#এক_শ্রাবণ_হাওয়ায়-২
#লেখিকা – কায়ানাত আফরিন
#পর্ব – ৪৮
আকাশে আজ পুন্জ পুন্জ মেঘের আনাগোনা। সেখানে পাখিদের ঝাঁক উঁড়ে চলছে সমানতালে। গতকাল থেকেই প্রকান্ড গরম পড়েছে। যে কেউ চট করে দ্বিধাদ্বন্দে পড়ে যেতে পেরে এটা কিসের মৌসুম। আমি ড্রইংরুমে বসে শিউলি ভাবিকে দেখছিলাম। সময়ের সাথে উনার শরীর গুলুমুলু রূপ ধারন করেছে। মুখে স্নিগ্ধতার রেশ। অন্তঃসত্বা হওয়া সত্বেও মাঝে মাঝে মুখের ভাবে কিশোরীর ন্যায় খামখেয়ালীপনা ফুটে উঠে। আজরান ভাইয়া তাই এখন আমার কাছাকাছি রেখেছেন ভাবিকে। উনি নিজেই বাবার সাথে কাজে ব্যস্ত আর এদিকে আমিও ভাবির কেয়ার নিতে পারবো তাই যত্নের যাতে কোনো ক্রুটি না হয়, সেজন্যই এখানে রাখা। নীলুও এখন সারাদিন এখানে ভাবির সাথে খোঁশগল্পে মেতে থাকতে ব্যস্ত।
সেই ঘটনার দশদিন পার হয়ে গিয়েছে এর মধ্যে। ফ্যামিলির সবাই এখন তুমুল ব্যস্ত বিয়ের পরিকল্পনা নিয়ে।। কিছুদিন আগে মামু মামি গাজীপুর থেকে এসছিলেন। তারপর কথা আনলেন এ আমার পক্ষ বা পরিবার থেকে আয়োজন সব উনারা করবেন। বাবার প্রসঙ্গ এদিকে না টানাতে মনে শান্তিই পেলাম আমি। মনে মনে অপূর্ব ভাইয়ার ভয় থাকলেও এখন জানি উনি কিছু করতে পারবেন না আর। আমার উচিত অতীতকে ভুলে বর্তমান নিয়ে ভাবা।
আমি ঘড়ির কাটার দিকে মনোনিবেশ করলাম। ছোট কাটাটি আট পেরিয়ে নয়ের দিকে গন্তব্যহীন ভাবে এগোচ্ছে। ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ছাড়ি আমি। কারনটা আনভীর। বিগত আধ ঘন্টা ধরো সুইমিং করছেন পুলে। তাই উঠে ইয়ার্ডের দিকে গেলাম আমি পা বাড়ালাম। রৌদ্দুরের আলোকে চিকচিক করছে পুলের নীলাভ পানি। সেখানেই ব্যস্ত অতিমাত্রার নির্বিকার সেই মানবটি। ক্রমাগত পানিতে ডুব দিচ্ছেন বা ঠান্ডা পানিতে শরীর ছেড়ে দিচ্ছেন। শরীরে অন্যরকম উন্মাদনা ছেয়ে গেলো আমার। উজ্জ্বল গায়ে লোভনীয় লাগছে পানির প্রতিটি কণা। রোদ পড়াতে সেই উজ্জ্বলতা যেন দ্বিগুণ হারে বেড়ে গিয়েছে। আমি ধাতস্থ করলাম নিজেকে। পুলের থেকে নিরাপদ দুরত্বে দাঁড়িয়ে ডাক দিলাম,
‘ আনভীর!’
উনি তৎক্ষণাৎ তাকালেন। আমার বুকে ছ্যাঁত করে লাগলো সেই দৃষ্টিটি। চুল বেয়ে টপটপ পানি ঝরছে। তা ধীরে ধীরে বেয়ে নামছে গলা থেকে বুকে। আমার নিঃশ্বাস অসাঢ় হয়ে এলো। আনভীর তা চট করে ধরতে পেরেছেন কি-না জানিনা। তবুও ধরতে পারার আগেই আমি প্রশ্ন করলাম,
‘ আর কতক্ষণ সুইমিং করবেন আপনি? অনেকক্ষণই তো হলো। ব্রেকফাস্ট করবেন না?’
‘ এখান থেকে উঠতে ইচ্ছে করছে না আহি।’
উনি ফিচেল হাসি দিয়ে বললেন। তারপর বিরতি না কাটিয়ে বলে উঠলেন,
‘ তোমার নজর দেখে মাঝে মাঝে ভয় হয় আমার। যেভাবে তাকাচ্ছো যেন এখনই খেয়ে ফেলবে আমায়।’
গালে লালাভ আভা ফুটে উঠলো আমার। লজ্জায় রীতিমতো হাসফাস করছি। আমার এ অবস্থায় আনভীর পুলে থাকা অবস্থাতেই
এক অসহ্যকর হাসি দিলেন। গা জ্বালানোর মতো সে হাসি। হঠাৎ নিজকেই নিজের চড় মারতে ইচ্ছে হলো আমার। নিজের অন্তরকে বলে উঠলাম,
‘ হোয়াই অন্তর? কেন তুমি আমার সাথে এমন বিশ্বাসঘাতকতা করে উনাকে সব বুঝিয়ে দাও? একটু নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারো না?’
