এক_রাতের_বউ
___পর্ব___৬___
Written by Avantika আনহা
“আরাভ কি আমাকে ফলো করেই যাচ্ছে? নাকি অন্য কারণে?” প্রশ্ন গুলো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সেই সাথে আরাভ কি করেছে আমার সাথে তা মনে পড়ছে।আশেপাশে জায়গা না থাকায় আরাভ এসে আমার পাশের সিটেই বসলো। এমন ভাব করতে লাগলো যেন আমাকে চিনে না।
.
আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি চুপচাপ। আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে,
আরাভ- কিছু বলবেন আপু?
আমি- (তার মুখে আপনি আর আপু শুনে থ। কারণ পরিচয় থেকে শুরু করে আজ অব্দি সে আমাকে তুমিই বলেছে)
আরাভ- কি হলো আপু মুখে মশা ঢুকবে তো বলুন কি বলবেন।
আমি- আপনি তো…
.
হঠাৎ এক স্যার এলো,
স্যার- নাসির তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো বাবা?
আরাভ- না না আংকেল।
আমি- (এখনো থ এর নাম তো আরাভ তাহলে স্যার কি বলে?)
.
স্যার- এ হলো আনহা প্রথম বর্ষের। (আমাকে দেখিয়ে। তারপর আরাভকে দেখিয়ে আর আনহা এ হলো নাসির। আমাদের হেড স্যারের ভাই এর ছেলে)
.
এটা শুনে থ। স্যার আমাকে বললো তার খেয়াল রাখতে। স্যার আমার আরো তারিফ করে চলে গেলো। স্যার যেতেই,
আমি- কিন্তু
আরাভ- কি?
আমি- আপনি তো..
আরাভ- হাহা।
আমি- হাসছেন কেন?
আরাভ- ডোন্ট ওয়ারি আরাভই। কোনো জমজ ভাই না। আর এসেছি নাসির সেজে। হেড স্যার কে একটু পটাইতে হলো তাও মানে না। নাসিরের সাথে যোগাযোগ করলাম। ভাগ্যক্রমে নাসির আমার বন্ধু। তারপর আরো কাহিনী আর আমি এখানে।
.
আমি হা করে তাকিয়ে আছি। এতোটা চালাকি মানুষ কিভাবে করতে পারে আমার মাথায় ঢুকছে না।
.
আরাভ- এতো হা করো না মাছি ঢুকবে।
আমি- আপনি আমাকে ফলো করছেন কেন?
আরাভ- ঘুরতে যাবো।
আমি- এখানেই কেন? আপনি এতোকিছুর পরেও আমার সাথে যাচ্ছেন কেন?
আরাভ- কি কিছু?
আমি- জানেন না?
আরাভ- বাবু এটা বাস আর বেশি জোড়ে কথা বলো না। মানুষ জেনে যাবে।
আমি- (ঠিক বলেছে তাই আর কথা বাড়ালাম না)
.
আমার রাগ উঠছে সাথে ঘৃণাও। কারণ যেই মানুষটা থেকে আমি শুধু দূরে থাকতে চাচ্ছি সে প্রতি ক্ষেত্রে আমার সামনে আসছে। ভেবেছিলাম এই পিকনিকে এসব ভাবনা থেকে দূরে থাকবো কিন্তু তাও হলো না। মন বলছে একবার তাকে জিজ্ঞেস করি, “কি চায় সে আর? কেন এতো ফলো করছে আমাকে। আর সৃষ্টিকর্তাই কেন তাকে বারবার আমার মুখোমুখি করাচ্ছে?” এসব প্রশ্ন আমার মনে কিন্তু আমি উত্তর পাচ্ছিলাম না। প্রশ্ন করার ইচ্ছেও করছে না আবার জানতেও ইচ্ছে করছে। আমার মাঝে এক অস্থিরতা কাজ করছে। আমি নিজেও জানি না কি করবো। জানালার বাহিরে তাকালাম। নিজেকে শান্ত করে নিলাম। চোখ বুঝে নিলাম। আমি ভালো করেই বুঝছি আরাভ আমার দিকে তাকিয়ে। কারণ তার ধারণা হয়তো ছিলো না আমি এতোটা চুপচাপও হতে পারি। কিন্তু একদিকে তো আমারো ধারণা ছিলো না যে, সে এভাবে আমার ইজ্জত…..। চোখ বুঝে নিলাম। কিছুটা ঘুমের রাজ্জে হারিয়ে গেলাম। কিন্তু একটু ঝাঁকুনিতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। তাকিয়ে দেখি আমার মাথা কিছুটা আরাভের কাঁধে আর কিছু চুলও তার মুখে। তাড়াতাড়ি নিজেকে ঠিক করে নিলাম।
.
