এক রাতের বউ পর্বঃ১০

0
2098

এক_রাতের_বউ
___পর্ব___১০___
Written by Avantika আনহা

অদ্রি- কি রে কই ছিলি? এতো হ্যান্ডসাম পোলার লগে সময় কাটায় এলি। কেমন কাটলো?
আমি- বাবু জুতা খাবা?
অদ্রি- ওহো আমি বললেই দোষ। বাকীরাও বলছে।
আশা- বাহ রে আমরা কখন বললাম?
আমি- বাবু তোমাদের প্রত্যেকটারেই চিনি আর সাধু সাজতে আইসো না।
আশা- ওলে ওলে। এবার বল কেমন কাটালি?
আমি- দাড়া সবাই বলতেছি।
আশা- ওকে। ওই সবাই দাড়া।
.
সবাই দাড়ানোর পর,
আমি- আমি এরাম সময় কাটাইছি।
.
পাশে একটা লাঠি ছিলো। নিয়া সব গুলোর পিছনে দৌড়। সবগুলোর চিল্লাচিল্লিতে স্যার এসে বকা দিলো আবার আমাকে। কারণ প্রথমেই আমি হারায় গেছি। প্রচুর বকা দেওয়ার পর স্যার চলে গেলো। স্যার যাওয়ার পর,
আমি- শয়তান্নিগুলো তোদের জন্য আমি বকা খাইলাম।
অদ্রি- ও মনু তুমি ঘুরে আসবা। আর আমাদের দোষ।
আমি- আই হেট ইউ। গেলাম আমি।
.
ওখান‌ থেকে চলে আসলাম সবাই। কারণ বৃষ্টির জন্য বেশি আগানো গেলো না। আমরা হোটেলে ফিরে এলাম। সবাই যে যার মতো মজা করতে লাগলাম। কেউ ছবি তুলতে লাগলো। কেউ ঘুমাতে চলে গেলো। বাইরে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে গেলো। আমার ভালো লাগছিলো। ব্যালকোনিতে দাড়িয়ে হাত বাড়িয়ে বৃষ্টি ধরতে লাগলাম। মাঝে মাঝে বৃষ্টির ছোঁয়া মনকে শান্ত করে। হঠাৎ আরাভের ফোন আসলো, কিন্তু আমি ধরলাম না। অনেক কয়েকবার এলো তাও কেটে দিয়ে ফোন বন্ধ করে দিলাম। আবারো আমি বৃষ্টির ফোটাদের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিলাম। কিছু সময় পর বেলকোনির বাইরে আরাভকে দেখলাম। আমি অন্য দিকে তাকালাম। আরাভ ওদিকটায় গিয়েও ইশারায় আমাকে বাইরে আসতে বললো।
.
আমি ভিতরে চলে আসলাম। বৃষ্টির পরিমাণ হঠাৎই বেড়ে গেলো। হয়তো আবহাওয়া একটু বেশিই খারাপ তাই বৃষ্টি কমছে না। প্রায় ৪০ মিনিট পর আমি আবার বেলকোনিতে দাড়ালাম। দেখলাম আরাভ এখনো সেখানেই দাড়িয়ে। এখনো আমাকে ইশারায় ডাকছে। আমো তাকে ফিরে যেতে বললাম ইশারায়। আর আরো বললাম আমি যাবো না। আরাভ ইশারায় বুঝিয়ে দিলো সে যাবে না। আরো কিছু সময় পর আমি নিজেই নিচে নেমে গেলাম। ছাতা হাতে তার কাছে যেতেই,
.
আমি- এভাবে ভিজার মানে কি?
আরাভ- ভালো করে আসলে কি হয়?
আমি- আমি কেন আসবো?
আরাভ- আমি বলেছি তাই।
আমি- আপনি আমার কে?
আরাভ- কেউ না।
আমি- তো?
আরাভ- তো তো কিছু না।
আমি- হয়েছে আমি উপরে গেলাম।
আরাভ- না।
আমি- কেন?
আরাভ- আমি গান শুনবো।
আমি- আমি গান পারি না।
আরাভ- তা আমি ভালো করেই জানি তুমি পারো কিনা।
