এক্স গার্লফ্রেন্ড যখন বেয়াইন পর্ব-১২

0
430

#এক্স_গার্লফ্রেন্ড_যখন_বেয়াইন
#পর্ব_১২
#লেখক_মোঃ_আঃ_আজিজ
ডাক্তার– আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি রে দোস্ত কিন্তু কিছু করতে পারলাম না। আজিজ কে খুব খারাপ ভাবে মারা হয়েছে। ওর হাত পায়ের শিরায় শিরায় বেশি মারা হয়েছে। আর সব থেকে যেটা খারাপ হয়েছে তা হলো মাথায় বারি মারার কারনল ওর মস্তিষ্কতে সজোরে আঘাত হেনেছে।
তাই আমাদের হাতে আর কিছু নেই রে দোস্ত।
বুলবুল– দোস্ত আজিজ এর জ্ঞান কি ফিরেছে?
ডাক্তার– না! আর ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমরা জ্ঞান ফিরারও কোনো সম্ভাবণা দেখছি না। আর আজিজ যে অবস্থাতে এখন আছে তাতে ওর সেন্স ফিরতে ২৪ ঘন্টা অথবা ১ মাস ১বছর আবার নাও ফিরতে পারে। মানে আমি তোদের বোঝাতে চাচ্ছি আজিজ এখন কোমাতে চলে গেছে।
ডাক্তারের কথা শুনে জান্নাত আবারো জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। সবাই মিলে জান্নাত কে নিয়ে আবার ব্যস্ত হয়ে পরে। জান্নাত কে একটা কেবিনে নিয়ে রাখা হয়। জান্নাত এর পাশে বসে আছেন জান্নাত এর বোন। আজিজ কে দেখার জন্য তার পরিবারের সবাই ব্যস্ত হয়ে পোরেছেন। কিন্তু ডাক্তার বারন করে দিয়েছে ২৪ ঘন্টা না যাওয়া পর্যন্ত রোগিকে কোনো প্রকার বিরক্ত করা যাবে না। এদিকে জান্নাত এর প্রায় ঘন্টা খানিক পড়ে জ্ঞান ফিরে। জ্ঞান ফিরতেই আজিজ আজিজ বলে চিৎকার করে উঠে।
জান্নাত– আপু আমার বর কোই রে? ওর কিছুই হয় না তাই না রে আপু। ওই ডাক্তারটা না খুব বাজে তাই না রে আপু। আমার বর কে নিয়ে কি সব বাজে কথা বলছিলো। আমি আমার বর এর কাছে যাবো! আমাকে নিয়ে চল না রে আপু। বলেই জান্নাত শোয়া থেকে উঠে বসে পরে।
আপু– তুই শান্ত হ বোন। আজিজ এর তো কিছুই হয় নাই তাই না। আজিজ এখন ঘুমিয়ে আছে ওকে তো এখন বিরক্ত করা যাবে না। আজিজ এর কাছে গেলে তো আজিজ এর ঘুম ভেঙে যাবে তাই-না রে বোন। (কথা বলছে আর চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে)
জান্নাত– তুই কান্না করছিস কেনো রে আপু ওহ আমি বুঝতে পেড়েছি তোরা মিথ্যা বলে আমাকে শান্তনা দিচ্ছিস তাই না?
আপু–(চোখ মুছতে মুছতে) ধুর পাগলী, আমি কখন কাদলাম। এই দেখ আমার চোখে কি পানি আছে নাকি। তুই কি দেখতে কি দেখেছিস।
জান্নাত– তাহলে আমাকে আমার বর টার কাছে নিয়ে চল। আমার বর টাকে আমার খুব দেখতে ইচ্ছা করতেছে।
আপু– তোকে বললাম না আজিজ এখন ঘুমিয়ে আছে ওকে বিরক্ত করা যাবে না।
জান্নাত– আমি কোনো রকমের বিরক্ত করবো না সত্যি বলছি। শুধু একটু দুর থেকে দেখব, নিয়ে চল না রে আপু(আবেগি কন্ঠে)
আপু– বললাম না আজিজ ঘুমাচ্ছে।
জান্নাত– তোকে আমি বললাম না আমি শুধু দুর থেকেই ওরে দেখবো কথা কি তোর কানে জায় না?(জোরে চিৎকার করে) (তারপর ওর আপু কে জরিয়ে ধরে) আমাকে নিয়ে চলনা রে আপু! শুধু একটা বার দুর থেকে আমার বর টাকে দেখবো যাবি না নিয়ে আমাকে?(কান্না করতে করতে)
আপু– দুরে থেকেই দেখবি তো কাছে যাবার জন্য আবার পাগলামো করবি না তো?
