এক ফালি সুখ পর্ব-০৩

0
288

#এক_ফালি_সুখ🌼 |৩|
#তাসনিম_জাহান_মৌরিন
তূর্য সরু চোখে তাকিয়ে আছে দিয়ার দিকে। পাশে বসে থাকা তন্নি আর নির্ঝর এর দিকেও একবার তাকিয়েই বুঝতে পারে তারাও এই প্ল্যান এর অন্তর্ভুক্ত। তূর্য এবার কিছুটা সন্দেহ নিয়ে বলে,
_”আর ইউ সিরিয়াস?”

_”ইয়াহ,অভিয়াসলি আ’ম সিরিয়াস। আই রিয়েলি লাভ ইউ তূর্য, এন্ড আই থিংক ইউ অলসো লাইক মি।”

তূর্য কিছুক্ষন কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইলো দিয়ার দিকে। সৌন্দর্যের দিক থেকে দিয়ার ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন তোলার উপায় নেই, বেশ ভালো ফ্যামিলি থেকেই বিলং করে। আধুনিক সমাজের সঙ্গে একদমই মানানসই। তূর্যর সাথেও বেশ মানাবে তাকে। তবে তূর্যর কাছে যেন বিষয়টা ভালো লাগলো না, এছাড়াও সে সোজা কথা সোজাভাবে বলতেই পছন্দ করে। তাই উঠে দাঁড়িয়ে সরাসরি বলে দিলো,
_”সরি দিয়া, আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু গো অন আ রিলেশনশিপ উইথ ইউ।”

দিয়া,তন্নি,নির্ঝর তিনজনই যেন তূর্যর কথা শুনে আকাশ থেকে পরলো। নির্ঝর কেবল হা করে তাকিয়ে রইলো তূর্যর দিকে। তবে তূর্যর মাঝে তেমন কোনো ভাবান্তর নেই।
দিয়া সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ায়। তার চোখ টলটল করছে,যেন এক্ষুনি অশ্রু গড়িয়ে পরবে। তূর্যর সামনে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে বলে,
_”কেন তূর্য? অ্যাম আই নট বিউটিফুল?”

তূর্য মুখে কিছুটা বিরক্তির ভাব ফুটিয়ে বললো,
_”ইউ আর সো মাচ বিউটিফুল দিয়া, বাট আই ডোন্ট লাইক ইওর অ্যাটিটিউড। প্লিজ.. এক্সকিউজ মি।

টেবিলের উপরে রাখা গাড়ির চাবিটা হাতে নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসে তূর্য, সঙ্গে নিজের শার্টের পকেটে ঝুলিয়ে রাখা সানগ্লাসটা পরে নেয়।
একটা চুইংগাম মুখে দিয়ে চিবোতে চিবোতে গাড়িতে উঠে ড্রাইভ করতে শুরু করে তূর্য, তার মাঝে কোনো আহামরি ফিলিংস নেই। এইযে একটা মেয়েকে কয়েক মিনিট আগে রিজেক্ট করে আসলো,মেয়েটা নিশ্চই এখন কেঁদে ভাসাচ্ছে। তবে এসবের কোনো ভাবান্তর তূর্যর মাঝে লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
দিয়াকে তূর্যের অপছন্দ,ব্যাপারটা ঠিক তেমন নয়। পছন্দ না হওয়ার তেমন কোনো কারণ নেই। তবে দিয়াকে তূর্য যতদিন ধরে দেখছে, তাকে বেশ গায়ে পরা মনে হয়েছে। যদিও সে যথেষ্ট স্মার্ট,তবুও এমন গায়ে পরা মেয়ে তূর্যের খুব একটা ভালো লাগে না। তাই তাকে রিজেক্ট করার জন্য দুবার ভাবতে হয়নি তূর্যকে।
কিছুক্ষন বাদেই তূর্যর ফোনটা বাজতে শুরু করে, পাশের সিটেই রাখা ছিলো ফোনটা। একহাতে কলটা রিসিভ করে লাউড স্পিকারে দিয়ে গাড়ি চালানোতে মনোযোগ দেয় তূর্য, সামনের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলে,
_”বলুন ভাইয়া।”

অপর পাশ থেকে রাতুল বলে ওঠে,
_”কাল কিন্তু ফার্স্ট শুট,টাইমলি চলে এসো। স্ক্রিপ্ট কি পাঠাতে হবে? দেখবে একবার?”