আমি- পারি না।
আরাভ- ভালো করে গান গাবা নাকি আমি সারাদিন এখানে দাড়িয়ে থাকবো।
আমি- ব্লাকমেইল করছেন?
আরাভ- যা ভাবো।
আমি- ফাইন থাকুন।
.
এইটুকু বলে ১০-১৬ পা আগালাম। তারপর পিছনে ঘুরে দেখি আরাভ দাড়িয়ে আছে। আমি জানি সে অনেক রাগী। আমি তাকাতেই সে আমার দিকে তাকিয়ে হাসি দিলো। রাগও চড়তে লাগলো আমার। তবুও ফিরে গেলাম।
আমি- ওকে গান শুনাবো। ভিতরে চলুন।
আরাভ- কই?
আমি- হোটেলের রুমে।
আরাভ- কার রুমে আমারটায় নাকি?
আমি- না আমার টায়। (তার রুমটার কাছে স্যার এর রুম তাই)
আরাভ- ওকে বেবি চলো।
.
আমি আরাভকে নিয়ে রুমের দিকে এগোতে লাগলাম। তখনি পরিচিত এক ফ্রেন্ডকে ওদিক দিয়ে যেতে দেখেই আরাভকে নিয়ে এক ফাঁকে লুকালাম। মানুষ দেখলে খারাপ ভাববে তাই লুকালাম। যদিও আরাভ আর আমি বেশি কাছাকাছি ছিলাম না। কিন্তু ওর পারফিউমের স্মেল আমার নাকে আসছিলো। আরাভের পারফিউমের স্মেল অনেক ভিন্ন। মিষ্টি ধরনের, কিছুটা কড়া কিন্তু সব মিলিয়ে সেই লাগে। মাতাল করা স্মেল। আমি আরাভের দিকে তাকিয়ে আছি। ভিজে গেলেও স্মেলটা এখনো আছে আর সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করার বিষয় তার বুকে লোম আছে। আমি তা-ই ভালো করে দেখছিলাম। কেন দেখছিলাম নিজেও জানি না। আরাভের চোখ আমার দিকে পড়তেই আমি সরিয়ে নিলাম। কারণ কিছুটা লজ্জার পরিস্থিতি আছে।
.
আমি- চলে গেছে। চলুন।
আরাভ- কি দেখছিলে?
আমি- না কিছু না। যাবেন কি না?
আরাভ- ওকে।
.
আরাভ আমার রুমে আসতেই, ওকে গামছা দিলাম আমার। ও মাথা মুছতেছিলো। এমন সময় মাথায় এলো,
আমি- কাপড় পাল্টাবেন কেমনে? মাথায়ই তো আসে নি।
আরাভ- লাগবে না।
আমি- গান শুনাবো না।
আরাভ- ওকে ৫ মিনিট ওয়েট।
.
আরাভ বের হয়ে গেলো। আমার প্রশ্ন সে কেন এমন করছে? সে কি জানে না আমি কেন তাকে ইগনোর করার চেষ্টায়। সবটা কেড়ে কি এখন মনের দিক দিয়েও কষ্ট দিতে চায় সে? এসব প্রশ্নই আমার মাথায় ঘুরছে। আরাভ চলে এলো।
.
আমি- এতো জ্বলদি?
আরাভ- বললাম না গান শুনবো। আর আমার জেদ প্রচুর যা চাই তা করি। যেমন তোমাকে চেয়েছিলাম। পেয়েছি।
আমি- হাহা। শারীরিক ভাবেই শুধুই।
আরাভ- যাই হোক।
আমি- হাহা। স্বার্থপর আপনি। নিজের চাওয়া পূরণে সব করতে পারেন।
আরাভ- ঠিক ধরেছো। স্বার্থপর আমি। এখন গান শুনাও।
আমি- বসুন।
.
আমার পাশে বসতে লাগলেই বলি,
আমি- ওদিকে বসুন।
আরাভ- ওকে। (কিছুটা কষ্ট লাগলো)
আমি- কষ্ট পেলেও কিছু করার নাই। আপনি যা করেছেন তারপর পাশে?
আরাভ- ওকে দূরেই আছি। শুরু করো।
.
আমি গান ধরলাম,
আমার একলা আকাশ

থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে,

শুধু তোমায় ভালবেসে।

আমার দিনগুলো সব

রঙ চিনেছে তোমার কাছে এসে,

শুধু তোমায় ভালবেসে।

তুমি চোখ মেললেই

ফুল ফুটেছে আমার ছাদে এসে,

ভোরের শিশির ঠোট ছুঁয়ে যায়

তোমার ভালবেসে।

আমার একলা আকাশ

থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে,

শুধু তোমায় ভালবেসে।

আমার ক্লান্ত মন

ঘর খুঁজেছে যখন,

আমি চাইতাম পেতে চাইতাম

শুধু তোমার টেলিফোন।

ঘর ভরা দুপুর

আমার একলা থাকার সুর,

রোদ গাইতো আমি ভাবতাম

তুমি কোথায় কতদুর।

আমার বেসুর গিটার

সুর বেঁধেছে তোমার কাছে এসে,

শুধু তোমায় ভালবেসে।

আমার একলা আকাশ

রাত চিনেছে তোমার হাসি হেসে,

শুধু তোমায় ভালবেসে।

অলস মেঘলা মন

আমার আবছা ঘরের ঘরের কোণ

চেয়ে রইতো ছুটে চাইতো

তুমি আসবে আর কখন।

শ্রান্ত ঘুঘুর ডাক

ধুলো মাখা বইয়ের তাক,

যেন বলছে যেন বলছে

থাক অপেক্ষাতেই থাক।

আমার একলা আকাশ

থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে,

শুধু তোমায় ভালবেসে।

আমার দিনগুলো সব

রঙ চিনেছে তোমার কাছে এসে,

শুধু তোমায় ভালবেসে।

আরাভ- তুমি ভালো গান করো।
আমি- ধন্যবাদ।
আরাভ- হুম।
আমি- এবার আসুন।
আরাভ- বের করে দেও?
আমি- ধরে নেন তাই।
.
আরাভ উঠে যেতে লাগলো। যাওয়ার আগে,
আরাভ- আমি জানি না কেন এমন করি? কিন্তু কেন যেন ইচ্ছে হয় করে ফেলি। জানি কষ্ট দেই তোমাকে প্রচুর। কিন্তু আজ থেকে নিজেকে কন্ট্রোলে রাখার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ ইচ্ছা পূরণের জন্য। আসলে তোমার গানটা রেকর্ড করে নিলাম। এরপর থেকে শুনবো। ক্ষমা করো আমাকে। জানি পারবে না।
.
আরাভ চলে গেলো। আমি দরজা লাগিয়ে কাঁদতে লাগলাম। আল্লাহ জানে এই ছেলে কি? আর কি চায় আমার কাছে?
.
তারপর আরো সময় কেঁদে কাটালাম।
.
.
কিছু সময় পর বের হলাম। সেদিন খাবার টেবিলে,
.
অদ্রি- আনহা।
আমি- বল।
অদ্রি- তোর আর ওই নাসিরের মাঝে কিছু আছে?
আমি- কে নাসির? (ভুলে গেছিলাম আরাভ নাসির সেজে আছে)
অদ্রি- দেখেছিলাম। বৃষ্টির মাঝে তোকে।
আমি- না ভাইয়াটা ভিজছিলো। আমি বাইরে ছিলাম। তাই কাছে গেছিলাম।
অদ্রি- সত্যি?
আমি- হুমম।
অদ্রি- ওকে রে।
.
আর কথা বাড়ালাম না। নইলে সন্দেহ করবে। আমি মিথ্যা বলেছি আমি জানি।
তারপর আর কয়েকটা দিন কেউ কারো সাথে কথা বললাম না। দুজনেই দুজনের মতো থাকতে লাগলাম। এমনটা যেন কেউ কাউকে চিনি না। ট্রিপ থেকে ফেরার পথেও দুজন আলাদা বসলাম কেউ কারো দিকে তাকালাম না।

.
.
চলবে…..