‌রে হাত দি‌য়ে বলল,
‘একশবার হ‌বো। হাজার বার হ‌বো। আপনার ‌কো‌নো সমস্যা?’
‘ইয়ে মা‌নে।’
‌রেনু ধম‌কের সু‌রে বলল,
‘চুপ। যান অফি‌সে। আস‌ছে মে‌য়ে‌দের সা‌থে ঢঙ ক‌রে কথা বলা লাগ‌বে।’

‌শিহাব রেনুর সাম‌নে মুখ ভার ক‌রে রাখ‌লেও ম‌নে ম‌নে বেশ খু‌শি হ‌লো। ওকে নি‌য়ে রেনুর প‌জে‌সিভ‌নেস দে‌খে শিহা‌বের স‌ত্যি ভা‌লো লাগ‌ছে খুব। জেবা মে‌য়েটা ভা‌লো কিন্তু কথা বলার ধরন একটু ন্যাকা টাই‌পের। যে কার‌ণে রেনু জেবা‌কে একদম পছন্দ ক‌রে না। শিহা‌বের বি‌য়ের পর দু‌দিন জেবা ওদের বা‌ড়ি‌তে এসে‌ছি‌ল। জেবার গা‌য়ে পরা, ন্যাকা কথা ধরন দে‌খে রেনুর ওকে এত অপছন্দ হ‌য়েছে যে, জেবা শিহাব‌কে কল কর‌লেই রেনু তে‌লে বেগুনে জ্ব‌লে ওঠে। নেহাৎ ‌শিহাব আর জেবা একসা‌থে কাজ ক‌রে বিধায় রেনু তেমন কিছু বল‌ছে না। কিন্তু য‌দি এক ক‌লে‌জে পড়ত আর রেনু সে ক‌লে‌জের টিচার হ‌তো, দেখা যে‌তো রেনু, জেবা‌কে টি‌সি দি‌য়ে ক‌লেজ থে‌কে বের ক‌রে দিত। শিহাব মুচ‌কি মুচ‌কি হাসতে হাস‌তে অফি‌সের উদ্দে‌শ্যে বের হ‌ল।

সকাল দশটা।
শশী ঘুমা‌চ্ছে। লি‌পি শশীর রুমে এসে, শশীর দি‌কে তা‌কি‌য়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। মে‌য়েটার চোখ মুখ একদম ব‌সে গে‌ছে। তারপর শশীর বিছানায় টানা‌নো মশা‌রিটা খু‌লে গু‌ছি‌য়ে রাখল। শশী ততক্ষ‌ণে উঠে গে‌ছে। লি‌পি গি‌য়ে শশীর পা‌শে বসল। শশী লিপির কো‌লে মাথা রে‌খে বলল,
‘ভা‌বি তোমার কাল‌কের ব্যবহা‌রে আমি অনেক অবাক হ‌য়ে‌ছি।’
‌লি‌পি শশীর মাথায় হাত বু‌লিয়ে দি‌তে দি‌তে বলল,
‘আ‌মি জা‌নি।’
‘‌কেন কর‌লে ভা‌বি এমন?’
‘শশী বল তো আমার বি‌য়ের বয়স কত বছর?’
‘‌তে‌রো বছর।’