জান্নাত– সত্যি বলছি শুধু দুরে থেকেই একটা বার দেখবো।
তারপর আপু জান্নাত কে নিয়ে আজিজ এর কেবিনের সামনে যায়। আজিজ এর কেবিনের সামনে শুধু বুলবুল বসে আছে। আর বাকি সকল কে তারিয়ে দিয়েছে বুলবুল। ও বলেছে সব কিছু একাই দেখতে পারবে। আর জান্নাত এর কাছে রয়ে গেছে ওর আপু।
জান্নাত ধীর পায়ে হাটতে হাটতে কেবিনের সামনে চলে আসলো। কাচের দরোজা দিয়ে দেখা যাচ্ছে একজন সোজা টান হয়ে শুয়ে আছে। হাতে পায়ে আঘাতের চিহ্ন মাথায় ব্যন্ডিস হাতে স্যালাইন এর শুচ লাগানো। তাপরেও জান্নাত এর চিনতে ভুল হলো না এটা ওর সব থেকে কাছের মানুষ ওর বর। জান্নাত দরজার কাচের সাথে হেলান দিয়ে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে ফ্লোরে বসে একদম স্তব্ধ নির্বাক হয়ে আজিজ কে দেখতে লাগলো।
এক সময় হুট করেই দাঁড়িয়ে জান্নাত ডাক্তার ডাক্তার বলে চিল্লাতে লাগলো।
জান্নাত– ডাক্তার ডাক্তার। প্লিজ দরজা টা একবার খুলে দিন আমি শুধু একটা বার আমার বর টাকে আদর করবো। দেখবেন তাতেই আমার বর সুস্থ হয়ে উঠবে। প্লিজ ডাক্তার খুলে দিন না। (চিৎকার করে)
ডাক্তার– সরি আপু এখন এটা আমরা এ্যলাও করতে পারি না।
আপু– বোন বোন তুই শান্ত হ বোন। তুই না বললি কোনো পাগলামো করবি না।
জান্নাত– আপু দেখনা আজিজ এর খুব কষ্ট হচ্ছে। ওনাদের বল না আমাকে একবার আজিজ এর কাছে যেতে দিতে। ( দৌড়ে বুলবুল এর কাছে গিয়ে) ভাইয়া আপনি একবার ওনাদের বলুন না দরজাটা একবার খুলে দিতে। ডাক্তার টা তো আপনার বন্ধু হন আপনার কথা শুনবে প্লিজ ভাইয়া একটা বার বলুন না।
বুলবুল– জান্নাত! জান্নাত তুমি শান্ত হও আমি দেখছি কি করা যায়। (ডাক্তার এর কাছে গিয়ে) দোস্ত একটা বার কি জান্নাত কে ভিতরে যেতে দেয়া যায় না?
ডাক্তার– দোস্ত দেখ এতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
বুলবুল– কিন্তু দোস্ত একটা বার মেয়ে টার কথা ভেবে দেখ ও এখন কিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
ডাক্তার– কিন্তু দোস্ত!