_”প্রয়োজন নেই, এসেই দেখে নেবো।”

_”ওকে, আর তোমার বিপরীত কাস্টিং এ থাকছে..”

_”বলতে হবে না, যে থাকার থাকুক। আই ডোন্ট কেয়ার আবাউট দ্যাট।”

_”ওকে দেন, রাখছি।”

_”হুম”

কলটা কেটে দেয় রাতুল। নতুন এই নাটকে স্ক্রিপ্ট রাইটিংয়ে কাজ করছে সে, এর আগেও তূর্যের সঙ্গে দুটো কাজ করেছে সে। তাই তূর্যের সঙ্গে তার বেশ ভালোই আলাপ রয়েছে।

রাতুল কল কাটার কয়েক মিনিট পরেই তন্নি কল করে তূর্যকে। তূর্য আবারো আগের মতো ফোনের লাউড স্পিকার অন করে রাখে।

_”বল”

_”তুই দিয়ার সঙ্গে এমন করলি কেন?”
গম্ভীর গলায় কথাটা বলে তন্নি। তূর্য তার খুব একটা পাত্তা না দিয়েই স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,
_”কি করলাম আমি?”

_”সত্যি করে বল তো, আর ইউ ইন আ রিলেশনশিপ উইথ সামওয়ান এলস?”

তূর্য সামান্য হেসে উত্তর দেয়,
_”অফ কোরস নট।”

_”বিশ্বাস হচ্ছে না আমার।”

_”তূর্য লুকিয়ে কোনো কাজ করেনা।”

_”তাহলে খামোখা মেয়েটাকে কাঁদালি কেন? তোর সাথে তো ভালোই মানাতো দিয়াকে।”

_”এত কষ্ট হলে নিজেই যা ওর সঙ্গে রিলেশন এ,আমার মাথা খাচ্ছিস কেন?”

_”তূর্য!”
তন্নি রেগে গিয়ে বলে কথাটা। তূর্য বিরক্তিকর সুরে বলে,
_”ইউ নো দ্যাট আমার অমন গায়ে পরা মেয়ে পছন্দ না, শুধুশুধু কথা বাড়াচ্ছিস কেন?”

_”বাপ তোর যেমন মেয়ে পছন্দ,অমন মেয়ে তুই এই জন্মে খুজে পাবিনা।”

_”দেখাই যাবে। কই তোরা এখন?”

_”রেস্টুরেন্ট এই আছি, দিয়া তো পারে না এখানেই সেন্সলেস হয়ে যায়। নির্ঝর ওকে সান্ত্বনা দেওয়ার বহুত চেষ্টা করছে।”

শেষ কথাটা তন্নি কিছুটা মজা ছলেই বলেছে, তূর্য নিজেও তাতে হেসে দিয়ে বলে,
_”গুড গুড,চালিয়ে যেতে বল ওকে। বায়…”

তন্নি আর তূর্য সেইম এজ এর, একই ব্যাচ এর স্টুডেন্ট। নির্ঝর ওদের চেয়ে এক বছরের জুনিয়র,আর দিয়া চার বছরের। তাই তন্নির সাথে তূর্যর ফ্রেন্ডশিপ টা একটু বেশিই সুন্দর, নির্ঝর আর দিয়াও আছে এর মধ্যে। তবে দিয়াকে ওরা জুনিয়র হিসেবেই স্নেহ করে। দিয়া যদিও সেসব নিয়ে বেশি ভাবেনা, তূর্য তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করলেই সে খুশি। তবে আজ যা হলো, সেই শক থেকে বের হতে না জানি মেয়েটার কতদিন লাগে। আদতেও বের হতে পারে কিনা!