‘আ‌মি যে‌দিন এ বা‌ড়ি‌তে প্রথম বি‌য়ে ক‌রে আসি তখন তুই নয় কি দশ বছ‌রের ছোট্ট বাচ্চা। তুই দেখ‌তে ভীষণ কিউট ছি‌লি। গলুমলু একটা পুতু‌লের ম‌তো। যে পুতুল‌কে তখন থে‌কেই ছো‌টো বো‌নের ম‌তো ভা‌লো‌বে‌সে ফে‌লে‌ছিলাম। আমার সময় কাটা‌নোর সঙ্গী ছি‌লি তুই। তোর ভ‌াইয়া তো কা‌জের চা‌পে আমা‌কে তেমন সময় দি‌তে পারত না। আমার সারা‌টা‌দিন চ‌লে যে‌তো তো‌কে নি‌য়েই। আমি এ বা‌ড়ি‌তে আসার পর তোর সব‌চে‌য়ে বে‌শি খেয়াল আমিই রে‌খে‌ছি। মা নি‌জেও এ কথা স্বীকার ক‌রেন। আমি কিন্তু কখ‌নও তো‌কে নি‌জের ননদ ভা‌বি‌নি, সবসময় নি‌জের সন্তা‌নের ম‌তো ভে‌বে‌ছি তো‌কে। বি‌য়ের ছয় বছর পর আ‌মি কন‌সিভ ক‌রি কিন্তু মাতৃ‌ত্বের প্রথম স্বাদ তো আমি তো‌কে দি‌য়েই পে‌য়ে‌ছিলাম। শশী তোর ম‌নে আছে তোর যখন প্রথম পি‌রিয়ড হ‌য়ে‌ছি‌ল, সে‌দিন মা ঘ‌রে ছি‌লো না, তুই ভ‌য়ে কান্না কর‌তে কর‌তে আমার কা‌ছে এসে‌ছি‌লি। আমিই তোকে সবটা বু‌ঝি‌য়ে দি‌য়ে‌ছিলাম। শুধু তাই না তোর রক্তমাখা কাপড়গুলোও আমি ধু‌ঁয়ে‌ছিলাম। তোর সকল কাজ এ বা‌ড়ি‌তে সব‌চে‌য়ে বে‌শি আমি ক‌রি। বিগত তে‌রো বছ‌রে, তোর মা মা‌নে আমার শাশু‌ড়িও তোর ওতটা খেয়াল রা‌খে‌নি যতটা আমি রে‌খে‌ছি। তোর সকল ছোট বড় কা‌জের অলি‌খিত সাক্ষী কিন্তু আমি। এ কথা মা‌নিস কিনা?’

‘‌সে আর বলা লাগ‌বে ভাবি? সবাই জা‌নে তু‌মি আমা‌কে ননদের ম‌তো নয় বরং সন্তা‌নের ম‌তো স্নেহ ক‌রো।’
‘শশী, তোর সুখ-দুঃখ সবটাই আমার কা‌ছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমি জা‌নি তুই-ও আমা‌কে নি‌জের সব‌চে‌য়ে কা‌ছের বন্ধু ম‌নে ক‌রিস তাই তো?’
‘হ্যাঁ।’
‘তাহ‌লে বিগত কতমাস যাবত যে সজল তো‌কে মান‌সিক টর্চার কর‌ছে তুই আমা‌কে কেন ব‌লিস‌নি?’

শশী মাথা নিচু ক‌রে রইল। লি‌পি আবার বলল,
‘তো‌কে যখন এক ছে‌লে প্রথবার প্র‌পোজ ক‌রে‌ছি‌লো, তুই আমা‌কে ব‌লেছি‌লি। আমি খোঁজ খবর নি‌য়ে জানলাম ছে‌লেটা ভা‌লো না। তো‌কে বললাম ছেলেটার থে‌কে দূ‌রে থাক‌তে। তুইও বিনা বা‌ক্যে আমার কথা মে‌নে নি‌য়ে‌ছিল। কারণ তুই আমা‌কে ভরসা কর‌তি। সজল যে‌দিন তো‌কে প্র‌পোজ করল, তুই ওকে হ্যাঁ বল‌লি। আর সে কথাও সে‌দিন এসে আমা‌কে বল‌লি। আমি তোর খু‌শি, আর সজ‌লের প্র‌তি তোর বিশ্বাস ভরসা দে‌খে সে‌দিন কিছু বল‌তে পা‌রি‌নি। কিন্তু সজল আর ওর প‌রিবার সম্প‌র্কে খোঁজ নি‌য়ে আমি যেমন খারাপ কিছু পাই‌নি, তেম‌নি ভা‌লো কিছুও পাই‌নি। তবুও তোর খু‌শির কথা ভে‌বে চুপ ছিলাম। কিন্তু বিগত মাস খা‌নিক যাবত তোর ফোন চেক ক‌রে তোর আর সজ‌লের সম্পর্ক দে‌খে আমি চূড়ান্ত হতাশ। হ্যাঁ আমি গত একমাস যাবত প্রায়ই তোর ফোন চেক ক‌রি। তোর মে‌সেঞ্জার চেক ক‌রি। তোর কো‌নো কিছু তো আমার কা‌ছে গোপন না। হোক ফোন পাসওয়ার্ড কিংবা তোর প্রেম।