আমি পরক্ষণে সামলে নিলাম। আনভীরকে বললাম,
‘ তাহলে আরও কিছুক্ষণ থেকে ঠান্ডা বাধাঁবেন?’
‘ উঠবো তো। তুমি উঠাও?’
হঠাৎ আমার ছোট্ট মস্তিষ্কে স্মৃতিচারিত হলো সেই ঘটনাটি যখন আনভীর আমার টেনে নিজের সাথে পুলে ফেলে দিয়েছিলেন। সে বার ভয়ঙ্কর থেকেও ভয়ঙ্কর মাত্রার লজ্জা পেয়েছিলাম নাহিদ ভাইয়ার সামনে। ভাগ্যিস নাহিদ ভাইয়া সোজাসাপ্টা মানুষ, ঘটনার খিচুড়ী পাকাতে জানেনা। কিন্ত আমাদের নীলু বেগম বা শিউলি ভাবি যদি এমন কিছু দেখে তবে কেলেঙ্কারি বাধাঁতে দু’সেকেন্ড লাগাবে না। ঘটনা এমন পর্যায়ে চলে যাবে যে আজরান ভাইয়াও এসে জিজ্ঞেস করবে,
‘ আহি! শুনলাম তুমি আর আনভীর নাকি পুলে হা-ডু-ডু খেলেছো?’
এসব কথা ভাবতেই আমার যেন মাথা ঘুরে যাওয়ার উপক্রম হলো। ঘটনা যেকোনো পর্যায়ে যেতে পারে। আনভীর যেমন ভয়ঙ্কর, আজরান ভাইয়ার কথাবার্তা এর থেকেও ভয়ঙ্কর। পার্থক্য একটাই আজরান ভাইয়া রসিক মানুষ, ব্যস! এটা ছাড়া টর্চলাইট দিয়ে খুঁজেও তাদের মধ্যে ভেদাভেদ করা যাবে না। তাই তৎক্ষণাৎ আনভীরের দিকে রক্তিম চাহিনী ছুঁড়ে বললাম,
‘ মোটেও না। কি ভাবছেন আগে কি করেছেন সেটা মনে নেই আমার?’
দুঃখেভরা মর্মে সমবেদনা জানালেন আনভীর। অবুঝের ন্যায় বললেন,
‘ তুমি যে অতিপ্রাকৃত স্মৃতিবান নারী তা আমি জানি। কিন্ত আমার যে মনে পড়ছে না? তাই তোমার উচিত না ঘটনাটা আমায় স্মরণ করিয়ে একটু সহায়তা করা?’
আবারও গা জ্বালানো হাসি টেনেছেন ঠোঁটে। আমি পরে হাল ছেড়েই বললাম,
‘ আপনি পুলেই থাকুন। আমি উঠাবোও না। আপনাকে উঠতেও হবেনা। এখানেই চিল করুন। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর।’
বলেই ভেতরে চলে গেলাম আমি। এখন নিজেরই আফসোস হচ্ছে কেন যে একে ডাকতে গেলাম? ড্রইংরুমে দেখি গভীর চিন্তায় মশগুল আছে ভাবি আজরান ভাইয়া, নীলু এমনকি নাহিদ ভাইয়াও। তবে গভীর চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু ঠিক কি সে-টা আমি আচঁ করতে পারলাম না। অগত্যাই জিজ্ঞেস করলাম,
‘ কি করছেন সবাই?’
‘ আলোচনা করছি দেখছিস না?’
রাশাভারি কন্ঠ নীলুর। আমি অপ্রতিভ হলাম। তবুও বললাম,
‘ সে তো দেখছিই। কিন্ত ব্যপারটা কি নিয়ে?’