বুলবুল– কোনো কিন্তু নয় দোস্ত! প্লিজ বিষয় টা একটা বার ভেবে দেখ।
তারপর ডাক্তার কিছু একটা ভেবে দরজা টা খুলে দেন। জান্নাত আর এক মুহূর্তও দাঁড়িয়ে না থেকে দৌড়ে ভিতরে চলে যায়। আজিজ এর ঠিক পা বরাবর গিয়ে দাড়ায়। তারপর বসে পা দুটো জরিয়ে ধরে,,,,,,
জান্নাত– তুমি আমার সাথে মজা করতেছো তাই না বর? তোমাকে জানাই নেই যে আমাদের সম্পর্কের কথা সবাই যানে তার জন্য আমার ওপর অভিমান করে আছো তাই না বর! বিশ্বাস করো আর কোনো দিন তোমার কাছে থেকে কোনো কথা লুকাবো না। প্লিজ একটা বার কথা বলো। একটা বার তোমার ওই মুখ দিয়ে বলো না আমাকে যে,,, তুমিই আমার এক মাত্র দুষ্টু মিষ্টি আদরের বউ। আমাকে বলো না আমার পেত্নী বউ। কি বলবে না? দেখো এই পেত্নী টার না খুব কষ্ট হচ্ছে। তুমি বলতে এই পেত্নী টাকে তুমি কখনোই কষ্ট পেতে দিবে না। তাহলে কেনো এই পেত্নী টাকে কষ্ট দিতেছো? তুমি না সত্যি খুব সার্থ পর একটা মানুষ। কাল রাতেই না বললে আমাকে ছেড়ে কোনো দিন কোথাও যাবে না। আমাদের কে কেউ আলাদা করতে পারবে না। যে আমাদের আলাদা করতে আসবে তারই হাত পা ভেঙে দিবে। তাহলে কেনো আমাকে একা রেখে নিজেই চলে যাচ্ছো? বল না কথা বলো বর। তুমি আমার সাথে কথা না বললে কি হবে আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাচ্ছি না এই বলে দিলাম। আর আমি তো তোমার সাথে সব সময় কথা বলেই যাবো তুমি আমার সাথে কথা বলো আর নাই বলো।
**৫ মাস পর**
আজিজ এখনো সেই আগের মতনই আছে। জান্নাত এর সাথে আর কোনো কথা বলে না। কিন্তু জান্নাত সব সময় আজিজ এর পাশেই থাকে আর সারা টা দিন ওর সাথে ভোগ ভোগ করেই যায়।
এদিকে জান্নাত এর আম্মু,,, আজিজ এর আম্মু কে বলছেন।
জান্নাত এর আম্মু– বেয়াইন একটা কথা বলবো?
আজিজ এর আম্মু– জ্বি বেয়াইন বলেন এতে আবার জিজ্ঞেস করতে হবে কেনো।
jআম্মু– বেয়াইন দেখেন আজিজ এ ভাবে পরে আছে কম দিন তো হলো না। আর যে কথা টা বলতে চাইছি আপনি নিশ্চই বুঝতে পেড়েছেন। আমার মেয়ে জান্নাত ওর ও তো একটা ভবিষ্যত বলতে কিছু আছে তাই না বেয়াইন? এভাবে আর কত দিন চলতে দেয়া যায় আপনিই বলুন? (সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলো জান্নাত এর আপু)
আপু– আম্মু তুমি কি বলছো এসব?
Aআম্মু– বউ মা উনি তো ঠিকই বলছেন আমার ছেলে টা তো আর ভালো নেই আর জান্নাত এরও তো একটা ভবিষ্যত আছে। তাই আমার ছেলের জন্য তো আর জান্নাত এর ভবিষ্যতটা নষ্ট করতে পারি না(বলেই আরাল হয়ে চোখের পানি টা মুছে নিলেন)
আপু– মা আপনি আম্মু কথায় কিছু মনে করবেন না। আর আম্মু তুমি যা ভাবছো তা কিছুই হচ্ছে না।
Aআম্মু– না মা তা হয় না। বেয়াইন চলেন আমরা এখনই হসপিটাল এ গিয়ে জান্নাত কে সব বুঝিয়ে বলবো।
তারপর সকলে মিলে হসপিটাল চলে আসেন। এসে দেখে জান্নাত আজিজ এর গা (শরীর) মুছিয়ে দিচ্ছে। জান্নাত সকলকে দেখে,,,,,
জান্নাত– আরে আম্মু আপু তোমরা? তোমরা কখন এলে।(মুচকি হেসে)
আম্মু– এইতো মা মাত্রই এলাম। তুই কি করছিলি রে মা?