আর শোন রাযী‌নের সা‌থে তোর বি‌য়ের কথা কিন্তু আজ থে‌কে নয়, বরং ছয়মাস আগে থে‌কে চল‌ছে। ম‌নে আছে, ছয় মাস আগে একটা ছে‌লেকে ফোন ক‌রে অনু‌রোধ ক‌রে‌ছি‌লি তা‌কে তুই বি‌য়ে কর‌তে পার‌বি না। তুই অন্য একজন‌কে ভা‌লোবা‌সিস। সে ছে‌লে আর কেউ নয় বরং রাযীন ছি‌ল। তখন তোর কথা মে‌নে রাযীন পি‌ছি‌য়ে গে‌লেও, রাযীন তো‌কে ভা‌লো‌বে‌সে ফেলে। ফ‌লে ক‌’দিন আগে আবার ওরা বি‌য়ের প্রস্তাব পাঠায়। এবার আমিই মা‌কে ব‌লে‌ছিলাম তারা যে‌নো দেখ‌তে আসে। এবং পছন্দ হ‌লে বি‌য়ের ব্যবস্থা ক‌রে। কারণ আমি বু‌ঝে গে‌ছিলাম সজল তোর জন্য ঠিক নয়।

রাযী‌নের সম্প‌র্কে আমরা সবাই খোঁজ খবর নি‌য়ে‌ছি। আমি ব্য‌ক্তিগতভা‌বেও রাযী‌নের সম্প‌র্কে খোঁজ নি‌য়ে‌ছি। রাযীন আর ওর প‌রিবার সম্প‌র্কে খোঁজ নি‌য়ে আমরা সবাই মুগ্ধ। রাযীন ছে‌লেটা শুধু দেখ‌তেই সুন্দর নয়, বরং ওর চ‌রিত্রও ভীষণ সুন্দর। ওর প‌রিবা‌রের মানুষও খ‌ুব ভা‌লো। রাযী‌নের সম্প‌র্কে খোঁজ নি‌য়ে যতটা মুগ্ধ হ‌য়ে‌ছি, সজল আর ওর প‌রিবা‌রের সম্প‌র্কে আবারও ভা‌লো ক‌রে খোঁজ নি‌য়ে ততটাই হতাস হ‌য়ে‌ছি। সজ‌লের বড় ভাইও কিছু ক‌রেন না। অলস প্রকৃ‌তির। বা‌পের পয়সায় চ‌লে। সজ‌লের বাবা-মা‌ এর সম্প‌র্কেও তেমন ভা‌লো রি‌পোর্ট পাই‌নি। সজ‌লের বাবা সু‌দে টাকা লাগায়। এটাই তার প্রধান কাজ। হ্যাঁ আর্থিক দিক দি‌য়ে ওদের অবস্থা খুব ভা‌লো হ‌লেও মানুষের দিক থে‌কে সু‌বিধার নয়। সজ‌লের সম্প‌র্কে তেমন নে‌গেটিভ কিছু না পে‌লেও তুই একবার ভাব যার প‌রিবার এমন সে কেমন হ‌তে পা‌রে? পা‌রিবা‌রিক শিক্ষা ব‌লেও তো একটা কথা আছে।