‘ তোমার আর আনভীরের বিয়ে নিয়ে।’
আমি তারপর ভাবনাহীন হলাম। যেই দিন থেকে আনভীর মিডিয়ায় বলেছে আমাদের বিয়ের প্রোগ্রাম হবে, সেইদিন থেকেই এরা শুরু করেছে পরিকল্পনা। প্রথমে ছিলো বিয়ের ভেন্যু কোথায় হবে? একজন বললো ঢাকাতেই, তো আরেকজন অন্য কোনো জায়গায়। নাহিদ ভাইয়া তো শেষে হতাশায় বলেই ফেললো পাহাড়িদের অঞ্চলে বিয়ের কারবার সারতে। নীলু ডিফারেন্ট কিছু চায়, তাই এ থেকে ভালো নাকি কিছু হবেনা। সেবার আমরা হেসেছিলাম খুব। ওদের বিরাট ভেন্যু খোঁজা নিয়ে সমস্যার সমাধান করলো নাহিদ ভাইয়ার বোন রিমি আপু। সে বললো নাহিদ ভাইয়াদের, আই মিন আনভীরের ফুপির বাড়ি ‘খাগড়াছড়িতে’ করলে কেমন হয়? চকচক করে উঠলো সবার মুখ। সেই সাথে আমারও। কারন খাগড়াছড়ি বরাবরই আমার প্রিয় জায়গাগুলোর একটি। ছোটবেলায় একবার গিয়েছিলাম মামুর সাথে। সেবার প্রথম ছুয়েছিলাম মেঘ। সেও ছিল এক অপরূপ দৃশ্য। যা এখনও মনের মানসপটে ভেসে আছে। কেউ কিছু বলার আগে আমি তৎক্ষণাৎ বললাম,
‘ হ্যাঁ ওটাই ভালো হবে।’
তারপর সবার চাউনি দেখে বিব্রতও হয়েছিলাম বেশ। বিয়ের কন্যাকে সচরাচর এভাবে কথা বলা মানায় না। আনভীর অদূরে তখন ল্যাপটপে কাজ করছিলো। আমায় কথায় টান দিয়ে বললেন,
‘ ইসস! মেয়েটা বিয়ের জন্য আমার থেকেও উতলা হয়ে আছে খোদা!’
তারপর থেকেই বাকিরা এ নিয়ে আলোচনা করলে একটা কথাও বলিনি আমি। এখনও তাই করতে চাইলাম। টুপ করে কেটে পড়ার প্রচেষ্টা করতেই নাহিদ ভাইয়া বললেন,
‘ ভাবি ব্রেড টোস্টটা একটু গরম করে দিবেন প্লিজ?’
আমি ভ্রুকুটি করে তাকালাম। উনার অনুনয়ের জন্য আর না করা সম্ভব হলো না। অতঃপর প্রতিউত্তরে বললাম,
‘ আচ্ছা দিচ্ছি।’
কিচেন মোটামুটি পরিষ্কার। জানি এ শিউলি ভাবিরই কাজ। আমার এত বারণ করা সত্বেও সে এ কাজ করবে। কিচেন কেবিনেটে তাকাই আমি সেখানে থেকে অল্প আচেঁ টোস্ট করা ব্রেড টোস্টের প্লেটটা দেখে সেটা হাতে নিলাম। তারপর সেটাকে টোস্টারে রেখে সুইচ অন করে ওয়েট করতে থাকলাম কখন টুং করে একটা সাউন্ড হবে।
গুণগুণ করছি আমি। ড্রইংরুমে শোনা যাচ্ছে হাসির কলরব। এ যে আজরান ভাইয়ার জন্যই তা অজানা না। টোস্টার থেকে টুং করে শব্দ হওয়াতে আমার ধ্যান ফিরলো। সুইচ অফ করতে যাবো তখই পেছন থেকে একজোড়া বলিষ্ঠ হাত আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো আমায়। তার ভার হঠাৎ পিঠে অনুভব করারতে শরীরটা আমার বরফের মতো জমে গেলো। আনভীরের হাত কোমড়ে খেলা করছে আমার। টের পেলাম উনি আমার ঘাড়ের ডান পাশের চুলে সরিয়ে সে অংশটা উন্মুক্ত করে সরিয়ে রাখলেন বামপাশে। সেই উন্মুক্ত অংশে ভেজা ঠোঁটের চাপ পড়াতে শরীরের ওপর দিয়ে যেন গা ছমছম করা বায়ু বয়ে গেলে। আমি জানি এ আনভীর। উনার স্পর্শ, উনার নিঃশ্বাসই আমায় বিক্ষিপ্ত করতে পারে। ঠোঁট কামড়ে ধরলাম আমি। কোনোমতে নিজেকে সংবরণ করে বললাম,
‘ কি করছেন?’
‘ দেখছো না?’