জান্নাত– দেখনা আম্মু তোমাদের ছেলে টার নাকি অনেক গরম ধরেছে। তাই ওর গা টা মুছে দিচ্ছিলাম।
জান্নাত এর কথা শুনে আজিজ এর আম্মু মুখ চেপে কান্না করে দেন।
জান্নাত– আরে আম্মু তুমি কাদছো কেনো। দেখনা আমি কি কখনো কাদি না কি?
আম্মু– কোই মা এই দেখ আমি একদম কাঁদছি না। মারে তোকে এক টা কথা বলি।
জান্নাত– হুম বলো।
আম্মু– মারে তুই আর আমার এই আদ মরা ছেলেটার সাথে কত দিন থাকবি বলতো? তোরও তো একটা ভবিষ্যত আছে তাই না রে মা সেটাও তো ভাবতে হবে আমাদের।
আজিজ এর আম্মু কথা শুনে জান্নাত এর হাসি মাখা মুখ খানা নিমিষেই খালো হয়ে যায়।
জান্নাত– তুমি কি বলতে চাচ্ছো আম্মু আমি আমার বর টাকে ছেড়ে চলে যাই এটাই বলতে চাচ্ছো তাই না?
জান্নাত এর আম্মু– হে রে মা তুই একদম ঠিকই ধরেছিস। আর কত দিন এই মিথ্যে জীবন কাটাইবি বল?
জান্নাত– আম্মু তোমরা যদি ভেবে থাকো আমার বর এর কাছে থেকে আমাকে আলাদা করবে তাহলে ভুল ভেবেছো।
জান্নাত এর আম্মু– কিন্তু মা,,,,,
জান্নাত– কোনো কিন্তু নয়। (চিৎকার করে) তোমরা এখন এখান থেকে যাও তো আমার ভালো লাগছে না। বিশেষ করে তোমাদের কে এখন আমার একদমই সয্য হচ্ছে না। বের হও প্লিজ। জান্নাত তাদের কে এক প্রকার ধাক্কায় বের করে দিলো। তারপর আজিজ এর মুুখ সামনে মুখ এনে কান্না করতে করতে (একটা কথা এই ৫মাসে জান্নাত এক টা দিনও কাদে নাই প্রথম দিন বাদে সে আজিজ এর সাথে থেকে নিজেকে সুখীই মনে করতো। আজকেই প্রথম কান্না করছে)
জান্নাত– বর এই বর তুমি ওদের কথা শুনেছো? ওরা তোমার কাছ থেকে আমাকে কেরে নিতে চায়। আমাদের কে আলাদা করে দিতে চায়। তুমি না বলতে আমাদের কে কেউ আলাদা করতে পারবে না। যে আলাদা করতে আসবে তুমি তার হাত পা ভেঙে দিবে। তাহলে এখন চুপ করে আছো কেনো। চলনা আমরা দুজনে মিলে ওদের হাত পা ভেঙে দিবো,,, ওঠো না গো বর ওঠো। ওহ এখন আমি বুঝতে পেড়েছি তুমি তো এখন আর আমাকে ভালোই বাসো না তাই তো কিছু বলছো না তাই না। ঠিক আছে তোমার কিছুই করতে হবে না! যে আমাদের আলাদা করতে আসবে আমি একাই তার হাত পা ভেঙে দিবো। (জান্নাত আজিজ এর মুখের কাছে মুখ এনে এগুলো বলছে আর কান্না করছে। জান্নাত এর চোখের পানি আজিজ এর মুখে গিয়ে পরছে। কিন্তু আজিজ যেমন ঠিক তেমনি আছে। জান্নাত এর কথা গুলো যেনো সে শুনতেই পাচ্ছে না।
এক সময় জান্নাত হুট করেই ডাক্তার ডাক্তার বলে চিৎকার করে উঠে।
চলবে,,,,,,,,,,,,,,?
বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।