গতকাল সবার সাম‌নে আমার ওমন ব্যবহারে তুই বি‌স্মিত হয়ে‌ছিস জা‌নি। বি‌শেষ ক‌রে রাযী‌নকে বার বার তোর স‌ন্নিক‌টে আনায় তুই আমার উপর রাগ ক‌রে‌ছিস তাও আমি জা‌নি। কিন্তু যে মে‌য়েটা‌কে আমি ছোট‌বেলা থে‌কে পে‌লেপু‌ষে বড় ক‌রে‌ছি, যার খু‌শি‌তে নি‌জের খু‌শি খু‌ঁজে‌ছি। যার চো‌খের জল আমাকে কষ্ট দেয়, তা‌কে আজীবন ক‌ষ্টের সাগ‌রে আমি কী ক‌রে ভা‌সি‌য়ে দেই? সজল তোর জন্য একদম স‌ঠিক না। আজ ভোর রা‌ত্রে আমি তোর রু‌মে আমি এসে‌ছিলাম, তুই তখন অগোছা‌লোভা‌বে বিছানায় ঘু‌মা‌চ্ছি‌লি। তোর চো‌খে কান্নার দাগ দে‌খে আমার বুকটা ভে‌ঙে যা‌চ্ছিল। তোর বিছানায় মশা‌রি টা‌নি‌য়ে আমি তোর ফোন চেক ক‌রি। সজ‌লের সা‌থে হওয়া তোর মে‌সেজগু‌লো দে‌খি। স‌ত্যি বল‌তে তোর বোকা‌মি দে‌খে আমার তোর উপর ভীষণ রাগ হ‌য়ে‌ছিল। সজল বু‌ঝে গে‌ছে ও তোর দুর্বলতা। এ কার‌ণে ও তোর দুর্বলতার সু‌যোগ নি‌চ্ছে। কাউ‌কে ভা‌লোবাসা মা‌নে, তা‌কে নি‌জের উইক প‌য়েন্ট করে নেয় না! ভা‌লোবাসা কখ‌নো দুর্বলতার নাম হ‌তে পা‌রে না! ভা‌লোবাসা না‌মেই তো অসাধ্য সাধ‌নের শ‌ক্তি। ভা‌লোবাসা না‌মেই তো জীব‌নের আনন্দ। সে ভা‌লোবাসা কেন তোর দুর্বলতা হ‌ল? সে ভা‌লোবাসা কেন তোর জীব‌নে আনন্দ বহন না ক‌রে দুঃখ ব‌য়ে আন‌ছে?

শশী জানিস বাবা তোর নাম শশী কেন রে‌খে‌ছি‌লেন? শশী মা‌নে চাঁদ। ছোট বেলায় তুই না‌কি খুব সুন্দর ছি‌লি, আর তোর মু‌খে না‌কি বাঁকা চাঁ‌দের ম‌তো সবসময় হা‌সি লেগেই থাকত, ‌সে কার‌ণে তোর নাম বাবা না‌কি শশী রে‌খে‌ছি‌লেন। বাবাই আমা‌কে বহুবার এ গল্প ব‌লে‌ছি‌লেন। আর আমা‌দের সেই হা‌সি-খু‌শি শশীর মু‌খে আমি কত‌দিন যাবত হা‌সি দে‌খি না। আমার চাঁ‌দের ম‌তো বোনটা অন্ধকার অমাবস্যার ম‌তো মুখ কা‌লো ক‌রে থা‌কে সবসময়। কান্না কর‌তে করতে যার চো‌খের নি‌চে কা‌লি জ‌মে‌ছে। আমি তা কী ক‌রে সহ্য ক‌রি বল? আমি চাই তু‌ই সুখী হ। আর আমি জা‌নি তুই সজ‌লের সা‌থে নয়, বরং রাযী‌নের সাথে সুখী হ‌বি। বিশ্বাস কর স‌ত্যি সুখী হ‌বি।
আর তারপরও য‌দি তোর আমার কথা ঠিক ম‌নে না হয়, ত‌বে বুধবার সজ‌লের সা‌থে কথা ব‌লে বা‌কিটা ভা‌বিস। য‌দি সজল তো‌কে স‌ত্যি ভরসা দেয় যে, ও তো‌কে বি‌য়ে কর‌বে, ত‌বে কথা দি‌চ্ছি আমি নি‌জে তোর আর রাযী‌নের বি‌য়ে ভে‌ঙে দিব। আমি নি‌জে দাঁ‌ড়ি‌য়ে তোর আর সজ‌লের বি‌য়ে দিব। প‌রিবা‌রের সবাই‌কে ম্যা‌নেজ করার দা‌য়িত্ব আমার। কিন্তু বুধবার য‌দি সজল তো‌কে ভরসাজনক কো‌নো কথা বল‌তে না পা‌রে, ত‌বে কথা দে তুই শুক্রবার রাযীন‌কে বি‌য়ে কর‌বি?’
শশী অসহায় চো‌খে কেবল লি‌পির দি‌কে তা‌কিয়ে রইল।