উনার ভরাট কন্ঠ। ছোট্ট তিনটি শব্দ উচ্চারিত করে পুনরায় নিজের কার্যে মত্ত হয়ে পড়লেন। আমি বললাম,
‘ পাগল হলেন নাকি আপনি? এখনি ছাড়ুন। ওদিকে সবাই আছে।’
‘ তো কি হয়েছে। এদিকে তো আসেনি। তারা তাদের কাজ করুক, আমরা আমাদের কাজ করি।’
বলে উনি পুনঃকাজে মত্ত। কান দিয়ে রীতিমতো ধোঁয়া বের হচ্ছে লজ্জায়। হে বিধাতা! আমায় তোমার বিরাট দুনিয়ায় এক মুঠো মাটি ফাঁক করে যাও। এই অসভ্য কথন থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য একটু সময়ের জন্য হলেও ওখানে ঢুকে যাই। আমি উনার বন্ধন থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই উনি তা শক্ত করে আমার ঘাড়ে মুখ নামালেন। আলতো করে আমার কাধেঁ নিজের থুতনি রাখাতে আমি কিছু বলার জোর পেলাম না। উনার বিক্ষিপ্ত নিঃশ্বাস পড়ছে ঘাড়ে। ইতিমধ্যে ড্রেস পাল্টে ফেললেও শরীরটা অসম্ভব ঠান্ডা। চুলগুলো এখনও ভিজে আছে। ভরাট কন্ঠে ডাকলেন,
‘ আহি?’
আমি অপ্রতিভ হলাম। হু না কিছুই বললাম না। উনি আবার বললেন,
‘ তারা তো পুরোদমে প্ল্যান করছে যে বিয়ের আগে আমাদের একসাথে থাকতে দিবে না। কথাগুলো ভয়ঙ্কর না? যেদিকে তোমায় ছাড়া কনসার্টের জন্য দু’বারই তিনরাত নিদ্রাহীনতায় কাটিয়েছি সেখানে এতদিন কিভাবে থাকবো? আমার তো ভাবতেই দমবদ্ধ হয়ে আসছে আহি। ইচ্ছে করতে সব অনুষ্ঠান ক্যান্সেল করে তোমায় নিজের কাছে বসিয়ে রাখতে।’
‘ কি বলছেন এসব? সবাই কত আগ্রহ করছে? নীলু, নাহিদ ভাইয়া, রিমি আপু সবাই। এসব এসব পাগলামি কথা শুনে সবাই হাসবে বুঝেছেন?’
‘ হাসলে হাসুক। বাট তোমায় নিয়ে কম্প্রোমাইজ এই আনভীরের পক্ষে অসম্ভব।’
বলে গালে একটা চু’মু দিতে যাবেন ওমনি পেছন থেকে নাহিদ ভাইয়া বলে উঠলেন,
‘ উহুম…উহুম, ভাইয়া! এটা কিচেন রুম!’
.
.
.
.
.
~চলবে ইনশাআল্লাহ
————–
ভুলক্রুটি মার্জনীয়
#এক_শ্রাবণ_হাওয়ায়-২
#লেখিকা – কায়ানাত আফরিন
#পর্ব – ৪৯
‘ উহুম….উহুম, ভাইয়া! এটা কিচেন রুম।’
পেছন থেকে এমন ফিচেল কন্ঠ শুনে ঝড়ের গতিতে আমায় ছেড়ে দিলেন আনভীর। আমিও তৎক্ষণাৎ নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম উনার বাহুবন্ধন থেকে। পেছনে ঘুরে দেখলাম যা ভেবেছিলাম তাই-ই। নাহিদ ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছেন। চোখের দৃষ্টি হতভম্ব, কিন্ত ঠোঁটকোলে বিদ্রুপ হাসি। উনার এমন হাসি দেখে মুখ ক্রমশ লাল হয়ে উঠলো আমার। অস্থির দৃষ্টিতে তাকালাম আনভীরের দিকে। উনি প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও এখন শুরু পারছেন না টোস্টারে নাহিদ ভাইয়াকে ঢুকিয়ে ভাজা ভাজা করে ফেলতে।
নাহিদ ভাইয়া কোনো কথা বললেন না। আমাদের থেকে ধ্যান সরিয়ে তাকালেন টোস্টারের দিকে। সেটা দেখে আহাজারি সুরে বলে উঠলেন,
‘ আহা! রোম্যান্সের চোটে আমার ব্রেড টোস্টের কথা ভুলে গিয়েছিলেন নাকি ভাবি? দিলেন তো পুড়িয়ে। এখন আমি খাবো টা কি?’