আমি- সরি মাফ করবেন।
আরাভ- না ইটস ওকে। ঘুমিয়ে পড়েছিলে ভুলে এসেছো।
আমি- সরিয়ে দিলেই পারতেন।
আরাভ- থাক ভাবলাম ঘুম কেন নষ্ট করবো?
আমি- নাকি এতেও সুখ খুঁজে নিচ্ছিলেন?
আরাভ- কি বলতে চাও?
আমি- যা বুঝেছেন তাই।
.
আরাভ আর কিছু বললো না। আমি জানি সে কিছু বলবে না। কারণ আজকাল আর কিছু না পারি এসবের জবাব দেওয়া শিখে যাচ্ছি। যদিও সকল ক্রেডিট এক্ষেত্রে আরাভেরই। সে যাই হোক আর কিছু ভাবার সময় পেলাম না। কিছু ফ্রেন্ড ডাকতে এলো।
.
আশা- ওই আনহা তুই এখানে?
আমি- শাকচুন্নিগুলো কথা কইবি না।
আশা- আরে রাগিস কেন?
আমি- তোরা সব পিছনে বসে গেলি আর আমি জায়গা পেলাম এখানে। গালি দিবো না তো কি আদর করবো? (স্বাভাবিক ব্যবহার করতেই হবে এদের সাথে। তাই স্বাভাবিকের নাটক। আবার কিছুটা বাস্তবতাও। কারণ যতই আমি চেষ্টা করি এসব ফাজলামির অভ্যাস আমার যায় না।)
আশা- আরে আমরাও লেটই আইছি। তুই তো জানিসই আমরা সবাই লেট লতিফ রিয়া ছাড়া।
আমি- তারে ডাক জিগা আমার জায়গা রাখে নি কেন?
আশা- হেতে এক পোলার উপর ক্রাশ খাইছে। তাতে সব ভুইলা গেছে। অদ্রিও জায়গা পায় নি। সামনে বসছে।
আমি- ওকে ওকে বাদ দে।
আশা- তোকে গান গাইতে বলছে ব্যাচ এর বাকীরা।
আমি- কিতা কস আমি তো গানই বেশি পারি না।
আশা- যাই পারিস গা। সবাই গাইতেছে।
আমি- ওকে চল। (আরাভের থেকে যেতে পারলেই বাঁচি। তাই চলে গেলাম)
.
পিছনের দিকে গিয়েও বসতে পারছিলাম না। তাই একটা ছেলেকে বকা দিয়ে সামনে পাঠালাম আমার সিটে। নিজেকে জয়ী মনে হচ্ছে কারণ পিছনে আসতে পারলাম আরাভের থেকে দূরে। গান শুরু করলাম,
.
“আমার ভিতরো বাহিরে
অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে,
দিও তোমার মালাখানি,
বাউলের এই মনটা রে।
আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।
পুষে রাখে যেমন ঝিনুক,
খোলসের আবরনে মুক্তর সুখ
তেমনি তোমার গভীর ছোঁয়া
ভিতরের নীল বন্দরে।
ঢেকে রাখে যেমন কুসুম,
পাপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম
তেমনি তোমার নিবিড় চলা
মরমের মূল পথ ধরে।”
.