১২!!

আদ্রর ক‌াছ থে‌কে দোলা বেগম শশীর পু‌রো ঘটনাটা শুনলো। ত‌া‌রপর কিছুক্ষণ ভে‌বে বলল,
‘আ‌মি তো সা‌জেস্ট করব তু‌মি শশী এবং সজ‌লের সম্পর্ক থে‌কে দূ‌রে থা‌কো। বি‌শেষ ক‌রে সজলের সা‌থে দেখা করা কিংবা ওদের সম্প‌র্কের বিষ‌য়ে কথা বলা তোমার উচিত হ‌বে না। তা‌তে ওদের সম্পর্ক শুধরা‌নোর বদ‌লে উল্টা বিগড়ে যা‌বে।’
কৌতুহলী আদ্র বলল,
‘‌কেন মা?’
‘ধর, আদ্র তোর আর অথৈর ম‌ধ্যে কো‌নো বিষয় নিয়ে খুব প্রব‌লেম হ‌ল। সে বিষয়টা যতক্ষণ তোরা নি‌জে‌দের মাঝে রে‌খে সলভ করার চেষ্টা কর‌বি ততক্ষণ দেরী হ‌লেও সেটার সমাধান হ‌বে। কিন্তু যখনই তো‌দের সে সমস্যার ম‌ধ্যে অন্য একজন আস‌বে, যেমন, ধর রায়হান আসল তখনই ব্যাপারটা বিগ‌ড়ে যা‌বে। কারণ তুই নিশ্চয়ই চাইবি না তোর স্ত্রীর বিষ‌য়ে অথব‌া সম্প‌র্কের ম‌ধ্যে অন্য কো‌নো ছে‌লের আগমন ঘটুক। তেমন তো সজলও। কোনো মানুষ-ই নি‌জে‌দের সম্প‌র্কে তৃতীয় ব্য‌ক্তির আগমন পছন্দ ক‌রেন না। বি‌শেষ ক‌রে ছে‌লেরা নি‌জের স্ত্রী অথবা প্রে‌মিকার ক্ষে‌ত্রে খুব প‌জে‌সিভ থা‌কে। তো নি‌জের প্রে‌মিকার কা‌জিন শুন‌লেই ছে‌লে‌দের মাথা‌ গরম হ‌য়ে যায়, তারপর তো তার সা‌জেশন নেয়া।
আর সজ‌লের বিষ‌য়ে যা বল‌লি তা শু‌নে ম‌নে হ‌লো ছে‌লেটা ওদের সম্প‌র্কে প্র‌তি না সি‌রিয়াস, আর না যত্নশীল। যে মানুষ একটা সম্পর্ক নি‌য়ে সি‌রিয়াস হয় ন‌া, যত্নশীল হয় না, তা‌কে তুই কিভা‌বে বুঝা‌বি? উল্টা তো‌কে না অপমান ক‌রে দেয়!’
‘মা অামার আর অথৈর মা‌ঝেও তো কত পাহাড় সমান প্র‌োব‌লেম এসে‌ছি‌ল। সেখা‌নে তো তু‌মি এসে‌ছি‌লে। আমা‌দের সম্পর্কটা‌কে কত সুন্দর ক‌রে গু‌ছি‌য়ে দি‌লে।’