এই কথা শুনে অস্বস্তির মাত্রাটা দ্বিগুণ বেড়ে গেলো আমার। আসলেই পুড়ে গিয়েছে। অনেকটা না পুড়লেও এমনভাবে পুড়েছে যে খাওয়ার অযোগ্য। আনভীর বিরক্ত হয়ে আমার পাশে থাকা কিচেন কেবিনেটে বসলেন। উনার মুখ বিষন্ন। নাহিদ ভাইয়ার ভুল সময়ে এসে ভুল কথা বলার জন্য সপাট করে দুটো ফর্সা গালে চড় মেরে লাল করার অদম্য ইচ্ছা জাগলেও সেটা বুকে চাপা দিয়ে বললেন,
‘ আহিকে দিয়ে কাজ করালি কোন সাহসে তুই? এর আগে পায়ে গরম পানি পড়েছিলো দেখে আমি না ওকে আসতে না করেছিলাম? খুব শখ ছিলো ভাবির হাতে গরম করা টোস্ট খাওয়ার? ভালোই হয়েছে, এবার পোড়া টোস্টই খা।’
নাহিদ ভাইয়া ভ্রুকুটি করলেন। আনভীর যে কাসার রাগ পিতলের ওপর দিয়ে ঝাড়ছেন এটা বুঝে উনি বললেন,
‘ আরে আমি তো জানি যে ভাবি সুপারওম্যান। আমার অনুরোধমাত্রই ঝড়ের গতিতে ব্রেড টোস্ট গরম করে নিয়ে আসবেন। আমি কি জানতাম যে ভাবি একজনকে পেয়ে ভুলে যাবে এটা কিচেনরুম? তাই তো বলি সামান্য ব্রেড টোস্ট করতে এত সময় লাগছিলো কেনো? পরে এসেই দেখলাম…..’
আর কিছু বললেন না নাহিদ ভাইয়া। একটা বিদ্রুপ হাসির আভাস সারা শরীয়ে ছড়িয়ে দিলেন। আমার নিজের প্রতিই করুনা হলো। ওহ গড! আর কতভাবে আনভীরের জন্য এই মানুষটার সামনে লজ্জা পড়বো আমি? কিন্ত আমার কথা শুনলো না অন্তর্যামী। আনভীর তখন নাহিদ ভাইয়ার উদ্দেশ্যে বললেন,
‘ বুঝবি না কেন তুই ব্যাটা? ইচ্ছে করে আমার মোমেন্ট স্পয়েল করতে এসেছিস? আর তুই বড় নাকি আমি বড়? আমাকে শিখাতে আসিস যে কিচেন রুম আর স্টোররুম কোনটা? আমার বউ, আমার যখন ইচ্ছে তখন মিষ্টি মিষ্ট কথা বলবো…
বলেই ফট করে আমার ডান গালে চু’মু দিলেন আনভীর। বললেন,
‘ যখন ইচ্ছে তখন চুমু দিবো। তোর সমস্যা?’
কয়েকদফা থমকে রইলাম আমি। হয়তো নাহিদ ভাইয়াও। ভাবতে পারেননি উনি যে আনভীর এমন কোনো কান্ড করে বসবেন। মনে মনে বললেন,
‘ ভাই নাকি জল্লাদ এইটা? কিভাবে পারে এই নাদান ভাইটার সিঙ্গেল মনে হাহাকার ধরাতে?’
অতঃপর মেকি হাসি দিয়ে প্রতিউত্তরে আনভীরকে বললেন,
‘ নাহ! কোনো সমস্যা নেই আমার।’
আমি রগচটা হয়ে তাকালাম উনার দিকে। লোকটার কি বিন্দুমাত্র লজ্জা নেই? উনি নির্বিকারভাবে বসে আছেন। যেন নাহিদ ভাইয়া কোনো ব্যাপারই না উনার কাছে। নাহিদ ভাইয়া ছ্যাকা খাওয়া মানবের মতো ফ্রিজ থেকে ফ্রুটের বাটিটা নিয়ে নিলেন। অতঃপর বললেন,
‘ তা কন্টিনিউ করুন আপনারা মিয়া-বিবি। আমি সিঙ্গেল মানুষ তো, এখানে থাকা মানবে না। গুড বাই!
বলেই এখান থেকে ড্রইংরুমে প্রস্থান করলেন নাহিদ ভাইয়া। আমি আর কিছু বলার জোর পেলাম না। দিনে দিনে যে আর কত আনভীরের পাগলাটে রূপ দেখবো, খোদাই জানে!