____
এই রোদের মধ্যে বাহিরে থাকায় ঘেমে যাচ্ছেতাই অবস্থা, তাই বাসায় এসেই আরো একবার গোসল করে নিলো মৌরিন। এরপর নামায পরে এসে খেতে বসলো, মারুফাও তার জন্যই অপেক্ষা করছি।
মৌরিন নামায শেষ করে এসে বসতেই মারুফা উৎসাহিত হয়ে বললেন,
_”একটা ভালো খবর আছে রে মৌ। ঐযে চারতলার ভাবি আছেনা? তাকে আমি বলে রেখেছিলেম কোনো প্রাইভেট টিচার দরকার হলে জানাতে। আমায় এসে বললো ওনার যে ছোট মেয়েটা আছে নিহা, ক্লাস থ্রি তে পরে। ওর জন্যই নাকি টিচার খুজছে, আমি তোর কথা বললাম।”

_”তারপর? আন্টি কি বললো?”

_”বললো তার মেয়েকে পাঠিয়ে দেবে পড়ার জন্য, বাসায় এসেই পড়ে যাবে। তোর কখন সময় হয় সেটা জানাতে বললো,আর ফি টাও জানাতে বলেছে।”

মৌরিন ইষৎ হেসে বলে,
_”ঐটুকু বাচ্চাকে পড়াবো,তাও আবার প্রতিবেশী। টাকা কি করে নেই বলোতো?”

মারুফা উদাস হয়ে মৌরিনের পাশে বসে বলেন,
_”আমাদের এখন যেই অবস্থা,না নিয়েও তো উপায় নেই।”

_”তা অবশ্য ঠিক বলেছো। তুমিই তাহলে আন্দাজমতো কিছু একটা বলে দিও, আর বর্তমানে তো আমি সারাদিন ই ফ্রি। ভার্সিটি ট্রান্সফার করাতে পারলে তারপর একটু প্রবলেম হবে,তার আগে তো কোনো কাজ নেই। সন্ধ্যার দিকে আসতে বলো ওকে।”

কিছুটা সময় পেরিয়ে যায়। খাওয়ার মাঝে রাতুলের কথা মনে পরতেই মৌরিন মারুফার উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,
_”জানো মা,নতুন একটা কাজের খোজ পেয়েছি।”

_”কি কাজ?”

খুশি হয়ে কথাটা বলেন মারুফা। তবে মৌরিন সবটা খুলে বলার পর তার মুখটা একদম চুপসে যায়।

_”কি হলো মা? তুমি আবার মন খারাপ করছো কেন?”

_”ছেলেটাকে কতটা চিনিস তুই? ওর কথায় বিশ্বাস করাটা কি ঠিক হচ্ছে?”

_”বিশ্বাস করাটা দোষের নয় মা,তবে অন্ধবিশ্বাস করাটা দোষের।”

_”বিশ্বাসের দাম কয়জন দেয়?

মৌরিন স্মিত হেসে উত্তরে বলে,
_”তবে অবিশ্বাস করেও যে থাকা যায়না। বেঁচে থাকতে গেলে মানুষকে যে বিশ্বাস করতেই হবে। যদি কেউ সেই বিশ্বাসের দাম না দেয় তবে সেটা ভাগ্যের লিখন।”

মারুফা মেয়ের দিকে অবাক চোখে তাকাতেই সে চোখ নামিয়ে খাওয়ায় মনোনিবেশ করে। মেয়ের এমন ব্যাবহারে, এমন কথায় বরাবরেই স্তম্ভিত হন মারুফা। নিজেও চোখ নামিয়ে নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন,
_”তাহলে,কাজটা করছিস?”

_”আর একটু ভাবি বরং, রাতে জানাবো ভাইয়াকে।”

খাওয়া শেষে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় মৌরিন। একটু বিশ্রাম নেবে এখন, সঙ্গে ভাববে নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে। তারপর আসরের নামায পরে যাবে বাড়িওয়ালার বাসায়, আশা করা যায় এবার তার সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হবে।

#চলবে?