মৃদু হে‌সে দোলা বলল,
‘‌তো‌দের সম্প‌র্কে পাহাড় সমান প্রোব‌লেম থাক‌লেও তোরা একে অপর‌কে নি‌য়ে অসম্ভব সি‌রিয়াস ছি‌লি। তো‌দের দুজনার একে অপ‌রের প্র‌তি বিশ্বাস ছি‌লো প্রখর। বলতে গেলে তোরা দু’জন দু‌টো শরী‌রের এক প্রাণ। তো‌দের আলাদা করা কি সম্ভব ছি‌ল? বা‌কি যত প্রব‌লেম ছি‌লো, তো‌দের একে অপ‌রের প্র‌তি দৃঢ় বিশ্বা‌সের কার‌ণে সেগু‌লো সহ‌জে আমি সলভ কর‌তে পে‌রে‌ছিলাম। তাছাড়া তো‌দের মা‌ঝে আমি পড়‌লেও আমার ভরসা ছি‌লো তো‌দের উপর। আর তো‌দের ভরসা ছি‌লো আমার উপর। আমি এটা বেশ ভা‌লো ক‌রে জা‌নি অথৈ তোর চে‌য়েও বে‌শি বিশ্বাস আমা‌কে।’

আদ্র অথৈর কান টেনে বলল,
‘বজ্জাত মে‌য়ে নি‌জের বর ছে‌ড়ে শাশু‌ড়ি‌কে বিশ্বাস কর‌তে একটুও বাঁ‌ধে না?’
অ‌থৈ হে‌সে দোলা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
‘শাশু‌ড়িটা এমন প‌জে‌টিভ ব‌লেই তো আমার বাদর বরটা এত ভা‌লো।’
‌দোলা বেগম দুজন‌কে থা‌মি‌য়ে বলল,
‘‌তো‌দের মা‌ঝে যে ভরসাটা আছে সে, ভরসাটা কিন্তু সজল-শশীর একে অপ‌রের প্র‌তি নেই। যেখা‌নে তারা একে অপ‌রের ভরসা জিত‌তে পার‌ছে না, তো তোর কথা কেন মান‌বে?’
আদ্র বলল,
‘তাহ‌লে কী করব মা?’
‘তুই বরং ফো‌নে কথা বল‌তে পা‌রিস অথব‌া শশী‌কে দি‌য়ে তোর কথাগু‌লো বলা‌তে পা‌রিস। তা‌রপর যা বলার সজল-ই বল‌বে।’
‘মা আমি যে শশী‌কে ব‌লে‌ছি আ‌মি সজ‌লের সা‌থে দেখা করব?’
‘আচ্ছা তাহ‌লে দেখা কর। ত‌বে যাই বল‌বি ভে‌বে বল‌বি। এমন কিছু বল‌বি না, যা‌তে ওদের সম্প‌র্কে নে‌গে‌টিভ প্রভাব প‌ড়ে।’

১৩!!

রাযীন, শশী‌কে কল করল। শশী, রাযী‌নের নাম্বার চি‌নে না। তাই রি‌সিভ ক‌রে সালাম দিলো।
‘আসসালামু আলাইকুম।’
‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।’
‘‌কে বলছেন?’
‘আ‌মি রাযীন।’
‘হ্যাঁ বলুন।’
‘‌কেমন আছো?’

চল‌বে•••••