_______________________
কিছুদিন অতিবাহিত হয়েছে নিজগতিতে। এর মধ্যে পরিবর্তনও হয়েছে অনেক কিছু। সেদিন অপূর্ব ভাইয়ার সাথে হঠাৎ মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না আমি। আমায় উনার কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন আনভীর। ইশারায় বললেন আমায় শান্ত থাকতে। আশ্বস্ত করলেন যে কিছুই হবে না আমার। অপূর্ব ভাইয়া আমার সামনে দলিলপত্র রাখলো বেশ কয়েকটা। তারপর গম্ভীর স্বরে বললো,
‘ তোর প্রোপার্টির সকল কাগজপত্র। বলা বাহুল্য যে এসবের প্রতি কখনোই লোভ ছিলো না আমার। আমি শুধু চেয়েছিলাম তোকে। আর এগুলো সব রেখেছি বাবা আর চাচার ইচ্ছেতে। যাই হোক, তোর জিনিস ফিরিয়ে দিলাম তোকে। নিজের কাছে রাখ, এন্ড কখনও আপন কাউকে বিশ্বাস করবি না। মনে রাখবি তোর বাবাও কিন্তু তোর আসল বাবা।’
কথাটি অপূর্ব ভাইয়া বললো আনভীরের দিকে তাকিয়ে। স্পষ্টই বুঝিয়ে দিলেন যে আপনজন বলতে সে কাকে বুঝালো। উনাদের সম্পর্ক যে এখনও সাপে নেউলের মতো জড়িয়ে আছে এটা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আমি। সেই সাথে মনে চাপা দুঃখ। এতবছর আমি জেনে এসেছিলাম যে মায়ের মৃত্যু একটা এক্সিডেন্ট ছিলো জাস্ট। তবে এর পেছনে যে বাবা আর চাচ্চুর হাত ছিলো সেটা জানতে পেরেছি আজ পুলিশের রিপোর্টেই। আজ সকালেই দুজনকে এরেস্ট করা হয়েছে। এতবছর বন্ধ করা পুরোনো কেস কেই বা খুললো আর কেই বা প্রমাণ সংগ্রহ করে কেস ফাইল করলো তা সবারই অজানা। তবে সাফ হাতে যে আনভীর এ কাজ রাহি আপুর সাথে মিলে করেছেন সেটা অত্যন্ত আমি ভালো করেই জানি। আমার নানাজানের সম্পত্তিগুলো এরা দখল করে বে’আইনি কাজে প্রয়োগ করছিলো। সেই সাথে খুনের দায়ে আদালত কি রায় দেবে সেটা শুধু সময়ই বলতে পারবে।
আমি ভয়ে ছিলাম বেশ। কেননা মিডিয়া জানেনা যে আমার বাবার পরিচয় কি। গোটা দুনিয়ার কাছে আমি বাবা-মা হীন এবং বড় হয়েছি মামা মামীর কাছে। হঠাৎ এই ব্যাপারটা ফাঁস হওয়ার আশংকা দেখাতে মনে উদ্বেগ বাড়লেও তা বিচক্ষণতার সাথে সামলে নিয়েছিলেন আনভীর।
আমি অপূর্ব ভাইয়ার দিকে তাকালাম। বুঝতে পারছি না আমার আর আনভীরের সত্যিকারের সম্পর্কের কথা জেনে তার কি প্রতিক্রিয়া হয়েছিলো। এটাও জানিনা যে সেদিন আমায় বিশ্রি কথাগুলো বলার জন্য তার আফসোস আছে কি না। অপূর্ব ভাইয়া বলেন,
‘ বিয়েটা কবে করেছিলি তুই?’
‘ আনভীরের কাছে যাওয়ার কিছু সপ্তাহ পর।’
সে হাসলো দুর্বলভাবে। বলে উঠলো,
‘ আমার ওয়েটা ভুল ছিলো রে আহি। তাই তোকে পাইনি। আমি তোকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করলেও হয়তো আনভীরের মতো পাগলামি করিনি। দ্যাটস হোয়াই আমার সাথে এনগেজমেন্ট হওয়া সত্বেও তোকে হারিয়ে ফেললাম। টেক কেয়ার। আমি হয়তো তোকে আর মারবো না, আর আঘাত দিবো না। অপূর্ব নামের জাহান্নাম চিরকালের জন্য সরে যাবে তোর কাছ থেকে। তবে একটা কথা, যদি শুনি যে এই আনভীর অন্য সেলিব্রিটিদের মতো বউ রেখে অন্যের সাথে সম্পর্কে গিয়েছে, গড সেক, ওদিনই মেরে ফেলবো ওকে।’
এতক্ষণে কথা বললো আনভীর। বলে উঠলেন,
‘ আপনার ফিরে আসার সুযোগ নেই অপূর্ব। না আমি
ওমন কিছু করবো আর না আহিকে আপনি এমন সুযোগ দেখিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। আহি যেহেতু আমার, তাই আমারই থাকবে। আপনার কথা হয়েছে না? দ্যান ইউ মে গো!’