গান আগেও কিছু জন শুনেছিলো আবার অনেকে শুনে নি। অনেকেরই ভালো লাগলো। আরাভ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে ছিলো। কিছুজন বললো কিন্তু আমি তার নয়নের দিকে তাকালাম না। কারণ তার নয়নের দিকে তাকাতেও আমার ভয় হয়। সবাই পালা ক্রমে গান গাচ্ছিলো। কিছুটা জোর করেই অনেককে দ্বারা গান গাওয়াতে হলো। এক সময় আরাভের পালা।
সুমি- এবার আপনাকে গান গাইতেই হবে ভাইয়া।
আরাভ- আমি গান পারি না।
সুমি- না বললে হবে না।
আরাভ- সত্যি পারি না।
আমি- বাদ দে রে সুমি সবার দ্বারা সব হয় না। (কিছুটা বাঁশ দিতে)
আরাভ- অনেক কিছুই পারি।
আমি- তো গান গেয়ে দেখান।
আরাভ- ওকে। এক শর্ত আমার সাথে আপনাকেও গাইতে হবে।
আমি- মানে কি বলছেন আমি কারো সাথে গাইতে পারি না।
আরাভ- ওহো তাহলে তো আপনিই পারেন না দেখছি।
আমি- কি বললেন?
আরাভ- এই যে সবার দ্বারা সব হয় না।
আমি- গাবো আসেন।
.
আরাভ শুরু করলো, সাথে আমিও.
.
.
“পৃথিবীর যত সুখ, যত ভালবাসা
সবই যে তোমায় দেব, একটাই আশা
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালবাসি তোমাকে।
ভাবিনি কখনো, এ হৃদয় রাঙানো
ভালবাসা দেবে তুমি
দুয়ারে দাঁড়িয়ে, দু’বাহু বাড়িয়ে
সুখেতে জড়াব আমি
সেই সুখেরই ভেলায়
ভেসে স্বপ্ন ডানা মেলব এসে
এক পলকে পৌঁছে যাব, রুপকথারই দেশে
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালবাসি তোমাকে ।
রয়েছে এখনো এ বুকে লুকানো
রাত জাগা স্বপ্ন ঘুমিয়ে
মেঘেতে দাঁড়িয়ে,
আকাশে হারিয়ে
যতনে রেখ গো তুমি
সেই মেঘেরই আঁচল এনে
আমায় তুমি নাও গো টেনে
রং-তুলিতে আঁকব ক্ষণ
রুপ কুমারের দেশে
তুমি ভুলে যেও না আমাকে
আমি ভালবাসি তোমাকে ”
.
গান শেষে সবাই তালি বাজালো। আরাভও ভালো গান করে আমিও মুগ্ধ তার প্রতি। কিন্তু তবুও আমি তার দিকে তাকাচ্ছি না।
বাস তার গন্তব্য সিলেটে পৌঁছে গেলো। মূলত একসময় এখানে আসার শখ আমার অনেক ছিলো। চা বাগান তেতুলিয়ায় থাকলেও এখানে তার পরিমাণ বেশি। সবচেয়ে বেশি যে কারণে আসার ইচ্ছা তা ছিলো এক প্রকার স্পেশাল চা খাওয়া। সিলেটের মাটিতে পা রেখেও আমার বারবার মিমির কথা মনে পড়তে লাগলো।
.
এক কোণে দাড়িয়ে গেলাম। যেখানে সবাই এক সাথে ছবি তুলা বা গল্পে ব্যস্ত হলো সেখানে আমি একা এক কোণে দাড়িয়ে আকাশ দেখতে লাগলাম। হয়তো মিমি থাকলে কম একা লাগতো। হঠাৎ কে জানি কাঁধে হাত রাখলো। ভাবলাম কোনো বান্ধবী। কিন্তু তাকিয়ে দেখি আরাভ,
আরাভ- একা দাড়িয়ে যে?
আমি- আজকাল একা ভালো লাগে।
আরাভ- আনহা।
আমি- বলুন।
আরাভ- কিছু না। (সরি বলতে চেয়েছিলো। কারণ আরাভ অনুতপ্ত আগের গুলো খারাপ ছিলো। কিন্তু আনহা কিছু করে নি তবুও আরাভ এমন করেছে এটা ভেবেই সে অনুতপ্ত)
আমি- তাহলে সরুন ওরা ডাকছে।
.
আমি চলে এলাম।
.
চলবে…..