সেটাই শেষ দেখা ছিলো আমার অপূর্ব ভাইয়ার সাথে। এই প্রথম মনের কোণে একটা টানটান অনুভব হলো। কারনটা কি, আমি ধরতে পারলাম না।
__________
আজকে হসপিটাল থেকে ওয়ান উইকের ছুটি নিতে হলো আমায়। কারনটা অবশ্যই বিয়ে প্রসঙ্গের জন্য। আর যাই হোক, এর জন্য তো প্রফেশনাল লাইফের হেলফেল করা যায়না। অবশ্য অ্যাপ্লিকেশন জমা দেওয়ার সময় স্যার আমায় দেখে মুচকি মুচকি হাসছিলেন। শুধু উনি না, আমার কলিগসহ হসপিটালের কো-ওয়ার্কার সবাই। আমি উনাদের চাউনি দেখে বেশ বিব্রত হয়ে পড়েছিলাম। সবাই আগ বাড়িয়ে অবশ্য শুভকামনাও জানিয়ে গিয়েছে এ উপলক্ষে।
কিন্ত উনাদের ঠোঁট চাপা হাসি দেখে কম লজ্জায় পড়িনি। ডিউটি শেষ করার পর যখন আমরা রুমে ছিলাম তখনও একই অবস্থা। ধারা আর ডক্টর সিনথি আমায় দেখে মিটমিটিয়ে হাসছে। অবশ্য ইশার মুখ ভার। এদের এমন হাসি দেখে আমি এবার স্থির হয়ে পারলাম না। অবশেষে ধারাকে প্রশ্ন ছুড়লাম,
‘ কি হয়েছে সবার?’
ডক্টর সিনথি নিজেকে ধাতস্থ করলেন। বললেন,
‘ কিছু না আহি! উপপস, তুমি তো এখন শুধু আহি না। মিসেস আনভীর রেজওয়ান খান। কি বলো ধারা?’
‘ ঠিক বলেছেন ডক্টর সিনথি।’
ধারা আর ডক্টর সিনথির মুখে আবারও চাপা হাসি। এতক্ষণ চুপ ছিলো ইশা, এবার বললো,
‘ দেখলি ধারা যে এই আহিটা কত খারাপ! তলে তলে এক রকস্টারের সাথে চুটিয়ে প্রেম করেছে আর এদিকে আমাদের ধারনা পর্যন্ত করতে দেয়নি। মনে আছে সেদিন কত কষ্ট করে এআরকে’র কনসার্ট টিকেট কালেক্ট করলাম? ও তো এমন ভাব করলো যে চিনেই না সে কে। এত ইনোসেন্ট কিভাবে সেজে থাকিস তুই?’
ধ্রুব স্যার চাপা হাসি দিয়ে ওপাশ থেকে বললেন,
‘ তাহলে ভাবো যে আমি কি ভাবছি? সেরাতে স্বয়ং এআরকে আমার কল রিসিভ করে বললো যে সে ওর ফিওন্সে। তখন কি আর জানতাম এত বড় ঘটনা? আহি এই কথাটা এটলিস্ট আমায় তো বলতে পারতে?’
আমি কোনো কথা বলার সুযোগ পেলাম না। ধারা আর ইশা যেসব আজগুবি কথা শুরু করেছে পাগল করে দিয়েছে ইতিমধ্যে। অবশ্য ওরা দুজনও যাচ্ছে আমাদের wedding ceremony তে। ধ্রুব স্যার যেহেতু আনভীরের চাইল্ড হুড ফ্রেন্ড তাই উনাকেও আসতে বলা হয়েছিলো। তবে উনার নেক্সট উইকে একটা অপারেশন থাকায় উনি হয়তো এটেন্ড করবেন না। ধারা এবার দুষ্টু চাহিনী দিলো আমাতে। বলে উঠলো,
‘ আচ্ছা তোদের প্রেম কি লাভ এট ফার্স্ট সাইড আহি?’
ইশা জিজ্ঞেস করলো,
‘ উনি তোকে কি বলে ডাকে? নরমালি আহি, জান নাকি বেবি?’
আরও এমন কিছু প্রশ্ন ছুড়লো যে আমি শুধু পারছি না এদের থেকে কেটে পড়তে। আমি অস্থির হয়ে বললাম,
‘ আরে পাগল হলে নাকি?’
‘ তো পাগল হবো না? আমাদেরই একজন এআরকের ওয়াইফ, যেই এআরকের ভয়েস, আউটস্ট্যান্ডিং পার্সোনালিটি, লুকে মেয়েরা দফারফা হয়ে যায় আর সেই মানুষটা পুরো মহলের সামনে কিভাবে বললো, ‘ডোন্ট ডেয়ার টু টাচ মাই গার্ল!’, আমারে এভাবে কৈউ বললে তো আমি মরেই যাবো।’
শেষ কথাটা একসাথে বলে উঠলো দুজনে। আমি যেন আরও মিহিয়ে ফেলেছি নিজেকে। তখনই মোবাইলের রিং বাজাতে ধ্যান কাটলো। স্ক্রিনে মানুষটার নাম দেখে আমি তো পুরো….
‘ কে কল দিয়েছে রে!’
ধারার সপ্রশ্নে ঢোক গিলি আমি। ওর কথায় উত্তর না দিয়ে রিসিভ করে মিনমিনয়ে কন্ঠে বললাম,
‘ কিছু বলবেন?’
চটকরে বুঝে গেলো ইশা আর ধারা যে অপর প্রান্তের মানুষটি কে। আড়িপেতে আনভীরের কন্ঠ শুনলো,
‘ ডিউটি শেষ?’
‘ হুম।’
‘ পার্কিং লটে আসো তাহলে। ওয়েট করছি।’
‘ আচ্ছা।’
কল কেটে দেওয়ার পর দু’জনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মিটিমিটি হাসছে ওরা। জিজ্ঞেস করলো,
‘ কি বললেন উনি?’
‘ পার্কিং সাইডে আছেন। নিতে এসেছেন আমায়।’
‘ ওহহোওওও…..’
দুজন একসাথে বলে উঠাতে আমি তড়িঘড়ি করে এপ্রোন খুলে ডেস্কে রেখে দিলাম। যত দ্রুত হোক এই দুই পাগল থেকে পালাতে হবে। যাওয়ার সময় ইশা বলে উঠলো,
‘ বেস্ট অফ লাক আহি মেরি জান!’
_____________
পার্কিং লটে গাড়ি খুঁজতে সময় লাগেনি আমার। দেখলাম উনি গাড়ির ভিতরেই বসে ফোন চালাচ্ছেন। আমায় বসতে দেখে একপলক তাকিয়ে মিহি হাসি দিলেন উনি। উনার সেই হাসি মুহূর্তেই আমায় নাড়িয়ে দিলো। মোবাইল রাখতে রাখতে উনি বলে উঠলেন,
‘ টায়ার্ড?’
‘ একটু।’
আনভীর কথা বললেন না আর। গাড়ি স্টার্ট করে গন্তব্যের দিকে গেলেন। আজ রাতে সবাই একসাথে নাহিদ ভাইয়াদের বাড়ি অর্থাৎ খাগড়াছড়ি যাবো আমরা। আজরান ভাইয়া আগেই বড়সড় এক পিকনিক বাস রেডি করে রেখেছেন। বাসায় গিয়ে দেখি ব্যাগপত্র গুছিয়ে হুলস্থূল কান্ড করেছে সবাই। ইভেন আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য সেখান থেকে মামুন ভাইয়া আর নাহিদ ভাইয়ার বোন রিমি আপুও এসেছে।
সবাই স্পষ্ট বলেছে এখন থেকে বিয়ের আগ পর্যন্ত আনভীর আর আমার একসাথে থাকা মানা। মেয়েরা কনেপক্ষ এবং ছেলেরা বরপক্ষ হয়ে কাজ করবে। আনভীর এ শুনে আহত হয়েছিলেন বেশ। করুন চাহিনী দিলেন আমার দিকে। সবাই এ নিয়ে কি হাসাহাসি!
বাসে উঠার সময় আনভীর হঠাৎ সবার চক্ষুগোচরে ইয়ার্ডের দিকটায় নিয়ে গেলেন আমায়। আমি তটস্থ হয়ে বললাম,
‘ আরে কি করছেন আনভীর, রিমি আপু আর নীলু দেখলে আপনার অবস্থা খারাপ করে দিবে।’
সময়বিলম্ব না করে আমায় কাছে টেনে দীর্ঘক্ষণ কপালে ওষ্ঠ্যদ্বয় রাখলেন আনভীর। আমি আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। কোনোমতে নিজেকে সামলে মাথা উচিতে দেখলাম আমি আনভীরকে। উনার চোখে মুখে অস্থিরতার ভাব। নিঃশ্বাস ফেলছেন ঘনঘন। অতঃপর আমায় পেছনে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে দাঁড় করালেন উনি। পরিস্থিতি আর আবেগঘন হয়ে এলো যেন। আনভীর নিঃশব্দে আছেন, কিন্ত আমি ভয়ে আছি রিমি আপু আমায় খুঁজছেন কি-না। আনভীর এবার আমার লালাভ মুখ দেখে মিহি হাসলেন। তারপর মাথা নিচু করে কানের কাছে আড়ষ্ট কন্ঠে বললেন,
‘ এত লজ্জা পেলে চলবে না বেবিগার্ল। অভ্যেস করে নাও। রিটার্ন বিয়ের পর কিন্তু আমার ঠোঁটে টাইট কি’স করতে হবে।’
বলেই চলে গেলেন আনভীর। আমি নিস্তব্ধ নিষ্পল হয়ে তাকিয়ে থাকলাম উনার যাওয়ার দিকে। বাতাস বইছে। নিঃশ্বাস পড়ছে ঘনঘন। উনার কথাগুলো ঝংকারের ন্যায় কর্নকুহরে বাজতে থাকলো। অতঃপর রিমি আপুর ডাকে বাসে উঠলাম আমি। নাহিদ ভাইয়া লম্বা একটা ভাষণ শেষ করার পরই শুরু হলো খাগড়াছড়ির দিকে যাত্রা।
.
.
.
.
~চলবে ইনশাআল্লাহ